প্রথম মুসলিম

প্রথম মুসলিম (আরবি: أول المسلمين); যিনি মহানবি (স.)-এর উপর সর্বপ্রথম ঈমান এনেছেন। প্রথম মুসলিম হওয়ার বিষয়টি বিশেষ গৌরবের এবং বিশেষ বৈশিষ্ট হিসেবে বিবেচিত হত। শিয়া মনীষীদের মতে হজরত খাদিজা (সা. আ.) হলেন প্রথম মুসলিম নারী এবং হজরত আলী (আ.) হলেন প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী পুরুষ। বিষয়টি আহলুস সুন্নাহ’র বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থেও উল্লেখিত হয়েছে।

আহলুস সুন্নাহ’র কিছু কিছু গ্রন্থে হজরত আবু বকরকে পুরুষদের মধ্যে প্রথম মুসলিম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমান সময়ের বিশিষ্ট শিয়া ইতিহাসবিদ রাসুল জাফারিয়ানের মতে, মুসলমানদের মধ্যকার মাযহাবগত মতভেদের কারণে আহলে সুন্নতের পক্ষ থেকে এ ধরনের দাবী উত্থাপিত হয়েছে এবং এর ঐতিহাসিক কোন ভিত্তি নেই।

প্রথম মুসলিমের গুরুত্ব ও স্থান

প্রথম মুসলিম হল ঐ ব্যক্তি যিনি মহানবি (স.)-এর উপর সর্বপ্রথম ঈমান এনেছেন। প্রথম মুসলমান হওয়াটা গর্বের বিষয় ছিল এবং বিশেষ বিশেষত্ব হিসেবে গণ্য হত। কিছু কিছু গ্রন্থের সাক্ষ্যানুযায়ী হজরত আলী (আ.)-এর প্রথম মুসলিম হওয়ার বিষয়টি স্বয়ং মহানবি (স.) তার জন্য ফজিলত হিসেবে গন্য করেছেন। সাহাবাদের মাঝে যারা প্রথম মুসলিম হিসেবে দাবী করতেন তাদের কাছেও বিষয়টি ছিল গর্বের।

প্রথম মুসলিম নারী হজরত খাদিজা (সা. আ.)

হজরত খাদিজা (সা. আ.) যে নারীদের মধ্যে প্রথম ইসলম গ্রহণকারী এ বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ আবার তাঁকে (নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে) প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিশিষ্ট সুন্নি ঐতিহাসিক ইবনে আসিরের দৃষ্টিতে, ‘হজরত খাদিজা যে মহানবি (স.)-এর উপর প্রথম ঈমান আনয়নকারী এ বিষয়ে মুসলমানদের ইজমা রয়েছে।

তৃতীয় শতাব্দির বিশিষ্ট ঐতিহাসিক আহমাদ ইবনে আবি ইয়াকুবে’র ভাষ্যমতে, নারীদের মধ্যে হজরত খাদিজা এবং পুরুষদের মধ্যে হজরত আলী (আ.) সর্বপ্রথম মহানবি (স.)-এর প্রতি ঈমান আনেন।

পুরুষদের মধ্যে আলী (আ.) প্রথম মুসলিম

বিভিন্ন রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে মহানবি (স.), ইমাম আলী (আ.)-কে প্রথম মুসলিম, প্রথম মু’মিন (ঈমান আনয়নকারী) এবং তাঁকে সত্যায়নকারী প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইমাম রেজা (আ.) থেকে শেইখ তুসি একটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন, যাতে তিনি ইমাম আলী (আ.)-কে প্রথম ঈমান আনয়নকারী হিসেবে পরিচয় করিয়েছেন। বলা হয়েছে যে, ইমাম আলী (আ.) যে পুরুষদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী এ বিষয়ে শিয়াদের মাঝে ইজমা রয়েছে। ইমাম আলী (আ.)ও নিজের কথায় তিনি যে প্রথম মুসলিম ছিলেন এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন।

আল্লামা মাজলিসী এবং চতুর্থ শতাব্দির বিশিষ্ট শিয়া লেখক হুসাইন বিন হামদান খুছাইবী, ইমাম আলী (আ.)-কে প্রথম মুসলিম বলে জানেন। একইভাবে মুহাম্মাদ বিন জারীর তাবারী, শামসুদ্দীন যাহাবী ও আহলে সুন্নাতের অন্যান্য ঐতিহাসিকরা ইমাম আলী (আ.)-এর প্রথম মুসলিম হওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।

অন্যান্য বর্ণনা

আহলে সুন্নাতের কোন কোন লেখক এমন কিছু বর্ণনা উল্লেখ করেছেন যেগুলোর ভিত্তিতে আবুবকর অথবা যায়েদ বিন হারেসা প্রথম মুসলমান ছিলেন। সুন্নি ঐতিহাসিক মাকরিযী তার ‘ইমতাউল আসমা’ গ্রন্থে মহানবি (স.)-কে সহযোগিতাকারীদের মধ্য থেকে আবু বকরকে প্রথম মুসলমান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইবনে হাজার তার ‘আল-ইসাবাহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন শিশু-কিশোরদের মধ্যে আলী (আ.), নারীদের মধ্যে হজরত খাদিজা, আযাদকৃত দাসদের মধ্যে যায়েদ বিন হারেসা, কৃতদাসদের মধ্যে বেলাল হাবাশী প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। তার মতে মুক্ত পুরুষদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী হলেন আবু বকর। অথচ মুহাম্মাদ বিন সায়াদ থেকে মুহাম্মাদ বিন জারীর তাবারী বর্ণনা করেন যে, আবুবকর ৫০ জন ইসলাম গ্রহণের পর ইসলাম গ্রহণ করেছেন।

বর্তমান সময়ের বিশিষ্ট শিয়া ইতিহাসবিদ রাসুল জাফারিয়ানের মতে, মুসলমানদের মধ্যকার মাযহাবগত মতভেদের কারণে আহলে সুন্নতের পক্ষ থেকে এ ধরনের দাবী উত্থাপিত হয়েছে এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে এ ধরনের ঘটনার প্রেক্ষাপট নেই।

পর্যায়ক্রমে ইসলাম গ্রহণকারীদের তালিকা

পর্যায়ক্রমে মহানবি (স.) এর উপর প্রথম ঈমান আনয়নকারীদের নাম উল্লেখ করতে গিয়ে সুন্নি ঐতিহাসিক ইবনে আসীর লিখেছেন খাদিজা (সা. আ.), আলী (আ.), যায়েদ বিন হারেসা, আবু বকর। আল্লামা মাজলিসীর দৃষ্টিতে আলী (আ.), খাদিজা (সা. আ.) ও জাফার বিন আবু তালিব।