ব্যবহারকারী:W.Alhassan/2
এই নিবন্ধটি ইমাম মূসা কাযিম (আ.)-এর সন্তানদের সম্পর্কে। সপ্তম ইমাম এবং তাঁর সাহাবাদের সম্পর্কে অবগতির জন্য দেখুন ইমাম মূসা কাযিম আলাইহিস সালাম এবং ইমাম কাযিম (আ.)-এর সাহাবিদের তালিকা। ইমাম মূসা কাযিম (আ.)-এর সন্তানদের তালিকা
ইমাম কাযিমের সন্তান, শিয়াদের সপ্তম ইমাম মূসা ইবনে জাফর (আ.)-এর কন্যা ও পুত্রদের নামসমূহ।
শেইখ মুফিদ (মৃত্যু:৪১৩ হি.) আল-ইরশাদ গ্রন্থে ইমাম কাযিম (আ.)-এর সন্তান সংখ্যা ৩৭ জন বলে উল্লেখ করেছেন।[১] কিন্তু সুন্নি পণ্ডিত সিবত ইবনে জাওযি (মৃত্যু:৬৫৪ হি.) তার তাযকিরাতুল খাওয়াস গ্রন্থে তাঁর সন্তান সংখ্যা ৪০ জন (২০ পুত্র এবং ২০ কন্যা) বলে উল্লেখ করেছেন।[২] এছাড়াও আল-মাজদি ফি আনসাবিত তালিবিয়্যিন গ্রন্থের লেখক ইবনে সুফি বলেছেন, ইমামের ৩৭ কন্যা এবং ২২ পুত্র ছিল।[৩] যেমন বিশিষ্ট সুন্নি পণ্ডিত ইবনে হাজম আন্দালুসী (মৃত্যু: ৪৫৬ হি.), ইমাম কাযিল (আ.)-এর ১৩ পুত্রের কথা উল্লেখ করেছেন যাদের সন্তান ছিল এবং আরও বলেছেন যে, ইমামের আরও পুত্র ছিল যাদের কোন সন্তান বা বংশধর ছিল না।[৪]তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত পুত্র হলেন ইমাম রেযা (আ.), যিনি শিয়াদের অষ্টম ইমাম, এবং তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কন্যা হলেন ফাতিমা মাসূমা (সা.আ.)।
তথ্যসূত্র
শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৪৪। সিবত ইবনে জাওযি, তাযকিরাতুল খাওয়াস, ১৪১৮ হি., পৃ. ৩১৪। ইবনে সুফি, আল-মাজদি, ১৪২২ হি., পৃ. ২৯৮-২৯৯। ইবনে হাযম, জামহারাত আনসাব আল-আরাব, ১৪১৮ হি., পৃ. ৬১। শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৪৪। ইবনে হাযম, জামহারাত আনসাব আল-আরাব, ১৪১৮ হি., পৃ. ৬১। ইবনে সুফি, আল-মাজদি, ১৪২২ হি., পৃ. ২৯৮-২৯৯। সিবত ইবনে জাওযি, তাযকিরাতুল খাওয়াস, ১৪১৮ হি., পৃ. ৩১৫। শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৪৪। ইবনে সুফি, আল-মাজদি, ১৪২২ হি., পৃ. ২৯৮-২৯৯। সিবত ইবনে জাওযি, তাযকিরাতুল খাওয়াস, ১৪১৮ হি., পৃ. ৩১৫।
গ্রন্থপঞ্জি
- ইবনে হাযম আন্দালুসী, আলী ইবনে আহমাদ, জামহারাত আনসাব আল-আরাব, বৈরুত, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, ১৪১৮ হি.।
- ইবনে সুফি, আলী ইবনে মুহাম্মাদ আলাভি উমারি, আল-মাজদি ফি আনসাবিত তালিবিয়্যিন, তাহকিক: আহমাদ মাহদাভি দামেগানি, কোম, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি আল-নাজাফি, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪২২ হি., সিবত ইবনে জাওযি, *তাযকিরাতুল খাওয়াস, কোম, মানশুরাতুশ শারীফ আল-রাযি, ১৪১৮ হি.।
- শেইখ মুফিদ, মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে নো’মান, আল-ইরশাদ ফি মা’রিফাতি হুজাজিল্লাহি আলাল ইবাদ, তাসহিহ: মুআসসেসেয়ে আলুল বাইত, কোম, কংগ্রেয়ে শেইখ মুফিদ, ১৪১৩ হি.।
تبارنامه حضرت فاطمه زهرا
تبارنامه امام حسین
تبارنامه امام صادق
تبارنامه امام موسی کاظم
تبارنامه امام جواد
تبارنامه امام هادی
تبارنامه امام حسن عسکری
شجرهنامه پیامبر اسلام
سوره انسان
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
﴿۱﴾ هَلْ أَتَى عَلَى الْإِنْسَانِ حِينٌ مِنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُنْ شَيْئًا مَذْكُورًا
﴿۲﴾ إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ نُطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا
﴿۳﴾إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا
﴿۴﴾إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ سَلَاسِلَ وَأَغْلَالًا وَسَعِيرًا
﴿۵﴾إِنَّ الْأَبْرَارَ يَشْرَبُونَ مِنْ كَأْسٍ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا
﴿۶﴾عَيْنًا يَشْرَبُ بِهَا عِبَادُ اللَّهِ يُفَجِّرُونَهَا تَفْجِيرًا
يُوفُونَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُونَ يَوْمًا كَانَ شَرُّهُ مُسْتَطِيرًا
وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا
إِنَّا نَخَافُ مِنْ رَبِّنَا يَوْمًا عَبُوسًا قَمْطَرِيرًا
فَوَقَاهُمُ اللَّهُ شَرَّ ذَلِكَ الْيَوْمِ وَلَقَّاهُمْ نَضْرَةً وَسُرُورًا
وَجَزَاهُمْ بِمَا صَبَرُوا جَنَّةً وَحَرِيرًا
مُتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ لَا يَرَوْنَ فِيهَا شَمْسًا وَلَا زَمْهَرِيرًا
وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًا
وَيُطَافُ عَلَيْهِمْ بِآنِيَةٍ مِنْ فِضَّةٍ وَأَكْوَابٍ كَانَتْ قَوَارِيرَا
قَوَارِيرَ مِنْ فِضَّةٍ قَدَّرُوهَا تَقْدِيرًا
وَيُسْقَوْنَ فِيهَا كَأْسًا كَانَ مِزَاجُهَا زَنْجَبِيلًا
عَيْنًا فِيهَا تُسَمَّى سَلْسَبِيلًا
وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَنْثُورًا
وَإِذَا رَأَيْتَ ثَمَّ رَأَيْتَ نَعِيمًا وَمُلْكًا كَبِيرًا
عَالِيَهُمْ ثِيَابُ سُنْدُسٍ خُضْرٌ وَإِسْتَبْرَقٌ وَحُلُّوا أَسَاوِرَ مِنْ فِضَّةٍ وَسَقَاهُمْ رَبُّهُمْ شَرَابًا طَهُورًا
إِنَّ هَذَا كَانَ لَكُمْ جَزَاءً وَكَانَ سَعْيُكُمْ مَشْكُورًا
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْقُرْآنَ تَنْزِيلًا
فَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ وَلَا تُطِعْ مِنْهُمْ آثِمًا أَوْ كَفُورًا
وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ بُكْرَةً وَأَصِيلًا
وَمِنَ اللَّيْلِ فَاسْجُدْ لَهُ وَسَبِّحْهُ لَيْلًا طَوِيلًا
إِنَّ هَؤُلَاءِ يُحِبُّونَ الْعَاجِلَةَ وَيَذَرُونَ وَرَاءَهُمْ يَوْمًا ثَقِيلً
نَحْنُ خَلَقْنَاهُمْ وَشَدَدْنَا أَسْرَهُمْ وَإِذَا شِئْنَا بَدَّلْنَا أَمْثَالَهُمْ تَبْدِيلًا
إِنَّ هَذِهِ تَذْكِرَةٌ فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ إِلَى رَبِّهِ سَبِيلًا
وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا يُدْخِلُ مَنْ يَشَاءُ فِي رَحْمَتِهِ وَالظَّالِمِينَ أَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا
মহাকালের মধ্য হতে মানুষের উপর কি এমন একটা সময় অতিবাহিত হয়নি যখন সে উল্লেখ করার যোগ্য কোন বস্তুই ছিল না?
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সংমিশ্রিত শুক্রবিন্দু থেকে তাকে পরীক্ষা করার জন্য, এজন্য তাকে করেছি শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির অধিকারী।
আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।
আমি (অকৃতজ্ঞ) কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি শেকল, বেড়ি আর জ্বলন্ত আগুন।
(অপরদিকে) নেককার লোকেরা এমন পানপাত্র থেকে পান করবে যাতে কর্পুরের সংমিশ্রণ থাকবে।
আল্লাহর বান্দারা একটি ঝর্ণা থেকে পান করবে। তারা এই ঝর্ণাকে (তাদের) ইচ্ছেমত প্রবাহিত করবে।
যারা মানত পূরণ করে আর সেই দিনকে ভয় করে যার অনিষ্ট হবে সুদূরপ্রসারী।
তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে।
তারা বলেঃ কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।
আমরা কেবল ভয় করি আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এক ভীতিপ্রদ ভয়ানক দিনের।
অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে সেদিনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন এবং তাদেরকে দিবেন সজীবতা ও আনন্দ।
এবং তাদের সবরের প্রতিদানে তাদেরকে দিবেন জান্নাত ও রেশমী পোশাক।
তারা সেখানে সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। সেখানে রৌদ্র ও শৈত্য অনুভব করবে না।
জান্নাতের বৃক্ষরাজির ছায়া তাদের উপর থাকবে, আর ফলের গুচ্ছ একেবারে তাদের নাগালের মধ্যে রাখা হবে।
তাদের সামনে ঘুরে ঘুরে রুপার পাত্র পরিবেশন করা হবে আর সাদা পাথরের পানপাত্র।
সেই সাদা পাথরও হবে রুপার তৈরী। তারা এগুলোকে যথাযথ পরিমাণে ভর্তি করবে।
তাদেরকে পান করানোর জন্য এমন পাত্র পরিবেশন করা হবে যাতে আদার মিশ্রণ থাকবে।
সেখানে আছে একটা ঝর্ণা, যার নাম সালসাবীল।
ঘুরে ঘুরে তাদের সেবাদান কার্যে নিয়োজিত থাকবে চিরকিশোরগণ। তুমি যখন তাদেরকে দেখবে, তুমি মনে করবে, তারা যেন ছড়ানো মুক্তা।
তুমি যখন দেখবে তখন দেখতে পাবে ভোগ বিলাসের নানান সামগ্রী আর এক বিশাল রাজ্য।
তাদের আবরণ হবে চিকন সবুজ রেশম ও মোটা রেশম, আর তাদেরকে অলংকারে সজ্জিত করা হবে রুপার কঙ্কণ দ্বারা, আর তাদের রব্ব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পরিচ্ছন্ন পানীয়।
‘এটাই তোমাদের প্রতিদান, তোমাদের চেষ্টা-সাধনা সাদরে গৃহীত হয়েছে।’
(হে নবী!) আমি তোমার কাছে কুরআন অবতীর্ণ করেছি ক্রমে ক্রমে (অল্প অল্প করে)।
কাজেই তুমি ধৈর্য ধ’রে, তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষা কর আর তাদের মধ্যেকার পাপাচারী অথবা কাফিরের আনুগত্য কর না।
আর সকাল-সন্ধ্যায় তোমার রব্ব এর নাম স্মরণ কর।
আর রাতের কিছু অংশে তাঁর জন্য সেজদায় অবনত হও আর রাতের দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর মহিমা বর্ণনা কর।
এ লোকেরা তো পার্থিব জীবনকে ভালবাসে আর তাদের আড়ালে যে (কিয়ামাতের) কঠিন দিন (আসছে) তাকে উপেক্ষা করে।
আমিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছি আর তাদের গঠন মজবুত করেছি। আমি যখন চাইব তখন তাদের স্থলে তাদের মত অন্য লোক আনব।
এটা এক উপদেশ, কাজেই যার ইচ্ছে সে (এ উপদেশ মান্য ক’রে) তার প্রতিপালকের পথ ধরুক।
তোমরা ইচ্ছে কর না আল্লাহর ইচ্ছে ব্যতীত। (অর্থাৎ আল্লাহ কোন কিছু কার্যকর করতে চাইলে তোমাদের মাঝে ইচ্ছে ও শক্তি সঞ্চার করতঃ তোমাদের মাধ্যমে তা কার্যকর করেন)। আল্লাহ সর্বজ্ঞাতা মহাবিজ্ঞানী।
তিনি যাকে ইচ্ছে তাঁর রাহমাতে দাখিল করেন। আর যালিমরা- তাদের জন্য তিনি প্রস্তুত করে রেখেছেন বড়ই পীড়াদায়ক শাস্তি।
الگو:سوره ناس
الگو:سوره فیل
الگو:سوره ماعون
- আসহাবে আইকাহ**
আসহাবে আইকাহ এমন একটি গোত্র যাদেরকে কুরআনে, ওজনে কম দেওয়া এবং মূর্তিপূজার জন্য তিরস্কার করা হয়েছে। তাফসীর এবং হাদীসের উৎস অনুযায়ী, আসহাবে আইকাহ বা আইকাহ গোত্রের লোকেরা শুয়াইব নবী’র এর পক্ষ থেকে গুনাহ থেকে দূরে থাকা এবং বিশেষ করে ওজনে কম দেওয়ার আহ্বান জানানো হলে তারা তা গ্রহণ না করে উল্টো তাঁর লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করে। পরিশেষে, তারা আল্লাহর শাস্তির মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়। আসহাবে আইকাহ হিজাজ থেকে শামের বানিজ্যিক রুটের একটি অঞ্চলে বসবাস করত। কুরআনে "আসহাব আইকাহ" নামটি চারবার উল্লেখিত হয়েছে।
পরিচিতি ও অবস্থান
আসহাবে আইকাহ এমন একটি গোত্র ছিল, যারা হিজাজ থেকে শামের বানিজ্যিক পথের আইকাহ নামক অঞ্চলে বসবাস করত।[১]বিখ্যাত জনবসতি আইকাহ’র অবস্থান ছিল মদিনার নিকটে।[২] আসহাবুল আইকাহ «اصحاب الایکه» কুরআনে চারবার এসেছে: সূরা হিজর ৭৮ নং আয়াত, সূরা শুআরা ১৭৬ নং আয়াত, সূরা সোয়াদ ১৩ নং আয়াত, এবং সূরা কাফ এর ১৪ নং আয়াতে।[৩] মুফাস্সিরগণের ভাষ্যমতে, বহুবিধ পাপাচারের কারণে এই জাতিকে তিরস্কার করা হয়েছে। এছাড়াও তারা তাদের নবী শুয়াইব (আ.)-এর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে।[৪] তারা তাদের নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার পর আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হয় এবং ধ্বংস হয়ে যায়।[৫]
আসহাবে আইকাহ ও আহলে মাদায়েন
আসহাবে আইকাহ এবং মাদায়েন গোত্র কি একই সম্প্রদায় ছিল, যাদেরকে কুরআনে দুটি ভিন্ন নামে উল্লেখ করা হয়েছে, নাকি একই নবীর সাথে সংশ্লিষ্ট এবং অনুরূপ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন দুটি ভিন্ন সম্প্রদায় ছিল, এ ব্যাপারে তাফসীরকারকগণের মধ্যে মতপার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে।[৬] কোন কোন গবেষক অধিকাংশ তাফসীরকারকগণের উদ্ধৃতি দিয়ে, হযরত শুয়াইবকে (আ.) প্রথমে আহলে মাদায়েনের নবী হিসেবে জ্ঞান করেন, যিনি তাদের ধ্বংসের পর আসহাব আইকাহ’র হেদায়েতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[৭]
তাদের দলিল হচ্ছে মহানবী (স.)-এর একটি রেওয়ায়েত,[৮] কুরআনের মুফাসসির কাতাদাহ ইবনে দিয়ামা’র একটি বক্তব্য[৯] এবং কুরআনে আসহাবে আইকাহ এবং মাদায়েন সম্প্রদায়ের শাস্তি সম্পর্কিত বর্ণনার ভিন্নতা: কুরআনে আসহাবে আইকাহ’র আযাবের ক্ষেত্রে «عَذابُ یَوْمِ الظُّلَّةِ» "মেঘলা দিনের আযাব" এবং আহলে মাদায়েনের আযাবের ক্ষেত্রে «رَجْفه» "তীব্র কম্পন" এবং «صَیحه» "ভয়ানক শব্দ" হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[১০] অধিকন্তু, কুরআনের সূরা আ’রাফের ৮৫ নং আয়াতে হযরত শুয়াইব "আহলে মাদায়েনের ভাই" বলে অভিহিত করা হয়েছে; কিন্তু "আসহাব আইকাহ’র ভাই" বলে আখ্যায়িত করা হয় নি।[১১]
বৈশিষ্ট্যসমূহ
আসহাব আইকাহ’র বৈশিষ্ট্য হিসেবে ওজনে কম দেওয়া এবং মূর্তিপূজার উল্লেখ করা হয়েছে:
ব্যবসায় ওজনে কম দেওয়া
টেমপ্লেট:মূল নিবন্ধ: ওজনে কম দেওয়া গবেষণা অনুসারে, আসহাব আইকাহ’র সবচেয়ে বড় বিচ্যুতি ছিল ওজনে কম দেওয়া। বিভিন্ন উৎসের ভিত্তিতে, তারা ব্যবসার ক্ষেত্রে ওজন এবং পরিমাপে কম দেওয়া, পরিমাপক যন্ত্র ও বাটখারায় জালিয়াতি এবং এমনকি পণ্যসমূহের রঙ ও প্রকৃতিতে পরিবর্তন ঘটানোর[১৪] মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা ও অপকর্মে লিপ্ত হতো।[১৫]। কুতুবুদ্দিন রাওন্দি তাঁর "কাসাসুল আম্বিয়া" গ্রন্থে ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছেন যে, হযরত শুয়াইব (আ.) নিজ হাতে দাঁড়িপাল্লা তথা পরিমাপক সারঞ্জাম তৈরি করেন, যেন মানুষ সঠিকভাবে পরিমাপ করতে এবং অন্যের অধিকার বজায় রেখে ব্যবসা করতে পারেন। এমতাবস্থায় মানুষ প্রথম প্রথম সঠিক ও ন্যায় সঙ্গতভাবে ওজন করত, কিন্তু আবার ধীরে ধীরে তারা ওজনে কম দেওয়ায় লিপ্ত হয়ে পড়ে এবং মাপের ক্ষেত্রে অন্যের অধিকারকে উপেক্ষা করতে থাকে।[১৬] আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজী কর্তৃক রচিত তাফসীরে নেমুনেহ’তে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই গোত্রটি তাদের অনুকূলে থাকা ব্যবসায়িক অবস্থানের সুযোগ নিয়ে[১৭] মানুষের পণ্য কম মূল্যে ক্রয় করতো এবং নিজেদের পণ্যকে সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রয় করতো;[১৮]অনুরূপভাবে, যখন নিজেদের পণ্য পরিমাপ করতো তখন অত্যন্ত মনযোগসহকারে করতো; অথচ অন্যদের পণ্যগুলোকে একেবারে অমনযোগিতা ও উদাসীনতার সহিত পরিমাপ করতো।[১৯] হিজরী তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীর বিশিষ্ট ঐতিহাসিক তাবারি’র ভাষ্য অনুসারে, তারা তাদের সমৃদ্ধ জীবনের ব্যবস্থা এভাবেই করেছিল।[২০]
মূর্তিপূজা
টেমপ্লেট:মূল নিবন্ধ: মূর্তিপূজা বিভিন্ন উৎস অনুযায়ী, আসহাবে আইকাহ প্রাকৃতিক এবং পরিবেশগত নেয়ামতসমূহ থেকে উপকৃত ছিল; অথচ তারা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণের পরিবর্তে বিভিন্ন মূর্তিপূজা[২১] এবং সবুজ শ্যামল গাছের পূজায় নিমগ্ন হয়ে পড়েছিল;[২২] এছাড়াও তারা কিয়ামত দিবসকে অস্বীকার করেছিল।[২৩]
হযরত শুয়াইব (আ.)-এর আহ্বান এবং তাদের প্রতিক্রিয়া
ঐতিহাসিক এবং তাফসিরগত উৎস অনুযায়ী, আসহাবে আইকাহর মধ্যে শিরক এবং পাপাচার বৃ্দ্ধি পেতে থাকলে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত শুয়াইব (আ.)-কে তাদের নিকট প্রেরণ করেন[২৪]। হযরত শুয়াইব (আ.) মানুষকে আল্লাহর ইবাদত,[২৫] তাক্বওয়া অর্জন করা, পাপাচার থেকে দূরে থাকা, ইবাদতের ক্ষেত্রে এখলাস এবং আল্লাহর নির্দেশগুলোকে মেনে চলার আহ্বান জানাতেন।[২৬] পক্ষান্তরে, শিরক ও মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে সতর্ক করতেন।[২৭]
একইভাবে, তিনি আইকাহ’র অধিবাসীদেরকে ওজমে কম দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলতেন[২৮] এবং ফিতনা-ফ্যাসাদ,[২৯] হত্যা,[৩০]ধন-সম্পদ লুণ্ঠন ও রাহাজানি থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানাতেন।[৩১] তিনি তাদের সতর্ক করেন যে, যদি তারা তাদের কৃত গুনাহের জন্য তওবা না করে, তাহলে তারা আল্লাহর আযাবে নিপতিত হবে।[৩২]
পক্ষান্তরে, ইবনে আব্বাসের মতে, আসহাবে আইকাহ পথের ধারে বসে হযরত শুয়াইব (আ.)-কে মানুষের শত্রু এবং তাদের ধর্মের বিকৃতিকারক হিসেবে উপস্থাপন করত।[৩৩] তাফসির আল-মুনিরের উদ্ধৃতি অনুযায়ী, তারা হুমকির মাধ্যমে হযরত শুয়াইব (আ.)-এর অবস্থানকে দুর্বল এবং তার আহ্বানকে অকার্যকর করার চেষ্টা করতো।[৩৪]
বিভিন্ন উৎসের তথ্য অনুযায়ী, আসহাবে আইকাহ হযরত শুয়াইব (আ.)-এর উদাত্ত আহ্বানের মোকাবেলায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে[৩৫] এবং তাঁকে পাগল,[৩৬] মিথ্যাবাদী,[৩৭] জাদুকর[৩৮] এবং নিজেদের মতো সাধারণ একজন মানুষ (যার তাদের উপর কোনো বিশেষত্ব নেই) বলে অভিহিত করে।[৩৯]
গণবিধ্বংসী অস্ত্র
গণবিধ্বংসী অস্ত্র হচ্ছে এমন অস্ত্র যা ব্যবহারের মাধ্যমে বেসামরিক জনগণকে হত্যা করাসহ পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করা হয়। শিয়া ফিকাহবিদগণের মতে, এই অস্ত্রের প্রাথমিক ব্যবহার অর্থাৎ শত্রুপক্ষ এমন অস্ত্রের ব্যবহার করার পূর্বে ব্যবহার করা হারাম বা নিষিদ্ধ; কিন্তু জরুরী পরিস্থিতিতে, অর্থাৎ শত্রুর উপর বিজয় অর্জন করার তাগিদে এগুলোর ব্যবহার প্রসঙ্গে মতপার্থক্য বিদ্যমান। কেউ কেউ বলেছেন সেগুলো ব্যবহার করা বৈধ এবং কেউ কেউ এই কাজ হারাম বলে ফতওয়া দিয়েছেন।
পারমাণবিক ও রাসায়নিক বোমার ন্যায় বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন ভয়ঙ্কর গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির প্রতি লক্ষ্য রেখেই মূলত কোন কোন ফিকাহবিদ এ সংক্রান্ত ফতওয়া প্রদান করেছেন; যেমন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এবং শিয়া মারজায়ে তাক্বলীদ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও এর ব্যবহার সংক্রান্ত ফতওয়ায় এই অস্ত্রকে মানবতার জন্য হুমকী হিসেবে গণ্য করেন এবং এর উৎপাদন ও সংরক্ষণ হারাম তথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
সংজ্ঞা ও গুরুত্ব
গণবিধ্বংসী অস্ত্র বলতে ঐ সমস্ত অস্ত্রসমূহকে বুঝায় যেগুলো সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ব্যবহারের সময় বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি এবং পরিবেশগত অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়।[১] যেসব অস্ত্র ব্যবহারে শিশু, নারী, বৃদ্ধ এবং মুসলমান বন্দী নির্বিশেষে বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকে, তা ইসলামের প্রাথমিক যুগে তথা রাসূল (স.)-এর জামানায়ও বিদ্যমান ছিল এবং শিয়াদের রেওয়ায়েতের বিষয়বস্তু হিসেবেও ছিল।[২] হাওযা ইলমিয়্যাহ কোম-এর ফিকহ ও উসুলের দারসে খারিজের প্রখ্যাত শিক্ষক আবুল কাসেম আলীদুস্ত উল্লেখ করেন যে, শিয়া ফকীহগণ কমপক্ষে হাজার বছর পূর্বে উক্ত বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।[৩] সৌর চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতাব্দীতে পারমাণবিক ও রাসায়নিক অস্ত্রের ন্যায় গণবিধ্বংসী অস্ত্রের নতুন উদাহরণ সৃষ্টি হয়[৪] এবং যার পরিণতি ছিল নজিরবিহীন; আর এই কারণেই এই বিষয়টিকে আধুনিক কালের অন্যতম ফিকহী সমস্যা (মাসায়েলে মুস্তাহাদ্দেসে/ ইসলামী ফিকাহ’তে যে বিষয় সম্পর্কে শরীয়তি হুকুম নেই) হিসেবেও বিবেচনা করা হয়েছে।[৫]
গণবিধ্বংসী অস্ত্রের শরীয়তগত হুকুম
শিয়া ফকীহগণ গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিষয়টিকে বিভিন্ন দিক থেকে পর্যালোচনা করেছেন: প্রাথমিক ব্যবহার (শত্রুর পক্ষ থেকে এই ধরনের হামলার আগে ভাগে পদক্ষেপ নেওয়া), তৈরি ও সংরক্ষণ এবং জরুরী অবস্থায় সেগুলোর ব্যবহার:
গবেষণা অনুসারে, শিয়া মাযহাবের সকল ফিকাহবিদ গণবিধ্বংসী অস্ত্রের প্রাথমিক ব্যবহারকে হারাম জ্ঞান করেছেন।[৬]আবুল কাসেম আলীদুস্ত উল্লেখ করেন যে, শিয়া ফকীহগণ কমপক্ষে হাজার বছর পূর্বে ঐ সমস্ত অস্ত্র ও সারঞ্জামের ব্যবহারকে হারাম হিসেবে ফতওয়া দিয়েছেন, যার ফলে ব্যাপক প্রাণহানি, জীববৈচিত্র ধ্বংস এবং পরিবেশগত ক্ষতি সাধিত হয়।[৭]
ফিকাহবিদদের একটি দল গণবিধ্বংসী অস্ত্রের নিত্য নতুন রূপের আবির্ভাবের প্রতি লক্ষ্য রেখে এগুলোর তৈরি ও সংরক্ষণের বিষয়েও হারাম ফতওয়া প্রদান করেছেন; উদাহরণস্বরূপ আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী পারমাণবিক অস্ত্র ও গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি ও ব্যবহারের বিষয়ে হারাম ফতওয়া প্রদান করে এগুলোকে মানবতার বিরুদ্ধে মহা হুমকী হিসেবে জ্ঞান করেন।[৯] মাকারেম শিরাজী, নূরী হামেদানি, জাফর সুবহানি এবং জাওয়াদ আমুলি’র ন্যায় মারজায়ে তাক্বলীদগণ এই ফিকহী মতে প্রতি সম্মতি জ্ঞাপণপূর্বক এর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।[১০]মাকারেম শিরাজী এমন অস্ত্র তৈরি ও সংরক্ষণকে মানুষের ফিতরাতের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হিসেবে গণ্য করেছেন।
ইব্রাহিমের উপর আগুন শীতল হওয়া
ইব্রাহিমের উপর আগুন শীতল হওয়ার বিষয়টি হচ্ছ ঐ আগুন থেকে ইব্রাহিমের অলৌকিক মুক্তি, যে আগুন ব্যাবিলনের রাজা নমরূদ এবং মূর্তিপূজাকারীরা মূর্তী ভাঙ্গার কারণে তার জন্য প্রস্তুত করেছিল।[১][1] কুরআনে সূরা আম্বিয়ার ৫১ থেকে ৭০ নং আয়াতে, সূরা সাফ্ফাতের ৮৫ থেকে ৯৮ নং আয়াতে এবং সূরা আনকাবুতের ২৪ নং আয়াতে হযরত ইব্রাহিমের জীবনের এই অংশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।[২] সূরা আম্বিয়ার ৬৯ নং আয়াত অনুসারে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আগুনকে ইব্রাহিমের উপর শীতল এবং নিরাপদ থাকতে বলেন।[৩] কুরআনের তাফসীরকারকদের মতে, আগুনের প্রতি এই আদেশ ছিল একটি সৃষ্টিগত (তাকভিনি) সম্বোধন।[৪] কিভাবে আল্লাহর ইরাদা এবং আগুনের শীতলতা সে সম্পর্কে মুফাসসিররা বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন।[৫] তাদের কিছু মতামত নিম্নরূপ:
- আগুনের প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়ে একটি ফুলের বাগানে পরিণত হয়।[৬]
- মহান আল্লাহ আগুন এবং ইব্রাহিমের মধ্যে একটি বাধা স্থাপন করেছিলেন যাতে তাঁকে না পোড়ায়।[৭]
- শুধুমাত্র আগুন থেকে উত্তাপ সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, কারণ তাপ আগুনের প্রকৃতির অংশ নয়।[৮]
- আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইব্রাহিমের শরীরে একটি বিশিষ্টতা দান করেছিলেন যাতে আগুন তাঁর উপর প্রভাব ফেলতে সক্ষম না হয়, যেমন জাহান্নামের রক্ষীদের দেহ।[৯]
- এটি একটি ঐশ্বরিক অলৌকিক বিষয় এবং আমরা এর উত্তর দিতে সক্ষম নই।[১০]
কোন কোন তাফসীর অনুসারে, এই ঘটনার কাহিনী নিম্নরূপ: ইব্রাহিম, প্রায় ষোল বছর বয়সে [১১], যখন মানুষজন তাদের বার্ষিক উৎসবের জন্য শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল, তখন কুঠার দিয়ে মূর্তিগুলি টুকরো টুকরো করেন। অতঃপর তিনি কুঠারটি সবচেয়ে বড় মূর্তিটির কাঁধে রেখে দেন।[১২] যে ব্যক্তি মূর্তিগুলির সাথে ইব্রাহিমের শত্রুতা সম্পর্কে জানত, সেই ব্যক্তি তাঁর নাম প্রকাশ করে। ইব্রাহিমের জন্য একটি আদালত গঠন করা হয়। আর তিনি মূর্তিপূজকদের বিশ্বাসকে অবমাননা করার জন্য বড় মূর্তিটিকে এই কাজ করার জন্য অভিযুক্ত করেন; কিন্তু তারা তাঁকে বিশ্বাস করেনি। অবশেষে, শাস্তি হিসাবে, তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারার শাস্তি দেওয়া হয়। মূর্তিপূজাকারীরা জনগণকে এই কাজে উৎসাহিত করে এবং ইব্রাহিমের পোড়ানোয় অংশগ্রহণকে দেবতাদের সাহায্য করার জন্য বিবেচনা করে;[13] এতটাই যে কেউ তাদের নিজস্ব চাহিদা মেটাতে কাঠের প্রতিজ্ঞা করেছিল, এবং অন্যরা, যারা মৃত্যু বা অসুস্থতার দ্বারপ্রান্তে ছিল, তারা তাদের সম্পত্তি থেকে আব্রাহামকে পোড়ানোর জন্য কাঠ কিনতে উইল করেছিল।[14] আগুন এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে কেউ ইব্রাহিমকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারেনি। ইতিমধ্যে, ইবলিস একটি ক্যাটাপুল্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়। তারা ইব্রাহিমকে ক্যাটাপল্টে রেখে আগুনে নিক্ষেপ করে। [15] কিছু বর্ণনা অনুসারে, যখন ইব্রাহিমকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তখন ইব্রাহিম এবং কিছু ঐশ্বরিক ফেরেশতাদের মধ্যে কথোপকথন হয়েছিল।[16] এই বর্ণনা অনুসারে, ফেরেশতারা ঈশ্বরের কাছে তাকে রক্ষা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। ঈশ্বরও তাদের সাহায্য করার অনুমতি দিয়েছিলেন; কিন্তু ইব্রাহিম তাদের সাহায্যের প্রস্তাবের অভাব প্রকাশ করেছিলেন। অবশেষে, জিব্রাইল তাকে ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চাইতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। জবাবে, ইব্রাহিম ঈশ্বরকে তার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত বলে মনে করেছিলেন এবং এই অনুরোধটিও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।[17] কিছু বর্ণনায়, ইব্রাহিমের কাছ থেকে প্রার্থনাও বর্ণিত হয়েছে; যেমন "হে আল্লাহ, হে এক এটা ঘটেনি, এবং এটি কখনও একই রকম হবে না"; "আরও, "হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে মুহাম্মদ এবং মুহাম্মদের পরিবারের সত্য প্রার্থনা করছি, যার উপর আমি ভরসা করেছিলাম, তাই তাদেরকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখো; "হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে মুহাম্মদ এবং মুহাম্মদের পরিবারের অধিকারের মাধ্যমে প্রার্থনা করছি, আমাকে এই আগুন থেকে রক্ষা করো, আর আল্লাহ তার জন্য আগুনকে শীতল ও নিরাপদ করে দিয়েছেন।" [18] ফখর আল-রাযী তার তাফসির আল-কবীরে ইব্রাহিমের পুড়িয়ে মারার বিবরণ সম্পর্কে উত্থাপিত কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। প্রশ্নগুলির মধ্যে রয়েছে: এটা কি সত্য যে যদি আল্লাহ ইব্রাহিমকে ঠান্ডা (কুনি বারদা) আদেশ করার পর নিরাপদ (ওয়া সালাম) থাকার নির্দেশ না দিতেন তাহলে ঠান্ডা হতে? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন যে আগুনের শীতলতা ঈশ্বরের পক্ষ থেকে এবং এটি অসম্ভাব্য যে ঈশ্বর প্রথমে একটি মারাত্মক ঠান্ডার আদেশ দেবেন এবং তারপর এটিকে মনোরম করে তুলবেন।[19]
গ্রন্থপঞ্জি
(নবজাতকের মুখের (জিহ্বার) তালুতে আলতোভাবে মালিশ করা যাতে এর কিছু রস তার পেটে পৌঁছে যায়।নবজাতকের মুখের তালুতে আলতোভাবে মালিশ করা এবং তার মুখ খুলে দেওয়া, যাতে তার পেটে এর কিছু অংশ প্রবেশ করে।)
নবজাতক শিশুকে তাহনিক করা (আরবি: التحنيك) বা শিশুর তালু তুলা একটি ইসলামিক আচার যা জন্মের সময় শিশুর মুখের তালুর উপর সামান্য পানি ও খাদ্য (খাবারের কিছু) লাগিয়ে করা হয়। শিয়া আইনজ্ঞদের মতে, নবজাত শিশুকে ফোরাতের পানি ও ইমাম হুসাইন (আ) এর তুরবাত দিয়ে মুস্তাহাব। কিছু হাদিসের মতে, যে নবজাত শিশুকে ফোরাতের পানি দিয়ে গুঁটিদেওয়া হয়, সে বড় হয়ে শিয়া ও আহলে বায়েত (আ) এর বন্ধু হয়ে যাবে।
সংজ্ঞা গুঁটিদেওয়ার অর্থ হচ্ছে আঙ্গুলের ডগা সামান্য পরিমাণ হালকা খাবারের সাথে মিশিয়ে শিশুর মুখের ভেতর তালুর কাছে নিয়ে যাওয়া।[১] এটি দাই বা অন্য কোনো ব্যক্তির দ্বারা করা হয়।[২] সাধারণ সংস্কৃতিতে এই ঐতিহ্যকে গুঁটিদেওয়া[৩] বা শিশুর তালু তোলা বলা হয়।[৪]
সাধারণ ধারণায়, শিশুকে গুঁটিদেওয়ার উদ্দেশ্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, মায়ের দুধ চুষতে সুবিধা করা, হकलানো প্রতিরোধ করা এবং প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষা জন্য ভিত্তি প্রস্তুত করা।[৫] আইনশাস্ত্রের ক্ষেত্রে শিয়া আইনজ্ঞরা শিশুর তালুকে খোলাকে "তাহনিক" বলেন।[৬]
গুরুত্ব হাদিসের বই ওয়াসায়েল আল-শিয়া তে, একটি অধ্যায় শিশুদের গুঁটিদেওয়া বা তালু তোলার মুস্তাহাব হওয়া এবং এর কিছু নিয়মাবলী (আহকাম) এর জন্য উৎসর্গিত।[৭] কিছু হাদিসের মতে, যে নবজাত শিশুকে ফোরাতের পানি দিয়ে গুঁটিদেওয়া হয়, সে বড় হয়ে শিয়া ও আহলে বায়েত (আ) এর বন্ধু হয়ে যাবে।[৮]
শিশুকে গুঁটিদেওয়ার প্রথা ইসলাম থেকে আগে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত ছিল।[৯] সূরা মারইয়ামের আয়াত ২৫ এর ব্যাখ্যায় কিছু সুন্নি মন্তব্যকারী বলেন যে নবজাত শিশুকে খেজুর দিয়ে গুঁটিদেওয়ার কথা হজরত ঈসা (আ) এর জন্মের সময় হজরত মারইয়ামের খেজুর খাওয়ার ঘটনার সাথে যুক্ত করেন।[১০] ইসলামের শুরুতে, সাহাবাদের মধ্যে এই রীতি ছিল যে যখন কোনো শিশু জন্ম নিত, তারা তাকে নবী (স) এর কাছে নিয়ে যেতেন। নবী শিশুদের খেজুরের গুঁটিদেওয়া করতেন এবং তাদের জন্য প্রার্থনা করতেন।[১১] শিয়া ইমামদের যুগে, নবজাত শিশুদের ফোরাতের পানি দিয়ে গুঁটিদেওয়া গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, এবং ইমাম হুসাইন (আ) এর শাহাদতের পর ইমাম হুসাইন (আ) এর তুরবাত থেকে গুঁটিদেওয়ার সুপারিশ করা হতে শুরু করে।[১২]
গুঁটিদেওয়ার প্রথা এবং ইরানি জনগণের দ্বারা এর কার্যকরী কার্যক্রম সাহিত্য ও জনমানসে প্রভাবশালী ছিল।[১৩] ইরানি জনগণের বিশ্বাস যে নবজাত শিশুকে কোনো নেক, দ্বীনদার এবং সামাজিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তির দ্বারা গুঁটিদেওয়া উচিত।[১৪]
আইনশাস্ত্রীয় আদাব হাদিসে নবী (স) এবং ইমাম (আ) এর জীবনীতে গুঁটিদেওয়ার পদ্ধতির উল্লেখ করা হয়েছে; উদাহরণস্বরূপ, ইমাম আলী (আ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে নবী (স) ইমাম হাসান (আ) এবং ইমাম হুসাইন (আ) কে খেজুর থেকে গুঁটিদেওয়া করেছেন এবং তালু তুলেছেন।[১৫] একটি হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে যে ইমাম কাযিম (আ) তাঁর পুত্র ইমাম রেজা (আ) কে ফোরাতের পানি দিয়ে গুঁটিদেওয়া করেছেন।[১৬]
শিয়া আইনজ্ঞদের মতে, শিশুর জন্মের সময় এবং তার নামকরণের পূর্বে শিশুকে গুঁটিদেওয়া মুস্তাহাব;[১৭] তদ্রূপ এটি মুস্তাহাব যে এই কাজটি ফোরাতের পানি এবং ইমাম হুসাইন (আ) এর তুরবাত দিয়ে করা হোক।[১৮] ফোরাতের পানি না থাকার ক্ষেত্রে, তাজা এবং শুদ্ধ পানির ব্যবহার করা উত্তম, এবং যদি শুধুমাত্র খারাপ পানি পাওয়া যায়, তবে কিছু খেজুর বা মধু মিশিয়ে গুঁটিদেওয়া উচিত।[১৯]
সুন্নি আইনজ্ঞদের মধ্যে একজন, ইবনে ক্বয়িম জুজিয়া, নবজাত শিশুর জন্মের সময় গুঁটিদেওয়াকে মুস্তাহাব আদাব (রীতি-রেওয়াজ) এর মধ্যে একটি মনে করেছেন।[২০]
তথ্যসূত্র
- ↑ খামাকার, মুহাম্মাদ, সাখতারে সূরাহায়ে কুরআনে কারিম, মুয়াসসেসেয়ে ফারহাঙ্গিয়ে কুরআন ওয়া ইরতরাতে নূরুস সাকালাইন, কোম: নাশর, প্রথম সংস্করণ, ১৩৯২ ফার্সি সন।
- ↑ খামাকার, মুহাম্মাদ, সাখতারে সূরাহায়ে কুরআনে কারিম, মুয়াসসেসেয়ে ফারহাঙ্গিয়ে কুরআন ওয়া ইরতরাতে নূরুস সাকালাইন, কোম: নাশর, প্রথম সংস্করণ, ১৩৯২ ফার্সি সন।
গ্রন্থপঞ্জি
হারাস স্তম্ভ (অর্থাৎ প্রহরার স্তম্ভ) মসজিদে নববীর অন্যতম স্তম্ভ যা নবী মুহাম্মদ (স.) এর কক্ষের কাছে অবস্থিত এবং ইমাম আলী (আ.) রাতে যেখানে দাঁড়িয়ে নবীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেন, যাতে কেউ মহানবীর কোন প্রকারের ক্ষতি করতে না পারে। এই স্তম্ভটি ইমাম আলী (আ.) এর স্তম্ভ নামেও পরিচিত। মহানবীর (স.) প্রতি ইমাম আলীর (আ.) এই তত্ত্বাবধানের কারণ ছিল এটাই যে, নবীর জীবনের শেষের দিকে, তাঁর নিরাপত্তার জন্য কিছু রক্ষী নিযুক্ত করা হয়েছিল, যাতে কেউ তাঁর ক্ষতি করতে সক্ষম না হয়।
এই স্তম্ভটি ইমাম আলী (আ.) এর নামায আদায়ের স্থানও ছিল, ফলে ইমাম আলী ইবনে তালিবের (আ.) মুসাল্লা (নামায পড়ার স্থান) নামেও প্রসিদ্ধি পেয়েছে। ইমাম আলীর সাথে সম্পর্কযুক্ত হওয়ায় মদীনার সাইয়্যেদরা এই স্তম্ভটির পাশে নামায আদায় করার জন্য সমবেত হতেন। প্রহরা স্তম্ভটি, মসজিদে নববীর পুনর্নির্মাণের সময় মহানবীর (স.) জারির সাথে সংযুক্ত হয়েছে।
পরিচিতি
সুতুনে (স্তম্ভ) ইমাম আলী (আ.) নামেও পরিচিতি পাওয়া, [১] সুতুনে হারাস বা প্রহরা স্তম্ভটি, মহানবী (স.) এর সময় মসজিদে নববী’র সীমানা এবং মহানবীর (স.) বাড়ির নিকটে ছিল।[২] "হারাস" «حَرَسْ» শব্দটি "হিরাসাত" «حِراست» শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে প্রহরা বা পাহারা দেওয়া। হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর জীবনের শেষের দিকে, তাঁর নিরাপত্তার জন্য কিছু নিরাপত্তা রক্ষী নিযুক্ত করা হয়েছিল যাতে তাঁকে সুরক্ষিত রাখা যায়। মহানবী যখন তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করতেন,[৫] তখন তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিরা এই স্তম্ভের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং তাঁর প্রতি খেয়াল রাখতেন।[৬]
সুতুনে হারাস, সুতুনে সারির উত্তর দিকে অবস্থিত[৭] এবং নবীর (স.) কবরের সাথে সংযুক্ত;[৮] এজন্য জিয়ারতকারীরা এর পাশে নামায আদায় করতে সক্ষম হন না।[৯] এই স্তম্ভটির নাম সেখানে লেখা রয়েছে।[১০]
কিছু সুন্নি সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, "আল্লাহ আপনাকে মানুষের (ক্ষতির) থেকে রক্ষা করবেন..." তাবলীগের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর,[১১] আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজেই মহানবীর (স.) নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এরপর আর কেউ তাঁর নিরাপত্তা দেন নি।[১২] কোন কোন গবেষক মনে করেন যে, এই বর্ণনাগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে এটাই যে, গাদীরের ঘটনার সাথে তাবলীগের আয়াতের দূরত্ব নিশ্চিত করা। একারণে এটাকে মহানবীর (স.) প্রহরার সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করেছেন।
ইমাম আলী (আ.) এর সাথে সম্পর্কিত করা সুতুনে হারাসকে সুতুনে আলী ইবনে বিন আবি তালিব নামেও পরিচিত;[১৪] কারণ ইমাম আলী (আ.) রাতে তলোয়ার নিয়ে[১৫] মহানবীর ঘরের নিকটে অবস্থিত এই স্তম্ভের স্থানটিতে দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং সুরক্ষা দিতেন যেন নবীকে (স.) কেউ ক্ষতি না করতে পারে।[১৬] কিছু কিছু বর্ণনা মতে, অন্য ব্যক্তিরাও এই স্থানে নবীর (স.) নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করতেন।[১৭] এই স্তম্ভ ইমাম আলী (আ.) এর নামায আদায়ের স্থানও ছিল[১৮] এবং আলী বিন আবি তালিবের মুসাল্লা (নামাযের স্থান) নামেও পরিচিতি পেয়েছে।[১৯] ইমাম আলী (আ.) এর সাথে এই স্তম্ভের সম্পর্কের কারণে, মদীনার সাইয়্যেদরা নামায আদায় করার জন্য এর পাশে জড়ো হতেন।
মসজিদে নববীর স্তম্ভগুলো
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর সময় মসজিদে নববীতে খেজুর গাছের গুঁড়ির কিছু স্তম্ভ ছিল। মহানবীর (স.) রওযা শরীফে প্রসিদ্ধ কিছু স্তম্ভ রয়েছে।[২১] এগুলোর প্রতিটি স্তম্ভের একেকটি ঐতিহাসিক কাহিনী রয়েছে।[২২] খেজুর গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি হওয়া এই স্তম্ভগুলো মসজিদুন নবি পুনর্নির্মাণের সময় পরিবর্তিত হয় এবং সেগুলোর পরিবর্তে পাথরের তৈরি স্তম্ভ প্রতিস্থাপন করা হয়।[২৩] পাথরের এই স্তম্ভগুলোকে পূর্বেকার সেই স্তম্ভগুলোর স্থানেই স্থাপণ করা হয়েছে।[২৪] পুনর্গঠিত হয়েছিল, তখন সেগুলোকে পাথরের স্তম্ভ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। সৌদি সরকারের হুকুমতকালে ১৪০৪ হিজরিতে, এই স্তম্ভগুলো সাদা মার্বেল পাথর দ্বারা আচ্ছাদিত করা হয় এবং অন্যান্য স্তম্ভগুলো থেকে স্বতন্ত্র রূপ লাভ করে।
সম্পর্কিত নিবন্ধসমূহ
তথ্যসূত্র
গ্রন্থপঞ্জি
"সালমানু মিন্না আহলাল বাইত" (আরবি: سلمان منا أهل البيت) অর্থাৎ "সালমান আমাদের আহলে বাইত এর সদস্য", হাদীসটি মহানবী (স.) হতে বর্ণিত একটি প্রসিদ্ধ, মুতাওয়াতির এবং সহীহ হাদিস, যা সালমান ফারসির ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কিত। শিয়াদের কিছু কিছু ইমাম, যেমন ইমাম আলী (আ.), ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এবং ইমাম বাকের (আ.) এই হাদিসটি স্বতন্ত্রভাবে অথবা রাসূলুল্লাহ’র (স.) উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছেন।
আহযাবের যুদ্ধের (খন্দকের যুদ্ধ) সময় গর্ত খননের ঘটনা ও সালমানের আরব না হওয়ার বিষয়ে উমর ইবনে খাত্তাবের বক্তব্য প্রভৃতি ঘটনার কারণে মহানবী (স.) হতে এই হাদিস বর্ণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
শেখ সাদুক, শেখ তুসি এবং শেখ মুফিদের ন্যায় কিছু কিছু শিয়া পণ্ডিত এবং ইবনে সাদ ও ইবনে হিশামের ন্যায় কিছু কিছু সুন্নি পণ্ডিত এই হাদিসটিকে তাদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
এক দল বলেছেন যে, "সালমানু মিন্না আহলাল বাইত" হাদিসটির মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (স.) বুঝাতে চেয়েছেন যে, সালমান আমাদের ধর্মেরই একজন। অন্যান্যরা, এই হাদিসটিকে মহানবী (স.) এর আকীদা- বিশ্বাস, নৈতিকতা এবং কর্মের দিক থেকে সালমানের ঘনিষ্ঠতার পরিপ্রেক্ষিতে তার অবস্থান ও মর্যাদা সংক্রান্ত এক বিবৃতি হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
১৪১৩ হিজরিতে মুহাম্মাদ আলী আসবার বৈরুতে “সালমানু মিন্না আহলাল বাইত” শিরোনামে সালমান ফারসি’র জীবনী তার অবস্থা এবং "সালমানু মিন্না আহলাল বাইত" সম্পর্কে একটি বই প্রকাশ করেন।
পরিচয় ও অবস্থান
"সালমানু মিন্না আহলাল বাইত" বা "سَلمانُ مِنّا اَهلَالبیت" অর্থাৎ সালমান আমাদের আহলে বাইতের সদস্য- শিয়া গবেষকদের ভাষ্যমতে, এই হাদিসটি সর্ব প্রথম মহানবী (স.) হতে উদ্ধৃত হয়েছে।[১] হাদিস সূত্র অনুসারে, শিয়াদের কোন কোন ইমামও এই হাদিসটি স্বতন্ত্রভাবে অথবা মহানবী (স.) এর মাধ্যমে উদ্ধৃত করেছেন।[২] উদাহরণস্বরূপ, ইমাম আলী (আ.) সালমান সম্পর্কে একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেছেন যে সালমান আহলে বাইতের সদস্য।[৩] কুলাইনি (মৃত্যু:৩২৯ হি.) কর্তৃক রচিত কাফি গ্রন্থেও একটু ভিন্ন ব্যাখ্যায় ইমাম সাজ্জাদ (আ.) হতে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, সেখানে সালমানকে আহলে বাইত হতে জ্ঞান করা হয়েছে।[৪] এছাড়াও ফাত্তাল নিশাপুরি রচিত রাওযাতুল ওয়ায়েযিন গ্রন্থে বর্ণিত একটি হাদিস অনুসারে, ইমাম বাকের (আ.)-এর কাছে সালমান ফারসি’র প্রসঙ্গ তুলা হলে ইমাম তাদেরকে চুপ থাকার আহ্বান জানান এবং তাদেরকে সালমানে মুহাম্মাদি সম্বোধন করতে বললেন; কারণ সে আহলে বাইতের (আ.) সদস্য।[৫] রেজালে কাশশি গ্রন্থেও ইমাম সাদিক (আ.) হতে একটি রেওয়ায়েত, সালমান মিন্না আহলে বাইত (আ.) অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।[৬]
হাদিসটির উৎস
এই হাদিসটির উৎপত্তির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সূত্রগুলোতে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।[৭] শিয়া মুফাসসির তাবারসি এবং সুন্নি লেখক ইবনে সাদ উল্লেখ করেছেন যে, মহানবী (স.) আহযাবের যুদ্ধের সময় গর্ত খননের জন্য মুসলমানদের জন্য একটি সীমা নির্ধারণ করে দেন। মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে সালমানকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়। শারীরিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় প্রত্যেকে সালমানকে তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করতে চাচ্ছিলেন, তখন মহানবী (স.), “সালমানু মিন্না আহলাল বাইত” বাক্যের মাধ্যমে তাকে আহলে বাইতের সদস্য বলে অভিহিত করেন।[৮]
শেখ মুফিদ ভিন্ন একটি প্রতিবেদনে লিখেছেন, হযরত মুহাম্মদ (স.) যখন উমর বিন খাত্তাবের মুখ থেকে সালমানের অ-আরব হওয়া বিষয়ক কথা শুনলেন, তখন মহানবী (স.) মিম্বরের উপর গিয়ে, কেবলমাত্র তাক্বওয়া ব্যতীত জাতি ও বর্ণের কারণে মানুষের একে অপরের উপর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, এ মর্মে খুতবা প্রদান করে সালমানকে অফুরন্ত সমুদ্র ও সম্পদ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং তাকে আহলে বাইতের (আ.) এর সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেন।[৯] কিতাবে সুলাইম বিন কাইস নামক গ্রন্থেও একটি রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, একটি বৈঠকে মহানবী (স.) আহলে বাইতের সদস্য ব্যতীত সকলেই চলে যেতে বলেন। তখন সালমানও চলে যেতে চাইলে মহানবী (স.) তাকে থাকতে বলেন; কারণ তিনি আহলে বাইতের অংশ।[১০]
হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা
"সালমানু মিন্না আহলাল বাইত" একটি প্রসিদ্ধ, গ্রহণযোগ্য এবং মুতাওয়াতির হাদিস।[১১] কিছু কিছু গবেষক, সনদের দিক থেকে সহীহ ও শক্তিশালী এই হাদিসটিকে একটি একক হাদিস হিসেবে নয়, বরং মহানবী (স.) এবং ইমামদের (আ.) যৌথ ও অভিন্ন হাদিসের অংশ হিসেবে মনে করেছেন।[১৪]
উয়ুনু আখবারির রিযায় শেইখ সাদুক,[১৫] আত তাবইয়ান ও মিসবাহুল মুতাহাজ্জিদে শেইখ তুসি,[১৬] আল-ইখতিসাসে শেইখ মুফিদ,[১৭] মানাকেবে আলে আবি তালিবে ইবনে শাহরে আশুব,[১৮] ইহতিজাজ গ্রন্থে আহমাদ বিন আলী তাবারসি[১৯] এবং এছাড়া সুলাইম বিন কাইসের[২০] ন্যায় শিয়া পণ্ডিতগণ উক্ত হাদিসটির উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও আত তাবাকাতুল কুবরায় ইবনে সা’দ[২১] এবং আস সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ গ্রন্থের লেখক ইবনে হিশামের ন্যায় কিছু কিছু সুন্নি পণ্ডিতও এই হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।
হাদিসের বিভিন্ন ব্যাখ্যা
মুসলিম পণ্ডিতগণ “সালমানু মিন্না আহলাল বাইত” হাদিসটিকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন:
ফাযল বিন হাসান তাবারসি এবং শেইখ তুসি বলেছেন "সালমানু মিন্না আহলাল বাইত" হাদিসটির মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (স.) বুঝাতে চেয়েছেন যে, সালমান আমাদের ধর্মেরই অনুসারী।[২৩]কেউ কেউ আবার লিখেছেন, হাদিসটি সালমানের অবস্থান ও মর্যাদার কথা তুলে ধরেছে, কারণ সালমান আকীদা-বিশ্বাস, নৈতিকতা ও আমলের দিক থেকে হযরত মুহাম্মাদ (স.) নিকটবর্তী হয়েছিলেন।[২৪]
বিশিষ্ট মুসলিম আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ইবনে আরবী, এই বাক্যটিকে সালমানের পবিত্রতার স্তর, ঐশ্বরিক সুরক্ষা এবং নিষ্পাপতা সম্পর্কে মহানবীর (স.) সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করেছেন; এই দলিলের ভিত্তিতে যে আয়াতে তাতহীরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মহানবী (স.) এবং আহলে বাইতকে তার খাঁটি বান্দা হওয়ার কারণে «رِجْس» (অপবিত্রতা) থেকে পবিত্র করেছেন, আর যে ব্যক্তিই তাদের সাথে সাদৃশ্য রাখবে, সে মহানবী (স.) এবং আহলে বাইতের সাথে যোগদান করবেন। এরই ধারাবাহিকতায়, এই আয়াতে সালমানও অন্তর্ভুক্ত হয়;[২৫] কিন্তু, মোল্লা মুহসিন ফাইয কাশানী, ইবনে আরবীর এই বিষয়টি তথা সালমান ও আহলে ব্যতীত অন্যদেরকে আয়াতে তাতহিরের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছেন, এমনকি এটা উল্লেখ করাও বৈধ জ্ঞান করেননি।[২৬]
গবেষকদের একটি দল, আহলে বাইতের (আ.) প্রকৃত মর্যাদা সম্পর্কে জ্ঞান এবং অন্য একটি দল, সালমানের ভিতরে থাকা বিশেষ কিছু গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যকে সালমানের এই অবস্থানে পৌঁছানোর রহস্য হিসেবে মনে করেছেন, যার কারণে মহানবী (স.) এবং ইমামগণ (আ.) তাকে তাদের অংশ বলে অভিহিত করেছেন।[২৯]
গ্রন্থপরিচিতি
১৪১৩ হিজরিতে মোহাম্মদ আলী আসবার, আরবি ভাষায় "সালমানু মিন্না আহলাল বাইত" শিরোনামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যা বৈরুতের দারুল ইসলামিয়া প্রকাশনা কর্তৃক ৩৫৪ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়। এই বইটি সালমান ফারসির জীবনী, তার অবস্থা এবং "সালমানু মিন্না আহলাল বাইত" হাদিস সম্পর্কিত।