শীয়া মাযহাবের মূলনীতি

wikishia থেকে
(শিয়া মাযহাব থেকে পুনর্নির্দেশিত)
এই নিবন্ধটি শীয়া মাযহাবের মূলনীতি সম্পর্কে, দ্বীন ইসলামের মূলনীতি সম্পর্কে জানতে ধর্মের মূলনীতি নিবন্ধটি দেখুন।

শীয়া মাযহবের মূলনীতি (আরবিঃ أصول المذهب الشيعي); শীয়া মাযহবের মৌলিক বিশ্বাসের মধ্যে রয়েছে তাওহীদ (একত্ববাদ), নবুওয়াত, পুনরুত্থান বা কিয়ামত, ন্যায়বিচার এবং ইমামত। শীয়াদের আকিদা-বিশ্বাস মতে, প্রথম তিনটি মূলনীতির প্রত্যেকটিকে অস্বীকার করা (একত্ববাদ, নবুওয়াত এবং পুনরুত্থান), যা ধর্মের মূলনীতিতে, অবিশ্বাসের কারণ। তবে যাইহোক, আদল বা ন্যায়বিচার ও ইমামত এ দুটি নীতির কোনোটিতে বিশ্বাস না করলে, এটি শীয়া মাযহাব থেকে বের হয়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, না দ্বীন ইসলাম থেকে।

ইমামত, ধর্মের মূলনীতির অধীনে স্থান দেওয়াতে শীয়া (আহলে বাইত)কে অন্যান্য সব ইসলামী সম্প্রদায় থেকে পৃথক করেছে এবং এই কারণে তাদেরকে ইমামিয়া বলা হয়। এছাড়াও, ‘ন্যায় বিচার’ (দ্বীনের) মূলনীতি হিসেতে বিশ্বাস, মু'তাযিলাকে আশআরী থেকে আলাদা করেছে এবং শীয়া ও মু'তাযিলাকে আদলিয়াহ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।

অবস্থান

শীয়া মাযহবের মূলনীতিগুলিকে পাঁচটি মূলনীতি (একত্ববাদ, নবুওয়াত, কিয়ামত বা পুনরুত্থান, ইমামত এবং ন্যায়বিচার) বলা হয়[১] যা শীয়া মাযহবের মূল ভিত্তি ও স্তম্ভ গঠন করে।[২] এই সমস্ত মূলনীতিতে বিশ্বাস করা, একজন ব্যক্তিকে শীয়া বলে বিবেচিত করা হয় এবং এর কোন একটিতে বিশ্বাস না করা, তাকে শীয়া মাযহাব থেকে বের করে দেয়। অবশ্য একত্ববাদ, নবুওয়াত ও কিয়ামত বা পুনরুত্থান এই মূলনীতি তিনটি, ধর্মের মূলনীতির মধ্যে রয়েছে এবং এগুলোর কোনো একটিতে বিশ্বাস না করা, কুফর ও ইসলাম ধর্ম ত্যাগের দিকেও নিয়ে যায়।[৩]

বিশিষ্ট মূলনীতি

ইমামত [৪] এবং আদল[৫] এ দুটি হচেছ- শিয়া মাযহাবের একান্ত বিশিষ্ট মূলনীতি।

ইমামত

মূল প্রবন্ধ: ইমামত

ইমামত (ইসলামী সমাজের নেতৃত্ব প্রদান করা এবং নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উত্তরাধিকার বা স্থলাভিষিক্ত) এটি একটি ঐশ্বরিক পদ বলে বিশ্বাস করা[৬] এবং আল্লাহর তরফ থেকে, নবী (সা.)-এর বারোজন সন্তানকে এই পদে নিযুক্ত হয়েছেন।

ইমামতের ক্রম অনুসারে ইমামদের নাম নিম্নরূপ:

‘ইমামত’ মাযহাবের মূলনীতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত কেন?

‘আসলু আশ্ শীয়াতি ওয়া উসূলিহা’ গ্রন্থে মুহাম্মদ হোসাইন কাশিফ আল-গেতার মতে, ইমামত হল আসল বা মূলনীতি যা শীয়াকে অন্যান্য ইসলামিক সম্প্রদায় থেকে পৃথক করে।[৮] এই কারণে বারো ইমামের অনুসারীগণ, ‘ইমামিয়া’ নামে পরিচিত[৯] এবং ইমামত হল শিয়া ধর্মের অন্যতম মূলনীতি। আর যে ব্যক্তি এটা মেনে নেবে না সে শীয়া মতের বৃত্ত থেকে বের হয়ে যাবে।[১০]

ন্যায়বিচার

মূল নিবন্ধ: আল্লাহর ন্যায়বিচার

যা বিশ্বাস করা, মহান আল্লাহ সৎভাবে কাজ করেন এবং সৃষ্টির ব্যবস্থাপনা এবং আইন প্রণয়ন উভয় ক্ষেত্রেই জুলুম-অত্যাচার করেন না।[১১] আদলিয়্যাহ (শিয়া এবং মু'তাজিলা) ভাল এবং মন্দ জিনিসগুলিকে যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করে এবং বিশ্বাস করে যে,মহান আল্লাহ ন্যায়পরায়ণ, যার অর্থ হল, তিনি বস্তুসমূহের ভালোর উপর ভিত্তি করে কাজ করেন এবং তাদের মন্দ বা কদর্যতার কারণে তাদের ওপর জুলুম বা অত্যাচার করেন না।[১২]

বিপরীত দিকে, আশ'আরী বিশ্বাস করেন যে, আচরণের ন্যায্যতার মাপকাঠি হল মহান আল্লাহর কাজ, এবং আল্লাহ যা করেন তা ভাল এবং ন্যায়সঙ্গত, যদিও তা মানুষের দৃষ্টিতে অত্যাচার মনে হয়।[১৩]

‘ন্যায়বিচার’ মাযহাবের মূলনীতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত কেন?

মিসবাহ ইয়াজদি(১৩১৩-১৩৯৯), একজন শীয়া দার্শনিক এর মতে, কালাম শাস্ত্র বা ধর্মতত্ত্বে এর গুরুত্বের কারণে ন্যায়বিচারকে শীয়া এবং মু'তাজিলা মাযহাবের অন্যতম মূলনীতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[১৪] এছাড়াও, মোর্তেজা মোতাহারী ১২৯৮-১৩৫৮) শীয়া চিন্তাবিদ জানতেন যে শিয়া মাযহাবের মূলনীতিগুলির মধ্যে ন্যায়বিচারকে অন্তর্ভুক্ত করার কারণ হল, মুসলমানদের মধ্যে মানুষের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন ইচ্ছাকে অস্বীকার করার মতো বিশ্বাসের উদ্ভব, যার ফলে তাদের এ মতের ভিত্তিতে, একজন অসহায় ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া আল্লাহর ন্যায়বিচারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।[১৫]

শিয়া ও মু'তাযিলা, মানুষের বাধ্যবাধকতাকে আল্লাহর ন্যায়বিচারের পরিপন্থী মনে করেন এবং এ কারণে তারা ‘আদলিয়া’ নামে পরিচিত হয়ে ছিলেন।[১৬]

যৌথ মূলনীতি

মূল নিবন্ধ: ধর্মের মূলনীতি

তথ্যসূত্র

  1. মোহাম্মাদ রেই শাহরী, দানেশনামেহ আকায়েদে ইসলামী, ১৩৮৫ (সৌরবর্ষ), খঃ৮, পৃঃ৯৭।
  2. মোহাম্মাদ রেই শাহরী, দানেশনামেহ আকায়েদে ইসলামী, ১৩৮৫ (সৌরবর্ষ), খঃ৮, পৃঃ৯৯।
  3. ইমাম খোমিনী, কিতাবুত্ তাহারাত, ১৪২৭ হিঃ, খঃ৩, পৃঃ৪৩৭-৪৩৮।
  4. সুবহানী, আল ইলাহিয়্যাত আলা হুদাল কিতাবি ওয়াস সুন্নাতি ওয়াল আক্বলি, ১৪১৭ হিঃ, খঃ৪, পৃঃ১০।
  5. মিসবাহ ইয়াযদী, আমুযেশে আকাইদ, ১৩৮৪ (সৌরবর্ষ), পৃঃ১৬১।
  6. কাশিফুল গিতাঅ্, ‍আছলুশ শীয়াতি ও উছুলিহা, মুয়াস্সাসাতুল ইমাম আলী (আ.), পৃঃ২১১।
  7. শেইখ সাদুক, কামালুদ্দিন ও তামামুন্নিমাহ, ১৩৯৫ হিঃ, খঃ১, পৃঃ২৫৩-২৫৪।
  8. কাশিফুল গিতাঅ্, ‍আছলুশ শীয়াতি ও উছুলিহা, মুয়াস্সাসাতুল ইমাম আলী (আ.), পৃঃ২২১।
  9. কাশিফুল গিতাঅ্, ‍আছলুশ শীয়াতি ও উছুলিহা, মুয়াস্সাসাতুল ইমাম আলী (আ.), পৃঃ২১১।
  10. কাশিফুল গিতাঅ্, ‍আছলুশ শীয়াতি ও উছুলিহা, মুয়াস্সাসাতুল ইমাম আলী (আ.), পৃঃ২১১।
  11. মুতাহারী, মাজমুয়ে আসার, ১৩৯০ (সৌরবর্ষ), খঃ২, পৃঃ১৪৯।
  12. সুবহানী, রাসায়েল ও মাকালাত, ১৪২৫ হিঃ, খঃ৩, পৃঃ৩২।
  13. সুবহানী, রাসায়েল ও মাকালাত, ১৪২৫ হিঃ, খঃ৫, পৃঃ১২৭।
  14. মিসবাহ ইয়াযদী, আমুযেশে আকাইদ, ১৩৮৪ (সৌরবর্ষ), পৃঃ১৬১।
  15. মুতাহারী, মাজমুয়ে আসার, ১৩৯০ (সৌরবর্ষ), খঃ২, পৃঃ১৪৯।
  16. মুতাহারী, মাজমুয়ে আসার, ১৩৯০ (সৌরবর্ষ), খঃ২, পৃঃ১৪৯।
  17. কাশিফুল গিতাঅ্, ‍আছলুশ শীয়াতি ও উছুলিহা, মুয়াস্সাসাতুল ইমাম আলী (আ.), পৃঃ২১৯।
  18. কাশিফুল গিতাঅ্, ‍আছলুশ শীয়াতি ও উছুলিহা, মুয়াস্সাসাতুল ইমাম আলী (আ.), পৃঃ২২০।
  19. মাজলেসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হিঃ, খঃ১১, পৃঃ৩২।
  20. সুরাঃ আহযাব-৪০।
  21. কাশিফুল গিতাঅ্, ‍আছলুশ শীয়াতি ও উছুলিহা, মুয়াস্সাসাতুল ইমাম আলী (আ.), পৃঃ২২২।

গ্রন্থপঞ্জি

  • ইমাম খোমিনী, সাইয়্যেদ রূহুল্লাহ, কিতাবুত্ তাহারাত, তেহরান, মুয়াস্সেসেয়ে তানযিম ও নাশরে আসারে ইমাম খোমিনী, ১৪২৭ হিঃ।
  • খাযযায রাযী, আলী বিন মোহাম্মাদ, কিফায়াতুল আসারি ফিন নাস্সি আলাল আইম্মাতিল ইসনা আশারা, তাছহিহ: আব্দুল লাতিফ হোসাইনী কুহকামারী, কোম, বিদার, ১৪০১ হিঃ।
  • সুবহানী, জাফর, রাসায়েল ও মাকালাত, কোম, মুয়াস্সাসাতুল ইমাম সাদেক (আ.), ১৪২৫ হিঃ।
  • সুবহানী, জাফর, আল ইলাহিয়্যাত আলা হুদাল কিতাবি ওয়াস সুন্নাতি ওয়াল আক্বলি, বে ক্বালামে শেইখ হাসান আমেলী, কোম, মুয়াস্সাসাতুল ইমাম সাদেক (আ.), চতুর্থ প্রকাশ, ১৪১৭ হিঃ।
  • শেইখ সাদুক, মোহাম্মাদ বিন আলী, কামালুদ্দিন ও তামামুন্নিমাহ, তাছহিহ: আলী আকবার গাফ্ফারী, তেহরান, ইসলামিয়্যাহ, ১৩৯৫ হিঃ।
  • কাশিফুল গিতাঅ্, মোহাম্মাদ হোসাইন, ‍আছলুশ শীয়াতি ও উছুলিহা, তাহকিক: আলাঅ্ আলে জাফর, মুয়াস্সাসাতুল ইমাম আলী (আ.), (প্রকাশের তারিখ অজ্ঞাত)।
  • লাহিজী, আব্দুর রাজ্জাক, গওহার মুরাদ, মুকাদ্দেমে যায়নুল আবেদীন কুরবানী, তেহরান, নাশরে সায়েহ, প্রথম প্রকাশ, ১৩৮৩ (সৌরবর্ষ)।
  • মাজলেসী, মোহাম্মাদ বাকের, বিহারুল আনওয়ার, বৈরুত, দারু ইহয়ায়িত্ তুরাসির আরাবী, ১৪০৩ হিঃ।
  • মোহাম্মাদ রেই শাহরী, মোহাম্মাদ, দানেশনামেহ আকায়েদে ইসলামী, কোম, দারুল হাদিস, ১৩৮৫ (সৌরবর্ষ)।
  • মিসবাহ ইয়াযদী, মোহাম্মাদ তাক্বী, আমুযেশে আকাইদ, তেহরান, নাশরে সাজমানে তাবলিগাতে ইসলামী, ১৭ম প্রকাশ, ১৩৮৪ (সৌরবর্ষ)।
  • মুতাহারী, মুর্তুজা, মাজমুয়ে আসার, তেহরান, নাশরে সাদরা, ১৩৯০ (সৌরবর্ষ)।