বিষয়বস্তুতে চলুন

ইমাম জাফার সাদিক আলাইহিস সালাম

wikishia থেকে
ইমাম জাফার সাদিক (আ.)
বারো ইমামি শিয়াদের ষষ্ঠ ইমাম
বাকী’ কবরস্থান
বাকী’ কবরস্থান
নামজাফার ইবনে মুহাম্মাদ
উপনামআবু আব্দিল্লাহ
জন্ম তারিখ১৭ই রবিউল আউয়াল, ৮৩ হি.
জন্মস্থানমদীনা
ইমামতকাল৩৪ বছর (১১৪-১৪৮ হি.)
শাহাদাত২৫শে শাওয়াল, ১৪৮ হি.
দাফনের স্থানবাকী’, মদীনা
বসবাসের স্থানমদীনা
উপাধিসমূহসাদিক • সাবির, তাহির, ফাযিল
পিতাইমাম বাকের (আ.)
মাতাউম্মে ফারওয়া
স্ত্রীগণহামিদা • ফাতিমা
সন্তানইসমাঈল • আব্দুল্লাহ • উম্মু ফারওয়া • মূসা কাযিম (আ.) • ইসহাক • মুহাম্মাদ • আব্বাস • আলী • আসমা • ফাতেমা
জীবনকাল৬৫ বছর
শিয়া ইমামগণ
ইমাম আলী • ইমাম হাসান মুজতাবাইমাম হুসাইন • ইমাম সাজ্জাদ • ইমাম বাকের • ইমাম জাফার সাদিকইমাম কাযেমইমাম রেযাইমাম জাওয়াদইমাম হাদীইমাম হাসান আসকারি • ইমাম মাহদী


জাফার ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আরবি: جعفر بن محمد بن علی); (৮৩-১৪৮ হি.) ইমাম বাকির (আ.) এর পর ১২ ইমামি শিয়াদের ষষ্ঠ ইমাম। তিনি ৩৪ বছর যাবত (১১৪ থেকে ১৪৮ হি.) ইমামতের গুরুদায়িত্ব পালন করেন। তার ইমামতের সমসময়ে হিশাম ইবনে আব্দুল মালিকে’র পর থেকে শেষ পর্যন্ত উমাইয়া সিলসিলার শেষ ৫ খলিফা এবং আব্বাসি সিলসিলার প্রথম ২ খলিফা তথা সাফফাহমানসুর দাওয়ানেকি মুসলমানদের উপর শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন। উমাইয়া শাসনের দুর্বলতায় সৃষ্ট সুযোগের কারণে অপর ইমামগণের (আ.) চেয়ে ইমাম সাদিক (আ.) জ্ঞানচর্চায় তৎপরতার অধিক সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর শিষ্য ও রাভিদের সংখ্যা ৪০০০ বলে উল্লেখিত হয়েছে। আহলে বাইত (আ.) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতের বেশীরভাগ ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত; আর এ কারণেই ইমামিয়া শিয়া মাযহাবকে ‘জাফরি মাযহাব’ও বলা হয়।

আহলে সুন্নতের ফকীহগণের নিকটও ইমাম সাদিক (আ.) বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। আবু হানিফামালিক ইবনে আনাস তাঁর থেকে রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন। আবু হানিফার মতে মুসলমানদের মাঝে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি।

শিয়াদের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও ইমাম সাদিক (আ.) উমাইয়া সরকারের দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মাঠে নামেন নি। এছাড়া, আবু মুসলিম খোরাসানী ও আবু সালামাহ কর্তৃক খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধকেও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। চাচা যায়েদ বিন আলীর আন্দোলনেও অংশগ্রহণ করেননি ইমাম সাদিক (আ.) এবং তৎকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি শিয়াদেরকেও সরকার বিরোধী আন্দোলনে নিরুৎসাহিত করতেন। তবে এত কিছুর পরও তৎকালীন শাসকদের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল না। উমাইয়া ও আব্বাসীয় সরকারের রাজনৈতিক চাপের কারণে, তিনি বাধ্য হয়ে তাকিয়্যাহ অবলম্বন করতেন এবং সাথীদেরকেও তা অবলম্বনের পরামর্শ দিতেন।

শিয়াদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি, খুমস ও যাকাতসহ অন্যান্য উজুহে শারয়ী সংগ্রহ এবং শিয়াদের সমস্যা সমাধানে তিনি ‘প্রতিনিধি নেটওয়ার্ক’ (সাযমানে ভেকালাত) প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংস্থার কর্মকাণ্ড পরবর্তী ইমামগণের (আ.) যুগে বিস্তার লাভ করে এবং গায়বাতে সোগরার যুগে তুঙ্গে পৌঁছায়। তাঁর সমসময়ে গা’লিদের (غالی) (আকিদায় অতিরঞ্জনকারী) কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটে। গা’লি তথা অতিরঞ্জিত চিন্তাধারার সাথে তিনি মোকাবিলা করেছেন এবং গা’লি আকিদাধারীদেরকে কাফেরমুশরিক আখ্যায়িত করেছেন।

কোনো কোনো সূত্রে বলা হয়েছে যে, সরকারি তলবের কারণে ইমাম সাদিক (আ.) ইরাক সফর করেছিলেন, এ সময় তিনি কারবালা, নাজাফকুফা সফরও করেন। তিনি ইমাম আলীর (আ.) কবরকে -যা তখন পর্যন্তও গোপন ছিল- নিজের সাথীদের উদ্দেশে চিহ্নিত করেন।

কোন কোন শিয়া মনীষীর বিশ্বাস, ইমাম সাদিককে (আ.) মনসুর দাওয়ানিকির নির্দেশে বিষ প্রয়োগে শহীদ করা হয়। কিছু কিছু রেওয়ায়েত বলা হয়েছে, তিনি ইমাম নিজ সঙ্গীদের সামনে কাযিমকে (আ.) পরবর্তী ইমাম হিসেবে পরিচয় করিয়ে যান; তবে ইমাম বাকিরের (আ.) জীবন নিরাপদ রাখতে তিনি তার প্রতিনিধি ও স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মানসুর আব্বাসিসহ পাঁচজনের নাম বলে যান। ইমাম সাদিকের (আ.) শাহাদাতের পর ইসমাঈলিয়া, ফাতাহিয়া এবং নাউসিয়া ইত্যাদি ফির্কা’র আত্মপ্রকাশ ঘটে।

ইমাম সাদিক (আ.) সম্পর্কে রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৮০০ বলে উল্লেখ করা হয়েছে; যেগুলোর মধ্যে হিজরী ৪র্থ শতাব্দিতে মুহাম্মাদ ইবনে ওয়াহবান দুবাইলি রচিত ‘আখবারুস সাদিক (আ.) মাআ আবি হানিফাহ’ ও ‘আখবারিস সাদিক (আ.) মাআ মানসুর’ সবচেয়ে প্রাচীন; তার সম্পর্কে রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে সাইয়্যেদ জাফার শাহিদী রচিত যেন্দেগানী ইমাম সাদিক জাফার ইবনে মুহাম্মাদ (আ.), আসাদ হায়দার রচিত ‘আল-ইমামুস সাদিক (আ.) ওয়াল মাযাহিবুল আরবাআহ’, সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী রচিত ‘পিশওয়ায়ে সাদেক (আ.)’ এবং বাকের শারিফ কারাশি রচিত ‘মাওসুআতুল ইমামিস সাদিক (আ.)’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

নাম, বংশ পরিচয় ও উপাধি

জাফার ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব; ১২ ইমামি শিয়াদের ষষ্ঠ ইমাম[] ইসমাঈলি মাযহাবের অনুসারীরা তাঁকে ৫ম ইমাম হিসেবে জ্ঞান করেন।[] তার পিতার নাম ইমাম বাকির (আ.) এবং মাতা মুহাম্মাদ বিন আবি বাকরের ছেলে কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আবি বাকরের কন্যা উম্মু ফারওয়া[]

ইমাম সাদিকের (আ.) প্রসিদ্ধ কুনিয়া হল (তার দ্বিতীয় সন্তান আব্দুল্লাহ আফতাহের নামে) আবা আব্দিল্লাহ। এছাড়া (তাঁর সন্তানের নাম ইসমাঈল হওয়ায়) আবু ইসমাঈল এবং (তার অপর সন্তানের নাম মুসা কাযিম (আ.) হওয়ায়) আবু মুসা ইত্যাদি।[]

তবে তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত উপাধি হলো ‘সাদিক’।[] একটি রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে স্বয়ং মহানবিই (স.) এই উপাধি তাকে প্রদান করেছেন; যাতে জাফারে কাযযাব থেকে তাঁর নাম পৃথক করা যায়।[] তবে কারো কারো মতে, তাঁর যুগে যত আন্দোলন হয়েছিল সেসব থেকে দূরে থাকার কারণে তাকে এ উপাধি প্রদান করা হয়। কেননা, ঐ যুগে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন বা বিদ্রোহের উদ্দেশ্যে যারা জনগণকে নিজের চতুর্পাশে জড়ো করত তাদেরকে কাযযাব (মিথ্যাবাদী) বলা হত।[] স্বয়ং ইমামগণের (আ.) যুগেও ইমাম এ উপাধিতে প্রসিদ্ধ ছিলেন।[]

ইবনে শাহরে আশুব মাজান্দারানির ‘মানাকিব’ গ্রন্থে উল্লিখিত এক বর্ণনা অনুসারে, ‘সাদিক’ উপাধিটি মানসুর আব্বাসির যুগে প্রদান করা হয়; ইমাম আলীর (আ.) দাফনের স্থান সম্পর্কে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে এ উপাধি প্রদান করা হয়। এছাড়া, আরও বর্ণিত হয়েছে যে, তাঁর মাঝে কোন প্রকার বক্রতা, বিচ্যুতি ও অসত্য পরিলক্ষিত না হওয়ায় তিনি এ উপাধিতে প্রসিদ্ধ হন।[] দায়েরাত আল-মাআরেফে বোযোর্গে ইসলামি’র বর্ণনা মতে, মালেক ইবনে আনাস, আহমাদ ইবনে হাম্বাল ও জাহিজ’র ন্যায় আহলে সুন্নতের কোন কোন ওলামা তাঁকে এই উপাধিসহ সম্বোধন করেছেন।[১০]

জীবনী

ইমাম সাদিক (আ.) ৮৩ হিজরীর ১৭ই রবিউল আওয়াল জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৪৮ হিজরীতে ৬৫ বছর বয়সে শহীন হন।[১১] অনেকে তার জন্মের বছর ৮০ হিজরী বলে উল্লেখ করেছেন।[১২] ইবনে কুতাইবাহ দাইনূরী, ১৪৬ হিজরীকে তার শাহাদাতের বছর হিসেবে লিপিবদ্ধ করেছেন[১৩]; অবশ্য এ বর্ণনাকে  লিপিবদ্ধ করণ সংশ্লিষ্ট ভুল বলে আখ্যায়িত করেছেন কেউ কেউ।[১৪] মোদ্দাকথা, ইমাম সাদিকের (আ.) শাহাদাতের মাস ও দিনের বিষয়ে এখতেলাফ রয়েছে। তবে প্রথম দিককার শিয়া আলেমদের[১৫] মতানুযায়ী তিনি শাওয়াল মাসে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু প্রথম সারীর গ্রন্থগুলোতে তার শাহাদাতের তারিখ সম্পর্কে কিছু উল্লিখিত হয় নি।[১৬]

তাবারসী তার ‘তাজুল মাওয়ালিদ’ গ্রন্থে ও শেইখ আব্বাস কুম্মি তার ‘ওয়াকায়াউল আইয়াম’ গ্রন্থে এবং শুশতারি তার ‘রিসালাতুন ফি তাওয়ারিখিন নাবী ওয়াল আল’-এ তাঁর শাহাদাতের তারিখ ২৫শে শাওয়াল বলে উল্লেখ করেছেন।[১৭] পক্ষান্তরে প্রসিদ্ধ মতের বিপরীতে  তাবারসী তার এ’লামুল ওয়ারা [১৮] গ্রন্থে এবং আল্লামা মাজলিসী তার বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থে কাফআমি রচিত ‘মিসবাহুল কাফআমি’ গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে ইমাম সাদিকের (আ.) শাহাদাতের তারিখ ১৫ই রজব বলে উল্লেখ করেছেন; কিন্তু বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থের উপর গবেষণাকারীরা এমন কোন তথ্য ‘মিসবাহ’ গ্রন্থে খুঁজে পান নি।[১৯] শেইখ আব্বাস কুম্মি কোনো সূত্র উল্লেখ করা ছাড়াই ইমাম সাদিকের (আ.) ওফাত রজব মাসের মাঝমাঝি সময়ে হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।[২০]

স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতি

শেইখ মুফিদ, ইমাম সাদিকের (আ.) ১০ জন সন্তান এবং কয়েকজন স্ত্রীর কথা উল্লেখ করেছেন:[২১] কিছু কিছু সূত্রে ইমাম কাযিম (আ.) থেকে ইমাম সাদিকের (আ.) ‘হাকিমা’ বা ‘হালিমা’ নামে অপর এক কন্যার কথাও উল্লিখিত হয়েছে।[২২]

ইমামতের সময়কাল

উমর ইবনে আব্দুল আযিয, হিশাম ইবনে আব্দুল মালিক প্রমুখসহ বনি উমাইয়ার শেষ ১০ খলিফা এবং আব্বাসীয় খলিফাদের প্রথম ২ খলিফা; সাফফাহমানসুর দাওয়ানেকি [২৩] ছিলেন ইমাম সাদিকের (আ.) সমসাময়িক। হিশাম ইবনে আব্দুল মালিকের অনুরোধ ইমাম বাকিরের (আ.) শাম (সিরিয়া) সফরে ইমাম সাদিক (আ.) তার পিতার সাথে ছিলেন।[২৪] তবে বনি উমাইয়া সিলসিলার শেষ ৫ খলিফা -হিশাম ইবনে আব্দুল মালিক থেকে শেষ পর্যন্ত- এবং আব্বাসি সিলসিলার প্রথম ২ খলিফার খেলাফতকাল ছিল তাঁর ইমামতের দায়িত্ব পালনের সমসাময়িক।[২৫] এ সময়ে বনি উমাইয়া সরকারের অবস্থা ছিল নাজুক ও দুর্বল এবং এর ধারাবাহিকতায় তাদের পতন ঘটে। অতঃপর বনি আব্বাস ক্ষমতায় এলে ক্ষমতাসীন সরকারে দুর্বলতা ও তত্ত্বাবধানে অমনোযোগ ও শিথিলতা জ্ঞানচর্চা কেন্দ্রীক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সূবর্ণ এক সুযোগ ইমাম সাদিকের (আ.) সামনে তৈরি করে দেয়।[২৬] অবশ্য এ স্বাধীনতা শুধুমাত্র হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দির তৃতীয় দশকে সৃষ্টি হয়েছিল; এর পূর্বে উমাইয়া শাসনামলে এবং পরে নাফসে যাকিয়া ও তার সহোদর ইব্রাহিমের আন্দোলনের কারণে ইমাম সাদিক (আ.) ও তাঁর সাথীদের উপর রাজনৈতিক ব্যাপক চাপ বৃদ্ধি পায়।[২৭]

ইমাম হিসেবে মনোনয়ন

শিয়া দৃষ্টিকোণ থেকে, ইমাম অবশ্যই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্বাচিত ও মনোনীত হন এবং তাকে চেনার একমাত্র পথ হচ্ছে নসস (কারো ইমাম মনোনীত হওয়া প্রসঙ্গে মহানবি (স.) অথবা পূর্ববর্তী ইমামের স্পষ্ট কোন রেওয়ায়েত ও বর্ণনা)।[২৮] কুলাইনি তার আল-কাফী গ্রন্থে ইমাম সাদিকের (আ.) ইমামত প্রমাণে ৮টি রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন।[২৯]

প্রতিনিধি নেটওয়ার্ক

বিভিন্ন অঞ্চলে শিয়াদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে জীবন-যাপন, রাজনৈতিক চাপের কারণে শিয়াদের সাথে ইমামের যোগাযোগ এবং এর বিপরীতে ইমামের সাথে শিয়াদের যোগাযোগ কষ্টসাধ্য হওয়া ইত্যাদি কারণে ইমাম (আ.) বিভিন্ন মুসলিম অঞ্চলে প্রতিনিধি নিয়োগ দান করেন যা প্রতিনিধি নেটওয়ার্ক (সাযমানে ভেকালাত) নামে খ্যাতি লাভ করে।[৩০] এই নেটওয়ার্কের কাজ ছিল শিয়াদের নিকট থেকে খুমস, যাকাত, নজর ও হাদিয়া সংগ্রহ করে সেগুলো ইমামের নিকট হস্তান্তর, শিয়াদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, ইমাম ও শিয়াদের মাঝে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া এবং শিয়াদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা ইত্যাদি।[৩১] এই নেটওয়ার্কের কার্যক্রম পরবর্তী ইমামগণের (আ.) যুগে বিস্তার লাভ করে এবং গায়বাতে সোগরার যুগে ইমামে যামানা’র (আ.) ৪ জন বিশেষ প্রতিনিধি মারফত তুঙ্গে পৌঁছায়। এই নেটওয়ার্কের কার্যক্রম ইমামে যামানার (আ.) চতুর্থ প্রতিনিধি আলী ইবনে মুহাম্মাদ সামুরি’র ইন্তিকাল ও গায়বাতে কোবরার (দীর্ঘমেয়াদি অন্তর্ধান) যুগ শুরু হওয়ার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে।[৩২]

গা’লিদের সাথে আচরণ

ইমাম বাকির ও ইমাম সাদিক (আলাইহিমাস সালাম)-এর যুগে গা’লিদের (غالی) -ধর্ম ও শরিয়তে অতিরঞ্জনকারী- তৎপরতা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।[৩৩] তারা ইমামগণের (আ.) জন্য রব্বের মাকাম অথবা তাদেরকে নবি হিসেবে বিশ্বাস করত। ইমাম সাদিক (আ.) গুলু (অতিরঞ্জন) মিশ্রিত চিন্তাধারাকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে জনগণকে গা’লিদের সাথে ওঠাবসা করতে নিষেধ করেছেন।[৩৪] আর তাদেরকে ফাসেক, কাফের ও মুশরিক হিসেবে অভিহিত করেছেন।[৩৫]

গা’লিদের সম্পর্কে তাঁর থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে বলা হয়েছে: ‘তাদের সাথে ওঠাবসা করবে না, তাদের সাথে পানাহার করবে না এবং কর্মদ্দন করবে না।’[৩৬] বিশেষভাবে তিনি শিয়া যুবকদের সম্পর্কে বলেছেন: সাবধানে থেকো গুলাত (গা’লি শব্দের বহুবচন) যেন তোমাদের যুবকদের নষ্ট না করে ফেলে; তারা আল্লাহর সবচেয়ে নিকৃষ্ট দুশমন; তাঁরা আল্লাহকে হেয় করে তাঁর বান্দাদেরকে প্রভুত্ব ও রুবুবিয়্যাতের আসনে বসায়।’[৩৭]

ইলমি তৎপরতা

ইমাম সাদিকের (আ.) ইমামতের সমসময়ে উমাইয়া সরকারের দুর্বলতার কারণে নিজের আকিদা প্রকাশের তুলনামূলক স্বাধীন এক ক্ষেত্র তৈরি হয়; এ সময় ইলমি তৎপরতা ও জ্ঞানচর্চা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়।[৩৮] বারো ইমামের কোন একজনের যুগেও এমন সুযোগ সৃষ্ট হয়নি; আর এ কারণেই ইমাম সাদিকের (আ.) ছাত্ররা স্বাধীনভাবে তার দরসে ও ইলমি আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিল।[৩৯] আর এ সুযোগে ইমাম সাদিক (আ.) থেকে ফিকাহ ও কালাম শাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে বহুসংখ্যক রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে।[৪০] বিশিষ্ট সুন্নি মনীষী ইবনে হাজার হাইতামি’র ভাষ্য হলো, জনগণ তাঁর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান ও তথ্য বর্ণনা করত এবং ঐ সময় জ্ঞানচর্চায় তাঁর খ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল।[৪১] আবু বাহর জাহেয লিখেছেন, তার থেকে নিসৃত জ্ঞান ও ফিকাহ শাস্ত্র বিষয়ক তথ্য সারা বিশ্বে ছেয়ে গিয়েছিল।[৪২] হাসান ইবনে আলী ওয়াশশা বলেছেন যে, তিনি কুফা মসজিদে ৯০০ জনকে ইমাম সাদিক (আ.) থেকে হাদীস বর্ণনা করতে দেখেছেন।[৪৩] সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হুসাইন হুসাইনি তেহরানি’র মতে, আল্লাহর রাসূলের (স.) ইন্তিকাল পরবর্তী সময়কার ঘটনা এবং প্রকৃত ইসলামে বিকৃতি ও আহলে বাইতের (আ.) মাযহাব থেকে বিচ্যুতি সংশ্লিষ্ট তিক্ত ঘটনার পর মুসলিম উম্মাহ’র দু’টি বড় শক ও ধাক্কা প্রয়োজন ছিল; প্রথম শকটি প্রাক্টিক্যাল ও ব্যবহারিক; উম্মতকে জাগ্রত করার লক্ষ্যে যা ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর সাথীদের মারফত বাস্তাবায়িত হয়েছে এবং দ্বিতীয়টি হলো কুরআন ও দ্বীনের প্রকৃত জ্ঞানকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে একটি ইলমি ও জ্ঞানভিত্তিক শক যার বাস্তবায়ন ইমাম সাদিক (আ.) মারফত ঘটেছে।[৪৪]

জাফরি মাযহাব

মূল নিবন্ধ: জাফরি মাযহাব

শিয়াদের মাসুম ইমামগণের (আলাইহিমুস সালাম) মাঝে সবচেয়ে বেশী রেওয়ায়েত ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে।[৪৫] এছাড়া, তাঁর থেকে রেওয়ায়েত বর্ণনাকারীদের সংখ্যাও ছিল সবচেয়ে বেশী। ইরবিলী তাঁর (আ.) রাভিদের সংখ্যা ৪০০০ বলে উল্লেখ করেছেন।[৪৬] আবান ইবনে তাগলিবের ভাষ্যমতে, কোন বিষয়ে আল্লাহর রাসূলের (স.) ভাষ্যে যখনই মুসলমানদের মাঝে এখতেলাফ দেখা দিত তখন তারা হযরত আলীর (আ.) ভাষ্যের শরণাপন্ন হতেন, আর যদি আলীর (আ.) ভাষ্যেও লোকদের মাঝে এখতেলাফ হত তখন তারা ইমাম সাদিকের (আ.) শরণাপন্ন হত।[৪৭] ফিকাহ ও কালাম শাস্ত্র বিষয় সর্বাধিক রেওয়ায়েত ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হওয়ায় ইমামিয়া শিয়াদের মাযহাবকে ‘জাফারি মাযহাব’ও বলা হয়।[৪৮] বর্তমানে ইমাম সাদিকের (আ.) নাম, জাফারি মাযহাবের রাঈস তথা প্রধান হিসেবে প্রসিদ্ধ।[৪৯] ১৩৭৮ হিজরীতে আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন গ্রান্ড মুফতি শেইখ শালতুত, আয়াতুল্লাহ বুরুজেরদির সাথে তার পত্রালাপের পর জাফরি মাযহাবকে স্বীকৃতি প্রদান করেন এবং শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে জাফরি ফিকাহ অনুযায়ী আমল করাকে জায়েয বলে আখ্যায়িত করেন।[৫০]

ইমামের মুনাজিরা

শিয়াদের বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে ইমাম সাদিক (আ.) ও অন্যান্য মাযহাবের কালাম শাস্ত্রবিদদের মধ্যকার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুনাজিরা ও বিতর্ক উল্লিখিত হয়েছে। এছাড়া কতিপয় নাস্তিকের সাথে তার মুনাজিরাও লিপিবদ্ধ হয়েছে।[৫১] কোন কোন ক্ষেত্রে ইমাম সাদিকের (আ.) শিষ্যরা তাঁর উপস্থিতিতে তাদের দক্ষতা অনুযায়ি নির্দিষ্ট বিষয়ে মুনাজিরা ও বিতর্ক করতেন। ঐ সকল মুনাজিরা ইমামের (আ.) তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হত এবং তিনি নিজেও কখনো কখনো আলোচনায় যোগ দিতেন।[৫২] উদাহরণ স্বরূপ সিরিয়া থেকে আগত জনৈক আলেমে দ্বীন ইমাম সাদিকের (আ.) ছাত্রদের সাথে মুনাজিরার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে তিনি হিশাম ইবনে সালিমকে ঐ আলেমের সাথে কালাম শাস্ত্রের বিষয়ে আলোচনা করতে বলেন।[৫৩] একইভাবে জনৈক ব্যক্তি তাঁর (আ.) সাথে মুনাজিরা করতে চাইলে তিনি যে কোন বিষয়ে তার শিষ্যদের সাথে আলোচনা করতে বলেন এবং তাদেরকে পরাজিত করতে পারলে তাঁর সাথে মুনাজিরার কথা বলেন। ঐ ব্যক্তি কুরআন মাজিদ প্রসঙ্গে হুমরান ইবনে আইয়ানের সাথে, আরবি ব্যাকরণে আবান ইবনে তাগলিবের সাথে, ফিকাহ শাস্ত্রে যুরারাহ’র সাথে, কালাম শাস্ত্রে মু’মিনে তাক্ব ও হিশাম ইবনে সালিমের সাথে মুনাজিরা করে পরাজিত হন।[৫৪]

আহমাদ ইবনে আলী তাবারসী তার আল-ইহতিজাজ গ্রন্থে ইমাম সাদিকের (আ.) উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুনাজিরা সংকলন করেছেন; যেগুলোর কয়েকটির শিরোনাম নিম্নরূপ:

  • আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে এক নাস্তিকের সাথে মুনাজিরা[৫৫]
  • আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে আবু শাকের দাইছানি’র সাথে মুনাজিরা[৫৬]
  • আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে ইবনে আবিল আওজার সাথে মুনাজিরা[৫৭]
  • ‘হুদুসে আলাম’ সম্পর্কে ইবনে আবিল আওজার সাথে মুনাজিরা[৫৮]
  • দ্বীনি বিভিন্ন বিষয়ে জনৈক নাস্তিকের সাথে দীর্ঘ মুনাজিরা[৫৯]
  • ফিকাহ শাস্ত্রে ইস্তিম্বাতে আহকাম সম্পর্কে -বিশেষভাবে কিয়াস প্রসঙ্গে- আবু হানিফার সাথে মুনাজিরা[৬০]
  • শাসক নির্বাচন পদ্ধতি ও কিছু কিছু ফিকহী বিষয়ে মু’তাজেলি আলেমদের সাথে মুনাজিরা[৬১]

রাজনৈতিক জীবন

ইমাম সাদিকের (আ.) সমসময়ে উমার ইবনে আব্দুল আযিয ও হিশাম ইবনে আব্দুল মালিকসহ বনি উমাইয়ার শেষ ১০ জন খলিফা এবং বনি আব্বাসের প্রথম ২ খলিফা সাফফাহ ও মানসুর দাওয়ানেকী খেলাফতের মসনদে আসীন ছিলেন।[৬২] আব্দুল মালিকের অনুরোধে ইমাম বাকির (আ.) সিরিয়ায় যে সফর করেছিলেন সে সফরে ইমাম সাদিক (আ.) পিতার সাথেই ছিলেন।[৬৩] ইমাম সাদিকের (আ.) ইমামতের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে উমাইয়া সিলসিলার ৫ খলিফা -হিশাম ইবনে আব্দুল মালিক থেকে শেষ পর্যন্ত- এবং আব্বাসি সিলসিলার প্রথম ২ খলিফা সাফফাহ ও মানসুর দাওয়ানেকি মুসলমানদের উপর শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন।[৬৪]

সশস্ত্র আন্দোলনগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া

ইমাম সাদিকের (আ.) সময়কাল বনি উমাইয়া সরকারে দুর্বলতা, শিথিলতা ও পতনের সমসাময়িক হলেও তিনি সামরিক ও রাজনৈতিক সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতেন। এমনকি খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করার প্রস্তাবকেও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। শাহরিস্তানি তার আল-মিলাল ওয়ান নিহাল গ্রন্থে লিখেছেন যে, ইব্রাহিম ইমামের মৃত্যুর পর আবু মুসলিম খোরাসানী এক চিঠিতে ইমামকে খেলাফতের জন্য যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে তাঁকে খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণের আমন্ত্রণ জানান; কিন্তু ইমাম সাদিক (আ.) ঐ চিঠির উত্তরে লিখেছিলেন: ‘না তুমি আমার সাহায্যকারী, আর না এখন আমার সময়।’[৬৫] তিনি খেলাফত গ্রহণের জন্য আবু সালামা’র আমন্ত্রণকে তার চিঠি পুড়িয়ে ফেলার মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করেন।[৬৬] একইভাবে সরকার বিরোধী যে সকল আন্দোলন সেসময় সংঘটিত হয়েছিল -যেমন: যাইদ বিন আলী’র কিয়াম- সেগুলোতেও তিনি অংশগ্রহণ করেন নি।[৬৭] এক হাদীসে ইমাম সাদিক (আ.), একনিষ্ঠ সাথীর অভাবকে উক্ত আন্দোলনগুলোতে অংশগ্রহণ না করার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।[৬৮] তাঁর থেকে বর্ণিত কিছু কিছু রেওয়ায়েতে, কিয়াম ও আন্দোলন শুরু করার জন্য ১৭ জন এমনকি অন্তত ৫ জন সাথীই যথেষ্ট বলে উল্লেখিত হয়েছে। তাঁর সাথীদের পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার জন্য পীড়াপীড়া করা হলে তিনি বলতেন: আমরা তোমাদের ও অন্যদের চেয়ে ভালভাবে অবগত যে, কোন সময়ে আমাদের করণীয় কি?[৬৯]

আব্দুল্লাহ ইবনে হাসানে মুসান্না’র সাথে বিরোধ

বনি উমাইয়া সরকারের শেষের বছরগুলোতে আব্দুল্লাহ ইবনে হাসানে মুসান্না ও তাঁর পুত্ররা এবং সাফফাহ ও মানসুরসহ বনি হাশিমের একটি দল ‘আবওয়া’ নামক স্থানে সরকার বিরোধী আন্দোলনের লক্ষ্যে তাদের একজনের হাতে বাইয়াত করার জন্য সমবেত হন। ঐ সমাবেশে আব্দুল্লাহ স্বীয় পুত্র মুহাম্মাদকে ‘মাহদি’ হিসেবে পরিচয় করান এবং উপস্থিতদেরকে তার হাতে বাইয়াত করার আহবান জানান।

এ ঘটনা জানতে পেরে ইমাম সাদিক (আ.) বললেন: ‘তোমার পুত্র মাহদি নয়, আর মাহদির আবির্ভাবের সময় এখনো হয়নি।’ আব্দুল্লাহ তাঁর কথায় অসন্তুষ্ট হয়ে তিনি (আ.) হিংসা করছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। ইমাম সাদিক (আ.) কসম খেয়ে বললেন যে, তাঁর এমন মন্তব্য হিংসা প্রসূত নয়। তিনি আরও বললেন তার (হাসানে মুসান্না’র) সন্তানরা নিহত হবে এবং সাফফাহ ও মানসুর খেলাফতে আসীন হবে।[৭০]রাসুল জাফারিয়ান এই ঘটনাকেই ইমাম হাসান (আ.) এবং ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সন্তানদের মধ্যকার মতপার্থক্যের মূল হিসেবে জ্ঞান করেন।[৭১]

শাসকদের সাথে সম্পর্ক

সরকার বিরোধী আন্দোলনগুলোকে এড়িয়ে চললেও তৎকালীন ক্ষমতাসীন শাসকদের সাথেও তাঁর সুসম্পর্ক ছিল না। পিতা ইমাম মুহাম্মাদ বাকিরের (আ.) সাথে যে বছর হজ্জ পালন করতে গিয়েছিলেন, সে বছর হজ্জের অনুষ্ঠানে আহলে বাইতকে (আ.) আল্লাহর মনোনীত হিসেবে পরিচয় করিয়ে আহলে বাইতের (আ.) সাথে হিশাম ইবনে আব্দুল মালিকের শত্রুতার প্রতি ইঙ্গিত করেন।[৭২] মানসুর দাওয়ানেকি অপর লোকদের মত ইমামকে তার সাথে সাক্ষাতের কথা বললে, মানসুরের উত্তরে ইমাম (আ.) লিখেছিলেন: ‘আমাদের কাছে এমন কিছু নেই যার জন্যে তোমাকে ভয় পেতে হবে এবং তোমার কাছেও পরকালের কিছু নেই যে, তার কারণে আমরা তোমার প্রতি আশাবাদী হব, আর মোবারকবাদ জানানোর মত এমন কোন নিয়ামতও তুমি প্রাপ্ত হওনি, আর তুমি বিপদে আছো এমনও নয় যে, তোমাকে সমবেদনা জানাতে হবে। তাহলে তোমার কাছে কেন আসব?!’[৭৩]

ইমাম সাদিকের (আ.) গৃহে অগ্নিসংযোগ

আল-কাফী গ্রন্থের একটি রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, মানসুর আব্বাসির নির্দেশে মক্কামদিনার গভর্নর হাসান ইবনে যাইদ, ইমাম সাদিকের (আ.) বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। ঐ রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে অগুন লাগানোর ঘটনায় ইমামের বাড়ির দহলিজ ভস্মীভূত হয় এবং ইমাম (আ.) আগুনের মাঝখান দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে বলেন: ‘আমি اعراق الثَّری (হযরত ইসমাঈলের -আ.- উপাধি) এর সন্তান; অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির সন্তান যার বংশধারা স্নায়ু ও শিকড়ের মত পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে); আমি ইব্রাহিম খলিলুল্লাহর সন্তান।[৭৪]

অবশ্য তারিখে তাবারি’র সাক্ষ্যানুযায়ী, মানসুর ১৫০ হিজরীতে -অর্থাৎ ইমাম সাদিকের (আ.) শাহাদাতের ২ বছর পর- হাসান ইবনে যাইদকে মদিনার গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেন।[৭৫]

তাকিয়্যাহ অবলম্বন

হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দির তৃতীয় দশক -যা ছিল বনি উমাইয়া সরকারের পতনের সমসাময়িক- ব্যতীত বাদবাকী সময়ে ইমাম সাদিক (আ.) ও তাঁর সাথীদের তৎপরতার উপর উমাইয়া ও আব্বাসি খলিফাদের নজরদারী ছিল। ইমামের (আ.) জীবনের শেষ দিনগুলোতে রাজনৈতিক চাপ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।[৭৬] কিছু কিছু বর্ণনার ভিত্তিতে মানসুর দাওয়ানেকির নিয়োগপ্রাপ্তরা, ইমাম সাদিকের (আ.) সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে এমন লোকদেরকে সনাক্ত এবং তাদেরকে শিরোশ্ছেদ করত। এ কারণে বাধ্য হয়ে ইমাম সাদিক (আ.) ও তাঁর সাথীরা তাকিয়্যাহ অবলম্বন করতেন।[৭৭]

ইমাম সাদিক (আ.) থেকে উসুলে কাফীতে উল্লিখিত একটি রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে: সুফিয়ান সাওরি ইমাম সাদিকের (আ.) সাথে সাক্ষাত করতে এলে ইমাম তাকে বললেন: তাদের দু’জনের উপরই সরকারের নজরদারী রয়েছে, অতএব, সে যেন চলে যায়।[৭৮] অপর এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি আবান ইবনে তাগলিবকে বললেন: জনগণের ফিকাহ ও মাসআলা-মাসায়েল সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তরগুলো যেন তিনি আহলে সুন্নাতের আলেমদের মত অনুযায়ী প্রদান করেন; যাতে সরকার তার জন্য সমস্যা সৃষ্টির বাহানা না পায়।[৭৯] এছাড়া, ইমাম সাদিক (আ.) থেকে তাকিয়্যাহ’র প্রতি তাগিদ করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে; যার কিছু কিছুতে তাকিয়্যাহ’র অবস্থানকে নামাজের সমপর্যায়ে বলে উল্লেখিত হয়েছে।[৮০] আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী’র দৃষ্টিতে ইমাম সাদিকের (আ.) জীবনীর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো যদি মোটা দাগে লেখা হয় তাহলে তা হবে এমন:

  • তৎকালীন শাসকদেরকে প্রত্যক্ষ ও সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করার লক্ষ্যে ইমামতের বিষয়টি প্রচার ও হাইলাইট  করার পাশাপাশি নিজেকে ইমাম ও বেলায়েতের অধিকারী হিসেবে জনগণের সামনে পরিচয় করানো।
  • শিয়া ফিকাহ’র ভিত্তিতে দ্বীনি বিধি-বিধান বর্ণনা ও প্রচার, সেইসাথে শিয়া দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে অপর ইমামদের তুলনায় আরও স্পষ্ট ভাষায় কুরআনের তাফসীর।
  • আলে আলীর (আ.) বংশধরদের ইমামত ও সঠিকভাবে ইমামতের ব্যাখ্যা তুলে ধরতে বিস্তৃত প্রচার নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা ও গোপনে সেটার তত্ত্বাবধায়ন; নেটওয়ার্কটি ইরাক, খোরাসানের মত বহু দূরবর্তী এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও ইমামতের বিষয় প্রচার-প্রসারে চোখে পড়ার মত কার্যকরভাবে তৎপর ছিল।[৮১]

নৈতিক বৈশিষ্ট্য, মর্যাদা এবং গুণাবলী

রেওয়ায়েত ভিত্তিক গ্রন্থসমূহে ইমাম সাদিকের (আ.) নৈতিক বৈশিষ্ট্যাবলি প্রসঙ্গে তাঁর যুহুদ (দুনিয়া বিমুখতা), দানশীলতা ও সমৃদ্ধ জ্ঞান এবং অত্যধিক ইবাদত ও বেশীরভাগ সময় কুরআন তেলাওয়াতে মশগুল থাকা ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনে তালহা, ইমাম সাদিককে (আ.) আহলে বাইতের (আলাইহিমুস সালাম) মাঝে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি, সমৃদ্ধ জ্ঞানের অধিকারী, অত্যধিক ইবাদতকারী, যুহদের অধিকারী ও অত্যধিক কুরআন তেলাওয়াতকারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিশিষ্ট সুন্নি ফকীহ মালিক ইবনে আনাস বলেছেন, ইমাম সাদিকের (আ.) নিকট যতদিন গিয়েছেন তিনি তাঁকে নামাজরত অথবা রোজা অবস্থায় বা যিকররত -এ ৩ অবস্থায় দেখেছেন।[৮২]

বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে যে, জনৈক ব্যক্তি সাহায্যের আবেদন জানালে ইমাম সাদিক (আ.)  তাকে ৪০০ দিরহাম প্রদান করেন। অতঃপর (মহান আল্লাহর দরবারে লোকটির) শুকরিয়া জ্ঞাপন দেখে তাকে নিজের আংটি প্রদান করেন; যার মূল্য ছিল ১০,০০০ হাজার দিরহাম।[৮৩]

ইমাম সাদিকের (আ.) গোপনে দান করা প্রসঙ্গেও বিভিন্ন রেওয়ায়েত উল্লিখিত হয়েছে। কাফী’তে উল্লিখিত রেওয়াতের ভিত্তিতে তিনি রাতের বেলায় একটি থলেতে রুটি, মাংস ও অর্থ নিয়ে অজ্ঞাত অবস্থায় দুস্থ ও অভাবী মানুষের দরজায় যেতেন এবং সেগুলো তাদের মাঝে বিতরণ করতেন।[৮৪] আবু জাফার খাসআমি থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম সাদিক (আ.) তাকে একটি মুদ্রার থলে দিয়ে সেগুলোকে বনি হাশিমের জনৈক ব্যক্তিকে দিতে বললেন এবং এও বললেন যেন ঐ ব্যক্তি জানতে না পারে যে কে তা পাঠিয়েছে। খাসআমির ভাষ্যানুযায়ী লোকটি থলেটি হাতে পেয়ে তা প্রদানকারী ব্যক্তির জন্য দোয়া করে ইমাম সাদিক (আ.) সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে বললো: তার কাছে এত অর্থ থাকা সত্ত্বেও তিনি তাকে কিছু দিলেন না।[৮৫] আবু আব্দুল্লাহ বালখি থেকে বর্ণিত যে, একদা ইমাম সাদিক (আ.) একটি মরা খোরমা বৃক্ষের উদ্দেশ্যে বললেন: হে আল্লাহর অনুগত খোরমা বৃক্ষ! মহান আল্লাহ্ তোমাকে যা কিছু প্রদান করেছেন তা থেকে আমাদেরকে কিছু খাওয়াও। ঐ সময় মরা বৃক্ষটি থেকে রঙ বেরঙের খোরমা ঝরতে শুরু করলো।[৮৬]

ইরাক সফর

সাফফাহ এবং মানসুর দাওয়ানেকির শাসনামলে ইমাম সাদিক (আ.) সরকারি তলবের কারণে বিভিন্ন সময়ে ইরাক সফর করেছেন। এ সকল সফরে তিনি কারবালা, নাজাফ, কুফাহীরাহ সফরও করেছিলেন।[৮৭] মুহাম্মাদ ইবনে মা’রুফ হিলালি বলেন, হীরাহ সফরে স্থানীয় জনগণ ইমাম সাদিককে (আ.) অভূতপূর্ব স্বাগত জানায়; তাকে স্বাগত জানাতে এত পরিমাণে লোক সমবেত হয়েছিল যে, ভীড়ের কারণে কয়েকদিন যাবত তিনি ইমামের সাথে সাক্ষাত করতে পারেন নি।[৮৮]

মসজিদে কুফাতে ইমাম সাদিকের (আ.) মেহরাব মসজিদের পূর্ব পার্শ্বে মুসলিম ইবনে আকীলের মাজারের কাছাকাছি স্থানে অবস্থিত এবং সাহলাহ মসজিদে তার মেহরাব ইরাকে তার স্মৃতিচিহ্নগুলোর অন্যতম।[৮৯] ইমাম সাদিক (আ.) কারবালা শহরে ইমাম হুসাইনের (আ.) কবর যিয়ারত করেছেন।[৯০] কারবালা শহরে ‘হুসাইনিয়া’ নহরের তীরে একটি স্থাপনায় অবস্থিত মেহরাব ইমাম সাদিকের (আ.) সাথে সম্পৃক্ত।[৯১]

হযরত আলীর (আ.) কবর সনাক্তকরণ

কিছু কিছু রেওয়ায়েতে ইমাম সাদিক (আ.) কর্তৃক ইমাম আলীর (আ.) কবর যিয়ারতের কথা উল্লিখিত হয়েছে।[৯২] ঐদিন পর্যন্ত ইমাম আলীর (আ.) কবরের স্থান সম্পর্কে কেউ জানত না। তিনি নিজ সাথীদেরকে ঐ কবরের স্থান চিহ্নিত করে দেন। কুলাইনি’র ভাষ্য অনুযায়ী, একদিন তিনি ইয়াযিদ ইবনে আমর ইবনে তালহাকে হীরাহ ও নাজাফের মধ্যবর্তী একটি স্থানে নিয়ে যান এবং সেখানে তাঁর সম্মানিত জাদ্দ (পূর্বপুরুষ) ইমাম আলীর (আ.) দাফনের স্থানটিকে দেখিয়ে দেন।[৯৩] শেইখ তুসী থেকেও বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম সাদিক (আ.) ইমাম আলীর (আ.) দাফনের স্থানের কাছে এসে নামাজ আদায় করলেন, অতঃপর তিনি কবরটি ইউনুস ইবনে যাবইয়ানকে দেখিয়ে দিলেন।[৯৪]

শিষ্য ও রাভিগণ

মূল নিবন্ধ: ইমাম সাদিকের (আ.) সাহাবিদের তালিকা

শেইখ তুসী তার রিজাল গ্রন্থে ইমাম সাদিকের (আ.) প্রায় ৩,২০০ রাভির নাম লিপিবদ্ধ করেছেন।[৯৫] শেইখ মুফিদ তার আল-ইরশাদ গ্রন্থে ইমামের (আ.) রাভিদের সংখ্যা ৪ হাজার বলে উল্লেখ করেছেন।[৯৬] বলা হয়েছে যে, ইবনে উকদাহ ইমাম সাদিকের (আ.) রাভিদের সম্পর্কে একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছিলেন যাতে তাঁর ৪০০০ রাভির নাম উল্লিখিত হয়েছে।[৯৭]

উসুলে আরবাআ মিয়াহ -এর লেখকদের বেশীরভাগই ইমাম সাদিকের (আ.) ছাত্র ছিলেন।[৯৮] এছাড়া অপর ইমামগণের (আ.) তুলনায় আসহাবে ইজমার মাঝে সবচেয়ে বেশী ছিলেন ইমাম সাদিকের (আ.) শিষ্য ও ছাত্ররা; যারা ছিলেন ইমামগণের (আ.) সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য।[৯৯] ইমাম সাদিকের (আ.) প্রসিদ্ধ কয়েকজন ছাত্র -যারা আসহাবে ইজমারও অন্তর্ভুক্ত- হলেন:

  1. যুরারাহ ইবনে আইয়ান
  2. মুহাম্মাদ ইবনে মুসলিম
  3. বুরাইদ ইবনে মুয়াবিয়া
  4. জামিল ইবনে দাররাজ
  5. আব্দুল্লাহ ইবনে মুসকান
  6. আব্দুল্লাহ ইবনে বুকাইর
  7. হাম্মাদ ইবনে উসমান
  8. হাম্মাদ ইবনে ঈসা
  9. আবু বাসির আসাদি
  10. হিশাম ইবনে সালিম
  11. হিশাম ইবনে হাকাম

ইমাম সাদিকের (আ.) শিষ্যদের মুনাজিরা সম্পর্কে কাশশি যে রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন তা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতীয়মান হয় যে, তাঁর (আ.) শিষ্যদের কেউ কেউ নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে বিশেষ দক্ষতার অধিকারী ছিলেন।[১০০] ঐ রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে হুমরান ইবনে আইয়ান উলুমে কুরআন শাস্ত্রে, আবান ইবনে তাগলিব আরবি ব্যাকরণে, যুরারাহ ফিকাহ শাস্ত্রে, মু’মিনে তাক ও হিশাম ইবনে সালিম কালাম শাস্ত্রে দক্ষ ছিলেন।[১০১] ইমামের (আ.) যে সকল ছাত্র কালাম শাস্ত্রে বিশেষ দক্ষ ছিলেন তাদের মাঝে হুমরান ইবনে আইয়ান, কাইস মাসের ও হিশাম ইবনে হাকাম প্রমূখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[১০২]

আহলে সুন্নাত

আহলে সুন্নাতের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় আলেম, ইমাম ও ফকীহ ছিলেন ইমাম সাদিকের (আ.) শিক্ষানবিশ। শেইখ তুসী তার রিজাল গ্রন্থে আবু হানিফার নাম ইমামের (আ.) শিক্ষানবিশদের তালিকায় এনেছেন।[১০৩] ইবনে আবিল হাদিদ মু’তাজেলিও আবু হানিফাকে ইমাম সাদিকের (আ.) শিক্ষানবিশ বলে উল্লেখ করেছেন।[১০৪] মালিক ইবনে আনাস থেকে শেইখ সাদুক বর্ণনা করেছেন যে, তিনি কিছু সময়ের জন্য ইমাম সাদিকের (আ.) কাছে যেতেন এবং তার নিকট থেকে হাদীস শুনতেন।[১০৫] মালিক ইবনে আনাস তার মুআত্তা গ্রন্থে ইমাম সাদিক (আ.) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।[১০৬]

ইবনে হাজার হাইতামি লিখেছেন, আবু হানিফা, ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ, ইবনে জুরাইহ, মালিক ইবনে আনাস, সুফিয়ান ইবনে উআইনাহ, সুফিয়ান সাওরি, শো’বাহ ইবনে হাজ্জাজ, আইয়ুব সাখতিয়ানি প্রমূখের মত সুন্নি মনীষীগণ ইমাম সাদিক (আ.) থেকে রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন।[১০৭] ‘আয়িম্মাতুল আরবাআহ’ গ্রন্থেও মালিক ইবনে আনাসের মদিনায় উপস্থিতি এবং ইমাম সাদিকের (আ.) মত ব্যক্তিত্বের দরসে অংশগ্রহণকে তার ইলমি যোগ্যতা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[১০৮]

প্রসিদ্ধ হাদীসসমূহ

ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত কতিপয় প্রসিদ্ধ হাদীস:

  • হাদীসে জুনুদে আকল ওয়া জাহল[১০৯]
  • হজ্জ সম্পর্কিত হাদীস: এ হাদীসে ইমাম সাদিক (আ.), মহানবির (স.) শেখানো হজ্জ পালন পদ্ধতি নিজের পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি শিয়া[১১০] ও সুন্নি[১১১] উভয় সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।[১১২]
  • হাদীসে তাওহিদে মুফাযযাল: তাওহিদে মুফাযযাল দীর্ঘ একটি হাদীস; চার বৈঠকে হাদীসটি ইমাম সাদিক (আ.) মুফাযযাল ইবনে উমারের উদ্দেশে ব্যক্ত করেছিলেন। এতে বিশ্ব ও মানব সৃষ্টি এবং এ দু’য়ের মাঝে বিদ্যমান নানান বিস্ময় ও লুক্কায়িত প্রজ্ঞা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।[১১৩]
  • হাদীসে ইনওয়ান বাসরি: এ হাদীসে ইমাম সাদিক (আ.) ‘উবুদিয়্যাত’-এর সংজ্ঞা প্রদানের পর আত্মসংযম, সহনশীলতা, জ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন নির্দেশনা ও ফর্মূলা ইনওয়ান বাসরি নামক জনৈক ব্যক্তির উদ্দেশে ব্যক্ত করেছেন।[১১৪]
  • মাকবুলাহ উমার ইবনে হানযালাহ:[১১৫]

হাদীসটিতে বিচারকার্য ও তাআরুয সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে; শিয়া ফকীহদের কেউ কেউ এ হাদীস থেকে দু’টি পরস্পর বিরোধী রেওয়ায়েতের সমস্যা সমাধানে বেশ কিছু মানদণ্ড হস্তগত করেছেন।[১১৬] এছাড়া বেলায়েতে ফকীহ’র সমর্থকরাও বিষয়টির পক্ষে হাদীসটিকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে থাকেন।[১১৭]

امام صادق علیه السلام: أَرْبَعَةٌ الْقَلِیلُ مِنْهَا کَثِیرٌ النَّارُ الْقَلِیلُ مِنْهَا کَثِیرٌ وَ النَّوْمُ الْقَلِیلُ مِنْهُ کَثِیرٌ وَ الْمَرَضُ الْقَلِیلُ مِنْهُ کَثِیرٌ وَ الْعَدَاوَةُ الْقَلِیلُ مِنْهَا کَثِیرٌ
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন: এমন ৪টি জিনিস রয়েছে যা স্বল্প হওয়া সত্ত্বেও অনেক (বেশী): আগুন, ঘুম, ব্যাধি ও শত্রুতা।

-শেইখ সাদুক, আল-খিসাল।

  • ‘মনিবের দৃষ্টিতে অন্যের ত্রুটি দেখো না, বরং বিনয়ী ও নম্র দাসের ন্যায় নিজের ত্রুটিগুলো যাচাই কর।’[১১৮]
  • ‘পরস্পরের প্রতি কখনই হাসাদ (হিংসা ও বিদ্বেষ) পোষণ করো না, কেননা কুফর ও বে-দ্বীনি হিংসা থেকে উৎস লাভ করে।’[১১৯]
  • তোমাদের ভাইদেরকে তোমরা দু’টি বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে যাচাই করো, যদি তারা ঐ দুই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয় তবে তাদের সাথে বন্ধুত্ব অব্যাহত রাখো, অন্যথায় তাদের থেকে দূরে সরে যাও, দূরে সরে যাও, দূরে সরে যাও; (ক) সে প্রথম সময়ে (আওয়ালে ওয়াক্ত) নামায আদায়ের বিষয়ে যত্নবান কি না, (খ) কষ্ট ও বিপদের সময়ে হোক বা সুখ ও শান্তির সময়ে সে নিজের (দ্বীনি) ভাইয়ের জন্য কল্যাণকর কি না।[১২০]

আহলে সুন্নতের দৃষ্টিতে ইমাম সাদিক (আ.)

আহলে সুন্নাতের মনীষীদের নিকট ইমাম সাদিক (আ.) সুউচ্চ মাকামের অধিকারী। আহলে সুন্নাতের ইমাম আবু হানিফা, ইমাম সাদিককে (আ.) মুসলমানদের মাঝে সবচেয়ে বড় ফকীহ, সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।[১২১] ইবনে শাহরে আশুবে’র বর্ণনায় মালিক ইবনে আনাস বলেছেন: ফাযল (বদান্যতা), জ্ঞান, ইবাদত, খোদাভীরুতার (ওয়ারা’) দিকে থেকে জাফার ইবনে মুহাম্মাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন ব্যক্তিকে না চোখ দেখেছে আর না কান শুনেছে।[১২২]

আল-মিলাল ওয়ান-নিহাল গ্রন্থে শাহরিস্তানের ভাষ্যানুযায়ী, ইমাম সাদিক (আ.) ছিলেন দ্বীনি বিষয়ে সমৃদ্ধ জ্ঞানের অধিকারী, হিকমতে বিশেষ জ্ঞান ও বিচক্ষণ, পার্থিব বিষয়ে যুহদের ক্ষেত্রে উঁচু মাকামের অধিকারী, শাহওয়াত থেকে দূরে থাকার বিষয়ে পরিপূর্ণরূপে খোদাভীরু, তিনি কিছুকাল মদিনায় অবস্থান করে নিজের অনুসারী (শিয়া) ও সংশ্লিষ্টদেরকে নিজের জ্ঞান থেকে উপকৃত করেছেন এবং তার অনুসারী ও ঘনিষ্ট জনদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন গোপন বিষয়ের রহস্য সম্পর্কে অবগত করেছেন। তিনিই সেই ব্যক্তি, যে জ্ঞান ও মা’রেফাতের অসীম সাগরে নিমজ্জিত ছিলেন এবং নদীর (মত সামান্য) পানির প্রতি তাঁর কোনো লোভ ছিল না। তিনি সত্যের সর্বোচ্চ শিখরে আসীন ছিলেন এবং পার্থিব স্তরে পতন ও অবতরণের কোন ভয় তাঁর ছিল না।[১২৩]

বিশিষ্ট সুন্নি মনীষী ইবনে আবিল হাদিদের ভাষ্য হলো, আবু হানিফা, আহমাদ ইবনে হাম্বাল এবং শাফেয়ী’র মত ইমামগণ, প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে ইমাম সাদিকের (আ.) শিক্ষানবিশ ছিলেন। এ কারণে আহলে সুন্নতের ফিকাহ’র কিছু অংশ শিয়া ফিকাহর সাথে সম্পৃক্ত।[১২৪] এতদসত্ত্বেও ইমাম সাদিকের (আ.) সমসাময়িক আওযায়ী ও সুফিয়ান সাওরী’র ন্যায় ফকীহদের দৃষ্টভঙ্গির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হলেও তাঁর (আ.) দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি কোনরূপ ভ্রুক্ষেপ করা হয় নি।[১২৫] এ কারণেই সাইয়্যেদ মুর্ত্তাযা’র মত শিয়া আলেমরা আহলে সুন্নাতের ওলামাদের সমালোচনা করেছেন।[১২৬]

শাহাদাত

শেইখ সাদুক এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন যে, মানসুর দাওয়নেকির নির্দেশে বিষ প্রয়োগ করে ইমাম সাদিককে (আ.) শহীদ করা হয়।[১২৭] ইবনে শাহরে আশুব তার ‘আল-মানাকিব’ গ্রন্থে এবং মুহাম্মাদ ইবনে জারির তাবারি তার ‘দালায়েলুল ইমামাহ’ গ্রন্থেও একই মত উত্থাপন করেছেন।[১২৮] তাঁর শাহাদাতের পক্ষে ما مِنَّا إلا مقتول شهید রেওয়াতটিকে প্রমাণ হিসেবে আনা হয়েছে।[১৪০] এর বিপরীতে শেইখ মুফিদ, ইমাম সাদিকের (আ.) শাহাদাতের পক্ষে সুনিশ্চিত কোন দলীল নেই বলে মন্তব্য করেছেন।[১২৯] বিশিষ্ট ঐতিহাসিক সাইয়্যেদ জাফার মুর্ত্তাযা আমেলি, শেইখ মুফিদের এমন ভাষ্যকে তাকিয়্যাহ বলে অভিহিত করেছেন।[১৩০] ইমাম সাদিককে (আ.) বাকী কবরস্থানে তার পিতা ইমাম বাকির (আ.) ও পিতামহ ইমাম সাজ্জাদ ও ইমাম হাসানের (আলাইহিমাস সালাম) পাশে দাফন করা হয়।[১৩১]

ইমাম সাদিকের (আ.) ওসিয়ত

উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম সাদিক (আ.) বহুবার নিজের আসহাবের সামনে ইমাম কাযিমকে (আ.) নিজের পরবর্তী ইমাম হিসেবে পরিচয় করিয়েছেন।[১৩২] কিন্তু আব্বাসীয়দের পক্ষ থেকে বিদ্যমান চাপ এবং ইমাম কাযিমের (আ.) জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে নিজের পরবর্তী ওয়াছি হিসেবে তিনি ৫ জনের নাম উল্লেখ করে যান; আব্বাসি খলিফা তাদের মাঝে অন্যতম।[১৩৩][নোট ২] এ কারণে মু’মিনে তাকহিশাম ইবনে সালিমের মত ইমাম সাদিকের (আ.) বিশিষ্ট সাহাবীরাও তাঁর স্থলাভিষিক্ত ইমামের বিষয়ে দ্বিধার সম্মুখীন ছিলেন। তারা শুরুতে আব্দুল্লাহ্ আফতাহ’র শরণাপন্ন হয়ে তাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন। অতঃপর আব্দুল্লাহ থেকে সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে তারা ইমাম কাযিমের (আ.) সাথে সাক্ষাত করে তার প্রদত্ত উত্তরে সন্তুষ্ট হন এবং তাঁর ইমামতকে গ্রহণ করে নেন।[১৩৪]

শিয়া মাযহাবে বিভক্তি

ইমাম সাদিকের (আ.) শাহাদাতের পর শিয়া মাযহাবে বিভিন্ন ফির্কা’র উদ্ভব হয়; প্রতিটি দল ইমাম সাদিকের (আ.) একেকজন সন্তানকে ইমাম মনে করে বসে। তবে বেশীরভাগ শিয়াই ৭ম ইমাম হিসেবে ইমাম কাযিমের (আ.) ইমামতকে গ্রহণ করে নেয়।[১৩৫] শিয়াদের একটি দল ইমাম সাদিকের (আ.) পুত্র ইসমাঈলের মৃত্যুকে অস্বীকার করে তাকে ইমামতের যোগ্য বলে মনে করে; এ দলটির একটি অংশ ইসমাঈলের বেঁচে থাকার বিষয়ে নিরাশ হয়ে ইসমাঈলের পুত্র মুহাম্মাদকে ইমাম হিসেবে গ্রহণ করে নেয়, আর এ দলটিই ইসমাঈলিয়া নামে প্রসিদ্ধ হয়। অপর একটি দল ইমাম সাদিকের (আ.) দ্বিতীয় পুত্র আব্দুল্লাহ আফতাহকে ইমাম মনে করে; যাদেরকে ফাতাহিয়া বলা হয়। তবে ইমাম সাদিকের (আ.) শাহাদাতের ৭০ দিন পর আব্দুল্লাহর মৃত্যু হলে তারা ইমাম কাযিমের (আ.) ইমামতে বিশ্বাস পোষণ করে। আর একটি দল নাউস (ناووس) নামক জনৈক ব্যক্তির অনুসরণ করতঃ ইমাম সাদিকের (আ.) ইমামতে থেমে যেয়ে (তাওয়াক্কুফ করে) নাউসিয়া নামক ফির্কা’র জন্ম দেয়। অপর একটি দল ইমাম সাদিকের (আ.) আরেক সন্তান মুহাম্মাদ দীবাজের ইমামতে বিশ্বাস পোষণ করে।[১৩৬]

ইরানে সরকারি ছুটি

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে ২৫শে শাওয়াল ইমাম সাদিকের (আ.) শাহাদাত দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকে। এ ছুটি আয়াতুল্লাহ কাশানীর পরামর্শে মুহাম্মাদ মুসাদ্দেকের নির্দেশ চালু করা হয়।[১৩৭] ইরানের মারজায়ে তাক্বলিদদের কেউ কেউ কোম (শহর) শহরে এ দিবস উপলক্ষে আযাদারী ও শোক মজলিশের আয়োজন করে থাকেন এবং তারা পায়ে হেটে হযরত মাসুমার (সা. আ.) মাজারে যান।[১৩৮]

ইমাম সাদিকের (আ.) রচনাবলি

কিছু কিছু শিয়া হাদীস গ্রন্থে ইমাম সাদিকের (আ.) বেশ কিছু রিসালাহ ও চিঠির কথা উল্লিখিত হয়েছে; তবে এগুলোর কিছু কিছুর সত্যতার বিষয়ে অনেকে দ্বিধা করেছেন। অবশ্য যেগুলো আল-কাফী গ্রন্থে এসেছে সেগুলো নির্ভরযোগ্য।[১৩৯] ঐ রিসালাহ গুলোর কয়েকটি নিম্নরূপ:

  • আসহাবের উদ্দেশ্যে ইমাম সাদিকের (আ.) রিসালাহ; আল-কাফী (গ্রন্থ) গ্রন্থে উল্লিখিত রিসালাহ’টিতে বিভিন্ন বিষয়ে শিয়াদের উদ্দেশ্যে ইমামের উপদেশ রয়েছে।[১৪০]
  • আ’মাশের বর্ণনায় ‘রিসালাতু শারায়ে আদ-দ্বীন’: এ রিসালাহ উসূল বা নীতিশাস্ত্র ও ফুরুয়ে দ্বীন সম্পর্কে; যা শেইখ সাদুক কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে।
  • তাফসীর সম্পর্কে একটি চিঠির খণ্ড অংশ
  • আহলে কিয়াস ও তাদের সমালোচনার বিষয়ে একটি চিঠির কিছু অংশ
  • আর-রিসালাতুল আহওয়াযিয়াহ: চিঠিটি আহওয়াজের গভর্নর নাজ্জাশির উদ্দেশে লেখা। চিঠিটি শাহীদে সানী রচিত ‘কাশফুর রাইবাহ’ গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে।
  • তাওহিদে মুফাযযাল অথবা কিতাবে ফাক্কির: এ সন্দর্ভটি মুফাযযাল ইবনে উমারের উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ পরিচিতি সম্পর্কে ইমাম সাদিকের (আ.) বেশ কিছু ভাষ্য সম্বলিত। فَکِّر یا مُفَضَّل (ভাবো হে মুফাযযাল) এবারতটি বারবার পূনরাবৃত্তি হওয়ায় অতীতে গ্রন্থটি ‘কিতাবে ফাক্কির’ নামে বিখ্যাত ছিল। তবে আয-যারিয়া’র লেখক, মুফাযযালকে গ্রন্থের রচয়িতা হিসেবে পরিচয় করিয়েছেন।[১৪১]
  • রিসালায়ে আহলিলাজাহ (গ্রন্থ): এ রিসালাহ’তে ইমাম সাদিক (আ.) ভারতীয় চিকিৎসের সাথে আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয়ে যে কথোপকথন করেছিলেন তা উল্লেখিত হয়েছে। সাইয়্যেদ মুহসিন আমিন বলেছেন: সাইয়্যেদ ইবনে তাউসের নিকট রিসালাহটিকে নির্ভরযোগ্য। একইভাবে ফিহরিস্তে ইবনে নাদিমের লেখক ইবনে নাদিম তাঁর উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম সাদিক (আ.) কর্তৃক এমন গ্রন্থ লেখার বিষয়টি মাহাল (অসম্ভব বিষয়গুলোর অন্যতম)।[১৪২]
  • ইমাম সাদিকের (আ.) তাফসীর নামে প্রসিদ্ধ টেক্সক্ট
  • তাফসীরে নো’মানি[১৪৩]
  • এমন কিছু গ্রন্থও রয়েছে যেগুলোতে ইমাম সাদিকের (আ.) ছাত্ররা তাঁর ভাষ্য ও উক্তিগুলোকে সংকলন করেছেন; সেগুলোর মধ্যে প্রকাশিত কয়েকটি গ্রন্থ হলো:
  • মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আশআস রচিত ‘আল-জাফারিয়াত’ অথবা ‘আল-আশআসিয়াত’
  • নাসরুদ দুরার: এ বইয়ের মূল টেক্সক্ট ইবনে শো’বা হাররানী তার তোহাফুল উকুল গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
  • আল-হিকামুল জাফারিয়াহ
  • সালমান ইবনে আইয়ুবের এর রেওয়ায়েতে কালেমাতে কিসারের সমষ্টি (মাজমুআতু কালিমাতিল ক্বিসার); এর টেক্সক্ট জুওয়ানি রচিত ‘ফারাইদুস সিমতাইন’ গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে।[১৪৪]

গ্রন্থ পরিচিত

  • ইমাম সাদিক (আ.) সম্পর্কে বহু সংখ্যক গ্রন্থ রচিত হয়েছে। ‘কিতাব শেনাসিয়ে ইমাম সাদিক (আ.)’ গ্রন্থে ইমাম সাদিক (আ.) সম্পর্কে প্রকাশিত ৮০০ গ্রন্থের নাম উল্লিখিত হয়েছে।[১৪৫] মুহাম্মাদ ইবনে ওয়াহবান দুবাইলি (হিজরী ৪থ শতাব্দি) রচিত ‘আখবারুস সাদিক মাআ আবু হানিফা’ ও ‘আখবারুস সাদিক মাআল মানসুর’ এবং আব্দুল আযিয ইয়াহিয়া জালুদী (হিজরী ৪র্থ শতাব্দি) রচিত ‘আখবারু জাফার ইবনে মুহাম্মাদ’, ইমাম সাদিক (আ.) সম্পর্কে রচিত সবচেয়ে পুরোনো গ্রন্থগুলোর অন্যতম।[১৪৬] তাঁর (আ.) সম্পর্কে রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে বিখ্যাত কিছু গ্রন্থের নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
  • আসাদ হায়দার রচিত ‘আল-ইমামুস সাদিক ওয়াল মাযাহিবুল আরবাআহ’[১৪৭] গ্রন্থটি বাংলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতে অনুবাদ হয়েছে।
  • রেজা উস্তাদি রচিত ‘কিতাব ন’মেয়ে ইমাম সাদিক (আ.)’
  • মুহাম্মাদ হুসাইন মুযাফফার রচিত ‘আল-ইমামুস সাদিক’;[১৪৮]
  • আব্দুল হালিম জুন্দি রচিত আল-ইমাম জাফার আস-সাদিক
  • সাইয়্যেদ জাফার শাহিদী রচিত ‘যেন্দেগিয়ে ইমাম সাদিক জাফার ইবনে মুহাম্মাদ (আ.)
  • নূরুল্লাহ আলী দুস্ত খোরাসানী রচিত ‘পারতুয়ি আয যেন্দেগিয়ে ইমাম সাদিক (আ.)’
  • সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী রচিত ‘পিশওয়ায়ে সাদেক (গ্রন্থ)
  • বাকের শারিফ কারাশী রচিত ‘মওসুআতুল ইমামিস সাদিক’
  • সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ কাযিম কাযভিনী রচিত ‘মওসুআতুল ইমাম জাফার আস-সাদিক’; এ নাগাদ গ্রন্থটির ১৫ খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে এবং মোট ৬০ খণ্ডে গ্রন্থটির প্রকাশ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।[১৪৯]
  • হিশাম আলে কুতাইত রচিত ‘মওসুআতুল ইমাম জাফার আস-সাদিক’।
  • যাবিহুল্লাহ মানসুরি রচিত ‘[[মাগযে মুতাফাক্কেরে জাহানে শিয়ে(গ্রন্থ)]’। গ্রন্থটি স্ট্রাসবার্গের ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত বলে উল্লেখ করে নিজেকে এর অনুবাদক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন যাবিহুল্লাহ মানসুরি; তবে কেউ কেউ এই বক্তব্যকে ভুল আখ্যায়িত করে বলেছেন যে, স্ট্রাসবার্গ ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টারের এ ধরনের কোন বই নেই।[১৫০]

তথ্যসূত্র

  1. জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরিয়ে সিয়াসি ইমামানে শিয়া, ১৩৯৩ ফার্সি সন, পৃ. ৩৯১।
  2. সাবেরি, তারিখে ফেরাকে ইসলামী, ১৩৮৮ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ১১০, ১১৯।
  3. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৩৭২ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ১৮০।
  4. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ১৮১।
  5. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ১৮১।
  6. সাদুক, কামালুদ্দিন, ১৩৫৯ ফার্সি সন, পৃ. ৩১৯; “আলকাবুর রাসূল ওয়া ইতরাতিহি”, পৃ. ৬০, ৬১; বাহরানি, হিল্ইয়াতুল আবরার, ১৪১১ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ১১।
  7. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ১৮১।
  8. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ১৮১।
  9. ইবনে শাহরে আশুব, মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ২৭৩।
  10. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ১৮১।
  11. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৩৭২ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ১৮০।
  12. ইরবিলী, কাশফুল গুম্মাহ, ১৩৭৯ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৬৯১
  13. ইবনে কুতাইবাহ দাইনূরী, আল-মাআরেফ, ১৯৯২ খ্রি., পৃ. ২১৫।
  14. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ১৮৭।
  15. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ১৮৭।
  16. দ্র: কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৪৭২; মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৩৭২ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ১৮০; তাবারসী, এ’লামুল ওয়ারা, ১৪১৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৫১৪।
  17. শেইখ তাবারসী, তাজুল মাওয়ালিদ, ১৪২২ হি., পৃ. ৪৪; কুম্মি, ওয়াকায়াউল আইয়াম, নূর মাতাফ, পৃ. ৩১০; শুশতারি, রিসালাতুন ফি তাওয়ারিখিন নাবী ওয়াল আল, ১৪২৩ হি., পৃ. ৬৮।
  18. তাবারসী, এ’লামুল ওয়ারা, ১৪১৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৫১৪।
  19. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৪৭, পৃ. ২।
  20. কুম্মি, তা’রিব মুন্তাহা আল-আমাল ফি তাওয়ারিখিন নাবী ওয়াল আল, আল-নাশের: জামাআ’তুল মুদাররেসীন, খণ্ড ২, পৃ.২৪৩।
  21. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৩৭২ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ২০৯।
  22. ইবনে হামযা তুসি, আস-সাকিব ফিল মানাকিব, ১৪১১ হি., পৃ. ৪৪৩; মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৪৮৭, পৃ. ৭৪।
  23. শাহীদী, যেন্দেগানিয়ে ইমাম সাদিক, ১৩৭৮ ফার্সি সন,পৃ. ৪।
  24. শাহীদী, যেন্দেগানিয়ে ইমাম সাদিক, ১৩৭৮ ফার্সি সন, পৃ. ৬।
  25. শাহীদী, যেন্দেগানিয়ে ইমাম সাদিক, ১৩৭৮ ফার্সি সন,পৃ. ৪।
  26. শাহীদী, যেন্দেগানিয়ে ইমাম সাদিক, ১৩৭৮ ফার্সি সন,পৃ. ৪৭।
  27. জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরিয়ে সিয়াসি ইমামানে শিয়া, ১৩৯৩ ফার্সি সন, পৃ. ৪৩৫।
  28. ফাযেল মিকদাদ, এরশাদুত তালেবীন, ১৪০৫ হি., পৃ. ৩৩৭।
  29. কুলাইনি, কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩০৬, ৩০৭।
  30. জাব্বারি, সাযমানে ভেকালাতে আয়িম্মা, ১৩৮২ ফার্সি সন, খণ্ড ১, পৃ. ৪৭-৫০।
  31. জাব্বারি, সাযমানে ভেকালাতে আয়িম্মা, ১৩৮২ ফার্সি সন, খণ্ড ১, পৃ. ২৮০, ৩২০, ৩৩২।
  32. http://tarikh.nashriyat.ir/node/615
  33. জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরিয়ে সিয়াসি ইমামানে শিয়া, ১৩৯৩ ফার্সি সন, পৃ. ৪০৭।
  34. জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরিয়ে সিয়াসি ইমামানে শিয়া, ১৩৯৩ ফার্সি সন, পৃ. ৪০৭ ৪০৮।
  35. কাশশি, রিযালুল কাশশি, ১৪০৯ হি., পৃ. ৩০০।
  36. কাশশি, রিযালুল কাশশি, ১৪০৯ হি., পৃ. ২৯৭।
  37. শেইখ তুসী, আমালী, ১৪১৪ হি., পৃ. ৬৫০।
  38. শাহীদী, যেন্দেগানিয়ে ইমাম সাদিক, ১৩৭৮ ফার্সি সন,পৃ. ৪৭-৬০।
  39. জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরিয়ে সিয়াসি ইমামানে শিয়া, ১৩৯৩ ফার্সি সন, পৃ. ৪৩৫-৪৩৬।
  40. শাহীদী, যেন্দেগানিয়ে ইমাম সাদিক, ১৩৭৮ ফার্সি সন,পৃ. ৬১।
  41. ইবনে হাজার হাইতামি, আস-সাওয়ায়িকুল মুহরিকাহ, ১৪২৭ হি./২০০৮ খ্রি., পৃ. ৫৫১।
  42. জাহেয, রেসায়েলুল জাহেয, ২০০২ খ্রি., পৃ. ১০৬।
  43. নাজাশি, রেজাল আল-নাজাশি, ১৪১৬ হি, পৃ. ৩৯।
  44. তেহরানি, ইমাম শেনাছি, ১৪২৬ হি., খণ্ড ৮, পৃ. ২৬৬।
  45. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ২০৫।
  46. ইরবিলী, কাশফুল গুম্মাহ, ১৩৭৯ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৭০১।
  47. নাজাশি, রেজাল আল-নাজাশি, ১৪১৬ হি, পৃ. ১২।
  48. শাহীদী, যেন্দেগানিয়ে ইমাম সাদিক, ১৩৭৮ ফার্সি সন,পৃ. ৬১।
  49. পায়গাহে ইত্তেলারেসানিয়ে ইমামাত, به امام صادق علیه السلام، رئیس مذهب جعفری گفته می‌شود
  50. বি আযার শিরাজী, হামবাস্তেগি মাযাহেবে ইসলামী ১৩৭৭ ফার্সি সন, পৃ. ৩৪৪। محمود شلتوت، سایت مجمع جهانی تقریب مذاهب اسلامی
  51. দ্র: কুলাইনি, উসুলে কাফি, খণ্ড ১, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৭৯, ৮০, ১৭১-১৭৩; শেইখ ‍মুফিদ, এখতেছাছ, ১৪১৩ হি., পৃ. ১৭৯, ১৯০।
  52. কুলাইনি, কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১৭১-১৭৩।
  53. কুলাইনি, কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১৭১-১৭৩।
  54. কাশশি, রিযালুল কাশশি, ১৪০৯ হি., পৃ. ২৭৫-২৭৭।
  55. তাবারসী, ইহতিজাজ, ১৪০৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৩৩১-৩৩৩।
  56. তাবারসী, ইহতিজাজ, ১৪০৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৩৩৩।
  57. তাবারসী, ইহতিজাজ, ১৪০৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৩৩৫,৩৩৬।
  58. তাবারসী, ইহতিজাজ, ১৪০৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৩৩৬।
  59. তাবারসী, ইহতিজাজ, ১৪০৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৩৩৬, ৩৫২।
  60. তাবারসী, ইহতিজাজ, ১৪০৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৩৬০-৩৬২।
  61. তাবারসী, ইহতিজাজ, ১৪০৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৩৬২-৩৬৪।
  62. শাহীদী, যেন্দেগানিয়ে ইমাম সাদিক, ১৩৭৮ ফার্সি সন,পৃ. ৪।
  63. শাহীদী, যেন্দেগানিয়ে ইমাম সাদিক, ১৩৭৮ ফার্সি সন,পৃ. ৬।
  64. শাহীদী, যেন্দেগানিয়ে ইমাম সাদিক, ১৩৭৮ ফার্সি সন,পৃ. ৪।
  65. শাহরিস্তানি, আল-মিলাল ওয়ান নিহাল, ১৪১৫ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১৭৯।
  66. মাসউদি, মুরুজুয যাহাব, ১৪০৯ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২৫৪।
  67. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ১৮৩, ১৮৪।
  68. ইবনে শাহরে আশুব, মানাকিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ২৭৩।
  69. কুলাইনি, কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৪৩; ইবনে শাহরে আশুব, মানাকেব, ১৩৭৯ ফার্সি সন, খণ্ড ৩, পৃ. ৩৬৩।
  70. আবুল ফারাজ ইস্ফাহানী, মাকাতিলুত তালিবিয়্যিন, ১৯৮৭ খ্রি./১৪০৮ হি., পৃ. ১৮৫, ১৮৬।
  71. জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরিয়ে সিয়াসি ইমামানে শিয়া, ১৩৯৩ ফার্সি সন, পৃ. ৩৭১।
  72. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৪৬, পৃ. ৩০৬।
  73. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৪৭, পৃ. ১৮৪।
  74. কুলাইনি, কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৪৭৩।
  75. তাবারি, তরিখে তাবারি, রাওয়ায়িহুত তুরাসিল আরাবি, খণ্ড ৮, পৃ. ৩২।
  76. জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরিয়ে সিয়াসি ইমামানে শিয়া, ১৩৯৩ ফার্সি সন, পৃ. ৪৩৫।
  77. জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরিয়ে সিয়াসি ইমামানে শিয়া, ১৩৯৩ ফার্সি সন, পৃ. ৪৩৫।
  78. ইবনে শাহরে আশুব, মানাকিবে আলে আবি তালিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ২৪৮।
  79. কাশশি, রিযালুল কাশশি, ১৪০৯ হি., পৃ. ৩৩০।
  80. ফাতাল নিশাবুরী রাওদ্বাতুল ওয়ায়ে’যীন, ১৩৭৫ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ২৯৩।
  81. در عصر امام صادق علیه‌السلام و نقش ایشان در تحکیم و گسترش تشیع»
  82. ইরবিলী, কাশফুল গুম্মাহ, ১৩৭৯ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৬৯১।
  83. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৪৭, পৃ. ১৬।
  84. কুলাইনি, কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৮।
  85. ইবনে শাহরে আশুব, মানাকিবে আলে আবি তালিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ২৭৩।
  86. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, দারু ইহিয়ায়িত তুরাস, খণ্ড ৪৭, পৃ. ৭৬।
  87. মুজাফফার, আল-ইমামুস সাদিক, ‍মুআসসাসাতুন নাশরিল ইসলামী, খণ্ড ১, পৃ. ১২৬ ও ১৩০।
  88. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৪৭, পৃ. ৯৩, ৯৪।
  89. মুজাফফার, আল-ইমামুস সাদিক, ‍মুআসসাসাতুন নাশরিল ইসলামী, খণ্ড ১, পৃ. ১২৯।
  90. মুজাফফার, আল-ইমামুস সাদিক, ‍মুআসসাসাতুন নাশরিল ইসলামী, খণ্ড ১, পৃ. ১৩০।
  91. মুজাফফার, আল-ইমামুস সাদিক, ‍মুআসসাসাতুন নাশরিল ইসলামী, খণ্ড ১, পৃ. ১৩০।
  92. দ্র: তুসি, তাহযিবুল আহকাম, ১৪০৭ হি., খণ্ড ৬, পৃ. ৩৫ ও ৩৬।
  93. কুলাইনি, কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৫৭১।
  94. তুসি, তাহযিবুল আহকাম, ১৪০৭ হি., খণ্ড ৬, পৃ. ৩৫।
  95. তুসি, রিজালুত তুসি, ১৩৭৩ ফার্সি সন, পৃ. ১৫৫-৩২৮।
  96. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৩৭২ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ২৫৪।
  97. মুহাদ্দেস কুম্মি, আল-কুনি ওয়া আলক্বাব, ১৪০৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩৫৮।
  98. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ১৮৭।
  99. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ১৮৭।
  100. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ১৯৯।
  101. কাশশি, রিযালুল কাশশি, ১৪০৯ হি., পৃ. ২৭৫-২৭৭।
  102. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ১৯৯।
  103. তুসি, রিজালুত তুসি, ১৩৭৩ ফার্সি সন, পৃ. ৩১৫।
  104. ইবনে আবিল হাদিদ, শারহে নাহযুল বালাগাহ, ১৩৮৫ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১৮ এবং খণ্ড ১৫, পৃ. ২৭৪।
  105. সাদুক, আল-খিসাল, ১৩৬২ ফার্সি সন, পৃ. ১৬৮; সাদুক, আল-আমালি, ১৪১৭ হি., পৃ. ১৬৯; সাদুক, ইলালুশ শারায়ে’, ১৩৮৫ ফার্সি সন, পৃ. ২৩৪।
  106. মালিক বিন আনাস, মুআত্তা, ১৪২৫ হি., পৃ. ১০।
  107. ইবনে হাজার হাইতামি, আস-সাওয়ায়িকুল মুহরিকাহ, ১৪১৭ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৫৮৬।
  108. শাকআ’হ, আল-আয়িম্মাতুল আরবাআ, ১৪১৮ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৮।
  109. কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২০-২১।
  110. দ্র: কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ২৪৫।
  111. দ্র: ‍মুসলিম নিশাবুরী, সাহীহ মুসলিম, খণ্ড ৮, পৃ. ১৭০।
  112. দ্র: কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৪৫; মুসলিম নিশাবুরী, সাহীহ মুসলিম, খণ্ড ৮, পৃ. ১৭০।
  113. মুফাযযাল বিন উমার, তাওহিদে মুফাযযাল, ১৩৭৯ ফার্সি সন, পৃ. ৪১(মুকাদ্দামেয়ে আয়াতুল্লাহ শুশতারি)।
  114. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২২৪-২২৬।
  115. কুলাইনি, কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৬৭।
  116. দ্র: শেইখ আনসারী, ফারায়েদুল উসুল, ১৪১৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৫৯-৬১।
  117. দ্র: ইমাম খোমেনী, আল-হুকুমাতুল ইসলামিয়্যাহ, ১৪২৯ হি./২০০৮ খ্রি., পৃ. ১১৫-১২১; মেসবাহ ইয়াযদি, নেগাহিয়ে গোযারা বে নাযারিয়ে ভেলায়াতে ফাকীহ, ১৩৯১ ফার্সি সন, পৃ. ১০০।
  118. ইবনে শু’বাহ হাররানি, তোহফুল উকুল, ১৪০৪ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩৫৯।
  119. ইবনে শু’বাহ হাররানি, তোহফুল উকুল, ১৪০৪ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩০৫।
  120. হুররে আমেলি, ওয়াসায়েলুশ শিয়া, খণ্ড ৮, পৃ. ৫০৩।
  121. যাহাবি, তাযকিরাতুল হুফফায, ১৪১৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১২৬।
  122. ইবনে শাহরে আশুব, মানাকিবে আলে আবি তালিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ২৪৮।
  123. শাহরিস্তানি, আল-মিলাল ওয়ান নিহাল, ১৩৬৪ ফার্সি সন, খণ্ড ১, পৃ. ১৯৪।
  124. ইবনে আবিল হাদিদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, ১৩৮৫ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১৮।
  125. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ২০৬।
  126. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ২০৬।
  127. সাদুক, আল-এ’তেকাদাত, ১৪১৩ হি., পৃ. ৯৮।
  128. ইবনে শাহরে আশুব, মানাকিবি আলে আবি তালিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ২৮০; মুহাম্মাদ বিন জারির তাবারি, দালায়েলুল ইমামাহ, ১৪১৩ হি., পৃ. ২৪৬; সাইয়্যেদ ইবনে তাঊস, ইকবালুল আমাল, ১৪১৪ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২১৪।
  129. মুফিদ, তাসহীহু এ’তেকাদাতিল ইমামিয়্যাহ, ১৪১৩ হি., পৃ. ১৩১ ও ১৩২।
  130. দ্র: আমেলি, আস-সাহীহু মিন সীরাতিন নাবীয়্যিল আ’যাম (স.), ১৪২৬ হি., খণ্ড ৩৩, পৃ. ১৮৫-১৯১।
  131. শেইখ মুফিদ, ইরশাদ, ১৩৭২ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ১৮০।
  132. দ্র: কাশশি, রিজালুল কাশশি, ১৪০৯ হি., পৃ. ২৮২ ও ২৮৩।
  133. পিশওয়ায়ী, সীরেয়ে পিশওয়ায়ান, ১৩৮৩ ফার্সি, পৃ. ৪১৪।
  134. কাশশি, রিযালুল কাশশি, ১৪০৯ হি., পৃ. ২৮২ ও ২৮৩।
  135. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ১৮৮।
  136. নৌবাখতি, ফিরাকুশ শিয়া, ১৩৫৩ ফার্সি সন, পৃ. ৬৬-৭৯।
  137. «رسمی شدن شهادت امام صادق(ع) از آثار جاودانه آیت الله کاشانی است»، پایگاه اطلاع‌رسانی مرکز بررسی‌های اسلامی
  138. মেহর সংবাদপত্র,مراجع عظام تقلید در عزای صادق آل محمد(ع)
  139. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ২১৮।
  140. কুলাইনি, কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ৮, পৃ. ২।
  141. তেহরানি, আয-যারিয়া’হ, ১৪০৮ হি., খণ্ড ১৯, পৃ. ১৫।
  142. আমিন, আ’ইয়ানুশ শিয়া, দারুল মাআরেফ, খণ্ড ১, পৃ. ৬৬৩।
  143. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ২১৮ ও ২১৯।
  144. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ২১৮ ও ২১৯।
  145. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ২১৯।
  146. পাকাতচি, "জাফর সাদিক (আ.), ইমাম", পৃ. ২১৯।
  147. আসাদ, ইমাম সাদিক (আ.) ও মাযাহেবে আহলে সুন্নত, তরজমা: মুহাম্মাদ হুসাইন সারাঞ্জাম ও অন্যান্যরা, ১৩৯০ ফার্সি সন।
  148. মুযাফ্ফার, সাফহাতি আয যেন্দেগানিয়ে ইমাম জাফর সাদিক, তরজমা: সাইয়্যেদ আলাভি, ১৩৭২ ফার্সি সন।
  149. از موسوعه الامام الصادق علیه السلام, পায়গাহে ইত্তেলারেসানিয়ে হাউযা।
  150. کنید به معمای همایش اسلام‌شناسی استراسبورگ, ইমাম মূসা সাদর নিউজ সাইট।

গ্রন্থপঞ্জি

  • ইরবিলী, আলী ইবনে ঈসা, কাশফুল গুম্মাহ ফি মা’রিফাতিল আয়িম্মাহ, কোম, আল-শারীফ আল-রাযী, ১৩৭৯ ফার্সি সন।
  • ইরবিলী, আলী ইবনে ঈসা, কাশফুল গুম্মাহ ফি মা’রিফাতিল আয়িম্মাহ, তাসহিহ: সাইয়্যেদ হাশেম রাসুলি মাহাল্লাতি, তাবরিয, বানি হাশেমি, ১৩৮১ হি.।
  • আরদেবিলী, মুহাম্মাদ বিন আলী, জামেউর রাওয়াহ, কোম, নাশরে মাকতাবেয়ে মারআশি নাজাফি, তারিখ অজ্ঞাত।
  • আশআরি, সা’দ বিন আব্দুল্লাহ, আল-মাকালাতু ওয়াল ফেরাক, তাসহিহ: মুহাম্মাদ জাওয়াদ মাশকুর, ইন্তেশারাতে ইলমি ওয়া ফারহাঙ্গি, তেহরান, ১৩৬০ ফার্সি সন।
  • ইমাম খোমেনী, সাইয়্যেদ রুহুল্লাহ, আল-হুকুমাতুল ইসলামিয়্যাহ, তেহরান, মুআসসেসেয়ে তানযিম ওয়া নাশরে আসারে ইমাম খোমেনী, নবম সংস্করণ, ১৪২৯ হি./২০০৮ খ্রি.।
  • আমিন, সাইয়্যেদ মুহসিন, সীরেয়ে মা’সুমান, তরজমা: হুসাইন ভেজদানি ওয়া আলী হুজ্জাতি কেরমানি, তেহরান, ইন্তেশারাতে স্রুশ, ১৩৭৬ ফার্সি সন।
  • বি আযার শিরাজী, আব্দুল কারিম, হামবাস্তেগীয়ে মাযাহেবে ইসলামি (মাকালাতু দারুল কারিব), তেহরান, সাযমানে ফারহাঙ্গ ওয়া এরতেবাতে ইসলামি, ১৩৭৭ ফার্সি সন।
  • পাকাতচি, আহমাদ, “জাফর সাদিক (আ.), ইমাম”, তেহরান, দায়েরাতুল মাআরেফ বুযুর্গে ইসলামি, খণ্ড ১৮, মারকাযে দায়েরাতুল মাআরেফ বুযুর্গে ইসলামি, ১৩৮৯ ফার্সি সন।
  • পিশওয়ায়ী, মাহদি, সীরে-এ পিশওয়াইয়ান; নেগারেশি বা যেন্দেগানি ইজতেমায়ি, সিয়াসি ওয়া ফারহাঙ্গিয়ে ইমামানে মা’সুম (আ.), কোম, মুআসসেসেয়ে ইমাম সাদেক, ১৬তম সংস্করণ, ১৩৮৩ ফার্সি সন।
  • জাহিজ, উমর ইবনে বাহর, রেসায়েলুল জাহিজ, বৈরুত, দার ওয়া মাক্তাবাতুল হিলাল, ২০০২ খ্রি.।
  • জাব্বারি, মুহাম্মাদ রেযা, সাযমানে ভেকালাত ওয়া নাকশে অন দার আসরে আয়িম্মা আলাইহিমুস সালাম, কোম, মুআসসেসেয়ে আমুযেশে পেঝুহেশি ইমাম খোমেনী, ১৩৮২ ফার্সি সন।
  • জাফারিয়ান, রাসুল, হায়াতে ফিকরিয়ে সিয়াসি ইমামান শিয়া, তেহরান, ইলম, তৃতীয় সংস্করণ, ১৩৯৩ ফার্সি সন।
  • হায়দার, আসাদ, ইমাম সাদেক ওয়া মাযাহেবে আহলে সুন্নাত, তরজমা: মুহাম্মাদ হুসাইন সারাঞ্জাম ওয়া দিগারান, কোম, ইন্তেশারাতে দানেশগাহে আদিয়ান ওয়া মাযাহেবে কোম, ১৩৯০ ফার্সি সন।
  • মাজলিসী, মুহাম্মাদ বাকের বিন মুহাম্মাদ তাকী, বিহারুল আনওয়ার, বৈরুত, দারু ইহিয়ায়িত তুরাসির আরাবি, ১৪০৩ হি.।
  • মাসউদি, আলী বিন হুসাইন, মুরুজুয যাহাব ওয়া মাআদিনুল জাওহার, কোম, দারুল হিজরাহ, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪১৫ হি.।
  • মেজবাহ ইয়াযদি, মুহাম্মাদ তাকী, নেগাহি গোযারা বে নাজারিয়ে বেলায়েতে ফাকীহ, কোম, ইন্তেশারাতে মুআসসেসেয়ে আমুযেশি ওয়া পেঝুহেশিয়ে ইমাম খোমেনী, ২৬তম সংস্করণ, ১৩৯১ ফার্সি সন।
  • মোজাফ্ফার, মুহাম্মাদ হুসাইন, আল-ইমামুস সাদিক, কোম, মুআসসেসাতুল নাশরিল ইসলামি, তারিখ অজ্ঞাত।
  • মোজাফ্ফার, মুহাম্মাদ হুসাইন, সাফহাতি আয যেন্দেগানিয়ে ইমাম জাফর সাদেক, তরজমা: সাইয়্যেদ ইব্রাহিম সাইয়্যেদ আলাভি, কোম, রেসালাত, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৩৭২ ফার্সি সন।
  • মোফাযযেল বিন উমর, তাওহিদ মোফাযযেল, তরজমা: আল্লামা মাজলিসী, তেহরান, ভেযারাতে ফারহাঙ্গ ওয়া এরশাদে ইসলামি, প্রথম সংস্করণ, ১৩৭৯ ফার্সি সন।