মুবাহালা’র আয়াত

wikishia থেকে
নিবন্ধটি মুবাহালা’র আয়াত সংশ্লিষ্ট; মুবাহালা’র মূল ঘটনা সম্পর্কে জানতে দেখুন ‘নাজরানের খ্রিষ্টানদের সাথে মহানবির (স.) মুবাহালাহ’ নিবন্ধটি।

মুবাহালা’র আয়াত (আরবি: آية المباهلة, সূরা আলে ইমরান : ৬১); নাজরানের খ্রিষ্টানদের সাথে মহানবির (আ.) মুবাহালা’র ঘটনা সংশ্লিষ্ট; যা হযরত ঈসার (আ.) মর্যাদা ও স্থান প্রসঙ্গে দু’পক্ষের মাঝে মতভেদ সৃষ্টির পর সংঘটিত হয়। শিয়া মুফাসসিরগণের সকলে এবং আহলে সুন্নতের বেশীরভাগ মুফাসসির আয়াতটিকে মহানবির (স.) সত্যপন্থী হওয়ার প্রমাণ এবং আহলে বাইতের (আ.) ফজিলত হিসেবে গন্য করেছেন। তাদের ভাষ্য হল, আয়াতে (اَبْناءَنا) ‘আমাদের সন্তানদের’ বলতে হাসানহুসাইন (আ.), (نِساءَنا); ‘আমাদের নারীদের’ বলতে ফাতিমা (সা. আ.) এবং (اَنْفُسَنا); ‘আমাদের নিজেদের’ বলতে হযরত আলীকে (আ.) বোঝানো হয়েছে।

ইমাম আলীর (আ.) শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে শিয়া ইমামগণ (আ.)সাহাবাগণের কেউ কেউ মুবাহালা’র আয়াতকে দলীল হিসেবে এনেছেন। একইভাবে একে মুবাহালাহ সঠিক হওয়ার স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে উত্থাপন করেছেন। আবার অনেকে নারীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে উপস্থিতির বৈধতার প্রমাণ হিসেবে দেখেছেন।

আয়াত ও অনুবাদ

فَمَنْ حَاجَّک فِیهِ مِن بَعْدِ مَا جَاءَک مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَکمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَکمْ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَکمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَتَ الله عَلَی الْکاذِبِینَ

তোমার নিকট জ্ঞান আসার পর যে ব্যক্তি তোমার সাথে (ঈসার সম্বন্ধে) বিতর্ক করবে তাকে বল, ‘এসো, আমাদের পুত্রদেরকে এবং তোমাদের পুত্রদেরকে আর আমাদের নারীদেরকে এবং তোমাদের নারীদেরকে এবং আমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের নিজেদেরকে আহবান করি, অতঃপর আমরা মুবাহলা করি আর মিথ্যুকদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি।’ (আলে ইমরান : ৬১)

অবস্থান

মুবাহালা’র আয়াত; আসহাবে কিসা’র (মহানবি (স.), আলী (আ.), ফাতিমা (সা. আ.), হাসান (আ.) ও হুসাইন আ.) ফজিলতে প্রমাণে উল্লিখিত আয়াতগুলোর অন্যতম।[১] বিশিষ্ট সুন্নি মুফাসসির আব্দুল্লাহ ইবনে উমার বাইদ্বাভির মতে, আয়াতটি নবুয়্যতের দাবীর স্বপক্ষে মহানবির (স.) সত্যপন্থী হওয়া এবং এ ঘটনায় তাঁর সাথীদের ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ স্বরূপ।[২] সুন্নি মুফাসসির জারুল্লাহ যিমাখশারি (মৃত্যু ৫৩৮ হি.), আয়াতটিকে আসহাবে কিসা’র ফযিলত প্রমাণে সবচেয়ে শক্তিশালী দলীল হিসেব উল্লেখ করেছেন।[৩] বিশিষ্ট শিয়া মুফাসসির ফাযল ইবনে হাসান তাবারসি (মৃত্যু ৪৬৯ হি.) দৃষ্টিতে আয়াতটি বিশ্বের সকল নারীর উপর হযরত ফাতিমা যাহরার (সা. আ.) শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি নির্দেশক।[৪]

শানে নুযুল

মুবাহালা’র আয়াত, নাজরানের খ্রিষ্টানদের জবাবে অবতীর্ণ হয়।[৫] মহানবি (স.) কর্তৃক নবুয়্যতের দাবী সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে নাজরানের খ্রিষ্টানদের একটি দল মদিনায় পৌঁছায়। সাক্ষাতের শুরুতে নিজের পরিচয় প্রদানের পর মহানবি (স.) হযরত ঈসাকে (আ.) আল্লাহর বান্দা বলে আখ্যায়িত করলেন। পক্ষান্তরে খ্রিষ্টানরা পিতা ছাড়াই হযরত ঈসার (আ.) জন্মগ্রহণকে তাঁর প্রভুত্ব ও ইলাহ হওয়ার দলীল বলে দাবী করলো।[৬] নাজরানের খ্রিষ্টানরা তাদের দাবীতে অটল থাকায় মহানবি (স.) তাদেরকে মুবাহালা’র আহবান জানালেন এবং তারাও তা গ্রহণ করে নিল। নির্ধারিত দিনে মহানবি (স.) আলী (আ.), ফাতিমা ও হাসানাইনকে (হাসান ও হুসাইন) নিয়ে মুহাবাহালার মাঠে উপস্থিত হলেন; কিন্তু খ্রিষ্টানরা এ বিষয়ে তাঁর (স.) দৃঢ় প্রত্যয় এবং তাঁর সাথে আসা ব্যক্তিদেরকে দেখে তাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের পরামর্শে মুবাহালাহ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তারা মহানবির (স.) সাথে এ মর্মে চুক্তি করলো যে, জিজিয়া কর প্রদান করে তারা নিজেদের ধর্মে অবশিষ্ট থাকবে; মহানবিও (স.) তা গ্রহণ করে নিলেন।[৭]

তাফসীর

শিয়া কালাম শাস্ত্রবিদ কাজী নূরুল্লাহ শুশতারির ভাষ্যানুযায়ী, মুফাসসিরগণের মাঝে এ বিষয়ে মতৈক্য রয়েছে যে, আয়াতে (اَبْناءَنا) ‘আমাদের সন্তানদের’ বলতে হাসানহুসাইন (আ.), (نِساءَنا) ‘আমাদের নারীদের’ বলতে ফাতিমা (সা. আ.) এবং (اَنْفُسَنا) ‘আমাদের নিজেদের’ বলতে হযরত আলীকে (আ.) বোঝানো হয়েছে।[৮] যে সকল রেওয়ায়েতে মুবাহালা’র আয়াতটি আলে আবা’র শানে অবতীর্ণ হয়েছে বলে উল্লেখিত হয়েছে সেগুলোকে আল্লামা মাজলিসী মুতাওয়াতির বলে জ্ঞান করেছেন।[৯] ইহকাকুল হাক্ব গ্রন্থে (১০১৪ হিজরীতে রচিত) আহলে সুন্নতের এমন ৬০টি গ্রন্থের নাম উল্লেখিত হয়েছে যেগুলোতে বলা হয়েছে যে, মুবাহালা’র আয়াত তাঁদের (আলে আবা) সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে;[১০] যেমন- যিমাখশারি রচিত কাশশাফ, [১১] ফাখরে রাযি রচিত ‘আত-তাফসিরুল কাবির’[১২] এবং আব্দুল্লাহ ইবনে উমার বাইদ্বাভি রচিত ‘আনওয়ারুত তানযিল ওয়া আসরারুত তা’ভিল’ ইত্যাদি।[১৩]

আয়াতে (اَبْناءَنا) ‘আমাদের সন্তানদের’, (نِساءَنا) ‘আমাদের নারীদের’ এবং (اَنْفُسَنا) ‘আমাদের নিজেদের’ সবকটি শব্দই বহুবচন আকারে এসেছে অথচ শব্দের বাহ্যিক দৃষ্টান্তগুলো হয় দ্বিবচন অথবা একবচন, -এ সম্পর্কে শিয়া মুফাসসিরগণের ভাষ্য হল:

  1. আয়াতের শানে নুযুল এ তাফসির সঠিক হওয়ার পক্ষে অন্যতম প্রমাণ; কেননা মুফাসসিরগণ সর্বসম্মতভাবে স্বীকার করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল (স.) আলী, ফাতিমা, হাসানহুসাইনকে ব্যতীত আর কাউকে মুবাহালা’র স্থানে নিয়ে যান নি।[১৪]
  2. বিভিন্ন চুক্তির শব্দগুলো কখনো কখনো বহুবচন আকারে আনা হয়; যাতে ঐ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় চুক্তির আওতায় আসে; কিন্তু বাস্তবায়নের সময় হয়তবা তা কোন এক নির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। আর দৃষ্টান্তের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ের গণ্ডিবদ্ধ হওয়া, মূল বিষয়টি সার্বিক (কুল্লি) ও সাধারণ (আম) হওয়ার সাথে সাংঘর্ষিক নয়। যেমন, চুক্তিপত্রে লেখা হয় যে, চুক্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব এতে স্বাক্ষরকারীগণ এবং তাদের সন্তানদের; অথচ চুক্তির এক পক্ষ এক বা দুই সন্তানের অধিকারী।[১৫]
  3. একটি দৃষ্টান্তের ক্ষেত্রে বহুবচন নির্দেশক শব্দের ব্যবহার পবিত্র কুরআনেও পরিলক্ষিত হয়। যেমন ‘যিহারের (ظِهار) আয়াত’।[১৬] যিহারের আয়াত বহুবচন শব্দের সমন্বয়ে (الَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنكُم مِّن نِّسَائِهِم) অবতীর্ণ হয়েছে, অথচ এর শানে নুযুল এক ব্যক্তি সম্পর্কে।[১৭]

আয়াতটিকে প্রমাণ হিসেবে আনয়ন

বিভিন্ন বর্ণনার ভিত্তিতে শিয়া ইমামগণ (আ.) ও সাহাবাগণের অনেকে ইমাম আলীর (আ.) শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে মুবাহালা’র আয়াতটিকে উপস্থাপন করেছেন। এ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি নমুনা নিম্নে উল্লেখ করা হল:

সাআদ ইবনে আবি ওয়াকাস

আমের ইবনে সাআদ ইবনে আবি ওয়াকাস তার পিতা সাআদ ইবনে আবি ওয়াকাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে, সাআদের উদ্দেশ্যে মুয়াবিয়া বললো: কেন তুমি আলীকে গালি দাও না?

উত্তরে সাআদ বললেন: যতদিন আলীর সম্পর্কে ৩টি বিষয় আমার স্মরণে থাকবে ততদিন তাকে আমি গালি দেব না; যদি ঐ ৩টির যেকোন একটি আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হত তবে তা আমার কাছে লাল পশম বিশিষ্ট উটের মালিক হওয়া অপেক্ষা অধিক প্রিয় হত; সেগুলোর একটি হল, মুবাহালা’র আয়াত অবতীর্ণ হলে আল্লাহর রাসূল (স.) আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইনকে (আলাইহিমুস সালাম) ডেকে বললেন: (اَللهُمَّ هؤلاءِ اَهلُ بَیتی) হে আল্লাহ্ এরাই আমার আহলে বাইত।[১৮]

ইমাম কাযিম (আ.)

আব্বাসীয় খলিফা হারুন ইমাম কাযিমকে (আ.) বললো: কোন দলীলের ভিত্তিতে আপনারা নিজেদেরকে রাসূলের (স.) বংশধর বলে দাবী করেন? আল্লাহর রাসূলের (স.) তো কোন বংশধর নেই; কেননা বংশ শুধুমাত্র পুত্র সন্তানের মাধ্যমে অব্যাহত থাকে মেয়ে সন্তানের মাধ্যমে নয়; আর আপনারা তো তার কন্যার সন্তান? ইমাম কাযিম (আ.) যে উত্তর প্রদান করেছিলেন, তার একাংশে তিনি মুবাহালার আয়াত তেলাওয়াত করে বলেন: কেউ একথা বলেনি যে, মুবাহালা’র সময় আল্লাহর রাসূল (স.) আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন ছাড়া অন্য কাউকে সাথে নিয়েছিলেন। অতএব, ‘আমাদের সন্তানদের’ এর অর্থ হল হাসান ও হুসাইন, আমাদের নারীদের’ এর অর্থ হল ফাতিমা এবং আমাদের নিজেদের’কে এর অর্থ হল আলী ইবনে আবি তালিব।[১৯]

ইমাম রেজা (আ.)

শেইখ মুফিদ থেকে বর্ণিত একটি বর্ণনার ভিত্তিতে, আব্বাসি খলিফা মা’মুন ইমাম রেজাকে (আ.) অনুরোধ করলো, পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত ইমাম আলীর (আ.) সবচেয়ে বড় ফজিলত বর্ণনা করার জন্য। ইমাম রেজা (আ.) তার উত্তরে মুবাহালা’র আয়াত তেলাওয়াত করেন।[২০] মা’মুন বললো: মহান আল্লাহ্ এ আয়াতে নারী ও সন্তান শব্দদ্বয়কে বহুবচন আকারে এনেছেন, অথচ তিনি (স.) দুই পুত্র এবং নিজের একমাত্র কন্যাকে সাথে নিয়েছিলেন। আর এখানে নফস (নিজে)-কে আমন্ত্রণ জানানোর অর্থ হল স্বয়ং পয়গম্বর নিজেই। এমতাবস্থায় এটি ইমাম আলীর (আ.) কোন ফজিলত হিসেব গন্য হবে না। ইমাম রেজা (আ.) তার উত্তরে বললেন: যা কিছু বললে তা সঠিক নয়; কেননা আমন্ত্রণকারী নিজেকে নয় বরং অন্য কাউকে আমন্ত্রণ জানায়; যেভাবে নির্দেশ দাতা নিজেকে নয় বরং অন্য কাউকে নির্দেশ প্রদান করে। আর বাস্তবিক অর্থে কেউ নিজেকে আমন্ত্রণ জানায় না, যেভাবে বাস্তবিক অর্থে কেউ নিজেকে কোন কিছু করার জন্য নির্দেশ দিতে পারে না। আল্লাহর রাসূল (স.) মুবাহালা’র ঘটনায় ইমাম আলী (আ.) ব্যতীত অপর কাউকে আমন্ত্রণ জানান নি। অতএব, এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, তিনি ছিলেন সেই ‘নাফস’ যা মহান আল্লাহ্ বোঝাতে চেয়েছেন এবং এ বিষয়ক হুকুম ও নির্দেশ তিনি পবিত্র কুরআনে এনেছেন।[২১]

ফিকহি বিষয়ে আয়াতের প্রয়োগ

সাম্প্রতিককালের কিছু গবেষক ও মুফাসসির মুবাহালা’র আয়াত থেকে ফিকহি কিছু বিষয় হস্তগত করেছেন, যেমন:

রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়াদিতে নারীদের অংশগ্রহণের বৈধতা : বিষয়টি (نساءَنا) শব্দটি থেকে এবং মুবাহালা’র ঘটনায় হযরত ফাতিমার (সা. আ.) উপস্থিত হওয়া থেকে গৃহীত হয়েছে।[২২] বিশিষ্ট শিয়া মুফাসসির সাইয়্যেদ আব্দুল আ’লা সাবযেভারি’র (মৃত্যুকাল ১৪১৪ হি.) ভাষ্যমতে, মুবাহালা’র আয়াতে (نساءَنا) শব্দটির ব্যবহার থেকে বেশ কিছু বিষয় উন্মোচিত হয়; ধর্ম সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিতে নারীদের অংশগ্রহণ সেগুলোর অন্যতম।[২৩] রাশিদ রেজা’র ভাষ্যানুযায়ী, মুবাহালা’র আয়াতে ধর্ম সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংগ্রামের ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণের নির্দেশ রয়েছে।[২৪] আর এ নির্দেশের ভিত্তিতে সাধারণ ও গণ কর্মসূচীতে নারী ও পুরুষ একই অবস্থানে অবস্থান করছে। তবে যুদ্ধের মত বিষয়গুলোকে আলাদা করা হয়েছে।[২৫]

মুবাহালা’র বৈধতা: ‘আল-গাফুরি’ তার এক প্রবন্ধে আয়াতে মুবাহালা’কে দলীল হিসেবে এনে ইসলাম ধর্মে মুবাহালা’র বৈধতা প্রমাণ করেছেন।[২৬] তিনি নিজের দাবীর স্বপক্ষে, মুবাহালা’র পরামর্শ অথবা কিভাবে মুবাহালাহ করতে হয় এ প্রসঙ্গে নিষ্পাপ ইমামগণের (আ.) প্রশিক্ষণের বেশ ক’টি নমুনা প্রমাণ হিসেবে এনেছেন। যেমন, ইমাম হুসাইনের (আ.) সাথী বুরাইর ইবনে খুদ্বাইর হামদানি আশুরার দিন, উমার ইবনে সাআদ বাহিনীর সেনা উমার ইবনে সাঈদকে মুবাহালা’র আমন্ত্রণ জানান[২৭] এবং ইমাম হুসাইন (আ.) তাকে এ কাজে নিষেধ করেন নি।[২৮]

তাফসির-এ নেমুনে’তে উল্লেখিত হয়েছে যে, যদিও আয়াতে মুবাহালায় আহবান জানানোর বিষয়টি শুধু মহানবির (স.) জন্য নির্দিষ্ট; কিন্তু মুবাহালা’র আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি বৈধ এবং একটি সাধারণ বিধান।[২৯]

জান ও সম্পদ দিয়ে ইসলাম ধর্ম রক্ষার বৈধতা :[৩০] আব্দুল আ’লা সাবজেভারি তার তাফসিরে মাওয়াহেবুর রাহমান গ্রন্থে মুবাহালা’র আয়াত থেকে যে ক’টি বিষয় উন্মোচন করেছেন সেগুলোর একটি হল, সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে চেষ্টা চালানো এবং সত্যকে সমর্থন করা প্রতিটি মানুষের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত; একইভাবে এ পথে নিজের জীবন, সম্পদ ও পরিবারকে উৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুত থাকা।[৩১]

তথ্যসূত্র

  1. দ্র: তাবারসি, মাজমাউল বায়ান, ১৩৭২ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৭৬৪; মুযাফফার, দালায়েলুস সিদক, ১৪২২ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৪০৩-৪০৪।
  2. বাইদ্বাভি, আনওয়ারুত তানযীল ওয়া আসরারুত তা’ভীল, ১৪১৮ হি., খণ্ড ২, ‍পৃ. ২১।
  3. যিমাখশারি, আল-কাশশাফ, ১৪১৫ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩৭০।
  4. তাবারসি, মাজমাউল বায়ান, ১৩৭২ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৭৪৬।
  5. তাবারসি, মাজমাউল বায়ান, ১৩৭২ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৭৬২।
  6. মাকারেম শিরাজি, তাফসিরে নেমুনে, ১৩৭৪ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৫৭৫।
  7. তাবারসি, মাজমাউল বায়ান, ১৩৭২ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৭৬২।
  8. মারআশি, ইহকাকুল হাক্ব, ১৪০৯ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ৪৬।
  9. মাজলিসী, হাক্ব আল-ইয়াকিন, ইন্তেশারাতে ইসলামিয়া, খণ্ড ১, পৃ. ৬৭।
  10. দ্র: মারআশি, ইহকাকুল হাক্ক, ১৪০৯ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ৪৬-৭২।
  11. যিমাখশারি, আল-কাশশাফ, ১৪১৫ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩৭০।
  12. ফাখরে রাযি, তাফসিরুল কাবির, ১৪২০ হি., খণ্ড ৮, ‍পৃ. ২৪৭।
  13. বাইদ্বাভি, আনওয়ারুত তানযিল ওয়া আসরারুত তা’ভিল, ১৪১৮ হি., খণ্ড ২, ‍পৃ. ২১।
  14. দ্র: তাবারসি, মাজমাউল বায়ান, ১৩৭২ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৭৬৩; তাবাতাবায়ী, আল-মিযান, ১৩৫১-১৩৫২, খণ্ড ৩, পৃ. ২২৩; মাকারেম শিরাজি, তাফসিরে নেমুনে, ১৩৭৪ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৫৮৬।
  15. মাকারেম শিরাজি, তাফসিরে নেমুনে, ১৩৭৪ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৫৮৬-৫৮৭।
  16. দ্র: তাবাতাবায়ী, আল-মিযান, ১৩৫১-১৩৫২, খণ্ড ৩, পৃ. ২২৩।
  17. দ্র: তাবাতাবায়ী, আল-মিযান, ১৩৫১-১৩৫২, খণ্ড ৩, পৃ. ২২৩-২২৪।
  18. দ্র: তাবাতাবায়ী, আল-মিযান, ১৩৫১/১৩৫২, খণ্ড ৩, পৃ. ২৩২।
  19. তাবাতাবায়ী, আল-মিযান, ১৩৫১/১৩৫২, খণ্ড ৩, পৃ. ২২৯-২৩০।
  20. মুফিদ, আল-ফুসুলুল মুখতারাহ, ১৪১৪ হি., পৃ. ৩৮।
  21. মুফিদ, আল-ফুসুলুল মুখতারাহ, ১৪১৪ হি., পৃ. ৩৮।
  22. আল-গাফুরি, খনেশে ফিকহি জাদিদ আয আয়ে মুবাহেলা(২), পৃ. ৪৮-৪৯।
  23. সাবযেভারি, মাওয়াহেবুর রাহমান, ১৪০৯-১৪১০ হি., খণ্ড ৬, পৃ. ১৮-১৯।
  24. সাবযেভারি, মাওয়াহেবুর রাহমান, ১৪০৯-১৪১০ হি., খণ্ড ৬, পৃ. ১৮-১৯।
  25. রশিদ রেযা, তাফসিরুল মানার, ১৯৯০ খ্রি., খণ্ড ৩, পৃ. ২৬৬।
  26. আল-গাফুরি, খনেশে ফিকহি জাদিদ আয আয়ে মুবাহেলা(১), পৃ. ৭৩।
  27. তাবারি, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ৫, পৃ. ৪৩২।
  28. আল-গাফুরি, খনেশে ফিকহি জাদিদ আয আয়ে মুবাহেলা(১), পৃ. ৭৬-৭৯।
  29. মাকারেম শিরাজি, তাফসিরে নেমুনে, ১৩৭৪ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৫৮৯।
  30. আল-গাফুরি, খনেশে ফিকহি জাদিদ আয আয়ে মুবাহেলা(২), পৃ. ৫২।
  31. সাবযেভারি, মাওয়াহেবুর রাহমান, ১৪০৯-১৪১০ হি., খণ্ড ৬, পৃ. ৮।

গ্রন্থপঞ্জি

  • বাইদ্বাভি, আব্দুল্লাহ বিন উমর, আনওয়ারুত তানযিল ওয়া আসরারুত তা’ভিল (তাফসিরুল বাইদ্বাভি), বৈরুত, আল-ইহিয়ায়িত তুরাসিল আরাবি, ১৪১৮ হি./১৯৯৮ খ্রি.।
  • রশিদ রেযা, মুহাম্মাদ রশিদ বিন আলী রেযা, তাফসিরুল কুরআনিল কারিম (তাফসিরুল মানার), আল-হাইয়াতুল মিসরিয়াতুল আম্মাহ লিল কিতাব, ১৯৯০ খ্রি.।
  • যিমাখশারি, মাহমুদ, আল-কাশশাফ আন হাকায়েকে গাওয়ামেয আত তানযিল, কোম, নাশরুল বালাগাহ, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪১৫ হি.।
  • সাবযেভারি, সাইয়্যেদ আব্দুল আ’লা, মাওয়াহিবুর রাহমান ফি তাফসিরিল কুরআন, বৈরুত, মুআসসেসেয়ে আহলুল বাইত (আ.), ১৪০৯-১৪১০ হি.।
  • শুশতারি, কাজী নুরুল্লাহ, ইহকাকুল হাক্ব ওয়া ইযহাকুল বাতিল, কোম, কিতাব খানেয়ে আয়াতুল্লাহ মারআশি নাজাফি, প্রথম সংস্করণ, ১৪০৯ হি.।
  • তাবাতাবায়ি, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হুসাইন, আল-মিযান ফি তাফসিরিল কুরআন, বৈরুত, মুআসসাসাতুল আ’লামি লিল মাতবুআত, ১৩৫১/১৩৫২।
  • তাবারসি, ফাযল বিন হাসান, মাজমাউল বায়ান ফি তাফসিরিল কুরআন, তেহরান, নাসির খসরু, তৃতীয় সংস্করণ, ১৩৭২ ফার্সি সন।
  • তাবারি, মুহাম্মাদ বিন জুরাইর, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, তাহকিক মুহাম্মাদ আবুল ফাযল ইব্রাহিম, দারুত তুরাস, বৈরুত, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৩৮৭ হি./১৯৬৭ খ্রি.।
  • আল-গাফুরি, খালিদ, খনেশে ফিকহি জাদিদ আয আয়ে মুবাহেলা (২), তারজমে মাহমুদ রেযা তাওয়াক্কুলি মুহাম্মাদি, কাওসারে মাআরেফ, সংখ্যা ২২, ১৩৯১ ফার্সি সনের তাবেস্তান।
  • আল-গাফুরি, খালিদ, খনেশে ফিকহি জাদিদ আয আয়ে মুবাহেলা (১), তারজমে মাহমুদ রেযা তাওয়াক্কুলি মুহাম্মাদি, কাওসারে মাআরেফ, সংখ্যা ২১, ১৩৯১ ফার্সি সনের বাহার।
  • ফাখরে রাযি, মুহাম্মাদ বিন উমর, আল-তাফসিরুল কাবির, বৈরুত, দারু ইহিয়ায়িত তুরাসিল আরাবি, ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.।
  • মুফিদ, মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ, আল-ফুসুলল মুখতারাহ, তাহকিক সাইয়্যেদ মীর আলী শারিফি, বৈরুত, দারুল মুফিদ, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪১৪ হি.।
  • মাকারেম শিরাজি, নাসের, তাফসিরে নেমুনে, তেহরান, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়্যাহ, প্রথম সংস্করণ, ১৩৭৪ ফার্সি সন।