জামাতের নামায
জামাতের নামায (আরবি: صلاة الجماعة) হচ্ছে সেই নামায যা সমবেতভাবে আদায় করা হয়। জামাতের নামাযকে অন্যতম ফযিলতপূর্ণ ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়। জামাতের নামাযে যিনি সামনে দাঁড়ান এবং অন্যরা যাকে অনুসরণ করেন, তিনি জামাতের ইমাম বা পেশ ইমাম হিসেবে পরিচিত এবং যারা তাকে ইক্তেদা তথা অনুসরণ করেন তাদেরকে মা’মুম বলা হয়।
কিছু কিছু ফিকাহবিদের ভাষ্যানুযায়ী, নামায ওয়াজিব হওয়ার শুরুটা ছিল জামাত রূপে এবং মহানবি (স.) ও ইমাম আলী (আ.) সর্বপ্রথম জামাতের সহিত নামায আদায় করেন। রেওয়ায়েতে জামাতের একটি নামাযকে পঁচিশটি ফুরাদা নামাযের চাইতে উত্তম জ্ঞান করা হয়েছে এবং জামাতের সাথে নামায আদায় করার জন্য মসজিদের প্রতিবেশীদের প্রতি বিশেষভাবে উপদেশ দেওয়া হয়েছে।
শিয়াদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, জামাতের নামাযে অংশগ্রহণ করা হচ্ছে মুস্তাহাব-এ মুয়াক্কাদা (যে মুস্তাহাবের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে) এবং শুধুমাত্র ওয়াজিব নামাযসমূহ যেমন, পাঁচ ওয়াক্তের নামায, আয়াতের নামায, দুই ঈদের নামায, জানাযার নামায এবং জুমআর নামায জামাতবদ্ধভাবে আদায় করা যায়। শিয়াদের প্রসিদ্ধ ফিকাহবিদদের মতানুসারে, বৃষ্টির নামায ব্যতীত অন্যান্য মুস্তাহাব নামায জামাতের সাথে আদায় করা জায়েয নয়। আহলে সুন্নত সম্প্রদায় তারাবীহ’র নামায জামাতবদ্ধভাবে আদায় করেন, তবে শিয়ারা তা জামাতের সঙ্গে আদায় করাকে বিদআত মনে করেন।
পরিভাষা পরিচিতি
জামাতের নামায হচ্ছে সেই নামায যা সমবেতভাবে আদায় করা হয়। এই নামাযে পেশ ইমাম সামনে দাঁড়ান এবং মা’মুমরা তাকে অনুসরণ করেন। জামাতের নামায কমপক্ষে দু’জন অর্থাৎ ইমাম এবং একজন মা’মুম নিয়ে গঠিত হয়।[১]
গুরুত্ব
জামাতের নামায ইসলাম ধর্মের অন্যতম মুস্তাহাব-এ মুয়াক্কাদা[২] এবং কোন ওজর ছাড়া তা পরিত্যাগ করলে নামায কবুল না হওয়ার কারণ হয় এবং জামাতে নামাযের প্রতি উদাসীনতা, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে হেয় প্রতিপন্ন করার সমান বিবেচনা করা হয়েছে।[৩]
কুরআন শরীফে সরাসরিভাবে জামাতে নামাযের প্রতি ইশারা করা হয়নি, তবে ফকিহগণ জামাতের নামাযের ফযিলতের অধ্যায়ে «وَ أَقیمُوا الصَّلاةَ وَ آتُوا الزَّکاةَ وَ ارْکعُوا مَعَ الرَّاکعین»[৪] আয়াতটির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।[৫] কিছু কিছু মুফাস্সিরগণও উল্লেখিত আয়াতের দলবদ্ধভাবে রুকু-কে জামাতবদ্ধভাবে নামাযের প্রতি ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচনা করেছেন।[৬] এছাড়াও শিয়াদের কিছু কিছু হাদীস গ্রন্থে জামাতে নামাযের ফযিলত এবং এর আহকাম সংক্রান্ত বিশেষ অধ্যায় রয়েছে।[৭]
আয়াতুল্লাহ বুরুজের্দি কিছু রেওয়ায়েতের উপর নির্ভর করে মতপোষণ করেন, ইসলাম ধর্মে নামায শুরুতে জামাতের রূপে ওয়াজিব হয়েছে।[৮] মহানবি (স.)-এর নবুয়্যতের প্রথম দিকে রাসূলুল্লাহর ইমামতিতে জামাতের নামায অনুষ্ঠিত হত এবং শুধুমাত্র হযরত আলী (আ.) পুরুষ মা’মুম এবং হযরত খাদিজা (সা.আ.)[৯] নারী মা’মুম হিসেবে থাকতেন।[১০]পরবর্তীতে জাফর-এ তাইয়্যারও তাদের দলে যুক্ত হন।[১১]
হিকমত
ইমাম রেযা (আ.) হতে বর্ণিত রেওয়ায়েত অনুসারে, জামাতের নামাযের নিয়ম প্রতিষ্ঠার কারণ হচ্ছে মানুষের মাঝে ইসলাম, তাওহীদ এবং ইখলাছের প্রকাশ ঘটানো।[১২] ইলালুশ শারায়ে’ গ্রন্থে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) হতে বর্ণিত রেওয়ায়েত অনুসারে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জামাতের নামাযকে এজন্য নির্ধারণ করেছেন যাতে করে নামায আদায় না করা ব্যক্তিদের থেকে নামায আদায়কারী ব্যক্তিদেরকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয় এবং বুঝা যায় যে, কে নামাযের সময়গুলোর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কে তা অপচয় করছে। আরও উল্লেখিত হয়েছে, যদি জামাতের নামায না থাকতো, তবে কেউ অন্যের ব্যাপারে উত্তম সাক্ষ্য দিতে সক্ষম হতো না।[১৩]
ফযিলত
জামাতের নামায সম্পর্কে অনেক সওয়াব ও ফযিলতসমূহের কথা বর্ণিত হয়েছে। মহানবি (স.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, জামাতের নামাযে উপস্থিতির সংখ্যা যত বেশী হবে, আল্লাহর নিকট তা ততই প্রিয়[১৪] এবং তার পুরস্কারও বেশি: মা’মুম এক ব্যক্তি হলে নামাযের ফযিলত ১৫০ বরাবর, দুই ব্যক্তি হলে ৬০০ বরাবর এবং নয়জনের অধিক হলে, তার পুরস্কার সম্পর্কে আল্লাহ ব্যতিত কেউ অবগত নন।[১৫]
এছাড়াও রেওয়ায়েতে এসেছে যে, একটি জামাতের নামায ২৫টি ফুরাদা নামায অপেক্ষা উত্তম[১৬] এবং একটি জামাতের নামাযের সওয়াব, চল্লিশ বছরের ঘরের ফুরাদা নামায অপেক্ষা উত্তম জ্ঞান করা হয়েছে[১] এবং একজন আলেমের ইমামতিতে জামাতের নামাযের ফযিলত হচ্ছে মহানবির (স.) ইমামতিতে জামাতের নামাযের ন্যায়।[১৮]
প্রভাব
রেওয়ায়েত অনুসারে, জামাতের নামায নিফাক থেকে দূরে থাকা,[২] গুনাহসমূহ মাফ,[২০] দোয়া কবুল হওয়া,[২১] কিয়ামতের আযাবের যন্ত্রণা সহজ হওয়া, বেহেশতে প্রবেশ,[২২] আল্লাহ ও ফেরেস্তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের[২৩] কারণ হবে। এছাড়াও যে ব্যক্তি জামাতের সাথে নামায আদায় করে সে অন্যদেরকে শাফাআত করতে সক্ষম হবে।[৩]
মহানবি (স.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, নামায আদায়কারীর মসজিদের দিকে ফেলা প্রতি কদমের বিনিময়ে তার জন্য এক হাজার হাসানাহ লিপিবদ্ধ করা হয়, সত্তর হাজার স্তর অর্জন করে এবং যদি এমতাবস্থায় সে দুনিয়া থেকে চলে যায়, তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ৭০ হাজার ফেরেস্তা নিয়োগ করেন যেন তার কবর যিয়ারত করে এবং পুনরুত্থান অবধি কবরের একাকীত্ব সময়ে তার সঙ্গী হয়।[২৫]
এছাড়াও ইসলামী সমাজ হিসেবে পরিচয় পেতে, মানুষ পরস্পর সম্পর্কে অধিক ধারনা লাভ করতে, পারস্পরিক সহযোগিতা, মুসলমানদের মধ্যে ভালবাসা, আন্তরিকতা ও সু-সম্পর্কের বীজ বপন হচ্ছে জামাতের নামাযের অন্যান্য সুফল।[২৬]
আহকাম
শীয়া ফকিহগণ জামাআতের নামাযে অংশগ্রহণকে মুস্তাহাব-এ মুয়াক্কাদ জ্ঞান করেন।[২৭]ফজর, মাগরিব ও এশা’র নামাযগুলো জামাতের সাথে আদায় করার ব্যাপারে অধিক তাগিদ দেওয়া হয়েছে।[৪] অনুরূপভাবে, মসজিদের প্রতিবেশীদের জন্যও জামাতের নামাযে অংশগ্রহণের প্রতি বেশি বেশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে।[৫]আর জুমআর নামায সহীহ হওয়ার শর্তই হচ্ছে তা জামাতের সাথে আদায় করা।[৩০]
আহলে সুন্নতের হাম্বালি মাযহাব এবং হানাফিদের কেউ কেউ জামাতের নামাযকে ওয়াজিবে আইনি (যে ওয়াজিব সকল মুকাল্লিফের জন্য আঞ্জাম দেওয়া আবশ্যক) জ্ঞান করেন।[৩১] শাফেয়ী মাযহাবের একটি দলের মত হচ্ছে, সফররত অবস্থায় না থাকলে জামাতের নামায পুরুষদের জন্য ওয়াজিবে কিফায়ী (এমন ওয়াজিব যা সম্পাদন করা সকলের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও কেউ কেউ সেটা সম্পাদন করলে অন্যদের উপর থেকে দায়িত্ব উঠে যায়)।[৩২]
মুস্তাহাব নামাযসমূহ জামাতে আদায়
শিয়া ফকিহগণের দৃষ্টিতে, বৃষ্টির নামায ব্যতীত অন্যান্য মুস্তাহাব নামাযসমূহ জামাতবদ্ধভাবে আদায় করা জায়েয নয়।[৩৩]যদিওবা, কিছু কিছু শিয়া ফকিহগণের মতে, অন্তর্ধানকালীন সময়ে (ইমাম মাহদির গায়বাত তথা অন্তর্ধানকালীন সময়) দুই ঈদের নামায পড়া মুস্তাহাব।[৬] শিয়াদের প্রসিদ্ধ ফকিহগণের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, দুই ঈদের নামায মুস্তাহাব হোক বা ওয়াজিব উভয় ক্ষেত্রেই জামাতের সাথে আদায় করা আবশ্যক।[৩৫]হাদায়েক গ্রন্থের প্রণেতা শিয়াদের কোন কোন ফকিহগণ যেমন আবু সালেহ হালাবি ও শহীদ আউয়াল সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন যে, গাদীরের নামায জামাতের সাথে আদায় করাকে জায়েয জ্ঞান করতেন, স্বয়ং বাহরানি জামাতের সাথে এই নামায আদায় করাকে হারাম জ্ঞান করেন।[৩৬]অপরপক্ষে, আহলে সুন্নতের অধিকাংশ ফকিহগণ সকল মুস্তাহাব নামায যেমন: তারাবির নামায জামাআতবদ্ধভাবে আদায় করাকে জায়েয মনে করেন।[৩৭]মালেকী ও হানাফীগণ রমজান মাসের মুস্তাহাব নামাযগুলো ব্যতীত কিছু কিছু নফল নামাযসমূহ এবং আয়াতের নামায জামাতের সঙ্গে আদায় করাকে মাকরূহ জ্ঞান করেন।[৩৮]শিয়া ফকিহগণের দৃষ্টিতে তারাবীহ’র নামায জামাআতবদ্ধভাবে আদায় করা বিদআত।[৩৯]
পেশ ইমামের শর্তাবলী
ইসলামী ফিকাহশাস্ত্র অনুসারে, পেশ ইমামকে অবশ্যই আকেল (বুদ্ধিবৃ্ত্তি সম্পন্ন),[৭] বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক),[৮] মু’মিন[৯] এবং আদেল (ন্যায়পরায়ণ)[১০] হতে হবে। এছাড়াও পেশ ইমামকে অবশ্যই হালালজাদা[১১] হতে হবে, আর তার নামাযের ক্বিরাআত সঠিক হতে হবে।[১২] যদি সকল অথবা কোন কোন মা’মুম(ইমামকে অনুসরণকারী) পুরুষ হয়, তবে জামাতের ইমাম অবশ্যই পুরুষ হতে হবে।[১৩]
আহলে সুন্নতের প্রতি ইক্তিদা
জামাতের ইমামের অন্যতম শর্ত হচ্ছে মু’মিন হওয়া অর্থাৎ বারো ইমামি শিয়া হওয়া;[১৪]এই দৃষ্টিকোন থেকে শিয়া ফকিহগণ, আহলে সুন্নতের পেশ ইমামকে শিয়া মা’মুনদের ইক্তিদা তথা অনুসরণ করাকে রেওয়ায়েত অনুসারে[৪৮] সহিহ জ্ঞান করেন নি; তবে বিশেষ পরিস্থিতে উদাহরণস্বরূপ তাকিয়্যাহ অবলম্বনে আহলে সুন্নতের ইক্তিদা তথা অনুসরণ সম্পর্কে মতপার্থক্য বিদ্যমান; ইমাম খোমেনী এবং কেউ কেউ আহলে সুন্নতের অনুসরণের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই বলে মনে করেন,[৫০] কেউ কেউ আবার, নামাযের পুনরাবৃত্তি, অথবা অনুসরণ না করা এবং হামদ ও সূরা ক্বারাআত করাকে শর্ত হিসেবে জ্ঞান করেছেন।[৫১]
জামাতের নামাযে নারীদের উপস্থিতি
কিছু কিছু রেওয়ায়েত অনুসারে, নারীদের ক্ষেত্রে মসজিদে ও জামাতে নামায আদায় করার চেয়ে তাদের বাড়িতে নামায আদায় করা উত্তম; এই রেওয়ায়েত অনুসারে, নারীদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মসজিদ হচ্ছে তাদের ঘর,[৫৩] আর নারীদের জন্য ঘরে আদায় করা ফুরাদা নামাযের সওয়াব জামাতের নামাযের সমান জ্ঞান করা হয়েছে।[৫৪] শিয়া ফকিহগণের একটি দল এই রেওয়ায়েতকে দলিল হিসেবে উল্লেখ করে, বাড়িতে নারীদের আদায় করা নামায মুস্তাহাব এবং তাদের নামায মসজিদে আদায় করার চেয়ে উত্তম বলে বিবেচনা করেছেন।[৫৫] ফকিহগণের কেউ কেউ আবার এই রেওয়ায়েতকে বিশেষ পরিস্থিতির সাথে সম্পৃক্ত বলে জ্ঞান করেন এবং মনে করেন যে, নারীদের হিযাব বজায় রেখে মসজিদে নামায আদায় করাই উত্তম।[৫৬]এই দলটি একটি রেওয়ায়েতের মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে, নারীদের উপস্থিতিতে মহানবির (স.) জাআমাতের নামাযের দলিল রয়েছে।[৫৭]
অন্যান্য আহকাম
- প্রথম এবং দ্বিতীয় রাকাতে হামদ ও অন্য সূরা ব্যতীত নামাযের অন্যান্য যিকিরগুলো অবশ্যই মামুমকে নিজে পড়তে হবে।[৫৮]
- নামাযে মামুম অবশ্যই পেশ ইমামকে অনুসরণ করবে এবং কোন রুকুনকেই পেশ ইমামের পূর্বে যেন আঞ্জাম না দেয়।[১৫]
- নামায আদায়কারীদের স্থান অপেক্ষা পেশ ইমামের স্থান যেন উঁচু না হয়।[৬০]এ কারণেই, সাধারণত: মসজিদে মেহরাবের স্থানটি তুলনামূলক একটু গর্ত আকারে তৈরি করা হয়।[৬১]
- ইমাম এবং মামুমের মাঝে এবং অনুরূপভাবে কাতারগুলোর মাঝে পর্দা অথবা দেয়ালের ন্যায় অন্তরায় না থাকে। যদিওবা পুরুষ এবং নারীদের কাতারের মাঝে পর্দা টানানোর বিষয়টি এর ব্যতিক্রম।[৬২]
- জামাতে ইমামতির ক্ষেত্রে ইমামে রাতিব (কোন মসজিদ বা স্থানের দায়িত্বপ্রাপ্ত পেশ ইমাম)-এর অগ্রাধিকার রয়েছে।[৬৩]
- নারী তখনই কেবল পেশ ইমাম হতে পারবেন যখন মামুম হিসেবে শুধুমাত্র নারীরাই উপস্থিত থাকবেন।[৬৪]প্রসিদ্ধ মতানুসারে, পেশ ইমামের যাবতীয় শর্তাবলী বিদ্যমান থাকলে নারীদের জন্য নারী পেশ ইমাম জায়েয।[৬৫]
জামাতের নামাযের শিষ্টাচার
নামাযে জামাতের কিছু মুস্তাহাব ও মাকরূহ বিষয় রয়েছে; মুস্তাহাব বিষয়গুলো হচ্ছে নিম্নরূপ:
- প্রথম কাতারে পরহেযগার এবং বিজ্ঞ ব্যক্তিদের উপস্থিতি।[১৬]
- জামাতে ইমামের ডান দিকে মামুম দাঁড়ানো।[১৭]
- সর্বাপেক্ষা দূর্বল মামুম ব্যক্তির শারীরিক অবস্থাটি বিবেচনায় রাখা এবং পেশ ইমামের পক্ষ থেকে নামায দীর্ঘায়িত না করা, তবে সকল মামুমগণের দীর্ঘ নামায পছন্দ হওয়ার বিষয়টি জানা থাকলে ভিন্ন কথা।[১৮]
- ক্বাদ ক্বা-মাতিস সালাহ শোনার সময় মামুমদের দাঁড়িয়ে যাওয়া।[১৯]
- সূরা হামদ শেষ হওয়ার পর মামুমগণ কর্তৃক আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন «الحمدلله رب العالمین» বলা।[২০]
তদ্রুপভাবে, নামাযে জামাতের কিছু কিছু মাকরুহ বিষয় হচ্ছে নিম্নরূপ: অন্য কাতারগুলোতে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও একজন মামুমের একটি লাইনে দাঁড়ানো, ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ বলার পর নফল নামায পড়া, চার রাকাতি নামাযের ক্ষেত্রে মুসাফির ব্যক্তির ইক্তিদা করা[২১] এবং নামাযের যিকির সমূহকে এমনভাবে উচ্চস্বরে পড়া যা পেশ ইমাম তা শুনতে পায়।[৭২] মুয়াজ্জিনের পক্ষ থেকে ‘ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ’ শোনার পর কথা বলা।[৭৩]
গ্রন্থ পরিচিতি
ফকিহগণ, কিতাবুস সালাত গ্রন্থে জামাতের নামায এবং এ সংক্রান্ত আহকাম সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন।[৭৪]এছাড়াও জামাতের নামায সম্পর্কে আলাদাভাবে বিভিন্ন গ্রন্থ রচিত হয়েছে; যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:
- রিসালাতুস সালাত আল-জামাআত, হিজরি চতুর্দশ শতাব্দির শিয়া ফকিহ মুহাম্মাদ হুসাইন কাম্পানি (১২৯৬-১৩৬১ হি.) কর্তৃক রচিত গ্রন্থ। এই রিসালাতে নামাযে জামাতের আহকাম, ওয়াজিব বিষয়াবলী, মুস্তাহাবসমূহ এবং এর হারাম দিকগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। ১৪০৯ হিজরিতে মুআসসেসেয়ে নাশরে ইসলামি কোম এই রিসালাটিকে বুহুসু ফিল ফিকহি ওয়া হিয়া বুহুসু ফি সালাতিল জামাআতি ওয়াল মুসাফিরি ওয়াল ইজারাতি নামক একটি বই আকারে প্রকাশ করেছেন।[৭৫]
তথ্যসূত্র
- ↑ নূরী, মুস্তাদরাকুল ওয়াসায়েল, ১৪০৮ হি., খণ্ড ৬, পৃ. ৪৪৬।
- ↑ নূরী, মুস্তাদরাকুল ওয়াসায়েল, ১৪০৮ হি., খণ্ড ৬, পৃ. ৪৪৬।
- ↑ নূরী, মুস্তাদরাকুল ওয়াসায়েল, ১৪০৮ হি., খণ্ড ৬, পৃ. ৪৪৯।
- ↑ ইয়াযদি তাবাতাবায়ী, আল-উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৭৬১।
- ↑ ইয়াযদি তাবাতাবায়ী, আল-উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৭৬১।
- ↑ ইয়াযদি তাবাতাবায়ী, আল-উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৭৬৫; ইমাম খোমেনী, তৌযিহুল মাসায়েল, ১৩৮৭ ফার্সি সন, পৃ. ২৩৪।
- ↑ নাজাফি, জাওয়াহেরুল কালাম, ১৪০৪ হি., খণ্ড ১৩, পৃ. ৩২৩।
- ↑ নাজাফি, জাওয়াহেরুল কালাম, ১৪০৪ হি., খণ্ড ১৩, পৃ. ৩২৫।
- ↑ নাজাফি, জাওয়াহেরুল কালাম, ১৪০৪ হি., খণ্ড ১৩, পৃ. ২৭৩-২৭৫।
- ↑ নাজাফি, জাওয়াহেরুল কালাম, ১৪০৪ হি., খণ্ড ১৩, পৃ. ২৭৫।
- ↑ নাজাফি, জাওয়াহেরুল কালাম, ১৪০৪ হি., খণ্ড ১৩, পৃ. ৩২৪।
- ↑ ইয়াযদি তাবাতাবায়ী, আল-উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৭৯৮।
- ↑ নাজাফি, জাওয়াহেরুল কালাম, ১৪০৪ হি., খণ্ড ১৩, পৃ. ৩৩৬-৩৩৭।
- ↑ নাজাফি, জাওয়াহেরুল কালাম, ১৪০৪ হি., খণ্ড ১৩, পৃ. ২৭৩-২৭৫।
- ↑ ইয়াযদি তাবাতাবায়ী, আল-উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৭৮৫।
- ↑ ইয়াযদি তাবাতাবায়ী, আল-উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৮০৪।
- ↑ ইয়াযদি তাবাতাবায়ী, আল-উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৮০৩।
- ↑ ইয়াযদি তাবাতাবায়ী, আল-উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৮০৪।
- ↑ ইয়াযদি তাবাতাবায়ী, আল-উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৮০৪।
- ↑ ইয়াযদি তাবাতাবায়ী, আল-উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৮০৪।
- ↑ ইয়াযদি তাবাতাবায়ী, আল-উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৮০৪।
গ্রন্থপঞ্জি
- ইবনে আসির আল-জাযরি, মুবারাক ইবনে মুহাম্মাদ, জামেউল উসুল ফি আহাদিসির রাসূল, তাসহিহ: আব্দুল কাদির আরনাঊত, বৈরুত, দারু ইবন আল-আসির, ১৪০৩ হি.।
- ইবনে ইদ্রিস হিল্লি, মুহাম্মাদ ইবনে মানসুর, আল-সারায়েরুল হাউয়ি লি তাহরির আল-ফাতাউয়ি, কোম, দাফতারে ইন্তেশারাতে ইসলামী ওয়াবাস্তে বে জামেয়ে মুদাররেসীন হাওযা ইলমিয়্যাহ কোম, ১৪১০ হি.।
- ইবনে হাম্বাল, আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ, মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল, বৈরুত, দারু সাদির, তারিখ অজ্ঞাত।
- ইস্ফাহানি মুহাম্মাদ হুসাইন, বুহুসু ফিল ফিকহ: ইয়াহ তাউয়ি আলী, সালাতুল জামাআহ, সালাতুল মুসাফির, আল-ইজারাহ, কোম, দাফতারে ইন্তেশারাতে ইসলামী ওয়াবাস্তে বে জামেয়ে মুদাররেসীন হাওযা ইলমিয়্যাহ কোম, ১৪০৯ হি./১৩৬৭ ফার্সি সন।
- ইমাম খোমেনী, সাইয়্যেদ রুহুল্লাহ, আল-রাসায়েলুল আশারাহ, তেহরান, মুআসসেসেয়ে তানযিম ওয়া নাশরে অসারে ইমাম খোমেনী, ১৩৮৭ ফার্সি সন/১৪২৯ হি.।
- ইমাম খোমেনী, সাইয়্যেদ রুহুল্লাহ, তৌযিহুল মাসায়েল হযরত ইমাম খোমেনী, তেহরান, মুআসসেসেয়ে তানযিম ওয়া নাশরে অসারে ইমাম খোমেনী, ১৩৮৭ ফার্সি সন।
- বাহরানি, ইউসুফ ইবনে আহমাদ, আল-হাদায়েকুন নাযিরাহ ফি আহকামিল ইতরাতিত তাহেরাহ, তাহকিক: মুহাম্মাদ তাকী ইরাওয়ানি, সাইয়্যেদ আব্দুর রাজ্জাক মোকাররাম, কোম, দাফতারে ইন্তেশারাতে ইসলামী, ১৪০৫ হি.।
- বুরুজের্দি, হুসাইন, কেবলায়ে সাতর ওয়া সাতের ওয়া মাকানে মোসাল্লা, বে তাকরীরে আলী পানাহ এশতেহার্দি, কোম, মুআসসাসাতুল নাশর আল-ইসলামী, ১৪১৬ হি.।
- বুহুতি হাম্বালি, মানসুর ইবনে ইউনুস, কাশশাফুল ক্বিনায়ি আন মাতনিল ইক্বনা’, তাসহিহ: মুহাম্মাদ হাসান শাফেয়ী, বৈরুত, প্রকাশনা অজ্ঞাত, ১৪১৮ হি.।
- জাযিরি, আব্দুর রহমান, কিতাবুল ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবাআ, বৈরুত, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪২৪ হি.।
- হুররে আমেলি, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, ওয়াসায়েলুশ শিয়া, কোম, মুআসসাসাতু আলিল বাইত লি ইহিয়ায়িত তুরাস, ১৪০৯ হি.।
- খাতিব শিরবিনি, মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ, মুগনিল মুহতাজ ইলা মা’রিফাতি মাআনিল আলফায আল মিনহাজ, ব-তা’লিকাতে জুবেলি ইবনে ইব্রাহিম শাফেয়ী, বৈরুত, দারুল ফিকর, তারিখ অজ্ঞাত।
- যুহাইলি, ওয়াহবাহ ইবনে মুস্তাফা, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়াল আদাল্লাতুহ, দামেস্ক, দারুল ফিকর, তারিখ অজ্ঞাত।
- শেইখ সাদুক, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, আল-মুক্বনিয়ু ফিল ফিল ফিকহ্, কোম, মুআসসাসাতুল ইমাম আল-হাদি, ১৪১৫ হি.।
- শেইখ সাদুক, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, সাওয়াবুল আ’মাল, কোম, দারুশ শারীফ, ১৪০৬ হি.।
- শেইখ সাদুক, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, ইলালুশ শারায়ে’, কোম, কিতাব ফুরুশিয়ে দাভারি, ১৩৮৫ ফার্সি সন/১৯৬৬ খ্রি.।
- শেইখ সাদুক, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, মান লা ইয়াহদ্বুরুহুল ফাকিহ, তাসহিহ: আলী আকবার গাফ্ফারি, কোম, দাফতারে ইন্তেশারাতে ইসলামী ওয়াবাস্তে বে জামে’ মুদাররেসীন হাওযা ইলমিয়্যাহ কোম, ১৪১৩ হি.।
- শেইখ তুসি, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, আল-মাবসুতু ফি ফিকহিল ইমামিয়্যাহ, তাসহিহ: মুহাম্মাদ তাকী কাশফি, তেহরান, মুর্তাযাভিয়্যাহ,১৩৮৭ ফার্সি সন।
- শেইখ তুসি, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, তাহযিবুল আহকাম, তাসহিহ: হাসান মুসাভি খোরাসান, তেহরান, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়্যাহ, ১৪০৭ হি.।
- শেইখ তুসি, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, আল-খিলাফ, কোম, দাফতারে ইন্তেশারাতে ইসলামী, ১৪০৭ হি.।
- কাশানি, মোল্লা ফাতহুল্লাহ, যোবদাতুত তাফাসীর, কোম, বুনিয়াদে মাআরেফে ইসলামী, ১৪২৩ হি.।
- “কিতাবে নামাযে জামাআত ওয়া বারকাতে অন বে চপে চাহারোম রেসিদ”, খাবার গুযারিয়ে ফার্স, বিষয়বস্তু প্রকাশের তারিখ: ১৩ ই তীর ১৩৯৫ ফার্সি সন, দেখার তারিখ: ২০শে অবান ১৩৯৭ ফার্সি সন।
- কুলাইনি, মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকুব, আল-কাফি, তাসহিহ: আলী আকবার গাফ্ফারি ও মুহাম্মাদ আখুন্দি, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়্যাহ, তেহরান, ১৪০৭ হি.।
- আল্লামা মাজলীসি, মুহাম্মাদ বাকের, বিহারুল আনওয়ার, বৈরুত, মুআসসেসেয়ে আল-তাব’ ওয়ান নাশর, ১৪১০ হি.।
- মুহাক্কেক হিল্লি, জা’ফার ইবনে হুসাইন, আল-মু’তাবারু ফি শারহিল মুখতাছার, তাহকিক: মুহাম্মাদ আলী হায়দারি ও সাইয়্যেদ মাহদি শামসুদ্দিন ও সাইয়্যেদ আবু মুহাম্মাদ মুর্তাযাভি ও সাইয়্যেদ আলী মুসাভি, কোম, মুআসসেসেয়ে সাইয়্যেদুশ শোহাদা, ১৪০৭ হি.।
- মোল্লা সাদরা, মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহিম, তাফসীরুল কুরআনিল কারিম, তাসহিহ: মুহাম্মাদ খাজভি, কোম, বিদার, ১৩৬৬ ফার্সি সন।
- মুসেলি, আবুল ফাযল আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ, আল-ইখতিয়ার লি তা’লীলিল মুখতার, তা’লীকাতে মাহমুদ আবু দাকিকা, ইস্তাম্বুল, প্রকাশনা অজ্ঞাত, ১৯৮৪ হি.।
- নাজাফি, মুহাম্মাদ হাসান, জাওয়াহেরুল কালাম ফি শারহি শারায়ে’ আল-ইসলাম, বৈরুত, দারু ইহিয়ায়িত তুরাসিল আরাবি, ১৪০৪ হি.।
- নারাকি, আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ মাহদি, মুস্তানাদুশ শিয়া ফি আহকামিশ শারীয়্যাহ, কোম, মুআসসেসেয়ে আলুল বাইত, ১৪১৫ হি.।
- নারাকি, আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ মাহদি, মুস্তানাদুশ শিয়া ফি আহকামিশ শারীয়্যাহ, কোম, কিতাব খানেয়ে আয়াতুল্লাহ মারআশি নাজাফি, ১৪১৬ হি.।
- নূরী, মির্যা হুসাইন, মুস্তাদরাকুল ওয়াসায়েল, কোম, মুআসসাসাতু আলিল বাইত লি ইহিয়ায়িত তুরাস, ১৪০৮ হি.।
- ইয়াযদি তাবাতাবায়ী, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ কাযিম, আল-উরওয়াতুল উসকা, বৈরুত, মুআসসেসেয়ে আ’লামি, ১৪০৯ হি.।