বিষয়বস্তুতে চলুন

খাইরুল বারিয়্যাহ’র আয়াত

wikishia থেকে
(খাইরুল বারিয়্যা’র আয়াত থেকে পুনর্নির্দেশিত)
খাইরুল বারিয়্যাহ’র আয়াত
আয়াতের নামখাইরুল বারিয়্যাহ’র আয়াত
সূরার নামসূরা বাইয়্যিনাহ
আয়াত নম্বর
পারা নম্বর৩০
অবতীর্ণের স্থানমদীনা
বিষয়আকীদাগত
প্রসঙ্গইমাম আলী (আ.) ও শিয়াদের সু-উচ্চ মর্যাদা


খাইরুল বারিয়্যাহ’র আয়াত (আরবি: آیه خَیرُالبَریَّه) (বাইয়্যিনাহ: ৭) হচ্ছে ইমাম আলী (আ.)-এর শানে অবতীর্ণ হওয়া একটি আয়াত। শিয়াসুন্নি সূত্রগুলোতে মহানবী (স.) হতে বর্ণিত রেওয়ায়েত অনুসারে, খাইরুল বারিয়্যাহ বিবরণটির মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে ইমাম আলী (আ.) এবং তাঁর অনুসারীরা হচ্ছে সৃষ্টির সেরা। কোন কোন মুফাস্সিরগণ আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, মু’মিন ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিগণ ফেরেস্তাগণের উপর শ্রেষ্ঠত্ব রাখেন; কেননা, বারিয়্যাহ শব্দটি সমস্ত সৃষ্টিকূলকে অন্তর্ভূক্ত করে।

টেক্সট ও অনুবাদ

সূরা বায়্যিনাহ’র সপ্তম আয়াতটি খাইরুল বারিয়্যাহ’র আয়াত হিসেবে পরিচিত।[]

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ (٧


অনুবাদ: প্রকৃতপক্ষে যারা ঈমানদার ও সৎকর্ম সম্পাদন করেছে তারাই সৃষ্টির সেরা।



সূরা বায়্যিনাহ: ৭


অবস্থান ও গুরুত্ব

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারি

আমরা মহানবী (স.)-এর নিকট অবস্থান করছিলাম, এমতাবস্থায় আলী (আ.) আসলেন। মহানবী (স.) বলেন: “তার (আল্লাহর) কসম যার হাতে আমার জীবন, সে এবং তাঁর শিয়ারা কেয়ামতের দিনে পরিত্রাণপ্রাপ্ত”; অতঃপর এই আয়াতটি অবতীর্ণ হলো: «إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَٰئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ.» মহানবীর (স.) সাহাবীগণ, যখনই আলী (আ.) আসতেন বলতেন: “খাইরুল বারিয়্যাহ (সৃষ্টির সেরা) এসেছে।” ইবনে আসাকির, তারিখে দামেস্ক, ১৪১৫ হি., খণ্ড ৪২, পৃ. ৩৭১।

খাইরুল বারিয়্যাহ’র আয়াত ইমাম আলীর (আ.) ফযিলত হিসেবে পরিগণিত হয়।[] ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত হয়েছে, উক্ত আয়াতটি ইমাম আলী (আ.) সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে।[] শিয়া পণ্ডিতগণের ভাষ্যমতে, ইমাম আলী (আ.) ৬ সদস্যের শূরায় তাঁর ন্যায়ানুগতা ও বৈধতা প্রমাণে এই আয়াত এবং এর শানে নুযুলকে দলিল হিসেবে উপস্থাপণ করেন।[]

বিশিষ্ট শিয়া মুফাস্সির আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজী (জন্ম: ১৩০৫ ফার্সি সন) এই আয়াতের শানে নুযুলে মহানবী (স.) হতে একটি রেওয়ায়েতের উল্লেখপূর্বক, যেখানে আলী (আ.) ও তাঁর শিয়াদের সম্পর্কে বক্তব্য এসেছে,[] বলেছেন শিয়া শব্দটি মহানবী (স.)-এর সময় থেকেই আলোচ্য বিষয় এবং উক্ত রেওয়ায়েতে শিয়া বলতে ইমাম আলী (আ.)-এর বিশেষ অনুসারীদেরকে বুঝানো হয়েছে।[]

খাইরুল বারিয়্যাহ’র উদ্দেশ্য

শিয়া ও আহলে সুন্নতের রেওয়ায়েতি গ্রন্থগুলোতে, মহানবী (স.) হাদীসসমূহ বর্ণিত হয়েছে, যেখানে ইমাম আলী (আ.) এবং তাঁর শিয়াদেরকে খাইরুল বারিয়্যাহ (সেরা সৃষ্টি) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।[] আহলে সুন্নতের বিশিষ্ট পণ্ডিত হাকিম হাসকানি (মৃত্যু: ৪৯০ হি.) শাওয়াহেদুত তানযিল গ্রন্থে এ সম্পর্কে বিশটির অধিক রেওয়ায়েত বিভিন্ন সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন।[]উদাহরণস্বরূপ ইবনে আব্বাস হতে রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন, যখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়, মহানবী (স.) ইমাম আলী (আ.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন: “ঐ (খাইরুল বারিয়্যাহ) হচ্ছো তুমি এবং তোমার শিয়ারাকিয়ামত দিবসে তুমি এবং তোমার শিয়ারা এমন অবস্থায় আসবে যে, তোমরা আল্লাহর উপর রাজী এবং আল্লাহ তোমাদের উপর রাজী থাকবে।”[]

তাফসীরগত বিষয়

এই আয়াত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে মুফাস্সিরগণ যে বিষয়গুলো অনুমান করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ঈমানদার ও সালেহ (সৎকর্মশীল) ব্যক্তিরা ফেরেস্তাগণের উপর শ্রেষ্ঠত্ব রাখেন; কেননা, বারিয়্যাহ শব্দটি সমস্ত সৃষ্টিকূলকে অন্তর্ভূক্ত করে।[১০]

আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে মক্কায়

কিছু কিছু রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, খাইরুল বারিয়্যাহ’র আয়াতটি যখন অবতীর্ণ হয়, তখন মহানবী (স.) মক্কায় মসজিদুল হারামে অবস্থান করছিলেন।[১১] তাফসীরে নেমুনেহ’র উল্লেখানুসারে, এই বিষয়টি সূরাটি মাদানী হওয়ার সাথে সাংঘর্ষিক নয়; কারণ এমনটি হতে পারে যে, সূরাটি মাদানী তবে এই আয়াতটি মহানবীর (স.) মদীনা হতে মক্কায় যে সফরগুলো ছিল, সেই সফরকালীন সময়ে অবতীর্ণ হয়েছে।[১২]

তথ্যসূত্র

  1. আল্লামা হিল্লি, নাহজুল হাক্ব, ১৪০২ হি., পৃ. ১৮৯।
  2. মাকারেম শিরাজী, তাফসীরে নেমুনেহ, ১৩৭৪ ফার্সি সন, খণ্ড ২৭, পৃ. ২১৩।
  3. দ্র: হাসকানি, শাওয়াহেদুত তানযীল, ১৪১০-১৪১১ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৪৭৩; শুশতারি, ইহকাকুল হাক্ব, ১৪০৯ হি., খণ্ড ২০, পৃ. ২৭।
  4. তাবারি, আল-মুস্তারশাদ, ১৪১৫ হি., পৃ. ৩৫৪; আস্ত্রাবাদি, তা’উয়িলুল আয়াতিয যাহিরাহ, ১৪০৯ হি., পৃ. ৮০৩।
  5. সুয়ুতি, আদ-দুররুল মানসুর, ১৪০৪ হি., খণ্ড ৬, পৃ. ৩৭৯; আমিনী, আল-গাদীর, ১৪১৬ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৫৭ ও ৫৮।
  6. মাকারেম শিরাজী, তাফসীরে নেমুনেহ, ১৩৭৪ ফার্সি সন, খণ্ড ২৭, পৃ. ২১৩-২১৪।
  7. সুয়ুতি, আদ-দুররুল মানসুর, ১৪০৪ হি., খণ্ড ৬, পৃ. ৩৭৯; আস্ত্রাবাদি, তা’উয়িলুল আয়াতিয যাহিরাহ, ১৪০৯ হি., পৃ. ৮০-৮০৩; আলুসি, রুহুল মাআনি, ১৪১৫ হি., খণ্ড ১৫, পৃ. ৪৩২।
  8. দ্র: হাসকানি, শাওয়াহেদুত তানযীল, ১৪১০-১৪১১ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৪৫৯-৪৭৩।
  9. হাসকানি, শাওয়াহেদুত তানযীল, ১৪১০-১৪১১ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৪৬১।
  10. তাবাতাবায়ী, আল-মিযান, ১৪১৭ হি., খণ্ড ২০, পৃ. ৩৪০; মাকারেম শিরাজী, তাফসীরে নেমুনেহ, ১৩৭৪ ফার্সি সন, খণ্ড ২৭, পৃ. ২০৯।
  11. হাসকানি, শাওয়াহেদুত তানযীল, ১৪১০-১৪১১ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৪৬৭।
  12. দ্র: মাকারেম শিরাজী, তাফসীরে নেমুনেহ, ১৩৭৪ ফার্সি সন, খণ্ড ২৭, পৃ. ২১২।

গ্রন্থপঞ্জি

  • আলুসি, মাহমুদ, রুহুল মাআনি ফি তাফসীরিল কুরআনিল আযিম ওয়াস সাবউল মাসানি, তাহকিক: আলী আব্দুল বারি আতিয়া, বৈরুত, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, মানশুরাতে মুহাম্মাদ আলী বাইদ্বুন, ১৪১৫ হি.।
  • ইবনে আসাকির, তারিখে দামেস্ক, তাহকিক: উমর ইবনে গারামাতিল উমরাউয়ি, বৈরুত, দারুল ফিকর, ১৪১৫ হি.।
  • আস্ত্রাবাদি, সাইয়্যেদ আলী, তা’উয়িলুল আয়াতিয যাহিরি ফি ফাযায়েলিল ইতরাতিত তাহিরা, তাহকিক: হুসাইন উস্তাদুলি, কোম, নাশরে ইসলামি, ১৪০৯ হি.।
  • আমিনী, আব্দুল হুসাইন, আল-গাদ্বীর ফিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাতি ওয়াল আদাব, কোম, মারকাযুল গাদীর লিদ দিরাসাতিল ইসলামিয়া, ১৪১৬ হি.।
  • হাসকানি, উবায়দুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ, শাওয়াহেদুত তানযীল লি কাওয়ায়েদুত তাফসিল ফিল আয়াতিন নাযিলিহি ফি আহলিল বাইত, তাহকিক: মুহাম্মাদ বাকের মাহমুদি, বৈরুত, তেহরান, ভেযারাতুস সাকাফাহ ওয়াল ইরশাদ আল-ইসলামি, ১৪১০-১৪১১ হি.।
  • সুয়ুতি, আব্দুর রাহমান ইবনে আবি বাকর, আদ-দুররুল মানসুর ফি তাফসীরিল মা’সুর, কোম, কিতাব খানেয়ে মারআশি নাজাফি, ১৪০৪ হি.।
  • শুশতারি, কাযী নুরুল্লাহ, ইহকাকুল হাক্ব ওয়া ইযহাকুল বাতিল, কোম, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি আল-নাযাফি, ১৪০৯ হি.।
  • তাবাতাবায়ী, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হুসাইন, আল-মিযান ফি তাফসীরিল কুরআন, কোম, দাফতারে ইন্তেশারাতে ইসলামী, পঞ্চম সংস্করণ, ১৪১৭ হি.।
  • তাবারসি, ফাযল ইবনে হাসান, মাজমাউল বায়ান ফি তাফসীরিল কুরআন, তেহরান, নাসের খসরু, ১৩৭২ ফার্সি সন।
  • ফখরুদ্দিন রাযি, মুহাম্মাদ ইবনে উমর, আত-তাফসীরুল কাবির, বৈরুত, দারু ইহিয়ায়িত তুরাসিল আরাবি, ১৪২০ হি.।
  • কারাশি বানাবি, আলী আকবার, তাফসীরু আহসানিল হাদীস, তেহরান, বুনিয়াদে বে’সাত, ১৩৭৫ ফার্সি সন।
  • কাশানি, ফাতহুল্লাহ ইবনে শুকরুল্লাহ, মিনহাযুস সাদেকীন ফি ইলযামিল মুখালেফীন, তেহরান, কিতাবফুরুশিয়ে ইসলামিয়া, তারিখ অজ্ঞাত।
  • মুগনিয়া, মুহাম্মাদ জাওয়াদ, তাফসীরুল কাশেফ, কোম, দারুল কুতুবিল ইসলামী, ১৪২৪ হি.।
  • তাবারি, মুহাম্মাদ ইবনে জারির, আল-মুসতারশাদ ফি ইমামাতি আলী ইবনে আবি তালিব (আ.), তাসহিহ: আহমাদ মাহমুদি, কোম, কুশানপুর, ১৪১৫ হি.।
  • আল্লামা হিল্লি, হাসান ইবনে ইউসুফ, নাহজুল হাক্ব ওয়া কাশফুস সিদক, বৈরুত, দারুল কিতাব আল-লুবনানি, ১৪২০ হি.।
  • মাকারেম শিরাজী, নাসের, তাফসীরে নেমুনেহ, তেহরান, দারুল কুতুবিল ইসলামিয়া, ১৩৭৪ ফার্সি সন।