কারিমে আহলে বাইত (উপাধি)
কারিমে আহলে বাইত(আরবি:كريم أهل البيت) হচ্ছে ইমাম হাসান মুজতবা (আ.)-এর একটি উপাধি[১], যার অর্থ হল আহলে বাইতের দানশীল ব্যক্তিত্ব। ইমাম হাসানের (আ.) উদারতা এবং বদান্যতার কারণে তাকে এই উপাধি দেওয়া হয়।[২] ‘কারিম’ শব্দটি প্রথম সারির সূত্রগুলোতে ইমাম হাসান (আ.) এর গুণাবলীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে।[৩] তবে ইমাম হাসানের জীবদ্দশায় এবং কুনিয়াত ও উপাধি সম্পর্কিত কোন ঐতিহাসিক ও রেওয়ায়েত ভিত্তিক গ্রন্থে করিমে আহলে বাইত উপাধিটি তাঁর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়নি।[৪]
ইমাম হাসানের (আ.) কারিমে আহলে বাইত হিসেবে খ্যাতি পাওয়ার করার কারণ হিসেবে এমন সব ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে, যা ঐতিহাসিকগণ ইমামের উদারতা ও বদান্যতা সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন।[৫] বলা হয়ে থাকে, ইমাম হাসান (আ.) গরীব ও অভাবগ্রস্থদেরকে এত পরিমাণে দান করতেন, যা অন্য কোন বুজুর্গ ব্যক্তিবর্গের জীবন ইতিহাসে লক্ষ্য করা যায় না।[৬] ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.) ছিলেন তাঁর সময়কার সবচাইতে উদার ব্যক্তি এবং তাঁর এই উদারতা ও বদান্যতা এতটাই বিশাল যে তা প্রবাদে পরিণত হয়। যদিওবা আহলে বাইতের সকল সদস্যই দয়ালু ও উদার, তথাপি শুধুমাত্র ইমাম হাসানই (আ.) ‘কারিম’ উপাধি পেয়েছেন।[৭]
আহলে সুন্নতের বিশিষ্ট আলেম ইবনে জাওযী (মৃত্যু:৬৫৪ হিজরি) তার তাযকিরাতুল খাওয়াছ গ্রন্থে শীয়াদের দ্বিতীয় ইমামকে দান ও উদারতার ক্ষেত্রে মহান ব্যক্তিদের একজন হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং তাঁর ফযিলত বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন যে, হাসান বিন আলী (আ.) তাঁর জীবদ্দশায় দুইবার সমস্ত ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিয়েছেন এবং তিনবার নিজের অর্থ-সম্পদ গরীবদের মাঝে সমানভাবে বন্টন করে দিয়েছেন।[৮] আরও বর্ণিত হয়েছে যে, একজন দরিদ্র ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে ইমাম তাকে বিশ হাজার দিরহাম সাহায্য করেন।[৯]
বিশিষ্ট শিয়া পণ্ডিত বাকের শরীফ কারশী (মৃত্যু: ১৪৩৩ হি.) কারিমে আহলে বাইত উপাধি সম্পর্কে একটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেন: ইমাম হাসান মুজতবা (আ.)-এর নিকট জিজ্ঞেস করা হলো, কেন তিনি কখনোই কোন ভিক্ষুককে নিরাশ করেন না? ইমাম উত্তরে বলেন, আল্লাহপাকের কাছে আমিও একজন দরিদ্র ব্যক্তি এবং তার নিকট প্রার্থনা করি যেন আমাকে কোন কিছু থেকে বঞ্চিত না করেন। আর এমন প্রত্যাশা নিয়ে অভাবীদেরকে নিরাশ করতে লজ্জাবোধ করি। এছাড়াও, যে আল্লাহপাক আমার প্রতি এত অনুগ্রহ দেখান, তিনিও চান আমি যেন মানুষকে সাহায্য করি।[১০]
তালখিছুল শাফি গ্রন্থের গবেষক সাইয়্যেদ হুসাইন বাহরুল উলুমের (মৃত্যু: ১৩৮০ ফার্সি সন) ভাষ্য মতে, ইমাম হাসানের (আ.) কারিম হওয়ার বিষয়টি নিয়ে যতখানি আলোচনা করা সম্ভব; প্রকৃতপক্ষে, বিষয়টি তার চাইতে আরও অনেক ব্যাপকতর।[১১]
বিশিষ্ট শিয়া পণ্ডিত ও কাশফুল গিতা গ্রন্থের প্রণেতা (মৃত্যু: ১৩৬১ হিজরী) শেইখ হাদী, ইমাম হাসান (আ.)-এর গুণাবলী নিয়ে যে কবিতাটি রচনা করেছেন, তাতে করিম-এ-আহলে বাইতের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন:
যেমন ইমাম হাসান পবিত্র ও ত্রুটি মুক্ত, তেমনি তাঁর পিতামহ, পিতা ও মাতা হলেন সর্বোত্তম মানুষ। তিনি এমন এক কারিমে আহলে বাইত যার পুরো পরিবারই হলো মহান। এই পরিবারের উপর দরূদ হোক নামাযের পর।
ইরানে কোন কোন দাতব্য সংস্থাকে কারিমে আহলে বাইত হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
গ্রন্থপঞ্জি
- আগাবুযুর্গে তেহরানী, মুহাম্মদ মোহসেন, আয যারিয়াহ ইলা তাসানিফিশ শিয়া, বৈরুত, দারুল আদ্বওয়া, ১৪০৩ হি.।
- আল সাইফ, ফাওযী, সাইয়্যেদুল জান্নাত আল-ইমামুল হাসান আলাইহিস সালাম, বৈরুত, ১৪৪৩ হি.।
- ইবনে জাওযী, ইউসুফ বিন কাযা ওয়া গালা, তাযকিরাতুল খাওয়াছ, কোম, শারফে রাদ্বী, ১৩৭৬ ফার্সি সন।
- «پایگاه اطلاعرسانی خیریهها و سمنهای کشور», পরিদর্শন: ১৪ অবান ১৪০২ ফার্সি সন।
- হাকিম, সাইয়্যেদ মানযার, পিশাভায়ানে হেদায়াত, কোম, মাযমা' জাহানিয়ে আহলে বাইত, ১৩৮৫ ফার্সি সন।
- «چرا به امام حسن مجتبی(ع) کریم میگویند؟», ইসনা নিউজ, দারজে মাতলাব: ১৭ ফারওয়ারদীন ১৪০২ ফার্সি সন, পরিদর্শন: ৭ অবান ১৪০২ ফার্সি সন।
- রাযাভী, সাইয়্যেদ আব্বাস, «کریم اهلبیت»، ফারহাঙ্গে কাওসার, পাইয ১৩৮২ ফার্সি সন।
- শুশতারী, কাজী নুরুল্লাহ, আহকাকুল হাক্ব ওয়া আযহাকুল বাতিল, মুকাদ্দামে ওয়া তাবলীগাত আয আয়াতুল্লাহ আল উযমা মারা'শী নাজাফী, মাকতাবাতু আয়াতুল্লাহ আল-মারা'শী আল-নাজাফী, কোম, প্রথম সংস্করণ, ১৪০৯ হি.।
- তুসী, মুহাম্মাদ বিন হাসান, তালখিছ আল-শাফী, কোম, মুহিব্বিন, ১৩৮২ ফার্সি সন।
- আকিল, মোহসেন, মান আরওয়া' মা কালাহুল ইমামুল হাসান আলাইহিস সালামিল মুজতবা, বৈরুত, দারুল মুজতবা আল বাদ্বা, ১৪৩০ হি.।
- কারশী, বাকের শারীফ, আন নেযামুত তুরবাওয়া ফিল ইসলাম, দারুল কিতাব আল-ইসলামী।
- কারশী, বাকের শারীফ, দানেশ নমেয়ে ইমাম আমীরুল মু'মিনীন আলী ইবনে আবি তালিব, কোম, দারুত তাহযীব, ১৩৯৪ ফার্সি সন।
- মুহাক্কেক আরযেগানী, কোরবান আলী, ফাযায়েলে আইম্মে আতহার আলাইহিমুস সালাম আয দিদগাহে আহলে সুন্নাত, কোম, মাজমায়ে জাহানীয়ে শিয়ে শেনাছি, ১৩৯৫ ফার্সি সন।
- নাযারী মুনকারাদ, আলী, আস সোলহুদ দামি, বৈরুত, দারুর রাসুল আকরাম (স.), ১৪২৯ হি.।
- ইয়াকুবী, আহমাদ বিন আবি ইয়াকুবী, তারিখুল ইয়া'কুবী, বৈরুত, দারুস সাদর, তারিখ নেই।