বিষয়বস্তুতে চলুন

হালাল

wikishia থেকে

হালাল (আরবি: الحلال) হল হারামের বিপরীত এবং এর অর্থ হল শরীয়তআক্বল বা বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণ অনুসারে যা জায়েয বা বৈধ। কিছু আইনশাস্ত্রীয় গ্রন্থে, "হালাল" শব্দটিকে মুবাহ শব্দের সমার্থক বলে বিবেচনা করা হয়েছে; কিন্তু উভয়ের মধ্যে পার্থক্যের ক্ষেত্রে তারা বলেছেন যে, হালাল হল এমন একটি বিধান যা সরাসরি বান্দার কর্মের সাথে সম্পর্কিত নয় এবং এটি জায়েয এর চেয়ে বিস্তৃত। কেননা প্রতিটি জায়েয জিনিসই হালাল, কিন্তু প্রতিটি হালাল জিনিসই জায়েজ নয়। ফকীহগণের মতে, কোন কিছু হারাম না হালাল সে বিষয়ে সন্দেহ থাকলে হিল্লিয়াতের বিধান অনুযায়ী তা হালাল বলে বিবেচিত হয়। হাদিসে হালাল-হারাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে এবং হালাল জীবিকা অর্জনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

২০০৮ সালে, হালাল সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য গ্লোবাল হালাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়াও, ১৭ই রমজানকে বিশ্ব হালাল দিবস হিসাবে নামকরণ করা হয়েছে।

শব্দ পরিচিতি

হালাল, হারাম এর বিপরীত, যার অর্থ শরীয়ত ও বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে যা বৈধ।[] অন্য কথায়, যা থেকে হারাম হওয়ার হুকুম তুলে নেয়া হয়েছে এবং তা করা ও পরিত্যাগ করা শাস্তির কারণ হয় না।[] হালাল শব্দের অর্থ হল "গিঁট খুলে দেওয়া"।[] আলী আকবর কুরাশীর মতে, "হিল" (حِل) অর্থ হালাল এবং রূপক অর্থে কোনো কিছু খোলা ও উন্মুক্ত করা এবং হালাল (حلال) হল যা হারাম থেকে দূরে রাখা হয়েছে।[]

কিছু গবেষকের মতে, ফকীহদের ভাষায় "ইয়াজুযু" (يجوز) এর ব্যবহার করার কখনো কখনো "ইয়াসিহ্হু" (يصحّ) অর্থে এবং কখনো শরীয়া দ্বারা নিষিদ্ধ নয় এমন বিষয়গুলির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে, একজন সত্যবাদী ব্যক্তির কাছ থেকে হালাল ও হারাম সম্পর্কে একটি হাদিস শেখা দুনিয়া এবং এর সমস্ত সোনা-রূপার চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়েছে।[]

মুবাহ এর সাথে পার্থক্য

মূল নিবন্ধ: মুবাহ

কেউ কেউ "হালাল" শব্দটিকে " মুবাহ" শব্দের সমার্থক বলে মনে করেছেন।[] আবার কেউ, এই দুটি শব্দের মধ্যে পার্থক্য করেছেন[] এবং নিন্মোক্ত পার্থক্য উল্লেখ করেছেন-

  • হালালকে হারামের বিপরীতে ব্যবহার করা হয় এবং এতে হারাম নয় এমন জিনিস, যেমন- ওয়াজিব, মুস্তাহাব, মাকরূহ এবং মুবাহ অন্তর্ভুক্ত।[] আর এজন্যই হালাল মুবাহ এর চেয়ে ব্যাপক ও বিস্তৃত। অর্থাৎ, প্রতিটি মুবাহ জিনিস হালাল, কিন্তু প্রত্যেকটি হালাল জিনিস মুবাহ নয়। যেমনঃ মাকরূহ, যা হালাল; কিন্তু মুবাহ নয়।[]
  • মুবাহ হল আহকামে তাকলিফি এর মধ্যে একটি এবং এটি সরাসরি বান্দার কর্মের সাথে সম্পৃক্ত।[১০] হালাল আহকামে ওয়াযয়ী এর মধ্যে একটি এবং যা সরাসরি বান্দার কর্মের সাথে সম্পৃক্ত নয়।[১১]
  • হালাল মানে নিষেধাজ্ঞার গিঁট খুলে দেওয়া এবং নিষেধাজ্ঞা অপসারণ করা। পক্ষান্তরে, মুবাহ হচ্ছে কোন কাজ আঞ্জাম দেওয়া বা ত্যাগ করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা।[১২]

হিল্লিয়াত নীতি

মূল নিবন্ধ: হিল্লিয়াত নীতি

এটি এমন একটি আইনশাস্ত্রীয় নীতি যা হালাল-হারাম সম্পর্কে সন্দেহযুক্ত কোন জিনিস বা বিষয়ের সঠিক বিধান নির্ণয়ে দিকনির্দেশ করে। এই নিয়ম অনুসারে, যখন কোন কিছু হারাম না হালাল সে বিষয়ে সন্দেহ দেখা দেয়, তখন তা হালাল বলে বিবেচিত হয়।[১৩] এই নীতিটি প্রমাণ করার জন্য, সূরা আল-বাকারা এর ২৯ নম্বর আয়াতটি, (هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعاً) "তিনিই তোমাদের জন্য পৃথবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন"[১৪] এবং হাদিস "সব কিছুই তোমাদের জন্য হালাল যদি না তোমরা জানো যে এটি হারাম"[১৫] কে দলিল হিসেবে উত্থাপন করা হয়েছে।

হালাল রিযিক

হালাল রিজিক হল এমন একটি আয় যা শরীয়াহ আইনের কাঠামোর মধ্যে অর্জিত হয় এবং এতে খুমসযাকাত-এর মতো আল্লাহর অধিকার পালন করা হয় এবং এতে হাক্কুন নাস বা মানুষের সম্পদের জবরদখল থাকে না। হালাল জীবিকা অর্জনের গুরুত্ব হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।[১৬] উদাহরণ স্বরূপ, ইমাম সাদিক (আ.)-এর একটি বর্ণনায়, যে ব্যক্তি হালাল জীবিকা অর্জনের চেষ্টা করে তাকে এমন ব্যক্তির সাথে তুলনা করা হয়েছে যে আল্লাহর পথে লড়াই করে।[১৭] মহানবীর (সা.) একটি হাদিসে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইবাদতের সত্তরটি অংশ রয়েছে এবং সর্বোচ্চ অংশ হল হালাল জীবিকা অর্জন।[১৮]

গ্লোবাল হালাল ইনস্টিটিউট

‘গ্লোবাল হালাল ইনস্টিটিউট’ এর অফিসিয়াল লোগো

গ্লোবাল হালাল ইনস্টিটিউট ২০০৭ সালে হালাল সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানটি শিল্প ও খাদ্য, ওষুধ ও প্রসাধনী, রেস্টুরেন্ট ও হোটেল, পর্যটন, খেলাধুলা এবং হালাল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কাজ করে। এছাড়াও, ১৭ রমজানকে বিশ্ব হালাল দিবস হিসাবে নামকরণ করা হয়েছে।[১৯] ইকনা নিউজ এজেন্সির সূত্র অনুযায়ী, যেহেতু পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটি-

يَا أَيُّهَا النَّاسُ كُلُواْ مِمَّا فِي الأَرْضِ حَلاَلًا طَيِّبًا


অর্থ: হে লোক সকল, পৃথিবীতে যা হালাল ও পবিত্র তা থেকে তোমরা খাও।"



সূরা বাকারা: ১৬৮


রমযান মাসে নাযিল হয়েছে, তাই এদিনটি বিশ্ব হালাল দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।[২০]

প্রতি বছর এই দিনে, বিশ্ব হালাল দিবস স্মরণে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং হালাল শিল্প ব্যাবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়।[২১] এই সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন ১৫ জুলাই, ২০১৪ তারিখে ইরানের তেহরানস্থ মিলাদ টাওয়ার সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়।[২২]

তথ্যসূত্র

  1. মাশকিনী, মুস্তালাহাতুল ফিকহ, ১৪১৯ হি., পৃ: ২১৬।
  2. আব্দুল মুনিম, মুজামুল মুসতালাহাত, দারুল ফাযিলাহ, খ: ১, পৃ: ৫৮৫।
  3. রাগেব ইস্পাহানী, আল-মুফরাদাত।
  4. কুরাশী, কামুসে কুরআন।
  5. বারক্বী, আল-মাহসেন, দারুল কুতুবিল ইসলামিয়্যাহ, খ: ১, পৃ: ২৯৯।
  6. মুয়াসসাসাতু দায়েরাতিল মায়ারিফিল ফিকহিল ইসলামি, মাউসুয়াতুল ফিকহিল ইসলামি, ১৪২৪ হি., খ: ২, পৃ: ৮৩।
  7. মুয়াসসাসাতু দায়েরাতিল মায়ারিফিল ফিকহিল ইসলামি, মাউসুয়াতুল ফিকহিল ইসলামি, ১৪২৪ হি., খ: ২, পৃ: ৮৪।
  8. সা’দী, কামুসুল ফোকাহা লুগাতান ওয়া ইস্তিলাহান, ১৪০৮ হি., পৃ: ৯৯।
  9. সা’দী, কামুসুল ফোকাহা লুগাতান ওয়া ইস্তিলাহান, ১৪০৮ হি., পৃ: ৯৯।
  10. সাদর, দুরূসু ফিল ইলমিল উসুল, ১৪০৬ হি., খ: ১, পৃ: ৫৩।
  11. মারকাযে ইত্তেলায়াত ও মানাবেয়ে ইসলামি, ফারহাঙ্গনামা উসুলে ফেকহ, ১৩৮৯ (ফার্সি সন), খ: ১, পৃ: ১০৬।
  12. মুয়াসসাসাতু দায়েরাতিল মায়ারিফিল ফিকহিল ইসলামি, মাউসুয়াতুল ফিকহিল ইসলামি, ১৪২৪ হি., খ: ২, পৃ: ৮৪।
  13. মুয়াসসাসাতু দায়েরাতিল মায়ারিফিল ফিকহিল ইসলামি, মাউসুয়াতুল ফিকহিল ইসলামি, ১৪২৪ হি., খ: ১৩, পৃ: ৩২০।
  14. ফাযিল তুনি, আল-ওয়াফিহি ফি উসুলিল ফিকহি, ১৪১২ হি., পৃ: ১৮৫।
  15. শেইখ কুলাইনী, আল-কাফি, ১৪৩০ হি., খ: ১০, পৃ: ৫৪২।
  16. নুরী, মুস্তাদরাকুল ওয়াসায়েল, ১৪০৮ হি., খ: ১৩, পৃ: ১২।
  17. কাযী নোমান মাগরেরবী, দায়াইমুল ইসলাম, ১৩৮৫ হি., খ: ২, পৃ: ১৫।
  18. নুরী, মুস্তাদরাকুল ওয়াসায়েল, ১৪০৮ হি., খ: ১৩, পৃ: ১২।
  19. دومین همایش «روز جهانی حلال» ماه رمضان برگزار می‌شود খবরগুজারিয়ে ইকনা, ২৭ মেহের, ১৩৯৩ (ফার্সি সন)।
  20. دومین همایش «روز جهانی حلال» ماه رمضان برگزار می‌شود খবরগুজারিয়ে ইকনা, ২৭ মেহের, ১৩৯৩ (ফার্সি সন)।
  21. بزرگداشت روز جهاني حلال মুয়াসসেসেয়ে বাইনুল মেলালিয়ে হালাল, ৩ই মুরদাদ, ১৪০১ (ফার্সি সন)।
  22. بزرگداشت روز جهاني حلال মুয়াসসেসেয়ে বাইনুল মেলালিয়ে হালাল, ৩ই মুরদাদ, ১৪০১ (ফার্সি সন)।

গ্রন্থপঞ্জি

  • আকবারী, মাহমুদ, হালাল ও হারাম, ইন্তেশারাতে ফিতয়ান, ১৩৯১ (ফার্সি সন),
  • বারক্বী, আহমাদ বিন মাহমুদ, আল-মাহসেন, কোম, দারুল কুতুবিল ইসলামিয়্যাহ...
  • بزرگداشت روز جهاني حلال মুয়াসসেসেয়ে বাইনুল মেলালিয়ে হালাল, ৩ই মুরদাদ, ১৪০১ (ফার্সি সন),
  • دومین همایش «روز جهانی حلال» ماه رمضان برگزار می‌شود খবরগুজারিয়ে ইকনা, ২৭ মেহের, ১৩৯৩ (ফার্সি সন),
  • রাগেব ইস্পাহানী, হোসাইন বিন মুহাম্মাদ, আল-মুফরাদাত, দামেক্শ, দারুল কালাম, ১৪১২ হি.,
  • সাদর, মুহাম্মাদ বাকের, ‍দুরূসু ফিল ইলমিল উসুল, দারুল কিতাবুল বান্নানী, ১৪০৬ হি.,
  • আব্দুল মুনিম, মাহমুদ আব্দুর রহমান, মুজামুল মুসতালাহাত, কায়রো, দারুল ফাযিলাহ...
  • ফাযিল তুনি, আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ, আল-ওয়াফিহি ফি উসুলিল ফিকহি, কোম, মাজমাউল ফিকরিল ইসলামি, প্রথম সংস্করণ, ১৪১২ হি.,
  • ফাযিল লাঙ্কারানী, মুহাম্মাদ, তাফসিলুশ শারিয়া ফি শারহি তাহরিরিল ওয়াসিলাহ, কোম, মারকাযে ফিকহিয়ে আইম্মায়ে আতহার, ১৪২৬ হি.,
  • কুরাশী, সাইয়্যেদ আলী আকবার, কামুসে কুরআন, তেহরান, দারুল কুতুবিল ইসলামিয়্যাহ, ষষ্ঠ সংস্করণ, ১৩৭১ (ফার্সি সন),
  • শেইখ কুলাইনী, মুহাম্মাদ বিন ইয়াকুব, আল-কাফি, কোম, ইন্তেশারাতে দারুল হাদিস, প্রথম সংস্করণ, ১৪৩০ হি.,
  • নুরী, মির্জা হোসাইন, মুস্তাদরাকুল ওয়াসায়েল, কোম, মুয়াসসাসাতু আলিল বাইত (আ.), ১৪০৮ হি.,
  • মারকাযে ইত্তেলায়াত ও মানাবেয়ে ইসলামি, ফারহাঙ্গনামা উসুলে ফেকহ, কোম, পাজুহেশগাহে উলুম ওয়া ফারহাঙ্গে ইসলামি, ১৩৮৯ (ফার্সি সন),
  • মাশকিনী, আলী, মুস্তালাহাতুল ফিকহ, কোম, নাশরে আল-হাদি, ১৪১৯ হি.,
  • মুয়াসসাসাতু দায়েরাতিল মায়ারিফিল ফিকহিল ইসলামি, মাউসুয়াতুল ফিকহিল ইসলামি, কোম, মুয়াসসাসাতু দায়েরাতিল মায়ারিফিল ফিকহিল ইসলামি, মাউসুয়াতুল ফিকহিল ইসলামি, ১৪২৪ হি,.।