মাযহাবের প্রয়োজনীয়তা

wikishia থেকে

মাযহাবের প্রয়োজনীয়তা হল হুকুম-আহকাম এবং আকিদা-বিশ্বাস যা একটি মাযহাবের সাধারণ অনুসারীরা তাদের মাযহাব ও ধর্মের অংশ হিসাবে বিবেচনা করে। অধিকাংশ ধর্মীয় আলেমগণের দৃষ্টিতে, একটি মাযহাবের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা, ব্যক্তিকে সেই মাযহাব ত্যাগ করার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, কিন্তু এটি ব্যক্তির ধর্ম ত্যাগ করার কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। ইমামীয়া মাযহাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল আল্লাহর পক্ষ থেকে বারো ইমামের ইমামতে বিশ্বাস করা।

পরিভাষা পরিচিতি

জারুরী (প্রয়োজনীয়) অর্থ স্ব-প্রকাশ্য এবং তিনটি ফেকহী (আইনশাস্ত্রীয়) পরিভাষার ক্ষেত্রে প্রয়োজন

“ধর্মের প্রয়োজনীয়তা”

"মাযহাবের প্রয়োজনীয়তা"

এবং ফিকহ বা "আইনশাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা" হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়েছে।[1]

দ্বীন বা ধর্মের প্রয়োজনীয়তা

মূল নিবন্ধ: দ্বীন বা ধর্মের প্রয়োজনীয়তা

দ্বীন বা ধর্মের প্রয়োজনীয়তা (ইসলাম ধর্ম) হল, হুকুম-আহকাম, নিয়ম-কানুন এবং আকাঈদ-বিশ্বাস যা সমস্ত ইসলামী দল এবং মাযহাব বা সম্প্রদায় স্পষ্টভাবে সেগুলোকে ধর্মের অংশ হিসাবে জ্ঞান করে। উদাহরণস্বরূপ- দৈহিক পুনরুত্থান এবং নামাজ ওয়াজিব বা ফরজ হওয়া। দ্বীন বা ধর্মের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা, প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ অথবা রাসূল (সা.)-এর বাণীসমূহকে মিথ্যা বলে বিশ্বাস করা ধর্মত্যাগের অন্যতম একটি কারণ।

"মাযহাবের প্রয়োজনীয়তা"

মাযহাবের অপরিহার্যতা হল হুকুম-আহকাম এবং আকিদা-বিশ্বাস যা একটি মাযহাবের সাধারণ অনুসারীরা তাদের মাযহাব ও ধর্মের অংশ হিসাবে জ্ঞান বা বিবেচনা করে। কারণ প্রতিটি মাযহাবের অনুসারীরা সেই মাযহাবকেই সঠিক ও ধর্মকে সত্য বলে মনে করে, সাহেবে জাওয়াহের বা জাওয়াহের গ্রন্থের লেখকের মতো ফকীহ বা আইনশাস্ত্রবিদরা এসব লোকদের জন্য সমানভাবে মাযহাবকে অপরিহার্য বলে মনে করেছেন।(২)

ফিকহ বা আইনশাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা

ফিকহী বা আইনশাস্ত্রীয় প্রয়োজনীয়তাকে দুইভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে(৩)

  • যে বিষয়গুলোতে সকল ফকীহ বা ফিকাহবিদ ইজমা ও ঐক্যমত পোষণ করেন এবং সেটাকে গ্রহণ করেন।
  • যে বিষয়গুলো ফিকহ ও আইনশাস্ত্রের ভিত্তি এবং সেগুলোকে বাদ দিয়ে ফিকহ বা আইনশাস্ত্র সংগঠিত হতে পারে না।

নমুনাসমূহ

ইমামিয়্যাহ মাযহাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ইমামতে বিশ্বাস করা এবং ইমামদেরকে মাসুম বা নিষ্পাপ মনে করা(৪)। শীয়া মাযহাবের অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলির মধ্যে, আযানে "হায়য়ি আলা খাইরিল আমল"-কে আযানের অংশ এবং মুতাহ বিবাহকে বৈধ ও হালাল বলে জ্ঞান করা হয়(৫)।

মাযহাবের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার ফেকহী নির্দেশ

অধিকাংশ ফকীহ (আইনশাস্ত্রবিদ) বিশ্বাস করেন যে, শীয়া মাযহাবের অপরিহার্য বিষয়সমূহের একটিকে গ্রহণ না করা বা অস্বীকার করা, ব্যক্তির এই মাযহাব থেকে বের হয়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়(৬)। অন্যদিকে, হাদায়েক গ্রন্থের লেখকের মতো ফকীহ বা আইনশাস্ত্রবিদগণ মাযহাবের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকারকে ধর্মত্যাগের কারণ বলে মনে করেন;(৭) আবার কেউ কেউ, জাওয়াহের গ্রন্থের লেখকের মতে, মাযহাব গ্রহণকারী ব্যক্তির দ্বারা এই মাযহাবের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা, ধর্মের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করার সমতু্‌ল্য, তারা এটাকে ধর্মত্যাগের কারণ হিসেবে বিবেচনা করেন(৮)। কেউ কেউ (যেমন সাইয়েদ আব্দুল আলা সাবজেভারী) বিশ্বাস করেন যে, শুধুমাত্র মাযহাবের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার যদি তাওহীদ বা রেসালাতকে অস্বীকার করার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তা ধর্ম ত্যাগের কারণ হবে।[9][10]

তথ্যসূত্র


গ্রন্থপঞ্জি

  • ফাসলনামেহ নাগদে কিতাবে ফিকহ ও হুকুক্ব, প্রথম বর্ষ, শোমারেহ ৩ ও ৪, মাকালেহ তালাশে গাইরে যারুরী বারায়ে তাবয়িনে যারুরী।
  • মোহাম্মাদ হাসান ইবনে বাকের, সাহেবে জাওয়াহের, জাওয়াহেরুল কালাম ফি শারহি শারাইয়িল ইসলাম, বৈরুত, দারু ইহয়ায়ি তুরাসিল আরাবী।
  • সিরাতুন নাজাতি ফি আজভেবাতিল ইস্তিফতায়াত, মির্জা জাওয়াদ তাবরিযী, প্রথম প্রকাশ, দপ্তরে নাশরে বারগুযিদে, ১৪১৮ হিঃ।
  • মাযহাবুল আহকামি ফি বায়ানিল হালালি ওয়াল হারামি, সাইয়্যেদ আব্দুল আলা সাবযেওয়ারী, প্রথম প্রকাশ, নাশরে দারুত তাফাসির, ১৪৩০ হিঃ।
  • ফারহাঙ্গে ফিকহে ফারসি, যির নাযারে আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ মোহাম্মাদ শাহরুদী, ইন্তেশারাতে মুয়াস্সেসেয়ে দায়েরাতুল মায়াফে ফিকহে ইসলামী।
  • আল মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতু, কোম, ইন্তেশারাতে মুয়াস্সেসেয়ে দায়েরাতুল মায়াফে ফিকহে ইসলামী, ১৪২৩ হিঃ।
  • আল মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাতু মুয়াস্সারাতু, মোহাম্মাদ আলী আনসারী, কোম, মাজমাউল ফিকরিল ইসলামী, ১৪২৪ হিঃ।