সাধারণ প্রতিনিধিত্ব

wikishia থেকে

নিয়াবাতে আম্মাহ বা সাধারণ প্রতিনিধিত্ব (আরবি: النيابة العامة); পরিভাষাটি বিশেষ প্রতিনিধিত্বের বিপরীতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণ প্রতিনিধিত্ব পরিভাষাটির দ্বারা গায়বাতে কুবরার সময় (ইমাম মাহদীর দীর্ঘকালীন অন্তর্ধানের সময়) সাধারণভাবে শিয়া ফকিহদের ইমাম মাহদীর (আ.) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিষয়কে বোঝানো হয়ে থাকে। গায়বাতে কুবরার সময় যেহেতু ইমাম মাহদী (আ.) লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়েছেন এবং শিয়ারা সরাসরি (প্রত্যক্ষ) বা কোন মাধ্যমের দ্বারা (পরোক্ষভাবে) তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম নয়, সেহেতু ইমামদের রেওয়ায়েতসমূহে এ সময়ে মাসূম ইমামের দায়িত্ব ফকিহদের হাতে অর্পিত বলা হয়েছে। তাঁরা এ সময়ে গায়েবে থাকা ইমামের স্থলাভিষিক্ত হিসাবে জনসাধারণের ধর্মীয় নেতৃত্ব দান করবেন।

পরিভাষা পরিচিতি

আরোও দেখুন: নিয়াবাতে খাছছাহ বা বিশেষ প্রতিনিধিত্ব

নিয়াবাতে আম্মাহ পরিভাষাটি গায়বাতে কুবরার সময় মাসূম ইমামের স্থলাভিষিক্ত হিসাবে ফকিহদের দায়িত্ব লাভের বিষয়টি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এ যুগটি গায়বাতে সোগরার (স্বল্পকালীন অন্তর্ধান) পর থেকে শুরু হয়েছে। স্বল্পকালীন অন্তর্ধানের সময় ইমাম মাহদী (আ.) তাঁর বিশেষ চার প্রতিনিধির (নাওয়াবে আরবায়া) মাধ্যমে শিয়াদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। ৩২৯ হিজরিতে ইমাম মাহদীর (আ.) চতুর্থ বিশেষ প্রতিনিধি আলী ইবনে মুহাম্মাদ সামারীর মৃত্যুর পর তিনি (আ.) আর কাউকে নিজের বিশেষ প্রতিনিধি মনোনীত করেননি। এর ফলে তাঁর সাথে শিয়াদের সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সেইসাথে ভেকালাত-এর (ইমাম মাহদীর পক্ষ থেকে নিযুক্ত প্রতিনিধিত্বের এবং কোন বিশেষ দায়িত্ব ও ভূমিকা পালনকারীর) যুগেরও পরিসমাপ্তি ঘটে।

নিয়াবাতে আ’ম্মাহ- যুগ্মশব্দে ‘আ’ম শব্দটি ‘খাছ’ শব্দের বিপরীতে ব্যবহৃত হয়েছে। আ’ম শব্দটি যার অর্থ সাধারণ এ বিষয়টি নির্দেশ করছে যে, ইমাম মাহদীর (আ.) চার জন বিশেষ প্রতিনিধির পর আর কোন ব্যক্তি তাঁর পক্ষ থেকে বিশেষ প্রতিনিধিত্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। বরং যে কেউ প্রতিনিধিত্বের বিশেষ শর্তের -যেমন ফকিহ (দ্বীনের সকল শাখায় পাণ্ডিত্যের অধিকারী বিশেষজ্ঞ পর্যাযের আলেম) হওয়া, ন্যায়পরায়ন হওয়া, আত্মসংযমী, কুপ্রবৃত্তিকে দমনকারী...- অধিকারী হবে সে-ই মাসূম ইমামের স্থলাভিষিক্ত হবে এবং সে ইমামের সাধারণ প্রতিনিধি হিসাবে তাঁর ওপর আরোপিত সার্বিক দায়িত্বসমূহ পালন করবে। ইমামের পক্ষ থেকে সে বিশেষ এখতিয়ারের অধিকারী।

সাধারণ প্রতিনিধি কারা?

শিয়া হাদীসসমূহে ইমামদের (আ.) সাধারণ প্রতিনিধির দায়িত্ব পালনকারিদের চেনার জন্য কিছু বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করা হয়েছে যেমন: হাদীসের বর্ণনাকারী, যারা সকল হালালহারাম সম্পর্কে জ্ঞান রাখে, (দ্বীনের দিকে আহ্বানকারী, পরিচালনাকারী ও দ্বীনরক্ষাকারী) ফকিহ ও আলেমগণ। এ হাদীসগুলোর ভিত্তিতে বলা যায় গায়বাতে কুবরার সময় এধরনের বৈশিষ্ট্যের ফকিহ ও আলেমরা ইমামদের স্থলাভিষিক্ত। মুহাম্মাদ সানাদ এ সম্পর্কিত হাদীসগুলোকে ‘দাওয়াস সাফারাহ ফিল গাইবাতিল কুবরা’ নামক গ্রন্থে সঙ্কলন করেছেন।

বেলায়েত ফকিহ ও সাধারণ প্রতিনিধিত্ব

আরোও দেখুন: বেলায়েতে ফকিহ

শিয়াদের বিশ্বাস ইমামরা বিভিন্নরূপ দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকারী। সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ মুসাভী খালখলী ইমামদের দশটি দায়িত্বের নাম উল্লেখ করেছেন। সাধারণ প্রতিনিধিত্বের নীতিমালা অনুসারে ইমামদের দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের বড় একটি অংশ ফকিহদের হাতে স্থানান্তরিত (অর্পিত) হয়েছে। শিয়াদের বিশ্বাস অনুযায়ী ইমামদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল তাঁরা রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের (বেলায়েতের) অধিকারী। অনেক শিয়া আলেমের বিশ্বাস ফকিহদের সাধারণ প্রতিনিধিত্বের মধ্যে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত। এ মতটি বেলায়েতে ফকিহ (ফকিহের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব) নামে পরিচিত। (কারণ তাঁরা এ ক্ষেত্রে কর্তৃত্বের অধিকারী না হলে দ্বীনের বিধিবিধানের অধিকাংশই অকার্যকর হয়ে পড়বে এবং সমাজ অন্যায়, অসৎ ও অশ্লীল কর্মে ভরে যাবে। দ্বীনকে পূর্ণরূপে রক্ষার দায়িত্ব পালন কেবল তখনই সম্ভব যখন একজন ফকিহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী হবেন ও দ্বীনের বিধিবিধানকে পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবেন।)

সাধারণ প্রতিনিধিত্ব সম্পর্কিত হাদীসসমূহ

আরোও দেখুন: উমর ইবনে হানজালাহ সূত্রে

ফকিহদের সাধারণ প্রতিনিধিত্বের ভিত্তি হল ইমামদের থেকে বর্ণিত বিভিন্ন হাদীস। উমর ইবনে হানজালাহ সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি এর অন্যতম। এ হাদীসটিতে ইমাম সাদিক (আ.) সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন শিয়ারা যেন তাদের মতপার্থক্য ও পারস্পরিক দ্বন্দের বিষয়ে হাদীসের বর্ণনাকারী (বিশেষজ্ঞ) এবং হালাল ও হারামের বিষয়ে অবহিত ব্যক্তিদের (ফকিহর) শরণাপন্ন হয়। আর যে ফকিহদের দেয়া মত ও সিদ্ধান্তকে অস্বীকার করে সে ইমামদের সিদ্ধান্তকেই অস্বীকার করল। অন্য এক হাদীস অনুযায়ী ইমাম মাহদী (আ.) নির্দেশ দিয়েছেন যে, মুমিনরা যেন অবশ্যই যুগের গুরুত্বপূর্ণ যে কোন ঘটনায় আহলে বাইতের (আ.) হাদীসের বর্ণনাকারীদের (এ বিষয়ে জ্ঞানীদের) শরণাপন্ন হয়। কারণ তাতে তিনি (আ.) স্পষ্টভাবে বলেছেন: আহলে বাইতের (আ.) হাদীসের বর্ণনাকারীরা তোমাদের (মুমিনদের) ওপর আমার হুজ্জাত ও প্রামাণ্য দলীল। আর আমি তাদের (হাদীসের বর্ণনাকারীদের) ওপর আল্লাহর হুজ্জাত ও দলীল।

তথ্যসূত্র


গ্রন্থপঞ্জি