ইমাম হাসান মুজতাবা আলাইহিস সালাম

wikishia থেকে

হাসান ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) (الامام الحسن بن علی بن ابی طالب علیه السلام); ইমাম হাসানে মুজতাবা (৩-৫০হি.) নামে যিনি অধিক পরিচিত; শিয়াদের দ্বিতীয় ইমাম। তিনি ১০ বছর যাবত (৪০-৫০ হিজরি) ইমাম হিসেবে এবং ৭ মাস যাবতকাল মুসলমানদের খলিফা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন; আহলে সুন্নাত তাকে প্রথম সারির খলিফাগণের শেষ খলিফা হিসেবে জ্ঞান করে থাকে। ইমাম হাসান ইবনে আলী, ইমাম আলী (আ.)ফাতিমা (সা. আ.)-এর প্রথম সন্তান এবং মহানবি (স.)-এর প্রথম দৌহিত্র। ঐতিহাসিক বিভিন্ন বর্ণনার ভিত্তিতে, ‘হাসান’ নামটি স্বয়ং মহানবিই (স.) তাকে প্রদান করেছিলেন। তিনি তাকে অত্যধিক ভালবাসতেন। ইমাম হাসান ইবনে আলী তার জীবনের ৭টি বসন্ত মহানবি (স.)-এর সাথে অতিক্রম করেছেন। এ সময়ে বাইয়াতে রিদ্বওয়ান ও নাজরানের খ্রিষ্টানদের সাথে মুবাহালাহ’র মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় তিনি উপস্থিত ছিলেন। শিয়া ও সুন্নি সূত্রগুলোতে ইমাম হাসান (আ.)-এর ফজিলত উল্লিখিত হয়েছে। তিনি আসহাবে কিসা’র অন্যতম সদস্য; যাদের শানে আয়াতে তাতহির অবতীর্ণ হয়েছিল এবং শিয়ারা তাঁদেরকে এ আয়াতের ভিত্তিতে মা’সুম (নিষ্পাপ) জ্ঞান করে থাকে। ইতআমের আয়াত (آیه إطعام), মাওয়াদ্দাতের আয়াত (آیه مودة) ও মুবাহালাহ’র আয়াত (آیه مباهله) তার এবং তার পিতা-মাতা ও ভাইয়ের শানে অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি দু’বার নিজের সমস্ত সম্পদকে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা)-এর পথে দান করে দেন এবং ৩ বার নিজের সম্পদের অর্ধেক অংশকে দুস্থদের মাঝে বিতরণ করেছিলেন। বলা হয়েছে বিশেষ দানশীলতার কারণে তাকে ‘কারিমে আহলে বাইত’ বলা হয়ে থাকে। তিনি ২০ বার মতান্তরে ২৫ বার পায়ে হেটে হজ্জে গিয়েছেন। আবুবকরওমরের খেলাফতকালীন সময়ে তার তৎপরতা সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। তবে জানা যায় যে, দ্বিতীয় খলিফা ওমরের নির্দেশে তৃতীয় খলিফা নির্বাচনের লক্ষ্যে গঠিত ৬ জনের শুরার ঘটনায় তিনি সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। উসমানের যুগে তাঁর কিছু যুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়টিও কিছু কিছু সূত্র উল্লেখিত হয়েছে। উসমানের খেলাফতের শেষের দিকে সংঘটিত বিদ্রোহের সময় তিনি ইমাম আলী (আ.)-এর নির্দেশে খলিফার গৃহের নিরাপত্তায় নিয়োজিত হন। ইমাম আলী (আ.)-এর খেলাফতকালে তিনি তাঁর সাথে কুফায় যান এবং জামাল ও সিফফিনের যুদ্ধে ইমাম আলীর সেনাপতিদের একজন ছিলেন। ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.), ৪০ হিজরির ২১শে রমজান ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর শাহাদাতের পর ইমামতের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন; ঐদিন তাঁর হাতে ৪০ হাজারেরও বেশী লোক বাইয়াত করেছিল। মুয়াবিয়া তাঁর খেলাফতকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়, ফলে সিরীয় বাহিনীর সাথে তিনি ইরাকের উদ্দেশে রওয়ানা হন। ইমাম হাসান (আ.), উবাইদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনীকে মুয়াবিয়ার মুকাবিলায় প্রেরণ করেন এবং নিজে আরেকটি দলের সাথে ‘সাবাত’ এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করেন। ইমাম হাসান (আ.)-এর সৈন্যদের মাঝে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে মুয়াবিয়া সন্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুতের চেষ্টা চালায়। এমন পরিস্থিতিতে জনৈক খারেজি কর্তৃক ইমাম হাসান (আ.)-কে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টার ঘটনায় হযরত ইমাম আহত হন এবং চিকিৎসার জন্য তাঁকে মাদায়েনে নেয়া হয়। এ সময় কুফার নেতৃত্বস্থানীয়দের একটি দল মুয়াবিয়ার উদ্দেশে লেখা চিঠিতে হাসান ইবনে আলী (আ.)-কে তার (মুয়াবিয়া) হাতে হস্তান্তর অথবা তাকে হত্যা করার বিষয়ে আশ্বস্ত করে। মুয়াবিয়া কুফা থেকে আগত ঐ চিঠিগুলো ইমাম হাসান (আ.)-এর উদ্দেশে প্রেরণ করে ইমামকে সন্ধির প্রস্তাব দেন। ইমাম হাসান (আ.) সন্ধি এবং খেলাফতকে মুয়াবিয়ার হাতে সোপর্দ করার প্রস্তাবকে এ শর্তে মেনে নেন যে, মুয়াবিয়া আল্লাহর কিতাব ও রাসূল (স.)-এর সুন্নতের ভিত্তিতে আমল করবে, নিজের জন্য কোন স্থলাভিষিক্ত নির্বাচন করবে না, আলী (আ.)-এর শিয়ারাসহ সকল জনগণ নিরাপদ থাকবে। অবশ্য মুয়াবিয়া প্রথম অবস্থায় সকল শর্ত মেনে নিলেও পরবর্তীতে তিনি উক্ত শর্তাবলির একটির ওপরও বলবৎ থাকেন নি। মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধির ঘটনা ইমাম হাসান (আ.)-এর সাথীদের একটি দলের অসন্তোষের কারণ হয়, এমনকি তাদের কেউ কেউ ইমামকে ‘মুযিল্লুল মু’মিনীন’ (মু’মিনদেরকে লাঞ্ছিতকারী) বলে আখ্যায়িত করে। সুলহের (সন্ধি) ঘটনার পর তিনি (আ.) ৪১ হিজরিতে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং জীবনের শেষাবধি সেখানেই অবস্থান করেন। মদিনায় তিনি জ্ঞানের কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিবেচিত হতেন এবং কোন কোন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তিনি বিশেষ সামাজিক অবস্থানের অধিকারী ছিলেন। মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান নিজের ওয়ালিয়ে আহদ (পরবর্তী খলিফা) হিসেবে তার পুত্র ইয়াযিদের পক্ষে বাইয়াত গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর ইমাম হাসান (আ.)-কে বিষপ্রয়োগের উদ্দেশ্যে ইমাম হাসানের স্ত্রী জো’দা বিনতে আশআসে’র জন্য ১ লক্ষ দিরহাম প্রেরণ করেন। বিষপ্রয়োগের ৪০ দিনের পর ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.) শহীদ হন বলে উল্লেখিত হয়েছে। অপর এক বর্ণনার ভিত্তিতে, তিনি (স.) ওসিয়ত করেছিলেন, তাঁকে যেন তাঁর পিতামহ মহানবি (স.)-এর কবরের পাশে দাফন করা হয়। কিন্তু মারওয়ান ইবনে হাকাম এবং বনি উমাইয়ার একটি দল ঐ কাজে বাধা প্রদান করে, অতঃপর তাঁকে বাকী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। মুসনাদুল ইমামিল মুজতাবা (আ.) গ্রন্থে তাঁর বিভিন্ন বাণী, রচনা ও তাঁর থেকে রেওয়ায়েতকারী ১৩৮ জনের নাম উল্লেখিত হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

ইমাম আলী (আ.)ফাতিমা (সা. আ.)-এর প্রথম সন্তান এবং মহানবি (স.)-এর প্রথম দৌহিত্র।[১] বনু হাশিমের মাধ্যমে তিনি কুরাইশ বংশের সাথে সংযুক্ত।[২]

নাম, কুনিয়া ও উপাধি

সুন্দর ও উত্তম অর্থের ‘হাসান’ (حسن) নামটি মহানবি (স.)-এর দেওয়া।[৩] একটি রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, মহান আল্লাহর নির্দেশে এ নামকরণ করা হয়।[৪] হাসান ও হুসাইন নামদ্বয় শাব্বারশাবির (শাব্বির)[৫] নামের সমার্থক; যা ছিল হযরত হারুনের দুই পুত্রের নাম,[৬] আর ইতিপূর্বে আরবদের মাঝে এমন নামের প্রচলনের তথ্য পাওয়া যায় নি।[৭] তার কুনিয়াত ‘আবু মুহাম্মাদ’ ও ‘আবুল কাসিম’ বলে উল্লিখিত হয়েছে।[৮] এছাড়া মুজতাবা (নির্বাচিত), সাইয়্যিদ (সর্দার), যাকি (পবিত্র) ইত্যাদি উপাধিও তার ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।[৯] তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আলাইহিমাস সালাম) যৌথ উপাধির অধিকারী; যেমন- ‘সাইয়্যিদাই শাবাবি আহলিল জান্নাহ’ (سیدی شباب اهل الجنة) ‘রাইহানাতু নাবিয়্যিল্লাহ’[১০] (ریحانة نبيّ الله) ও ‘সিবত’ (سبط) ইত্যাদি।[১১] মহানবি (স.) থেকে বর্ণিত একটি রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে: ‘হাসান আসবাতের একজন’।[১২] ‘সিবত’ (এর বহুবচন আসবাত) শব্দটি কিছু কিছু আয়াত ও রেওয়ায়েতে ইমাম ও নাকীব অর্থেও এসেছে; যারা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্বাচিত এবং নবিগণ (আলাইহিমুস সালাম)-এর বংশধর।[১৩]

ইমামত

হাসান ইবনে আলী (আ.); শিয়াদের দ্বিতীয় ইমাম। ৪০ হিজরির ২১শে রমজান ইমাম আলী (আ.)-এর শাহাদতের পর তিনি (আ.) ইমামতের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন এবং ১০ বছর যাবত তিনি ইমামতের মহান মাকামে অধিষ্ঠিত ছিলেন।[১৪] শেইখ কুলাইনি (মৃত্যু ৩২৯ হি.) তার আল-কাফি গ্রন্থে হাসান ইবনে আলী’র ইমাম হিসেবে মনোনয় সংশ্লিষ্ট হাদিসগুলোকে সংকলন করেছেন।[১৫] ঐ রেওয়ায়েতগুলোর একটির ভিত্তিতে, ইমাম আলী (আ.) শাহাদাতের পূর্বে তাঁর সন্তান ও শীর্ষস্থানীয় শিয়া ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে কিতাব ও সিলাহ (তলোয়ার বা বিশেষ অস্ত্র) –যা ইমামতের আমনত হিসেবে গণ্য- নিজ পুত্র হাসান (আ.)-কে হস্তান্তর করে বলেন যে, আল্লাহর রাসূল (স.) আমাকে নির্দেশ প্রদান করেছেন যেন হাসানকে আমি নিজের ওয়াছি ও স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মনোনীত করি।[১৬] অপর এক রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, কুফার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে ইমাম আলী (আ.) ইমামত সংশ্লিষ্ট আমানত উম্মু সালামাহ’র নিকট রেখে যান এবং ইমাম হাসান (আ.) কুফা থেকে প্রত্যাবর্তন করার পর সেগুলোকে তার কাছ থেকে গ্রহণ করেন।[১৭] শেইখ মুফিদ (মৃত্যু ৪১৩ হি.) আল-ইরশাদ গ্রন্থে লিখেছেন, ইমাম হাসান (আ.) ছিলেন সাহাবিগণ ও তাঁর পিতার সন্তানদের মাঝে নিজ পিতার ওয়াছি (ওসিয়ত বাস্তবায়নকারী) ও স্থলাভিষিক্ত।[১৮] ইমাম হাসান মুজতাবা’র ভেসায়াত (ওয়াছি হওয়ার বিষয়টি) প্রমাণার্থে প্রসিদ্ধ ১২ খলিফার হাদিসটিকেও[১৯] দলিল হিসেবে আনা হয়ে থাকে।[২০] ইমামতকালের শুরুর কয়েকটি মাস ইমাম হাসান (আ.) কুফায় অবস্থান করেন এবং খেলাফতের দায়িত্বভার সামলান।

শৈশব ও কৈশোর

ইমাম হাসান (আ.)-এর জন্মের বিষয়ে প্রসিদ্ধ মতটি হলো[২১] তিনি তৃতীয় হিজরির ১৫ই রমজান ভূমিষ্ঠ হন। তবে শেইখ কুলাইনি ও শেইখ তুসি তাঁর জন্ম দ্বিতীয় হিজরিতে বলে উল্লেখ করেছেন।[২২] তিনি মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন।[২৩] মহানবি (স.) তার ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামত দেন,[২৪] এছাড়া তার জন্মের ৭ম দিনে তার জন্য একটি ভেড়া জবাই করে আকিকা প্রদান করেন।[২৫] আহলে সুন্নতের একটি বর্ণনার ভিত্তিতে, আল্লাহর রাসূল (স.) ইমাম হাসানের নামকরণের আগে ইমাম আলী (আ.) শিশুর নাম হামযাহ[২৬] অথবা [২৭] রাখার বিষয়ে মনস্থ করেছিলেন, কিন্তু মহানবি (স.) তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি (আ.) বলেন: নামকরণের ক্ষেত্রে তিনি আল্লাহর রাসূল (স.)-এর অগ্রগামী হবেন না।[ইবনে সা’দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, ১৪১৮ হি., খণ্ড ১০, পৃ. ২৩৯-২৪৪; মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৩৬৩ ফার্সি সন, খণ্ড ৩৯, পৃ. ৬৩।] শিয়া গবেষক বাকির শারিফ কারাশি উপরিউক্ত দাবি প্রত্যাখ্যানে বিভিন্ন দলিল ও প্রমাণ উল্লেখ করেছেন।[২৮]

শৈশব

ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর শৈশব ও কৈশোর সম্পর্কে খুব বেশী তথ্য হাতে নেই।[২৯] তবে যতটুকু তথ্য বিদ্যমান রয়েছে তার ভিত্তিতে তিনি ৮ বছরের কম সময় মহানবির (স.)-এর সাথে অতিবাহিত করেন, আর এ কারণে তাঁর নাম মহানবি (স.)-এর শেষ সাহাবিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[৩০] তার ও তার ভাই হুসাইন ইবনে আলী (আ.)-এর প্রতি মহানবি (স.)-এর বিশেষ আগ্রহ ও ভালবাসার কথা আহলে সুন্নতের বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে।[৩১] এ সময়কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো, পিতা-মাতা ও ভাইয়ের সাথে নাজরানের খ্রিষ্টানদের সাথে মুবাহালার স্থানে তাঁর উপস্থিত হওয়া। মুবাহালার দিনে এ প্রসঙ্গে অবতীর্ণ মুবাহালার আয়াতে উল্লিখিত ‘আবনাআনা’ শব্দের স্থলে তিনি ও তার ভাই ইমাম হুসাইনকে আনা হয়েছিল [৩২] সাইয়্যেদ জাফার মুর্তাযা’র ভাষ্যানুযায়ী তিনি বাইয়াতে রিদ্বওয়ানে উপস্থিত ছিলেন এবং মহানবি (স.)-এর হাতে বাইয়াত করেছিলেন।[৩৩] পবিত্র কুরআনের কিছু সংখ্যক আয়াত তাঁর এবং আসহাবে কিসা’র শানে অবতীর্ণ হয়েছে।[৩৪] বলা হয়েছে তিনি ৭ বছর বয়সে মহানবি (স.)-এর ইলমি জলসা ও সভায় অংশগ্রহণ করতেন এবং যা কিছু তিনি (স.) বলতেন, বাড়িতে ফিরে তা সম্পর্কে তিনি তার মা ফাতিমা যাহরা (সা. আ.)-কে অবগত করতেন।[৩৫] সুলাইম ইবনে কাইস (মৃত্যু হিজরি প্রথম শতাব্দির শেষের দিকে) বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলে খোদা (স.)-এর ইন্তিকালের পর যখন আবুবকর খেলাফতকে হস্তগত করেন তখন হাসান ইবনে আলী (আ.) তার পিতা-মাতা ও ভাইয়ের সাথে রাতের আঁধারে আনসারদের গৃহে যেতেন এবং তাদের প্রতি ইমাম আলী (আ.)-কে সাহায্যের আহবান জানাতেন।[৩৬] এছাড়া,আল্লাহর রাসূলের (স.) মিম্বরে আবুবকরের উপবেশনের বিষয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।[৩৭]

যৌবনকাল

ইমাম হাসান (আ.)-এর যৌবনকাল সম্পর্কে বিদ্যমান তথ্যাদির পরিমাণ অত্যন্ত সীমিত, যেমন- ‘আল-ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ’ গ্রন্থে এসেছে যে, ওমর ইবনে খাত্তাবের নির্দেশে হাসান ইবনে আলী (আ.) খলিফা নির্ধারণের লক্ষ্যে গঠিত ৬ জনের শুরার সাক্ষী হিসেবে ছিলেন।[৩৮] আহলে সুন্নতের কিছু কিছু সূত্রে ২৬ হিজরিতে আফ্রিকার যুদ্ধে[৩৯] এবং ২৯ অথবা ৩০ হিজরিতে [৪০] তাবারিস্তানের যুদ্ধে ইমাম হাসান ও হুসাইন (আলাইহিমাস সালাম) অংশগ্রহণ করেছিলেন। এ ধরণের রেওয়ায়েতের পক্ষে কেউ কেউ মত দিলেও এর বিপক্ষেও অনেকে মত দিয়েছেন। ঐ সকল বর্ণনার সনদগত সমস্যা এবং এ পদ্ধতিতে বিজয় প্রসঙ্গে ইমামগণ (আ.)-এর বিরোধিতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে জাফার মুর্তাযা আমেলি এ প্রতিবেদনগুলোকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং কেউ কেউ আবার ইমাম আলী (আ.) কর্তৃক সিফফিনের যুদ্ধে ইমাম হাসান ও হুসাইনকে রণক্ষেত্রে প্রবেশ করতে বাধা প্রদানের বিষয়টিকে তার কথার সপক্ষে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।[৪১] উইলফোর্ড মাদেলুঙ্গের মতে, ইমাম আলী (আ.) সম্ভবত চেয়েছিলেন তাঁর সন্তান হাসান যেন যুবক বয়সে রণকৌশল সম্পর্কে পরিচিত হয় এবং যুদ্ধের বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে।[৪৫] এ সময়ে অপর যে সকল বর্ণনা উল্লিখিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অপর বর্ণনাটি হলো, যখনই জনগণ উসমানের বিষয়ে ইমাম আলীর নিকট অভিযোগ করত তখন তিনি (আ.) ইমাম হাসানকে উসমানের নিকট প্রেরণ করতেন।[৪২] বালাজুরি’র বর্ণনার ভিত্তিতে, উসমানের খেলাফতের শেষের দিককার বিদ্রোহকালীন সময়ে উসমানের গৃহ ঘেরাও এবং তার কাছে পানি পৌঁছুতে বাধা প্রদানের (যে বিদ্রোহ তার নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়) ঘটনায় ইমাম আলী (আ.)-এর নির্দেশে হাসান ইবনে আলী ও তার ভাই অপর একদল লোকের সাথে উসমানের গৃহের হেফাজতে নিয়োজিত হন।[৪৩] কাজি নো’মান মাগরেবি (মৃত্যু ৩৬৩ হি.) ও দালায়িলুন নুবুওয়াহ গ্রন্থের লেখকের ভাষায় বিদ্রোহীরা উসমানের জন্য পানি বন্ধ করে দিলে বাবার নির্দেশে ইমাম হাসান মুজতাবা উসমানের বাড়িতে পানি পৌঁছে দেন।[৪৪] এ ঘটনায় ইমাম হাসান ইবনে আলীর আহত হওয়ার তথ্যও পাওয়া যায়।[৪৫] কিন্তু আল্লামা আমিনী’র মতো কতিপয় শিয়া আলেম এ বর্ণনাকে জাল ও বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছেন;[৪৬]। তারা ইমাম আলী (আ.) হাসানাইন (ইমাম হাসান ও হুসাইন)-কে উসমানকে হেফাজতের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছিলেন -এমন বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে, এ পদক্ষেপ খলিফাকে ক্ষমতাচ্যুত করা রোধ করতে নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে খলিফা হত্যা এবং খলিফার পরিবারের নিকট খাদ্য ও পানি পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়েছিল বলে মনে করেন; কারণ দূর্নীতি, অন্যায় আচরণ ও কৃতকর্মের কারণে খলিফা খেলাফত থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার যোগ্য ছিলেন।[৪৭]

স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতি

ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর স্ত্রী ও সন্তানদের সংখ্যার বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। ইতিহাসে ইমাম হাসান (আ.)-এর সর্বোচ্চ ১৮ জন স্ত্রীর নাম উল্লিখিত হওয়া[৫২[৪৮]] সত্ত্বেও তাদের সংখ্যা ২৫০,[৪৯] ২০০,[৫০] ৯০[৫১] এবং ৭০টি [৫২]বলেও উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ। তাঁর অধিক সংখ্যক বিবাহ ও তালাকের প্রতি ইঙ্গিত করে কোন কোন সূত্রে তাকে ‘মিতলাক’ (বহু তালাক প্রদানকারী) আখ্যায়িত করা হয়েছে।[৫৩]] উপরন্তু বলা হয়েছে যে, ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.)-এর কিছু কানিয ও দাসীও ছিল এবং তাদের থেকে তিনি পিতাও হয়েছেন।[৫৪] ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.)-এর ‘মিতলাক’ হওয়ার বিষয়টি প্রসঙ্গে প্রথম দিককার এবং বর্তমান সময়ের কিছু কিছু গ্রন্থে ইতিহাস, সনদ ও বিষয়ভিত্তিক সমালোচনা করা হয়েছে।[৫৫] মাদেলুঙ্গের ভাষ্যমতে, মুহাম্মাদ ইবনে কালবি সর্বপ্রথম ইমাম হাসান (আ.)-এর ৯০ জন স্ত্রী থাকার কথা প্রচার করেছেন এবং এ সংখ্যাটি ‘মাদায়েনি’র (মৃত্যু ২২৫ হি.) তৈরি। অথচ স্বয়ং কালবি ইমাম হাসানের ১১ জন স্ত্রীর নাম উল্লেখ করেছেন; যাদের মধ্যে ৫ জনের ইমাম হাসান (আ.)-এর সাথে বিবাহের বিষয়টি তর্কাতীত নয়।[৫৬] কারাশি’র মতে হাসানি সাইয়্যেদদের মুকাবিলায় আব্বাসিগণ এ বিষয়টি জাল করেছে।[৫৭] ইমাম মুজতাবা (আ.)-এর সন্তানদের সংখ্যার বিষয়েও এখতেলাফ রয়েছে। শেইখ মুফিদ তার সন্তানদের সংখ্যা ১৫ জন বলে উল্লেখ করেছেন।[৫৮] তাবারসি’র মতে ইমাম হাসান মুজাতাবার সন্তানদের সংখ্যা ১৬ এবং আবুবকরকে তাঁর সন্তানদের একজন বলে গণ্য করেছেন; যিনি আশুরার ঘটনায় শহীদ হয়েছেন।[৫৯]

ইমাম হাসানের বংশধারা

ইমাম হাসান (আ.)-এর বংশধারা হাসানে মুসান্না, যাইদ, ওমর ও হুসাইন আসরামের (حسین اثرم) মাধ্যমে অব্যাহত থাকে। হুসাইন ও ওমরের বংশধারা কিছুকাল পর শেষ হয়ে গেলেও হাসানে মুসান্না ও যাইদ ইবনে হাসানের বংশধারা অবশিষ্ট রয়ে যায়।[৬৬] তাদের সন্তানদেরকে সাদাতে হাসানি বলা হয়।[৬৭] তাদের অনেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। তারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দিতে আব্বাসি হুকুমতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংগ্রাম ও আন্দোলনের গোড়াপত্তন করেন এবং মুসলিম ভূখণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় সরকার গঠনেও সক্ষম হন। মরক্কোসহ অন্যান্য এলাকায় সাইয়্যেদগণের এই সিলসিলা ‘শুরাফা’ নামে অধিক পরিচিত।[৬৮]

কুফায় বসবাস এবং ইমাম আলীর খেলাফত

ইমাম মুজাতাবা (আ.) ইমাম আলী (আ.)-এর ৫ বছর খেলাফতকালে সর্বাবস্থায় পিতার পাশে ছিলেন।[৬৯] ‘আল-ইখতিছাছ’ গ্রন্থের ভাষ্যানুযায়ী ইমাম আলী (আ.)-এর হাতে জনসাধারণের বাইয়াত সম্পন্ন হওয়ার পর পিতার নির্দেশে হাসান ইবনে আলী (আ.) মিম্বরে বসে উপস্থিতদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।[৭০] সিফফিনের ঘটনায় ইমাম আলী (আ.)-এর কুফায় প্রবেশের প্রথম দিনগুলো সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট হয় যে, হাসান ইবনে আলীও (আ.) বাবার সাথে কুফায় বসবাস শুরু করেন।[৭১]

উষ্ট্রের যুদ্ধ

কিছু কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, নাকিসীনদের (বাইয়াত ও অঙ্গীকার ভঙ্গকারী) বিদ্রোহের ঘটনা এবং তাদের মুকাবিলার উদ্দেশ্যে ইমাম আলী (আ.) রওয়ানা হওয়ার পর হাসান ইবনে আলী (আ.) পথিমধ্যে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার অনুমতি চেয়েছিলেন।[৭২] শেইখ মুফিদের (মৃত্যু ৪১৩) ভাষ্যানুযায়ী ইমাম হাসান (আ.) পিতার পক্ষ থেকে নির্দেশ প্রাপ্ত হয়ে আম্মার ইবনে ইয়াসির ও কাইস ইবনে সাঈদের সাথে কুফার জনগণকে ইমাম আলী (আ.)-এর বাহিনীতে যোগদানের জন্য উৎসাহিত করার নির্দেশ প্রাপ্ত হন।[৭৩] তিনি কুফায় জনগণের উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে (খুতবা) তিনি ইমাম আলী (আ.)-এর ফজিলত বর্ণনার পর তালহা ও যুবাইর কর্তৃক অঙ্গীকার ও বাইয়াত ভঙ্গ করার কথা উল্লেখ করে কুফার জনগণকে ইমাম আলী (আ.)-এর সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহবান জানান।[৭৪] উষ্ট্রের (জামাল) যুদ্ধে আব্দুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর ইমাম আলী (আ.)-কে উসমান হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করার পর ইমাম হাসান (আ.) খুতবা দেন এবং তাতে উসমান হত্যায় যুবাইর ও তালহা’র ভূমিকার প্রতি ইঙ্গিত করেন।[৭৫] ইমাম হাসান মুজতাবা এ যুদ্ধে ডান দিককার বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।[৭৬] ইবনে শাহরে আশুব বলেন, এ যুদ্ধে ইমাম আলী (আ.) নিজের বর্ষাটি মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়ার হাতে তুলে দিয়ে তাকে হযরত আয়েশার উটটি ভূপাতিত করার নির্দেশ দেন, কিন্তু তিনি সফল হন নি। অতঃপর ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.) ঐ বর্ষাটি তুলে নেন এবং হযরত আয়েশার উটটিকে আহত করতে সক্ষম হন।[৭৭] বর্ণিত হয়েছে যে, উষ্ট্রের যুদ্ধের পর ইমাম আলী (আ.) অসুস্থ হয়ে পড়লে বসরার জনগণের জুমআর নামাজের দায়িত্ব স্বীয় পুত্র হাসানকে প্রদান করেন। তিনি নামাজের খুতবায় আহলে বাইতের মর্যাদা ও অবস্থান এবং তাদের অধিকার প্রদানে গড়িমসি করার অশুভ পরিণতির বিষয়ে তাগিদ করেন।[৭৮]

সিফফিনের যুদ্ধ

সিফফিনের যুদ্ধে ইমাম আলী (আ.) ইমাম হাসান (আ.)-এর রণাঙ্গনে উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়ে বলেন: এ যুবককে থামাও [তারা যেন রণাঙ্গনে উপস্থিত হওয়ার মনস্ত না করে]। তারা যেন (এ কাজের মাধ্যমে) আমার কোমর ভেঙ্গে না দেয়। তাদের দু’জন (হাসান ও হুসাইন)-এর মৃত্যু এবং তাদের মৃত্যুর মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল (স.)-এর বংশধারা কর্তিত হওয়ার বিষয়ে আমি শঙ্কিত।[নাহজুল বালাগাহ, ভাষান্তর শাহিদী, পৃ. ২৪০।] নাসর ইবনে মুযাহিমের (মৃত্যু ২১২ হি.) মতে, ইমাম আলী (আ.)-এর বাহিনী রওয়ানা হওয়ার পূর্বে প্রদত্ত এক খুতবায় হাসান ইবনে আলী জনগণকে জিহাদের প্রতি উৎসাহিত করেন।[৭৯] কিছু কিছু বর্ণনার ভিত্তিতে সিফফিনের যুদ্ধে তিনি তার ভাই হুসাইন ইবনে আলী (আ.)-এর সাথে ডান পাশের বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন।[৮০] ইসকাফি’র (মৃত্যু ২৪০ হি.) বর্ণনায় এসেছে যে, যুদ্ধকালীন সময়ে সিরীয় বাহিনীর জনৈক কমান্ডার ইমাম হাসানের মুখোমুখি হলে সে ইমাম হাসানের সাথে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকে এবং বলে, আমি আল্লাহর রাসূল (স.)-কে এমতাবস্থায় দেখেছিলাম যে, তিনি উটের পিঠে চড়ে এগিয়ে আসছিলেন এবং তুমি তার সামনে বসেছিলে। আমি তোমার রক্তে হাত রঞ্জিত অবস্থায় আল্লাহর রাসূল (স.)-এর সাথে সাক্ষাত করতে চাই না।[৮১] ‘ওয়াকিয়াতু সিফফিন’ গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে যে, উবাইদুল্লাহ ইবনে ওমর (ওমর ইবনে খাত্তাবের পুত্র) যুদ্ধের মাঝেই হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর সাথে সাক্ষাত করে তাকে তার বাবা (ইমাম আলী)-এর পরিবর্তে খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণের প্রস্তাব দেন; কেননা কুরাইশ আলী (আ.)-কে নিজেদের শত্রু মনে করে। ইমাম হাসান (আ.) তার উত্তরে বলেন: আল্লাহর কসম কখনই এমনটি ঘটবে না। অতঃপর তার উদ্দেশে বলেন: আমি দেখছি যেন তুমি আজ অথবা কাল নিহত হবে, নিশ্চয়ই শয়তান তোমাকে ধোঁকা দিয়েছে। ‘ওয়াকিয়াতু সিফফিন’-এর বর্ণনার ভিত্তিতে, উবাইদুল্লাহ ইবনে ওমর ঐ যুদ্ধে নিহত হন।[৮২] যুদ্ধান্তে হাকামিয়্যাতের বিষয়টি সামনে এলে পিতার অনুরোধে ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.) জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেন।[৮৩] সিফফিন থেকে ফেরার পথে ইমাম আলী (আ.) স্বীয় পুত্র ইমাম হাসান (আ.)-এর উদ্দেশে আখলাকি-তরবিয়্যতি বিষয়বস্তু সম্বলিত একটি পত্র লিখেন।[৮৪] নাহজুল বালাগাহ’তে যা সাধারণত ৩১নং পত্র হিসেবে উল্লেখিত হয়ে থাকে।[৮৫] ‘আল-ইস্তিয়াব’ গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে, নাহরেওয়ানের যুদ্ধেও ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.) উপস্থিত ছিলেন।[৮৬] একইভাবে কিছু কিছু বর্ণনায় এসেছে যে, ইমাম আলী (আ.) নিজের জীবনের শেষ দিনগুলোতে যখন পূনরায় মুয়াবিয়ার মুকাবিলা করার জন্য বাহিনী গঠন করছিলেন তখন স্বীয় পুত্র ইমাম হাসান (আ.)-কে ১০ হাজার সৈন্যের নেতৃত্ব দান করেন।[৮৭]

স্বল্পমেয়াদি খেলাফতকাল

ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.) ৪০ হিজরির ২১ রমজান থেকে ৬ অথবা ৮ মাসের জন্য মুসলমানদের খলিফা ছিলেন।[নোট ১] মহানবি (স.)-এর সাথে সম্পৃক্ত একটি হাদিসের ভিত্তিতে আহলে সুন্নাত তাকে খুলাফায়ে রাশেদীনের শেষ খলিফা হিসেবে মানে।[৮৯] ইরাক ও আশেপাশের এলাকার জনগণের বাইয়াতের মাধ্যমে তাঁর খেলাফতকাল শুরু হয়।[৯০] মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে শামবাসী তাঁর খেলাফতের বিরোধিত করে।[৯১] মুয়াবিয়া শামবাসীদের নিয়ে গঠিত একটি বাহিনীর সাথে ইরাকের জনগণের মুকাবিলায় আসে।[৯২] পরিশেষে এ যুদ্ধ সন্ধি এবং উমাইয়া বংশের প্রথম খলিফা (শাসক) মুয়াবিয়ার নিকট খেলাফত হস্তান্তরের মাধ্যমে শেষ হয়।[৯৩]

মুসলমানদের বাইয়াত ও শামবাসীর বিরোধিতা

শিয়া ও সুন্নি বিভিন্ন সূত্রের বর্ণনার ভিত্তিতে, ৪০ হিজরিতে ইমাম আলী (আ.)-এর শাহাদাতের পর জনগণ খলিফা হিসেবে ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর হাতে বাইয়াত করে।[৯৪] বালাজুরির (মৃত্যু ২৭৯ হি.) ভাষ্যানুযায়ী, ইমাম আলী (আ.)-এর দাফনকার্য সম্পন্ন হওয়ার পর উবাইদুল্লাহ ইবনে আব্বাস জনগণের সামনে এসে তাদেরকে ইমাম আলী (আ.)-এর শাহাদাতের সংবাদ প্রদান করে তাদের উদ্দেশে বলেন তিনি যোগ্য, সহিষ্ণু ও ধৈর্যশীল একজন স্থলাভিষিক্ত রেখে গেছেন। তোমরা চাইলে তার হাতে বাইয়াত করতে পারো।[৯৫] আল-ইরশাদ গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে যে, ২১ শে রমজান সকালে হাসান ইবনে আলী (আ.) মসজিদে খুতবা প্রদানকালে নিজের পিতার বিভিন্ন শ্রেষ্ঠত্ব, দক্ষতা ও যোগ্যতার কথা তুলে ধরেন এবং আল্লাহর রাসূল (স.)-এর সাথে নিজের ঘনিষ্ট আত্মীয়তার বন্ধনের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন, এ সময় তিনি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও ফযিলতের প্রতি ইঙ্গিত করে আহলে বাইত (আ.)-এর বিশেষ অবস্থান প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের বেশ কয়েকটি আয়াত প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন।[৯৬] তাঁর খুতবার পর আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস উঠে দাঁড়ান এবং জনগণের উদ্দেশে বলেন: তোমাদের নবি’র (স.) সন্তান ও তোমাদের ইমামদের ওয়াছি’র সাথে বাইয়াত করো, জনগণও তাঁর হাতে বাইয়াত করে।[৯৭] ঐদিন ৪০ হাজারেরও অধিক লোক তাঁর হাতে বাইয়াত করেছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে উল্লিখিত হয়েছে।[৯৮] তাবারি’র বর্ণনার ভিত্তিতে, প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ইমাম আলী (আ.)-এর বাহিনীর সেনাপতি কাইস ইবনে সা’দ ইবনে উবাদাহ ইমাম হাসান (আ.)-এর হাতে বাইয়াত করেন।[৯৯] ‘তাশাইয়্যু দার মাসীরে তারিখ’ গ্রন্থে হুসাইন মুহাম্মাদ জাফারি লিখেছেন, কুফা শহর পূণঃনির্মাণের পর কুফায় বসবাস শুরা করা সাহাবিগণ অথবা ইমাম আলী (আ.)-এর খেলাফতকালে তাঁর সাথে কুফায় আগত সাহাবাদের অনেকে ইমাম হাসান (আ.)-এর বাইয়াতে অংশগ্রহণ করে তার খেলাফতকে মেনে নেন।[১০০] বিভিন্ন কারীনাহ ও প্রমাণের ভিত্তিতে জাফারির বিশ্বাস, হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর খেলাফতের বিষয়ে মক্কা ও মদিনার জনগণেরও সমর্থন ছিল।[১০১] জাফারির ভাষ্যানুযাযী ইয়েমেন ও ফারসে’র (পারস্য) জনগণের সমর্থন ছিল অথবা অন্তত তারা এ বিষয়ে কোন অভিযোগ ও বিরোধিতা করে নি।[১০২] কিছু কিছু সূত্রে উল্লিখিত হয়েছে যে, শর্তসাপেক্ষ বাইয়াতের প্রসঙ্গ প্রস্তাবিত হয়; যেমন- আল-ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে যে, ইমাম হাসান ইবনে আলী জনগণের উদ্দেশে বলেন: তোমরা কি আমার নির্দেশ পালনের বিষয়ে বাইয়াত করছো এবং যার সাথে আমি যুদ্ধ করব তার সাথে যুদ্ধ করবে, আর যার সাথে সন্ধি করব সন্ধি করবে? এ কথা শোনার পর তারা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ল এবং বাইয়াতের উদ্দেশে ইমাম হুসাইন ইবনে আলীর কাছে গেল। কিন্তু তিনি বললেন, আল্লাহর নিকট আশ্রয় গ্রহণ করছি, যতদিন ভাই হাসান জীবিত আছেন ততদিন তোমাদের সাথে বাইয়াত করব না। অতঃপর তারা ফিরে এসে ইমাম হাসান ইবনে আলীর হাতে বাইয়াত করে।[১০৩] তাবারি (মৃত্যু ৩১০ হি.) বলেছেন, কাইস ইবনে সা’দ এ শর্তসাপেক্ষে বাইয়াত করেন যে, ইমাম হাসান আল্লাহর কিতাব ও রাসূল (স.)-এর সুন্নতের ভিত্তিতে আমল করবেন এবং যারা মুসলমানদের রক্তকে হালাল মনে করে তাদের সাথে যুদ্ধ করবেন। কিন্তু ইমাম হাসান (আ.) শুধুমাত্র আল্লাহর কিতাব ও রাসূল (স.)-এর সুন্নতের ভিত্তিতে আমল করার বিষয়টি মেনে নেন এবং অপর সকল শর্তকে এ দু’টির অন্তর্ভুক্ত বলে আখ্যায়িত করেন।[১০৪] এ ধরনের বর্ণনা থেকে একটি দল এ ফলাফল উপনীত হয়েছেন যে, ইমাম হাসান (আ.) ছিলেন যুদ্ধ বিমুখ এবং সন্ধি প্রিয় একজন মানুষ, আর তাঁর কর্মপন্থা ছিল তার পিতা ও ভাই (ইমাম হুসাইন) থেকে ব্যতিক্রম।[১০৫] রাসূল জাফারিয়ানের মতে, এ সকল শর্ত জুড়ে দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, শুরু থেকেই ইমাম হাসান ইবনে আলী যুদ্ধের ইচ্ছা রাখতেন না এবং সমাজের কর্তা ব্যক্তি হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীন থাকার জন্য নিজের ক্ষমতার পরিধিকে সুরক্ষিত রাখা ছিল তার মূল লক্ষ্য। বরং তার পরবর্তী পদক্ষেপগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, যুদ্ধের প্রতি তিনি বারংবার তাগিদ প্রদান করেছেন।[১০৬] আবুল ফারাজ ইসফাহানি’র মতে, সৈন্যদের পারিশ্রমিক দ্বিগুণ করার পদক্ষেপ ছিল ইমাম হাসান কর্তৃক খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণের পর গৃহীত প্রথম পদক্ষেপগুলোর একটি।[১০৭] মুয়াবিয়ার উদ্দেশে ইমাম হাসানের চিঠির অংশ বিশেষ তাঁর (মহানবি) ইন্তিকালের পর আরবরা তাঁর স্থলাভিষিক্ততাকে কেন্দ্র করে বিবাদে লিপ্ত হলো, কুরাইশ বলল: আমরা তার গোত্রের এবং তাঁর আত্মীয়, তাই হুকুমতের বিষয়ে আমাদের সাথে ঝগড়া-বিবাদ তোমাদের সাজে না। আরবরা এ দলিলকে গ্রহণ করেছিল... আমরা তখন কুরাইশের সামনে একই দলিল উপস্থাপন করলাম যা কুরাইশ অপর আরবদের উদ্দেশে করেছিল। কিন্তু তারা আরবদের বিপরীতে আমাদের সাথে ইনসাফ সুলভ আচরণ করে নি...। কিন্তু আজ এ পদের দিকে তোমার (মুয়াবিয়া) হস্ত প্রসারের ঘটনায় সকলের হতবাক হওয়া উচিত। কেননা তুমি এর জন্য যোগ্য নও... এবং তুমি ইসলামের বিরোধী দলগুলোর একটির সাথে সম্পৃক্ত, তুমি কুরাইশের মাঝে আল্লাহর রাসূল (স.)-এর সবচেয়ে বড় ও নিকৃষ্ট শত্রুর সন্তান... আলী (আ.)-এর শাহাদাতের পর মুসলমানরা খেলাফতকে আমার হাতে সোপর্দ করেছে..., অতএব, বাতিলের প্রতি জোরাজুরি করা থেকে হাত গুটিয়ে নাও এবং আমার বাইয়াতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও; আর এ কথা তোমার ভালো ভাবেই জানা যে, এ বিষয়ে আল্লাহর নিকট আমিই অধিকযোগ্য ব্যক্তি। [আবুল ফারাজ ইসফাহানি, মাকাতিলুত তালিবীন, দারুল মা’রিফাহ, পৃ. ৬৪।]

মুয়াবিয়ার সাথে যুদ্ধ ও সন্ধি

ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো, মুয়াবিয়ার সাথে যুদ্ধ যা সন্ধির মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়।[১০৮] ইরাকের জনগণ হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর সাথে বাইয়াত করে এবং হিজাজ, ইয়েমেন ও ফারসের জনগণের উক্ত বাইয়াতের প্রতি সমর্থন[১০৯] জানায়, পক্ষান্তরে সিরিয়ার জনগণ ইমাম হাসানের সাথে বাইয়াত করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তারা মুয়াবিয়ার হাতে বাইয়াত করে।[১১০] সিরিয়ার জনগণের মুয়াবিয়ার হাতে বাইয়াতের ঘটনাকে তার খেলাফতের সপক্ষে শরয়ী ও আইনগত বৈধতা হিসেবে উপস্থাপনে মুয়াবিয়ার জোরাজুরি তার বিভিন্ন ভাষণ ও ইমাম হাসানের উদ্দেশে লেখা চিঠিগুলো থেকে স্পষ্ট হয়। [১১১] উসমানের মৃত্যুর সময় নিজেকে খেলাফতের জন্য প্রস্তুত[১১২] করা মুয়াবিয়া সৈন্যদলের সাথে ইরাকের উদ্দেশে রওনা হয়।[১১৩] কিছু কিছু প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, ইমাম হাসান (আ.) তার পিতার শাহাদাত ও জনগণের বাইয়াতের পর প্রায় ৫০ দিন যুদ্ধ বা সন্ধির বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেন নি।[১১৪] তিনি সিরীয় বাহিনীর রওয়ানা হওয়ার তথ্য পেয়ে সৈন্যদলের সাথে কুফা ত্যাগ করেন এবং উবাইদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের নেতৃত্বে একটি বাহিনীকে মুয়াবিয়ার মুকাবিলায় প্রেরণ করেন।[১১৫]

দু’ বাহিনীর মাঝে সংঘর্ষ

দু’ বাহিনীর মাঝে সংঘর্ষ ও সিরীয় বাহিনীর পরাজয়ের পর মুয়াবিয়া রাতের আঁধারে উবাইদুল্লাহর উদ্দেশে এ বার্তা পাঠালো যে, হাসান ইবনে আলী আমাকে সন্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন এবং খেলাফতকে আমার হাতে হস্তান্তর করবেন বলে জানিয়েছেন। মুয়াবিয়া উবায়দুল্লাহকে ১০ লক্ষ দিরহাম প্রদানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করার পর উবাইদুল্লাহ্ মুয়াবিয়ার সাথে যোগ দিল। অতঃপর কাইস ইবনে সা’দ ইমাম হাসানের বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করে।[৬০] বালাজুরি’র (মৃত্যু ২৭৯ হি.) বর্ণনার ভিত্তিতে, উবাইদুল্লাহ সিরীয় বাহিনীতে যোগদানের পর ইমাম হাসান (আ.)-এর বাহিনী দুর্বল হয়ে গেছে ভেবে মুয়াবিয়া সর্বশক্তি নিয়ে তাদের উপর আক্রমন করার নির্দেশ দিল, কিন্তু কাইসের নেতৃত্বাধীন ইমাম হাসান (আ.)-এর বাহিনী সিরীয় বাহিনীকে পরাজিত করে। এরপর উবাইদুল্লাহর মত একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাইসকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে মুয়াবিয়া এবার ব্যর্থ হয়।[১১৭]

সাবাত-এ ইমাম হাসান (আ.)-এর অবস্থান

অপরদিকে ইমাম হাসান (আ.) নিজ বাহিনীর সাথে সাবাতে গেলেন। শেইখ মুফিদের ভাষ্যানুযায়ী ইমাম হাসান (আ.) নিজের সাথীদেরকে যাচাই করতে এবং তারা কতটা আজ্ঞাবহ তা খতিয়ে দেখতে একটি খুতবা প্রদান করলেন এবং বললেন: ‘ঐক্য ও সংহতি তোমাদের জন্য বিভেদ ও বিচ্ছেদ অপেক্ষা শ্রেয়...; নিশ্চয়ই যে পরিকল্পনা আমি তোমাদের জন্য গ্রহণ করেছি তা তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের পরিকল্পনা অপেক্ষা শ্রেয়...।’ তাঁর ভাষণের পর লোকেরা একে অপরের সাথে বলতে লাগল যে, তিনি মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধি এবং খেলাফতকে মুয়াবিয়ার নিকট হস্তান্তরের ইচ্ছা পোষণ করছেন। একটি দল তাঁর তাবুতে হামলা চালিয়ে তাঁর জিনিস-পত্র লুট করল এমনকি তাঁর পায়ের তলা থেকে জায়নামাজ টেনে নিল।[১১৮] কিন্তু ইয়াকুবি’র (মৃত্যু ২৯২ হি.) ভাষ্যানুযায়ী, এ ঘটনার নেপথ্য কারণ ছিল, মুয়াবিয়া আলোচনার উদ্দেশে একটি দলকে ইমাম হাসান (আ.)-এর নিকট পাঠায় আলোচনা শেষে ফিরে যাওয়ার সময় সাধারণ জনগণ যেন শুনতে পায় এমন স্বরে তারা পরস্পরের উদ্দেশে বলতে লাগল: আল্লাহর রাসূলের সন্তান মারফত আল্লাহ্ মুসলমানদের রক্ত সুরক্ষিত রেখেছেন এবং ফিতনার আগুন নিভিয়েছেন; তিনি সন্ধি মেনে নিয়েছেন। এ কথা শোনার পর ইমামের বাহিনীর মাঝে বিশৃঙ্খলা দিল এবং তারা তাঁর ইমামের তাবুতে হামলা চালাল।[৬১] এ ঘটনার পর ইমাম হাসান (আ.)-এর ঘনিষ্ট সাথীরা তার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিল, এতদসত্ত্বেও রাতের আঁধারে জনৈক খারেজি[৬২] তার নিকটবর্তী হয়ে বলল: হে হাসান! তুমি মুশরিক হয়ে গিয়েছ, যেভাবে তোমার পিতা মুশরিক হয়েছিল; অতঃপর সে তার হাতে থাকা খঞ্জর দিয়ে ইমামের উরুতে আঘাত করল এবং ঘোড়ার পিঠে থাকা ইমাম মাটিতে পড়ে গেলেন।[১২১] হাসান ইবনে আলী (আ.)-কে একটি চৌকির উপর শুইয়ে মাদায়েন নেয়া হল এবং চিকিৎসার জন্য তাকে সা’দ ইবনে মাসউদ সাকাফি’র বাড়িতে রাখা হলো।[১২২] মুয়াবিয়া ও ইমাম হাসান (আ.)-এর মধ্যকার যুদ্ধের শেষ পরিণতি সন্ধির দিকে গড়ায়। রাসূল জাফারিয়ানের ভাষ্যমতে, জনগণের উদাসীনতা, উদ্ভূত পরিস্থিতি, শিয়াদের জীবন রক্ষা ইত্যাদি কারণে ইমাম হাসান (আ.) সন্ধিচুক্তিকে মেনে নেন।[৬৩] এই চুক্তির মাধ্যমে মুয়াবিয়ার নিকট খেলাফত হস্তান্তরিত হয়।[৬৪]

মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধির ঘটনা

মুয়াবিয়ার উপস্থিতিতে প্রদত্ত খুতবায় ইমাম হাসান (আ.) বলেন: মুয়াবিয়া ইবনে সাখর মনে করে যে, আমি তাকে খেলাফতের যোগ্য ভেবেছি এবং নিজেকে সেটার যোগ্য মনে করি নি, মুয়াবিয়া মিথ্যা বলছে। আল্লাহর কসম! আল্লাহর কিতাব ও রাসূল (স.)-এর ভাষ্যে জনগণের বিষয়ে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হলাম আমরা। কিন্তু আল্লাহর রাসূল (স.)-এর ইন্তিকালের পর থেকে আমরা আহলে বাইত সর্বদা ত্রাস ও নিপীড়নের মাঝে রয়েছি। মহান আল্লাহ্ আমাদের এবং আমাদের উপর জুলুমকারীদের মাঝে বিচার করুন। [তাবারসি, আল-ইহতিজাজ, ১৪০৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৮৮।] ইরাক ও সিরীয় বাহিনীর সংঘর্ষের সময়ে ইমাম হাসান (আ.)-এর উপর হামলার ঐ ঘটনায় তিনি আহত হন এবং চিকিৎসার জন্য তাঁকে মাদায়েন নেয়া হয়।[৬৫] ইমাম হাসান (আ.)-এর চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে কুফার গোত্রপতিদের একটি দল গোপনে মুয়াবিয়ার উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়ে তার প্রতি অনুগত থাকার ঘোষণা দেয়। ঐ পত্রে তারা মুয়াবিয়াকে তাদের দিকে আসতে উৎসাহিত করে এবং হাসান ইবনে আলী (আ.)-কে তার তুলে দেওয়া অথবা তাকে হত্যা করার বিষয়ে তাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।[৬৬] শেইখ মুফিদের (মৃত্যু ৪১৩ হি.) ভাষ্যমতে, ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.) ঐ চিঠি ও উবাইদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের মুয়াবিয়ার সাথে যোগদানের তথ্য পেয়ে এবং নিজের সাথীদের মাঝে অনাগ্রহ ও অলসতা দেখে অনুধাবন করলেন যে, শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় কয়েকজন শিয়াকে সাথে নিয়ে বিশাল সিরীয় বাহিনীর মুকাবিলা করা সহজসাধ্য নয়।[১২৭] যাইদ ইবনে ওয়াহাব জাহনি বলেন, মাদায়েনে চিকিৎসার সময় ইমাম হাসান (আ.) তাকে বলেছিলেন: ‘আল্লাহর কসম! যদি আমি মুয়াবিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়াই তাহলে ইরাকের জনগণ আমার গলা ধরে আমাকে তার (মুয়াবিয়া) হাতে সোপর্দ করবে। আল্লাহর কসম! বন্দি অবস্থায় মুয়াবিয়ার হাতে নিহত হওয়া অথবা অনুগ্রহ করে সে আমাকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকার চেয়ে –যা বনু হাশিমের জন্য চিরস্থায়ী লজ্জার কারণ হবে- সসম্মানে মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধি করা শ্রেয়।’[৬৭]

মুয়াবিয়ার পক্ষ থেকে সন্ধির প্রস্তাব

ইয়াকুবি’র বর্ণনার ভিত্তিতে, যুদ্ধকে সন্ধির দিকে মোড় দেওয়ার বিষয়ে মুয়াবিয়া যেসব কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল সেগুলোর মধ্যে, ইমাম হাসান (আ.)-এর বাহিনীর মধ্যে গুপ্তচর প্রেরণ করে তাদের মাঝে কাইস ইবনে সা’দে’র মুয়াবিয়ার সাথে যোগদানের গুজব ছড়িয়ে দেওয়া এবং কাইস ইবনে সা’দের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর মাঝে এ গুজব প্রচার করা যে, হাসান ইবনে আলী সন্ধির প্রস্তাব গ্রহণ করে নিয়েছেন[১২৯] ইত্যাদি অন্যতম। একইভাবে মুয়াবিয়া তার উদ্দেশে লেখা কুফার জনগণের চিঠিগুলো ও তার আজ্ঞাবহ হওয়ার ঘোষণা দিয়ে লেখা কুফার জনগণ প্রেরিত পত্রগুলো হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর উদ্দেশে পাঠিয়ে তাঁকে সন্ধির প্রস্তাব দেন এবং এ সন্ধির জন্য কিছু শর্তও নিজের জন্য অনিবার্য ঘোষণা করে। শেইখ মুফিদের মতে, ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়াকে বিশ্বাস না করলেও তার কূটচাল ও প্রতারণা সম্পর্কে অবগত ছিলেন, এ কারণে সন্ধির বিকল্প কোন পথ তিনি উন্মুক্ত পেলেন না।[১৩০] বালাজুরি’র প্রতিবেদনে এসেছে যে, মুয়াবিয়া সিল-মোহর করা একটি সাদা কাগজ হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর উদ্দেশে প্রেরণ করেন যাতে যে শর্তই তিনি (ইমাম হাসান) লিখতে চান তা যেন লিখতে পারেন।[১৩১] এমন পরিস্থিতি উপলব্ধি করে ইমাম হাসান (আ.) বিষয়টি সম্পর্কে জনগণের সাথে কথা বলে যুদ্ধ অথবা সন্ধির বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চান। জনগণ আল-বাকিয়্যাহ, আল-বাকিয়্যাহ (বেঁচে থাকতে এবং জীবন-যাপন করতে চাই) শীর্ষক শ্লোগান প্রদান পূর্বক সন্ধি প্রস্তাব মেনে নেয়ার বিষয়ে সমর্থন জানায়।[১৩২] আর এভাবেই ইমাম হাসান (আ.) সন্ধি চুক্তিতে সম্মত হন। ৪১ হিজরির ২৫ শে রবিউল আওয়াল মতান্তরে রবিউস সানী বা জমাদিউল আওয়াল[১৩৪] তারিখ দিনটি সন্ধি চুক্তির তারিখ হিসেবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

সন্ধির শর্তাবলি

সন্ধি চুক্তির ধারা ও নির্ধারিত শর্তাবলির প্রসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন রয়েছে।[১৩৫] যে সকল শর্তাবলি বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে নিম্নোক্ত শর্তাবলি উল্লেখযোগ্য: এই শর্তে খেলাফত মুয়াবিয়ার নিকট হস্তান্তর করা হবে যে, তিনি আল্লাহর কিতাব ও মহানবি (স.)-এর সুন্নত এবং খোলাফায়ে রাশিদীনের কর্মপন্থার ভিত্তিতে আমল করবেন এবং নিজের পর কোন প্রতিনিধি নিযুক্ত করবেন না। এছাড়া শিয়ারাসহ সকল জনগণ নিরাপদে থাকবে।[১৩৬] শেইখ সাদুক বলেছেন: ইমাম হাসান (আ.) এ শর্তে খেলাফতকে মুয়াবিয়ার হাতে সোপর্দ করেছিলেন যে, তিনি (ইমাম হাসান) তাকে (মুয়াবিয়া) আমিরুল মু’মিনীন বলে সম্বোধন করবেন না।[১৩৭] কিছু কিছু সূত্রে উল্লিখিত হয়েছে যে, ইমাম হাসান (আ.) এ শর্ত রেখেছিলেন যে, মুয়াবিয়ার পর খেলাফত তাকে হস্তান্তর করা হবে এছাড়া মুয়াবিয়া তাকে ৫০ লক্ষ দিরহাম প্রদান করবেন।[১৩৮] জাফারি’র বর্ণনার ভিত্তিতে, এ দু’টি শর্ত ইমাম হাসান (আ.)-এর প্রতিনিধি প্রস্তাব করেছিলেন, কিন্তু ইমাম (আ.) তা গ্রহণ করেন নি, উপরন্তু এ বিষয়ের প্রতি তাগিদ করেছিলেন যে, মুয়াবিয়ার পর খলিফা নির্বাচনের বিষয়টি মুসলমানদের শুরার হাতে থাকবে। আর অর্থ বিষয়ক শর্তটির বিষয়েও ইমাম (আ.) বলেছিলেন, মুসলমানদের বাইতুল মালে এমন হস্তক্ষেপের অধিকার মুয়াবিয়া রাখে না।[১৩৯] আবার কেউ কেউ বলেছেন অর্থ বিষয়ক ঐ শর্তটি স্বয়ং মুয়াবিয়া ও তার প্রতিনিধিরা ধার্য করেছিল।[১৪০] খেলাফত থেকে সরে আসার পরও ইমাম হাসান (আ.) ছিলেন শিয়াদের দ্বিতীয় ইমাম, এমনকি যে সকল শিয়ারা সন্ধি চুক্তির বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন তারাও ইমাম হাসান (আ.)-এর ইমামতকে কখনই অস্বীকার করেন নি এবং তিনি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত মহানবি (স.)-এর খান্দান ও বংশধরদের প্রধান ও মুরুব্বি ছিলেন।[১৪১]

প্রতিক্রিয়া ও পরিণতি

ইমাম হাসান (আ.): হে লোকসকল! যদি তোমরা পশ্চিম ও পূর্বে খোঁজো, আমি এবং আমার ভাই ছাড়া আর কাউকে পাবে না যার পিতামহ হলেন আল্লাহর রাসূল (স.)। নিশ্চয়ই মুয়াবিয়া এমন এক বিষয়ে (খেলাফত) আমার সাথে বিবাদে জড়িয়েছে যা ছিল আমার হক। আমার সাথে সে বিবাদে জড়ালেও আমি উম্মতের কল্যাণ ও তাদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে তা থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছি। [ইবনে শাহরে আশুব, আল-মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৩৪।] বিভিন্ন প্রতিবেদনে এসেছে যে, ইমাম হাসান (আ.) সন্ধি চুক্তির পর শিয়াদের একটি দল বিষয়টি নিয়ে দুঃখ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।[১৪২] এমনকি তাদের কেউ কেউ ইমাম (আ.)-কে ভর্ৎসনা করে তাঁকে মুযিল্লুল মু’মিনীন (মু’মিনদেরকে লাঞ্ছিতকারী) বলে আখ্যায়িত করে।[১৪৩] ইমাম তাদের করা প্রশ্ন ও অভিযোগের জবাবে ইমামের সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়ার বিষয়ে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে তাগিদ করেন। আর তার সন্ধির কারণ হিসেবে হুদায়বিয়ার সন্ধির কারণকেই উল্লেখ করেন এবং এ কাজের মাঝে নিহীত প্রজ্ঞা ছিল হযরত খিযির (আ.)-এর সাথে হযরত মুসা (আ.)-এর সফরের প্রজ্ঞার মতো বলে তিনি উল্লেখ করেন।[১৪৪] ঐতিহাসিক বিভিন্ন সূত্রের বর্ণনার ভিত্তিতে, মুয়াবিয়া সন্ধি চুক্তিতে নির্ধারিত কোন শর্তের উপরই আমল করেন নি।[১৪৫] তিনি হুজর ইবনে আদীসহ[১৪৬] ইমাম আলী (আ.)-এর বহুসংখ্যক অনুসারী (শিয়া)-কে হত্যা করেছিলেন। বর্ণিত হয়েছে যে, সন্ধি চুক্তির পর মুয়াবিয়া কুফায় প্রবেশ করে জনসাধারণের উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি বলেন: যে শর্ত মেনে নিয়েছি তা ফিরিয়ে নিচ্ছি এবং যে সকল প্রতিশ্রুতি প্রদান করছি তা পদদলিত করছি।[১৪৭] এছাড়া বলেন: তোমরা নামাজ, রোজা ও হজ করবে এ জন্য আমি তোমাদের সাথে লড়াই করি নি বরং তোমাদের উপর শাসনকার্য পরিচালনার জন্য আমি তোমাদের সাথে লড়েছি।[১৪৮]

মদিনায় অবস্থান ও ধর্মীয় নেতৃত্ব

মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধির পর হাসান ইবনে আলী (আ.), তাঁর কুফায় অবস্থানের বিষয়ে কিছু কিছু শিয়াদের অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি মদিনায় ফিরে আসেন[৬৮] এবং আমৃত্যুকাল মদিনায় অবস্থান করেন এবং এ সময় তিনি শুধু মক্কা[১৫০] ও শাম[১৫১] সফর করেছিলেন। ইমাম আলী (আ.)-এর শাহাদাতের পর তার ওসিয়ত অনুযায়ী তার আওকাফ ও সাদাকাতে’র মুতাওয়াল্লি ছিলেন ইমাম হাসানে মুজতাবা। কাফী’র বর্ণনার ভিত্তিতে ঐ ওসিয়ত ৩৭ হিজরির ১০ জমাদিউল আওয়াল লেখা হয়েছিল।[১৫২]

ধর্মীয় নেতৃত্ব

মদিনার জনগণের জন্য শিক্ষা ও নির্দেশনা বিষয়ক ইমাম হাসান (আ.)-এর বিভিন্ন জলসা ও শিক্ষা-প্রশিক্ষণ সভার প্রতিবেদন পাওয়া যায়; যেমন- ইবনে সা’দ (মৃত্যু ২৩০ হি.), বালাজুরি (মৃত্যু ২৭৯ হি.) এবং ইবনে আসাকির (মৃত্যু ৫৭১ হি.) লিখেছেন যে, হাসান ইবনে আলী ফজরের নামায মসজিদে নববিতে আদায়ের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত ইবাদতে মশগুল থাকতেন। এরপর মসজিদে উপস্থিত মুসল্লি ও বোজোর্গ ব্যক্তিরা তার কাছে বসতেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতেন। যোহরের নামাজের পরও তাঁর একই কর্মসূচী ছিল।[১৫৩] আল-ফুসুলুল মুহিম্মাহ গ্রন্থে এসেছে যে, হাসান ইবনে আলী মসজিদে নববি’তে বসতেন এবং জনগণ তার চতুর্পাশে জমায়েত হতো, অতঃপর তিনি তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতেন।[১৫৪] এতদসত্ত্বেও মাহদি পিশওয়াঈ’র মতে, ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.) তৎকালে জনগণের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি অবজ্ঞা অবহেলার কারণে বাধ্য হয়ে অনাকাঙ্খিত কোণঠাসা অবস্থায় জীবন-যাপন করেন। আর এ বিষয়টিই ঐ সময়ে সামাজিক নৈতিক বিচ্যুতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল।[১৫৫] আল্লামা তেহরানি’র বিশ্বাস, ইমাম হাসানে মুজতাবা (আ.) ও ইমাম হুসাইন (আ.)-এর ইমামতকালীন সময়টি ছিল সবচেয়ে কঠিন ও অন্ধকার সময় যা বনু উমাইয়া শাসকদের কারণে সৃষ্টি হয়েছিল। এ দুই মহান ইমামের দীর্ঘ জীবন ও ইমামত এবং বেলায়েতের সময়কাল বিবেচনায় স্বাভাবিকভাবে হাজার হাজার হাদিস, খুতবা, উপদেশ বাণী ও কুরআনের তাফসীর বিদ্যমান থাকার কথা থাকলেও তাঁদের থেকে বর্ণিত খুতবা, প্রজ্ঞা বাণীর সংখ্যা অতি অল্প।[১৫৬]

সামাজিক অবস্থান

ঐতিহাসিক বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইমাম হাসান (আ.) বিশেষ সামাজিক অবস্থানের অধিকারী ছিলেন। ইবনে সা’দের (মৃত্যু ২৩০ হি.) প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জনগণ হজের মৌসুমে হাসান ইবনে আলী (আ.)-কে দেখে জনগণ তাঁর থেকে বরকত নিতে তাঁর উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ত এবং পরিস্থিতি এমন হতো যে, হুসাইন ইবনে আলী (আ.) কয়েকজনের সহযোগিতায় তাঁর চতুর্পাশ থেকে জনগণকে সরিয়ে দিতেন।[১৫৭] এছাড়া, বর্ণিত হয়েছে যে, জলিলুল কদর সাহাবি ইবনে আব্বাস[১৫৮] ইমাম হাসান (আ.)-এর চেয়ে বয়সে বড় হওয়া সত্ত্বেও ইমাম হাসান ইবনে আলী ঘোড়ায় চড়ার সময় তিনি তার ঘোড়ার লাগাম ধরে রাখতেন।[১৫৯]

মুয়াবিয়ার সাথে অসহযোগিতা এবং রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা

ইমাম হাসান (আ.)-এর কুফা ত্যাগের পর খারেজিদের একটি দল মুয়াবিয়ার সাথে যুদ্ধের লক্ষ্যে নুখাইলায় সমবেত হলো। এ সময় মুয়াবিয়া হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর উদ্দেশে লেখা একটি চিঠিতে তাঁকে ফিরে যেয়ে ঐ দলটির সাথে যুদ্ধ করার অনুরোধ করেন। কিন্তু ইমাম (আ.) মুয়াবিয়ার অনুরোধ প্রত্যাখান করে তার উত্তরে লিখেন: যদি কোন আহলে কিবলার সাথে যুদ্ধ করতে চাইতাম তবে তোমার সাথে যুদ্ধ করতাম।[১৬০] কিছু কিছু বর্ণনায় এসেছে যে, ইমাম মুজতাবা (আ.) মুয়াবিয়ার সাথে সহযোগিতা না করে তার পদক্ষেপের বিরোধিতা করলেও তার প্রেরিত উপহারগুলো গ্রহণ করতেন।[১৬১] মুয়াবিয়া হাদিয়ার পাশাপাশি যে অর্থ প্রেরণ করতেন তার পরিমাণ ১০ লক্ষ দিরহাম তথা ১ লক্ষ দিনার বলে উল্লিখিত হয়েছে।[৬৯] কিছু কিছু বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, তিনি কখনো এর কিছু অংশ দিয়ে নিজের কর্য পরিশোধ করতেন এবং অবশিষ্ট অংশ নিজের আত্মীয় ও কর্মচারীদের মাঝে বিতরণ করে দিতেন।[৭০] আবার কখনো সকল উপহারই তিনি অন্যকে দান করে দিতেন।[১৬৫] এর বিপরীতে মুয়াবিয়ার প্রেরিত উপহার গ্রহণ না করার বিষয়েও প্রতিবেদন বিদ্যমান রয়েছে।[১৬৬] এ ধরনের প্রতিবেদন, বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও দ্বিধার জন্ম দিত।[৭১] কালাম শাস্ত্রের দিক থেকে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন সৃষ্টি হতো; যেমন- সাইয়্যিদ মুর্তাযা, মুয়াবিয়ার পক্ষ থেকে প্রেরিত উপহার ও অর্থ গ্রহণ ইমাম হাসান (আ.)-এর জন্য বৈধ এমনকি অপরিহার্য জ্ঞান করেছেন; আর তা, জোরপূর্বক ক্ষমতাসীন হওয়া শাসকের কাছ থেকে জনগণের সম্পদ হস্তগত করে তা জনগণের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার অবশ্যকতার দলীলের ভিত্তিতে।[১৬৮]

উমাউইদের আচরণ

ইমাম হাসান (আ.)-এর সাথে উমাউইদের অন্যায় আচরণ সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়।[১৬৯] এছাড়া, আল-ইহতিজাজ গ্রন্থে ইমাম হাসান (আ.) এবং মুয়াবিয়া ও তার কর্মকর্তাদের মধ্যকার বিভিন্ন মুনাজিরা (বিতর্ক) উল্লিখিত হয়েছে। এ সকল মুনাজিরায় তিনি আহলে বাইত (আ.)-এর অবস্থান ও মর্যাদার পক্ষে কথা বলেছেন এবং শত্রু পক্ষের অবস্থান ও তাদের আসল রূপ ও স্বকীয়তা স্পষ্ট করেছেন।[১৭০] আল-ইহতিজাজ গ্রন্থে উল্লেখিত ঘটনাটি সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। মুয়াবিয়ার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় -যেখানে আমর ইবনে উসমান, আমর ইবনে আস, উতবাহ ইবনে আবি সুফিয়ান, ওয়ালিদ ইবনে উকবাহ ও মুগাইরাহ ইবনে শো’বাহ উপস্থিত ছিল- ইমাম মুজতাবা (আ.) পবিত্র কুরআনের আয়াত, রেওয়ায়েত ও ঐতিহাসিক বিভিন্ন সনদ উপস্থাপন পূর্বক তাদেরকে পরাভূত করেন এবং ইমাম আলী (আ.) ও আহলে বাইতের অধিকার ও মর্যাদাকে এমনভাবে তুলে ধরেন যে, মুনাযিরার ঐ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে করা মুয়াবিয়ার ভবিষ্যদ্বাণী (মুনাযিরার আহবানকারীদের পরাজয় ও লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়টি) সত্য হয়ে যায়।[১৭১]

শাহাদাত ও দাফন

বিভিন্ন শিয়া ও সুন্নি সূত্রের বর্ণনার ভিত্তিতে ইমাম হাসান (আ.)-কে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়।[১৭২] কিছু কিছু বর্ণনার ভিত্তিতে তাকে কয়েকবার বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি প্রতিবারই বেঁচে যান।[১৭৩] তাঁকে সর্বশেষ বিষ প্রয়োগ –যাতে তিনি শহীদ হন- সম্পর্কে শেইখ মুফিদ বলেছেন, ইয়াযিদকে নিজের পরবর্তী খলিফা হিসেবে মুয়াবিয়া জনগণ থেকে বাইয়াত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর জো’দা বিনতে আশআসের (ইমাম হাসান (আ.)-এর স্ত্রী) জন্য ১ লক্ষ দিরহাম প্রেরণ করেন এবং ইমাম হাসান (আ.)-কে বিষপ্রয়োগের শর্তে ইয়াযিদের সাথে তার বিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।[১৭৪] হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর হত্যাকারী হিসেবে জো’দা’র নাম সুন্নি সূত্রগুলোতেও উল্লিখিত হয়েছে।[১৭৫] মাদেলুঙ্গের মতে, মুয়াবিয়ার স্থলাভিষিক্তিতা এবং ইয়াযিদকে তার পরবর্তী খলিফা হিসেবে নির্বাচনের বিষয়টি, মুয়াবিয়ার অনুপ্রেরণায় জো’দা কর্তৃক ইমাম হাসানকে বিষ প্রয়োগ সংশ্লিষ্ট বর্ণনাটির সত্য হওয়ার সপক্ষে দলিল স্বরূপ।[১৭৮] অপর প্রতিবেদনগুলোতে তাঁকে বিষ প্রদানকারী হিসেবে তাঁর আরেক স্ত্রী ‘হিন্দ’ [১৭৭] অথবা তাঁর একজন খাদেমের [১৭৮] নাম উল্লিখিত হয়েছে। বলা হয়েছে যে, হাসান ইবনে আলী (আ.) বিষ প্রয়োগের ৩[১৭৯] অথবা ৪০[১৮০] দিন মতান্তরে ২ মাস[১৮১] পর শহীদ হন। বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.)-এর শাহাদাতের পর মদিনা শহর জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।[১৮২] আরও বলা হয়েছে তাকে দাফনের সময় (জান্নাতুল) বাকী কবরস্থান জনসমুদ্রে পরিণত হয় এবং ৭ দিন পর্যন্ত বাজারগুলো বন্ধ থাকে।[১৮৩] কিছু কিছু সুন্নি সূত্রে উল্লিখিত হয়েছে যে, হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর মৃত্যু ছিল আরবদের জন্য প্রথম লাঞ্ছনা।[১৮৪]

মহানবির পাশে দাফনে বাধা

কিছু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম হাসান (আ.) তার ভাই ইমাম হুসাইন (আ.)-কে ওসিয়ত করেছিলেন মৃত্যুর পর যেন তাকে তার পিতামহ রাসূলুল্লাহ (স.)-এর পাশে দাফন করা হয়।[১৮৫] একটি বর্ণনার ভিত্তিতে ইমাম হাসান ইবনে আলী বিষয়টি হযরত আয়েশার কাছেও বলেছিলেন এবং তিনিও তা মেনে নিয়েছিলেন।[১৮৬] আনসাবুল আশরাফ গ্রন্থের এক বর্ণনার ভিত্তিতে, এ ওসিয়ত সম্পর্কে জানতে পেরে মারওয়ান ইবনে হাকাম বিষয়টি মুয়াবিয়াকে জানায় এবং মুয়াবিয়া তাকে এ কাজে কঠোরভাবে বাধা প্রদানের নির্দেশ দেয়।[১৮৭] শেইখ মুফিদ (মৃত্যু ৪১৩ হি.), তাবারসি (মৃত্যু ৫৪৮ হি.) ও ইবনে শাহরে আশুব (মৃত্যু ৫৮৮ হি.) বর্ণিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইমাম হাসান (আ.) ওসিয়ত করেছিলেন যেন প্রতিশ্রুতি নবায়নের (তাজদিদে আহ্‌দ)) জন্য তার দেহ মোবারককে মহানবি (স.)-এর কবরের পাশে নেয়া হয়, অতঃপর তাকে যেন তার দাদি ফাতিমা বিনতে আসাদের পাশে দাফন করা হয়।[৭২] ঐ প্রতিবেদন গুলোতে এসেছে যে, দাফনের সময় যেকোন প্রকার সংঘাত এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি হাসান ইবনে আলী উল্লেখ করেছিলেন, [১৮৯] যেন কোন রক্তপাতের ঘটনা না ঘটে।[১৯০] বানী হাশিম ইমাম মুজতাবাকে বহনকারী খাটিয়াটি (তাবুত) নিয়ে মহানবি (স.)-এর কবরের দিকে গেলে তাঁকে মহানবি (স.)-এর পাশে দাফনে বাধা দিতে মারওয়ান ও বানী উমাইয়ার একটি সশস্ত্র দল তাদের সামনে অবস্থান নেয়।[১৯১] আবুল ফারাজ ইসফাহানী (মৃত্যু ৩৫৬ হি.) লিখেছেন, হযরত আয়েশা একটি খচ্চরের পিঠে চড়ে বানী উমাইয়া ও মারওয়ানের উদ্দেশে সাহায্যের আহবান জানান।[৭৩] বালাজুরির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যখন আয়েশা দেখলেন যে, দ্বন্দ্ব ও বিবাদ শুরু হয়েছে এবং রক্তপাত ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তখন তিনি বললেন: এ গৃহ, আমার গৃহ এবং এখানে আমি কাউকে দাফন করার অনুমতি দেব না।[১৯৩] ইবনে আব্বাস সশস্ত্র হয়ে ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আসা মারওয়ানের উদ্দেশে বললেন, হাসান ইবনে আলী (আ.)-কে রাসূল (স.)-এর কবরের পাশে দাফন করার ইচ্ছা আমাদের নেই; শুধু বিদায় নিতে এবং মহানবি (স.)-এর সাথে প্রতিশ্রুতি নবায়ন করতে এসেছি, যদি ইমাম তাঁকে মহানবি (স.)-এর কবরের পাশে দাফন করার বিষয়ে ওসিয়ত করতেন তাহলে আমরা তা করতাম এবং কেউ আমাদেরকে এ কাজে বাধা দিতে পারত না। এরপর ইবনে আব্বাস উষ্ট্রের যুদ্ধে আয়েশার উপস্থিতি প্রসঙ্গে কিছু কথা বলে পরোক্ষভাবে তাকে তিরস্কার করেন।[৭৪] আয়েশার উদ্দেশে ইবনে আব্বাস নিম্নোক্ত কবিতাটি আবৃতি করেন: تجمَّلتِ تَبَغَّلتِ و إن عِشتِ تَفَيَّلتِ لَکِ ثُمُن و بالکلِّ تصَرُّفتِ তুমি উষ্ট্রের পিঠে আরোহন করেছো (জামালের যুদ্ধে), আর আজ চড়েছো খচ্চরের পিঠে, যদি বেঁচে থাকো তবে হাতির পিঠেও তুমি চড়বে। (নবির সম্পদ থেকে) তোমার পাওনা ছিল ১ অষ্টমাংশের মধ্যে, অথচ তুমি পুরোটাই দখল করে নিলে।[সূত্র প্রয়োজন] একইভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, বাধা দিতে আসা লোকেরা বললো: আমরা এটাকে মেনে নেব না যে, উসমানকে শহরের শেষ প্রান্তে দাফন করা হবে, কিন্তু হাসান ইবনে আলীকে নবি’র পাশে।[১৯৫] এ সময় বানী হাশিম ও বানী উমাইয়ার মধ্যে সংঘর্ষের সম্ভাবনা দেখা দেয়;[১৯৬] কিন্তু ভাইয়ের ওসিয়ত অনুযায়ী ইমাম হুসাইন (আ.) ঐ সংঘাত রোধ করেন এবং ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর দেহ মোবারক (জান্নাতুল) বাকী কবরস্থানে ফাতিমা বিনতে আসাদের পাশে সমাহিত করা হয়।[১৯৭][১৯৮] ইবনে শাহরে আশুবের বর্ণনায় এসেছে যে, বানী উমাইয়া ইমাম হাসান মুজাতাবা (আ.)-এর দেহ মোবারককে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করে। ঐ বর্ণনার ভিত্তিতে, তাঁর লাশ থেকে ৭০টি তীর বের করা হয়েছিল।[১৯৯]

শাহাদাতের তারিখ

ইমাম হাসান (আ.)-এর শাহাদাতের তারিখ মতান্তরে ৪৯, ৫০ বা ৫১ হিজরি বলে উল্লিখিত হয়েছে।[২০০] এছাড়া, এ প্রসঙ্গে অপর বর্ণনাও বিদ্যমান রয়েছে।[২০১] কিছু কিছু গবেষক বিভিন্ন দলিল-প্রমাণ (কারীনাহ)-এর ভিত্তিতে ৫০ হিজরিকে সঠিক বলেছেন।[২০২] তাঁর শাহাদাতের ঘটনা কোন মাসে ঘটেছিল এ সম্পর্কে শিয়া সূত্রগুলোতে সফর মাস[২০৪] এবং আহলে সুন্নতের অধিকাংশ সূত্রে রবিউল আওয়াল মাসের[২০৫] নাম উল্লিখিত হয়েছে।[২০৬] শাহাদাতের দিন সম্পর্কে শিয়া সূত্রগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন দিবসের কথা উল্লিখিত হয়েছে;[৭৫] শেইখ মুফিদ,[২০৭] শেইখ তুসি[২০৮] (মৃত্যু ৪৬০ হি.), তাবারসি[৭৬] ও ইবনে শাহরে আশুবের[২১০] (মৃত্যু ৫৮৮ হি.) মতো অনেকে ২৮শে সফর বলে উল্লেখ করেছেন। পক্ষান্তরে শহীদে আওয়াল (মৃত্যু ৭৮৬ হি.) ৭ই সফর[২১১] এবং কুলাইনি[২১২] সফর মাসের শেষ দিনকে উল্লেখ করেছেন। ইয়াদুল্লাহ মাকদেসি, এ বিষয় বিদ্যমান বিভিন্ন অভিমত নিয়ে গবেষণার পর ২৮ সফর তারিখটিকে অধিক গ্রহণযোগ্য বলেছেন।[২১৩] হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর শাহাদাতের তারিখের বিষয়ে এখতেলাফের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে শাহাদাতের সময় তার বয়স ৪৬[২১৬] অথবা ৪৭[৭৭] বা ৪৮[২১৮] বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বৈশিষ্ট ও তাৎপর্য

ইয়াকুবির (মৃত্যু ২৯২ হি.) ভাষ্যানুযায়ী, বাহ্যিক ও আচরণগত দিক থেকে হাসান ইবনে আলী (আ.) ছিলেন আল্লাহর রাসূল (স.)-এর সবচেয়ে সাদৃশ।[২১৯] তিনি ছিলেন মধ্যম উচ্চতার এবং তার মুখভর্তি শ্মশ্রু ছিল।[২২০] এবং তিনি দাড়িতে কালো রঙয়ের খিযাব করতেন।[২২১] তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিভিন্ন ফজিলত ও বৈশিষ্ট ইসলামি সূত্রগুলোতে উল্লিখিত হয়েছে।

মর্যাদা

হাসান ইবনে আলীর ব্যক্তিগত মর্যাদা সম্পর্কে বহুসংখ্যক বর্ণনা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সূত্রে উল্লিখিত হয়েছে:

মহানবি (স.) তাকে অত্যধিক ভালবাসতেন

হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর প্রতি মহানবি (স.)-এর বিশেষ ভালবাসা প্রসঙ্গে বহুসংখ্যক রেওয়ায়েত উল্লিখিত হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে যে, মহানবি (স.) হাসান (আ.)-কে কাঁধে নিয়ে বলতেন: হে আল্লাহ্ আমি তাকে ভালবাসি, অতএব, তুমিও তাকে ভালবাসো।[২২২] কখনো কখনো মহানবি (স.) সিজদায় গেলে হাসান ইবনে আলী (আ.) তাঁর (স.) পিঠে চড়ে বসতেন, আর তিনি স্বেচ্ছায় নীচে না নেমে যাওয়া পর্যন্ত তিনি (স.) সিজদা থেকে মাথা তুললেন না। সিজদা দীর্ঘ হওয়া সম্পর্কে সাহাবিরা যখন প্রশ্ন করতেন, তখন তিনি বলতেন: আমি চেয়েছি সে স্বেচ্ছায় নেমে আসুক।[২২৩] ফারায়িদুস সিমতাইন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, মহানবি (স.) তার সম্পর্কে বলেছেন: সে বেহেশতি যুবকদের সর্দার এবং আমার উম্মতের মাঝে আল্লাহর হুজ্জাত...। যে তাকে অনুসরণ করবে সে আমাকে অনুসরণ করেছে এবং যে তার নাফরমানী করে সে আমার থেকে নয়।[২২৪]

তার সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের কয়েকটি আয়াত

হাসান ইবনে আলী (আ.) মহানবি (স.)-এর আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য। মুফাসসিরদের মতে, পবিত্র কুরআনের বেশ কয়েকটি আয়াত তার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে এবং এগুলো তার ফযিলত সমূহের অন্যতম।[২২৫] এছাড়া, বহুসংখ্যক মুফাসসির বিভিন্ন রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে আয়াতে মাওয়াদ্দাতের শানে নুযুল হলো মহানবি (স.)-এর আহলে বাইত বলে মত প্রকাশ করেছেন।[৭৮] উক্ত আয়াতে মহানবি (স.)-এর রিসালতের পারিশ্রমিক হিসেবে আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসাকে উল্লেখ করা হয়েছে। নাজরানের খ্রিষ্টানদের সাথে মুবাহালা’র ঘটনায় অবতীর্ণ ‘আয়াতে মুবাহালা’য় ‘আবনাআনা’র ক্ষেত্রে ইমাম হাসান (আ.) ও তাঁর ভাইয়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।[২২৭] একইভাবে আসহাবে কিসা’র শানে অবতীর্ণ তাতহিরের আয়াতটি –ইমাম মুজতাবাও যাদের একজন- ইমামগণের নিষ্পাপত্ব প্রমাণের দলিল হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে।[২২৮]

ইবাদত ও আল্লাহর সাথে সংযোগ

ওজু ও নামাজের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময় তার পা দু’টিতে কম্পন সৃষ্টি হতো এবং তার রঙ হলুদ হয়ে যেত।[২২৯] আবু খাইসামাহ বলেন: নামাজে দাঁড়ানোর সময় ইমাম হাসান তার সবচেয়ে ভালো পোশাকটি পরতেন। তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: মহান আল্লাহর সুন্দর এবং সুন্দরকে পছন্দ করেন। আর আমি সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরতে চাই এবং আমার প্রতিপালকের সামনে সেজেগুজে হাজির হতে চাই।[২৩০] ইমাম সাজ্জাদ (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ্ সুবহানাহু’র স্মরণে থাকা ব্যতীত কোন অবস্থায় তাকে দেখা যায় নি।[২৩১]

পায়ে হেটে হজে গমন

ইমাম হাসান মুজতাবা বহুবার পায়ে হেটে হজ করেছেন, তাঁর থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলতেন: আমি লজ্জিত হই যে, প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাত করব অথচ তার গৃহের দিকে কদম ওঠাবো না।[২৩২] বলা হয়েছে তিনি ১৫[২৩৩] অথবা ২০[২৩৪] বা ২৫[২৩৫] বার পায়ে হেটে হজে গিয়েছেন। অথচ সবচেয়ে সুন্দর ও দামি উট তাঁর পেছনে পেছনে চলতো।[২৩৬]

সামাজিক বৈশিষ্ট

বিভিন্ন সূত্রে তাঁর সামাজিক বিভিন্ন বৈশিষ্ট সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে: তাঁর সহিষ্ণুতার প্রশংসা করা হয়েছে ইসলামি সূত্রসমূহে তার ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিবেদন উল্লিখিত হয়েছে এবং তাঁকে ‘হালিম’ (সহিষ্ণু ও অত্যধিক ধৈর্যশীল) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।[২৩৭] আহলে সুন্নতের কিছু কিছু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, মারওয়ান ইবনে হাকাম তাঁর সাথে শত্রুতা পোষণ ও তাঁকে মহানবির (স.) পাশে দাফন করতে বাধা দিলেও তাঁর জানায় অংশগ্রহণ করেছিল এবং তাঁকে বহনকারী খাটিয়াটি ধরেছিল। যখন তাকে বলা হল যে, তুমি তো হাসান ইবনে আলী যখন জীবিত ছিলে তখন তাকে কষ্ট দিয়েছ, তখন সে বলল, আমি এমন এক ব্যক্তিকে কষ্ট দিয়েছি যার ধৈর্য ছিল পাহাড়সম।[২৩৮] বর্ণিত হয়েছে যে, সিরিয়ান জনৈক ব্যক্তি ইমাম হাসান (আ.)-কে দেখে তাঁকে গালি দিল। লোকটি চুপ করার পর ইমাম হাসান (আ.) তাকে সালাম করলেন অতঃপর মুচকি হেসে বললেন: এই শহরে মনে হয় তুমি অপরিচিত। অতঃপর বললেন, তোমার যদি কোন প্রয়োজন থাকে তা আমরা পূরণ করব। লোকটি কেঁদে ফেলল এবং বললো: মহান আল্লাহ্ জানেন যে তার রিসালাতকে কোথায় স্থান দিতে হবে।[৭৯] খাজা নাসিরুদ্দিনের সাথে সম্পৃক্ত সালাওয়াতে (দরুদ) –যাতে ইমাম মাহদি (আ.)-এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট গণনা করা হয়েছে- ইমাম মাহদি (আ.)-কে ইমাম হাসান (আ.)-এর ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার অধিকারী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।[সূত্র প্রয়োজন] বিভিন্ন ইসলামি সূত্রে শিয়াদের দ্বিতীয় ইমামকে দানশীল ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচয় করা হয়েছে। তাকে ‘কারিম’, ‘সাখি’ ও ‘জাওয়াদ’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।[২৪০] বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি ২ বার নিজের সমস্ত সম্পদকে আল্লাহর রাস্তায় দান করেছিলেন এবং ৩ বার নিজের সম্পদকে দু’ভাগে ভাগ করে অর্ধেক নিজের জন্য রাখেন এবং বাকি অর্ধেক দুস্থদের মাঝে বিতরণ করে দেন।[২৪১] ইবনে শাহরে আশুব তার মানাকিব গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম হাসান (আ.)-এর শাম (সিরিয়া) সফরে মুয়াবিয়া তাঁকে মূল্যবান উপহার প্রদান করেছিলেন। তিনি মুয়াবিয়ার কাছ থেকে বের হয়ে, তার জুতা মেরামত করে দেওয়া এক খাদিমকে সব উপহারই দিয়ে দেন।[২৪২] আরও বর্ণিত হয়েছে যে, একদা ইমাম হাসান (আ.) শুনলেন জনৈক ব্যক্তি দোয়া করছে যেন আল্লাহ্ তাকে ১০ হাজার দিরহাম দান করেন। অতঃপর তিনি বাড়ি গেলেন এবং ঐ পরিমাণে অর্থ তাঁর জন্য পাঠিয়ে দিলেন।[৮০] বর্ণিত আছে যে, এই দানশীলতার কারণে তিনি ‘কারিমে আহলে বাইত’ উপাধীতে ভূষিত হন।[২৪৪] কিন্তু কোন হাদীসে এমন কিছু উল্লিখিত হয় নি। এছাড়া, সাধারণ জনগণকে সাহায্য করার বিষয়েও বিভিন্ন প্রতিবেদন উল্লিখিত হয়েছে, এমনকি বর্ণিত হয়েছে যে, অপরকে সাহায্য করার জন্য তিনি এ’তেকাফ ও তাওয়াফকে অসম্পূর্ণ রাখতেন; এ কাজের দলীল হিসেবে তিনি মহানবি (স.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস উল্লেখ করতেন যে, তিনি (স.) বলেছেন, যে তার মু’মিন ভাইয়ের কোন প্রয়োজন পূরণ করবে সে ঐ ব্যক্তির মতো যে সারা বছর জুড়ে ইবাদত করেছে।[২৪৫] ইমাম হাসান (আ.)-এর ইবাদত প্রসঙ্গে: وقيل عن عبادته: كَانَ إِذَا تَوَضَّأَ ارتَعَدَتْ مَفَاصِلُهُ وَ اصْفَرَّ لَوْنُهُ...وإِذَا بَلَغَ بَابَ الْمَسْجِدِ رَفَعَ رَأْسَهُ وَ يَقُولُ إِلَهِي ضَيْفُكَ بِبَابِكَ يَا مُحْسِنُ قَدْ أَتَاكَ الْمُسِي‌ءُ فَتَجَاوَزْ عَنْ قَبِيحِ مَا عِنْدِي بِجَمِيلِ مَا عِنْدَكَ يَا كَرِيمُ‌. ওজু করার সময় তার শরীর কাঁপত এবং তাঁর চেহারার রঙ বদলে যেত... মসজিদের প্রবেশ দ্বারে পৌঁছে বলতেন: হে মুহসিন (সৎকর্মশীল)! অসৎকর্মশীল তোমার দরবারে এসেছে, অতএব, তোমার অনুগ্রহের বিপরীতে আমার মন্দ কর্মগুলোকে উপেক্ষা কর। [ইবনে শাহরে আশুব, আল-মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ১৪।]

অধিনস্তদের সাথে বিনয়ী আচরণ

বর্ণিত হয়েছে যে, একদা তিনি একদল দুস্থ লোকদের মাঝ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, এ সময় তারা রুটির টুকরো খাচ্ছিল। তারা ইমামকে দেখে তাদের সাথে খাদ্য গ্রহণের আমন্ত্রণ জানায়, হযরত ইমামও ঘোড়া থেকে নেমে তাদের সাথে ঐ রুটি আহার করেন এবং সকলেই পরিতৃপ্ত হল। অতঃপর তিনি তাদেরকে আমন্ত্রণ জানালেন এবং তাদেরকে খাদ্য ও বস্ত্র দিলেন।[২৪৬] আরও বর্ণিত হয়েছে যে, তারই এক কর্মচারী শাস্তির যোগ্য এক ভুল করে বসলো। ঐ কর্মচারী বললো: ((والعافین عن الناس)), হাসান ইবনে আলী (আ.) বললেন: তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। ঐ খাদেম বললো; ((واللهُ یحبُّ المُحسِنِين)) ইমাম মুজতাবা (আ.) বললেন: তোমাকে আল্লাহর রাস্তায় মুক্ত করে দিলাম এবং যে পারিশ্রমিক তোমাকে দিতাম তার দ্বিগুণ তোমাকে প্রদান করব।[২৪৭]

আধ্যাত্মিক মীরাস

ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর বাণীর সমষ্টি ‘মুসনাদুল ইমামিল মুজতাবা’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর থেকে বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা প্রায় ২৫০ বলে উল্লিখিত হয়েছে।[২৪৮] এ সকল রেওয়ায়েতের কিছু অংশ স্বয়ং ইমাম হাসান (আ.) সম্পর্কিত এবং কিছু অংশ তিনি আল্লাহর রাসূল (স.), ইমাম আলী (আ.) ও ফাতিমা (সা. আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন।[২৪৯] ‘মুসনাদুল ইমামিল মুজতাবা (আ.)’ গ্রন্থে ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর বাণী-উক্তি ও পত্র সংকলিত হয়েছে। তাঁর বাণীগুলো খুতবা, উপদেশবাণী, কথোপকথন, দোয়া, মুনাযিরা এবং আকিদা ও ফিকাহগত বিষয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মাসআলা আকারে সনদ সহকারে বর্ণিত হয়েছে।[২৫০] ‘বালাগাতুল ইমামিল হাসান’ গ্রন্থেও এ সকল রেওয়ায়েত, তাঁর সাথে সম্পৃক্ত কবিতাগুলোসহ সংকলিত হয়েছে। আহমাদি মিয়ানজি তার ‘মাকাতিবুল আইম্মাহ’ গ্রন্থে হাসান ইবনে আলী (আ.) থেকে ১৫টি চিঠির কথা উল্লেখ করেছেন; এগুলোর মধ্যে মুয়াবিয়াকে লেখা ৬টি, যিয়াদ ইবনে আবিহকে লেখা ৩টি, কুফার জনগণের উদ্দেশে ১টি এবং হাসান বসরির উদ্দেশে ১টি পত্র বলে উল্লিখিত হয়েছে।[২৫১] এছাড়া, মিয়ানজি তার গ্রন্থে ইমাম হাসান (আ.) থেকে ইমাম হুসাইন (আ.), মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়া, কাসিম ইবনে হাসান এবং জুনাদাহ ইবনে আবি উমাইয়ার উদ্দেশে করা ৭টি ওসিয়ত সংকলন করেছেন।[২৫২] আযিযুল্লাহ আতারুদি ইমাম হাসান মুজাতাবা (আ.) থেকে হাদিস বর্ণনাকারী ১৩৮ জনের নাম সংকলিত করেছেন।[২৫৩] শেইখ তুসিও তার ৪১ জন সাহাবির নাম উল্লেখ করেছেন।[২৫৪] ইমাম হাসান ইবনে আলীর কিছু অমীয়বাণী ‘মানুষের সাথে ঠিক তেমন আচরণ কর, যেমন আচরণ তুমি তাদের থেকে আশা কর।’[৮১] ‘এমন ব্যক্তির সাথে ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ করো না যার সম্পর্কে জানো না যে, সে কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় যাবে।’[২৫৭] ‘যদি কেউ সালাম করার পূর্বে কথা বলে, তার কথার উত্তর দিও না।’[২৫৮] জনৈক ব্যক্তি হক ও বাতিলের দূরত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেন: ‘চার আঙ্গুল; যা কিছু চোখে দেখবে তা সত্য, আর যা কিছু কানে শুনবে তার অধিকাংশই বাতিল।’[২৫৯] সিবতুন নাবি আন্তর্জাতিক কংগ্রেস সিবতুন নাবি আন্তর্জাতিক কংগ্রেস ১৩৯৩ ফার্সি সনের তীর মাসে আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থাসহ অপর কয়েকটি সংস্থার উদ্যোগে তেহরানে অনুষ্ঠিত হয়। ঐ কংগ্রেসে প্রায় ১৩০টি প্রবন্ধ জমা হয়, যার মধ্য হতে প্রকাশের লক্ষ্যে ৭০টি প্রবন্ধ নির্বাচন করা হয়।[২৬১] সিবতুন নাবি আন্তর্জাতিক কংগ্রেসের নির্বাচিত প্রবন্ধসমূহ ৩ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে।

মেগা সিরিয়াল ‘তানহা তারিন সার্দার’

১৩৭৫ ফার্সি সনে ইরানের ১নং চ্যানেল থেকে মেগা সিরিয়াল ‘তানহাতারিন সার্দার’ সম্প্রচারিত হয়। এতে ইমাম হাসান ইবনে আলী (আ.)-এর জীবনী, মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধিচুক্তির ঘটনা, মুসলিম সমাজের তৎকালীন অবস্থা, তার জীবদ্দশা ও শাহাদাতোত্তর সময়ে শিয়াদের অবস্থা ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।[২৬২]

গ্রন্থ পরিচিতি

ইমাম হাসান ইবনে আলী (স.) সম্পর্কে বহুসংখ্যক গ্রন্থ ও নিবন্ধ রচিত এবং প্রকাশিত হয়েছে। ‘কিতাব শেনাসিয়ে ইমাম মুজাতাবা (আ.)’ শিরোনামে রচিত নিবন্ধগুলোতে প্রায় ১৩০টি প্রকাশিত ও হস্তলিখিত গ্রন্থের কথা উল্লিখিত হয়েছে, যেগুলো আরবি, ফার্সি, তুর্কি ও উর্দু ইত্যাদি ভাষায় রচিত হয়েছে।[২৬৩] ঐ সকল গ্রন্থগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি গ্রন্থ হলো: সুলায়মান ইবনে আহমাদ তাবরানি (মৃত্যু ৩৬০ হি.) রচিত ‘আখবারুল হাসান ইবনি আলী’ জাফার মুর্তাযা আমেলি রচিত ‘আল-হায়াতুস সিয়াসিয়াহ লিল-ইমামিল হাসান’ বাকির শারিফ কারাশি রচিত ‘হায়াতুল ইমামিল হাসান ইবনি আলী’ রাযী আলে ইয়াসীন রচিত ‘সুলহুল হাসান’; গ্রন্থটি আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী ১৩৪৮ ফার্সি সনে ‘সোলহে ইমাম হাসান (আ.): পুরশোকুহ-তারিন নারমেশে কাহরামানানেহ তারিখ’ শিরোনামে ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেছেন।[২৬৪] রাসূলি মাহাল্লাতি রচিত ‘যেন্দেগানি ইমাম হাসান’। কামেল সুলায়মান রচিত ‘আল-হাসান ইবনে আলী দিরাসাতুন ওয়া তাহলিল’। হাসান মুসা আস-সাফফার রচিত ‘আল-ইমামিল হাসান ওয়া নাহজুল বিনাইল ইজতিমায়ী’ মুসা মুহাম্মাদ আলী রচিত ‘হালিমু আহলিল বাইত’ আহমাদ রাহমানি হামদানি রচিত ‘আল-ইমামিল মুজতাবা (আ.) মাহজাতু কালবিল মুস্তাফা (স.)’; গ্রন্থটির সংক্ষিপ্ত রূপ অনুবাদ করেছেন হুসাইন উস্তাদ ওয়ালি, নাশরে মুনির-১৩৯২ ফার্সি সনে গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে। বাকিরুল উলুম গবেষণা কেন্দ্রের হাদিস বিষয়ক বিভাগের প্রচেষ্টায় রচিত ‘ফারহাঙ্গে জামেয়ে সোখানানে ইমাম হাসানে মুজতাবা (আ.)। গ্রন্থটি অনুবাদ করেছেন আলী মুআইয়েদি। এছাড়া সিবতুন নাবি আন্তর্জাতিক কংগ্রেসের নির্বাচিত প্রবন্ধসমূহ; যা ৩ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। আহমাদ যামানি রচিত ‘হাকায়েকে পেনহান: পেঝুহেশি দার যেন্দেগীয়ে সিয়াসিয়ে ইমাম হাসানে মুজতাবা (আ.)’; বুস্তানে কেতাব প্রকাশনী, ১৩৯৪ ফার্সিসন, অষ্টম সংস্করণ।

তথ্যসূত্র

  1. শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৫।
  2. ইবনে আব্দুল বার, আল-ইস্তিআব ফি মা’রিফাতিল আসহাব, ১৪১২ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩৮৩।
  3. ইবনে হাম্বাল, আল-মুসনাদ, দারু সাদের, খণ্ড ১, পৃ. ৯৮, ১১৮; কুলাইনি, আল-কাফি, বৈরুত ১৪০১, খণ্ড ৬, পৃ. ৩৩-৩৪।
  4. ইবনে শাহরে আশুব, আল-মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ৩৯৭; ইবনে সা’দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, ১৪১৮ হি., খণ্ড ১০, পৃ. ২৪৪।
  5. ইবনে মাঞ্জুর, লিসানুল আরাব, ১৪১৪ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৩৯৩; যাবিদি, তাজুল আরুস, ১৪১৪ হি., খণ্ড ৭, পৃ. ৪।
  6. ইবনে আসাকির, তারিখু মাদিনাতি দিমাস্ক, ১৪১৫ হি., খণ্ড ১৩, পৃ. ১৭১।
  7. ইবনে সা’দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, ১৯৬৮ খ্রি., খণ্ড ৬, পৃ. ৩৫৭; ইবনে আসির, উসদুল গাবাহ, বৈরুত, খণ্ড ২, পৃ. ১০।
  8. ইবনে শাহরে আশুব, আল-মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ২৯; মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৩৬৩ ফার্সি সন, খণ্ড ৪৪, পৃ. ৩৫।
  9. ইবনে শাহরে আশুব, আল-মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ২৯।
  10. ইবনে সাব্বাগ মালেকি, আল-ফুসুলুল মুহিম্মাহ, ১৪২২ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৭৫৯।
  11. কুন্দুযি, ইয়া নাবিউল মাওয়াদ্দাহ, ১৪২২ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ১৪৮।
  12. ইবনে আসির, উসদুল গাবাহ, ১৪০৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৪৯০।
  13. এহসানি ফার, “পেঝুহেশি দার মা’নায়ে সিবত”, খণ্ড ১, পৃ. ৪৭৪-৪৭৭।
  14. শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ১৫।
  15. কুলাইনি, কাফি, খণ্ড ১, ১৩৬২ ফার্সি সন, পৃ. ২৯৭-৩০০।
  16. কুলাইনি, কাফি, খণ্ড ১, ১৩৬২ ফার্সি সন, পৃ. ২৯৮।
  17. কুলাইনি, কাফি, খণ্ড ১, ১৩৬২ ফার্সি সন, পৃ. ২৯৮।
  18. শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৫।
  19. শেইখ সাদুক, কামালুদ্দিন ওয়া তামামুন নি’মাহ, ১৩৯৫ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৫৩।
  20. তাবারসি, এ’লামুল ওয়ারা, ১৪১৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৪০৭; শুশতারি, ইহকাকুল হাক্ব, ১৪০৯ হি., খণ্ড ৭, পৃ. ৪৮২।
  21. শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৩; এরবিলি, কাশফুল গুম্মাহ ফি মা’রিফাতিল আয়িম্মাহ, ১৪২১ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৮০; খতিব বাগদাদি, তারিখে বাগদাদ, ১৪১৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১৪১; তাবারি, তারিখে তাবারি, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৫৩৭।
  22. কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০১ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৪৬১; শেইখ তুসি, তাহযিবুল আহকাম, ১৩৯০ ফার্সি সন, খণ্ড ৬, পৃ. ৩৯।
  23. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৫; শেইখ তুসি, তাহযিবুল আহকাম, ১৩৯০ ফার্সি সন, খণ্ড ৬, পৃ. ৪০।
  24. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৪৩, পৃ. ২৪১; ইবনে হাম্বাল, মুসনাদ, দারু সাদের, খণ্ড ৬, পৃ. ৩৯১; তিরমিযী, সুনানুত তিরমিযী, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ৩৬; ইবনে বাবুইয়াহ, আলী ইবনে হুসাইন, আল-ইমামাতু ওয়াত তাবসিরাতু মিনাল হাইরাহ, ১৩৬৩ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৪২।
  25. নাসায়ী, সুনানুন নাসায়ী, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, খণ্ড ৪, পৃ. ১৬৬; কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০১, খণ্ড ৬, পৃ. ৩২-৩৩; হাকিম নিশাবুরি, আল-মুস্তাদরাক আলাল সাহিহাইন, ১৪০৬ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ২৩৭।
  26. ইবনে আসাকির, তারিখু মাদিনাতিদ দিমাস্ক, খণ্ড ১৩, পৃ. ১৭০।
  27. হাকিম নিশাবুরি, আল-মুস্তাদরাক আলাল সাহিহাইন, ১৪০৬ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ২৩৭।
  28. কারাশি, হায়াতুল ইমাম হাসান, ১৪১৩ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৫২-৫৩।
  29. মাহদাভি দামগানি, “হাসান ইবনে আলী, ইমাম”, পৃ. ৩০৪।
  30. ইবনে সা’দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, ১৪১৮ হি., খণ্ড ১০, পৃ. ৩৬৯।
  31. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৩৬৩ ফার্সি সন, খণ্ড ৪৩, পৃ. ২৬১-৩১৭; তিরমিযী, সুনানে তিরমিযী, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৫, পৃ. ৩২২-৩২৩; আহমাদ ইবনে হাম্বাল, আল-মুসনাদ, দারু সাদের, খণ্ড ৫, পৃ. ৩৫৪; ইবনে হাব্বান, সাহীহ ইহনে হাব্বান, ১৯৯৩ খ্রি., খণ্ড ১৩, পৃ. ৪০২; হাকিম নিশাবুরি, আল-মুস্তাদরাক, ১৪০৬ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৮৭।
  32. ইবনে সা’দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, ১৯৬৮, খণ্ড ৬, পৃ. ৪০৬-৪০৭; শেইখ সাদুক, উয়ুনু আখবারির রেযা, ১৩৬৩ ফার্সি সন, খণ্ড ১, পৃ. ৮৫; শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১৬৮।
  33. আমেলি, আস-সহীহ মিনাস সীরাতিন নাবিয়্যিল আ’যাম, ১৪২৬ হি., খণ্ড ২১, পৃ. ১১৬।
  34. যিমাখশারি, আল-কাশ্শাফ, ১৪১৫ হি., যেইলে আয়ে ৬১ আলে ইমরান; ফাখরে রাযি, আত- তাফসীরুল কাবির, ১৪০৫ হি., যেইলে আয়ে ৬১ সূরা আলে ইমরান; আহমাদ ইবনে হাম্বাল, দারু সাদের, মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ১, পৃ. ৩৩১; ইবনে কাসির, তাফসীরুল কুরআন, ১৪১৯ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ৭৯৯; শুকানি, ফাতহুল কাদির, আলেমুল কুতুব, খণ্ড ৪, পৃ. ২৭৯।
  35. ইবনে শাহরে আশুব, আল-মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৭।
  36. সুলাইম ইবনে কাইস, কিতাবে সুলাইম ইবনে কাইস হিলালি, ১৪০৫ হি, পৃ. ৬৬৫ ও ৯১৮।
  37. বালাযুরি, আনসাবুল আশরাফ, ১৪১৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২৬-২৭; ইবনে সা’দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, ১৪১৮ হি., খণ্ড ১০, পৃ. ৩০০।
  38. ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৪২।
  39. ইবনে খালদুন, আল-ইবার, ১৪০১ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৫৭৩-৫৭৪।
  40. তাবারি, তারিখে তাবারি, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ২৬৯।
  41. জাফার মুর্তাযা, আল-হায়াতুস সিয়াসাহ লিল ইমামিল হাসান, দারুস সীরাহ, ১৫৮ পৃ.।
  42. ইবনে আব্দ রাব্বি, ইকদুল ফারিদ, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, খণ্ড ৫, পৃ. ৫৮-৫৯।
  43. বালাযুরি, আনসাবুল আশরাফ, ১৪১৭ হি., খণ্ড ৫, পৃ. ৫৫৮-৫৫৯।
  44. কাযি নো’মান, আল-মানাকিব ওয়া মাসালিব, ১৪২৩ হি., পৃ. ২৫১; তাবারি, দালায়েলুল ইমামাহ, ১৪১৩ হি., পৃ. ১৬৮।
  45. দিয়ার বাকিরি, তারিখুল খামিস, দারু সাদের, খণ্ড ২, পৃ. ২৬২।
  46. আমিনী, আল-গাদীর, ১৪১৬ হি., খণ্ড ৯, পৃ. ৩২৪
  47. সাইয়্যেদ মুর্তাযা, আশ-শাফি ফিল ইমামাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ২৪২।
  48. কারাশি হায়াতুল ইমামিল হাসান ইবনে আলী, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৪৫৫--৪৬০।
  49. ইবনে শাহরে আশুব, মানাকিবি আলে আবি তালিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৩০।
  50. মাকদেসি, আল-বাদউ ওয়াত তারিখ, মাক্তাবাতুস সাকাফাতিদ দিনিয়্যাহ, খণ্ড ৫, পৃ. ৭৪।
  51. বালাযুরি, আনসাবুল আশরাফ, ১৪১৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২৫।
  52. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, বৈরুত, ১৩৬৩ ফার্সি সন, খণ্ড ৪৪, পৃ. ১৭৩।
  53. ইবনে সা’দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, ১৪১৭ হি., খণ্ড ১০, পৃ. ২৯০ ও ৩০২; বালাযুরি, আনসাবুল আশরাফ, ১৪১৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২৫; কুলাইনি, আল-কাফি, ১৩৬২ ফার্সি। সন, খণ্ড ৬, পৃ. ৫৬।
  54. বালাযুরি, আনসাবুল আশরাফ, ১৪১৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ৭৩।
  55. মাহদাভি দামগানি, “হাসান ইবনে আলী, ইমাম”, পৃ. ৩০৯।
  56. মাদেলুঙ্গ, জানেশিনী-এ মুহাম্মাদ, ১৩৭৭ ফার্সি সন, পৃ. ৫১৪-৫১৫।
  57. কারাশি হায়াতুল ইমামিল হাসান ইবনে আলী, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৪৫৩-৪৫৪।
  58. আল-মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২০।
  59. তাবারসি, এ’লামুল ওয়ারা, ১৪১৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৪১৬।
  60. শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ১১।
  61. শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ১২।
  62. শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ১২; বালাযুরি, আনসাবুল আশরাফ, ১৪১৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ৩৫।
  63. শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ১২; বালাযুরি, আনসাবুল আশরাফ, ১৪১৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ৩৫।
  64. শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ১২।
  65. শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ১২।
  66. তাবারসি, আল-ইহতিজাজ, ১৪০৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৯০।
  67. শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ১৩-১৪।
  68. ইবনে শাহরে আশুব, আল-মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ১৮।
  69. ইবনে শাহরে আশুব, আল-মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ১৮।
  70. ইবনে শাহরে আশুব, আল-মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ১৮।
  71. ইবনে শাহরে আশুব, আল-মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৮।
  72. শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ১৭।
  73. শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ১৮।
  74. শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ১২।
  75. ইবনে শাহরে আশুব, আল-মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ২৯।
  76. কুলাইনি, কাফি, ১৩৬৩ ফার্সি সন, খণ্ড ১, পৃ. ৪৬১।
  77. ইবনে শাহরে আশুব, আল-মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ২৮।
  78. ইবনে শাহরে আশুব, আল-মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ১৮০।
  79. ইবনে শাহরে আশুব, আল-মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ১৮।
  80. ইবনে শাহরে আশুব, আল-মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ২৩।
  81. ইবনে শাহরে আশুব, আল-মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ১৩।

গ্রন্থপঞ্জি

  • ইবনে আবিল হাদিদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, কোম, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহ মারআশি নাজাফি, ১৪০৪ হি.।
  • ইবনে আসির, আল-কামিল ফিত তারিখ, বৈরুত, দারু সাদের, ১৩৮৫ ফার্সি

সন।

  • ইবনে আসির, আলী ইবনে মুহাম্মাদ, উসদুল গাবাহ, বৈরুত, দারুল ফিকর, ১৪০৯ হি.।
  • ইবনে হাম্বাল, আহমাদ, মুসনাদুল ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল, বৈরুত, দারু সাদের, তারিখ অজ্ঞাত।
  • ইবনে সা’দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, বৈরুত, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪১৮ হি.।
  • ইবনে সা’দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, চপে এহসান আব্বাস, বৈরুত, ১৯৬৮-১৯৭৭ খ্রি.।
  • ইবনে শাহরে আশুব, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, আল-মানাকিব, কোম, নাশরে আল্লামা, ১৩৭৯ হি.।
  • ইবনে সাব্বাগ মালেকি, আল-ফুসুলুল ‍মুহিম্মাহ, কোম, দারুল হাদিস, ১৪২২ হি.।
  • ইবনে আব্দুল বার, ইউসুফ ইবনে আব্দুল্লাহ, আল-ইস্তিআব ফি মা’রিফাতিল আসহাব, তাহকিক: আলী মুহাম্মাদ, বৈরুত, ১৪১২ হি.।
  • ইবনে আসাকির, তারিখু মাদিনাতি দিমাস্ক, বৈরুত, দারুল ফিকর, ১৪১৫ হি.।
  • ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ, তাহকিক: আলী শিরি, বৈরুত, দারুল আদ্বওয়া, ১৪১০ হি.।
  • ইবনে কাসির, ইসমাঈল ইবনে উমর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, বৈরুত, দারুল ফিকর, তারিখ অজ্ঞাত।
  • ইবনে কাসির, ইসমাঈল ইবনে উমর, তাফসীরুল কুরআনিল আযিম, বৈরুত, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, ১৪১৯ হি.।
  • আহমাদ ইবনে হাম্বাল, মুসনাদে আহমাদ, বৈরুত, দারু সাদের, তারিখ অজ্ঞাত।
  • বালাযুরি, আহমাদ ইবনে ইয়াহইয়া, আনসাবুল আশরাফ, বৈরুত, দারুল ফিকর, ১৪১৭ হি.।
  • বালাযুরি, আহমাদ ইবনে ইয়াহইয়া, আনসাবুল আশরাফ, বৈরুত, দারুত তাআরেফ, ১৩৯৭ ফার্সি সন।
  • বাইদ্বাভি, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, তাফসীর আনওয়ারুত তানযিল ওয়া আসরারুত তা’উয়িল, বৈরুত, দারুল ফিকর, ১৪২৯ হি.।
  • পিশওয়ায়ি, মাহদি, তারিখে ইসলাম আয সাকিফা তা কারবালা, কোম, দাফতারে নাশরে মাআরেফ, ১৩৯৩ ফার্সি সন।
  • জাফারি, হুসাইন মুহাম্মাদ, তাশাইয়ু দার মাসিরে তারিখ, তরজমা: মুহাম্মাদ তাকী আয়াতুল্লাহি, তেহরান, দাফতারে নাশরে ফারহাঙ্গে ইসলামি, ১১তম, ১৩৮২ ফার্সি সন।
  • জাফারি, আব্বাস, গুযারেশে কনগ্রেয়ে বাইনুল মেলালি সিবতুন্নাবি হযরত ইমাম হাসান মুজতবা (আলাইহিস সালাম), খাতামুল আম্বিয়া, কোম, ১৩৯৩ ফার্সি সন।
  • জাফারিয়ান, রাসূল, হায়াতে ফিকরি ওয়া সিয়াসিয়ে আয়িম্মা, কোম, আনসারিয়ান, ৬ষ্ঠ, ১৩৮১ ফার্সি সন।
  • হাকিম নিশাবুরি, মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ, আল-মুস্তাদরাকু আলাস সাহিহাইন, তাহকিক: ইউসুফ আব্দুর রহমান আল-মারআশলি, বৈরুত, দারুল মা’রেফাহ, ১৪০৬ হি.।
  • হালবি, আবুল ফারাজ, আস-সীরাতুল হালবিয়্যাহ, বৈরুত, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, দ্বিতীয়, ১৪২৭ হি.।
  • হামাভি শাফেয়ী, ইব্রাহিম ইবনে সা’দ উদ্দিন, ফারায়েদুস সিমতাইন, বৈরুত, মুআসসাসাতুল মাহমুদ, ১৪০০ হি.।
  • খাতিব বাগদাদি, আহমাদ ইবনে আলী, তারিখু বাগদাদ, তাহকিক: মুস্তাফা আব্দুল কাদির আতা, বৈরুত, মানশুরাতে মুহাম্মাদ আলী বাইদ্বুন, ১৪১৭ হি.।
  • শেইখ সাদুক, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, কামালুদ্দিন ওয়া তামামুন নি’মাহ, তেহরান, আসলামিয়্যাহ, দ্বিতীয়, ১৩৯৫ হি.।
  • শেইখ সাদুক, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, ইলালুশ শারায়ে’, কোম, দভারি, ১৩৮৫ ফার্সি সন।
  • শেইখ সাদুক, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, আমালি, কোম, বে’সাত, ১৪১৭ হি.।
  • শেইখ ‍তুসি, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, আল-আমালি, কোম, দারুস সাকাফাহ, ১৪১৪ হি.।
  • শেইখ তুসি, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, রিজালুত তুসি, তাহকিক: জাওয়াদ কাইয়ুমি, কোম, মুআসসাসাতুন নাশরিল ইসলামি, ১৪১৫ হি.।
  • শেইখ তুসি, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, তাহযিবুল আহকাম, চপে হাসান মুসাভি খোরাসান, তেহরান, ১৩৯০ ফার্সি সন।
  • শেইখ মুফিদ, মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ, আল-ইরশাদ, কোম, নাশরে কনগ্রেয়ে শেইখ মুফিদ, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৩ হি.।
  • শেইখ মুফিদ, মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ, আল-এখতেসাস, কোম, নাশরে কনগ্রেয়ে শেইখ মুফিদ, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৩ হি.।
  • শেইখ মুফিদ, মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ, আল-ইরশাদ ফি মা’রিফাতি হুজাজুল্লাহ আলাল ইবাদ, কোম, কনগ্রেয়ে শেইখ মুফিদ, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৩ হি.।
  • তাবাতাবায়ী, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হুসাইন, তারজমা-এ তাফসীরুল মিযান, অনুবাদক মুহাম্মাদ বাকের মুসাভি হামেদানি, কোম, দাফতারে ইন্তেশারাতে ইসলামি, ১৩৭৪ ফার্সি সন।
  • তাবারসি, আহমাদ ইবনে আলী, আল-ইহতিজাজ আলা আহলিল জাজ, মাশহাদ, মুর্তাযা, ১৪০৩ হি.।
  • তাবারসি, আহমাদ ইবনে আলী, আল-ইহতিজাজ, কোম, উসওয়ে, ১৪১৩ হি.।
  • তাবারসি, ফাযল ইবনে হাসান, এ’লামুল ওয়ারা বি এ’লামিল হুদা, কোম, আলুল বাইত, ১৪১৭ হি.।
  • তাবারসি, ফাযল ইবনে হাসান, মাজমাউল বায়ান ফি তাফসিরিল কুরআন, দারুল মা’রিফাহ, তারিখ অজ্ঞাত।
  • তাবারি, মুহাম্মাদ ইবনে জারির, তারিখে তাবারি, বৈরুত, দারুত তুরাস, দ্বিতীয়, ১৩৮৭ হি.।
  • আমেলি, জাফার মুর্তাযা, আল-হায়াতুস সিয়াসিয়্যাহ লিল ইমামিল হাসান, বৈরুত, দারুস সিরাহ, তারিখ অজ্ঞাত।
  • আমেলি, জাফার মুর্তাযা, আস-সাহিহ মিনাস সীরাতিন্নাবি আল-আ’যাম, কোম, দারুল হাদিস, ১৪২৬ হি.।
  • আল্লামা মাজলিসী, মুহাম্মাদ বাকের, বিহারুল আনওয়ার, বৈরুত, মুআসসাসাতুল ওয়াফা, ১৪০৩ হি.।
  • আল্লামা মাজলিসী, মুহাম্মাদ বাকের, বিহারুল আনওয়ার, তেহরান, ইসলামিয়্যাহ, দ্বিতীয়, ১৩৬৩ ফার্সি সন।
  • ফাখরে রাযি, মুহাম্মাদ ইবনে উমর, আত-তাফসীরুল কাবির, বৈরুত, দারুল ফিকর, ১৪০৩ হি.।
  • কাজী আব্দুল জব্বার, তাসবিতু দালায়েলুন নবুয়্যাহ, কায়রো, দারুল মুস্তাফা, তারিখ অজ্ঞাত।
  • কাজী নো’মান মাগরেবি, আল-মানাকিবু ওয়াল মাসালেব, বৈরুত, আ’লামি, ১৪২৩ হি.।
  • কাজী নো’মান মাগরেবি, শারহুল আকবার ফি ফাদ্বায়েলিল আয়িম্মাতিল আতহার, মুআসসেসাতুন নাশরিল ইসলামি, তারিখ অজ্ঞাত।
  • কুম্মি, শেইখ আব্বাস, মুন্তাহাল আমাল, কোম, দালিলে মা, ১৩৭৯ ফার্সি সন।
  • কুন্দুযি, সুলাইমান ইবনে ইব্রাহিম, ইয়া নাবিউল মাওয়াদ্দাহ, কোম, উসওয়ে, দ্বিতীয়, ১৪২২ হি.।
  • কুলাইনি, মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকুব, আল-কাফি, তেহরান, ইসলামিয়্যাহ, ১৩৬২ ফার্সি সন।
  • কুলাইনি মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকুব, আল-কাফি, আলী আকবার গাফ্ফারি, বৈরুত, ১৪০১ হি.।
  • মাজলিসী, মুহাম্মাদ বাকের, বিহারুল আনওয়ার, তাহকিক:ইব্রাহিম মিয়ানজি ও মুহাম্মাদ বাকের বেহবুদি, ১৪০৩ হি.।
  • মুহাম্মাদ রেই শাহরি, মুহাম্মাদ, “পেঝুহেশি দারবারে বারখুরদে ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম বা হেদায়ায়ে মুয়াবিয়া”, দার দানেশ নমেয়ে ইমাম হুসাইন (আ.), কোম, দারুল হাদিস, ১৪৩০ হি.।
  • মাসউদি, আলী ইবনে হুসাইন, মুরুজুয যাহাব ওয়া মাআদেনুল জাওহার, তাহকিক: আসাদ দাগির, কোম, দারুল হিজরাহ, দ্বিতীয়, ১৪০৯ হি.।
  • ইয়াকুবি, আহমাদ ইবনে আবি ইয়াকুব, তারিখুল ইয়াকুবি, বৈরুত, দারু সাদের, তারিখ অজ্ঞাত।
  • মাকারেম শিরাজি, নাসের, বারগুযিদেয়ে তাফসীরে নেমুনে, তেহরান, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়্যাহ, ১৩৮৬ ফার্সি সন।
  • নাসায়ী, আহমাদ ইবনে আলী, সুনানুন নাসায়ী, বে-শারহি জালালুদ্দিন সুয়ুতি, বৈরুত, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, তারিখ অজ্ঞাত।
  • নাসর ইবনে মুযাহিম, ওয়াকিয়াতু সিফ্ফিন, কোম, মানশুরাতু মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি আল-নাজাফি, ১৪০৪ হি.।