ব্যবহারকারী:W.Alhassan/2
تبارنامه حضرت فاطمه زهرا
تبارنامه امام حسین
تبارنامه امام صادق
تبارنامه امام موسی کاظم
تبارنامه امام جواد
تبارنامه امام هادی
تبارنامه امام حسن عسکری
شجرهنامه پیامبر اسلام
سوره انسان
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
﴿۱﴾ هَلْ أَتَى عَلَى الْإِنْسَانِ حِينٌ مِنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُنْ شَيْئًا مَذْكُورًا
﴿۲﴾ إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ نُطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا
﴿۳﴾إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا
﴿۴﴾إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ سَلَاسِلَ وَأَغْلَالًا وَسَعِيرًا
﴿۵﴾إِنَّ الْأَبْرَارَ يَشْرَبُونَ مِنْ كَأْسٍ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا
﴿۶﴾عَيْنًا يَشْرَبُ بِهَا عِبَادُ اللَّهِ يُفَجِّرُونَهَا تَفْجِيرًا
يُوفُونَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُونَ يَوْمًا كَانَ شَرُّهُ مُسْتَطِيرًا
وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا
إِنَّا نَخَافُ مِنْ رَبِّنَا يَوْمًا عَبُوسًا قَمْطَرِيرًا
فَوَقَاهُمُ اللَّهُ شَرَّ ذَلِكَ الْيَوْمِ وَلَقَّاهُمْ نَضْرَةً وَسُرُورًا
وَجَزَاهُمْ بِمَا صَبَرُوا جَنَّةً وَحَرِيرًا
مُتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ لَا يَرَوْنَ فِيهَا شَمْسًا وَلَا زَمْهَرِيرًا
وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًا
وَيُطَافُ عَلَيْهِمْ بِآنِيَةٍ مِنْ فِضَّةٍ وَأَكْوَابٍ كَانَتْ قَوَارِيرَا
قَوَارِيرَ مِنْ فِضَّةٍ قَدَّرُوهَا تَقْدِيرًا
وَيُسْقَوْنَ فِيهَا كَأْسًا كَانَ مِزَاجُهَا زَنْجَبِيلًا
عَيْنًا فِيهَا تُسَمَّى سَلْسَبِيلًا
وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَنْثُورًا
وَإِذَا رَأَيْتَ ثَمَّ رَأَيْتَ نَعِيمًا وَمُلْكًا كَبِيرًا
عَالِيَهُمْ ثِيَابُ سُنْدُسٍ خُضْرٌ وَإِسْتَبْرَقٌ وَحُلُّوا أَسَاوِرَ مِنْ فِضَّةٍ وَسَقَاهُمْ رَبُّهُمْ شَرَابًا طَهُورًا
إِنَّ هَذَا كَانَ لَكُمْ جَزَاءً وَكَانَ سَعْيُكُمْ مَشْكُورًا
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْقُرْآنَ تَنْزِيلًا
فَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ وَلَا تُطِعْ مِنْهُمْ آثِمًا أَوْ كَفُورًا
وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ بُكْرَةً وَأَصِيلًا
وَمِنَ اللَّيْلِ فَاسْجُدْ لَهُ وَسَبِّحْهُ لَيْلًا طَوِيلًا
إِنَّ هَؤُلَاءِ يُحِبُّونَ الْعَاجِلَةَ وَيَذَرُونَ وَرَاءَهُمْ يَوْمًا ثَقِيلً
نَحْنُ خَلَقْنَاهُمْ وَشَدَدْنَا أَسْرَهُمْ وَإِذَا شِئْنَا بَدَّلْنَا أَمْثَالَهُمْ تَبْدِيلًا
إِنَّ هَذِهِ تَذْكِرَةٌ فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ إِلَى رَبِّهِ سَبِيلًا
وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا يُدْخِلُ مَنْ يَشَاءُ فِي رَحْمَتِهِ وَالظَّالِمِينَ أَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا
মহাকালের মধ্য হতে মানুষের উপর কি এমন একটা সময় অতিবাহিত হয়নি যখন সে উল্লেখ করার যোগ্য কোন বস্তুই ছিল না?
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সংমিশ্রিত শুক্রবিন্দু থেকে তাকে পরীক্ষা করার জন্য, এজন্য তাকে করেছি শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির অধিকারী।
আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।
আমি (অকৃতজ্ঞ) কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি শেকল, বেড়ি আর জ্বলন্ত আগুন।
(অপরদিকে) নেককার লোকেরা এমন পানপাত্র থেকে পান করবে যাতে কর্পুরের সংমিশ্রণ থাকবে।
আল্লাহর বান্দারা একটি ঝর্ণা থেকে পান করবে। তারা এই ঝর্ণাকে (তাদের) ইচ্ছেমত প্রবাহিত করবে।
যারা মানত পূরণ করে আর সেই দিনকে ভয় করে যার অনিষ্ট হবে সুদূরপ্রসারী।
তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে।
তারা বলেঃ কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।
আমরা কেবল ভয় করি আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এক ভীতিপ্রদ ভয়ানক দিনের।
অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে সেদিনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন এবং তাদেরকে দিবেন সজীবতা ও আনন্দ।
এবং তাদের সবরের প্রতিদানে তাদেরকে দিবেন জান্নাত ও রেশমী পোশাক।
তারা সেখানে সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। সেখানে রৌদ্র ও শৈত্য অনুভব করবে না।
জান্নাতের বৃক্ষরাজির ছায়া তাদের উপর থাকবে, আর ফলের গুচ্ছ একেবারে তাদের নাগালের মধ্যে রাখা হবে।
তাদের সামনে ঘুরে ঘুরে রুপার পাত্র পরিবেশন করা হবে আর সাদা পাথরের পানপাত্র।
সেই সাদা পাথরও হবে রুপার তৈরী। তারা এগুলোকে যথাযথ পরিমাণে ভর্তি করবে।
তাদেরকে পান করানোর জন্য এমন পাত্র পরিবেশন করা হবে যাতে আদার মিশ্রণ থাকবে।
সেখানে আছে একটা ঝর্ণা, যার নাম সালসাবীল।
ঘুরে ঘুরে তাদের সেবাদান কার্যে নিয়োজিত থাকবে চিরকিশোরগণ। তুমি যখন তাদেরকে দেখবে, তুমি মনে করবে, তারা যেন ছড়ানো মুক্তা।
তুমি যখন দেখবে তখন দেখতে পাবে ভোগ বিলাসের নানান সামগ্রী আর এক বিশাল রাজ্য।
তাদের আবরণ হবে চিকন সবুজ রেশম ও মোটা রেশম, আর তাদেরকে অলংকারে সজ্জিত করা হবে রুপার কঙ্কণ দ্বারা, আর তাদের রব্ব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পরিচ্ছন্ন পানীয়।
‘এটাই তোমাদের প্রতিদান, তোমাদের চেষ্টা-সাধনা সাদরে গৃহীত হয়েছে।’
(হে নবী!) আমি তোমার কাছে কুরআন অবতীর্ণ করেছি ক্রমে ক্রমে (অল্প অল্প করে)।
কাজেই তুমি ধৈর্য ধ’রে, তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষা কর আর তাদের মধ্যেকার পাপাচারী অথবা কাফিরের আনুগত্য কর না।
আর সকাল-সন্ধ্যায় তোমার রব্ব এর নাম স্মরণ কর।
আর রাতের কিছু অংশে তাঁর জন্য সেজদায় অবনত হও আর রাতের দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর মহিমা বর্ণনা কর।
এ লোকেরা তো পার্থিব জীবনকে ভালবাসে আর তাদের আড়ালে যে (কিয়ামাতের) কঠিন দিন (আসছে) তাকে উপেক্ষা করে।
আমিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছি আর তাদের গঠন মজবুত করেছি। আমি যখন চাইব তখন তাদের স্থলে তাদের মত অন্য লোক আনব।
এটা এক উপদেশ, কাজেই যার ইচ্ছে সে (এ উপদেশ মান্য ক’রে) তার প্রতিপালকের পথ ধরুক।
তোমরা ইচ্ছে কর না আল্লাহর ইচ্ছে ব্যতীত। (অর্থাৎ আল্লাহ কোন কিছু কার্যকর করতে চাইলে তোমাদের মাঝে ইচ্ছে ও শক্তি সঞ্চার করতঃ তোমাদের মাধ্যমে তা কার্যকর করেন)। আল্লাহ সর্বজ্ঞাতা মহাবিজ্ঞানী।
তিনি যাকে ইচ্ছে তাঁর রাহমাতে দাখিল করেন। আর যালিমরা- তাদের জন্য তিনি প্রস্তুত করে রেখেছেন বড়ই পীড়াদায়ক শাস্তি।
الگو:سوره ناس
الگو:سوره فیل
الگو:سوره ماعون
খালিদ বিন ওয়ালিদ মাখজুমী হলেন ইসলামের প্রাথমিক যুগের একজন সেনাপতি, যিনি মুসলমান হওয়ার আগে বদর, উহুদ এবং আহযাবের যুদ্ধে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং মক্কা বিজয়ের আগে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পরে, তিনি মু’তার যুদ্ধ, মক্কা বিজয় এবং হুনাইনের যুদ্ধে অংশ নেন।
খালিদ বিন ওয়ালিদের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ঘটনার মধ্যে রয়েছে, মহানবী (স.) এর সাহাবী মালেক বিন নুওয়াইরার সাথে তার কৃত আচরণ। এই ঘটনায়, যদিওবা মালেক বিন নুওয়াইরা, তার গোত্র এবং বনি তামিম মুসলমান ছিল, তবুও খালিদ তাদের বন্দী করে এবং মালেক বিন নুওয়াইরা ও তার গোত্রের লোকদের নির্দেশ দিয়ে হত্যা করে। ঐ রাতেই, মালেক বিন নুওয়াইরার স্ত্রী’র সাথে রাত্রিযাপন করেন। উমর বিন খাত্তাব, মালেককে হত্যার জন্য খালিদকে কিসাসের (অনুরূপ প্রতিশোধ) যোগ্য মনে করেন এবং তার স্ত্রী’র সাথে সহবাসের জন্য তাকে রজম তথা পাথর মেরে হত্যার উপযুক্ত মনে করেন; কিন্তু আবু বকর মনে করেন, খালিদ তার নিজস্ব ইজতিহাদ অনুযায়ী আমল করেছে এবং এজন্য সে দায়মুক্ত।
বলা হয়ে থাকে, খালিদ ছিলেন ইমাম আলীর (আ.) শত্রু এবং তাঁর হত্যাকাণ্ডে ভূমিকা রেখেছিলেন।
জীবনী ও অবস্থান
খালিদ বিন ওয়ালিদ ছিলেন কুরাইশের বনী মাখজুম খান্দানের।[১] কুরাইশের অন্যতম বৃহৎ ও বিখ্যাত খান্দান হিসেবে পরিচিত বনী মাখজুম সর্বদা বনি হাশিমের সাথে প্রতিযোগিতা করতো।[২] ঐতিহাসিকদের ধারণা অনুযায়ী এবং মৃত্যুর সময় তার বয়স বিবেচনায়, মহানবী’র নবুওয়াত ঘোষণার ২৬ বছর পূর্বে খালিদ মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ওয়ালিদ বিন মুগাইরা’কে কুরাইশের একজন গণমান্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি গণ্য করা হতো।[৩]
ইসলাম গ্রহণের আগে, খালিদ কুরাইশের একজন সম্মানীয় ব্যক্তি ও যোদ্ধা ছিলেন। দ্বিতীয় হিজরীতে, তিনি বদর যুদ্ধে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন[৫] এবং ওয়াকেদি’র ভাষ্যমতে, তিনি মুসলমানদের হাতে বন্দী হন।[৬] তৃতীয় হিজরিতে, তিনি ওহুদের যুদ্ধে কুরাইশের একজন সেনাপতি ছিলেন এবং মুসলমানদের পরাজিত করতে সক্ষম হন।[৭] হিজরতের পঞ্চম বছরে অনুষ্ঠিত হওয়া খন্দক তথা আহযাবের যুদ্ধেও তিনি অংশগ্রহণ করেন।[৮]
তবে, খালিদ বিন ওয়ালিদ অবশেষে ইসলাম গ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণের সঠিক সময় নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে; তবে প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে, তিনি ৮ হিজরীর সফর মাসের প্রথম দিকে, মক্কা বিজয়ের আগে, ইসলাম গ্রহণ করেন।[৯] অন্যান্য সূত্রগুলোতে, তার ইসলাম গ্রহণের সময়কে, হিজরতের পঞ্চম বছর, বনি কুরাইজার যুদ্ধের পর বা হুদাইবিয়া সন্ধি (৬ হিজরির জিলকদ মাস) ও খায়বার বিজয়ের (৭ হিজরীর মুহররম মাস) মধ্যবর্তী কোন সময়ে[১০] অথবা হিজরী ৭ সালে খায়বার যুদ্ধের পর উল্লেখ করা হয়েছে।[১১]
ইমাম আলীর সাথে শত্রুতা
আহলে সুন্নতের একদল ইতিহাসবিদ, খালিদ বিন ওয়ালিদকে একজন সাহসী, তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন, সদয়, মার্জিত ও সৌভাগ্যপূর্ণ নেতা বলে জ্ঞান করেন;[১২] কিন্তু সুলাইম বিন কাইসের বইতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রথম খলিফার জন্য আলী (আ) এর নিকট হতে জোরপূর্বক বাইয়াত গ্রহণের ঘটনায় খালিদ অংশগ্রহণ করেছিলেন।[১৩] এছাড়াও, শিয়া উৎসসমূহে বর্ণিত হয়েছে, খালিদ ইমাম আলী (আ)-এর বিরুদ্ধে কিছু কিছু গোপন কার্যক্রমে, যেমন তাঁর হত্যা পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন। এজন্য এবং তার অন্যান্য কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি কঠোরভাবে সমালোচিত হয়েছেন[১৪]।
হাদীস বর্ণনাকারী
খালিদ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বেশ কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন।[১৫] আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, মিকদাদ ইবনে মা’দি কারাব এবং মালেক বিন হারিসুল আশতার তার থেকে বর্ণনা করেছেন।
যুদ্ধসমূহে ভূমিকা
খালিদ ইসলাম গ্রহণের পর, অষ্টম হিজরী’র জামাদিউল আউয়াল মাসে মু’তার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মুসলিম বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তিরা নিহত হলে, তিনি নেতৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং অবশিষ্ট বাহিনীকে মদীনায় ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।[১৭] অষ্টম হিজরী’র রমজান মাসের ২০ তারিখে মক্কার বিজয়ের সময়ও তিনি উপস্থিত ছিলেন।[১৮] তিনি একটি দলের নেতৃত্বে, মহানবী (স.)-এর নির্দেশে, কুরাইশদের সবচেয়ে বড় মূর্তি আল-উজ্জা ধ্বংস করেন।
ইসলামের দাওয়াত পৌাঁছোনোর দায়িত্ব
৯ হিজরীর রজব মাসে, মহানবী (স.) তাকে ৪২০ জন ঘোড়সওয়ার সহকারে দাওমাতুল জান্দালে دَوْمَةُ الْجَنْدَل খ্রীষ্টান শাসক উকায়দের বিন আবদুল মালেকের দিকে প্রেরণ করেন। তিনি স্বল্প সময়ের জন্য যুদ্ধ করে তাকে বন্দী করেন এবং পরে তার সাথে সন্ধি করেন।[২০] এছাড়াও মহানবী (স.) দশম হিজরীতে খালিদকে ৪০০ জন সহকারে নাজরানে বনী হারিসের কাছে পাঠান এবং তাদের ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান।[২১] এই বছরে, মহানবী (স.) ইয়েমেনে প্রেরণ করেন সেখানকার লোকজনকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য। তিনি ছয় মাস ইয়েমেনে দাওয়াতের কাজ করেন; কিন্তু কেউই তার আহ্বানে সাড়া দিলে মহানবী (স.) ইমাম আলী (আ.)-কে ইয়েমেনে প্রেরণ করেন এবং খালিদকে ফিরে আসার নির্দেশ দেন।[২২]
দুঃসাহসিকতা এবং নিরীহদের হত্যা
খালিদ বিন ওয়ালিদ কোন কোন ক্ষেত্রে নিরীহদের হত্যা করেন এবং মহানবী (স.) তার এমন কাজে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন অথবা তাকে নারী, শিশু এবং কৃতদাসদের হত্যা করতে নিষেধ করেন। মহানবী (স.) অষ্টম হিজরী’র শাওয়াল মাসের শুরুতে খালিদকে মুহাজির, আনসার ও বনি সুলাইম গোত্রের ৩৫০ জনের একটি দলের নেতৃত্বে মক্কার পাশ্ববর্তী বনি জাযিমা’র দিকে প্রেরণ করেন, তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য। বনি জাযিমা নিজেদের মুসলমান হওয়ার কথা ঘোষণা করা সত্ত্বেও এবং অস্ত্র সমর্পণ করা সত্ত্বেও তাদের কিছু লোককে হত্যা করতে খালিদ নির্দেশ দেন। মহানবী (স.) যখন এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হলেন, তিনি খালিদের প্রতি অসন্তুষ্ট হলেন এবং হযরত আলী (আ.)-কে প্রেরণ করেন নিহতদের দিয়া (রক্ত মূল্য) পরিশোধ করার জন্য।[২৩]
এছাড়াও, যখন মহানবী (স.) অষ্টম হিজরীতে মুশরিক গোত্র হাওয়াজেনের বিরুদ্ধে হুনাইন যুদ্ধে যান, খালিদ বনি সুলাইমের ঘোড়সওয়ারদের সাথে সৈন্যদলের সামনে অবস্থান করে এগোতে থাকেন; অথচ যুদ্ধ হতে পলায়নকারীদের মধ্যে ছিলেন। বলা হয়ে থাকে, তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পরে ফিরে আসেন, আহত হন এবং কিছু সংখ্যককে উদাহরণস্বরূপ এক নারীকে হত্যা করেন; তখন মহানবী (স.) তাকে শিশু, নারী এবং কৃতদাসদের হত্যা থেকে নিষেধ করেন।[২৪]
আবু বকর ও উমরের সাথে সহযোগিতা
ওয়াকেদি’র বক্তব্য অনুসারে, খালিদ বিদায় হজ্জের সময় সময় উপস্থিত ছিলেন[২৫] এবং মহানবী’র ইন্তেকালের পর আবু বকরের সমর্থকদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন[২৬]। এজন্য আবু বকরের নিকট তার একটি বিশেষ স্থান ছিল এবং সব সময় তার ছত্রছায়ায় ছিলেন। রিদ্দার যুদ্ধে, আবু বকর খালিদকে প্রথমে আকনাফে তায় গোত্রের দিকে, অতঃপর বুজাখায় তুলাইহা বিন খুওয়াইলিদ আসদির দিকে এবং পরে মালেক বিন নুওয়াইরার দিকে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন এবং বলেন, যদি তারা ইসলাম গ্রহণ না করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। পরবর্তীতে, আবু বকর খালিদকে বুযাখায় পাঠানোর বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। খালিদ, নবুওয়াতের দাবি করা তুলাইহাকে এক কঠিন যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং তার সঙ্গী-সাথীদের কঠোরভাবে দমন করেন। অতঃপর, মালেক বিন নুওয়াইরা এবং তার গোত্র যদিও মুসলমান ছিলেন তবুও তাদেরকে হত্যা করেন এবং তার স্ত্রী’র শয্যাসঙ্গী হন।
খালিদের শরীয়ত বিরোধী কর্মকাণ্ডে কিছু কিছু সাহাবী প্রতিবাদ করেন।[৩২] উমর বিন খাত্তাব, মালেককে হত্যার অপরাধে খালিদকে কিসাসের (অনুরূপ প্রতিশোধ তথা হত্যার শাস্তি হত্যা) যোগ্য মনে করেন এবং তার স্ত্রীর সাথে সহবাসের জন্য পাথর মেরে হত্যার যোগ্য মনে করেন। কিন্তু আবু বকর বলেন, খালিদ তার নিজস্ব ইজতিহাদ অনুযায়ী আমল বা কাজ করেছে, সুতরাং সে দায়মুক্ত।
উমরের খিলাফতের শুরুতে (১৩ হিজরির মাঝামাঝি), খালিদ বিন ওলিদকে শাম বাহিনীর প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং সেই পদে আবু উবাইদা জারাহের নিয়োগ হয়।
মৃত্যু
একটি বর্ণনা অনুসারে, খালিদ পদত্যাগ করা বা বরখাস্ত হওয়ার পরে মদিনায় চলে যান এবং কিছুদিন পরে অসুস্থ হয়ে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। উমর ইবনে খাত্তাব তার জানাযায় অংশগ্রহণ করেন।[৩৮] অপর একটি বর্ণনা অনুযায়ী যা আরও প্রসিদ্ধ, খালিদ পদচ্যুত হওয়ার পরে উমরাহ পালন করেন। তারপর তিনি হিমসের একটি নির্জন স্থানে বসবাস শুরু করেন। তিনি উমরকে তার অছি নির্ধারণ করেন এবং অবশেষে আরও প্রসিদ্ধ মত অনুসারে, হিজরী ২১ সালে বা একটি মতানুসারে ২২ হিজরীতে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন[৩৯] এবং হিমস শহরের হোমায় সমাহিত হন।[৪০] মৃত্যুকালে খালিদের বয়স হয়েছিল ষাট বছর।[৪১]
খালিদ বিন ওয়ালিদ নামক মসজিদটি নয়টি গম্বুজ এবং দুটি মিনার থাকার কারণে বিরাট বিশ্বজোড়া খ্যাতি লাভ করেছিল; তবে ২০১১ সালের পরে দায়েশের আক্রমণের সময় এটি আক্রান্ত হয় এবং মসজিদটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[৪২] টেমপ্লেট:সমাপ্ত
ইউথানাসি এমন একটি প্রক্রিয়া যা একজন ব্যক্তিকে দয়ালু কারণে হত্যা করা বোঝায়, যখন সেই ব্যক্তিটি নিরাময়হীন এবং যন্ত্রণাদায়ক রোগে ভুগছেন। ইউথানাসি সাধারণত একটি বিষাক্ত এবং বেদনাহীন পদার্থ ব্যবহার করে বা প্রয়োজনীয় এবং অপরিহার্য যত্ন ত্যাগ করে সম্পন্ন হয়। প্রথম পদ্ধতিকে সক্রিয় ইউথানাসি এবং দ্বিতীয় পদ্ধতিকে নিষ্ক্রিয় ইউথানাসি বলা হয়; তবে কখনও কখনও রোগীর কাছে এমন কিছু ঔষধ দেওয়া হয় যাতে তিনি নিজে সেগুলি গ্রহণ করে তার জীবন শেষ করতে পারেন। এই কাজটিকে পরোক্ষ ইউথানাসি বলা হয়। ইউথানাসি ধর্মীয় ফিকহের একটি নতুন সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।
ফকিহরা সক্রিয় ইউথানাসিকে হারাম মনে করেন এবং বলেন যে, যদি এটি রোগীর অনুমতি ছাড়াই করা হয়, তবে রোগীর অভিভাবকের কাছে কিসাস বা দিয়া নেওয়ার অধিকার থাকে। তবে রোগী যদি এই কাজ করার অনুমতি দিয়ে থাকে, সে বিষয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে: কিছু বলেন রোগীর অভিভাবকের কিসাস বা দিয়া পাওয়ার অধিকার আছে এবং কিছু বলেন না। নিষ্ক্রিয় ইউথানাসি নিয়েও মতবিরোধ রয়েছে: কিছু বলেন এটি হারাম এবং কিছু বলেন যে, যদি একজন রোগী নিরাময়হীন রোগে ভুগছেন এবং রোগটি চলতে থাকলে যন্ত্রণায় ভুগছেন, তবে তার চিকিৎসা করা আবশ্যক নয়।
ফকিহরা পরোক্ষ ইউথানাসি, অর্থাৎ রোগীর দ্বারা মৃত্যুর ঔষধ গ্রহণকে আত্মহত্যা মনে করেন এবং এর হারাম হিসেবে ফতওয়া দেন।
সংজ্ঞা ও স্থান "ইউথানাসি" একটি এমন ব্যক্তিকে হত্যা করার প্রক্রিয়া, যিনি নিরাময়হীন এবং যন্ত্রণাদায়ক রোগে ভুগছেন। এই কাজটি দয়া থেকে এবং বেদনাহীন পদ্ধতিতে, বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করে বা প্রয়োজনীয় যত্ন ত্যাগ করে সম্পন্ন হয়। ইউথানাসি তিনটি রূপে সম্পন্ন হয়: সক্রিয়, নিষ্ক্রিয় এবং পরোক্ষ। যদি এটি ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীর মৃত্যু ঘটায়, তবে এটি সক্রিয় ইউথানাসি বলে। যদি শুধুমাত্র চিকিৎসা ও চিকিৎসা ত্যাগ করা হয় যাতে রোগী মারা যায়, তবে এটিকে নিষ্ক্রিয় ইউথানাসি বলা হয়। পরোক্ষ ইউথানাসিতে রোগীর কাছে কিছু ঔষধ রাখা হয় যাতে তিনি সেগুলি গ্রহণ করে তার জীবন শেষ করতে পারেন।
শিয়া ধর্মীয় গ্রন্থে (শেখ তুসির জীবদ্দশায় এবং তার আগে) এমন কাউকে হত্যা করা হারাম বলা হয়েছে, যিনি নিজের মৃত্যুতে সন্তুষ্ট, কিন্তু ইউথানাসির বিধান নিয়ে আলোচনা হয়নি। সুতরাং, এই বিষয়টি ধর্মীয় ফিকহের একটি নতুন সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়। ইউথানাসি নিয়ে ধর্মীয় আলোচনা মস্তিষ্কের মৃত্যুর বিষয়ের বাইরে। এইভাবে, একজন ফকিহ মস্তিষ্কের মৃত্যুর রোগী বা কোমায় যাওয়া রোগীকে যিনি নিরাময়ের আশা নেই, তাকে যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করতে যন্ত্রণা ত্যাগ করা বৈধ মনে করতে পারেন; কিন্তু একই ফকিহ নিষ্ক্রিয় ইউথানাসি, অর্থাৎ দয়ার কারণে চিকিৎসা ত্যাগ করা হারাম মনে করতে পারেন।
ইউথানাসির বিধান ইউথানাসির বিধান, অর্থাৎ এটা হারাম নাকি হালাল, শিয়া ফকিহদের দৃষ্টিভঙ্গি নিম্নরূপ:
সক্রিয় ইউথানাসি: শিয়া ফকিহদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ফতোয়া অনুযায়ী, সক্রিয় ইউথানাসি হত্যার শামিল এবং হারাম। ফকিহদের মতে, রোগীর ইউথানাসি করার অনুমতি এবং সম্মতি থাকলেও এটি উপদেশ বিধান পরিবর্তন করে না। নিষ্ক্রিয় ইউথানাসি: কিছু ফকিহ যেমন লুতফুল্লাহ সাফি গুলপায়েগানি এবং হোসেন আলী মনতেজেরি, চিকিৎসা থেকে বিরত থাকা একজন নিরাময়হীন রোগীর জন্য হারাম মনে করেন। এই মতের বিপরীতে, মির্জা জওয়াদ তাবরেজি, সায়েদ আবুলকাসেম খোই এবং সায়েদ আলী খামেনেয়ির মত হলো, এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া আবশ্যক নয়। পরোক্ষ ইউথানাসি: শিয়া ফকিহদের ফতোয়ার মতে, পরোক্ষ ইউথানাসি বা রোগী দ্বারা জীবন শেষ করার ঔষধ গ্রহণকে আত্মহত্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এটি হারাম। ইউথানাসির অবস্থানগত বিধান ইউথানাসির অবস্থানগত বিধান হলো, এটি নিয়ে গৃহীত কার্যকলাপের জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হবে কিনা। এ বিষয়ে ফকিহদের ফতোয়া নিম্নরূপ:
সক্রিয় ইউথানাসি যদি একজন ডাক্তার বা অন্য কেউ রোগীকে তার অনুমতি ছাড়া এবং ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে, তবে তাকে হত্যার দায়ী হিসেবে ধরা হয়; এমনকি যদি সে সহানুভূতি ও দয়ার কারণে এ কাজটি করে। এই কাজের ফলে নিহতের অভিভাবকের জন্য কিসাস বা দিয়া পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়; তবে যদি রোগী তার মৃত্যুর জন্য সম্মতি দেয় এবং অনুমতি দেয়, তবে ফকিহদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে:
কিসাস ও দিয়া পাওয়ার অধিকার নেই: সায়েদ আবদুলআলি সাবজোয়ারি, امام খোমেনি এবং সায়েদ মোহাম্মদসাদিক রুহানি মতানুযায়ী, যেহেতু নিহত ব্যক্তি তার হত্যায় সম্মতি দিয়েছে, তাই কিসাস ও দিয়া পাওয়ার অধিকার নেই। কিসাস ও দিয়া পাওয়ার অধিকার আছে: সায়েদ আবুলকাসেম খোই, মির্জা জওয়াদ তাবরেজি এবং জাফর সাবহানি মতানুযায়ী, নিহতের সম্মতি থাকলেও কিসাস ও দিয়া পাওয়ার অধিকার বাতিল হয় না; কারণ একজন ব্যক্তি নিজের হত্যা করার অনুমতি দিতে পারে না। নিষ্ক্রিয় ইউথানাসি ফকিহদের ফতোয়া অনুযায়ী, যদি কেউ একজনকে মৃত্যুর পরিস্থিতিতে দেখে এবং তাকে বাঁচানোর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাকে বাঁচায় না, তবে সে গুনাহ করেছে, কিন্তু তার উপর দিয়া বা কিসাস নেই। সুতরাং, যদি একজন ডাক্তার রোগীকে চিকিৎসা না করে এবং রোগী চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে মারা যায়, তবে ডাক্তার গুনাহ করেছে, কিন্তু সে দায়ী নয় এবং মৃতের উত্তরাধিকারী কিসাস বা দিয়া পাওয়ার অধিকার রাখে না।
বাংলা=হি
স্বেচ্ছামৃত্যু (আরবি: القتل الرحيم) বলতে বোঝায় আত্মহত্যা বা কোনো ব্যক্তিকে সহানুভূতির বশবর্তী হয়ে হত্যা করা, যা সেই ব্যক্তির কোনো অনিরাময়যোগ্য ও দূর্বিষহ যন্ত্রণাদায়ক রোগের কারণে করা হয়। স্বেচ্ছামৃত্যু সাধারণত প্রাণঘাতী পদার্থ দিয়ে বা জরুরী ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়ে সম্পন্ন করা হয়। প্রথম পন্থাকে সক্রিয় স্বেচ্ছামৃত্যু এবং দ্বিতীয় পদ্ধতিকে পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু বলে অভিহিত করা হয়; তবে কখনও কখনও এমন কিছু ঔষধসামগ্রী রোগীর নিকট দেওয়া হয় যা সে নিজেই ব্যবহার করার মাধ্যমে তার নিজের জীবনের অবসান ঘটায়। এই কাজটিকে বলা হয় পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু। এই বিষয়টিকে আধুনিককালের অন্যতম ফিকহী সমস্যা হিসেবে গণ্য করা হয়।
ফকীহগণ, স্বেচ্ছামৃত্যুকে হারাম জ্ঞান করেন এবং বলেন, যদি এটি রোগীর অনুমতি ছাড়া সম্পাদিত হয়, তবে রোগীর অভিভাবকের কিসাস (অনুরূপ প্রতিশোধ) বা দিয়া’র (রক্তমূল্য) অধিকার থাকবে। তবে, এই কাজ করার ক্ষেত্রে রোগী অনুমতি দিয়ে থাকলে তখন এ বিষয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে: কেউ কেউ বলেন যে, রোগীর অভিভাবকের কিসাস বা দিয়া’র পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং কেউ কেউ বলেন, অধিকার নেই। নিষ্ক্রিয় স্বেচ্ছামৃত্যু সম্পর্কেও ফতওয়াগত মতবিরোধ রয়েছে: কেউ কেউ নিষিদ্ধ বা হারাম হওয়ার ফতওয়া দিচ্ছেন আবার কেউ কেউ বলছেন, যে যদি কোনো ব্যক্তির অনিরাময়যোগ্য রোগ হয় এবং সে ক্রমাগত যন্ত্রণায় ভুগে থাকলে তার চিকিৎসা অব্যাহত রাখা ওয়াজীব নয়।
ফিকাহবিদগণ পরোক্ষ ইচ্ছামৃত্যুকে, অর্থাৎ রোগী কর্তৃক নিজের হাতে প্রাণঘাতী ওষুধ গ্রহণ করাকে আত্মহত্যা জ্ঞান করেন এবং এই কাজ হারাম হিসেবে ফতওয়া জারি করেন।
সংজ্ঞা এবং গুরুত্ব "স্বেচ্ছামৃত্যু" বলতে বোঝায় এমন কোন ব্যক্তিকে হত্যা করা, যিনি কোনো নিরাময়যোগ্য রোগে আক্রান্ত। এটি যত্নসহকারে এবং বেদনাহীনভাবে করা হয়, প্রাণঘাতী পদার্থ দিয়ে বা চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সেবা স্থগিত করার মাধ্যমে। স্বেচ্ছামৃত্যু তিনভাবে করা হয়: সক্রিয়, নিষ্ক্রিয় এবং পরোক্ষ। যদি রোগীকে ওষুধ দিয়ে হত্যা করা হয়, তবে এটিকে সক্রিয় স্বেচ্ছামৃত্যু বলা হয়। যদি রোগীর মৃত্যুর আগে চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে এটিকে নিষ্ক্রিয় ইচ্ছামৃত্যু বলা হয়। পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু, রোগীকে এমন ওষুধ দেওয়া হয়, যাতে রোগী নিজেই নিজের জীবনের অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়।
প্রাচীন শিয়া ফিকহে আমালিতে, শেইখ তুসির সময়ে এবং তার পূর্বে, আলোচনা হয়েছে যে এমন কোন ব্যক্তিকে হত্যা করা হারাম, যিনি তার মৃত্যুতে সম্মতি দিয়েছেন। তবে, স্বেচ্ছামৃত্যু সম্পর্কিত সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এই কারণে, এই বিষয়টিকে ফিকহের অন্যতম আধুনিক সমস্যা হিসেবে ধরা হয়। স্বেচ্ছামৃত্যুর উপর ফিকাহগত আলোচনা ব্রেইন ডেড তথা মস্তিষ্কের মৃত্যুর গন্ডীর বাইরে; এর ফলে, একজন আইনজ্ঞ ব্রেইন ডেড রোগী বা কোমায় পড়ে থাকা রোগী থেকে যন্ত্রটিকে আলাদা করা গ্রহণযোগ্য মনে করতে পারেন, যার চিকিৎসার কোনো আশা নেই। কিন্তু একই ফিকাহবিদ নিষ্ক্রিয় স্বেচ্ছামৃত্যুকে, অর্থাৎ সহানুভূতির কারণে চিকিৎসা বন্ধ করা, হারাম মনে করেন।
স্বেচ্ছামৃত্যুর দায়বদ্ধতা
স্বেচ্ছামৃত্যুর হারাম বা হালাল হওয়ার বিষয়ে শিয়া ফকীহগণের দৃষ্টিভঙ্গি নিম্নরূপ:
সক্রিয় স্বেচ্ছামৃত্যু (চিকিৎসক দ্বারা সভানুভূতির হত্যা): আধুনিক শিয়া আইনজ্ঞদের মতে, সক্রিয় ইচ্ছামৃত্যুকে হত্যা হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এটি হারাম। আইনজ্ঞদের মতে, ইচ্ছামৃত্যু করার জন্য রোগীর অনুমতি এবং সম্মতি থাকলেও ইচ্ছামৃত্যুর দায়বদ্ধতার উপর কোনো প্রভাব পড়ে না; অর্থাৎ, এই ধরনের মৃত্যু হারাম।
নিষ্ক্রিয় ইচ্ছামৃত্যু (রোগীর চিকিৎসা করার থেকে অস্বীকৃতি): কিছু আইনজ্ঞ, যেমন লুত্ফুল্লাহ সাফি গুলপায়েগানি এবং হুসাইন আলী মুনতাজেরি, গুরুতর অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা করতে অস্বীকৃতি জানানোকে হারাম মনে করেন। এর বিপরীতে, মির্জা জওয়াদ তাবরিজি এবং সায়্যিদ আবুল কাসিম খুই এবং সায়্যিদ আলী খামেনেইয়ের মতো আইনজ্ঞদের বিশ্বাস যে এসব পরিস্থিতিতে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া যৌক্তিক নয়।
পরোক্ষ ইচ্ছামৃত্যু: শিয়া আইনজ্ঞদের ফতোয়ার মতে, পরোক্ষ ইচ্ছামৃত্যু, অথবা রোগী কর্তৃক নিজের জীবন শেষ করার জন্য নিজে ওষুধ গ্রহণ, আত্মহত্যা হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এটি হারাম।
ইচ্ছামৃত্যুর আইনগত সিদ্ধান্ত ইচ্ছামৃত্যুতে আইনগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে প্রতিশোধ বা রক্ত-ধন (দিয়াত) যে অপরাধীর উপর আরোপ করা যেতে পারে। এই বিষয়ে আইনজ্ঞরা অসহায়:
সক্রিয় ইচ্ছামৃত্যু: যদি কোনো ডাক্তার বা অন্য ব্যক্তি जानবूझে গুরুতর অসুস্থ রোগীর অনুমতি ছাড়াই হত্যা করে, তবে তাকে হত্যার দায়ী মনে করা হয়; যদিও তিনি দয়ার কারণে তা করেন। এটি আক্রান্তের অভিভাবকের জন্য প্রতিশোধ বা রক্ত-ধনের (দিয়াত) অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। তবে, যদি রোগী তার মৃত্যুতে সম্মতি দেয় বা তাকে এটি হতে দিতে থাকে, তাহলে আইনজ্ঞদের মধ্যে এ বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
প্রতিশোধ এবং রক্ত-ধনের অধিকারের অভাব: সায়্যিদ আব্দুল-আলা সাবজওয়ারি এবং ইমাম খুমেইনির মতো আইনজ্ঞদের মতে, যেহেতু আক্রান্ত ব্যক্তি আত্মহত্যার জন্য সম্মতি দিয়েছেন, তাই প্রতিশোধ এবং রক্ত-ধনের অধিকার রহিত হয়ে যায়; এছাড়াও, সায়্যিদ মুহাম্মদ সাধিক রুহানির ফতোয়ার মতে, একজন ব্যক্তি তার জীবন এবং তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও কাজের মালিক। তাই, আত্মহত্যার অনুমতি ও সম্মতি দিয়ে তিনি প্রতিশোধ এবং রক্ত-ধনের অধিকারের অবসান ঘটিয়েছেন।
প্রতিশোধ এবং রক্ত-ধনের অধিকারের অবলম্বন: সায়্যিদ আবুল কাসিম খুই, মির্জা জওয়াদ তাবরিজি এবং জাফর সুবহানি মতানুসারে, যদিও আক্রান্ত ব্যক্তি সম্মতি দেয় এবং আত্মহত্যার অনুমতি দেয়, কিন্তু প্রতিশোধ এবং রক্ত-ধনের অধিকার মাফ করা যাবে না; কারণ, সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিষয়ের বিপরীতে, একজন ব্যক্তি নিজেকে ধ্বংস করার অনুমতি দিতে পারে না; সুতরাং, নিজেকে ধ্বংস করার অনুমতি দেওয়া প্রতিশোধ এবং রক্ত-ধনের অধিকারকে রহিত করে না।
নিষ্ক্রিয় ইচ্ছামৃত্যু: আইনজ্ঞদের ফতোয়ার মতে, যিনি মারা যাওয়া ব্যক্তিকে দেখেন এবং তাকে বাঁচানোর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাকে বাঁচান না, তিনি রক্ত-ধন বা প্রতিশোধের জন্য দায়ী নয়। এই ভিত্তিতে, যদি কোনো ডাক্তার রোগীর চিকিৎসা না করে এবং তার অবহেলার ফলে রোগী মারা যায়, তবে ডাক্তার পাপ করেছেন; কিন্তু তিনি দায়বদ্ধ নন, এবং মৃতের উত্তরাধিকারীকে প্রতিশোধ বা রক্ত-ধনের অধিকার নেই।
- ↑ খামাকার, মুহাম্মাদ, সাখতারে সূরাহায়ে কুরআনে কারিম, মুয়াসসেসেয়ে ফারহাঙ্গিয়ে কুরআন ওয়া ইরতরাতে নূরুস সাকালাইন, কোম: নাশর, প্রথম সংস্করণ, ১৩৯২ ফার্সি সন।
- ↑ খামাকার, মুহাম্মাদ, সাখতারে সূরাহায়ে কুরআনে কারিম, মুয়াসসেসেয়ে ফারহাঙ্গিয়ে কুরআন ওয়া ইরতরাতে নূরুস সাকালাইন, কোম: নাশর, প্রথম সংস্করণ, ১৩৯২ ফার্সি সন।