সাকীফার ঘটনা (আরবি: واقعة سقيفة بني ساعدة) ; ১১ হিজরীতে মহানবির (স.) ইন্তিকাল ও কাফন-দাফনের সমসাময়িক ঘটনা; ঐ ঘটনায় আবুবকর ইবনে আবু কুহাফা মুসলমানদের খলিফা হিসেবে নির্বাচিত হন। হযরত মুহাম্মাদের (স.) ওফাতের পর হযরত আলী (আ.) এবং অপর কয়জন সাহাবা হযরতের (স.) গোসল, কাফন, জানাযাদাফনকার্যে ব্যস্ত ছিলেন; ঠিক সেই সময় খাযরাজ গোত্রপতি সা’দ বিন উবাদাহ’র নেতৃত্বে আনসারদের একটি দল মহানবির (স.) পরবর্তী মুসলমানদের নেতা নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাকীফা বনু সায়েদায় সমবেত হন।

হিজরী পনের শতকে সাকীফা বনু সায়েদার স্থানটি

কিছু কিছু ঐতিহাসিকের মতে, আনসাররা শুরুতে শুধু মদিনার শাসক নির্বাচনের লক্ষ্যে বৈঠকে বসলেও মুহাজিরদের একটি দলের ঐ সমাবেশে প্রবেশের মধ্য দিয়ে বৈঠকের বিষয়বস্তু সমস্ত মুসলমানদের নেতৃত্বের লক্ষ্যে মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ত নির্বাচনের দিকে মোড় নেয় এবং পরিশেষে মুসলমানদের খলিফা হিসেবে আবুবকরের হাতে বাইয়াত করা হয়। মুহাজিরদের মুখপাত্র হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত হওয়া আবুবকর ছাড়াও ওমর ইবনে খাত্তাবআবু উবাইদাহ জাররাহও সেদিন সাকীফায় উপস্থিত ছিলেন।

আবুবকরের খেলাফত ও কর্তৃত্বের বৈধতা প্রদানের লক্ষ্যে আহলে সুন্নাত প্রমাণ হিসেবে ‘ইজমা’র বিষয়টিকে উত্থাপন করেছেন। অথচ ইতিহাসবিদদের মতে, আবুবকরের নির্বাচন সর্বসাধারণের পক্ষ থেকে গৃহীত হয়নি। এ ঘটনার পর হযরত আলী (আ.), ফাতিমা যাহরা (সা. আ.), মহানবির (স.) চাচা আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র ফজলআব্দুল্লাহসহ নবীর (স.) বেশ কয়েকজন বিখ্যাত সাহাবী যেমন: সালমান ফারসি, আবুযার গিফারী, মিকদাদ ইবনে আমর, জুবায়ের ইবনে আওয়ামহুযাইফা ইবনে ইয়ামান সাকিফায় অনুষ্ঠিত শুরা (পরামর্শসভা) এবং এর ফলাফলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। শিয়ারা সাকীফার ঘটনা এবং এর ফলাফলকে ইমাম আলীর (আ.) স্থলাভিষিক্ত হওয়া প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূলের (স.) বাণীর বিরোধী বলে জ্ঞান করেন, বিশেষ করে গাদিরে খুমে তাঁর ঘোষণার।

বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থে সাকিফার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও, ঘটনাটির পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণে রচিত হয়েছে বিভিন্ন গ্রন্থও। হেনরি ল্যামেন্স (Henry Lammens), লিওন কাইতানি (Leone Caetani), উইলফার্ড ফার্ডিনান্ড মাদেলুঙ্গের (Wilferd Ferdinand Madelung) মত প্রাচ্যবিদরাও ঘটনাটির বর্ণনা ও বিশ্লেষণে স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন। মাদেলুঙ্গ রচিত The succession to Muhammad গ্রন্থটি এবং হেনরি ল্যামেন্স রচিত ‘ত্রিমুখী শক্তি তত্ত্ব’ গ্রন্থটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ।

ঘটনার স্থান

সাকীফা ছিল; সর্বসাধারণের উপস্থিতিতে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে আরব গোত্রগুলোর পরামর্শসভার স্থান; যার উপর ছায়ারও ব্যবস্থা ছিল।[১] আল্লাহর রাসূলের (স.) ইন্তিকালের পর আনসারমুহাজিরদের একাংশ যে সাকীফায় জড়ো হয়েছিল তা ছিল মূলতঃ মদিনার বাসিন্দা খাযরাজের উপগোত্র বনু সায়েদা’র। মহানবির (স.) হিজরতের আগ পর্যন্ত তাদের পরামর্শসভাগুলো ঐ স্থানেই অনুষ্ঠিত হলেও মহানবির (স.) মদিনায় প্রবেশের পর থেকে প্রায় ১০ বছর (মহানবির -স.- ইন্তিকাল পর্যন্ত) কার্যত স্থানটি পরিত্যক্ত হয়েছিল এবং আল্লাহর রাসূলের (স.) ইন্তিকালের পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত নির্বাচনের বিষয়ে মুহাজির ও আনসারদের সমাবেশের মাধ্যমে ১০ বছর পর সাকীফায় প্রথম সমাবেশ ও শুরা অনুষ্ঠিত হয়।[২]

ঘটনার বিবরণ

সাকীফা বনু সায়েদায় মুসলমানদের একটি দলের সমবেত হওয়ার ঘটনার রেওয়ায়েতটি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, ওমর ইবনে খাত্তাব থেকে বর্ণনা করেছেন; এ ঘটনা সংশ্লিষ্ট সকল রেওয়ায়েতের উৎস এই রেওয়ায়েতটিই। অপর রেওয়ায়েতগুলো ইবনে হিশাম, মুহাম্মাদ জারির তাবারি, আব্দুর রাজ্জাক ইবনে হাম্মাম, মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল বুখারি এবং ইবনে হাম্বাল সংক্ষেপে সামান্য পার্থক্যে ভিন্ন ভিন্ন রাভি মারফত বর্ণনা করেছেন।[৩]

মহানবির (স.) ইন্তিকালের সংবাদ প্রচার হওয়ার পর আনসারদের একটি দল নিজেদের ভবিষ্যত এবং মহানবির (স.) জা-নশীন (স্থলাভিষিক্ত) নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাকীফায় সমবেত হন। ঐতিহাসিক সূত্রসমূহের বর্ণনা অনুযায়ী, সভার শুরুতে খাযরাজ গোত্রপতি সা’দ ইবনে উবাদাহ গুরুতর অসুস্থ হওয়ার কারণে স্বীয় পুত্র (কায়েস বিন সা’দ বিন উবাদাহ) মারফত উপস্থিত আনসারদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন। তিনি বিভিন্ন যুক্তি-দলীল উপস্থাপন পূর্বক মহানবি (স.) পরবর্তী সময়ে মুসলমানদের নেতৃত্ব আনসারের অধিকার বলে আখ্যায়িত করে তাদেরকে দায়িত্ব হাতে তুলে নেয়ার আহবান জানান। উপস্থিত সকলে তার কথায় সমর্থন করে সা’দকে নিজেদের শাসক হিসেবে নির্বাচনের কথা ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি তারা এ বিষয়টির প্রতিও জোর তাগিদ দিলেন যে, সা’দের মত ও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা কোন পদক্ষেপ নিবেন না।[৪] কিন্তু উপস্থিতির কেউ কেউ মুহাজিরদের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতার বিষয়টি উত্থাপন করে মুহাজিরগণ তাদের এ সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানাবেন বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আনসারদের মাঝ থেকে একজন আমির এবং মুহাজিরদের মাঝ থেকে আরেকজন আমির -এ প্রস্তাবও উত্থাপিত হয়।[৫]

সভা ও এর উদ্দেশ্যের সংবাদ আবুবকর ইবনে আবু কুহাফাওমর ইবনে খাত্তাবের কাছে গেলে তারা দু’জন আবু উবায়দা জাররাহ’র সাথে সাকীফায় যান। বৈঠকে উপস্থিত হয়ে ওমর ইবনে খাত্তাবকে থামিয়ে আবুবকর নিজেই কথা বলা শুরু করলেন, তিনি মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ততার ঘটনায় মুহাজিরদের শ্রেষ্ঠত্ব ও কুরাইশদের অগ্রাধিকারের কথা উত্থাপন করলেন।[৬] উপস্থিতদের কেউ কেউ তার কথার সমর্থন করলো আবার কেউ বিরোধিতা; আবার কেউ কেউ এ ক্ষেত্রে হযরত আলীর যোগ্যতা এবং তিনি ব্যতীত অন্য কারো হাতে বাইয়াত না করার প্রতি ইঙ্গিত করলেন।[৭] কিন্তু অবশেষে আবুবকর, ওমর ও আবু উবাইদা’কে এ মাকামের জন্য যোগ্য হিসেবে ঘোষণা করলে তারা দু’জনই আবুবকরের প্রস্তাবনার বিরোধিতা করে।[৮]

৩০৩ হিজরীতে রচিত তারিখে তাবারি’র বর্ণনার ভিত্তিতে, ওমর ইবনে খাত্তাব ঐ মুহূর্তগুলো সম্পর্কে বলেছেন: ঐ সময় উপস্থিতদের মাঝে হৈ চৈ শুরু হলো এবং ভীড়ের মাঝে বিভিন্ন অস্পষ্ট ও অবোধ্য কথা শোনা যাচ্ছিল। এ সময় আমরা শঙ্কিত হলাম যে, এ বিরোধ আমাদের কাজে বিচ্ছেদ ঘটাবে। তাই আমি আবুবকরকে বললাম তোমার হাত প্রসারিত করো, তোমার হাতে বাইয়াত করি। কিন্তু ওমরের হাত আবুবকরের হাতে পৌঁছানোর আগেই সা’দ ইবনে উবাদা’র প্রতিদ্বন্দ্বী বাশির ইবনে সা’দ খাযরাজী এগিয়ে এসে আবুবকরের হাতে হাত রেখে বাইয়াত করলো[৯]

এ ঘটনার পর, সাকীফায় উপস্থিতরা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়লো; পরিস্থিত এমন হলো যে, অসুস্থ সা’দ ইবনে উবাদাহ তাদের পদতলে পিষ্ট হওয়ার উপক্রম হলেন। এ ঘটনা ওমর ইবনে খাত্তাব ও সা’দ এবং কাইস ইবনে সা’দের মাঝে তীব্র ঝগড়ার কারণ হল; অবশেষে আবুবকরের মধ্যস্থতায় ঐ ঝগড়া শেষ হলো[১০]

সাকীফার মুনাজিরা

সাকীফায়  উপস্থিত আনসার এবং বিলম্বে আসা মুহাজিরদের মাঝে বিভিন্ন কথা রদবদল হয়েছিল সেদিন। তবে আবুবকর ও তার সাথীদের কথা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিল; উপস্থিতদের কয়েকজনের কথোপকথন নিম্নরূপ:

  • সা’দ ইবনে উবাদাহ: মূলতঃ তিনি সভার শুরুতে এবং আবুবকর ও তার সঙ্গীদের আগমনের পূর্বে কথা বলেছিলেন। অবশ্য অসুস্থতা জনিত দুর্বলতার কারণে তার পুত্র তার কথা জনতার উদ্দেশ্যে পৌঁছে দেন। তার কথার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তুগুলো ছিল: আনসারের ফজিলত ও ইতিহাস, অপর মুসলমানদের উপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব, ইসলাম ও মহানবির (স.) প্রতি তাদের খেদমত এবং ওফাতের পূর্বে আনসারদের উপর মহানবির (স.) সন্তুষ্টি ইত্যাদি। এসব যুক্তি উপস্থাপন করে তিনি মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিষয়ে আনসারকে অধিক যোগ্য বলে ঘোষণা করেন এবং তাদেরকে দায়িত্ব হাতে নেয়ার আহবান জানান। এছাড়া, তিনি আনসারদের থেকে একজন এবং মুহাজিরদের থেকে একজন আমির নির্বাচনের প্রস্তাবকে পরাজয় ও পশ্চাদপসরণ বলে অভিহিত করেন।[১১]
  • আবুবকর ইবনে আবু কুহাফা: তার কথাই ছিল বৈঠকের ফলাফল নির্ধারক। তিনি কয়েকবার কথা বলেছিলেন, তার কথার বিষয়বস্তুগুলো ছিল এমন; আনসারদের উপর মুহাজিরদের শ্রেষ্ঠত্ব, মহানবির (সা.) রিসালাতের সমর্থনে অগ্রগামিতা,  ঈমান ও আল্লাহর ইবাদতে অগ্রগামিতা, মহানবির (স.) সাথে মুহাজিরদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ও আত্মীয়তা ইত্যাদি। উপস্থাপিত যুক্তির ভিত্তিতে মুহাজিরগণ নবীর (স.) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারী এবং খেদমত ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আনসারগণ উজির হওয়ার জন্য যোগ্য; শাসক হওয়ার জন্য নয়, এছাড়া মুহাজিরদের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিরোধিতাকারীদের যুক্তি খণ্ডন ইত্যাদি।[১২]
  • হাবাব ইবনে মুনযির: সাকীফাতে ২ বা ৩ দফায় কথা বলেছেন; প্রতিবারই তার কথাবার্তায় মুহাজিরদের বিরুদ্ধে হুমকির সূর ছিল অথবা আবুবকর ও ওমরের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান।[১৩] তিনি তার কথার একাংশে প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে আমির নির্বাচনের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।[১৪]
  • ওমর ইবনে খাত্তাব: তিনি অধিকাংশ ক্ষেত্রে আবুবকরের কথা সত্যায়ন এবং আবুবকর কর্তৃক উত্থাপিত যুক্তির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ঐ যুক্তিগুলোর কয়েকটি হলো: যদি মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ত তাঁর আত্মীয়দের মধ্য থেকে কেউ হয় তবে সেক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা আরবরা করবে না, দুই দল থেকে একজন করে আমির নির্বাচন সম্ভব নয়; কেননা এক খাপে দু’টি তলোয়ারের স্থান হয় না ইত্যাদি।[১৫]
  • আবু উবাইদা জাররাহ: আনসারের উদ্দেশ্যে তিনি দ্বীন ও মুসলিম উম্মাহ’র ঐক্যের ভীতে পরিবর্তন না আনা প্রসঙ্গে নিষেধ করে।[১৬]
  • বাশির ইবনে সা’দ: তিনি ছিলেন খাযরাজ গোত্রের ও আনসারদের একজন। তিনি কয়েক দফায় আবুবকর ও তার সঙ্গীদের কথার সমর্থন করেন এবং ‘আল্লাহকে ভয় করো’, একজন মুসলমানের অধিকারের বিরোধিতা করো না ইত্যাদি বাক্যের মাধ্যমে মুহাজিরগণের বিরোধিতা না করার জন্য আনসারগণকে নিষেধ করেন।[১৭]
  • আব্দুর রাহমান ইবনে আওফ: তিনি হযরত আলী (আ.), আবুবকর এবং ওমরের মত ব্যক্তিত্বগণের অবস্থানের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে আনসারগণ এমন মাকামের অধিকারী নন বলে মন্তব্য করেন।[১৮]
  • যাইদ ইবনে আরকাম: তিনিও একজন আনসার; তিনি সাকীফায় আবুবকর ও আব্দুর রহমান ইবনে আওফ কর্তৃক উত্থাপিত যুক্তির বিপরীতে আলীকে (আ.) এমন ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরেন যিনি এ সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এছাড়া তিনি বলেন, যদি তিনি (আলী) বাইয়াতের জন্য অগ্রসর হন তবে কেউই তাঁর বিরোধিতা করবে না।[১৯]

যারা উপস্থিত ছিলেন

আহলে সুন্নাতের বেশীরভাগ সূত্রে বিদ্যমান প্রতিবেদনে সাকীফা বনু সায়েদা’তে আনসারমুহাজিরদের সর্বাত্মকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশে অংশগ্রহণের বিষয়টি উত্থাপিত হলেও[২০] বহুসংখ্যক সূত্রে আবুবকরের হাতে দু’ দফায় বাইয়াত অনুষ্ঠিত হওয়ার তথ্য উল্লিখিত হয়েছে; প্রথম বাইয়াতটি সাকীফার দিন, আর দ্বিতীয়টি সাকীফার পরের দিন মদিনার মুসলমানদের বাইয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়; যা ‘বাইয়াতে আম’ (সর্বসাধারণের বাইয়াত) বলে উল্লিখিত হয়েছে।[২১]

উইলফার্ড মাদেলুঙ্গের ভাষায়, মুহাজিরদের মধ্য থেকে শুধুমাত্র আবুবকর, ওমরআবু উবাইদা সাকীফায় উপস্থিত ছিলেন। আর তাদের সাথে তাদের ব্যক্তিগত সহকারী, পরিবারের সদস্য এবং শুভাকাঙ্খি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আসার বিষয়টিও অসম্ভব নয়। একইভাবে আবু হুযাইফার আযাদকৃত দাস ‘সালিমের’ উপস্থিত হওয়ার তথ্যও দিয়েছেন; যিনি ছিলেন আবুবকরের হাতে বাইয়াতকারী প্রথম কয়েকজনের একজন। যদিও প্রথমসারির নির্ভরযোগ্য কোন সূত্রে তার উপস্থিতির বিষয়টি উল্লিখিত হয় নি। সূত্রগুলিতে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য মুহাজির এবং দ্বিতীয় বা সাধারণ সারির সাহাবাদের উপস্থিত থাকার কোন তথ্যও উল্লিখিত হয় নি।[২২]গবেষকদের অনেকে কিছু কিছু প্রমাণের ভিত্তিতে এ কথা স্বীকার করেছেন যে, সাকীফায় অল্পসংখ্যক মুহাজির উপস্থিত ছিলেন।[২৩]

বিভিন্ন সূত্রের বর্ণনার ভিত্তিতে আনসারদের মধ্যে প্রসিদ্ধ যে সকল ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন: সা’দ ইবনে উবাদাহ, তার পুত্র কায়েস, বাশির ইবনে সা’দ -সা’দের চাচাতো ভাই ও প্রতিদ্বন্দ্বী-, উসাইদ ইবনে হুদ্বাইর, সাবিত ইবনে কায়েস, বাররা’ ইবনে আযেবহাবাব ইবনে মুনযির[২৪]

‘যদি তাদের (মুহাজির) সাথে যুদ্ধ করার মত সঙ্গী সা’দের থাকত নিঃসন্দে তিনি তাদের সাতে সংঘর্ষে জড়াতেন।’[২৫] -এ বাক্যের মাধ্যমে ইবনে কুতাইবা এ বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছেন যে, সাকীফায় উপস্থিত আনসারদের মাঝে সেদিন ইজমা সংঘটিত হয় নি এবং তাদের সংখ্যাও ছিল কম।[২৬]

সাকীফায় আনসারদের পরামর্শসভার নেপথ্য কারণ

কিছু বিশ্লেষক সাকীফায় আনসারগণের সমাবেশ ও পরামর্শসভা, আল্লাহর রাসূলের (সা.) ওফাত পরবর্তী সময়ে তাদের ভবিষ্যত সংশ্লিষ্ট শঙ্কার কারণে অনুষ্ঠিত হয়েছিলে বলে মনে করেন। বিশেষ করে মক্কা বিজয়ের পর কুরাইশদের ঐক্যফ্রন্ট ভবিষ্যত পরিস্থিতি সকল সমীকরণ তাদের বিপক্ষে পাল্টে দিতে পারে এ শঙ্কায় আনসারগণ উদ্বিগ্ন ছিল। এ দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তাদের মতে, উক্ত পরামর্শসভা মহানবির (স.) খলিফা নির্বাচনের বিষয়ে মুহাজিরদের একটি দলের পূর্বপরিকল্পনা সম্পর্কে আনসারদের অবগত হওয়ার কারণেও হতে পারে, এমন সম্ভাবনাকে ফেলে দেন নি।[২৭]

অপর কিছু লেখক সাকীফায় সমাবেশের কারণ হিসেবে নিম্নের বিষয়গুলোকে উল্লেখ করেছেন:

  • আনসারগণ দ্বীন ইসলামের পথে নিজ জীবন, সম্পদ ও নিজ সন্তানদেরকে উৎসর্গ করার কারণে এই দ্বীনকে তারা নিজ সন্তান মনে করত। আর এ কারণে এ ধর্মের রক্ষক হিসেবে নিজেদের চেয়ে যোগ্য ও আন্তরিক বলে আর কাউকে তারা মনে করত না।
  • প্রতিশোধের ভয়: কুরাইশ নেতাদের অনেকেই মহানবির (স.) সাথে যুদ্ধে আনসারদের তলোয়ারের আঘাতে নিহত হওয়ার কারণে প্রতিশোধের আশঙ্কা। এছাড়া, মহানবি (স.) আনসারদেরকে তাঁর ইন্তিকাল পরবর্তী সময়ে অত্যাচারী শাসকদের ক্ষমতাসীন হওয়ার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে ঐ সময়ে তাদেরকে ধৈর্যধারণের আহবান জানিয়েছিলেন।
  • আনসারগণ এ বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, আলীর (আ.) বিষয়ে মহানবির (স.) আদেশকে কুরাইশরা অমান্য করবে।[২৮]

অপর একটি দলের মত হলো, আবুবকর মসজিদে আনুষ্ঠানিকভাবে মহানবির (স.) ইন্তিকালের সংবাদ প্রচার করার পর মদিনার জনগণের একটি দল তার চতুর্পাশে সমবেত হয়ে তার হাতে বাইয়াত করে; এই ঘটনা মদিনায় উপস্থিত আনসারদের একটি দলের চিন্তায় আনসারদের মাঝে থেকেও খলিফা নির্ধারণ সম্ভব -এমন বিষয় এলে তারা এ বিষয়ে পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে সাকীফায় সমবেত হন।[২৯]

আসহাব ও কুরায়েশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অবস্থান

আলী (আ.), মহানবির (স.) আহলে বাইত এবং মুহাজিরআনসারদের একটি দল আবুবকরের হাতে বাইয়াত করার  বিরোধিতা করেন। ঐতিহাসিক বর্ণনার ভিত্তিতে, আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব, ফজল বিন আব্বাস, জুবায়ের বিন আওয়াম, খালিদ বিন সাঈদ, মিকদাদ বিন আমর, সালমান ফারসি, আবুযার গিফারি, আম্মার ইবনে ইয়াসির, বাররা’ ইবনে আযেবউবাই ইবনে কা’ব প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।[৩০]

কিছু কিছু আসহাব ও কুরায়েশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সময়ে মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিষয়ে আবুবকরের যোগ্যতার অভাবের প্রতিও ইঙ্গিত করেছেন, সেগুলোর কয়েকটি নিন্মরূপ:

ফাযল ইবনে আব্বাস: কুরাইশের বিরুদ্ধে প্রতারণা, সুযোগের সদ্ব্যবহার ও সত্য গোপন করার অভিযোগ তুলে মহানবির (স.) আহলে বাইত বিশেষ করে আলীকে (আ.) তাঁর (স.) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য অধিক যোগ্য বলে ঘোষণা করেন।[৩১]

সালমান ফারসি:  মুসলমানদের উদ্দেশ্যে করা মন্তব্যে তিনি সাকীফায় গৃহীত বাইয়াতকে ভুল এবং একে আল্লাহর রাসূলের (স.) আহলে বাইতের (আ.) অধিকার বলে আখ্যায়িত করেছেন; যাঁরা সমাজের জন্য কল্যাণকর।[৩২]

আবুযার গিফারী: ঘটনার দিন আবুযার গিফারি মদিনায় উপস্থিত ছিলেন না এবং মদিনায় ফেরার পর আবুবকরের হাতে বাইয়াতের বিষয়টি জানতে পারেন। ঐতিহাসিক বিভিন্ন সূত্রের বর্ণনা মোতাবেক তিনি সাকীফার ঘটনা শোনার পর তাৎক্ষণিক[৩৩] এবং আরেকবার উসমান ইবনে আফফানের যুগেও মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ততার বিষয়ে আহলে বাইতের (আ.) অধিকার প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন।[৩৪]

মিকদাদ ইবনে আমর: সাকীফার সিদ্ধান্ত মানার বিষয়ে মুসলমানদের আচরণকে আশ্চর্যজনক আখ্যায়িত করে মিকদাদ ইবনে আমর ইমাম আলী (আ.) এ বিষয়ের জন্য সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হওয়ার বিষয়টিকে স্পষ্ট করেছেন।[৩৫]

ওমর ইবনে খাত্তাব: জীবনের শেষ দিনগুলিতে ওমর ইবনে খাত্তাব জনসাধারণের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত খোতবায় বলেন, ‘আবুবকরের হাতে বাইয়াত ছিল একটি বিচ্যুতি ও ভুল; যা ঘটেছে এবং অতিক্রান্ত হয়েছে। হ্যাঁ এমনই ছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ্ জনগণকে ঐ বিচ্যুতির অকল্যাণ থেকে রক্ষা করেছেন, যে-ই খলিফা নির্বাচনে এমন পদ্ধতি গ্রহণ করবে তাকে হত্যা করো।[৩৬]


[আল-ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ গ্রন্থে ইবনে কুতাইবাহ

বনি উমাইয়া উসমান ইবনে আফফানকে ঘিরে এবং বনি যোহরা সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফকে ঘিরে বসেছিল; তারা সকলে মসজিদে সমবেত হয়েছিলেন। যখন আবুবকর ও আবু উবাইদাহ তাদের কাছে এলেন এবং আবুবকরের হাতে মুসলমানদের বাইয়াতের কাজও সম্পন্ন হয়েছিল, ওমর ইবনে খাত্তাব মসজিদে সমবেতদের উদ্দেশ্যে বললেন: তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে বসেছো? ওঠো, আবুবকরের হাতে বাইয়াত করো, আমি তার হাতে বাইয়াত করেছি। ওমরের কথা শেষ হওয়ার পর উসমান ইবনে আফফান ও উপস্থিত বনি উমাইয়ার লোকেরা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করে। একইভাবে সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফের সাথে যারা সমআকিদার অধিকারী ছিলেন তারাও।[৩৭]

আবু সুফিয়ান: আবু সুফিয়ানকে মহানবি (স.) কোন কাজে মদিনার বাইরে প্রেরণ করেছিলেন। মদিনায় ফিরে আল্লাহর নবির (স.) ওফাত এবং সাকীফায় বাইয়াতের বিষয়ে অবগত হওয়ার পর এ সম্পর্কে আলী (আ.)আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি জানতে চাইলেন। তাদের দু’জনের নীরবে গৃহে অবস্থানের কথা জেনে তিনি বললেন: ‘আল্লাহর কসম, যদি তাদের জন্য জীবিত থাকি তাহলে তাদের পাগুলোকে (মিম্বারের) উঁচু স্থানে নিয়ে যাব।’ তিনি আরও বললেন: ‘এমন ধূলোবালি আমি উড়তে দেখছি রক্তবৃষ্টি ছাড়া তা (বাতাস থেকে) পরিচ্ছন্ন হবে না।’[৩৮] বিভিন্ন সূত্রে উল্লিখিত হয়েছে যে, মদিনায় প্রবেশের পর আবু সুফিয়ান আলীর (আ.) খেলাফতের সমর্থনে এবং আবুবকর ও ওমরের তিরস্কারে কিছু পংতি আবৃতি করেন।[৩৯]

মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান: মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান এক চিঠিতে মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকরের উদ্দেশে (সাকীফার ঘটনার বহু বছর পর) লিখেছিলেন: ‘...তোমার পিতা ও ওমর ছিলেন আলীর অধিকার হরণকারী এবং তাঁর বিরোধিতাকারী প্রথম ব্যক্তি। তারা দু’জন পরস্পরের হাতে হাত মিলিয়ে আলীকে তাদের হাতে বাইয়াতের আহবান জানান। আর আলী যখন বাইয়াতের বিরোধিতা ও অস্বীকার করলো তখন তারা অন্যায় সিদ্ধান্ত নিল এবং তার সম্পর্কে ভয়ংকর ভাবনা ভাবলো...।’[৪০]

এছাড়া, মসজিদে আবুবকরের জন্য বাইয়াত গ্রহণের সময় বনি উমাইয়া উসমানের চতুর্পাশে জড়ো হয়েছিল এবং কুরাইশের উপগোত্র বনি যোহরার লোকেরা আব্দুর রাহমান ইবনে আওফ অথবা সা’দকে নির্বাচনের বিষয়ে একমত ছিল; কিন্তু ওমরের প্রচেষ্টায় তারা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করতে সম্মত হয়।[৪১]

আলীর (আ.) প্রতিক্রিয়া

[খোতবায়ে শিকশিকিয়া’র অংশ বিশেষ

সাবধান! আল্লাহর কসম! আবু কুহাফার পুত্র (আবুবকর) নিজে নিজেই তা (খেলাফতের রিদা) পরিধান করেছিল। নিশ্চিতভাবেই সে জানত যে, খেলাফতের বিষয়ে আমার অবস্থান যাতার কেন্দ্রিয় শলাকার ন্যায়। জ্ঞানের ধারা বানের পানির মত আমা হতে প্রবাহিত হয় এবং পাখি আমার অবস্থানের উচ্চতা পর্যন্ত উড়ে আসতে পারে না। আমি খেলাফতের বিষয়ে চোখ মুদে নিলাম এবং নিজেকে তা থেকে নির্লিপ্ত রাখলাম। অতঃপর আমি কর্তিত হস্ত এবং সঙ্গীহীন অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে প্রবল বেগে আক্রমণ করা অথবা ধৈর্য সহকারে চোখ বন্ধ করে অন্ধকারের সকল দুঃখ-দুর্দশা সহ্য করার বিষয়ে চিন্তা করতে লাগলাম। এরই মধ্যে বয়স্কগণ দুর্বল হয়ে পড়লো, যুবকেরা বৃদ্ধ হয়ে গেল এবং মু’মিনগণ চাপের মুখে আমরণ কষ্ট করে কাজ করছিলো। আমি দেখলাম এ অবস্থায় ধৈর্য ধারণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ...।’]

সাকীফার দিন আলী (আ.) আবুবকরের হাতে বাইয়াত করেন নি এবং পরবর্তী সময়ে তার বাইয়াত তথা সমঝোতার বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ ভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন। তবে বিশিষ্ট শিয়া ঐতিহাসিক শেইখ মুফিদের (মৃত্যু ৪১৩ হি.) মতে, শিয়া গবেষকদের এ বিষয়ে মতৈক্য রয়েছে যে, আলী ইবনে আবি তালিব কখনই আবুবকরের হাতে বাইয়াত করেন নি।[৪২]

শুরুর দিনগুলোতে আহলে সাকীফা আলীকে (আ.) আবুবকরের হাতে বাইয়াত করার জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করলে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বললেন: ‘খেলাফতের বিষয়ে আমি তোমাদের চেয়ে অগ্রাধিকারী, আমি তোমাদের হাতে বাইয়াত করবো না, আমার হাতে বাইয়াত করার ক্ষেত্রে তোমরাই অধিক যোগ্য। তোমরা আনসারদের থেকে খেলাফতকে নিয়ে নিয়েছ; তাদের সাথে তর্কের সময় তোমরা রাসূলের (স.) সাথে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টিকে সামনে এনে তাদের উদ্দেশ্যে বলেছ: আমরা নবির (স.) নিকটবর্তী ও তাঁর সাথে আত্মীয়তার কারণে আমরা তোমাদের চেয়ে খেলাফতের বিষয়ে বেশি হকদার। আর তারাও তোমাদের এ কথার ভিত্তিতে নেতৃত্ব ও খেলাফতের ভার তোমাদের উপর ছেড়ে দিয়েছে। তোমরা আনসারদের সাথে যে যুক্তি উপস্থাপন করেছ আমিও তোমাদের সামনে একই যুক্তি উপস্থাপন করছি (অর্থাৎ রাসূলের (স.) সাথে  ঘনিষ্ঠতা ও আত্মীয়তা)। সুতরাং তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে ইনসাফ ও ন্যায়ের ভিত্তিতে আচরণ করো, আর আনসার যা কিছু তোমাদের ক্ষেত্রে মেনে নিয়েছে, তোমরাও তা আমাদের ক্ষেত্রে মেনে নাও, অন্যথায় তোমরা জেনেশুনে জুলুম ও অত্যাচার করেছ।’[৪৩]

কিছু সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে, আবুবকরের সাথে আলীর (আ.) মৃদু কিন্তু খোলামেলা বিতর্ক হয়েছিল; সে সময় তিনি সাকীফার ঘটনায় নবির (সা.) আহলে বাইতের অধিকার উপেক্ষা ও লঙ্ঘন করার জন্য আবুবকরের নিন্দা জানিয়েছিলেন। আমীরুল মু’মিনীনের (আ.) যুক্তি মেনে নিয়ে আবুবকর প্রভাবিত হন, এমনকি মহানবির উত্তরসূরি হিসাবে আলীর (আ.) হাতে বাইয়াতও করতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু পরিশেষে তিনি তাঁর সাথীদের কারো কারো পরামর্শে এ কাজ থেকে বিরত থাকেন।[৪৪]

আলী (আ.) বিভিন্ন সময়ে তার কথা ও ভাষ্যে সাকীফার ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন এবং আল্লাহর নবির (স.) উত্তরাধিকারী হওয়া প্রসঙ্গে তার অধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ‘শিকশিকিয়া’ নামক খুতবায় তিনি তিনি এই ঘটনা উল্লেখ করেছেন। খোতবার শুরুতে তিনি বলেন: আল্লাহর কসম! আবু কুহাফার পুত্র (আবুবকর) নিজে নিজেই তা (খেলাফতের রিদা) পরিধান করেছিল। নিশ্চিতভাবেই সে জানত যে, খেলাফতের বিষয়ে আমার অবস্থান যাতার কেন্দ্রিয় শলাকার ন্যায়। জ্ঞানের ধারা বানের পানির মত আমা হতে প্রবাহিত হয় এবং পাখি আমার স্থানের উচ্চতা পর্যন্ত উড়ে আসতে পারে না।...।’[৪৫]আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর ভাষায়, সাকীফাসহ সমগ্র জীবনে হযরত আলীর (আ.) মানদণ্ড ছিল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন; কেবল ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থসিদ্ধ বিষয়গুলোকেই তিনি প্রাধান্য দিতেন ও বেছে নিতেন।[৪৬]

অপর কিছু সূত্র মারফত জানা যায়, সাকিফার ঘটনার পর আলী (আ.) রাতের আঁধারে নবিকন্যা হজরত ফাতিমা যাহরাকে (সা. আ.) একটি সওয়ারিতে চড়িয়ে আনসারদের বাড়িতে বাড়িতে ও সভাস্থলে নিয়ে যেতেন এবং তাদের সহযোগিতা চাইতেন, এ সময় তারা উত্তরে বলত: হে নবিকন্যা! আমরা আবুবকরের নিকট বাইয়াত করেছি, যদি আলী এগিয়ে আসতেন তবে আমরা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতাম না। আলী (আ.) উত্তরে বলতেন:  তবে কি আল্লাহর রাসূলের (স.) দাফনকার্য সম্পন্ন না করে খেলাফতের বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হতাম?[৪৭]

সাকীফার ঘটনায় ‘খেলাফত’ আলী বিন আবি তালিবের (আ.) হাতাছাড়া হয়ে যায়। অথচ মহানবির (স.) জীবনের শেষ দিনগুলিতে ‘খেলাফত’ যে, আলীর অধিকার বিষয়টি অনেকের নিকট স্বীকৃত ছিল এবং তা এক হাত থেকে অন্য হাতে হস্তান্তর হতে থাকে...।[৪৮]

হযরত ফাতিমার প্রতিক্রিয়া

হযরত ফাতিমা (সা. আ.) সাকীফার ঘটনায় গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে একে রাসূলের (সা.) আদেশ লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন। তার বিরোধিতার কথা ঘোষণা তিনি ‘আলীর (আ.) নিকট হতে জোরপূর্বক বাইয়াত গ্রহণের চেষ্টা’ এবং ‘তাঁর গৃহ ঘেরাওয়ের সময়’ প্রকাশ করেছিলেন।[৪৯] এছাড়া, মসজিদে নববিতে প্রদত্ত ‘খোতবায়ে ফাদাকিয়া’ নামে বিখ্যাত খোতবাতেও তিনি এ বিষয়ে নিজের বিরোধিতা প্রকাশ করেছিলেন।[৫০]

বিভিন্ন সূত্রের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা. আ.) শয্যাশায়ী অবস্থায় জীবনের শেষ দিনগুলোতে তাকে দেখতে আসা আনসার ও মুহাজির নারীদের উদ্দেশে সাকিফার সিদ্ধান্তকে আল্লাহর রাসূলের (স.) নির্দেশ লঙ্ঘন আখ্যায়িত করে এর পরিণতিতে ইসলাম যে সকল ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।[৫১]

প্রাচ্যবিদদের দৃষ্টিতে সাকিফা

Henry Lammens (১৮৬২-১৯৩৭): একজন বেলজিয়ান গবেষক ১৯১০ সালে তার ‘Triumvirate of Abu Bakr, 'Umar, and Abu 'Ubayda’ শীর্ষক প্রবন্ধে দাবি করেছেন যে, এই তিনজনের যৌথ লক্ষ্য অনুসরণ এবং পারস্পারিক ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা মহানবির (স.) জীবদ্দশা থেকেই শুরু হয়েছিল। আর এই ত্রিমুখী জোট আবুবকর ও ওমরের খেলাফত প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা তাদের জন্য প্রস্তুত করেছিল। যদি আবু উবায়দা ওমরের যুগে মারা না যেতেন, তবে নিশ্চিতভাবে ওমর কর্তৃক নিযুক্ত পরবর্তী খলিফা ছিলেন তিনি। একটি দাবির ভিত্তিতে তার বিশ্বাস ছিল, আবুবকর ও ওমরের কন্যা আয়েশাহাফসা -যারা নবীর স্ত্রী ছিলেন- তাদের স্বামীর প্রতিটি গোপন চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাদের পিতাদেরকে অবগত করতেন এবং তারা উভয়েই তাঁর (স.) উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। আর এ পদ্ধতিতেই তারা ক্ষমতা লাভের চেষ্টা করেছিলেন।[৫২]

Leon Caetani: ইতালীয় প্রাচ্যবিদ লিওন কায়তানি তার ইসলামি ইতিহাস গ্রন্থের ভূমিকায় আবুবকরবনু হাশিমের মধ্যকার গভীর বিরোধের কথা উল্লেখ করে আল্লাহর রাসূলের (স.) ইন্তিকালের কয়েক ঘন্টা পার না হতেই সাকীফায় আনসারদের সমাবেশে আবুবকরের খেলাফতের দাবি’র বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

আনসারদের মাঝে আবুবকর আত্মপক্ষ সমর্থনে রাসুলের (স.) গোত্র কুরাইশের অপর গোত্রগুলোর উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে যে সকল বর্ণনা উল্লেখিত হয়েছে সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে তিনি আলীর পক্ষ থেকে একই ধরনের দাবী তোলার সম্ভাবনা ব্যক্ত করে বলেছেন: আত্মীয়তা ও আল্লাহর রাসূলের (স.) সাথে ঘনিষ্টতার দৃষ্টিতে স্থলাভিষিক্ততার সবচেয়ে যোগ্য দাবীদ্বার ছিলেন আলী (আ.); কারণ তিনি ছিলেন নবির (স.) সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয়। তার মতে, যদি মুহাম্মাদ (স.) নিজের কোন স্থলাভিষিক্ত নির্বাচন করতেন তবে সম্ভবত তিনি আলীকেই (আ.) প্রাধান্য দিতেন। এতদসত্ত্বেও কায়তানি একই গ্রন্থের অপর খণ্ডগুলিতে ল্যামেন্সের ‘আবুবকর, ওমর ও আবু উবাইদা ৩ শক্তির তত্ত্ব’কে খেলাফতের বিষয়ে সৃষ্ট মতভেদের সবচেয়ে যৌক্তিক কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।[৫৩]

Willferd Madelung: উইলফার্ড মাদেলুঙ্গ তার The Succession of Muhammad গ্রন্থে মহানবির (স.) জা-নশীন সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। তার মতে, অধিকাংশ ঐতিহাসিকের বিশ্বাসের বিপরীতে সাকীফার বৈঠক শুরুতে মুসলমানদের খলিফা নির্বাচনের জন্য বসেনি; কারণ মুসলিম সমাজে নবির (স.) স্থলাভিষিক্ত হিসেবে খেলাফত তত্ত্বের কোন নজীর এর আগে ছিল না, তাই আনসার খেলাফতের লক্ষ্যে সাকীফায় সমবেত হয়েছিলেন এমন ভাবনা, বাস্তব সম্মত নয়।[৫৪] মাদেলুঙ্গের মতে, আনসাররা মনে করেছিলেন মুহাম্মদের (সা.) ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতি বাইয়াতেরও অবসান হয়েছে এবং মুহাম্মাদ (স.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সমাজ ভেঙ্গে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দেয়ায়, মদিনা শহরের কার্য পরিচালনার লক্ষ্যে আনসারদের মধ্য থেকে একজন নেতাকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন; এ কারণেই তারা মুহাজিরদের সাথে পরামর্শ ছাড়াই বৈঠকে বসেছিলেন।[৫৫] তারা মনে করেছিলেন যে, মুহাজিরগণ নিজ শহর মক্কায় প্রত্যাবর্তন করবেন এবং মদিনায় তাদের অবস্থানের পক্ষে বিশেষ কোন কারণ নেই, আর যারা রয়ে যাবেন তারাও আনসারদের গঠিত সরকারকে মেনে নিবেন।[৫৬]

তিনি আরও একটি সম্ভাবনাকে জোর তাগিদ দিয়ে উত্থাপন করেছেন তা হলো, মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ত সমস্ত আরবদের উপর হুকুমত করবে এমন ভাবনা শুধু আবুবকর ও ওমরের ছিল; আর এ কারণেই তারা শুধুমাত্র কুরাইশকে এমন খেলাফতের যোগ্য মনে করতেন।[৫৭]

মাদেলুঙ্গের মতে মহানবির (স.) ইন্তিকালের পূর্বেই খেলাফত দখলের সিদ্ধান্ত ছিল আবুবকরের, আর এ স্বপ্ন পূরণে তার পথে সবচেয়ে বড় বিরোধীদেরকে সরিয়ে দেওয়ার চিন্তায় ছিলেন তিনি।[৫৮] এক্ষেত্রে তার সামনে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল মহানবির (স.) আহলে বাইত; যাদেরকে পবিত্র কুরআনে অপর মুসলমানদের তুলনায় উঁচু মরতবা ও মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে।[৫৯] আনসার কর্তৃক সাকীফায় এমন শুরার আয়োজন আবুবকরের জন্য তার লক্ষ্যে পৌঁছুনোর মোক্ষম এক সুযোগ তৈরি করে দেয়। তিনি প্রথমে ওমর এবং আবু উবাইদা’কে -ঐ পরিবেশে যাদের বিজয়ী হওয়ার কোন সম্ভাবনাই ছিল না, লোক দেখানোর লক্ষ্যে- স্থলাভিষিক্তের প্রার্থী হিসেবে তাদের নাম উত্থাপন করেছিলেন। আর এটা স্পষ্ট যে, আবুবকরের ঐ প্রস্তাবনা খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে উত্থাপন করেন নি; বরং উপস্থিত জনতার মধ্যে ঝগড়া ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টির নিমিত্তে ঐ প্রস্তাবনা তুলেছিলেন যাতে অবশেষে ঘটনার ফল তার পক্ষে যায়।[৬০]

মাদেলুঙ্গের মতে, আহলে সুন্নাত ও পশ্চিমা পণ্ডিতরা আবুবকর ও ওমরের ন্যায় সাহাবার তুলনায় অল্পবয়স্ক ও অনভিজ্ঞ হওয়ায় আলী তাদের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না বলে যে, যুক্তি দেখিয়েছেন -বিষয়টি বাস্তবসম্মত নয়। বরং আলীর (আ.) নাম কেন উত্থাপিত হয় নি সে প্রসঙ্গে আবুবকর অন্য যুক্তি দেখিয়েছেন।[৬১]

শিয়া কালাম শাস্ত্রে সাকীফার ঘটনা

শিয়াদের দৃষ্টিতে, সাকীফা’র শুরা (পরামর্শসভা) এবং এর ফলাফল ছিল ইমাম আলীর (আ.) স্থলাভিষিক্ততার বিষয়ে মহানবির (স.) স্পষ্ট নির্দেশের লঙ্ঘন। শিয়ারা সাকীফার ফলাফলের বৈধতা প্রত্যাখান এবং মহানবির (স.) জা-নশীন হিসেবে আলির (আ.) যোগ্যতা প্রমাণে পবিত্র কুরআনের বেশ কিছু আয়াত, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা ও বিভিন্ন রেওয়ায়েত উপস্থাপন করেছেন; যেগুলো স্বয়ং আহলে সুন্নাতের বিভিন্ন সূত্রে বিদ্যমান। আর এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘গাদীরে খুমের ঘটনা’ এবং এ সংশ্লিষ্ট হাদীসগুলো। শিয়াদের বিশ্বাস, গাদীরে খুমের ঘটনায় মহানবি (স.), আলীর স্থলাভিষিক্ততাকে নিজের রিসালতের ইকমাল ও পূর্ণতা হিসেবে মুসলমানদের মাঝে ঘোষণা করে গেছেন।[৬২]

মুহাম্মাদ রেজা মুযাফফার, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা কেন্দ্রিক এমন ১৭টি মুতাওয়াতির বা মশহুর রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন, যেগুলোতে মহানবি (স.) প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জা-নশীন হিসেবে আলীর (আ.) নাম উল্লেখ করেছেন। ইনযারের (নিকটাত্মীয়দের ভীতি প্রদর্শন) ঘটনা, গাদীরের ঘটনা, ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের ঘটনা, সাদ্দুল আবওয়াবের (মসজিদে নববির (স.) দরজা বন্ধ করে দেওয়া) ঘটনা, খন্দক ও খায়বারের যুদ্ধের ঘটনাসহ খাসেফুন না’ল, মাদিনাতুল ইলমের হাদিস, হাদিসে ভেসায়াত ও إن علیّا منّی و أنا من علیّ، و هو ولیّ کل مؤمن بعدی হাদীস ইত্যাদি।[৬৩] বেলায়াতের আয়াত (সূরা মায়িদার ৫৫নং আয়াত), তাতহীরের আয়াত (সূরা আহযাবের ৩৩নং আয়াত) এবং মুবাহালার (সূরা আলে ইমরানের ৬১নং) আয়াতের মত আয়াতগুলিকে মহানবির (স.) পর আলীর (আ.) স্থলাভিষিক্ততার প্রসঙ্গে শিয়া কালাম শাস্ত্রবিদরা প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন।[৬৪]

পরিণতি

গবেষকগণ, আল্লাহর রাসূলের (স.) ইন্তিকালের পর সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা সাকীফার ঘটনার ফল হিসেবে সংঘটিত হয়েছে বলে মনে করেন। ঐ ঘটনাগুলোর কয়েকটি নিম্নরূপ:

হযরত ফাতেমার (সা. আ.) বাড়িতে হামলা: আবুবকরের খেলাফতের সমর্থকদের থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, সাকীফার ঘটনা এবং ইমাম আলীসহ (আ.) বেশ কয়েকজন সাহাবা কর্তৃক আবুবকরের হাতে বাইয়াত করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর, খলিফার সমর্থকরা হযরত আলী (আ.) থেকে বাইয়াত গ্রহণের উদ্দেশ্যে হযরত ফাতেমার (সা. আ.) গৃহে হামলা চালায়।[৬৫] ঐ হামলায় হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) যে আঘাত পেয়েছিলেন তাতেই তিনি শহীদ হন।[৬৬]

ফাদাক কেড়ে নেয়া: কিছু কিছু ইতিহাস বিশ্লেষক মনে করেন, সাকিফার ঘটনার পর ফাতিমা (সা. আ.) কাছ থেকে ফাদাক কেড়ে নেয়া ছিল মূলতঃ আহলে বাইতের (আ.) উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির নিমিত্তে। এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন আবুবকরের সরকারের ভিতকে মজবুত করত, অপরদিকে আল্লাহর রাসূলের (স.) আহলে বাইতের (আ.) পক্ষ থেকে বিরোধিতা ও সংগ্রামের পথকেও রুদ্ধ করে দিত।[৬৭]

সাকীফার সিদ্ধান্তে মুনাফিকদের সমর্থন: আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমুলি’র ভাষ্যানুযায়ী, আল্লাহর রাসূলের (স.) ওফাতের পর মদিনার মুনাফিকদের পক্ষ থেকে সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতারও সমাপ্তি ঘটে। বিষয়টির বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, একদিনেই তো মুনাফিকরা হারিয়ে যায় নি, আবার তারা তো সালমান ও আবুযারের মত মু’মিনও হয়ে যায় নি; বরং তারা আহলে সাকীফার সাথে সমঝোতা করে নেয়, আর এ কারণে সাকীফার শুরা অনুষ্ঠিত হওয়ার (ও সরকার গঠনের) পর মদিনায় আর কোন মুনাফিক ছিল না।[৬৮]

কারবালা ট্রাজেডি: কারো কারো মতে, সাকিফায় মহানবির (স.) জা-নশীন নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন হওয়ায় খলিফা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন বিশেষ নিয়ম ও মানদণ্ড আর অবশিষ্ট থাকে নি। এ কারণে মুসলমানদের খলিফা একদিন আনসার ও কয়েকজন কুরাইশের মধকার দ্বন্দ্বের মাধ্যমে, আরেকদিন প্রথম খলিফার ওসিয়তের মাধ্যমে, তৃতীয় দফায় ৬ জনের শুরা’র ভোটে, আরেক দফায় মুয়াবিয়া কর্তৃক তার পুত্রের জন্য বাইয়াত গ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচিত হলো। আর এই ইয়াযিদই কারবালা ট্রাজেডির মূল হোতা।[৬৯] বিশিষ্ট শিয়া আলেম সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হুসাইন তেহরানি (মৃত্যু ১৪১৬ হি.), আলীর (আ.) সম্পর্কে কাযী আবি বাকর ইবনে আবি কারিয়াহ রচিত কবিতা উল্লেখ পূর্বক কবিতার  و اَریتکم ان الحسین اصیب فی یوم السقیفة -এ পংতির ব্যাখ্যায় লিখেছেন, যদি আলীর খেলাফতকে জবরদখল করা না হত, তাহলে হারমালাহ’র তীর আলী আসগারের গলায় বিঁধতো না’।[৭০] এছাড়া মুহাম্মাদ হুসাইন গারাভি ইসফাহানি (১২৯৬-১৩৬১ হি.) এক কবিতায় উল্লিখিত বিষয়টি উল্লেখ করেছেন:

فما رَماه اِذْ رَماهُ حَرمَلة                             و انَما رَماهُ مَن مَهَّدَ له

سَهمٌ اَتی مِن جانب السقیفة                         و قَوسُه عَلی یدِ الخلیفة

و ما أصاب سَهْمُهُ نَحرَ الصّبی                   بَل کَبدَ الدینِ و مُهجة النَبی[৭১]

অনুবাদ: হারমালাহ তীর নিক্ষেপ করে নি! বরং তীর নিক্ষেপকারী হচ্ছে সে, যে এ তীর নিক্ষেপের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে; যে তীরটি এসেছিল সাকিফা থেকে, যার কামান ছিল খলিফার হাতে, সেদিন তীর ছোট্ট শিশুর গলায় বিঁধে নি বরং তা দ্বীনের অন্তর ও মহানবির (স.) কলবে বিঁধেছিল।[৭২]

সাকীফা ও ইজমা

আহলে সুন্নতের দৃষ্টিতে শরয়ী আহকাম ইস্তিম্বাতের অন্যতম সূত্র হলো ‘ইজমা’। সাকীফার ঘটনায় আবুবকরকে নির্বাচনের বৈধতার পক্ষে দলীল হিসেবে ইজমার কথা উল্লেখ করা হয়।[৭৩]

শিয়া গবেষকদের মতে, আহলে সুন্নত আবুবকরের খেলাফত ও সরকারের বৈধতার পক্ষে উম্মতের ইজমাকে দলীল হিসেবে উত্থাপন করেছেন।[৭৪] তারা ‘ইমামাতে আম’ (সাধারণ ইমামত) এবং ইমামাতে খাছ্ (বিশেষ ইমামাত) উভয় ক্ষেত্রে ইজমার বিষয়টি -যা সর্বসাধারণের সম্মতিকে প্রমাণ করে- শিয়াদের নিষ্পাপ ইমামের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক আকিদার বিপরীতে উদ্ভাবন ও উত্থাপন করেছেন।[৭৫] ঐ গবেষকদের বিশ্বাস, ইজমা’র বিষয়টির উত্থাপনের মূল কারণ ছিল সাকীফার ঘটনা ও আবুবকরের খেলাফতের বৈধতা প্রমাণ করা। এছাড়া ইমামাতে আম, মাসআলা-মাসায়েল, ফিকাহের শাখা-প্রশাখা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইজমা’র সম্প্রসারণও মূলতঃ তাদের ঐ আকিদাকে (আবুবকরের খেলাফতের বৈধতা) সঠিক প্রমাণের প্রয়াস মাত্র।[৭৬]

স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা

ইসলামি ইতিহাসে সাকীফার ঘটনা যে সকল গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে তারিখে তাবারি, তারিখে ইয়াকুবি’র নাম উল্লেখযোগ্য। এ সকল গ্রন্থে সাকীফার ঘটনা সবিস্তারে উল্লিখিত হয়েছে। এর পাশাপাশি বিষয়টিকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র বিভিন্ন গ্রন্থও রচিত হয়েছে, যেগুলোতে ঘটনার উপর আলোকপাত করার পাশাপাশি ঘটনার পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণও করা হয়েছে:

  • আবি সালেহ আল-সুলাইল ইবনে আহমাদ ইবনে ঈসা (তৃতিয় হিজরীতে জীবিত ছিলেন) রচিত ‘আস-সাকীফাহ’।
  • মুহাম্মাদ ইবনে ওমর ওয়াকেদি (মৃত্যু ১৫৭ হি.) রচিত আস-সাকীফাহ ওয়া বাইয়াতু আবি বাকর।
  • আবি মিখনাফ লূত ইবনে ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ (মৃত্যু ১৫৭ হি.) রচিত ‘আস-সাকীফাহ’।
  • সাহাব ইবনে মুহাম্মাদ যামান তাফরেশি রচিত সাকিফাহ ওয়া এখতেলাফ দার তা’ঈনে খালিফেহ।
  • আবি ইসহাক আল-ওয়াররাক মুহাম্মাদ ইবনে হারুন[৭৭] রচিত আস-সাকীফাহ।
  • মুহাম্মাদ রেজা মুযাফফার রচিত আস-সাকীফাহ।
  • উইলফার্ড মাদেলুঙ্গ রচিত The succesors of Muhammad.
  • মুর্তাযা আসকারী রচিত ‘সাকিফা : বাররাসিয়ে নাহভেয়ে শেকল গিরিয়ে হুকুমাতে পাস আয রেহলাতে পায়াম্বার’।
  • আব্দুল ফাত্তাহ আব্দুল মাকসুদ রচিত আস-সাকীফাহ ওয়াল খিলাফাহ।
  • বাকের শারিফ কারাশি রচিত মু’তামারুস সাকীফাহ, দিরাসাতুন মাওদুইয়্যাহ লি-আখতারি হাদাসা ফি তারিখিল ইসলামি সিয়াসি।
  • নাজমুদ্দীন তাবাসি রচিত ন’গোফতেহায়ী আয সাকীফেহ।

তথ্যসূত্র

  1. ইয়াকুত হামাভি, মু’জামুল বুলদান, দারু সাদর, খণ্ড ৩, পৃ. ২২৮-২২৯।
  2. রাজাবি দাভানি, তাহলিল ওয়াকে সাকীফা বনু সায়েদা বা রুইকার্দ বে নাহজুল বালাগাহ, ১৩৯৩ ফার্সি সন, পৃ. ৮০।
  3. মাদেলুঙ্গ, জা-নশীনী মুহাম্মাদ, ১৩৭৭ ফার্সি সন, পৃ. ৪৭।
  4. ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২২।
  5. ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২২।
  6. ইবনে আসীর, আল-কামিলু ফিত তারিখ, দারু সাদর, খণ্ড ২, পৃ. ৩২৭।
  7. ইবনে আসীর, আল-কামিলু ফিত তারিখ, দারু সাদর, খণ্ড ২, পৃ. ৩২৫।
  8. তাবারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২০৬।
  9. তাবারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২০৬।
  10. ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৭।
  11. ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২২।
  12. তাবারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২০২।
  13. ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৫।
  14. যেমাখশারি, আল-ফায়েকু ফি গারিবিল হাদীস, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, খণ্ড ৩, পৃ. ৭৩।
  15. ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৫।
  16. ইয়াকুবি, তারিখুল ইয়াকুবি, দারু সাদর, খণ্ড ২, পৃ. ১২৩।
  17. তাবারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২০২।
  18. ইয়াকুবি, তারিখুল ইয়াকুবি, দারু সাদর, খণ্ড ২, পৃ. ১২৩।
  19. যুবাইর বিন বাক্কার, আল-আখবারুল মুওয়াফ্ফাকিয়াত, ১৪১৬ হি., পৃ. ৫৭৯; ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ৬, পৃ. ১৯-২০।
  20. মাদেলুঙ্গ, জা-নশীনী মুহাম্মাদ, ১৩৭৭ ফার্সি সন, পৃ. ৫২-৫৩।
  21. ইবনে হিশাম, আল-সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ, দারুল মা’রিফাহ, খণ্ড ২, পৃ. ৬৬০; বালাযুরি, আনসাবুল আশরাফ, আ’লামি, খণ্ড ১, পৃ. ৫৬৭।
  22. মাদেলুঙ্গ, জা-নশীনী মুহাম্মাদ, ১৩৭৭ ফার্সি সন, পৃ. ৫২-৫৩।
  23. আব্দুল মাকসুদ, আস সাকীফাতু ওয়াল খিলাফাহ, ১৪২৭ ফার্সি সন, পৃ. ৩১৭।
  24. ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২১-২৬।
  25. ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৭।
  26. মে’ইয়ার ওয়া দিগারান, বাররাসি তা’সির এযাম লাস্কার ওসামা বার চেগুনেগি মোশারেকাত সিয়াসি নাখোবগান মোহাজের ওয়া আনসার দার সাকীফা, পৃ. ১৫৫।
  27. বেইযুন, রাফতার শেনাছি ইমাম আলী (আ.), ১৩৭৯ ফার্সি সন, পৃ. ২৯-৩০।
  28. মোজাফ্ফার, আল-সাকীফাহ, ১৪১৫ হি., পৃ. ৯৫-৯৭।
  29. ইবনে কাসীর, আল-বিদায়াতু ওয়ান নিহায়াহ, ১৪০৮ হি., খণ্ড ৫, পৃ. ২৬৫।
  30. ইয়াকুবি, তারিখুল ইয়াকুবি, দারু সাদর, খণ্ড ২, পৃ. ১২৪।
  31. ইয়াকুবি, তারিখুল ইয়াকুবি, দারু সাদর, খণ্ড ২, পৃ. ১২৪।
  32. জাওহারী বাসরী, আস-সাকিফাতু ওয়া ফাদাক, মাক্তাবাতুন নাবাবিয়্যাহ আল-হাদীস, পৃ. ৪২।
  33. জাওহারী বাসরী, আস-সাকিফাতু ওয়া ফাদাক, মাক্তাবাতুন নাবাবিয়্যাহ আল-হাদীস, পৃ. ৬২।
  34. ইয়াকুবি, তারিখুল ইয়াকুবি, দারু সাদর, খণ্ড ২, পৃ. ১৭১।
  35. আসকারী, সাকীফা: বাররাসি নাহভে শেকলগিরি হুকুমাত পাস আয রেহলাত পায়াম্বার, ১৩৮৭ ফার্সি সন, পৃ. ৭৬।
  36. তাবারি, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২০৫; বালাযুরি, আনসাবুল আশরাফ, মুআসসেসাতুল আ’লামি লিল মাতবুআ’ত, খণ্ড ১, পৃ. ৫৮১; মাকদেসী, আল-বাদউ ওয়াত তারিখ, মাক্তাবাতুস সাকাফা আল-দ্বীনি, খণ্ড ৫, পৃ. ১৯০।
  37. ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৯৯০ খ্রি., খণ্ড ১, পৃ. ২৮।
  38. জাওহারী বাসরী, আস-সাকিফাতু ওয়া ফাদাক, মাক্তাবাতুন নাবাবিয়্যাহ আল-হাদীস, পৃ. ৩৭।
  39. ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ৬, পৃ. ১৭।
  40. নাসর বিন মুযাহেম, ওয়াকআ’তু সিফফিন, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহ মারআশি আল-নাজাফী, পৃ. ১১৯-১২০।
  41. ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৯৯০ খ্রি., খণ্ড ১, পৃ. ২৮।
  42. শেইখ মুফিদ, আল-ফুসুলুল মুখতারাহ, ১৪১৩ হি., পৃ. ৫৬।
  43. ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ৬, পৃ. ১১।
  44. দ্র: তাবারসি, আল-ইহতিজাজ, নাশরুল মুর্তাযা, খণ্ড ১, পৃ. ১১৫-১৩০।
  45. ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ১, পৃ. ১৫১।
  46. https://farsi.khamenei.ir/speech-content?id=2438, দাফতার-এ হেফয ওয়া নাশর হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী।
  47. ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৯-৩০; ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ৬, পৃ. ১৩।
  48. যারিনকুব, বামদাদ ইসলাম, ১৩৬৯ ফার্সি সন, পৃ. ৭১।
  49. ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩০-৩১।
  50. তিজানী, মু’তামারুস সাকীফাহ, ১৪২৪ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৭৫।
  51. ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ১৬, পৃ. ২৩৩-২৩৪; ইরবিলি, কাশফুল গুম্মাহ, ১৩৮১ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৪৯২।
  52. ল্যামেন্স, মোসাল্লাস কুদরাত: আবুবকর, ওমর ওযা আবু উবায়দা, পৃ. ১২৬; বে-নাকল আয: মাদেলুঙ্গ, জা-নশীনী মুহাম্মাদ, ১৩৭৭ ফার্সি সন, পৃ. ১৭-১৮।
  53. দ্র: মাদেলুঙ্গ, জা-নশীনী মুহাম্মাদ, ১৩৭৭ ফার্সি সন, পৃ. ১৭-১৮।
  54. মাদেলুঙ্গ, জা-নশীনী মুহাম্মাদ, ১৩৭৭ ফার্সি সন, পৃ. ৫১।
  55. মাদেলুঙ্গ, জা-নশীনী মুহাম্মাদ, ১৩৭৭ ফার্সি সন, পৃ. ৫১।
  56. মাদেলুঙ্গ, জা-নশীনী মুহাম্মাদ, ১৩৭৭ ফার্সি সন, পৃ. ৫১।
  57. মাদেলুঙ্গ, জা-নশীনী মুহাম্মাদ, ১৩৭৭ ফার্সি সন, পৃ. ৫১-৫২।
  58. মাদেলুঙ্গ, জা-নশীনী মুহাম্মাদ, ১৩৭৭ ফার্সি সন, পৃ. ৬২।
  59. মাদেলুঙ্গ, জা-নশীনী মুহাম্মাদ, ১৩৭৭ ফার্সি সন, পৃ. ৬২।
  60. মাদেলুঙ্গ, জা-নশীনী মুহাম্মাদ, ১৩৭৭ ফার্সি সন, পৃ. ৬২।
  61. মাদেলুঙ্গ, জা-নশীনী মুহাম্মাদ, ১৩৭৭ ফার্সি সন, পৃ. ৬৫।
  62. মোজাফ্ফার, আল-সাকীফাহ, ১৪১৫ হি., পৃ. ৬০-৬৫।
  63. মোজাফ্ফার, আল-সাকীফাহ, ১৪১৫ হি., পৃ. ৬০-৬৬।
  64. মোজাফ্ফার, আল-সাকীফাহ, ১৪১৫ হি., পৃ. ৬৬।
  65. ইবনে আবদ রাব্বিহ, আল-ইকদুল ফারিদ, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, খণ্ড ৫, পৃ. ১৩।
  66. তাবারী ইমামি, দালায়েলুল ইমামাহ, ১৪১৩ হি., পৃ. ১৩৪।
  67. আসকারী, সাকীফা: বাররাসি নাহভে শেকলগিরি হুকুমাত পাস আয রেহলাত পায়াম্বার, ১৩৮৭ ফার্সি সন, পৃ. ১১৫।
  68. https://javadi.esra.ir/fa/w/87-1-1397/01/29, ইসরা ওয়েবসাইট।
  69. দাউদী ওয়া ‍রুস্তম নেযাদ, আশুরা, রিশেহা, আঙ্গিযেহা, রুয়িদাদহা, পায়ামাদহা, ১৩৮৮ ফার্সি সন, পৃ. ১১৫-১২৬।
  70. তেহরানি, ইমাম শেনাছি, ১৪১৬ হি., খণ্ড ৮, পৃ. ৬৭।
  71. দাউদী ওয়া ‍রুস্তম নেযাদ, আশুরা, রিশেহা, আঙ্গিযেহা, রুয়িদাদহা, পায়ামাদহা, ১৩৮৮ ফার্সি সন, পৃ. ১১৫-১২৬।
  72. দাউদী ওয়া ‍রুস্তম নেযাদ, আশুরা, রিশেহা, আঙ্গিযেহা, রুয়িদাদহা, পায়ামাদহা, ১৩৮৮ ফার্সি সন, পৃ. ১১৫-১২৬।
  73. হুসাইনি খোরাসানি, বাযকাভি দালিল ইজমা’, ১৩৮৫, পৃ. ১৯-৫৭।
  74. হুসাইনি খোরাসানি, বাযকাভি দালিল ইজমা’, ১৩৮৫, পৃ. ১৯-৫৭।
  75. হুসাইনি খোরাসানি, বাযকাভি দালিল ইজমা’, ১৩৮৫, পৃ. ১৯-৫৭।
  76. হুসাইনি খোরাসানি, বাযকাভি দালিল ইজমা’, ১৩৮৫, পৃ. ১৯-৫৭।
  77. আগা বুযুর্গ তেহরানি, আল-যারিয়াহ, দারুল আদ্বওয়া’, খণ্ড ১২, পৃ. ২০৫-২০৬।

গ্রন্থপঞ্জি

  • আগা বুযুর্গ তেহরানি, ‍মুহাম্মাদ মুহসিন, আল-যারিয়াহ ইলা তাসানিফিশ শিয়া, গেরদ আওয়ারান্দে(সংকলনকারী): আহমাদ বিন মুহাম্মাদ হুসাইনি, বৈরুত, দারুল আদ্বওয়া’।
  • ইবনে আবিল হাদীদ, আব্দুল হামিদ বিন হাবাহুল্লাহ, শারহ নাহজুল বালাগাহ, মুহাক্কেক: ইব্রাহিম, মুহাম্মাদ আবুল ফাযল, কোম, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহ আল-উযমা আল-মারআশি আল-নাজাফি (রহ.)।
  • ইবনে আসীর, আলী বিন মুহাম্মাদ, আল-কামিলু ফিত তারিখ, বৈরুত, দারু সাদর।
  • ইবনে আবদ রাব্বিহি, আহমাদ, আল-ইকদুল ফারিদ, স্থান অজ্ঞাত, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, তারিখ অজ্ঞাত।
  • ইবনে কাসীর, ইসমাঈল বিন উমর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, তাহকিক: আলী শিরি, বৈরুত, দারু ইহিয়ায়িত তুরাসিল আরাবি, ১৪০৮ হি./১৯৮৮ খ্রি.।
  • ইবনে কুতাইবাহ, আব্দুল্লাহ বিন ‍মুসলিম, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, মুহাক্কেক: আলী শিরি, বৈরুত, দারুল আদ্বওয়া’, ১৪১০ হি.।
  • ইরবিলি, আলী বিন ঈসা, কাশফুল গুম্মাহ ফি মা’রিফাতিল আয়িম্মা, তাহকিক: সাইয়্যেদ হাশেম রাসূলি মাহাল্লাতি, তাবরিয, মাক্তাবাতু বানি হাশেমি, ১৩৮১ হি.।
  • বালাযুরি, আহমাদ বিন ইয়াহইয়া, আসনাবুল আশরাফ, মুহাক্কেক: মুহাম্মাদ বাকের মাহমুদি, ইহসান আব্বাস, আব্দুল আজিজ দাভারি, মুহাম্মাদ হামিদুল্লাহ, বৈরুত, মুআসসেসাতুল আ’লামি লিল মাতবুয়াত।
  • বেইযুন, ইব্রাহিম, রাফতার শেনাছি ইমাম আলী (আ.), তারজমে আলী আসগার মুহাম্মাদি সিজানি, তেহরান, দাফতার নাশর ফারহাঙ্গে ইসলামী, ১৩৭৯ ফার্সি সন।
  • তেহরানি, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হুসাইন, ইমাম শেনাছি, মাশহাদ, আল্লামা তাবাতাবায়ী, তৃতীয় সংস্করণ, ১৪২৬ হি.।
  • তিজানী, মুহাম্মাদ, মু’তামারুস সাকীফাহ, লন্ডন, মুআসসেসাতুল ফাজর, ১৪২৪ হি.।
  • জাওহারী বাসরী, আহমাদ বিন আব্দুল আজিজ, আস-সাকীফা ওয়া ফাদাক, মুহাক্কেক: মুহাম্মাদ হাদি আমিনী, তেহরান, মাক্তাবাতু নাবাবিয়্যাহ আল-হাদীস।
  • হামাভি, ইয়াকুত বিন আব্দুল্লাহ, মু’জামুল বুলদান, বৈরুত, দারু সাদর, ১৯৯৫ খ্রি.।
  • যুবাইর বিন বাক্কার, আল-আখবারুল মুওয়াফ্ফাকিয়াত, তাহকিক: সামি মাক্কি আল-আনি, কোম, মানশুরাতুশ শারীফ আল-রাযি, ১৪১৬ হি.।
  • যারিনকুব, আব্দুল হুসাইন, বামদাদ ইসলাম, তেহরান, আমীর কাবির, ১৩৬৯ ফার্সি সন।
  • যেমাখশারি, মাহমুদ বিন উমর, আল-ফায়েক ফি গারিবিল হাদীস, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, মানশুরাত মুহাম্মাদ আলী বেইযুন।
  • শেইখ মুফিদ, মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ, আল-ফুসুলুল মুখতারাহ, তাহহিহ: আলী মীর শারিফি, কোম, কাঙ্গরে শেইখ মুফিদ, ১৪১৩ হি.।
  • তাবারসি, আহমাদ বিন আলী, আল-ইহতিজাজ, তাসহিহ: মুসাভি খোরাসান, মুহাম্মাদ বাকের, মাশহাদ, নাশরুল মুর্তাযা।
  • তাবারি ইমামি, মুহাম্মাদ বিন জারির, দালায়েলুল ইমামাহ, কোম, মুআসসেসাতুল বি’সাহ।
  • তাবারি, ‍মুহাম্মাাদ বিন জারির, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, মুহাক্কেক: ইব্রাহিম, মুহাম্মাদ আবুল ফাযল, বৈরুত, দারুত তুরাস, ১৩৮৭ হি.।
  • আব্দুল মাকসুদ, আব্দুল ফাত্তাহ, আল-সাকীফাতু ওয়াল খিলাফাহ, বৈরুত, দারুল ‍মুহাযা আল-বাইদ্বা’, ১৪২৭ হি.।
  • আসকারি, মুর্তাযা, সাকীফা: বাররাসি নাহভে শেকলগিরি হুকুমত পাস আয রেহলাত পায়াম্বার, বে-কৌশিশ: মাহদি দাশতি, কোম, দানেশকাদে উসুল আল-দ্বীন, ১৩৮৭ ফার্সি সন।
  • মাদেলুঙ্গ, উয়িলফোর্ড, জা-নশীনী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি, তরজমা: আহমাদ নেমায়ী, মুহাম্মাদ জাওয়াদ মাহদাভি, জাওয়াদ কাসেমি, হায়দার রেযা যাবেত, মাশহাদ, বুনিয়াদ পেঝুহেশহায়ে ইসলামী আস্তানে কুদস রাযাভি, ১৩৭৭ ফার্সি সন।
  • মুজাফ্ফার, মুহাম্মাদ রেযা, আস-সাকীফাহ, মুকাদ্দামে মাহমুদ মুজাফ্ফার, কোম, মুআসসেসাতু আনসারিয়ান লিল তাবাআতু ওয়াল নাশর, ১৪১৫ হি.।
  • মুইর, যিবা ওয়া হুসাইন মুফতাখারি; সাদেক আইনেভান্দ, আলী রাজাবলু, “বাররাসি তা’সির এ’যাম লাস্কার ওসামা বার চেগুনেগি মোশারেকাত সিয়াসি নাখাবগান মোহাজের ওয়া আনসার দার সাকীফা ওয়া তাসবিত খিলাফাত”, মোতালেআত তারিখ ইসলাম, সংখ্যা ১৭, পঞ্চম বর্ষ, তাবেস্তান ১৩৯২ ফার্সি সন।
  • মুনকারা, নাসর বিন মুযাহেম, ওয়াকআতু সিফ্ফিন, কোম, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহ মারআশি আল-নাজাফি (রহ.), ১৪০৪ হি.।
  • নির তাবরিযি, দিওয়ান আতাশকাদে, কিতাব ফুরুশি হাতেফ, তাবরিয, ১৩৭৯ ফার্সি সন।
  • ইয়াকুবি, আহমাদ বিন ইসহাক, তারিখে ইয়াকুবি, বৈরুত, দারু সাদর, তারিখ অজ্ঞাত।
  • মাকদেসি, মুতাহহার বিন তাহের, আল-বাদউ ওয়াত তারিখ, স্থান অজ্ঞাত, মাক্তাবাতুস সাকাফাহ আল-দ্বীনি, তারিখ অজ্ঞাত।
  • https://farsi.khamenei.ir/speech-content?id=2438