মুহসিন বিন আলী (আ.)

wikishia থেকে

মুহসিন বিন আলী (আ.) (আরবি: مُحْسِن بن علی(ع)) হযরত আলী (আ.) এবং হযরত ফাতেমা (সা.আ.)-এর সন্তান। ইমাম আলী (আ.)-এর বাইয়াত গ্রহণ করার জন্য হযরত ফাতেমার (সা.আ.) গৃহে আবুবকরের খিলাফতের সমর্থকদের পক্ষ থেকে করা হামলার ঘটনায় গর্ভে থাকাবস্থায় তিনি শাহাদাতবরণ করেন। সুনির্দিষ্টভাবে তার মৃত্যুর তারিখের উল্লেখ নেই। ইসলামী ইতিহাসের বিশিষ্ট গবেষক মুহাম্মদ হাদী ইউসূফী গোরাভী (জন্ম: ১৩২৭ ফার্সি সন) সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপনপূর্বক, হযরত ফাতেমার ঘরে হামলা এবং হযরত মুহসিনের মৃত্যুকে মহানবির (স.) ওফাতের প্রায় পঞ্চাশ দিন পরের ঘটনা বলে জ্ঞান করেন। যাইহোক, কেউ কেউ রবিউল আউয়াল মাসের প্রথম দিনগুলোকে আইয়্যামে মুহসিনিয়া নাম দিয়েছেন এবং এই দিনগুলোতে আযাদারি (শোকানুষ্ঠান) পালন করেন। অতীতে শিয়া সমাজে এমন কার্যক্রম না থাকা এবং শিয়াদের প্রধান কর্মসূচী গুরুত্ব হারানোর কারণে কিছু কিছু মারজায়ে তাক্বলীদ কর্তৃক এই কাজ অনুমোদিত হয়নি। হাদীস মতে, তার জন্য এই নাম মহানবি (স.) রেখেছিলেন। আরবি ও ফার্সি ভাষাতে মুহসিন বিন আলী সম্পর্কে বই লেখা হয়েছে।

ইমাম আলী (আ.) ও ফাতেমা (সা.আ.)-এর সন্তান

শিয়া[১] ও সুন্নিদের[২] বিভিন্ন সূত্রে, মুহসিনকে হযরত ফাতেমা (সা.আ.) এবং ইমাম আলীর (আ.) সন্তান হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। রেওয়ায়েত অনুসারে, তার এই নাম স্বয়ং রাসুল (স.) রেখেছেন।[৩] ইবনে হাজার আসকালানীর (মৃত্যু: ৮৫২ হি.) ভাষ্যমতে, এই শব্দটিতে সিন তাশদীদ সহকারে (محسّن) পড়তে হয়।

শাহাদাত

মুহসিনের মৃত্যু কিভাবে হয়েছে সে ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। শিয়া সূত্রগুলোতে তার শাহাদাতের কারণ হিসেবে গর্ভপাতকে জ্ঞান করা হয়েছে।[৫] সুন্নি সূত্রগুলোতে তার মৃত্যু সম্পর্কে «مات صغیراً»,[৬] «مات و هو صغیر»[৭] অথবা এই ধরনের[৮] শব্দগুচ্ছের প্রতি ইশারা করা হয়েছে যার মাধ্যমে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বিশিষ্ট সুন্নি আলেম ইবনে হাযম আন্দালুসির (মৃত্যু:৪৫৪ হি.) মতে, তিনি জন্মের পরপরই মৃত্যুবরণ করেন।[৯] আল-ইখতেছাছ গ্রন্থে ইমাম সাদিক (আ.) হতে বর্ণিত রেওয়ায়েত অনুসারে, ফাদাক কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে ফাতেমা (সা.আ.) প্রতিবাদের ঘটনায় মুহসিনের গর্ভেই মারা যান।[১০] তবে কিছু কিছু ঐতিহাসিক সূত্রে, মুহসিনের মৃত্যুকে হযরত ফাতেমা (সা.আ.)-এর গৃহে হামলার ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়েছে।[১১] মুহাম্মদ বিন আব্দুল করিম শাহরেস্তানি (মৃত্যু: ৫৪৮ হি.) তার মিলাল ওয়ার নিহাল গ্রন্থে মু'তাযালি সম্প্রদায়ের অভিজ্ঞ আলেম সায়ার আল-মারুফ ওরফে নাজ্জাম-ই-মু'তাযালির (মৃত্যু: ২২১ হি.) উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, হযরত ফাতেমার (সা.আ.) পাঁজরে উমর বিন খাত্তাবের আঘাতে গর্ভেই মুহসিনের মৃত্যু হয়।[১২] শারহে নাহযুল বালাগার রচয়িতা ইবনে আবিল হাদীদ মু'তাযালিও (মৃত্যু: ৬৫৬ হি.) তার ওস্তাদ আবু জাফর নাকীবের সাথে মুনাযেরায়, মুহসিনের গর্ভপাতকে আলীর (আ.) কাছ থেকে বাইয়াত নেওয়ার ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত বলে ইশার করেন।[১৩] সুন্নি সূত্রে বর্ণিত কিছু কিছু রেওয়ায়েত অনুসারে, মহানবি (স.) জীবিত থাকাকালীন সময়ে মুহসিনের জন্ম হয়েছিল।[১৪] কামেলুয যিয়ারত গ্রন্থে বর্ণিত রেওয়ায়েত অনুসারে, মুহসিন হলেন রাসুল (সা.)-এর সন্তানদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যার মামলাটির বিচার কিয়ামতের দিন আগে হবে এবং হত্যাকারিকে শাস্তি দেওয়া হবে।[১৫]

শাহাদাতের তারিখ

ফাতেমার (সা.আ.) গৃহে হামলার ঘটনায় মুহসিন শহীদ হন।[১৬] বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ মুহাম্মাদ হাদি ইউসূফি গোরাভী সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করে মনে করেন, হযরত ফাতেমার (সা.আ.) গৃহে আক্রমণের ঘটনাটি সাকিফা ও আবু বকরের প্রতি বাইয়াতের ঘটনার পরপরই ঘটেনি, বরং রাসুলের (সা.) মৃত্যুর প্রায় পঞ্চাশ দিন অথবা তারও বেশি সময় পরে ঘটেছে।[১৭]এমতাবস্থায়, কেউ কেউ রবিউল আওয়ালের প্রথমদিকে আইয়্যামে মুহসিনিয়া নামকরণ করে এবং আযাদারি পালন করে থাকে।[১৮] বিশিষ্ট মারজায়ে তাক্বলীদ নাসের মাকারেম শিরাজীর (জন্ম: ১৩০৫ ফার্সি সন) মতে, আইয়্যামে মুহসিনিয়ার আযাদারি পালন না হওয়াই উত্তম, কারণ এই শোকানুষ্ঠান অতীতে শিয়াদের ছিল না এবং এটার কারণে শিয়াদের আসল কর্মসূচী গুরুত্ব হারাচ্ছে।[১৯] কাজী আব্দুল জব্বার মু'তাযালি (মৃত্যু: ৪১৫ হি.) মিশর, দামেস্ক, বাগদাদ, রামালা, আক্কা, সূর, আসকালান এবং জাবলুল বাসমাক অঞ্চলের কিছু সংখ্যক শিয়া হযরত ফাতেমা (সা.আ.) এবং তাঁর সন্তান মুহসিনের জন্য আযাদারি পালন করতেন।[২০]

 ==দাফনের স্থান==

ঐতিহাসিক সূত্রগুলোতে মুহসিনের দাফনের স্থান সম্পর্কে ইশারা করা হয়নি। তবে, জামে আল-নূরাইন গ্রন্থে বর্ণিত রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, ইমাম আলী (আ.) হযরত যাহরার (সা. আ.) কানিয ফিজ্জাকে ঘরের ভিতর মুহসিনের লাশ দাফন করতে বলেন।

মুহসিন বিন আলী সম্পর্কিত গ্রন্থাবলী

মুহসিন বিন আলী সম্পর্কে আরবি ও ফার্সি ভাষায় কয়েকটি বই লেখা হয়েছে:

  • সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ মাহদি মুসাভী খেরসানের লেখা 'আল-মুহসিনুস সিবত মওলুদুন আম সিকতুন' বইটি 'মারকাযুল আবহাস আল-আকায়েদিয়্যাহ' ১৪৩০ হিজরিতে আরবি ভাষায় ৬২৬ পৃষ্ঠা আকারে প্রকাশ করেছে।[২২]
  • "গঞ্চে ইয়াস; মুহসিন বিন আলী", লেখক মাহদি ফাতেমী, গ্রন্থটি আরবি ও ফার্সি ভাষায় ১৩৮৬ ফার্সি সনে প্রকাশিত হয়েছে।[২৪]
  • এছাড়াও হযরত মুহসিন সম্পর্কে রচিত অন্যান্য গ্রন্থসমূহ হচ্ছে, আলী আসগর রেযওয়ানির লেখা "মহসিন বিন আলী"[২৫], আব্দুল মুহসিন আব্দুয যাহরা আল-কাতিফির লেখা "আল-মুহসিন বিন ফাতেমাতুয যাহরা"[২৬] এবং সাদিক দাভারী'র লেখা "মুসাফেরে দারিয়া হযরত মুহসিন বিন আলী"[২৭]।

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি