বিষয়বস্তুতে চলুন

মাক্কী ও মাদানী সূরা

wikishia থেকে

মাক্কী ও মাদানী সূরা (আরবি: السور المكية والمدنية); কুরআনের সূরাগুলোকে অবতীর্ণ হওয়ার সময় অনুসারে (মহানবী (স.)-এর হিজরতের পূর্বে, না পরে) চিহ্নিত করার বিষয়টিকে নির্দেশ করে। মাক্কী ও মাদানী সূরাগুলোকে চেনা তাফসীর, ফিকাহ এবং কালামের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কেননা এই ভাবে মহানবীর (স.) দাওয়াতের ধাপসমূহ, এবং ইসলামী যুগের রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়াবলী সম্পর্কে পরিচিত হওয়া যায়। নাসেখ ও মানসুখ আয়াত সম্পর্কে ধারণা, আইনের বিবর্তন ও ইসলামের আইন প্রণয়ন সম্পর্কে জ্ঞান এবং কুরআনের আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে ধারণা প্রাপ্তিকে মাক্কী ও মাদানী সূরা পরিচিতির অন্যান্য ফায়দা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

কুরআন গবেষকগণ বলেন, কিছু কিছু মাক্কী সূরায় মাদানী আয়াত এবং কিছু কিছু মাদানী সূরায় মাক্কী আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। এই আয়াতগুলোকে ব্যতিক্রম আয়াত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, কুরআনের ২০টি সূরা মাদানী এবং ৮২টি সূরা মাক্কী হওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত এবং অবশিষ্ট সূরাগুলো (১২ সূরা) সম্পর্কে মতপার্থক্য বিদ্যমান।

মাক্কী ও মাদানী সূরাগুলোর সিয়াক পরস্পর থেকে ভিন্ন এবং এটাকেই মাক্কী ও মাদানী সূরা নির্ধারণ করার জন্য সর্বোত্তম উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। মাক্কী সূরাগুলোর কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ: মৌলিক আকীদার প্রতি আহ্বান, সূরা ও আয়াতসমূহের সংক্ষিপ্ততা এবং ভাষার কঠোরতা। মাদানী সূরাগুলোর কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য আবার নিম্নরূপ: শরয়ী আহকামের বর্ণনা, মুনাফিকদের বিষয়গুলো তুলে ধরা এবং জিহাদ ও এর বিধি-বিধান বর্ণনা।

মাক্কী ও মাদানী সূরাগুলো চেনার গুরুত্বের প্রতি লক্ষ করলে দেখা যায়, উক্ত বিষয়টি প্রাচ্যবিদদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল; কিন্তু তারা মুসলিম কুরআন গবেষকদের থেকে ভিন্ন পথ অনুসরণ করেছেন।

ইসলামী জ্ঞানের ক্ষেত্রে মাক্কী ও মাদানী সূরা চেনার গুরুত্ব

মাক্কী ও মাদানী সূরাগুলোর পরিচিতি, মুফাসসিরগণের জন্য কুরআনের তাফসীর, ফিকাহবিদদের জন্য শরয়ী আহকাম বের করা [] এবং কালাম শাস্ত্রবিদগণের জন্য কালাম বিষয়ক আলোচনা সমর্থন বা প্রত্যাখ্যানের কাজে আসে;[] কারণ মাক্কী বা মাদানী সূরাগুলো চিহ্নিত করার মাধ্যমে ঘটনাবলীর ইতিহাস এবং বিধি প্রবর্তনের সময় সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়।[] কুরআন বিষয়ক চিন্তাবিদগণের কারও কারও মতে, যে ব্যক্তি মাক্কী ও মাদানী সূরা সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে সক্ষম নয়, তার জন্য কুরআন তাফসীর করা বৈধ নয়।[]

তাফসীরে আল-মীযানের রচয়িতা মোহাম্মাদ হুসাইন তাবাতাবায়ী বিশ্বাস করেন যে, মাক্কী ও মাদানী সূরাগুলো চিহ্নিত করা এবং এর পরবর্তীতে সূরাগুলোর অবতরণের ক্রমধারা বোঝার বিষয়টি মহানবী (স.)-এর দাওয়াত তথা আহ্বান, তাঁর সময়ের আত্মিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা এবং নবীর সীরাত বিশ্লেষণ সম্পর্কিত বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।[] এছাড়াও নাসেখ ও মানসুখ চিহ্নিত করা,[] শানে নুযুল সম্পর্কে জ্ঞান,[] কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান,[] এবং সূরাগুলোর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বুঝতে পারা হচ্ছে মাক্কী ও মাদানী সূরা পরিচিতির অন্যান্য ফায়দা।[]

নির্ধারণের মানদণ্ডসমূহ

কুরআন শরীফের আয়াতসমূহ মাক্কী অথবা মাদানী হিসেবে চিহ্নিতকরণের মানদণ্ডসমূহ সম্পর্কে তিন ধরনের মত রয়েছে: ১. সময়: মহানবী (স.)-এর মদীনায় হিজরের পূর্বে যেগুলো অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলো মক্কী এবং মহানবী (স.)-এর মদীনায় পৌঁছানোর পরে যেগুলো অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলো মাদানী। সুতরাং, যদি কোনো সূরা বা আয়াত হিজরতের পরে অবতীর্ণ হয়, তবে তা মদিনী হবে; যদিও তা মক্কা শহরে বা মহানবীর (স.) কোনো সফরের সময় অবতীর্ণ হয়ে থাকে না কেন, উদাহরণস্বরূপ মক্কা বিজয়ের সময় বা বিদায় হজ্বে (حَجَّةُ الوِداع) অবতীর্ণ হওয়া আয়াতগুলো।[১০]

২. স্থান: যেগুলো মক্কা এবং এর চারপাশে, যেমন: মিনা, আরফাত এবং হুদাইবিয়াতে অবতীর্ণ হয়েছে, সেগুলো মাক্কী, যদিও তা হিজরতের পরে অবতীর্ণ হয়ে থাকুক না কেন। আর যেগুলো মদীনা এবং এর চারপাশে, যেমন বদর এবং উহুদে অবতীর্ণ হয়েছে, সেগুলো মাদানী।[১১]

৩. মুখাতাব: কেউ কেউ ওহীর মুখাতাবের (যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে) প্রতি লক্ষ্য করে বলেছেন, যেগুলো মক্কার লোকদের সম্বোধন করে অবতীর্ণ হয়েছে, সেগুলো মাক্কী এবং যেগুলো মদীনার লোকদের সম্বোধন করে অবতীর্ণ হয়েছে, সেগুলো মাদানী।[১২]মুখাতাব চিহ্নিত করার মানদণ্ড হলো এই যে, যেগুলো "يَا أَيُّهَا النَّاسُ" (হে জনগণ!) সম্বোধনে অবতীর্ণ হয়েছে, সেগুলো মাক্কী এবং যেগুলো "يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا" (হে ঈমানদারগণ!) সম্বোধনে অবতীর্ণ হয়েছে, সেগুলো মাদানী।[১৩] এই দৃষ্টিভঙ্গি মহানবীর (স.) সাহাবী ইবনে মাসউদের বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[১৪]

বলা হয়ে থাকে, যদি কোনো সূরার কিছু আয়াত মাক্কী এবং কিছু আয়াত মাদানী হয়, তবে সূরার মাক্কী বা মাদানী হওয়ার বিষয়টি সূরার প্রধান অংশের প্রতি লক্ষ্য রাখার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়; উদাহরণস্বরূপ, যদিওবা সূরা আনআ’ম এর কিছু আয়াত মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে মনে করা হয়, তথাপি এর অধিকাংশ আয়াত মক্কায় অবতীর্ণ হওয়ায়, এই সূরাকে মাক্কী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।[১৫] পক্ষান্তরে, কিছু লোক বিশ্বাস করেন যে, এই ধরনের সূরাগুলোর নামকরণ এর শুরুর আয়াতগুলোর ভিত্তিতে করা হয়েছে।[১৬]

প্রসিদ্ধ মতামত

সময়ের মানদণ্ডটি, অন্য দুই মানদণ্ডের তুলনায় অধিক প্রসিদ্ধ এবং কুরআন গবেষকদের মধ্যে অধিক গ্রাহ্য।[১৭] তাদের যুক্তি হলো এই যে, এই মানদণ্ডটি, অন্য দুই মানদণ্ডের বিপরীতে, কুরআনের সকল আয়াতকে অন্তর্ভুক্ত করে;[১৮] কিন্তু স্থানের মানদণ্ডটি সর্বজনীন নয় এবং সকল আয়াতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়; কারণ কিছু আয়াত এমন আছে যা না মক্কায় এবং না মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে; বরং দূরের কোন স্থানে, যেমন তাবুক এবং বায়তুল মুকাদ্দাসে অবতীর্ণ হয়েছে।[১৯] আবার মুখাতাবের মানদণ্ডটিও, একদিকে সর্বজনীন না হওয়া ছাড়াও, এই সমস্যার সম্মুখীন যে, কিছু আয়াত যা নিঃসন্দেহে মাদানী, সেগুলো "يَا أَيُّهَا النَّاسُ" (হে জনগণ!) খেতাবের মাধ্যমে শুরু হয়েছে এবং কিছু আয়াত যা নিঃসন্দেহে মাক্কী, সেগুলো "يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا" (হে ঈমানদারগণ!) খেতাবের মাধ্যমে শুরু হয়েছে।[২০]

ব্যতিক্রম আয়াত

কিছু কিছু মাক্কী সূরার মধ্যে, কিছু আয়াত মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে। তদ্রুপভাবে কিছু কিছু মাদানী সূরার মধ্যে এমন আয়াত রয়েছে যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।[২১] এই ধরনের আয়াতগুলোকে পারিভাষিকভাবে ব্যতিক্রম আয়াত বলা হয়।[২২] তবে কোন কোন কুরআন গবেষক, এই বিভাজনকে গ্রহণ করেননি এবং তারা বলেছেন যে কোন সূরাতেই ব্যতিক্রম আয়াত নেই; অর্থাৎ, সমস্ত সূরার সমস্ত আয়াত, হয় মাক্কী অথবা মাদানী।[২৩]

মাক্কী ও মাদানী সূরার সংখ্যা

মাদানী সূরার সংখ্যা ২০টি এবং মাক্কী সূরার সংখ্যা ৮২টি বলে মনে করা হয়। ১২টি সূরা সম্পর্কে মতপার্থক্য রয়েছে:[২৪] মাদানী সূরা হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সূরাগুলো হচ্ছে: বাকারাহ, আলে ইমরান, নিসা, মায়িদাহ, আনফাল, তাওবাহ, নূর, আহযাব, মুহাম্মাদ, ফাতহ, হুজুরাত, হাদীদ, মুজাদালাহ, হাশর, মুমতাহানাহ, জুমুআহ, মুনাফিকুন, তালাক্ব, তাহরীম এবং নাসর[২৫]মতপার্থক্যের সূরাগুলো নিম্নরূপ: ফাতেহা, রাআদ, আর-রাহমান, ছাফফ, তাগাবুন, মুতাফফিফীন, ক্বাদর, বাইয়্যিনাহ, যালযালাহ, ইখলাস, ফালাক্ব এবং নাস[২৬]অবশিষ্ট সূরাগুলো হচ্ছে মাক্কী।[২৭]

অবশ্য প্রকাশিত কুরআনগুলোতে, সাধারণত সূরাগুলোর প্রথমে, সূরাটির মাক্কী বা মাদানী হওয়ার বিষয়টি নির্দিষ্ট করা হয়েছে, ২৮টি সূরা মাদানী এবং ৮৬টি সূরা মাক্কী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[২৮]

চিহ্নিতকরণের উপায়

মাক্কী ও মাদিনী সূরাগুলির পরিচয় শনাক্ত করার জন্য তিনটি উপায়ের উল্লেখ করা হয়েছে: ১. রেওয়ায়েত, ২. বাহ্যিক প্রমাণসমূহ, ৩. বিষয়বস্তুগত ও অভ্যন্তরীণ আলামতসমূহ।[২৯] রেওয়ায়েত সম্পর্কে বলা হয় যে, এগুলোর অধিকাংশই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন, যেমন সনদের দুর্বলতা, মাসূমগণ হতে বর্ণিত না হওয়া এবং সাংঘর্ষিক রেওয়ায়েতের অস্তিত্ব। এই জন্য রেওয়ায়েতের মাধ্যমে প্রমাণ করার সময়, শুধুমাত্র সেই রেওয়ায়েতের উদ্ধৃতি দিতে হবে যেগুলোর সঠিকতার সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে।[৩০] কিছু কিছু কুরআন গবেষক মনে করেন, আয়াতগুলোর সিয়াক (বাচনরীতি বা প্রকাশভঙ্গি), সূরায় বিদ্যমান বিষয়বস্তু এবং বাহ্যিক কারিনা (প্রমাণকারী চিহ্ন বা নিদর্শন) হচ্ছে, সূরার মাক্কী বা মাদানী পরিচয় শনাক্ত করার একমাত্র উপায়[৩১], তবে কারও কারও মতে, এটি হচ্ছে শ্রেষ্ঠ উপায়।[৩২]

মক্কা ও মদীনার পরিবেশ সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন হওয়ায়, যেমন মক্কায় কাফিরদের সংখ্যার আধিক্য এবং মদীনায় ধর্মীয় সরকার প্রতিষ্ঠা,[৩৩] মাক্কী ও মাদানী সূরাগুলির খেতাব এবং বিষয়বস্তুর বৈশিষ্ট্যগুলো ভিন্ন ভিন্ন।[৩৪] তবে বলা হয়ে থাকে যে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো যথাযথ নয় এবং সমস্ত আয়াত ও সূরাকে সম্পূর্ণরূপে শামিল করে না; বরং এটি কেবল মাক্কী বা মাদানী হওয়ার সম্ভাবনাকে শক্তিশালী করে।[৩৫] এছাড়াও, এমন সম্ভাবনা রয়েছে যে, একটি সূরা মাক্কী বা মাদানী হতে পারে, তবে তার কিছু আয়াত ব্যতিক্রম, এবং এই বৈশিষ্ট্যগুলি শুধুমাত্র সেই ব্যতিক্রম আয়াতে বিদ্যমান।[৩৬]

মাক্কী সূরা ও আয়াতগুলোর বৈশিষ্ট্যসমূহ

মাক্কী সূরা ও আয়াতগুলোর নিম্নরূপ বৈশিষ্ট্যসমূহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে:

  • মূল আকীদার প্রতি দাওয়াত, যেমন আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান [৩৭]
  • আয়াত এবং সূরাগুলোর আকার সংক্ষিপ্ত হওয়া;[৩৮]
  • নবীগণ এবং পূর্ববর্তী উম্মতসমূহের কাহিনী বর্ণনা;[৩৯]
  • কঠোর সুরের উপস্থিতি;[৪০]
  • সূরায় "كَلّٰا" শব্দের ব্যবহার;[৪১]
  • সিজদা বিশিষ্ট আয়াত থাকা;[৪২]
  • হুরুফে মুকাত্তা'আত তথা বিচ্ছিন্ন অক্ষর (حروف مُقَطَّعه) দ্বারা শুরু হওয়া যেমন الم، الر، طسم، و حم (সূরা বাকারাহ এবং আলে ইমরান ব্যতীত);[৪৩]
  • মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ;[৪৪]

মাদানী সূরা ও আয়াতগুলোর বৈশিষ্ট্যসমূহ

মাদানী সূরা ও আয়াতগুলোর নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করা হয়েছে:

  • ধর্মীয় ওয়াজীবসমূহ এবং হুদুদগুলোর (সীমানা) বর্ণনা;[৪৫]
  • আয়াত এবং সূরাগুলোর দীর্ঘতা;[৪৬]
  • অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক আইনগুলোর বর্ণনা;[৪৭]
  • মু’মিনগণের প্রতি কোমল এবং নরম ভাষার ব্যবহার;[৪৮]
  • মুনাফিকদের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর আলোচনা;[৪৯]
  • মুনাফিকদের অবস্থা ও কর্মকাণ্ড এবং তাদের মোকাবিলায় মুসলমানগণ ও মহানবী (স.)-এর প্রতিক্রিয়া;[৫০]
  • আহলে কিতাবের সাথে মুজাদালাহ (বিতর্ক);[৫১]
  • জিহাদ ও এর বিধি-বিধান সম্পর্কিত বিষয়ের বর্ণনা।[৫২]

প্রাচ্যবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি

হিজরী ১৩ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে থিওডোর নোল্ডকা এবং রোজি ব্লাশারের ন্যায় প্রাচ্যবিদগণ কুরআনের ইতিহাস নির্ধারণে কাজ করেছেন।[৫৩] তাদের মধ্যে কেউ কেউ কুরআনের সূরাগুলিকে অবতীর্ণ হওয়ার সময়ের দিক থেকে শুধুমাত্র মাক্কী এবং মাদানী দু’ভাগে নয়, বরং তিন, চার বা পাঁচ ভাগে বিভক্ত করেছেন;[৫৪] তবে তারা সবাই মাদানী সূরাগুলিকে একটি দলে রেখেছেন।[৫৫]

কিছু কিছু প্রাচ্যবিদ[৫৬] এবং ত্বহা হুসাইনের ন্যায় বুদ্ধিজীবী, মাক্কী ও মাদানী সূরাগুলির মধ্যে বাহ্যিক এবং বিষয়বস্তুগত পার্থক্যের ওপর ভিত্তি করে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, কুরআন মানুষের তৈরি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়; কারণ কুরআন (মাক্কী এবং মাদানী সূরা) বিদ্যমান পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, অথচ যদি এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে হত, তবে পরিবেশের অধীন হতো না।[৫৭]

এই আপত্তির জবাবে 'কিতাবুত তামহীদ' গ্রন্থের লেখক মোহাম্মদ হাদী মা’রেফাত বলেন যে, পরিবেশ-পরিস্থিতির অধীন হওয়া এবং অধিক প্রভাব বিস্তারের জন্য পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার মাঝে অবশ্যই বিরাট পার্থক্য রয়েছে। এই আপত্তিটি কেবল তখনই প্রযোজ্য হবে, যখন মাক্কী এবং মাদানী সূরাগুলোর বৈশিষ্ট্যসমূহের পার্থক্য তার সেই পরিবেশের অধীন হওয়ার কারণে হবে; তবে কুরআন মক্কা ও মদীনার তৎকালীন যুগের বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে অবতীর্ণ হয়েছিল যাতে সেখানকার মানুষের উপর আরও ভালভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।[৫৮]

তথ্যসূত্র

  1. রোকনি, আশনায়ি বা উলুমে কুরআনি, ১৩৭৯ ফার্সি সন, পৃ. ১১১।
  2. দৌলাতি, তাকসিমাতে কুরআনি ওয়া সূরা মাক্কী ওয়া মাদানী, ১৩৮৪ ফার্সি সন, পৃ. ৬৫।
  3. রোকনি, আশনায়ি বা উলুমে কুরআনি, ১৩৭৯ ফার্সি সন, পৃ. ১১০।
  4. সুয়ুতি, আল-ইতক্বান ফি উলুমিল কুরআন, ১৪২১ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৫৪।
  5. তাবাতাবায়ী, আল-মীযান, ১৪১৭ হি., খণ্ড ১৩, পৃ. ২৩৫।
  6. সুয়ুতি, আল-ইতক্বান ফি উলুমিল কুরআন, ১৪২১ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৫৪।
  7. মা’রেফাত, তারিখে কুরআন, ১৩৮২ ফার্সি সন, পৃ. ৪৭।
  8. রামিয়ার, তারিখে কুরআন, ১৩৬৯ ফার্সি সন, পৃ. ৬০২।
  9. খামেগার, সাখতারে হান্দেসিয়ে সূরেহায়ে কুরআন, ১৩৮৬ হি., পৃ. ১৫২।
  10. মা’রেফাত, তামহীদ, ১৩৮৬ ফার্সি সন, খণ্ড ১, পৃ. ১৩০।
  11. সুয়ুতি, আল-ইতক্বান ফি উলুমিল কুরআন, ১৪২১ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৫৫।
  12. সুয়ুতি, আল-ইতক্বান ফি উলুমিল কুরআন, ১৪২১ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৫৬।
  13. সুয়ুতি, আল-ইতক্বান ফি উলুমিল কুরআন, ১৪২১ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৮১।
  14. সুয়ুতি, আল-ইতক্বান ফি উলুমিল কুরআন, ১৪২১ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৫৬।
  15. দৌলাতি, তাকসিমাতে কুরআনি ওয়া সূরা মাক্কী ওয়া মাদানী, ১৩৮৪ ফার্সি সন, পৃ. ৭২।
  16. রামিয়ার, তারিখে কুরআন, ১৩৬৯ ফার্সি সন, পৃ. ৬১৩।
  17. মা’রেফাত, তামহীদ, ১৩৮৬ ফার্সি সন, খণ্ড ১, পৃ. ১৩১।
  18. দৌলাতি, তাকসিমাতে কুরআনি ওয়া সূরা মাক্কী ওয়া মাদানী, ১৩৮৪ ফার্সি সন, পৃ. ৭১।
  19. রামিয়ার, তারিখে কুরআন, ১৩৬৯ ফার্সি সন, পৃ. ৬০২।
  20. রামিয়ার, তারিখে কুরআন, ১৩৬৯ ফার্সি সন, পৃ. ৬০২।
  21. রামিয়ার, তারিখে কুরআন, ১৩৬৯ ফার্সি সন, পৃ. ৬১২-৬১৩।
  22. মা’রেফাত, তারিখে কুরআন, ১৩৮২ ফার্সি সন, পৃ. ৬২।
  23. মা’রেফাত, তারিখে কুরআন, ১৩৮২ ফার্সি সন, পৃ. ৬২; মীর মুহাম্মাদী, তারিখ ওয়া উলুমে কুরআন, ১৩৭৭ ফার্সি সন, পৃ. ৩১১।
  24. সুয়ুতি, আল-ইতক্বান ফি উলুমিল কুরআন, ১৪২১ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৬০।
  25. রামিয়ার, তারিখে কুরআন, ১৩৬৯ ফার্সি সন, পৃ. ৬১০।
  26. রামিয়ার, তারিখে কুরআন, ১৩৬৯ ফার্সি সন, পৃ. ৬১০।
  27. রামিয়ার, তারিখে কুরআন, ১৩৬৯ ফার্সি সন, পৃ. ৬১০।
  28. রোকনি, আশনায়ি বা উলুমে কুরআনি, ১৩৭৯ ফার্সি সন, পৃ. ১১১।
  29. মা’রেফাত, তারিখে কুরআন, ১৩৮২ ফার্সি সন, পৃ. ৫১।
  30. দৌলাতি, তাকসিমাতে কুরআনি ওয়া সূরা মাক্কী ওয়া মাদানী, ১৩৮৪ ফার্সি সন, পৃ. ৭৩।
  31. তাবাতাবায়ী, আল-মীযান, ১৪১৭ হি., খণ্ড ১৩, পৃ. ২৩৫।
  32. দৌলাতি, তাকসিমাতে কুরআনি ওয়া সূরা মাক্কী ওয়া মাদানী, ১৩৮৪ ফার্সি সন, পৃ. ৭৪।
  33. আহমাদি, পেঝুহেশি দার উলুমে কুরআন, ১৩৮১ ফার্সি সন, পৃ. ৫২-৫৫।
  34. আহমাদি, পেঝুহেশি দার উলুমে কুরআন, ১৩৮১ ফার্সি সন, পৃ. ৬২।
  35. রাদমানেশ, আশনায়ি বা উলুমে কুরআন, ১৩৭৪ ফার্সি সন, পৃ. ১৭০।
  36. রাদমানেশ, আশনায়ি বা উলুমে কুরআন, ১৩৭৪ ফার্সি সন, পৃ. ১৭২।
  37. রাদমানেশ, আশনায়ি বা উলুমে কুরআন, ১৩৭৪ ফার্সি সন, পৃ. ১৭১।
  38. রাদমানেশ, আশনায়ি বা উলুমে কুরআন, ১৩৭৪ ফার্সি সন, পৃ. ১৭১।
  39. রাদমানেশ, আশনায়ি বা উলুমে কুরআন, ১৩৭৪ ফার্সি সন, পৃ. ১৭১।
  40. রোকনি, আশনায়ি বা উলুমে কুরআনি, ১৩৭৯ ফার্সি সন, পৃ. ১১১।
  41. মাজলুমি, পেঝুহেশিয়ে পীরামুনে আখেরীন কিতাবে ইলাহি, ১৪০৩ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১৮৮।
  42. মাজলুমি, পেঝুহেশিয়ে পীরামুনে আখেরীন কিতাবে ইলাহি, ১৪০৩ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১৮৮।
  43. মাজলুমি, পেঝুহেশিয়ে পীরামুনে আখেরীন কিতাবে ইলাহি, ১৪০৩ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১৮৮।
  44. মাজলুমি, পেঝুহেশিয়ে পীরামুনে আখেরীন কিতাবে ইলাহি, ১৪০৩ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১৮৮।
  45. রাদমানেশ, আশনায়ি বা উলুমে কুরআন, ১৩৭৪ ফার্সি সন, পৃ. ১৭২।
  46. রাদমানেশ, আশনায়ি বা উলুমে কুরআন, ১৩৭৪ ফার্সি সন, পৃ. ১৭২।
  47. রাদমানেশ, আশনায়ি বা উলুমে কুরআন, ১৩৭৪ ফার্সি সন, পৃ. ১৭২।
  48. রোকনি, আশনায়ি বা উলুমে কুরআনি, ১৩৭৯ ফার্সি সন, পৃ. ১১১।
  49. মাজলুমি, পেঝুহেশিয়ে পীরামুনে আখেরীন কিতাবে ইলাহি, ১৪০৩ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১৮৯।
  50. রামিয়ার, তারিখে কুরআন, ১৩৬৯ ফার্সি সন, পৃ. ৬০৭।
  51. জাওয়ান আরাস্তে, দারস নামেয়ে উলুমে কুরআনি, ১৩৮০ ফার্সি সন, পৃ. ১৩২।
  52. জাওয়ান আরাস্তে, দারস নামেয়ে উলুমে কুরআনি, ১৩৮০ ফার্সি সন, পৃ. ১৩২।
  53. নেকুনাম, দার-অমাদি বার তারিখ গুযারিয়ে কুরআন, ১৩৮০ ফার্সি সন, পৃ. ১১।
  54. নেকুনাম, দার-অমাদি বার তারিখ গুযারিয়ে কুরআন, ১৩৮০ ফার্সি সন, পৃ. ১২-২১।
  55. দেহকানি ওয়া মাহদাভিরাদ, “সেইরে তারিখি শেনাখতে সূরা ওয়া আয়াতে মাক্কী ওয়া মাদানী”, পৃ. ৬৯।
  56. মা’রেফাত, তারিখে কুরআন, ১৩৮২ ফার্সি সন, পৃ. ৫২।
  57. আবুল শুবাহা, আল-মাদখালু লি দারাসাতিল কুরআনিল কারিম, ১৪০৭ হি., পৃ. ২৩৩-২৩৪।
  58. মা’রেফাত, তারিখে কুরআন, ১৩৮২ ফার্সি সন, পৃ. ৫২।

গ্রন্থপঞ্জি

  • আবুল শুবহা, মুহাম্মাদ মুহাম্মাদ, আল-মাদখালু লি দারাসাতিল কুরআনিল কারিম, রিয়াদ, দারুল লিওয়া, ১৪০৭ হি.।
  • আহমাদি, হাবীবুল্লাহ, পেঝুহেশি দার উলুমে কুরআন, কোম, ফাতিমা, ১৩৮১ ফার্সি সন।
  • জাওয়ান আরাস্তে, হুসাইন, দারস নামেয়ে উলুমে কুরআনি, কোম, বুস্তানে কিতাব, ১৩৮০ ফার্সি সন।
  • খামেগার, মুহাম্মাদ, সাখতারে হান্দেসিয়ে সূরেহায়ে কুরআন, তেহরান, সাযেমানে তাবলীগাতে ইসলামি, ১৩৮৬ হি.।
  • দৌলাতি, কারিম, তাকসীমাতে কুরআনি ওয়া সূরায়ে মাক্কী ওয়া মাদানী, তেহরান, ভেযারাতে এরশাদ, ১৩৮৪ ফার্সি সন।
  • দেহকানি, ওয়া মাহদাভিরাদ,«سیر تاریخی شناخت سور و آیات مکی و مدنی», দার মাজাল্লেয়ে তাহকিকাতে উলুমে কুরআন ওয়া হাদীস, সংখ্যা ১০, ১৩৮৭ ফার্সি সন।
  • রাদমানেশ, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ, আশনায়ি বা উলুমে কুরআনি, তেহরান, জামি, ১৩৭৪ ফার্সি সন।
  • রামিয়ার, মাহমুদ, তারিখে কুরআন, তেহরান, আমির কাবির, ১৩৬৯ ফার্সি সন।
  • রোকনি, মুহাম্মাদ মাহদি, আশনায়ি বা উলুমে কুরআনি, তেহরান, সামত, ১৩৭৯ ফার্সি সন।
  • সুয়ুতি, আব্দুর রাহমান, আল-ইতক্বান ফি উলুমিল কুরআন, বৈরুত, দারুল কিতাবিল আরবি, ১৪২১ হি.।
  • তাবাতাবায়ী, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হুসাইন, আল-মীযান ফি তাফসীরিল কুরআন, কোম, দাফতারে ইন্তেশারাতে ইসলামি, ১৪১৭ হি.।
  • মাজলুমি, রাজাব আলী, পেঝুহেশিয়ে পীরামুনে আখেরীন কিতাবে ইলাহি, তেহরান, নাশরে আফাত, ১৪০৩ হি.।
  • মা’রেফাত, মুহাম্মাদ হাদী, আত-তামহীদ ফি উলুমিল কুরআন, কোম, দাফতারে ইন্তেশারাতে ইসলামি, ১৩৮৬ ফার্সি সন।
  • মীর মুহাম্মাদি, আবুল ফাযল, তারিখ ওয়া উলুমে কুরআন, কোম, দাফতারে ইন্তেশারাতে ইসলামি, ১৩৭৭ ফার্সি সন।
  • নেকুনাম, জাফার, দার-অমাদি বা তারিখ গুযারিয়ে কুরআন, তেহরান, নাশরে হাস্তি নামা, ১৩৮০ ফার্সি সন।