রমজান

wikishia থেকে

রমজান বা রামাজানুল মুবারক (আরবি: رَمَضانُ المُبارَک) চন্দ্র বর্ষের নবম মাস; যে মাসে মুসলমানদের উপর রোযা রাখা ওয়াজীব। রেওয়ায়েতসমূহে, রমজান মাসের বিভিন্ন ফযিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে; এই মাসকে আল্লাহ’র মেহমানদারির মাস, রহমত, মাগফিরাত, বরকত এবং কুরআনের বসন্তের মাস হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। হাদীস অনুসারে, এই মাসে আসমান ও বেহেশতের দরজাগুলো খুলে এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। শবে ক্বদর যা কিনা কুরআন অবর্তীর্ণ হওয়ার রাত হিসেবে পরিচিত, এই মাসে অবস্থিত। আরও কিছু ঐশী গ্রন্থ যেমন, তাওরাত ও ইঞ্জিল এই মাসে অবতীর্ণ হয়েছে। রমজান একমাত্র মাস যার নাম কুরআনে উল্লেখিত হয়েছে।

মুসলমানদের নিকট এই মাসের বিশেষ স্থান ও মর্যাদা রয়েছে এবং এই মাসে মুসলমানরা ইবাদতের প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগী হন। দোয়া’র সূত্রগুলোতে এই মাসের জন্য বিভিন্ন আমল ও ইবাদাতসমূহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলোর মধ্যে রয়েছে, কুরআন তিলাওয়াত, শবে ক্বদরের রাতগুলোতে জাগরণ, দোয়া, নামায, ইস্তেগফার, ইফতারি দেওয়া এবং দুস্থদেরকে সাহায্য করা।

এই মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো হচ্ছে শবে ক্বদরে কুরআন অবতীর্ণ হওয়া এবং ২১ তারিখে শিয়াদের প্রথম ইমাম হযরত আলী (আ.)-এর শাহাদাত। ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.)-ও এই মাসের ১৫ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। রমজান মাসে ইবাদত-বন্দেগী ও রোযা পালন করা মুসলিম পরিচয়ের একটি অংশ। মুসলিম সমাজগুলোতে রমযান মাসকে কেন্দ্র করে মেহমানদারীত্ব ও সংঘবদ্ধ অনুষ্ঠান, মসজিদ ও ধর্মীয় স্থাপনাসমূহের পরিচ্ছন্নতা, পুনর্মিলন অনুষ্ঠান, রকমারি খাবার ও মিষ্টান্ন তৈরির ন্যায় বিভিন্ন রীতি-নীতি ও ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে।


অবস্থান

রমজান মাস ইসলামী বর্ষপঞ্জিকার নবম মাস[১] যে মাসে মুসলমানদের উপর রোযা রাখা ওয়াজিব।[২] কুরআন শরীফ[৩] এবং আরও কিছু ঐশী গ্রন্থ যেমন, ইব্রাহিমের (আ.) সহিফা, ইঞ্জিল, তাওরাত এবং যাবুর এই মাসে সংশ্লিষ্ট নবীদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে।[৪]

রমজান শব্দটি কুরআনে একবার উল্লেখিত হয়েছে[৫] এবং একমাত্র মাস যার নাম কুরআনে এসেছে:[৬]

অনুরূপভাবে শবে ক্বদর যা কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার রাত;[৭] রেওয়ায়েত[৮] ও তাফসীর অনুসারে[৯] তা রমযান মাসেরই অন্তর্গত। রমজান শব্দের অভিধানিক অর্থ হচ্ছে সূর্যের তাপের তীব্রতা।[১১] বর্ণিত হয়েছে রমযান এ কারণেই রমযান অভিহিত হয়েছে যে গুনাহসমূহকে জ্বালিয়ে বা পুড়িয়ে দেয়।[১২] অনুরূপভাবে রেওয়ায়েতি সূত্রগুলোতে, রমযান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একটি নাম হিসেবে গণ্য হয়েছে।[১৩]


বৈশিষ্ট্যসমূহ

মহানবি (স.) খুতবা-এ শাবানিয়াতে রমযান মাসের যে সব ফযিলতের উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে কিছু ফযিলত হচ্ছে নিম্নরূপ:

  • মানুষ এই মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মেহমান হিসেবে দাওয়াতপ্রাপ্ত হয়েছেন।
  • শবে ক্বদর যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম, এই মাসের অন্তর্গত।
  • এই মাসের যে কোন রাত্রে জাগরণ ও নামায আদায় অন্যান্য মাসের সত্তর রাতের সমান।
  • এই মাস ধৈর্যের মাস এবং ধৈর্যের পুরস্কার হচ্ছে বেহেশত।
  • সহানুভূতির মাস
  • এটা এমন একটি মাস যাতে মু’মিন বান্দাগণের রুজি-রোজগার বৃদ্ধি পায়।

মহানবি (স.)-এর বর্ণনানুসারে, এটা এমন একটি মাস যার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হলে, মানুষ চাইবে সারা বছর যেন রমজান হয়।[১৪] রাসূলের (স.) রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, রমযান মাস হচ্ছে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ হওয়ার, বেহেশতের দরজাগুলো উন্মুক্ত হওয়ার এবং শয়তানকে শিকলাবদ্ধ করার মাস।[১৫]

  • মহানবি (স.)-এর জামানায় রমজান মাসকে মারযুক বলা হতো।[১৬]

এছাড়াও মাসূমগণের রেওয়ায়েতে রমজান মাসকে আল্লাহর মাস;[১৭] আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহের মাস;[১৮] বরকত ও নেকী বৃদ্ধি এবং গুনাহসমূহ মুছে যাওয়ার মাস[১০] এবং এমন একটি মাস যে কোন বান্দার গুনাহ যদি এই মাসে মাফ না করা হয়, তবে তাকে অন্যান্য মাসগুলোতে তাকে মাফ করার কোন আশা থাকে না[২০] বলে অভিহিত করা হয়েছে।

আমলসমূহ

রমজান মাসের বিশেষ আহকাম ও আমলসমূহ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু সকল দিনের এবং কিছু বিশেষ দিনগুলোর জন্য নির্ধারিত।

রোযার বাধ্যবাধকতা

রমজান মাসে মুসলমানদের উপর রোযা রাখা ওয়াজিব।[২১] রোযা হচ্ছে কিছু কিছু কাজ সম্পাদন করা হতে বিরত থাকা যেমন, ফজরের আযান থেকে মাগরিবের আযান পর্যন্ত অনাহারে থাকা।[২২] রমযান মাসে রোযা রাখার নির্দেশ এবং এ সংক্রান্ত কিছু আহকাম কুরআন ও মুসলমানদের ফিকাহশাস্ত্রগুলোতে এসেছে। ফকিহগণের ফতোয়া অনুসারে, যদি কেউ শরীয়তি ওজরের কারণে রোযা রাখা থেকে মাফ পেয়ে থাকে, তবে জনসম্মুখে তার রোযা ভাঙ্গা উচিত নয়।[২৪]


দোয়া পাঠ করা

সেহরীর সময়ে দোয়া যেমন, দোয়া-এ বাহা ও দোয়ায়ে আবু হামযা সোমালি,[২৫]এছাড়াও রাত্রিগুলোতে দুয়া-এ ইফতিতাহ,[২৬] ওয়াজিব নামাযগুলোর পর দোয়া-এ یا عَلِی یا عَظیمُ، اَللّهُمَّ اَدْخِلْ عَلی اَهْلِ الْقُبُورِ السُّرُورَ و «اَللّهُمَّ ارْزُقْنی حَجَّ بَیتِک الْحَرامِ» প্রথম অংশে এই মাসের প্রতিদিনের আমলের অন্তর্ভূক্ত।


কুরআন তিলাওয়াত

কোন কোন রেওয়ায়েতে রমজান মাস কুরআনের বসন্ত হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছে।[২৮] তদ্রুপভাবে, এই মাসে কুরআনের একটি আয়াত পাঠ করার সওয়াব অন্যান্য মাসে কুরআন খতমের সমান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[২৯] কিছু কিছু ইসলামি রাষ্ট্রে মুসলমানগণ এই মাসের প্রথম থেকে প্রতিদিন এক পারা করে কুরআন তিলাওয়াত করে এবং মাসের শেষ অবধি একটি কুরআন খতম সম্পন্ন করেন। এই খতমগুলো অধিকাংশ মসজিদসমূহে এবং অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে দলবদ্ধভাবে সম্পাদন করা হয়।

শবে ক্বদরে রাত্রি জাগরণ

রেওয়ায়েত অনুসারে, শবে ক্বদর হচ্ছে রমযান মাসের ১৯, ২১, ২৩ এর রাতগুলোর একটি।[৩১] কোন কোন রেওয়ায়েতে রমযানের ২৩তম রাত শবে ক্বদর হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে।[৩২]শেইখ সাদুক বলেন, আমাদের শিক্ষকগণের মধ্যে ঐক্যমত রয়েছে যে, রমযানের ২৩তম রাত হচ্ছে শবে ক্বদর।[২৩] আল্লামা তাবাতাবায়ীর ভাষ্য মতে, আহলে সুন্নতের মধ্যে প্রসিদ্ধ হচ্ছে যে, রমযানের ২৭তম রাত হচ্ছে শবে ক্বদর।[৩৪]

শিয়ারা প্রত্যেক বছর রমজানের ১৯তম, ২০তম ও ২৩তম রাতে সেহরী পর্যন্ত ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে অথবা নিজেদের বাড়িতে রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করেন।[৩৫] শবে ক্বদরের আমলসমূহের মধ্যে জাওশান-এ কাবির পাঠ এবং কুরআন মাথায় রেখে করা আমল হচ্ছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল যা এই রাতগুলোতে সম্পাদন করা হয়।[৩৬]


মুস্তাহাব নামাযসমূহ

রমজান মাসের আমলের মধ্যে কিছু মুস্তাহাব নামায রয়েছে; এই নামাযগুলোর মধ্যে কিছু হচ্ছে রমযান মাসের প্রত্যেক রাতের জন্য এবং কিছু হচ্ছে বিশেষ কোন রাত বা দিনের জন্য নির্ধারিত।[৩৭]

উদাহরণস্বরূপ, রমজান মাসের রাতগুলোতে হাজার রাকআত নামায পড়ার কথা বলা হয়েছে[৩৮] এই নামাযগুলো এভাবে পড়তে হবে বলে অধিকাংশ মনে করেন: রমযানের প্রথম রাত থেকে ২০তম রাত পর্যন্ত প্রতি রাত্রে ২০ রাকআত এবং বিশতম রাত থেকে মাসের শেষ পর্যন্ত প্রতি রাত্রে ৩০ রাকআত পড়তে হবে এবং সম্ভাব্য শবে ক্বদরের প্রতি রাত্রে এগুলো ছাড়াও আরও ১০০ রাকআত নামায পড়তে হবে।[৩৯]আহলে সুন্নত প্রতি রাত্রে ২০ রাকআত মুস্তাহাব নামায পড়ে থাকে, যা তারাবীহ’র নামায নামে পরিচিত।[৪০] আহলে সুন্নত দ্বিতীয় খলিফাকে অনুসরণ করে এই নামায জামাআতের সাথে আদায় করে, শিয়ারা এই নামায জামাআতবদ্ধভাবে আদায় করাকে বিদআত জ্ঞান করেন।[৪১]


শেষ দশ দিনের এ’তেকাফ

রমজান মাসের শেষ দশ দিনের এ’তেকাফ হচ্ছে মুস্তাহাব এবং অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ।[৪২]শেষ দশ দিন এ’তেকাফের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় এবং ঐ এ’তেকাফ দু’টি হজ্ব ও দু’টি ওমরাহ’র সমতুল্য হিসেবে জ্ঞান করা হয়েছে।[৪৩]মহানবি (স.) প্রথমে রমজান মাসের ১ম ১০ দিন, অতঃপর দ্বিতীয় ১০ দিন এবং অতঃপর এই মাসের তৃতীয় ১০ দিনকে এ’তেকাফ আঞ্জাম দেওয়ার জন্য নির্বাচন করেন এবং তারপর থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত রমযান মাসের শেষের ১০দিন এ’তেকাফ আঞ্জাম দিতেন।[৪৪]


প্রচলিত রীতি-নীতি

মুসলিম সমাজে রমজান মাস উপলক্ষে বিভিন্ন রীতি-নীতির প্রচলন রয়েছে।

ইফতারি’র দস্তরখানা

বিভিন্ন দেশের মুসলমানেরা রমজান মাসে বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে ইফতারি’র দস্তরখাতা বিছান।[৪৫]অনুরূপভাবে, ইরানের লোকজন একে অন্যকে ইফতার করার জন্য নিজেদের বাড়িতে দাওয়াত করেন এবং ধর্মীয় স্থাপনাসমূহে ইফতারির সময় নাযরি বিতরণ করেন।[৪৬] মহানবি (স.) হতে বর্ণিত রেওয়ায়েত অনুসারে, যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোন মু’মিন ব্যক্তিকে ইফতার প্রদান করে, যদিওবা তা একটু পানি অথবা একটা খেজুর দিয়ে হোক না কেন, তা’ গোলাম আযাদ করার সমান।[৪৭]কোন কোন এলাকায় ইফতারির পর আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

সেহরী’র সময়ে দোয়া পাঠ

কিছু কিছু শহরে বিভিন্ন উপায়ে সেহরী’র সময় ঘোষণা এবং লোকজনকে ঘুম থেকে জাগ্রত করা যেমন মুয়াজ্জিন ও দলবদ্ধভাবে অলিতেগলিতে যেয়ে চিৎকার, ফানুস জ্বালানো, টিনের জের বাজানো, দরজায় ধাক্কা দেওয়া এবং তোপধ্বনির মাধ্য জাগ্রত করা।[৪৮]এছাড়াও ইরানের টেলিভিশন ও মসজিদের মাইকগুলোতে ফজরের আযানের পূর্বে দোয়া-এ সাহর এবং মাগরিবের আযানের পূর্বে মুনাযাত সম্প্রচারিত হয়ে থাকে।[সূত্র প্রয়োজন]

মুবাল্লিগ প্রেরণ

রমজান মাসে শিয়া ওলামারা ধর্ম প্রচারের জন্য বিভিন্ন শহর ও গ্রামগুলোতে যান এবং শরীয়তি হুকুম আহকাম বর্ণনা, বক্তব্য প্রদান এবং জামাতে নামায আদায় করেন।[৪৯]এছাড়াও তাবলীগি প্রতিষ্ঠানগুলো এই মাসে মুবাল্লিগদেরকে ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং অন্যান্য দেশগুলোতে প্রেরণ করেন।[৫০]

দৈনন্দিন দোয়াসমূহ সমবেতভাবে পড়া

শিয়ারা দৈনন্দিন নামায জামাআতের সাথে আদায় করার পর, দোয়া-এ «یا علی یا عظیم» সমবেতভাবে পাঠ করেন। এছাড়াও নামায আদায়কারীদের একজন দোয়া-এ «اللهم ادخل علی اهل القبور السرور» এবং রমযান মাসের প্রতিদিনের দোয়াও উচ্চস্বরে পাঠ করেন এবং অন্যরা প্রত্যেকটি বাক্যের পর আমীন বলেন।[সূত্র প্রয়োজন]

গারগিয়া’ন প্রথা

গারগিয়ান অথবা ক্বারক্বিয়ান রীতি হচ্ছে এমন একটি ঐতিহ্য যা ১৫ রমযান রাত্রে বা ইমাম হাসান (আ.) জন্মের সময়ের সাথে তাল রেখে অনুষ্ঠিত হয়। এই রীতি অনুসারে, বাচ্চারা ইফতারের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ির দরজায় গিয়ে কবিতা পাঠ করে বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে চকলেট ও মিষ্টি আদায় করে।[৫১] কথিত আছে, এই প্রথা মহানবি (স.)-এর সময় থেকে চলে আসছে, যখন লোকজন ইমাম হাসান (আ.)-এর জন্ম উপলক্ষে ইমাম আলী (আ.) এবং ফাতেমা (সা.আ.)-এর দরজায় যেতেন। ইরানের দক্ষিণে এবং মিশর, ইরাক, বাহরাইন, আরব আমীরাত ইত্যাদি রাষ্ট্রগুলোতে গারগিয়ান প্রথা পালন করা হয়।[৫৩]

কুদস দিবসের মিছিল

ইমাম খোমেনী (র.) ১৯৭৯-৮০ খ্রিষ্টাব্দে রমজান মাসের শেষ শুক্রবারকে ফিলিস্তিনি জনগণের সমর্থনে কুদস দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন।[৫৬] মুসলমানরা প্রত্যেক বছর এই দিনে বিভিন্ন রাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি জনগণ এবং মসজিদুল আক্বসার মুক্তির সমর্থনে মিছিল করে থাকেন।[৫৮]


রমজান মাসের শুরু ও শেষ নির্ধারণ করা

রমযান মাসের শুরু ও শেষ নিন্মোক্ত পন্থাগুলোর একটির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়: ১) চাঁদ দেখা: ব্যক্তি স্বয়ং মাসের শুরু এবং শেষের চাঁদ দেখবে। ২) কিছু মানুষের কথার মাধ্যমে নিশ্চয়তা অর্জন করা। ৩) দুইজন ন্যায়পরায়ন ব্যক্তির সাক্ষ্য প্রদান, যাদের বক্তব্য একে অন্যের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। ৪) পূর্বের চন্দ্র মাসের প্রথম থেকে ত্রিশ দিন অতিবাহিত হতে হবে। ৫) হাকেমে শারঅ-এর হুকুম[৬০] কিছু হাদীস রমযান মাসকে ৩০ দিন হিসেবে গণ্য করেছে[৬১] এবং শিয়া ওলামাদের একটি দল এই মতে বিশ্বাসী ছিলেন;[৬২]তবে পক্ষান্তরে, কিছু কিছু রেওয়ায়েত অনুসারে, রমযান অন্যান্য মাসের ন্যায় এবং ২৯ বা ৩০ রোযা হতে পারে।[৬৩] প্রসিদ্ধ ফকিহগণ এই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন।[৬৪] শাওয়াল মাসের শুরু এবং ঈদুল ফিতরের ঘোষণার মাধ্যমে রমযান মাসের পরিসমাপ্তি ঘটে। ফিতরা প্রদান এবং নামায আদায় করা হচ্ছে ঈদুল ফিতরের অন্যতম আমল।[৬৫]


ঘটনা ও উপলক্ষসমূহ

  • ইমাম রেযাকে (আ.) উত্তরাধিকারী ঘোষণা (৭ রমযান ২০১ হি.)[৬৬]
  • হযরত খাদিজার ইন্তেকাল (১০ রমযান বেসাতের দশম বছর)[৬৭]
  • রাসূল (স.)-এর সাহাবীদের মধ্যে এবং একইভাবে রাসূলুল্লাহ (স.) এবং ইমাম আলীর (আ.) মধ্যে আকদে উখওয়াত-এর (ভ্রাতৃত্বের বন্ধন) অনুষ্ঠান (১২ রমযান ১ম হি.)[৬৮]
  • ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.)-এর জন্ম (১৫ রমযান ৩ হি.)[৬৯]
  • বদরের যুদ্ধ (১৭ রমযান ২য় হি.)[৭০]
  • শবে ক্বদর এবং কুরআন অবতীর্ণ হওয়া (১৯ অথবা ২১ অথবা ২৩ রমযান ১ম হি.)
  • মক্কা বিজয় (২০ রমযান ৮ হি.)[৭১]
  • ইমাম আলী (আ.)-এর শাহাদাত (২১ রমযান ৪০ হি.)[৭২]

গ্রন্থ পরিচিতি

রমজান মাস সম্পর্কে বিভিন্ন গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:

  • মুহাম্মাদ মুহাম্মাদী রেই শাহরি রচিত শাহরুল্লাহ ফিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ। এই গ্রন্থটি কুরআন ও আহলে বাইতের (আ.) হাদীসের শিক্ষার আলোকে রমজান মাস এবং এই মাসে রোযার বৈশিষ্ট্য, ফযিলতসমূহ ও নিয়ম-নীতি সম্পর্কে একটি বিস্তৃত চিত্র তুলে ধরেছে। এই গ্রন্থটি জাওয়াদ মুহাদ্দেসী মারফত “আল্লাহর মাস শিরোনামে (রমজান মাস সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে বিস্তৃত গবেষণা)” ফার্সি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। “মোরাকেবাতে মাহে রমজান” শিরোনামে বইয়ের নির্বাচিত অংশও প্রকাশিত হয়েছে।[৭৭]
  • দার মাহযারে মাহে মোবারাকে রমজান: আবুল ফাযল শাইখি রচিত ফযিলত, আমল, শরীয়তি আহকাম এবং রমযান মাসের উপলক্ষসমূহ সম্পর্কিত একটি গবেষণা, রাওযাতুল আব্বাস পাবলিকেশন্স।
  • আলী আকবার আকবারযাদেহ রচিত ‘আহমিয়্যাতে মাহে মোবারকে রমজান আয দিদগাহে কুরআন ওয়া রেওয়ায়েত’, কাওসার হেদায়েত পাবলিকেশন্স ।
  • সাইয়্যেদ আহমাদ ওয়াকিলিয়ান রচিত রমজান দার ফারহাঙ্গে মারদুম। গ্রন্থটি রমজান মাস সম্পর্কে ইরানি জনগণের রীতি-নীতি ও বিশ্বাস সংক্রান্ত একটি রচনা যা সরুশ পাবলিকেশন্স প্রকাশ করেছে।[৭৮]

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

  • আমুলি, মির্যা মুহাম্মাদ তাকী, মিসবাহুল হুদা ফি শারহি উরওয়াতুল উসকা, তেহরান, নাশরে মুয়াল্লেফ, ১৩৮০ হি.।
  • ইমাম খোমেনী, সাইয়্যেদ রুহুল্লাহ, তৌযিহুল মাসায়েল (মোহাশ্শা), কোম, দাফতারে ইন্তেশারাতে ইসলামী, অষ্টম সংস্করণ, ১৪২৪ হি.।
  • ইমাম খোমেনী, সাইয়্যেদ রুহুল্লাহ, সহিফায়ে ইমাম, তেহরান, মুআসসেসেয়ে তানযিম ওয়া নাশরে আসারে ইমাম খোমেনী, ১৩৮৯ ফার্সি সন।
  • বাহরানি, শেইখ ইউসুফ, আল-হাদায়েকুন নাযেরাহ ফি আহকামিল ইতরাতিত তাহেরাহ, কোম, দাফতারে ইন্তেশারাতে ইসলামী, প্রথম সংস্করণ, ১৪০৫ হি.।
  • হুররে আমেলি, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, ওয়াসায়েলুশ শিয়া, কোম, মুআসসেসাতু আলিল বাইত (আ.), ১৪০৯ হি.।
  • রাগেব, হুসাইন ইবনে মুহাম্মাদ, মুফরাদাতু আলফায আল-কুরআন, বৈরুত-দামেস্ক, দারুল কালাম-দারুল শামিয়্যাহ, প্রথম সংস্করণ, ১৪১২ হি.।
  • সাইয়্যেদ ইবনে তাঊস, আলী ইবনে মূসা, আল-ইকবালু বিল আ’মালিল হাসানাতি ফিমা ইয়া’মালু মাররাতিন ফিস সানাহ, তাহকিক ওয়া তাসহিহ: জাওয়াদ কাইয়ুমি ইস্ফাহানি, কোম, দাফতারে তাবলীগাতে ইসলামি, প্রথম সংস্করণ, ১৩৭৬ ফার্সি সন।
  • সাদুক, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, আল-আমালি, তেহরান, কিতাবচী, ষষ্ঠ সংস্করণ, ১৩৭৬ ফার্সি সন।
  • সাদুক, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, আল-খিছাল, তাহকিক ওয়া তাসহিহ: আলী আকবার গাফ্ফারি, কোম, জামে-এ মোদাররেসীন, প্রথম সংস্করণ, ১৩৬২ ফার্সি সন।
  • সাদুক, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, উয়ুনু আখবারির রেযা (আ.), তাহকিক ওয়া তাসহিহ: মাহদি লাজুরদি, তেহরান, নাশরে জাহান, প্রথম সংস্করণ, ১৩৭৮ হি.।
  • তাবাতাবায়ী, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হুসাইন, আল-মিযান ফি তাফসীরিল কুরআন, বৈরুত, মুআসসাসাতুল আ’লামি লিল মাতবুআত, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৩৯০ হি.।
  • তাবাতাবায়ী ইয়াযদি, সাইয়্যেদ, মুহাম্মাদ কাযিম, আল-উরওয়াতুল উসকা (মুহাশ্শা), কোম, দাফতারে ইন্তেশারাতে ইসলামি, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৯ হি.।
  • তাবারসি, ফাযল ইবনে হাসান, মাজমাউল বায়ান ফি তাফসীরিল কুরআন, তেহরান, নাসের খসরু, তৃতীয় সংস্করণ, ১৩৭২ ফার্সি সন।
  • তাবারি, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, তাহকিক: মুহাম্মাদ আবুল ফাযল ইব্রাহিম, বৈরুত, দারুত তুরাস, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৩৮৭ হি.।
  • ক্বারাআতি, মুহসিন, তাফসীরে নূর, তেহরান, মারকাযে ফারহাঙ্গিয়ে দারসহায়ী আয কুরআন, প্রথম সংস্করণ, ১৩৮৮ ফার্সি সন।
  • কুম্মি, শেইখ আব্বাস, মাফাতিহুল জিনান, কোম, নাশরে উসওয়া, তারিখ অজ্ঞাত।
  • কুম্মি, শেইখ আব্বাস, ফিযুল আলাম ফি আমালিশ শুহুর ওয়া ওয়াক্বায়ি’ল আইয়্যাম, ইন্তেশারাতে সুবহে পিরুযি, তারিখ অজ্ঞাত।
  • কুলাইনি, মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকুব, আল-কাফি, তাহকিক ওয়া তাসহিহ: আলী আকবার গাফ্ফারি ও মুহাম্মাদ আখুন্দি, তেহরান, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়্যাহ, চতুর্থ সংস্করণ, ১৪০৭ হি.।
  • মাযান্দারানি, শারহুল কাফি (আল-উসুল ওয়াল রাওযাহ), তাহকিক ওয়া তাসহিহ: আবুল হাসান শা’রানি, তেহরান, আল-মাক্তাবাতুল ইসলামিয়্যাহ, প্রথম সংস্করণ, ১৩৮২ হি.।
  • মাজলিসী, মুহাম্মাদ বাকের, বিহারুল আনওয়ার আল-জামাআহ লি দুরারি আখবারিল আইম্মাতিল আতহার (আ.), বৈরুত, দারু ইহিয়ায়িত তুরাসিল আরাবি, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪০৩ হি.।
  • মুফিদ, মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ, আল-ইরশাদ ফি মা’রিফাতি হুজাজিল্লাহি আলাল ইবাদ, তাসহিহ: মুআসসাসাতু আলিল বাইত, কোম, কনগ্রেয়ে শেইখ মুফিদ, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৩ হি.।
  • মুসাভি গুলপাইগানি, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ রেযা, মাজমাউল মাসায়েল, তাহকিক ওয়া তাসহিহ: আলী কারিমি জাহরমি, আলী সাবেতি হামেদানি ও আলী নাইয়ারি হামেদানি, দারুল কুরআন আল-কারিম, কোম, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪০৯ হি.।
  • নাজাফি, মুহাম্মাদ হাসান, জাওয়াহেরুল কালাম ফি শারহি শারায়েউল ইসলাম, বৈরুত, দারু ইহিয়ায়িত তুরাসিল আরাবি, সপ্তম সংস্করণ, তারিখ অজ্ঞাত।