বিষয়বস্তুতে চলুন

হযরত মাসুমা সালামুল্লাহি আলাইহা

wikishia থেকে
হযরত মাসুমা সালামুল্লাহি আলাইহা
নামফাতেমা মাসুমা (সা.আ.)
ভূমিকাইমামজাদা এবং ইমাম রেযার (আ.) বোন
জন্ম তারিখ১লা জিলক্বদ, ১৭৩ হি.
জন্মস্থানমদীনা
দাফনের স্থানকোম
বসবাসের স্থানমদীনা
উপাধিসমূহমাসুমা • কারিমা-এ আহলে বাইত • হামিদা • তাহেরা • বাররাহ • রাশিদা • তাকিয়া বাররাহ • নাকিয়া বাররাহ • রাযিয়া • মারযিয়া • সাইয়্যেদা • উখতুর রেযা •
পিতাইমাম মূসা কাযিম (আ.)
মাতানাজমা খাতুন
সন্তানহাসানহুসাইনমুহসিন • যয়নাব • উম্মে কুলসুম
জীবনকাল২২ বছরের অধিক
শিয়া ইমামগণ
ইমাম আলী • ইমাম হাসান মুজতাবাইমাম হুসাইন • ইমাম সাজ্জাদ • ইমাম বাকের • ইমাম জাফার সাদিকইমাম কাযেমইমাম রেযাইমাম জাওয়াদইমাম হাদীইমাম হাসান আসকারি • ইমাম মাহদী


হযরত মাসুমা (সা. আ.) (আরবি: فاطمة بنت موسی بن جعفر); প্রকৃত নাম ‘ফাতেমা’, ইমাম কাযিম (আ.)-এর কন্যা এবং ইমাম রেযা (আ.)-এর বোন। ইমাম কাযিম (আ.)-এর শ্রেষ্ঠ কন্যা হিসেবে তার প্রসিদ্ধি রয়েছে। বলা হয় যে, ইমাম রেযা (আ.)-এর পর ইমাম কাযিম (আ.)-এর সন্তানদের মধ্যে হযরত মাসুমা’র সমপর্যায়ে আর কেউ নেই। ঐতিহাসিক সূত্রসমূহে হযরত মাসুমা (সা. আ)-এর জীবনী তথা তাঁর জন্ম ও মৃত্যুর তারিখসহ অন্যান্য বিষয়ে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় নি। একইভাবে তার বিবাহ সম্পর্কে বেশি কিছু জানা না গেলেও এতটুকু জানা যায় যে, তিনি বিবাহ করেননি।

ইমাম কাযিম (আ.)-এর কন্যা হযরত মাসুমার প্রসিদ্ধ দু’টি উপাধি হল ‘মাসুমা’ ও ‘কারিমায়ে আহলে বাইত’। একটি হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম রেযা (আ.) তাকে ‘মাসুমা’ উপাধি দ্বারা সম্বোধন করেছেন।

২০১ হিজরীতে হযরত মাসুমা ভাই ইমাম রেযা (আ.)-এর আমন্ত্রণে তাঁর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে মদিনা থেকে ইরান অভিমুখে রওনা হন। পথিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে কোম শহরের জনগণের আমন্ত্রণে তিনি কোমে যান এবং সেখানে ‘মুসা ইবনে খাযরাজী আশআরি’র বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। এ ঘটনার ১৭ দিন পর তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁকে তৎকালীন ‘বাবেলান’ (বর্তমানে তার হারাম শরিফ) নামক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। সাইয়্যেদ জাফার মুর্তাযা আমেলি’র মতে হযরত মাসুমাকে কোমের অদূরে অবস্থিত ‘সাভে’ শহরে বিষ প্রয়োগ করা হয় এবং তাতেই তিনি শহীদ হন।

শিয়াদের নিকট হযরত ফাতেমা মাসুমা (সা. আ.) বিশেষ মর্যাদার অধিকারী এবং তাঁর যিয়ারতের বিষয়টিকে তারা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এছাড়া তার সম্পর্কে তারা এমন কিছু রেওয়ায়েত বর্ণনা করে যেগুলোর ভিত্তিতে শিয়াদের পক্ষে তাঁর শাফায়াতের কথা বলা হয়েছে। একইভাবে তাঁর যিয়ারতের পুরস্কার বেহেশত বলে জানা গেছে। বলা হয়েছে যে, হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.)-এর পর তিনি ছিলেন একমাত্র রমনী যার সম্পর্কে মাসুম ইমামগণ (আ.) থেকে যিয়ারত নামা বর্ণিত হয়েছে।

হযরত মাসুমা সম্পর্কে তথ্য স্বল্পতা

রিয়াহাইনুশ শারিআহ’ গ্রন্থে যাবিহুল্লাহ মাহাল্লাতি লিখেছেন, হযরত মাসুমা (সা. আ.) সম্পর্কে খুব বেশী তথ্য পাওয়া যায় নি। তাঁর জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ, তার আয়ুস্কাল, মদিনা থেকে রওনা হওয়ার তারিখ, তার শাহাদাত ইমাম রেযা (আ.)-এর পূর্বে ঘটেছিল নাকি পরে ইত্যাদি বিষয় ঐতিহাসিক সূত্রসমূহ উল্লেখিত হয় নি।[]

বংশ পরিচয়

ইমাম কাযিম (আ.)-এর কন্যা ও ইমাম রেযা (আ.)-এর বোন ‘ফাতেমা’; যাঁর প্রসিদ্ধ উপাধি হচ্ছে ‘মাসুমা’। শেইখ মুফিদ তার আল-ইরশাদ গ্রন্থে ইমাম কাযিম (আ.)-এর কন্যাবর্গের নাম উল্লেখ করতে গিয়ে তাঁর কন্যাদের মধ্যে ২ জনের নাম ফাতেমা বলে উল্লেখ করেছেন; ফাতেমা কোবরা ও ফাতেমা সোগরা। তবে এটা স্পষ্ট নয় যে, তাদের মধ্যে কে ফাতেমা মাসুমা।[] হিজরী ষষ্ঠ শতাব্দি’র বিশিষ্ট সুন্নি আলেম ইবনে জাওযি, ইমাম কাযিম (আ.)-এর কন্যাদের মাঝে ৪ জনের নাম ফাতেমা বলে উল্লেখ করলেও তিনিও এ কথা স্পষ্ট করেন নি যে, তাদের মধ্যে কে ফাতেমা মাসুমা।[] দালায়েলুল ইমামাহ গ্রন্থের প্রণেতা মুহাম্মাদ ইবনে জারীরে’র ভাষ্যমতে, হযরত মাসুমার মায়ের নাম ‘নাজমা খাতুন’ যিনি ইমাম রেযা (আ.)-এরও মা।[]

জন্ম ও ওফাতের তারিখ

শিয়াদের পুরাতন ও প্রথম সারির সূত্রসমূহে হযরত ফাতেমা মাসুমা’র জন্ম ও ওফাতের তারিখ উল্লেখিত হয় নি। রেযা উস্তাদি’র ভাষ্যানুযায়ী ১৩৪৪ হিজরীতে প্রকাশিত জাওয়াদ শাহ আব্দুল আযিমী[] রচিত ‘নূরুল আফাক’ গ্রন্থে প্রথমবারের মত এ প্রসঙ্গে কোন তারিখ উল্লেখ করা হয়।[] ঐ গ্রন্থের তথ্যানুযায়ী হযরত মাসুমা (সা. আ.) ১ জিলক্বদ ১৭৩ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ২০১ হিজরীর ১০ রবিউস সানী ইন্তেকাল করেন। পরবর্তীতে ঐ গ্রন্থ থেকে অন্যান্য গ্রন্থও উদ্ধৃত করেছে।[] কিন্তু আয়াতুল্লাহ মারআশী নাজাফী,[] আয়াতুল্লাহ শুবাইর যানজানী,[] রেযা উস্তাদী[১০] ও যাবীহুল্লাহ মাহাল্লাতি[১১] এ প্রসঙ্গে শাহ আব্দুল আযিমী’র সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন এবং ঐ গ্রন্থে উল্লেখিত তারিখকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সরকারি পঞ্জিকায় ১লা জিলক্বদ কন্যা দিবস হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।[১২]

উপাধিসমূহ

হযরত ইমাম মুসা কাযিম (আ.)-এর কন্যা ‘ফাতেমা’র সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দু’টি উপাধি হল মাসুমা ও কারিমায়ে আহলে বাইত (আ.)[১৩] বলা হয়েছে ‘মাসুমা’ উপাধিটি ইমাম রেযা (আ.)-এর একটি রেওয়ায়েত থেকে গৃহীত হয়েছে।[১৪] মুহাম্মাদ বাকির মাজলিসী রচিত ‘যাদুল মাআদ’ গ্রন্থে বর্ণিত ঐ রেওয়ায়েতে ইমাম রেযা (আ.) তাকে ‘মাসুমা’ নামে স্মরণ করেছেন।[১৫] ‘ফাতেমা মাসুমা’কে ‘কারিমায়ে আহলে বাইত উপাধি ধরেও ডাকা হয়; বিষয়টি আয়াতুল্লাহ মারআশি নাজাফি’র পিতা সাইয়্যিদ মাহমুদ মারআশি নাজাফি’র একটি স্বপ্নের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, যাতে ইমামগণের (আ.) একজন হযরত মাসুমাকে ‘কারিমায়ে আহলে বাইত’ হিসেবে সম্বোধন করেছেন।[১৬]

বিবাহ

রিয়াহাইনুশ শারিয়াহ গ্রন্থে বলা হয়েছে, হযরত ফাতেমা মাসুমা (সা. আ.) বিবাহ করেছেন নাকি করেন নি বা তাঁর কোন সন্তান ছিল কি ছিল না[১৭] -এ সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। তবে প্রসিদ্ধ হল যে, তিনি কখনই বিবাহ করেননি।[১৮] এর নেপথ্য কারণ হিসেবে বিভিন্ন সূত্রে যে সকল বিশ্লেষণ পাওয়া যায় তম্মধ্যে তাঁর জন্য যোগ্য কোন স্বামী পাওয়া না যাওয়ার বিষয়টিকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[১৯]] একইভাবে হিজরী তৃতীয় শতাব্দির প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইয়াকুবি লিখেছেন, ইমাম কাযিম (আ.) ওসিয়ত করেছিলেন যেন তার কোন কন্যাই বিবাহ না করেন;[২০] অবশ্য ইয়াকুবির এ মন্তব্যের সাথে অনেকে দ্বিমত পোষণ করেছেন; কেননা ইমাম কাযিম (আ.) থেকে কুলাইনি যে ওসিয়ত কাফি গ্রন্থে[২১] উল্লেখ করেছেন এ ধরনের কোন বিষয় তাতে উল্লেখ নেই।[২২][নোট] আবার কোন কোন গবেষক মনে করেন আব্বাসীয় খলিফা বিশেষতঃ হারুন ও মা’মুন নবি (স.) পরিবারে জন্য যে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা সৃষ্টি করেছিল তার কারণে হযরত মাসুমা (সা. আ.) ও তাঁর বোনেরা বিবাহ করতে পারেন নি।[২৩]

ইরান সফর, কোমে প্রবেশ ও ইন্তেকাল

তারিখে কোম’ (কোমের ইতিহাস) গ্রন্থের বর্ণনার ভিত্তিতে, হযরত মাসুমা ২০১ হিজরীতে তার ভাই ইমাম রেযা (আ.)-এর সাথে সাক্ষাতের আশায় ইরানের উদ্দেশ্যে মদিনা ত্যাগ করেন।[২৪] ‘জাওহারুল কালাম ফি মাদহিস সাদাতিল আ’লাম’ গ্রন্থ থেকে বিশিষ্ট শিয়া ঐতিহাসিক বাকের শারিফ কারাশি যে বর্ণনাটি উদ্ধৃত করেছেন তার ভিত্তিতে, হযরত মাসুমা (সা. আ.)-এর ইরান সফরের কারণ ছিল তার ভাই ইমাম রেযা (আ.)-এর পাঠানো একটি চিঠি। ঐ চিঠিতে তিনি হযরত মাসুমাকে খোরাসানে তার নিকট যাওয়ার জন্য বলেছিলেন।[২৫] ঐ সময় ইমাম রেযা (আ.) ছিলেন আব্বাসীয় খলিফা মামুনের ওয়ালিয়ে আহ্দ এবং তার বাসস্থান ছিল খোরাসানে। (মদিনা থেকে খোরাসান সফরকালে) পথিমধ্যে অসুস্থ হয়ে হযরত মাসুমা ইন্তেকাল করেন।[২৬] অবশ্য সাইয়্যেদ মুর্তাযা আমেলি’র ভাষ্যমতে, ইরানের সাভে নামক স্থানে হযরত মাসুমাকে বিষ প্রয়োগ করা হয় এবং তাতেই তিনি শহীদ হন।[২৭]]

তাঁর কোমে আসার নেপথ্য কারণ উদ্ঘাটন করতে গিয়ে দু’টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে; প্রথম প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি সাভে’তে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর কাফেলার সঙ্গীদেরকে বলেন তারা যেন তাকে কোমে নিয়ে যায়।[২৮] আর দ্বিতীয় প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, স্বয়ং কোমের জনগণই তাকে এ শহরে আসার আমন্ত্রণ জানায়; কোমে’র ইতিহাস লেখকগণ দ্বিতীয় মতটিকে অধিক সঠিক বলে জ্ঞান করেছেন।[২৯] হযরত মাসুমা (সা. আ.) কোমে মুসা বিন খাযরাজ আশআরি’র বাড়ির আতিথেয়তা গ্রহণের ১৭ দিন পর ইন্তেকাল করেন।[৩০]] তাঁকে তৎকালীন বাবেলান নামক কবরস্থানে -বর্তমানে যেখানে তাঁর মাযার- দাফন করা হয়।[৩১]

শিয়াদের নিকট হযরত মাসুমার মর্যাদা

আশুরার দিনে হযরত মাসুমা’র মাজার প্রাঙ্গনে শোকানুষ্ঠানের চিত্র
হযরত মাসুমা’র মাজারে পাথরের কারুকার্য ও চিত্রকলা। ইমাম রেযা (আ.): যে ব্যক্তি তাঁকে (হযরত মাসুমা) ফজিলত অনুধাবন করে যিয়ারত করবে, তার জন্য রয়েছে বেহেশত।

শিয়া মনীষীগণের নিকট হযরত ফাতেমা মাসুমা বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। তাঁর মর্যাদা ও যিয়ারাতের গুরুত্বের বিষয়ে বিভিন্ন রেওয়ায়েত তারা বর্ণনা করেছেন। আল্লামা মাজলিসী তার বিহারুল আনওয়ার গ্রন্থে ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন, যার ভিত্তিতে [প্রকৃত] সকল শিয়া হযরত মাসুমার শাফায়াতে বেহেশতে প্রবেশ করবে।[৩২] মহান আল্লাহর নিকট তিনি বিশেষ স্থানের অধিকারী হওয়ায় তার যেয়ারত নামাতে তার কাছে শাফাআত কামনা করা হয়।[৩৩][নোট ২]

হিজরী চতুর্দশ শতাব্দির বিশিষ্ট আলেম ও রেজাল শাস্ত্রবিদ মুহাম্মাদ তাকী শুশতারি স্বীয় ‘কামুসুর রিজাল’ গ্রন্থে লিখেছেন: ইমাম কাযেম (আ.)-এর সন্তানদের মাঝে ইমাম রেযা (আ.)-এর পর হযরত মাসুমার সমপর্যায়ে আর কেউ নেই।[৩৪]] শেইখ আব্বাস কুম্মিও তাকে হযরত ইমাম কাযিম (আ.)-এর কন্যাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন।[৩৫] তিনি হযরত মাসুমাকে ঐ সকল ‘ইমাম যাদাহ’দের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন যারা জলিলুল কদর; তার ভাষ্যমতে হযরত মাসুমা ইমাম কাযিম (আ.)-এরই সন্তান এবং বর্তমানে তাঁর মাজার বলে যে স্থানটির প্রসিদ্ধি রয়েছে সেখানেই তাকে দাফন করা হয়েছে।[৩৬]

ইমাম সাদিক (আ.), ইমাম কাযিম (আ.) ও ইমাম জাওয়াদ (আ.) থেকে বর্ণিত বিভিন্ন রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, ইমাম কাযিম (আ.)-এর কন্যা ফাতেমা’কে যেয়ারতকারীর পুরস্কার হল বেহেশত।[৩৭] অবশ্য কিছু কিছু রেওয়ায়েতে এ পুরস্কার তাদের জন্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যারা তার মা’রেফত নিয়ে তাকে যেয়ারত করে।[৩৮]

‘যিন্দেগানীয়ে কারিমেয়ে আহলে বাইত (আ.)’ গ্রন্থের প্রণেতা মাহমুদ আনসারী কুম্মি (মৃত্যু ১৩৭৭ ফার্সি সন) থেকে, তিনি বিশিষ্ট শিয়া আলেম সাইয়্যেদ নাসরুল্লাহ মুস্তাম্বেত (মৃত্যু ১৩৬৪ ফার্সিবর্ষ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হিজরী ৯ম শতাব্দির বিশিষ্ট শিয়া আলেম সালেহ ইবনে আরান্দেস হিল্লি রচিত ‘কাশফুল লাইয়ালি’ -যা হস্ত লিখিত- গ্রন্থে একটি রেওয়ায়েত দেখেছেন যাতে ইমাম কাযিম (আ.) হযরত মাসুমার উদ্দেশ্যে বলেছেন: ((فَداها اَبوها)) ‘তার পিতা তার উপর কোরবান হোক’। ঐ বর্ণনার ভিত্তিতে, ইমাম কাযিম (আ.) বাক্যটি যখন তাঁর অনুপস্থিতিতে হযরত মাসুমা শিয়াদের প্রশ্নের সঠিক জবাব প্রদান করেছিলেন তখন বলেছিলেন। অবশ্য যিন্দেগানীয়ে কারিমেয়ে আহলে বাইত (আ.) গ্রন্থের প্রণেতার অভিমত হল, উল্লেখিত বর্ণনা ছাড়া হাদীসটি তিনি আর কোন হাদীস গ্রন্থে তিনি দেখেন নি।[৩৯]

যিয়ারত নামা

আল্লামা মাজলিসী তার যাদুল মায়াদ, ‘বিহারুল আনওয়ার’ ও ‘তোহফাতুয যায়ের’ গ্রন্থে হযরত ফাতেমা মাসুমার জন্য একটি যিয়ারত নামা ইমাম রেযা (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন।[৪০] অবশ্য তিনি ‘তোহফাতুয যায়ের’ গ্রন্থে যিয়ারত নামাটি উল্লেখ করার পর বলেছেন, যেয়ারতের আসল মতন (টেক্সক্ট) ইমাম রেযা (আ.) থেকে বর্ণিত রেওয়াতের অংশ না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সম্ভবত উলামা তা যোগ করেছেন।[৪১] বলা হয়েছে যে, হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) ও হযরত মাসুমা হলেন এমন দুই মহিয়সী রমনী যাদের সম্পর্কে মা’সুর (যে যিয়ারত নামার সনদ মাসুম ইমাম পর্যন্ত পৌঁছায়) যিয়ারত নামা রয়েছে।[৪২]

হযরত মাসুমার মাজার

প্রথম অবস্থায় হযরত ফাতেমা মাসুমার মাজারের উপর একটি শামিয়ানার ব্যবস্থা করা হয়। অতঃপর তার উপর একটি গম্বুজ তৈরি করা হয়।[৪৩] পর্যায়ক্রমে তাঁর মাজার এতটা সম্প্রসারিত হয়েছে যে, বর্তমানে ইমাম রেযা (আ.)-এর মাযারের পর ইরানের সবচেয়ে বড় ও প্রসিদ্ধ যিয়ারতগাহ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।[৪৪] ফাতেমা মাসুমার মাজার কেন্দ্রীক আস্তানা তাঁর মাজার, বিভিন্ন ভবন, মওকুফাত ও মাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যালয় নিয়ে গঠিত। [৪৫]

তথ্যসূত্র

  1. মাহাল্লাতি, রিয়াহাইনিশ শারিয়াহ, খ. ৫, পৃ. ৩১।
  2. দ্র: মুফিদ, আল-ইরশাদ, খ. ২, পৃ. ২৪৪।
  3. দ্র: ইবনে জাওযি, তাযকিরাতুল খাওয়াছ, পৃ. ৩১৫।
  4. দ্র: দালায়েলুল ইমামাহ, পৃ. ৩০৯।
  5. উস্তাদি, আশনায়ী বা হাযরতা আব্দুল আযিম ওয়া মাসাদেরে শারহে হালে উ, পৃ. ৩০১
  6. উস্তাদি, আশনায়ী বা হাযরতা আব্দুল আযিম ওয়া মাসাদেরে শারহে হালে উ, পৃ. ২৯৭
  7. উস্তাদি, আশনায়ী বা হাযরতা আব্দুল আযিম ওয়া মাসাদেরে শারহে হালে উ, পৃ. ৩০১
  8. মাহাল্লাতি, রিয়াহাইনিশ শারিয়াহ, খ. ৫, পৃ. ৩১ ও ৩২।
  9. শুবাইর, যানজানী, জোরয়ে-ই আয দারিয়া, খ. ২, পৃ. ৫১৯।
  10. উস্তাদি, আশনায়ী বা হাযরতা আব্দুল আযিম ওয়া মাসাদেরে শারহে হালে উ, পৃ. ৩০১
  11. মাহাল্লাতি, রিয়াহাইনিশ শারিয়াহ, খ. ৫, পৃ. ৩১ ও ৩২।
  12. শোরায়ে মারকাযিয়ে তাক্বভিমে মুআসসাসাযে জিওফিযিকে দানেশগাহে তেহরান।
  13. মাহদিপুর, কারিমেয়ে আহলে বাইত (সা. আ.), পৃ. ২৩ ও ৪১; আরও দেখুন, আসগার নেজাদ, নাযারি বার আসামি ওয়া আলকাবে হাযরত ফাতেমেহ মাসুমেহ (সা. আ.)।
  14. মাহদিপুর, কারিমেয়ে আহলে বাইত (সা. আ.), পৃ. ২৯।
  15. মাজলিসী, যাদুল মাআদ, পৃ. ৫৪৭।
  16. মাহদিপুর, কারিমেয়ে আহলে বাইত (সা. আ.), পৃ. ৪১ ও ৪২।
  17. মাহাল্লাতি, রিয়াহাইনিশ শারিয়াহ, খ. ৫, পৃ. ৩১।
  18. দ্র: মাহদিপুর, কারিমেয়ে আহলে বাইত (সা. আ.), পৃ. ১৫০।
  19. মাহদিপুর, কারিমেয়ে আহলে বাইত (সা. আ.), পৃ. ১৫১।
  20. ইয়াকুব, তারিখুল ইয়াকুবি, প্রকাশকাল ১৪১৩ হি., খ. ২, পৃ. ৩৬১।
  21. দ্র: কুলাইনি, কিতাবুল কাফী, খ. ১, পৃ. ৩১৭।
  22. কারাশী, হায়াতুল ইমাম মুসা ইবনি জাফার (আ.), খ. ২, পৃ. ৪৯৭।
  23. হুসাইনি, রাযে আদামে ইযদিভাজে হযরত মাসুমেহ (সা. আ.), পৃ. ১০৩-১০৪।
  24. কুম্মি, তারিখে কুম, তুস, পৃ. ২১৩।
  25. কারাশী, হায়াতুল ইমামির রিযা (আ.), খ. ২, পৃ. ৩৫১।
  26. কুম্মি, তারিখে কুম, তুস, পৃ. ২১৩।
  27. আমেলি, হায়াতুস সিয়াসিয়াতি লিল-ইমাম রিযা (আ.), প্রকাশকাল ১৪০৩ হি., খ. ১, পৃ. ৪২৮।
  28. কুম্মি, তারিখে কুম, তুস, পৃ. ২১৩।
  29. কুম্মি, তারিখে কুম, তুস, পৃ. ২১৩।
  30. কুম্মি, তারিখে কুম, তুস, পৃ. ২১৩।
  31. কুম্মি, তারিখে কুম, তুস, পৃ. ২১৩।
  32. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, খ. ৯৯, পৃ. ২৬৭।
  33. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, খ. ৯৯, পৃ. ২৬৭; মাজলিসী যাদুল মাআদ, পৃ. ৫৪৭-৫৪৮।
  34. শুশতারি, তাওয়ারিখুন নাবী ওয়াল আল, প্রকাশকাল ১৩৯১ হি., পৃ. ৬৫।
  35. কুম্মি, মুনতাহাল আমাল, খ. ২, পৃ. ৩৭৮।
  36. কুম্মি, মাফাতিহুল জিনান, পৃ. ৫৬২।
  37. দ্র: ইবনে কুলাওয়াইহ, কামিলুয যিয়ারাত, পৃ. ৫৩৬; মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, খ. ৯৯, পৃ. ২৬৫-২৬৮।
  38. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, খ. ৯৯ (১০২), পৃ. ২৬৬।
  39. মাহদিপুর, যিন্দেগানীয়ে কারিমেয়ে আহলে বাইত (আ.), পৃ. ৫২-৫৪।
  40. দ্র: মাজলিসী যাদুল মাআদ, পৃ. ৫৪৭-৫৪৮; মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, খ. ৯৯, পৃ. ২৬৬-২৬৭; মাজলিসী তোহফাতুয যায়ের, পৃ. ৪।
  41. মাজলিসী, তোহফাতুয যায়ের, পৃ. ৬৬৬।
  42. মাহদিপুর, যিন্দেগানীয়ে কারিমেয়ে আহলে বাইত (আ.), পৃ. ১২৬।
  43. কুম্মি, তারিখে কোম, তুস, পৃ. ২১৩; সাজ্জাদি, আস্তানায়ে হযরত মাসুমেহ, পৃ. ৩৫৯।
  44. সাজ্জাদি, আস্তানায়ে হযরত মাসুমেহ, পৃ. ৩৫৮।
  45. সাজ্জাদি, আস্তানায়ে হযরত মাসুমেহ, পৃ. ৩৫৮।

গ্রন্থপঞ্জি

  • ইবনে জাওযি, তাযকিরাতুল খাওয়াছ, কোম, মানশুরাতুশ শারীফ আর-রাযী, ১৪১৮ হি.।
  • ইবনে কুলাওয়াইহ, জাফর ইবনে মুহাম্মাদ, কামেলুয যিয়ারাত, নাজাফ, দারুল মুর্তাযাউয়িয়্যাহ, প্রথম সংস্করণ, ১৩৫৬ ফার্সি সন।
  • ওস্তাদি, রেযা, «آشنایی با حضرت عبدالعظیم و مصادر شرح‌حال او», নূরে ইলম, সংখ্যা ৫০ ও ৫১।
  • আসগারি নেযাদ, মুহাম্মাদ, «نظری بر اسامی و القاب حضرت فاطمه معصومه(س)», ফারহাঙ্গে কাউসার, সংখ্যা ৩৫, ১৩৭৮ ফার্সি সন।
  • «اکران فیلم سینمایی «اخت‌الرضا» در سینماهای سراسر کشور», মেহের নিউজ, বিষয়বস্তু সন্নিবেশের তারিখ: ১৮ মেহের ১৪০২ ফার্সি সন, দেখার তারিখ: ২০ মেহের ১৪০২ ফার্সি সন।
  • «جایگاه حضرت معصومه سلام الله علیها و لزوم معرفت به آن حضرت», বুনিয়াদে আসরা পোর্টাল, বিষয়বস্তু সন্নিবেশের তারিখ: ১৬ অযার ১৩৯৮ ফার্সি সন, দেখার তারিখ: ৩ অবান ১৪০৩ ফার্সি সন।
  • হুসাইনি, সাইয়্যেদ জাওয়াদ, «راز عدم ازدواج حضرت معصومه(ع)», ফারহাঙ্গে কাউসার, সংখ্যা ৬৯, ফারভারদিন ১৩৮৬ ফার্সি সন।
  • সাজ্জাদি, “অস্তানে হযরত মাসুমা”, দায়েরাতুল মাআরেফে বুযুর্গে ইসলামী, খণ্ড ১, তেহরান, মারকাযে দায়েরাতুল মাআরেফ বুযুর্গে ইসলামী, ১৩৬৭ ফার্সি সন।
  • শুবাইরি যানজানি, সাইয়্যেদ মূসা, জরয়েয়ী আয দারিয়া, কোম, মুআসসেয়ে কিতাব শেনাছিয়ে শিয়া, কোম, ১৩৯৪ ফার্সি সন।
  • শারাফাত, আমীর হুসাইন, «کنگره بزرگداشت حضرت فاطمه معصومه(س) و مکانت فرهنگی قم», ওয়াকফে মিরাসে জাভিদ, সংখ্যা ৫২, ১৩৮৪ ফার্সি সন।
  • শুরায়ে মারকাযে তাকভীমে মুআসসেসেয়ে যাঊ-ফিযিকে দানেশগাহে তেহরান, তাকভীমে রাসমিয়ে কেশভার ১৩৯৮ ফার্সি সন।
  • শুশতারি, মুহাম্মাদ তাকী, তাওয়ারিখুন নাবি ওয়াল আল, তেহরান, ১৩৯১ হি.।
  • শেখ মুফিদ, মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে নু'মান, আল-আরশাদ ফি মা’রিফাতি হুজাজিল্লাহি আলাল ইবাদ, বৈরুত, দারুল মুফিদ, ১৪১৪ হি.।
  • তাবারি, মুহাম্মাদ ইবনে জারীর, দালায়েলুল ইমামাহ, কোম, ১৪১৩ হি.।
  • আমেলি, সাইয়্যেদ জাফর মুর্তাযা, হায়াতুস সিয়াসিয়াতি লিল ইমাম রেযা (আ.), কোম, জামেয়ে মুদাররেসীন হাওযা ইলমিয়া, ১৪০৩ হি.।
  • ফাকীহী, আলী আসগার, তারিখে মাযহাবিয়ে কোম, কোম, যায়ের, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৩৭৮ ফার্সি সন।
  • কারাশী, বাকের শরীফ, হায়াতুল ইমামির রিযা (আ.), কোম, সাঈদ ইবনে জুবাইর, ১৩৮০ ফার্সি সন।
  • কারাশী, বাকের শরীফ, হায়াতুল ইমামি মুসা ইবনে জাফার দিরাসাহ ওয়া তাহলিল, বৈরুত, দারুল বালাগাহ, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪১৩ হি.।
  • কুম্মি, হাসান ইবনে মুহাম্মাদ, তারিখে কোম, তাসহিহ: জালালুদ্দীন তেহরানি, তেহরান, তুস, তারিখ অজ্ঞাত।
  • কুম্মি, শেইখ আব্বাস, মুন্তাহাল আমাল ফি তাওরিখিন নাবী ওয়াল আল, কোম, জামেয়ে মুদাররেসীন, ১৪২২ হি.।
  • কুলাইনি, মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকুব, আল-কাফি, তাসহিহ: আলী আকবার গাফ্ফারী ও মুহাম্মাদ আখুন্দি, তেহরান, দারুল কুতুবিল ইসলামীয়া, ১৪০৭ হি.।
  • কনগ্রেয়ে বুযুর্গদাশতে হযরত ফাতেমা মাসুমা, মাজমুয়ে মাকালাত, কোম, যায়ের, প্রথম সংস্করণ, ১৩৮৪ ফার্সি সন।
  • মাজলিসী, মুহাম্মাদ বাকের, বিহারুল আনওয়ার, তাসহিহ: গবেষকদের একটি দল, বৈরুত, দারু ইহিয়াতি তুরাসিল আরাবি, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪০৩ হি.।
  • মাজলিসী, মুহাম্মাদ বাকের, বিহারুল আনওয়ার, যাদুল মাআদ, তাসহিহ: আলাউদ্দীন আ’লামি, বৈরুত, মুআসসেসেয়ে আ’লামি লিল মাতবুআত, ১৪২৩ হি.।
  • মাজলিসী, মুহাম্মাদ বাকের, তোহফাতুয যায়ের, তাহকিক ও তাসহিহ: মুআসসেসেয়ে ইমাম হাদী, কোম, মুআসসেসেয়ে ইমাম হাদী, প্রথম সংস্করণ, ১৩৮৬ ফার্সি সন।
  • মাহাল্লাতি, যাবীহুল্লাহ, রিয়াহাইন আশ-শারিয়াহ, দারুল কুতুবিল ইসলামীয়া, তেহরান, তারিখ অজ্ঞাত।
  • মাহদিপুর, আলী আকবার, যেন্দেগানীয়ে কারিমেয়ে আহলে বাইত (আ.), কোম, নাশরে হাযেক্ব, ১৩৮৪ ফার্সি সন।
  • মাহদিপুর, আলী আকবার, কারিমেয়ে আহলে বাইত (সা.আ.), কোম, নাশরে হাযেক্ব, প্রথম সংস্করণ, ১৩৭৪ ফার্সি সন।
  • ইয়াকুবি, আহমাদ ইবনে ইয়াকুব, তারিখুল ইয়াকুবি, তাহকিক: আব্দুল আমীর মাহনা, বৈরুত, মুআস্সাসাতুল আ’লামি লিল মাতবুআত, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৩ হি.।