ইমাম মুহাম্মাদ তাকী আলাইহিস সালাম

wikishia থেকে
ইমাম মুহাম্মাদ তাকী
বারো ইমামি শিয়াদের ৯ম ইমাম
কাজেমাঈনের পবিত্র মাজার
কাজেমাঈনের পবিত্র মাজার
নামমুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে মূসা
উপনামআবু জাফর • আবু আলী
জন্ম তারিখ১০ রজব, ১৯৫ হি.
জন্মস্থানমদীনা
ইমামতকাল১৭ বছর (২০৩ থেকে ২২০ হি.)
শাহাদাতজিলক্বদ মাসের শেষ তারিখ, ২২০ হি. অথবা ৬ জিলহজ্ব, ২২০ হি.
দাফনের স্থানকাযেমাঈন
বসবাসের স্থানমদীনা • বাগদাদ
উপাধিসমূহজাওয়াদতাকীইবনুর রেযা
পিতাআলী ইবনে মূসা ইবনে জাফর
মাতাসাবিকা
স্ত্রীগণসামানা মাগরেবিয়া • উম্মে ফাযল
সন্তানআলী • মূসা • হাকিমা • যায়নাব • ফাতেমা • ইমামা
জীবনকাল২৫ বছর
শিয়া ইমামগণ
ইমাম আলী • ইমাম হাসান মুজতাবাইমাম হুসাইন • ইমাম সাজ্জাদ • ইমাম বাকের • ইমাম জাফার সাদিকইমাম কাযেমইমাম রেযাইমাম জাওয়াদইমাম হাদীইমাম হাসান আসকারি • ইমাম মাহদী


ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে মুসা (১৯৫-২২০ হি.); ইমাম মুহাম্মাদ তাকী ও ইমাম জাওয়াদ নামে যার অধিক প্রসিদ্ধি রয়েছে। তিনি বারো ইমামি শিয়াদের নবম ইমাম; তাঁর কুনিয়া আবু জাফার এবং উপাধি ‘জাওয়াদ’ ও ‘ইবনুর রেযা’। অধিক দানশীলতার কারণে তিনি ‘জাওয়াদ’ উপাধিতে প্রসিদ্ধ হন।

ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর ইমামতকালের মেয়াদ ছিল ১৭ বছর; মা’মুন আব্বাসিমু’তাসিম আব্বাসি’র খেলাফতকালে তিনি ইমাম ছিলেন। বেশীরভাগ সূত্রের বর্ণনার ভিত্তিতে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) ২২০ হিজরির যিলক্বদ মাসের শেষের দিন ২৫ বছর বয়সে শহীদ হন। শিয়া ইমামগণের মাঝে তিনি ছিলেন সবচেয়ে অল্পবয়সে শাহাদাত প্রাপ্ত ইমাম। তাঁকে ইরাকের বাগদাদের নিকটবর্তী কাযেমাইন শহরে ‘মাকবারায়ে কুরাইশ’-এ তাঁর পিতামহ ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.)-এর নিকট সমাহিত করা হয়।

অল্পবয়স্ক হওয়ার কারণে (৮ বছর) ইমাম রেযা (আ.)-এর কিছু সাহাবি ইমাম জাওয়াদের ইমামতের বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে; তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ আব্দুল্লাহ ইবনে মুসাকে, আরেকটি দল আহমাদ ইবনে মুসা শাহচেরাগ-কে ইমাম বলে মনে করে এবং আর একটি দল ‘ওয়াকিফিয়াদের [(واقفیه); যারা ইমাম কাযিম (আ.)-কে প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদি মনে করে এবং পরবর্তী ইমামগণের ইমামতকে গ্রহণ করে নি, তাদেরকে ওয়াকেফা ও মামতুরাহও বলা হয়] দলভুক্ত হয়ে যায়; কিন্তু বেশীরভাগ শিয়াই ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর ইমামতকে মেনে নেয়।

শিয়াদের সাথে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী’র যোগাযোগ মূলতঃ তার ওয়াকীল ও প্রতিনিধিদের মারফত এবং চিঠি-পত্র আদান-প্রদানের মাধ্যমে সংঘটিত হতো। তার ইমামতের সময়কালে ‘আহলে হাদিস’, ‘যাইদিয়া’, ‘ওয়াকিফিয়া’, ও ‘গূলাত’দের (غالی শব্দের বহুবচন; যারা আকিদাগত বিষয়ে অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি আকিদার অধিকারী) তৎপরতা ছিল। ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) শিয়াদেরকে এ সকল ফির্কা’র আকিদা সম্পর্কে সচেতন করতেন এবং তাদের পেছনে নামায আদায় করতে নিষেধ করতেন, পাশাপাশি গূলাতদের উপর লানত করতেন।

শাইখাইনের (প্রথম ও দ্বিতীয় খলিফা) অবস্থান, চোরের হাত কর্তন, হজ্বের আহকাম ইত্যাদি কালামফিকাহ শাস্ত্র বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামি ফির্কাগুলোর আলেমদের সাথে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর ইলমি মুনাযিরাগুলো, নিষ্পাপ ইমামদের প্রসিদ্ধ মুনাযিরাগুলোর অন্যতম।

ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) থেকে মাত্র ২৫০টি হাদিস বর্ণিত হয়েছে; তাঁর বয়সের স্বল্পতা এবং তাঁকে নজরবন্দি করে রাখার কারণে এত অল্প সংখ্যক হাদীস তাঁর থেকে বর্ণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তাঁর রাভিসাহাবিদের সংখ্যা ১১৫ থেকে ১৯৩ জন বলে উল্লেখিত হয়েছে। আহমাদ ইবনে আবি নাসর বাযান্তি, সাফওয়ান ইবনে ইয়াহিয়া ও (শাহ) আব্দুল আযিম হাসানি প্রমুখ ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর সাহাবি ছিলেন।

শিয়া সূত্রগুলোতে ইমামের বেশ কিছু কারামাত (অলৌকিক ঘটনা)-এর কথা উল্লিখিত হয়েছে; জন্মের সময় তাঁর কথা বলা, তাই-উল আরদ্ব (মুহূর্তেই এক স্থান থেকে দীর্ঘ দূরত্বের কোন স্থানে স্থানান্তরিত হওয়া) করা, রোগীদের রোগমুক্ত করা এবং তাঁর মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ (مستجاب الدعوة) হওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সুন্নি আলেমগণও ইমাম জাওয়াদের ইলমি ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বের প্রসংসা করেছেন এবং তারা তাঁকে বিশেষ সম্মান ও শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে থাকেন।

ইমাম মুহাম্মাদ তাকী সম্পর্কে বিভিন্ন ভাষায় ৬০০ শতাধিক লেখা প্রকাশিত হয়েছে। ওয়াফাতুল ‘ইমামিল জাওয়াদ, ‘মুসনাদুল ইমামিল জাওয়াদ’, ‘মাওসুআতুল ইমামিল জাওয়াদ আলাইহিস সালাম’, ‘আল-হায়াতুস সিয়াসিয়াতি লিল-ইমামিল জাওয়াদ’ এবং ‘হায়াতুল ইমাম মুহাম্মাদ আল-জাওয়াদ' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

বংশপরিচয়, কুনিয়া ও উপাধিসমূহ

মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে মুসা ইবনে জাফার, বারো ইমামি শিয়াদের ৯ম ইমাম; ‘জাওয়াদুল আইম্মাহ’ নামে যার অধিক প্রসিদ্ধি রয়েছে। ৬ পুরুষের মাধ্যমে তার বংশধারা ১ম ইমাম হযরত আলী (আ.)-এর সাথে সংযুক্ত। তার পিতা ইমাম রেযা (আ.) ছিলেন শিয়াদের অষ্টম ইমাম।[১] ইমামের মা ছিলেন একজন কানিয, যাঁর নাম ছিল ‘সাবিকাহ নাওবিয়াহ’।[২]

হযরত ইমামের কুনিয়া ছিল আবু জাফার ও আবু আলী।[৩] হাদিস সূত্রগুলোতে তাঁকে ‘আবু জাফার সানী’ নামে স্মরণ করা হয়েছে;[৪] যাতে আবু জাফার প্রথম (ইমাম বাকির আ.)-এর সাথে ভুল না হয়।[৫] ৯ম ইমামের প্রসিদ্ধ উপাধিগুলোর মধ্যে ‘জাওয়াদ’ ও ‘ইবনুর রেযা’ অধিক প্রসিদ্ধ।[৬] এছাড়া তাকী (تقی), যাকী (زکی), কানে’ (قانع), রাযী (رضی), মুখতার (مرتضی), মুতাওয়াক্কিল (متوکل),[৭]মুর্তাযা (مرتضی) ও মুন্তাখাব (منتخب) [৮] ইত্যাদি তার উপাধিগুলোর অন্যতম।

জীবনী

ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) ১৯৫ হিজরিতে মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন।[৯] তাঁর জন্মের দিন ও তারিখের বিষয়ে এখতেলাফ[১০] থাকলেও বেশীরভাগ সূত্রে তার জন্ম রমজান মাসে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[১১] কেউ কেউ তার জন্মের তারিখ ১৫ই রমজান[১২] আবার কেউ ১৯শে রমজান[১৩] বলে উল্লেখ করেছেন। শেইখ তুসি তার মিসবাহুল মুজতাহিদ গ্রন্থে হযরত ইমামের জন্ম ১০ই রজব বলে উল্লেখ করেছেন।[১৪]

কাফি গ্রন্থে উল্লিখিত একটি বর্ণনার ভিত্তিতে, জাওয়াদুল আইম্মা’র জন্মের পূর্বে ওয়াকিফিয়া (واقفیه) ফির্কা’র একটি দল ইমাম রেযা (আ.)-এর নিঃসন্তান হওয়ার অজুহাত তুলে তাঁর ইমামত প্রসঙ্গে সংশয়ের সৃষ্টি করে।দ্র:[১৫] এ কারণে যখন জাওয়াদুল আইম্মাহ জন্মগ্রহণ করেন তখন ইমাম রেযা তাঁকে শিয়াদের জন্য বরকতময় বলে আখ্যায়িত করেন।[১৬] এতদসত্ত্বেও হযরত জাওয়াদুল আইম্মা’র জন্মের পর ওয়াফিয়াদের কেউ কেউ ইমাম রেযা (আ.)-এর সাথে তার সম্পৃক্ততাকে অস্বীকার করে। তারা বলতো জাওয়াদুল আইম্মা’র চেহারার সাথে তাঁর বাবার চেহারার মিল নেই; অতঃপর চেহারা দেখে বংশ/চরিত্র নির্ণয়কারী (Physiognomist) আনা হলে তারা ইমাম মুহাম্মাদ তাকীকে ইমাম রেযার সন্তান হিসেবে চিহ্নিত করে।[১৭]

ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর জীবনী সম্পর্কে খুব বেশী তথ্য ঐতিহাসিক সূত্রসমূহে মজুত নেই,[১৮] এর কারণ হিসেবে আব্বাসি হুকুমত কর্তৃক তাঁর উপর কড়া নজরদারী, তাঁর পক্ষ থেকে তাকিয়্যাহ অবলম্বন ও অল্প বয়সে তাঁর শাহাদাত ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করা হয়ে থাকে।[১৯] তিনি মদিনায় বসবাস করতেন। ইবনে বাইহাকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একবার তিনি বাবার সাথে সাক্ষাত করতে খোরাসান সফর করেছিলেন।[২০] এছাড়া, ইমামতের দায়িত্ব প্রাপ্ত হওয়ার পর আব্বাসীয় খলিফা কর্তৃক কয়েকবার বাগদাদে তাঁকে হাজির করা হয়।[২১]

বিবাহ

২০২[২২] অথবা ২১৫[২৩] হিজরিতে মা’মুন আব্বাসি নিজ কন্যা উম্মুল ফাযলকে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর সাথে বিবাহ দেয়। কারো কারো মতে, বাবার সাথে সাক্ষাত করতে ইমাম জাওয়াদের তুস[২৪] সফরের সময় মা’মুন উম্মুল ফাযলের সাথে হযরত ইমামের নিকাহ সম্পন্ন করে।[২৫] সুন্নি ঐতিহাসিক ইবনে কাসীর[৭০১-৭৭৪ হি.] বলেন, মা’মুন আব্বাসির কন্যার সাথে ইমাম জাওয়াদের বিবাহের আকদের সিগাহ ইমাম রেযা (আ.)-এর জীবদ্দশাতেই পড়া হয়েছিল; কিন্তু তাদের বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান ২১৫ হিজরিতে ইরাকের তিকরিত শহরে অনুষ্ঠিত হয়।[২৬]

ঐতিহাসিক সূত্রগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে জানা যায় যে, উম্মুল ফাযলের সাথে জাওয়াদুল আইম্মাহ (আ.)-এর বিবাহ মা’মুনের অনুরোধেই হয়েছিল।[২৭] বলা হয়েছে যে, মহানবি (স.)ইমাম আলী (আ.)-এর বংশধরদের কোন সন্তানের নানা হওয়ার উদ্দেশ্যে মা’মুন এ অনুরোধ করেছিল।[২৮]

শেইখ মুফিদ তার কিতাবুল ইরশাদ গ্রন্থে লিখেছেন, ইমাম জাওয়াদের মাঝে যে অতুলনীয় বদান্যতা, শ্রেষ্ঠত্ব, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, আদব এবং বুদ্ধিবৃত্তির যে পরিপূর্ণতা মা’মুন আব্বাসি দেখেছিল এ কারণেই নিজ কন্যাকে হযরত ইমামের সাথে বিবাহ দেয়।[২৯] কিন্তু ঐতিহাসিক রাসূল জাফারিয়ানের মতে, উক্ত বিবাহের লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করা এবং এর মাধ্যমে সে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী ও শিয়াদের মধ্যকার যোগাযোগকে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারিতে রাখতে চেয়েছিল।[৩০] অথবা নিজেকে আলাভিদের (ইমাম আলী’র সমর্থক) প্রতি তার আন্তরিকতার প্রকাশ ঘটিয়ে তাদেরকে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা থেকে বিরত রাখতে চেয়েছিল।[৩১] শেইখ মুফিদের ভাষ্যানুযায়ী, মা’মুনের ঘনিষ্টজনদের অনেকে ক্ষমতা আব্বাসিদের থেকে আলাভিদের হাতে চলে যাওয়ার আশংকায় এ বিবাহের বিরোধিতা করেছিল।[৩২] ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.), উম্মুল ফাযলের মোহরানা হযরত ফাতিমা যাহরা’র (সা. আ.) মোহরানার সমপরিমাণে (৫০০ দিরহাম) ধার্য করেন।[৩৩] উম্মুল ফাযল থেকে হযরত ইমাম কোন সন্তানের অধিকারী হন নি।[৩৪]

ইমাম জাওয়াদুল আইম্মা’র অপর স্ত্রীর নাম হলো ‘সামানাহ মাগরিবিয়াহ’;[৩৫] যিনি ছিলেন একজন কানিয। হযরত ইমামের নির্দেশেই তাকে ক্রয় করা হয়[[৩৬]] এবং ইমাম জাওয়াদের সকল সন্তানই তাঁর থেকেই জন্ম নেয়।[৩৭]

সন্তান-সন্তুতি

শেইখ মুফিদের ভাষ্যানুযায়ী ইমাম মুহাম্মাদ তাকী ৪ সন্তানের জনক ছিলেন; আলী, মুসা, ফাতিমাহআমামাহ[৩৮] কারো কারো মতে তিনি ৩ কন্যার পিতা ছিলেন; হাকিমাহ, খাদিজাউম্মু কুলসুম[৩৯] হিজরী চতুর্দশ শতাব্দির বেশ কিছু সূত্রে ইমাম জাওয়াদের যায়নাব ও মাইমুনাহ নামে অপর দুই কন্যার কথাও উল্লিখিত হয়েছে।[৪০] মুনতাহাল আমাল গ্রন্থে ‘যামিন ইবনে শাদকাম’ (ضامن بن شَدقَم)-এর বর্ণনায় এসেছে যে, ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) ৪ পুত্র ও ৩ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন; আবুল হাসান ইমাম আলী নাকী (আ.), আবু মুহাম্মাদ মুসা মুবারকা’ (ابو موسی مبرقع), হুসাইন, ইমরান এবং ফাতিমা, হাকিমা, খাদিজা ও উম্মু কুলসুম।[৪১] আরেকটি দল ইমাম (আ.) ৩ পুত্র ও ৫ কন্যা সন্তানের পিতা ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন; ইমাম আলী নাকী (আ.), মুসা মুবারকা’ ও ইয়াহিয়া এবং ফাতিমা, হাকিমা, খাদিজা, বাহজাত (بهجت) ও বুরাইহা (بُرَیهَه)।[৪২]

শাহাদাত

ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-কে ২ বার আব্বাসি হুকুমতের রাজধানী বাগদাদে তলব করা হয়; প্রথমবার মা’মুনের যুগে এবং এ সফর অল্পদিনের জন্য ছিল।[৪৩] আর দ্বিতীয়বার ২২০ হিজরি’র ২৮শে মহররম মু’তাসিম আব্বাসি’র নির্দেশে ইমামকে বাগদাদে আনা হয় এবং ঐ বছরই জিলক্বদ[৪৪] অথবা জিলহজ্ব[৪৫] মাসে তিনি (আ.) বাগদাদে শহীদ হন। বেশীরভাগ সূত্রে, তিনি লক্বদ মাসের শেষ দিনে শহীদ হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[৪৬] তার দেহ মোবারক, বাগদাদের নিকটবর্তী কাযেমাইনে অবস্থিত মাকবারায়ে কুরাইশে তার পিতামহ ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.)-এর নিকট সমাহিত করা হয়।[৪৭] শাহাদাতের সময় তিনি ছিলেন নিষ্পাপ ইমামদের মধ্যে সবচেয়ে অল্পবয়স্ক ইমাম, ঐ সময় তাঁর বয়স ছিল ২৫ বছর।[৪৮]

কারো কারো মতে, তৎকালীন বাগদাদের বিচারক ইবনে আবু দুওয়াদ কর্তৃক মু’তাসিমের নিকট ইমাম (আ.) সম্পর্কে নিন্দা-মন্দ ও গীবতের কারণে ইমামকে হত্যা করা হয়। চোরে’র হাত কর্তন সংশ্লিষ্ট মাসআলা সম্পর্কে খলিফা তৎকালীন প্রধান বিচারক ও দরবারি আলেমদের মতামতের উপর হযরত ইমামের মতামতকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন, ফলে এ ঘটনা ইবনে আবি দুওয়াদ ও দরবারি ফকীহদের একটি দলের লজ্জার কারণ হয়, আর এ কারণেই প্রধান বিচারক (ইবনে আবি দুওয়াদ) ইমাম (আ.)-এর বিরুদ্ধে খলিফার নিকট গীবত ও নিন্দা করেছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে উল্লিখিতি হয়েছে।[৪৯]

শিয়াদের ৯ম ইমাম কিভাবে শহীদ হয়েছেন এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কিছু কিছু সূত্রে এসেছে যে, মু’তাসিম তার মন্ত্রীদের একজনের সহকারীর মাধ্যমে ইমামকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করে।[৫০] আবার অপর কিছু সূত্র মতে, উম্মুল ফাযলের মাধ্যমে মু’তাসিম আব্বাসি হযরত ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-কে বিষ প্রয়োগ করেছিল।[৫১]

হিজরি তৃতীয় শতাব্দির বিশিষ্ট ঐতিহাসিক মাসউদির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মু’তাসিম ও মা’মুন ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-কে হত্যার পরিকল্পনায় ছিল। যেহেতু উম্মুল ফাযল থেকে জাওয়াদুল আইম্মাহ কোন সন্তানের অধিকারী হন নি, তাই মা’মুনের মৃত্যুর পর জাফার তার বোন (উম্মুল ফাযল)-কে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-কে বিষপ্রয়োগ করতে প্ররোচিত করে। (মু’তাসিমের সহযোগিতায়) তারা দু’জন একটি আঙ্গুরে বিষ মিশিয়ে ইমাম (আ.)-কে তা খেতে দেয়। হযরত ইমামকে বিষপ্রয়োগের পর উম্মুল ফাযল অনুতপ্ত হয়েছিল বলেও উল্লিখিত হয়েছে, ইমাম (আ.) তাকে অনিরাময়যোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ প্রদান করেছিলেন।[৫২] উম্মুল ফাযলের হাতে ইমাম কিভাবে শহীদ হয়েছিলেন এ প্রসঙ্গে আর কোন বর্ণনা বিদ্যমান নেই।[৫৩]

অপর একটি রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, জনগণ মু’তাসিমের হাতে বাইয়াত করার পর, মু’তাসিম আব্বাসি মদিনার গভর্নর আব্দুল মালিক যিয়াতকে লেখা এক চিঠিতে ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আ.)-কে উম্মুল ফাযলের সাথে বাগদাদে প্রেরণ করার নির্দেশ দেয়। ইমাম (আ.) বাগদাদে পৌঁছার পর মু’তাসিম বাহ্যিকভাবে ইমামকে সম্মান করে এবং তাঁর ও উম্মুল ফাযলের জন্য বিভিন্ন তোহফা প্রেরণ করে। এই রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে মু’তাসিম তার ‘আশনাস’ নামক গোলামকে দিয়ে হযরত ইমাম জন্য মালটার শরবত পাঠায়। ইমাম (আ.)-এর উদ্দেশ্যে আশনাস বলে যে, খলিফা ইতিপূর্বে বোযোর্গ ব্যক্তিদের কয়েকজনকে এই শরবত দিয়ে আপ্যায়ন করেছেন এবং আপনাকেও পান করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইমাম (আ.) বললেন: ‘আমি রাতে এই শরবত খাবো’। কিন্তু আশনাস জোরাজুরি করে বলে: ঠান্ডা পান করুন। অতঃপর ইমাম তা থেকে পান করেন এবং ঐ (বিষাক্ত) শরবতের প্রভাবে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।[৫৪]

বিষপ্রয়োগে ইমাম জাওয়াদুল আইম্মাহ (আ.)-এর শাহাদাত প্রসঙ্গে শেইখ মুফিদ (মৃত্যু ৪১৩ হি.) দ্বিধা প্রকাশ করে বলেছেন, এমন কোন তথ্য ও সংবাদ আমার নিকট পৌঁছায় নি যার উপর ভিত্তি করে আমি বিষয়টির প্রতি সমর্থন জানাতে পারি।[৫৫] মুফিদ তার ‘তাসহিহু এ’তেকাদাতিল ইমামিয়া’ গ্রন্থে বলেছেন যে, ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)সহ কোন কোন ইমামের শাহাদাতের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার কোন উপায় বিদ্যমান নেই।[৫৬] কিন্তু সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ সাদর তার ‘তারিখুল গাইবাহ’ গ্রন্থে ما مِنَّا إلّا مَقتُولٌ شَهِيدٌ (আমাদের (ইমামদের) মাঝে এমন কেউ নেই যে, নিহত অথবা শহীদ হয় নি (বা হবে না))[৫৭] -এই রেওয়ায়েতটিকে প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করে ইমাম (আ.) শহীদ হয়েছেন বলে তিনি মত দিয়েছেন।[৫৮] ঐতিহাসিক রাসূল জাফারিয়ানও বিভিন্ন প্রমাণ উল্লেখ পূর্বক ইমামের শহীদ হওয়ার বিষয়টিকে গ্রহণ করেছেন।[৫৯] সাইয়্যেদ জাফার মুর্তাযা আমেলী, শেইখ মুফিদের ঐ মন্তব্যকে তাকিয়্যাহ বশতঃ করা মন্তব্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার দৃষ্টিতে শেইখ মুফিদ ছিলেন বাগদাদের বাসিন্দা, এ কারণে তৎকালে বাগদাদে বিরাজমান শিয়া বিরোধী পরিবেশে আব্বাসীয় খলিফাদের হাতে ইমামগণ (আ.)-এর শাহাদাতের বিষয়টি স্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করা তার জন্য সম্ভবপর ছিল না। আমেলী এ সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেন নি যে, পর্যাপ্ত তথ্য বিদ্যমান না থাকা এবং মূল সূত্রগুলো হস্তগত করণ কষ্টসাধ্য হওয়ার কারণে বিষয়টি শেইখ মুফিদের পর্যন্ত না পৌঁছানোর সম্ভাবনা অমূলক নয়।[৬০]

ইমামতকাল

২০৩ হিজরিতে ইমাম রেযা (আ.)-এর শাহাদাতের পর ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) ইমামতের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।[৬১] তাঁর ইমামতের মেয়াদকাল ছিল ১৭ বছর।[৬২] তাঁর ইমামতকাল ছিল আব্বাসীয় খলিফা মা’মুন ও মু’তাসিমের খেলাফতকালীন সমসাময়িক; এর মাঝে প্রায় ১৫ বছর ছিল মা’মুনের খেলাফতকালে (২০৩-২১৮ হি.) এবং ২ বছর (২১৮-২২০) মু’তাসিমের সময়সাময়িক।[৬৩] ২২০ হিজরিতে হযরত ইমামের শাহাদাতের মধ্য দিয়ে ইমামত তাঁর পুত্র ইমাম হাদী (আ.)-এর নিকট স্থানান্তরিত হয়।[৬৪]

ইমামতের পক্ষে নস্ (نص)

ইমাম রেযা (আ.) বহুবার তাঁর সাহাবিদের সামনে ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আ.)-এর ইমামতের কথা ঘোষণা করেছেন। কাফী,[৬৫] আল-ইরশাদ,[৬৬] এ’লামুল ওয়ারা[৬৭][৬৮] গ্রন্থের প্রত্যেকটিতে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর ইমামত সম্পর্কে স্বতন্ত্র অধ্যায় রয়েছে; এগুলোতে যথাক্রমে ১৪, ১১, ৯ ও ২৬টি রেওয়ায়েত আলোচ্য বিষয়ে উল্লিখিত হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ ইমাম রেযা (আ.)-কে তাঁর জনৈক সাহাবি তাঁর স্থলাভিষিক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে ইমাম রেযা (আ.) নিজের হাত দ্বারা তাঁর পুত্র ইমাম জাওয়াদের দিকে ইঙ্গিত করেন।[৬৯] একইভাবে অপর এক রেওয়ায়েতে তিনি (আ.) বলেছেন: ‘এ হলো আবু জাফার, আমি তাঁকে নিজের স্থলাভিষিক্ত বানিয়েছি এবং নিজের মাক্বামকে তাঁর নিকট হস্তান্তর করেছি।’[৭০] শিয়াদের দৃষ্টিকোণ থেকে, ‘ইমাম’ শুধুমাত্র পূর্ববর্তী ইমাম কর্তৃক পরিচয়ের মাধ্যমে (নস্) মনোনীত হতে পারেন;[৭১] অর্থাৎ স্পষ্ট এবারত ও ভাষ্যের মাধ্যমে ইমাম তাঁর পরবর্তী ইমামকে মনোনীত করবেন।

শৈশবে ইমামত এবং শিয়াদের কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা

ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) প্রায় ৮ বছর বয়সে ইমামতের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।[৭২] হাসান ইবনে নৌবাখতি’র বর্ণনার ভিত্তিতে, ইমাম জাওয়াদের বয়স কম হওয়ায়, ইমাম রেযা (আ.)-এর পরবর্তী ইমামের বিষয়ে মতভেদ দেখা দেয়। তাদের একটি দল ইমাম রেযা (আ.)-এর ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে মুসা’র প্রতি আকৃষ্ট হয়; কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই তারা তাকে ইমামতের মহান মাক্বামের যোগ্য না পেয়ে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।[৭৩] আরেকটি দল ইমাম রেযা (আ.)-এর আরেক ভাই আহমাদ ইবনে মুসা মুবারকা’র দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং কিছু সংখ্যক ওয়াকিফিয়া’র অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।।[৭৪] এতদসত্ত্বেও ইমাম আলী ইবনে মুসা আর-রেযা (আ.)-এর বেশীরভাগ সাহাবিই তাঁর পুত্র ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর ইমামতে বিশ্বাস স্থাপন করে।[৭৫]

নৌবাখতি’র ভাষায়, এই মতভেদের প্রধান কারণ ছিল, তারা বালেগ ও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়াকে ইমামের অন্যতম শর্ত বলে জ্ঞান করতো।[৭৬] অবশ্য বিষয়টি ইমাম রেযা (আ.)-এর জীবদ্দশাতেও ছিল। ঐ সময় ইমাম রেযা (আ.) যারা জাওয়াদুল আইম্মা’র বয়স অল্প হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করত তাদের জবাবে তিনি শৈশবে হযরত ঈসা (আ.)-এর নবি হওয়ার বিষয়টিকে প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করে বলতেন: ‘যখন হযরত ঈসাকে নবুয়্যত দান করা হয় তখন তাঁর বয়স আমার পুত্র থেকেও কম ছিল’।[৭৭]

একইভাবে যারা ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর শৈশবে ইমাম হওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলতো তাদের জবাবে পবিত্র কুরআনে হযরত ইয়াহিয়া’র শৈশবে[৭৮] নবি হওয়া এবং হযরত ঈসা’র[৭৯] দোলনায় থাকা অবস্থায় কথা বলার বিষয়টি বলে কতিপয় আয়াতকে প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করতেন।[৮০] এছাড়া, স্বয়ং ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) তাঁর অল্পবয়সে ইমাম হওয়ার বিষয় নিয়ে যারা প্রশ্ন করতো তাদের জবাবে, শৈশবে হযরত সুলায়মান (আ.)-এর হযরত দাউদ (আ.)-এর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে বলতেন, যখন হযরত সুলায়মান (আ.) শিশু ছিলেন এবং ছাগল চরাতে নিয়ে যেতেন তখন হযরত দাউদ (আ.) তাকে নিজের স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন; অথচ বনি ইসরাইলের আলেমরা তা অস্বীকার করেছিলেন।[৮১]

শিয়াদের প্রশ্ন ও ইমামের উত্তর

ইমাম রেযা (আ.) কর্তৃক বারংবার ইমাম মুহাম্মাদ তাকী’র ইমামতের প্রসঙ্গে স্পষ্ট ঘোষণা সত্ত্বেও[৮২] কিছু কিছু শিয়া বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-কেও বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে যাচাই  করতো।[৮৩] অবশ্য এ ধরনের প্রশ্ন ও ইমামকে নিরিক্ষা করার বিষয়টি পূর্ববর্তী ইমামদের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে।[৮৪] তবে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী অল্পবয়স্ক হওয়ায় তাঁর ক্ষেত্রে বিষয়টির গুরুত্ব অধিক ফুটে উঠেছিল কারো কারো কাছে।[৮৫] রাসুল জাফারিয়ানের মতে, শিয়াদের এমন আচরণের কারণ ছিল ইমাম কর্তৃক তাকিয়্যাহ অবলম্বন; এমনকি ঐ সময়ে ইমামের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পূর্ববর্তী ইমাম ওসিয়ত করার সময় পরবর্তী ইমাম হিসেবে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করতেন।[৮৬]

শিয়াদের বিভিন্ন প্রশ্ন ও ইমাম (আ.)-এর উত্তর প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রতিবেদন হাদিসের গ্রন্থগুলোতে উল্লিখিত হয়েছে।[৮৭] তাঁর প্রদত্ত উত্তরগুলোর কারণে শিয়াদের মাঝে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আরো বেড়ে যায় এবং শিয়ারা তার অল্পবয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও তাঁর ইমামতকে মেনে নেয়।[৮৮]

অপর একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, বাগদাদ ও অন্যান্য এলাকা থেকে শিয়াদের একটি দল হজ্বে গিয়েছিলেন। অতঃপর তারা ইমাম জাওয়াদের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে মদিনায় যান। মদিনায় তারা হযরত ইমামের চাচা আব্দুল্লাহ ইবনে মুসা’র সাথে সাক্ষাত করে তাকে কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন করেন। কিন্তু তিনি ভুল উত্তর দেন, এতে তারা অবাক হয়। ঐ সময়েই ইমাম মুহাম্মাদ তাকী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং ঐ একই প্রশ্ন তারা ইমাম মুহাম্মাদ তাকীকেও জিজ্ঞেস করলে হযরত ইমামের প্রদত্ত উত্তরে তারা সন্তুষ্ট হয়।[৮৯]

শিয়াদের সাথে যোগাযোগ

ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) সাযমানে ভেকালাত (প্রতিনিধি নেটওয়ার্ক)-এর মাধ্যমে শিয়াদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। বাগদাদ, কুফা, আহওয়ায, বসরা, হামেদান, কোম, রেই, সিস্তান ও বুস্ত-এর মত শহরে ইমামের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।[৯০] তাঁর প্রতিনিধিদের (ওয়াকীল) সংখ্যা ১৩ জন বলে উল্লিখিত হয়েছে।[৯১] এই ওয়াকীলরাই খুমস ও যাকাতসহ শিয়াদের থেকে প্রাপ্ত যাবতীয় অর্থ ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর হাতে পৌঁছে দিতেন।[৯২] হামেদান অঞ্চলে ইব্রাহিম ইবনে মুহাম্মাদ হামেদানি[৯৩] ও বসরার এলাকাগুলোতে আবু আমর হাযযা’[৯৪] হযরত ইমামের ওয়াকীল হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। কোমে ইমামের ওয়াকফ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির দেখাশুনার দায়িত্বে ছিলেন সালেহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে সাহল।[৯৫] যাকারিয়া ইবনে আদাম কুম্মি,[৯৬] আব্দুল আযিয ইবনে মুহতাদি আশআরি কুম্মি,[৯৭] সাফওয়ান ইবনে ইয়াহিয়া,[৯৮] আলী ইবনে মাহযিয়ার[৯৯] ও ইয়াহিয়া ইবনে আবি ইমরান[১০০] প্রমুখ ছিলেন হযরত ইমামের অপর ওয়াকীলগণ।

‘সাযমানে ভেকালাত’ গ্রন্থের লেখক বিশেষ প্রমাণের ভিত্তিতে মুহাম্মাদ ইবনে ফারাজ রুখখাজী ও আবু হাশিম জাফারিকেও ইমামের ওয়াকীলদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।[১০১] আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ সাইয়ারিও ইমামের ওয়াকীল হওয়ার দাবি করেছিল; কিন্তু ইমাম (আ.) তার দাবিকে প্রত্যাখ্যান পূর্বক শিয়াদেরকে যাকাত, খুমস বা অন্য কোন অর্থ তার নিকট হস্তান্তর করতে নিষেধ করেন।[১০২]

আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী এক বিশ্লেষণে বলেন: সুসংগঠিত সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও ইমাম মাহদি (আ.)-এর গায়বাতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা ছিল ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচীগুলোর অন্যতম।। তার মতে, এ কাজটি ছিল এমন যা থেকে তৎকালীন খলিফারা প্রচন্ড সন্ত্রস্ত ছিল।[১০৩]

বলা হয়েছে যে, ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) দু’টি কারণে শিয়াদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসবে সাযমানে ভেকালাত (প্রতিনিধি নেটওয়ার্ক)-কে ব্যবহার করতেন:

  • এর উপর ক্ষমতাসীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন না থাকা
  • গায়বাত ও অন্তর্ধানের যুগের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।[১০৪]

হজ্বের মৌসুমেও ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) তার অনুসারী ও শিয়াদের সাথে সাক্ষাত এবং মতবিনিময় করতেন। গবেষকদের একটি দলের বিশ্বাস ইমাম রেযা (আ.)-এর খোরাসান সফরের কারণে শিয়াদের সাথে তাদের ইমামদের সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত হয়েছিল।[১০৫] এ কারণে হজ্বের মৌসুমে খোরাসান, রেই, বুস্ত ও সাজিস্তান থেকে শিয়ারা হযরত ইমামের সাথে সাক্ষাত করতে আসতেন।[১০৬]

চিঠির মাধ্যমেও শিয়ারা ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। তারা তাদের চিঠিগুলোতে ইমামকে ফিকাহ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করত এবং ইমামও তাদের প্রশ্নের জবাব দিতেন।[১০৭] ‘মাওসুআতুল ইমামিল জাওয়াদ’ গ্রন্থে ইমামের পিতা ও পুত্র ব্যতিত অপর ৬৩ জন এমন ব্যক্তির নাম উল্লিখিত হয়েছে যাদের সাথে ইমামের পত্রালাপ হয়েছিল।[১০৮] ইমামের কোন কোন চিঠি শিয়াদের একটি দলের উত্তরেও লেখা হয়েছিল।[১০৯]

অন্যান্য ফির্কা’র সাথে ইমামের আচরণ

শিয়াদের যে সকল প্রশ্ন ও ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর যে সকল উত্তর শিয়া সূত্রগুলোতে উল্লিখিত হয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট হয় যে, তাঁর ইমামতকালীন সময়ে আহলে হাদিস, ওয়াকিফিয়াহ, যাইদিয়া ও গুলাত ফির্কা’র তৎপরতা ছিল।[১১০] বিভিন্ন রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর ইমামতকালে মুহাদ্দিসদের মাঝে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো। এ সময় কিছু কিছু শিয়াদের মনে ‘মহান আল্লাহ্ শরীরের অধিকারী হওয়া’ শীর্ষক বিষয় প্রসঙ্গে সংশয়ের জন্ম নেয় (অর্থাৎ তাদের কেউ কেউ আহলে হাদিস ফির্কা’র আলোচনায় প্রভাবিত হয়ে ‘মহান আল্লাহ শরীরের অধিকারী নয়’ বিষয়টি সম্পর্কে তাদের মনে দ্বিধার জন্ম নেয়)। হযরত ইমাম (আ.) ‘মহান আল্লাহর শরীরের অধিকারী হওয়া’র বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করে উক্ত আকিদা পোষণকারীদের পেছনে নামায আদায় এবং তাদেরকে যাকাত প্রদান করতে নিষেধ করেন।[১১১] হযরত ইমাম (আ.)-কে আবু হাশিম জাফারি

[১১২]لا تُدْرِکهُ الْأَبْصارُ وَ هُوَ یدْرِک الْأَبْصار

উক্ত আয়াতের তাফসীর জিজ্ঞেস করলে তিনি (আ.) মহান আল্লাহকে চর্মচক্ষু দিয়ে দেখার বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন:

‘আওহামে কুলুব’ (অন্তরসমূহের ধারণা) চর্মচক্ষু অপেক্ষা অধিক সূক্ষ্ম। মানুষ এমন কিছুকে চিন্তায় আনতে পারে, যা সে কখনই দেখেনি; কিন্তু সেগুলোকে সে দেখতে পায় না। যখন আওহামে কুলুব আল্লাহকে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয় তখন কিভাবে চর্মচক্ষু দিয়ে তাঁকে দেখা সম্ভব এবং তাঁকে অনুধাবন করা যেতে পারে।[১১৩]

ওয়াকিফীদের তিরস্কারে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) থেকে বেশ কয়েকটি রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে।[১১৪] তিনি (তৎকালীন) যাইদি ও ওয়াকিফীদেরকে নাসেবিদের অন্তর্ভুক্ত করে[১১৫] বলতেন:

وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ خَاشِعَةٌ عَامِلَةٌ نَّاصِبَةٌ

‘অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে লাঞ্ছিত, ক্লিষ্ট ক্লান্ত’[১১৬]

-এ আয়াত যাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে এরা তাদের অন্তর্ভুক্ত।[১১৭] এছাড়া তিনি তারা সাহাবিদেরকে ওয়াকিফীদের পেছনে নামায আদায় করতে নিষিধ করতেন।[১১৮]

তৎকালে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.), গালী (غالی) (ধর্মীয় আকিদাতে অতিরঞ্জনকারী)-দের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন এবং শিয়াদেরকে গালীদের আকিদা থেকে দূরে রাখতে সদা সচেষ্ট ছিলেন।[১১৯] তিনি আবুল খাত্তাব ও তার অনুসারী এবং অপর গালীদেরকে লানত করতেন।[১২০] এছাড়া আবুল গামর, জাফার ইবনে ওয়াকেদ, হাশিম ইবনে আবি হাশিমের মত লোকদেরকে আবুল খাত্তাবের অনুসারী হিসেবে পরিচয় করিয়ে বলতেন তারা আমাদের নাম ভাঙ্গিয়ে জনগণ থেকে সুবিধা আদায় করে।[১২১] রিজালে কাশশি’তে উল্লিখিত রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, হযরত ইমাম (আ.) আবুস সামহারি ও ইবনে আবি যারক্বা’কে হত্যা করা জায়েয বলেছেন, কারণ হিসেবে শিয়াদেরকে বিভ্রান্ত করতে তাদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।[১২২]

মুহাম্মাদ ইবনে সিনানের উদ্দেশে, সৃষ্টি ও বিশ্ব পরিচালনার দায়ভার মহানবি (স.) ও ইমামগণ (আলাইহিমুস সালাম)-এর উপর অর্পন শীর্ষক তাফউইয (تفویض) আকিদাকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। অবশ্য আহকামের (শরয়ী বিধি-বিধানের) বিষয়টি ইলাহি মাশিয়্যাতের সাথে সম্পৃক্ত এবং এটা এমনই এক আকিদা, যে এর থেকে অগ্রগামী হবে সে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে এবং যে এটাকে গ্রহণ না করবে (তার দ্বীন) ধ্বংস হয়ে যাবে, আর যে এটাকে মেনে নেবে সে সত্যের সাথে সংযুক্ত হয়েছে।[১২৩]

قالَ الامام الجواد(ع): الْمُؤْمِنُ يَحْتَاجُ إِلَى تَوْفِيقٍ مِنَ اللهِ وَ وَاعِظٍ مِنْ نَفْسِهِ وَ قَبُولٍ مِمَّنْ يَنْصَحُهُ

ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) বলেছেন: ‘মু’মিন ৩ বৈশিষ্ট্যের মুখাপেক্ষী; মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওফিক, নিজের অভ্যন্তর থেকে একজন সদুপদেশ দাতা এবং যে তাকে সদুপদেশ ও সুপরামর্শ দেয় তার থেকে তা গ্রহণ করা।’[১২৪]

হাদিস ও মুনাযিরা সমূহ

হাদিস

আযিযুল্লাহ আতারুদি’র মতে, ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) থেকে প্রায় ২৫০টি হাদিস ফিকাহ, তাফসীর ও আকিদা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে।[১২৫] অপর মাসুম ইমামগণের তুলনায় ইমাম জাওয়াদের হাদিস সংখ্যা কম হওয়ার কারণ হিসেবে তাঁর নজরবন্দী থাকা এবং অল্পবয়সে শাহাদাত প্রাপ্তিকে উল্লেখ করা হয়েছে।[১২৬]

সাইয়্যেদ ইবনে তাউসে’র ‘মুহাজুদ দাওয়াত’ গ্রন্থে একটি হিরয (তাবিজ) বর্ণিত হয়েছে যা ‘হিরযে ইমাম জাওয়াদ’ নামে প্রসিদ্ধ।[১২৭]

একইভাবে,

يَا نُورُ يَا بُرْهَانُ يَا مُبِينُ يَا مُنِيرُ يَا رَبِّ اكْفِنِي الشُّرُورَ وَ آفَاتِ الدُّهُورِ وَ أَسْأَلُكَ النَّجَاةَ يَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ

এই হিরযটিও ইমামের সাথে সম্পৃক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[১২৮] বলা হয়েছে যে, জমিনী ও আসমানী বালা থেকে নিরাপদ থাকতে যে সকল দোয়া ও হিরয আহলে বাইত (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘হিরযে ইমাম জাওয়াদ’ সেগুলো মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য।[১২৯]

মুনাযিরা

ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) তাঁর ইমামতকালে বেশ কয়েকবার আব্বাসীয় সরকারের দরবারি আলেমদের সাথে মুনাযিরা ও বিতর্ক করেন। ঐতিহাসিক বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, ঐ সকল মুনাযিরা কিছু অংশ মা’মুন ও মু’তাসিমের সভাসদদের অনুরোধে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-কে পরীক্ষা ও যাচাই করার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং মুনাযিরা শেষে হযরত ইমামের বিজয় উপস্থিতদেরকে অবাক করতো এবং তারা ইমাম (আ.)-এর প্রসংশা করতো।[১৩০] বিভিন্ন সূত্রে তাঁর ৯টি মুনাযিরা ও আলাপের কথা উল্লিখিত হয়েছে; এর মধ্য থেকে ৪টি ইয়াহিয়া ইবনে আকসামের সাথে, একটি বাগদাদের প্রধান বিচার আহমাদ ইবনে আবি দুওয়াদের সাথে; এছাড়া, আব্দুল্লাহ ইবনে মুসা, আবু হাশিম জাফারি, আব্দুল আযিম হাসানি ও মু’তাসিমের সাথে তাঁর আলাপের তথ্যও উল্লিখিত হয়েছে। এ সকল আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ফিকাহ সংশ্লিষ্ট হজ্ব, তালাক, চুরির হদ ইত্যাদি বিষয় কেন্দ্রীক; এছাড়া দ্বাদশ ইমামের বৈশিষ্ট্য, যে সকল ফযিলত আবুবকর ও উমরের জন্য বর্ণিত হয়েছে এবং মহান আল্লাহর নাম ও সিফাত ইত্যাদি বিষয় ছিল আলোচনার মূল বিষয়বস্তু।[১৩১]

ফিকহি বিষয়ে মুনাযিরা

বাগদাদে মা’মুন আব্বাসির খেলাফতকালে যে সকল মুনাযিরা ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে আব্বাসি দরবারের ফকীহ ‘ইয়াহিয়া ইবনে আকসামে’র সাথে তাঁর মুনাযিরা অন্যতম। কিছু কিছু শিয়া সূত্রের বর্ণনার ভিত্তিতে, উক্ত মুনাযিরা মা’মুন আব্বাসির পক্ষ থেকে হযরত ইমামের সাথে উম্মুল ফাযলের বিবাহের প্রস্তাবে বনি আব্বাসের বোযোর্গ ব্যক্তিদের প্রতিবাদের জবাবে আয়োজিত হয়েছিল। মা’মুন নিজের সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করতে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-কে পরীক্ষা ও যাচাই করার প্রস্তাব দেন। তারা এ প্রস্তাব মেনে নিয়ে একটি ইলমি মুনাযিরার আয়োজন করে। শুরুতে ইয়াহিয়া ইবনে আকসাম মুহরিম (ইহরাম অবস্থায় রয়েছে যে) ব্যক্তির শিকার করার ফিকহী বিধান প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন। ইমাম (আ.) ঐ প্রশ্নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ইয়াহিয়া মূলতঃ কোন বিষয়টির চান তা জিজ্ঞেস করেন। ইয়াহিয়া ইবনে আকসাম ইমামের পক্ষ থেকে উত্থাপিত প্রশ্নগুলো শুনে হতবিহ্বল হয়ে যায়। অতঃপর ইমাম (আ.) ঐ প্রশ্নের বিভিন্ন দিক উত্থাপন পূর্বক প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। আব্বাসি দরবারের সভাসদ ও উপস্থিত আলেমরা ইমামের উত্তর শোনার পর ফিকাহগত বিষয়ে ইমামের পারদর্শিতা ও দক্ষতার বিষয়টি মেনে নেয়। বর্ণিত আছে যে, মুনাযিরার শেষে মা’মুন বলেন: মহান আল্লাহর দরবারে এ নি’মাতের জন্য শুকরিয়া যে, যা কিছু ভেবেছিলাম তা-ই হয়েছে।[১৩২]

কিছু কিছু প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) কর্তৃক ইয়াহিয়া ইবনে আকসামের সাথে মুনাযিরায় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদানের পর মা’মুন সভায় উপস্থিতদেরকে তিরস্কার করে বলেন, এই খান্দানের (পরিবার) ফযিলত ও শ্রেষ্ঠত্ব সকলের সামনে স্পষ্ট এবং তাঁদের বয়সের স্বল্পতা তাঁদের পূর্ণতায় ঘাটতির কারণ হয় না। তিনি বলেন, মহানবি (স.) নিজের দাওয়াতকে ইমাম আলী (আ.)-কে (যখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর) আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছিলেন এবং তার (আলী) ইসলাম গ্রহণকে মেনে নিয়েছিলেন।[১৩৩] বিহারুল আনওয়ারে উল্লিখিত একটি রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, ঐ মুনাযিরার পূর্বে মা’মুন বলেছিলেন, এই পরিবারের বিষয়টি অন্যদের থেকে আলাদা। আব্বাসিরা মা’মুনের কথাকে অগ্রাহ্য করায় সে তাদেরকে বিষয়টি যাচাই ও পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছিল।[১৩৪]

খলিফাদের সম্পর্কে মুনাযিরা

হাদিস ভিত্তিক শিয়া গ্রন্থসমূহের বর্ণনার ভিত্তিতে, ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) মা’মুন ও দরবারের ফকীহদের একটি দলের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় ইয়াহিয়া ইবনে আকসামের সাথে আবুবকর ও উমরের ফযিলত প্রসঙ্গে মুনাযিরা করেন। ইয়াহিয়া হযরত ইমামের উদ্দেশে বলেন: মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবরাইল আল্লাহর রাসূল (স.)-কে বললেন, আবুবকরকে জিজ্ঞেস করো সে আমার থেকে সন্তুষ্ট কি না? আমি (আল্লাহ্) তার থেকে সন্তুষ্ট। উত্তরে ইমাম বললেন, আমি আবুবকরের ফযিলতকে অস্বীকার করি না; কিন্তু যে ব্যক্তি এ রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করেছে তার উচিত মহানবি (স.) থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদিসের প্রতি দৃষ্টি রাখা; তিনি (স.) বলেছেন, যখনই আমার থেকে কোন হাদিস তোমাদের কাছে পৌঁছায় তা মহান আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নতের সামনে রাখো, যদি এ দু’য়ের সাথে সামঞ্জস্যশীল হয় তাহলে তা গ্রহণ করো, আর যদি না হয় তাহলে তা পরিত্যাগ করো; কেননা হাদীস জালকারী ও মিথ্যাবাদীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর ইমাম (আ.) বললেন, এ হাদিসটি পবিত্র কুরআনের সাথে অসামঞ্জস্যশীল; কেননা মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেছেন:

«وَنَحْنُ أَقْرَ‌بُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِ‌يدِ»

‘আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকে অধিক নিকটবর্তী।'[১৩৫]

মহান আল্লাহ্ আবুবকরের সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির ব্যাপারে কি অবগত ছিলেন না যে তাকে জিজ্ঞেস করবেন?[১৩৬]

অতঃপর ইয়াহিয়া ইবনে আকসাম

أنّ مثل أبي بكر و عمر في الاَرض كمثل جبرئيل و ميكائيل في السماء

‘পৃথিবীতে আবুবকর ও উমর হলেন, আসমানে জীবরাইল ও মীকাইলের মতো।’

-এ রেওয়ায়েত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) উত্তরে বললেন: এই রেওয়ায়েতের বিষয়বস্তুও সঠিক নয়; কেননা জীবরাইল ও মীকাইল সর্বদা মহান আল্লাহর ইবাদতে মশগুল রয়েছেন এবং এক মুহূর্তের জন্যও তারা ত্রুটি ও গুনাহে লিপ্ত হন নি; অথচ আবু বকর ও উমর ইসলাম গ্রহণের পূর্বে দীর্ঘ বছর ধরে মুশরিক ছিলেন।[১৩৭]

চোরের হাত কর্তন

হযরত ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর বাগদাদে অবস্থানকালীন সময়ে চোরের হাত কোথা থেকে কাটতে হবে এ প্রসঙ্গে সুন্নি ফকীহদের মাঝে এখতেলাফ দেখা দেয়। তাদের একটি দল বললো কব্জি থেকে হাত কাটতে হবে; আরেকটি দল বললো, কনুই থেকে। মু’তাসিম ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-কে এ বিষয়ে তার মতামত ব্যক্ত করার অনুরোধ জানালেলে হযরত ইমাম বললেন, তাকে যেন এই প্রশ্নের উত্তর প্রদান থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়; কিন্তু খলিফার জোরাজুরিতে ইমাম বললেন: চোরের শুধু আঙ্গুল কর্তন করা হবে এবং অবশিষ্ট হাত সুরক্ষিত থাকবে। তিনি নিজের কথার পক্ষে দলিল হিসেবে পবিত্র কুরআনের 

وَ أَنَّ الْمَساجِدَ لِله فَلا تَدْعُوا مَعَ اللهِ أَحَداً

(নিশ্চয়ই সিজদা’র স্থানসমূহ আল্লাহর জন্য, অতএব, আল্লাহর সাথে কাউকে ডেকো না।’[১৩৮]-এ আয়াতটি উল্লেখ করলেন। ইমামের জবাবে মু’তাসিম সন্তুষ্ট হলো এবং চোরের আঙ্গুল কর্তনের নির্দেশ দিল।[১৩৯] বলা হয়েছে যে, এ ঘটনার পর জনগণের মাঝে ইমামতের অবস্থান আরও মজবুত হয়।[১৪০]

ফযিলত ও কারামাত

উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হাদিস গ্রন্থে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর বিভিন্ন বিভিন্ন ফযিলত, শ্রেষ্ঠত্ব ও কারামাত (অলৌকিক ঘটনা) বর্ণিত হয়েছে।

দানশীলতা

অত্যধিক দানের কারণে তিনি (আ.) ‘জাওয়াদ’ উপাধীতে প্রসিদ্ধ হন।[১৪১] খোরাসান থেকে ইমাম রেযা (আ.) স্বীয় পুত্র ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর জন্য যে পত্র লিখেছিলেন তার ভিত্তিতে স্পষ্ট হয় যে, ইমাম মুহাম্মাদ তাকী ঐ সময় থেকেই দানশীলতায় প্রসিদ্ধ ছিলেন এবং তৎকালে বিষয়টির চর্চা সর্বত্র ছিল। ইমাম রেযা (আ.)-এর খোরাসান অবস্থানকালীন সময়ে, তার সাহাবিরা ইমাম মুহাম্মাদ তাকীকে বাড়ির ছোট দরজা দিয়ে বাইরে নিয়ে যেতেন যাতে কম লোকের সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়, যারা তাঁর থেকে সাহায্য গ্রহণের আশায় বাড়ির প্রধান ফটকে ভীড় জমাতো। ঐ রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে ইমাম রেযা (আ.) নিজ পুত্রের উদ্দেশে একটি পত্রে, যারা মূল দরজা দিয়ে যাতায়াত করতে নিষেধ করে তাদের কথায় কর্ণপাত না করার কথা বলেন। আলী ইবনে মুসা ঐ চিঠিতে তাঁর পুত্রকে এ বিষয়ে তাগিদ দিলেন যে, ‘যখনই বাড়ি থেকে বের হবে সাথে করে কিছু দিরহাম ও দিনার নিয়ে বের হও, যাতে কেউ তোমার কাছে কেউ কিছু চাইলে তুমি তাকে দিতে পারো।’[১৪২]

অত্যধিক ইবাদত

ঐতিহাসিক বাকের শারিফ ক্বারাশি, ইমাম মুহাম্মাদ তাকীকে তাঁর যুগের সর্বাধিক ইবাদতকারী ও সবচেয়ে মুখলিস (একনিষ্ঠ) ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং তাঁর অত্যধিক নফল কাজের কথা উল্লেখ করেছেন। তার ভাষায়, ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) তাঁর নফল নামাযগুলোতে প্রতি রাকাতে সূরা হামদের পর ৭০ বার সূরা ইখলাছ তেলাওয়াত করতেন।[১৪৩]

একইভাবে সাইয়্যেদ ইবনে তাউস কর্তৃক বর্ণিত এক রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, ক্বামারি (আরবি / চন্দ্র) মাসের প্রথম দিনে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) ২ রাকাত নামায আদায় করতেন যার প্রথম রাকাতে সূরা হামদের পর ৩০ বার সূরা তাওহিদ ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা হামদের পর ৩০ বার সূরা ক্বদর তিলাওয়াত করতেন অতঃপর সদকা প্রদান করতেন।[১৪৪]

কারামাত

বিভিন্ন শিয়া সূত্রে ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর সাথে বেশ কিছু কারামাত ও অলৌকিক ঘটনা সম্পৃক্ত করা হয়েছে; যেমন, জন্মের সময় তাঁর কথা বলার ঘটনা, পিতার দাফনকার্য সম্পন্ন করতে মদিনা থেকে তাই-উল-আরদ্ব (চোখের পলকে লম্বা দূরত্ব পাড়ি দেওয়া) করে খোরাসান সফর করা, রোগীদেরকে রোগমুক্তি দান করা, তাঁর মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ (যার দোয়া কবুল হয়) হওয়া, কারো মনের খবর বলা ও ভবিষ্যদ্বাণী করা ইত্যাদি।[১৪৫]

কুতব রাওয়ান্দি থেকে মুহাদ্দিস কুম্মি এবং তিনি মুহাম্মাদ ইবনে মাইমুন থেকে বর্ণনা করেন, ‘ইমাম রেযা (আ.) তখনো খোরাসান সফর করেন নি, একদা এক সফরে মক্কায় যান, আমিও ঐ সফরে তাঁর সফরসঙ্গী হয়েছিলাম। ফেরার সময় ইমাম রেযাকে বললাম, আমি মদিনায় ফিরে যেতে চাই; মুহাম্মাদ তাকী’র উদ্দেশে যদি চিঠি লিখে দেন তাহলে আমি তা পৌঁছে দিব। হযরত ইমাম রেযা একটি চিঠি লিখলেন। আমি সেটাকে মদিনা নিয়ে এলাম, ঐ সময় আমি দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছিলাম। হযরত ইমামের খাদিম মুওয়াফফাক ইমাম মুহাম্মাদ তাকীকে নিয়ে এল...। আমি চিঠিটি তাঁকে দিলাম। হযরত মুহাম্মাদ তাকী (আ.) মুওয়াফফাককে চিঠিটি খুলতে বললেন। অতঃপর বললেন: মুহাম্মাদ! তোমার চোখের অবস্থা কেমন? আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল (স.)-এর সন্তান আমি দৃষ্টি শক্তি খুইয়েছি। হযরত আমার চোখে হাত বুলিয়ে দিলেন। তাঁর হাতের বরকতে আমার চোখ শিফা পেল এবং আমি দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেলাম।[১৪৬]

একইভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, বাগদাদ থেকি মদিনা ফেরার পথে একটি দল তাঁকে বিদায় জানাতে এলো। মাগরীবের সময় ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) মসজিদের উঠোনে থাকা একটি বড়ই (সিদর) গাছের পাশে দাঁড়িয়ে নামায পড়লেন ঐ গাছটতে তখনো ফল আসে নি। নামাযের পর উপস্থিত লোকেরা দেখলো যে, ঐ গাছে ফল ধরেছে। সকলে অবাক হলো এবং ঐ গাছের ফল খেলো, তারা বুঝলো যে ফল মিষ্টি এবং ফলের মধ্যে কোন দানা নেই। শেইখ মুফিদ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, বহুবছর পর ঐ গাছটি তিনি দেখেছেন এবং ঐ গাছের ফলও খেয়েছেন।[১৪৭]

ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর বিশেষ সালাওয়াত

اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ مُوسَىٰ عَلَمِ التُّقىٰ، وَنُورِ الْهُدَىٰ، وَمَعْدِنِ الْوَفاءِ، وَفَرْعِ الْأَزْكِياءِ، وَخَلِيفَةِ الْأَوْصِياءِ، وَأَمِينِكَ عَلَىٰ وَحْيِكَ . اللّٰهُمَّ فَكَما هَدَيْتَ بِهِ مِنَ الضَّلالَةِ، وَاسْتَنْقَذْتَ بِهِ مِنَ الْحَيْرَةِ، وَأَرْشَدْتَ بِهِ مَنِ اهْتَدىٰ، وَزَكَّيْتَ بِهِ مَنْ تَزَكَّىٰ، فَصَلِّ عَلَيْهِ أَفْضَلَ مَا صَلَّيْتَ عَلَىٰ أَحَدٍ مِنْ أَوْلِيائِكَ، وَبَقِيَّةِ أَوْصِيائِكَ، إِنَّكَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

‘হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে মুসা’র উপর শান্তি বর্ষণ করো, যিনি হলেন তাক্বওয়ার নিশানি, হেদায়েতের প্রদীপ, ওয়াফা ও বিশ্বস্ততার খনি, পবিত্র ব্যক্তিত্বদের বংশধর, ওয়াছিগণের স্থলাভিষিক্ত এবং ওয়াহির বিষয়ে তোমার আমানত রক্ষাকারী, হে আল্লাহ্! যেভাবে তার মাধ্যমে তুমি মানুষকে পথভ্রষ্টতা থেকে হেদায়েত করেছ, পেরেশানি থেকে মুক্তি দিয়েছ, যে হেদায়েত প্রাপ্ত হয়েছে তাকে তার অস্তিত্বের দিকে পথ দেখিয়েছ, শুদ্ধ করেছো যে শুদ্ধতা চেয়েছে। অতএব, তার প্রতি দরুদ প্রেরণ করো, সর্বোত্তম দরুদ যেমনটি তুমি প্রেরণ করেছো তোমার বন্ধুগণের (আওলিয়া) জন্য এবং অবশিষ্ট ওয়াছিগণের উদ্দেশে পাঠিয়েছ। নিশ্চয়ই তুমি অপরাজেয় ও প্রজ্ঞাবান। (বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৯৪, পৃ. ৭৭)

সাহাবিগণ

শেইখ তুসী ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর প্রায় ১১৫ জন সাহাবির নাম উল্লেখ করেছেন।[১৪৮]ক্বারাশি তার ‘হায়াতুল ইমাম মুহাম্মাদ আল-জাওয়াদ (আ.)’ গ্রন্থে ১৩২ জনের[১৪৯] এবং আব্দুল হুসাইন শাবেস্তারি তার ‘সুবুলুর রাশাদ ইলা আসহাবিল ইমামিল জাওয়াদ’ গ্রন্থে ১৯৩ জনের[১৫০] নাম হযরত ইমামের সাহাবি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ‘মুসনাদুল ইমামিল জাওয়াদ’ গ্রন্থে আতারুদি ১২১ জনের নাম উল্লেখ করেছেন।[১৫১] ইমাম জাওয়াদের কোন কোন সাহাবি, ইমাম রেযা (আ.)[১৫২] ও ইমাম হাদী (আ.)-এরও সাহাবি ছিলেন এবং তারা এ দুই ইমাম থেকেও রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন।[১৫৩] ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর রাভিদের মাঝে আহলে সুন্নাতসহ অপর মাযহাবের অনুসারীরাও ছিলেন।[১৫৪] শিয়া মাযহাবের অনুসারী নয় অথচ তাঁর থেকে রেওয়ায়েত করেছেন এমন রাভীদের সংখ্যা ১০ জন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[১৫৫]

আহমাদ ইবনে আবি নাসর বাযান্তি ও সাফওয়ান ইবনে ইয়াহিয়া (উভয়েই ছিলেন আসহাবে ইজমার অন্যতম), আব্দুল আযিম হাসানি, হাসান ইবনে সাঈদ আহওয়াযি, যাকারিয়া ইবনে আদাম, আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে ঈসা আশআরি, আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ বোরক্বী ও আবু হাশিম জাফারি ছিলেন ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর সাহাবিদের অন্যতম।[১৫৬]

আহলে সুন্নতের মাঝে ইমামের অবস্থান

একজন ধর্মীয় বিষয়াদিতে বিজ্ঞ আলেম হিসেবে সুন্নি আলেমগণ ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-কে বিশেষ সম্মানের দৃষ্টিতে দেখেন।[১৫৭] তাদের কেউ কেউ ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর ইলমি ব্যক্তিত্বকে ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব বলে আখ্যায়িত করে [১৫৮] তার প্রতি মা’মুন আব্বাসির আগ্রহ শৈশবে তাঁর ইলমি ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বের কারণে বলে উল্লেখ করেছেন।[১৫৯] এছাড়া তারা তাকওয়া, দুনিয়া বিমুখতা (যুহদ), দানশীলতাসহ অন্যান্য বৈশিষ্ট্যে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলেছেন।[১৬০]

উদাহরণ স্বরূপ, হিজরি অষ্টম শতাব্দির প্রখ্যাত সুন্নি মুহাদ্দিস শামসুদ্দীন যাহাবি[১৬১] ও ইবনে তাইমিয়া[১৬২] হযরত ইমামের ‘জাওয়াদ’ (অত্যধিক দানশীল) উপাধিতে ভূষিত হওয়ার কারণ তাঁর অত্যধিক দানশীলতার কারণে বলে উল্লেখ করেছেন। হিজরী দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দির প্রখ্যাত মু’তাযেলি কালাম শাস্ত্রবিদ ও সাহিত্যিক জাহেয উসমানও ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আ.)-কে আলিম (জ্ঞানী), যাহিদ (দুনিয়াবিমুখ), আবিদ (ইবাদতকারী), সাহসী, দানশীল ও পবিত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন।[১৬৩] হিজরী সপ্তম শতাব্দির বিশিষ্ট সু্ন্নি আলেম মুহাম্মাদ ইবনে তালহা শাফেয়ী ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) সম্পর্কে লিখেছেন: ‘অল্পবয়স্ক হলেও অবস্থান ও মাকামের দিক থেকে তার নামের চর্চা ছিল সর্বত্র।[১৬৪]

ইমাম জাওয়াদের প্রতি তাওয়াসসুল

শিয়ারা কিছু কিছু আলেমের তাগিদের ভিত্তিতে, রিযিক বৃদ্ধি পাওয়া ও পার্থিব সমস্যা আসান করার উদ্দেশে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর উসিলায় মহান আল্লাহর নিকট দোয়া চান এবং তাকে বাবুল হাওয়ায়েজ বলে ডাকেন।

ইমাম হাদী (আ.) থেকে দাউদ সাইরুফি বর্ণিত একটি রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর মাযার যিয়ারতের অত্যধিক ফযিলত রয়েছে।[১৬৫] একইভাবে ইব্রাহিম ইবনে আকাবাহ এক চিঠিতে ইমাম হাদী (আ.)-কে ইমাম হুসাইন (আ.), ইমাম কাযিম (আ.) ও ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর যিয়ারত প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে হযরত ইমাম (আ.) উত্তরে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর যিয়ারতকে অধিক উত্তম বলে আখ্যায়িত করে বলেন, ৩ জনের যিয়ারতই পরিপূর্ণ ও অধিক সওয়াবের অধিকারী।[১৬৬] বাগদাদে অবস্থিত ইমাম কাযিম ও ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আলাইহিমাস সালাম)-এর মাযার মুসলমানদের -বিশেষ করে আহলে বাইতের অনুসারী ও ভক্তদের- জন্য একটি সুপরিচিত যিয়ারতের স্থান। তারা কাযেমাইনে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর মাযার যিয়ারত করে এবং তাঁর উসিলায় মহান আল্লাহর নিকট দোয়া চায় ও তাঁর যিয়ারতনামা পাঠ করে। ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)-এর শাহাদত বার্ষিকীতে শিয়ারা বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে মহান এ ইমামের শোকানুষ্ঠান পালন করে থাকে এবং এ দিনে তাঁর উসিলায় মহান আল্লাহর নিকট দোয়া চেয়ে থাকে।[১৬৭]

যিয়ারতনামা

[যিয়ারতনামা এখানে সংযুক্ত হবে]

গ্রন্থ পরিচিতি

ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.) সম্পর্কে বিভিন্ন ভাষায় -বিশেষকরে ফার্সি ও আরবি ভাষায়- বহুসংখ্যক গ্রন্থ রচিত হয়েছে। ‘কেতাব শেনাসিয়ে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)’ নিবন্ধে ৬০৫টি লেখনীর কথা উল্লিখিত হয়েছে যেগুলোর মধ্যে ৩২৪টি বই, ২৪৮টি প্রবন্ধ ও ৩৩টি থিসিস (গবেষণা পত্র) রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭৪টি ফার্সি ভাষায়, ১২২টি আরবি এবং ৯টি অন্যান্য ভাষায় রচিত ও প্রকাশিত হয়েছে।[১৬৮] ‘কেতাব শেনাসিয়ে তৌসিফীয়ে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)’-এ ৩৫০টি প্রকাশিত গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।[১৬৯]

ওয়াফাতুল ইমামিল জাওয়াদ, মুসনাদুল ইমামিল জাওয়াদ, মাওসুআতুল ইমামিল জাওয়াদ আলাইহিস সালাম, আল-হায়াতুস সিয়াসিয়্যাহ লিল-ইমামিল জাওয়াদ, হায়াতুল ইমাম মুহাম্মাদ আল-জাওয়াদ এবং সুবুলুর রাশাদ ইত্যাদি গ্রন্থ আরবি ভাষায় রচিত ও প্রকাশিত হয়েছে।

১৩৯৫ ফার্সি সনে ইরানের কোম শহরের উলুম ওয়া ফারহাঙ্গে ইসলামি গবেষণা কেন্দ্রে ‘সিরেহ ওয়া যামানেয়ে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)’ শিরোনামে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সম্মেলনে জমাকৃত প্রবন্ধগুলো পরবর্তীতে ‘মাজমুয়ে মাকালাতে হামায়েশে সিরেহ ওয়া যামানেয়ে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী (আ.)’ নামে ৩ খণ্ডে প্রকাশিত হয়।[১৭০]

তথ্যসূত্র

  1. তাবারি, দালায়েলুল ইমামাহ, ১৪১৩ হি., পৃ. ৩৯৬।
  2. কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৪৯২; মাসউদি, ইসবাতুল ওয়াসিয়াহ, ১৪২৬ হি., পৃ. ২১৬।
  3. ইবনে শাহরে আশুব, মানাকেবে আলে আবি তালিব, নাশরে আল্লামা, খণ্ড ৪, পৃ. ৩৭৯।
  4. দ্র: কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৮২।
  5. ইরবিলি, কাশফুল গুম্মাহ, ১৪২১ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৮৫৭।]
  6. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৮১।
  7. ইবনে শাহরে আশুব, মানাকেবে আলে আবি তালিব, নাশরে আল্লামা, খণ্ড ৪, পৃ. ৩৭৯; মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৫০, পৃ. ১২, ১৩।
  8. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৯৫।
  9. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৭৩; তাবারসি, এ’লামুল ওয়ারা, ১৪১৭ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৯১; ইবনে ফাত্তাল নিশাপুরি, রাওযাতুল ওয়ায়েযীন, ১৩৭৫ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৪৩।
  10. দ্র: তাবারসি, এ’লামুল ওয়ারা, ১৪১৭ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৯১; ইবনে শাহরে আশুব, মানাকেবে আলে আবি তালিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ২৭৯।
  11. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৭৩; তাবারসি, এ’লামুল ওয়ারা, ১৪১৭ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৯১।
  12. দ্র: আশআরি, আল-মাকালাত ওয়া ফিরাক, ১৩৬১ ফার্সি সন, পৃ. ৯৯।
  13. ইরবিলি, কাশফুল গুম্মাহ, ১৪২১ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৮৬৭; মাসউদি, ইসবাতুস ওয়াসিয়্যাহ, ১৪২৬ হি., পৃ. ২১৬; ইবনে শাহরে আশুব, মানাকেবে আলে আবি তালিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৩৭৯; ইবনে ফাত্তাল, রাওযাতুল ওয়ায়েযিন, ১৩৭৫ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৪৩।
  14. তুসি, মিসবাহুল, মুজতাহিদ, আল-মাক্তাবাতুল ইসলামিয়্যাহ, পৃ. ৮০৫।
  15. দ্র: কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩২০।
  16. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৫০, পৃ. ২০, ২৩, ৩৫।
  17. কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩২৩।
  18. জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরি ওয়া সিয়াসিয়ে ইমামানে শিয়া, ১৩৮১ ফার্সি সন, পৃ. ৪৭৬।
  19. জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরি ওয়া সিয়াসিয়ে ইমামানে শিয়া, ১৩৮১ ফার্সি সন, পৃ. ৪৭৬-৪৭৭।
  20. বাইহাকি, তারিখে বাইহাক, ১৩৬১ ফার্সি সন, পৃ. ৪৬।
  21. পিশওয়ায়ী, সীরে-এ পিশওয়ায়ান, ১৩৭৯ ফার্সি সন, পৃ. ৫৩০।
  22. তাবারি, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ৮, পৃ. ৫৬৬।
  23. মাসউদি, ইসবাতুল ওয়াসিয়্যাহ, ১৪২৬ হি., পৃ. ২২৩।
  24. বাইহাকি, তারিখে বাইহাক, ১৩৬১ ফার্সি সন, পৃ. ৪৬।
  25. জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরি ওয়া সিয়াসিয়ে ইমামানে শিয়া, ১৩৮১ ফার্সি সন, পৃ. ৪৭৮।
  26. ইবনে কাসির, আল-বিদায়াতু ওয়ান নিহায়াহ, ১৪০৮ হি., খণ্ড ১০, পৃ. ২৯৫।
  27. দ্র: মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৮১।
  28. ইয়াকুবি, তারিখুল ইয়াকুবি, দারু সাদের, খণ্ড ২, পৃ. ৪৫৫।
  29. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৮১-২৮২।
  30. জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরি ওয়া সিয়াসিয়ে ইমামানে শিয়া, ১৩৮১ ফার্সি সন, পৃ. ৪৭৮।
  31. পিশওয়ায়ী, সীরে-এ পিশওয়ায়ান, ১৩৭৯ ফার্সি সন, পৃ. ৫৫৮।
  32. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৮১।
  33. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৮৫।
  34. ইবনে শাহরে আশুব, মানাকেবে আলে আবি তালিব, নাশরে আল্লামা, খণ্ড ৪, পৃ. ৩৮০।
  35. কুম্মি, মুন্তাহাল আমাল, ১৩৮৬ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৪৯৭।
  36. হাসসুন, আ’লামুন নিসা আল-মু’মিনাত, ১৪২১ হি., পৃ. ৫১৭।
  37. কুম্মি, মুন্তাহাল আমাল, ১৩৮৬ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৪৯৭।
  38. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৯৫।
  39. ইবনে শাহরে আশুব, মানাকেবে আলে আবি তালিব, নাশরে আল্লামা, খণ্ড ৪, পৃ. ৩৮০; তাবারি, দালায়েলুল ইমামাহ, ১৪১৩ হি., পৃ. ৩৯৭।
  40. মাহাল্লাতি, রিয়াহিনুশ শারীয়্যাহ, ১৩৬৮ ফার্সি সন, খণ্ড ৪, পৃ. ৩১৬; শেইখ আব্বাস কুম্মি, মুন্তাহাল আমাল, ১৩৮৬ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৪৩২।
  41. বাহরুল উলুম গিলানি, আনওয়ার পারাকান্দে দার যিকরে আহওয়ালে ইমাম যাদেগান ওয়া বাকায়ে মুতাবাররাকে ইরান, ১৩৭৬ ফার্সি সন, খণ্ড ১, পৃ. ৩৭৮।
  42. বাহরুল উলুম গিলানি, আনওয়ার পারাকান্দে দার যিকরে আহওয়ালে ইমাম যাদেগান ওয়া বাকায়ে মুতাবাররাকে ইরান, ১৩৭৬ ফার্সি সন, খণ্ড ১, পৃ. ৩৭৮।
  43. ইবনে শাহরে আশুব, মানাকেবে আলে আবি তালিব, নাশরে আল্লামা, খণ্ড ৪, পৃ. ৩৮০।
  44. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৯৫।
  45. ইবনে আবিল সালাজ, তারিখুল আইম্মা, ১৪০৬ হি., পৃ. ১৩।
  46. দ্র: ফাত্তাল নিশাপুরি, রাওযাতুল ওয়ায়েযিন, ১৩৭৫ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৪৩।
  47. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৯৫।
  48. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৭৩, ২৯৫; ফাত্তাল নিশাপুরি, রাওযাতুল ওয়ায়েযিন, ১৩৭৫ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৪৩।
  49. দ্র: আইয়াশি, আত-তাফসীর, ১৩৮০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩২০।
  50. আইয়াশি, আত-তাফসীর, ১৩৮০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩২০।
  51. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৫০, পৃ. ২০, ২৩, ৩৫।
  52. মাসউদি, ইসবাতুল ওয়াসিয়্যাহ, ১৪২৬ হি., পৃ. ২২৭।
  53. ইবনে শাহরে আশুব, মানাকেবে আলে আবি তালিব, নাশরে আল্লামা, খণ্ড ৪, পৃ. ৩৯১।
  54. ইবনে শাহরে আশুব, মানাকেবে আলে আবি তালিব, নাশরে আল্লামা, খণ্ড ৪, পৃ. ৩৭৯; মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৫০, পৃ. ৮।
  55. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৯৫।
  56. শেইখ মুফিদ, তাসহিহু এ’তেকাদাতিল ইমামিয়্যাহ, ১৪১৪ হি., পৃ. ১৩২।
  57. সাদুক, মান লা ইয়াহদ্বুরুহুল ফাকিহ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৫৮৫।
  58. সাদর, তারিখুল গাইবাহ, ১৪১২ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২২৯-২৩৭।
  59. জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরি ওয়া সিয়াসিয়ে ইমামানে শিয়া, ১৩৮১ ফার্সি সন, পৃ. ৪৮০-৪৮১।
  60. দ্র: আমেলি, আস-সহিহ মিন সীরাতিন নাবী আল-আ’যাম, ১৪২৬ হি., খণ্ড ৩৩, পৃ. ১৮৫-১৯১।
  61. তাবারি, দালায়েলুল ইমামাহ, ১৪১৩ হি., পৃ. ৩৯৪।
  62. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৭৩; ফাত্তাল নিশাপুরি, রাওযাতুল ওয়ায়েযিন, ১৩৭৫ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৪৩।
  63. পিশওয়ায়ী, সীরে-এ পিশওয়ায়ান, ১৩৭৯ ফার্সি সন, পৃ. ৫৩০।
  64. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৯৫।
  65. কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩২০-৩২৩।
  66. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৭৪-২৮০।
  67. তাবারসি, এ’লামুল ওয়ারা, ১৪১৭ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৯২-৯৬।
  68. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৫০, পৃ. ১৮-৩৭।
  69. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৬৫।
  70. মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৬৬।
  71. দ্র: জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরি ওয়া সিয়াসিয়ে ইমামানে শিয়া, ১৩৮১ ফার্সি সন, পৃ. ৪৭৬।
  72. নৌবাখতি, ফিরাকুশ শিয়া, ১৪০৪ হি., পৃ. ৮৮।
  73. ইবনে শাহরে আশুব, মানাকেবে আলে আবি তালিব, নাশরে আল্লামা, খণ্ড ৪, পৃ. ৩৮৩।
  74. নৌবাখতি, ফিরাকুশ শিয়া, ১৪০৪ হি., পৃ. ৭৭-৭৮।
  75. জসিম, তারিখে সিয়াসিয়ে গাইবাতে ইমামে দাওয়াযদাহোম, ১৩৮৬ ফার্সি সন, পৃ. ৭৮।
  76. নৌবাখতি, ফিরাকুশ শিয়া, ১৪০৪ হি., পৃ. ৮৮।
  77. কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩২২।
  78. সূরা মারিয়াম, আয়াত ১২।
  79. সূরা মারিয়াম, আয়াত ৩০-৩২।
  80. নৌবাখতি, ফিরাকুশ শিয়া, ১৪০৪ হি., পৃ. ৯০; কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩৮২।
  81. দ্র: কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩৮৩।
  82. দ্র: কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩২০-৩২৩।
  83. পিশওয়ায়ী, সীরে-এ পিশওয়ায়ান, ১৩৭৯ ফার্সি সন, পৃ. ৫৩৯।
  84. দ্র: কাশ্শি, রিজালুল কাশ্শি, ১৪০৯ হি., পৃ. ২৮২-২৮৩।
  85. জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরি ওয়া সিয়াসিয়ে ইমামানে শিয়া, ১৩৮১ ফার্সি সন, পৃ. ৪৭৬।
  86. জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরি ওয়া সিয়াসিয়ে ইমামানে শিয়া, ১৩৮১ ফার্সি সন, পৃ. ৪৭৬।
  87. কাজী যাহেদি, পোরসেশহায়ে মারদুম ওয়া পাসোখহায়ে ইমাম জাওযাদ (আ.), ১৩৯২ ফার্সি সন।
  88. জসিম, তারিখে সিয়াসিয়ে গাইবাতে ইমামে দাওয়াযদাহোম, ১৩৮৬ ফার্সি সন, পৃ. ৭৮।
  89. তাবারি, দালায়েলুল ইমামাহ, ১৪১৩ হি., পৃ. ৩৮৯-৩৯০; মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৫০, পৃ. ৯৯-১০০।
  90. জসিম, তারিখে সিয়াসিয়ে গাইবাতে ইমামে দাওয়াযদাহোম, ১৩৮৬ ফার্সি সন, পৃ. ৭৯।
  91. জাব্বারি, সাযেমানে ভেকালাত, ১৩৮২ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৪২৭।
  92. জাব্বারি, সাযেমানে ভেকালাত, ১৩৮২ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ২৮২।
  93. জাব্বারি, সাযেমানে ভেকালাত, ১৩৮২ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ১২৩।
  94. কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ৫, পৃ. ৩১৬।
  95. দ্র: তুসি, আল-গাইবাহ, ১৪২৫ হি., পৃ. ৩৫১।
  96. তুসি, আল-গাইবাহ, ১৪২৫ হি., পৃ. ৩৪৮।
  97. তুসি, আল-গাইবাহ, ১৪২৫ হি., পৃ. ৩৪৯।
  98. নাজ্জাশি, রিজালুন নাজ্জাশি, ১৩৬৫ ফার্সি সন, পৃ. ১৯৭।
  99. নাজ্জাশি, রিজালুন নাজ্জাশি, ১৩৬৫ ফার্সি সন, পৃ. ২৫৩; দ্র: তুসি, আল-গাইবাহ, ১৪২৫ হি., পৃ. ৩৪৯।
  100. কুতবে রাভান্দি, আল-খারায়েজ ওয়া জারায়েহ, ১৪০৯ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৭১৭।
  101. জাব্বারি, সাযেমানে ভেকালাত, ১৩৮২ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৫৩২।
  102. কাশ্শি, রিজালুল কাশ্শি, ১৪০৯ হি., পৃ. ৬০৬।
  103. https://farsi.khamenei.ir/speech-content?id=46078
  104. দাশতি, “নাকশে সিয়াসিয়ে সাযেমানে ভেকালাত দার আসরে হুযুরে আইম্মা”, পৃ. ১০৩।
  105. জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরি ওয়া সিয়াসিয়ে ইমামানে শিয়া, ১৩৮১ ফার্সি সন, পৃ. ৪৯৪।
  106. https://maaref.makarem.ir/fa/article/index/414891/%d
  107. দ্র: কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ৩৯৯; খণ্ড ৪, পৃ. ২৭৫ ও ৫২৪; খণ্ড ৫, পৃ. ৩৪৭; কাশ্শি, এখতিয়ারু মা’রিফাতির রিজাল, ১৪০৪ হি., পৃ. ৮৬৯, ৮৮৩।
  108. খাযালি, মাওসুআতুল ইমামিল জাওয়াদ, ১৪১৯ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৪১৬-৫০৮।
  109. দ্র: কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ৩৩১, ৩৯৮; খণ্ড ৫, পৃ. ৩৯৪; খণ্ড ৭, পৃ. ১৬৩; কাশ্শি, এখতিয়ারু মা’রিফাতির রিজাল, ১৪০৪ হি., পৃ. ৭৮৩, ৮৬৯; আহমাদি মিয়াঞ্জি, মাকাতিবুল আইম্মা (আ.), ১৪২৬ হি., খণ্ড ৫, পৃ. ৩০৭-৪৪৩।
  110. আতারোদি, মুসনাদুল ইমাম আল-জাওয়াদ, ১৩৯১ ফার্সি সন, পৃ. ১৫০।
  111. সাদুক, তাওহিদ, ১৩৯৮ হি., পৃ. ১০১।
  112. সূরা আনআম, আয়াত ১০৩।
  113. কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৯৯।
  114. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৪৮, পৃ. ২৬৭; আতারোদি, মুসনাদুল ইমাম আল-জাওয়াদ, ১৪১০ হি., পৃ. ১৫০।
  115. কাশ্শি, রিজালুল কাশ্শি, ১৪০৯ হি., পৃ. ৪৬০।
  116. সূরা গাশিয়াহ, আয়াত ২ ও ৩।
  117. কাশ্শি, রিজালুল কাশ্শি, ১৪০৯ হি., পৃ. ২২৯, ৪৬০।
  118. সাদুক, মান লা ইয়াহদ্বরুহুল ফাকিহ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩৭৯; তুসি, তাহযিবুল আহকাম, ১৪০৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২৮।
  119. দ্র: হাজী যাদেহ, “গালিয়ান দার দওরেয়ে ইমাম জাওয়াদ (আ.) ওয়া নু-এ বারখুরদে হযরত বা অনান”, পৃ. ২২৬।
  120. কাশ্শি, রিজালুল কাশ্শি, ১৪০৯ হি., পৃ. ৫২৮-৫২৯।
  121. কাশ্শি, রিজালুল কাশ্শি, ১৪০৯ হি., পৃ. ৫২৮-৫২৯।
  122. কাশ্শি, রিজালুল কাশ্শি, ১৪০৯ হি., পৃ. ৫২৮-৫২৯।
  123. কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৪৪১।
  124. ইবনে শো’বা হাররানি, তুহাফুল উকুল, ১৪০৪ হি., পৃ. ৪৫৭।
  125. ওতারেদি, মুসনাদুল ইমাম আল-জাওয়াদ, ১৪১০ হি., পৃ. ২৪৯।
  126. পিশওয়ায়ী, সীরে-এ পিশওয়ায়ান, ১৩৭৯ ফার্সি সন, পৃ. ৫৬২।
  127. কুম্মি, মুন্তাহাল আমাল, ১৩৭৯ ফার্সি সন, খণ্ড ৩, পৃ. ১৭৮১।
  128. সাইয়্যেদ ইবনে তাঊস, মিনহাজুদ দা’ওয়াত, ১৪১১ হি., পৃ. ৪২।
  129. শাফেয়ী, আসার ওয়া বারকাতে দোয়া, ১৪০০ ফার্সি সন, পৃ. ১৯৮।
  130. তাবারসি, আল-ইহতিজাজ, ১৪০৩ হি., পৃ. ৪৪৩।
  131. তাবারসি, আল-ইহতিজাজ, ১৪০৩ হি., পৃ. ৪৪১-৪৪৯; আহমাদি মিয়াঞ্জি, মাকাতিবুল আইম্মা (আ.), ১৪২৬ হি., খণ্ড ৫, পৃ. ৩৮১, ৪২৭।
  132. তাবারসি, আল-ইহতিজাজ, ১৪০৩ হি., পৃ. ৪৪৪; মাসউদি, ইসবাতুল ওয়াসিয়্যাহ, ১৪২৬ হি., পৃ. ২২৪।।
  133. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৫০, পৃ. ৭৮।
  134. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৫০, পৃ. ৭৫।
  135. সূরা ক্বাফ, আয়াত ১৬।
  136. তাবারসি, আল-ইহতিজাজ, ১৪০৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৪৪৩।
  137. তাবারসি, আল-ইহতিজাজ, ১৪০৩ হি., পৃ. ৪৪৭।
  138. সূরা জ্বিন, আয়াত ১৮।
  139. আইয়াশি, আত-তাফসীর, ১৩৮০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩১৯-৩২০; মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৫০, পৃ. ৫-৬।
  140. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৫০, পৃ. ৬।
  141. কারাশি, হায়াতুল ইমাম মুহাম্মাদ আল-জাওয়াদ, ১৪১৮ হি., পৃ. ৭০-৭১।
  142. কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৪৩।
  143. কারাশি, হায়াতুল ইমাম মুহাম্মাদ আল-জাওয়াদ, ১৪১৮ হি., পৃ. ৬৭-৬৮।
  144. সাইয়্যেদ ইবনে তাঊস, আদ-দুরূউ’ল ওয়াকিয়াহ, ১৪১৫ হি., পৃ. ৪৪।
  145. বাগেস্তানি, “আল-জাওয়াদ, ইমাম”, পৃ. ২৪৫ ও ২৪৬।
  146. কুম্মি, মুন্তাহাল আমাল, ১৩৮৬ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৪৬৯-৪৭০।
  147. ইবনে শাহরে আশুব, মানাকেবে আলে আবি তালিব, নাশরে আল্লামা, খণ্ড ৪, পৃ. ৩৯০; মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৭৮।
  148. তুসি, রিজালুত তুসি, ১৩৭৩ ফার্সি সন, পৃ. ৩৭৩-৩৮৩।
  149. কারাশি, হায়াতুল ইমাম মুহাম্মাদ আল-জাওয়াদ, ১৪১৮ হি., পৃ. ১২৮-১৭৮।
  150. শাবেস্তারি, সুবুলুর রাশাদ, ১৪২১ হি., পৃ. ১৯-২৮৯।
  151. ওতারেদি, মুসনাদুল ইমাম আল-জাওয়াদ, ১৪১০ হি., পৃ. ২৪৯।
  152. বারকি, পৃ. ৫৭।
  153. জাফারিয়ান, হায়াতে ফিকরি ওয়া সিয়াসিয়ে ইমামানে শিয়া, ১৩৮১ ফার্সি সন, পৃ. ৪৯১।
  154. ওতারেদি, মুসনাদুল ইমাম আল-জাওয়াদ, ১৪১০ হি., পৃ. ৩১৪, ৩১৫, ২৬২, ২৮৩, ৩১৯, ২৭১।
  155. ওয়ারেদি, গুনে শেনাছিয়ে রাভিয়ানে ইমাম জাওয়াদ, পৃ. ৩০-৩১।
  156. দ্র: তুসি, রিজালুত তুসি, ১৪১৫ হি., পৃ. ৩৭৩-৩৮৩।
  157. দ্র: তাবাসি, “http://ensani.ir/fa/article/57911/%D8%A7%”, ফাসল-নমেয়ে ফারহাঙ্গে কাওসার।
  158. দ্র: সিবত ইবনে জাওযি, তাযকিরাতুল খাওয়াছ, ১৪১৮ হি., পৃ. ৩২১।
  159. হাইসামি, আস-সাওয়ায়েকুল মুহরিকাহ, ১৪২৪ হি., পৃ. ২৮৮।
  160. সিবত ইবনে জাওযি, তাযকিরাতুল খাওয়াছ, ১৪১৮ হি., পৃ. ৩২১।
  161. যাহাবি, তারিখুল ইসলাম, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১৫, পৃ. ৩৮৫।
  162. ইবনে তাইমিয়া, মিনহাজুস সুন্নাহ, ১৪০৬ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৬৮-৬৯।
  163. আমেলি, আল-হায়াতুস সিয়াসাতু লিল ইমামিল জাওয়াদ, ১৪২৫ হি., পৃ. ১৩৭।
  164. নাসিবী শাফেয়ী, মাতালিবুস সাঊল ফি মানাকিবি আলির রাসুল, মুআসসেসাতুল বালাগ, পৃ. ৩০৩।
  165. মুফিদ, আল-মাযার, ১৪১৩ হি., পৃ. ২০৭।
  166. কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৫৮৩-৫৮৪।
  167. https://www.isna.ir/news/1401040603919/%D8%A8%, ইসনা।
  168. নাসর ইস্ফাহানি, কিতাব শেনাসিয়ে ইমাম জাওয়াদ (আ.), পৃ. ৫১১।
  169. https://library.razavi.ir/quran/fa/43508/%DA%A9%, উলুমে কুরআন ও হাদিস হাদিসের বিশেষায়িত লাইব্রেরি’র ওয়েবসাইট।
  170. https://www.mehrnews.com/news/3601990/%D9%87%, মেহের নিউজ।

গ্রন্থপঞ্জি

  • ইবনে শো’বাহ হাররানি, হাসান ইবনে আলী, তোহাফুল উকুল, তাসহিহ: আলী আকবার গাফ্ফারি, কোম, জামে-এ মুদাররেসীন, ১৪০৪ হি.।
  • ইবনে আবিস সালজ, তারিখুল আইম্মা, দার মাজমুয়ে’ নাফিসাহ ফিত তারিখিল আইম্মা, চপ-এ মাহমুদ মারআশি, কোম, কিতাবখনেয়ে আয়াতুল্লাহ মারআশি নাজাফি, ১৪০৬ হি.।
  • ইবনে তাইমিয়াহ, আহমাদ ইবনে আব্দুল হালিম, মিনহাজুস সুন্নাতিন নাবাবিয়্যাহ ফি নাকযি কালামিশ শিয়াতিল কাদারিয়্যাহ, তাহকিক: মুহাম্মাদ রিশাদ সালিম, রিয়াদ্ব, জামেয়াতুল ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সাউদ আল-ইসলামিয়্যাহ, প্রথম সংস্করণ, ১৪০৬ হি.-১৯৮৬ খ্রি.।
  • ইবনে শাহরে আশুব, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, মানাকেবে আলে আবি তালিব, তাহকিক: হাশেম রাসূলী, কোম, নাশরে আল্লামা, তারিখ অজ্ঞাত।
  • ইবনে কাসির দামেস্কি, ইসমাঈল ইবনে উমর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, তাহকিক: আলী শিরি, বৈরুত, দারু ইহিয়ায়িত তুরাসিল আরাবি, ১৪০৮ হি.।
  • আহমাদি মিয়াঞ্জি, আলী, মাকাতিবুল আইম্মা (আ.), তাহকিক: মুজতবা ফারাজি, কোম, দারুল হাদিস, ১৪২৬ হি.।
  • ইরবিলি, আলী ইবনে ঈসা, কাশফুল গুম্মাহ ফি মা’রিফাতিল আইম্মা, কোম, রাযি, ১৪২১ হি., আশআরি, সা’দ ইবনে আব্দুল্লাহ, আল-মাকালাত ওয়াল ফিরাক, তেহরান, মারকাযে ইন্তেশারাতে ইলমি ওয়া ফারহাঙ্গি, ১৩৬১ ফার্সি সন।
  • আঞ্জুমানে তারিখ পেঝুহানে হাওযা, মাজমুয়ে মাকালাতে হামায়েশে সীরে ওয়া যামানে ইমাম জাওয়াদ আলাইহিস সালাম, বে কৌশিশে হামিদ রেযা মোতাহহারি, কোম, মারকাযে মুদিরিয়্যাতে হাওযা ইলমিয়্যাহ, ১৩৯৫ ফার্সি

সন।

  • বাগেস্তানি, ইসমাঈল, «الجواد، امام», https://rch.ac.ir/article/Details?id=7588&&searchText, দার দানেশ নমেয়ে জাহানে ইসলাম, খণ্ড ১১, তেহরান, বুনিয়াদে দায়েরাতুল মাআরেফে ইসলামি, প্রথম সংস্করণ, ১৩৮৬ ফার্সি সন।
  • বাহরুল উলুম গিলানি, মুহাম্মাদ মাহদি, আনওয়ার পারাকান্দে দার যিকরে আহওয়ালে ইমাম যাদেগান ওয়া বকায়ে মুতাবাররকে ইরান, কোম, ইন্তেশারাতে মসজিদে মুকাদ্দাস-এ জামকারান, প্রথম সংস্করণ, ১৩৭৬ ফার্সি সন।
  • বাহরানি, আব্দুল্লাহ, আওয়ালেমুল উলুম ওয়াল মাআরেফ, মুস্তাদরাক, হযরত যাহরা তা ইমাম জাওয়াদ (আ.), মুআস্সেসাতুল ইমামিল মাহদি আজ্জিলাল্লাহু তায়ালা ফারাজাহুশ শরীফ, কোম।
  • «برپایی دسته عزای خادمان حرم حضرت معصومه (س) در سالروز شهادت امام جواد(ع)»، https://www.isna.ir/news/1401040603919/, ইসনা, প্রকাশকাল প্রকাশকাল: ৬ তীর ১৪০১ ফার্সি সন, দেখার তারিখ: ৯ তীর ১৪০১ ফার্সি সন।
  • পিশওয়ায়ি, মাহদি, সীরে-এ পিশওয়াইয়ান, কোম, মুআসসেসেয়ে ইমাম সাদিক, ১৩৭৯ ফার্সি সন।
  • জসিম, হুসাইন, তারিখে সিয়াসিয়ে গায়বাতে ইমাম দাওয়াযদাহোম, তরজমা মুহাম্মাদ তাকী আয়াতুল্লাহি, তেহরান, মুআসসেসেয়ে ইন্তেশারাতে আমীর কাবির, ১৩৮৬ ফার্সি সন।
  • জাব্বারি, মুহাম্মাদ রেযা, সাযেমানে ভেকালাত ওয়া নাকশে অন দার আসরে আইম্মা আলাইহিমুস সালাম, কোম, মুআসসেসেয়ে আমুযেশি পেঝুহেশি ইমাম খোমেনী, ১৩৮২ ফার্সি সন।
  • জাফারিয়ান, রাসূল, হায়াতে ফিকরিয়ে সিয়াসিয়ে ইমামানে শিয়া (আ.), কোম, আনসারিয়ান, পঞ্চম সংস্করণ, ১৩৮১ ফার্সি সন।
  • হাজী যাদেহ, ইয়াদুল্লাহ, “গলিয়ান দার দৌরেয়ে ইমাম জাওয়াদ (আ.) ওয়া নু-এ বারখুরদে হযরত বা অনান”, দার মাজাল্লেয়ে তারিখে ইসলাম, সংখ্যা ৬৫, বাহার(বসন্তকাল) ১৩৯৫ ফার্সি সন।
  • হাস্সুন, মুহাম্মাদ, আ’লামুন নিসায়িল মু’মিনাত, তেহরান, দারুল উসওয়া, ১৪২১ হি.।
  • সাদর, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ, তারিখুল গায়বাহ, বৈরুত, দারুত তাআরেফ, ১৪১২ হি.।
  • সাদুক, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, আত-তাওহীদ, তাসহিহ: হাশেম হুসাইনি, কোম, জামেয়ে মুরারেরসীন, ১৩৯৮ হি.।
  • সাদুক, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, উয়ুনু আখবারির রেযা, তরজমা: আলী আকবার গাফ্ফারি, তেহরান, নাশরে সাদুক, ১৩৮৩ ফার্সি সন।
  • সাদুক, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, মান লা ইয়াহদ্বুরুহুল ফাকিহ, তাসহিহ: আলী আকবার গাফ্ফারি, কোম, দাফতারে ইন্তেশারাতে ইসলামি ওয়াবাস্তে বে জামেয়ে মুদারেরসীন হাওযা ইলমিয়্যাহ কোম, দ্বিতীয় সংস্করণ।
  • তাবারসি, আহমান ইবনে আলী, আল-ইহতেজাজ, মাশহাদ, নাশরে মুর্তাযা, ১৪০৩ হি.।
  • তাবারসি, ফাযল ইবনে হাসান, এ’লামুল ওয়ারা বি আ’লামিল হুদা, কোম, মুআসসেসাতু আলিল বাইত লি ইহিয়ায়িত তুরাস, ১৪১৭ হি.।
  • তাবারি, মুহাম্মাদ ইবনে জারির, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, তাহকিক: মুহাম্মাদ আবুল ফাযল ইব্রাহিম, বৈরুত, দারুত তুরাস, ১৩৮৭ হি./১৩৬৭ খ্রি.।
  • তাবারি, মুহাম্মাদ ইবনে জারির, দালায়েলুল ইমামাহ, কোম, তাসহিহ: কিসমুদ দিরাসাতিল ইসলামিয়্যাহ মুআসসাসাতুল বে’সাহ, কোম, বে’সাত, ১৪১৩ হি.।
  • তুসি, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, ইখতেয়ারু মা’রিফাতির রিজাল, তাসহিহ: হাসান মুস্তাফাভি, মাশহাদ, দানেশগাহে মাশহাদ, ১৩৪৮ ফার্সি সন।
  • তুসি, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, তাহযিবুল আহকাম, তাসহিহ: হাসান মুসাভি খোরাসান, তেহরান, দারুল কুতুবিল ইসলামিয়্যাহ, চতুর্থ সংস্করণ, ১৪০৭ হি.।
  • তুসি, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, কিতাবুল গায়বাহ, তাহকিক: এবাদুল্লাহ তেহরানি ওয়া আলী আহমান নাসের, কোম, মুআসসাসাতুল মাআরেফিল ইসলামিয়্যাহ, ১৪২৫ হি.।
  • তুসি, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, মিসবাহুল মুজতাহিদ, কোম, আল-মাক্তাবাতুল ইসলামিয়্যাহ, তারিখ অজ্ঞাত।
  • আমেলি, সাইয়্যেদ জাফার মুর্তাযা, আল-সাহিহ মিন সীরাতিন নাবিয়্যিল আ’যাম, কোম, দারুল হাদিস, ১৪২৬ হি.।
  • আমেলি, সাইয়্যেদ জাফার মুর্তাযা, আল-হায়াতুস সিয়াসিয়্যাহ লিল ইমামিল জাওয়াদ, বৈরুত, আল-মারকাযুল ইসলামি লিদ-দিরাসাত, তৃতীয় সংস্করণ, ১৪২৫ হি.।
  • আতারোদি, আযিযুল্লাহ, মুসনাদুল ইমামিল জাওয়াদ আবি জাফার মুহাম্মাদ ইবনে আলী আর-রেযা আলাইহিমাস সালাম, মাশহাদ, অস্তানে কুদসে রাযাভি, ১৪১০ হি.।
  • আইয়াশি, মুহাম্মাদ ইবনে মাসউদ, আত-তাফসীর (তাফসীরে আইয়াশি), তাসহিহ: হাশেম রাসূলি মাহাল্লাতি, তেহরান, আল-মাক্তাবাতুল ইলমিয়্যাহ আল-ইসলামিয়্যাহ, ১৩৮০ হি.।