মু'তামিদ আব্বাসী
মু'তামিদ আব্বাসী (২৫৬-২৭৯ হিজরি/৮৭০-৮৯২ খ্রিস্টাব্দ) অথবা আল-মু'তামিদ আলাল্লাহ হচ্ছেন পঞ্চদশ আব্বাসীয় খলিফা, যিনি ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-কে হত্যার নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি খলিফা আব্বাসী মুতাওয়াক্কিলের বংশধর এবং ২৫৬ হিজরিতে খলিফা মুহতাদি আব্বাসীর পর খিলাফতের পদে আরোহণ করেন। মু’তামিদের শাসনামল প্রায় চার বছর ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর ইমামত এবং ১৯ বছর ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর ইমামতের সমসাময়িক ছিল।
মু'তামিদের শাসনামলে আলাভীদের বেশ কয়েকজনকে কারারুদ্ধ করা হয় এবং কিছু সংখ্যককে হত্যা করা হয়। কিছু ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী, ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-কেও এসময় কারাবন্দী করা হয়; কারামুক্তির পর তাঁকে বিষপ্রয়োগ করা হয় এবং তিনি শাহাদাতবরণ করেন। ইমাম আসকারী (আ.)-এর শাহাদাতের পর খলিফা মু'তামিদ তাঁর পুত্র ইমাম মাহদী (আ.)-কে আটকের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। সূত্রগুলোতে তার শাসনামলে সংঘটিত একাধিক শিয়া বিদ্রোহ ও অভ্যুত্থানের উল্লেখ রয়েছে, যার মধ্যে মিসরে মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়ার বংশধর ইবরাহিম ইবনে মুহাম্মাদের বিদ্রোহ এবং কুফায় আলী ইবনে যায়েদ আলভীর বিদ্রোহ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, সাহিব জানজের নেতৃত্বে দাস বিদ্রোহ এবং কারামাতা গোষ্ঠীর আবির্ভাবও মু'তামিদের খিলাফতকালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
মু'তামিদ তার ভাই মুওয়াফফাক আব্বাসীর সহযোগিতায় খিলাফতের কেন্দ্রস্থল সামেরা থেকে বাগদাদে স্থানান্তরিত করেন। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আরবদের সমর্থন নিয়ে এবং তুর্কিদেরকে ব্যবহার করে, তিনি সম্ভাব্য হুমকি থেকে শাসনব্যবস্থাকে নিরাপদ দূরত্বে রাখেন। মু'তামিদ ছিলেন অত্যন্ত ভোগলিপ্সু। কথিত আছে, তিনি নিজের অদক্ষতার কারণে এবং অধিকতর স্বাধীনভাবে ভোগবিলাসের জন্য স্বীয় পুত্র জাফর ও ভাই মুওয়াফফাকের মধ্যে শাসনক্ষেত্র ভাগ করে দেন। কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত ক্ষমতা তার ভাইয়ের হস্তগত হয় এবং কেবলমাত্র খলিফা পদবীটুকু তার জন্য অবশিষ্ট থাকে। মু'তামিদের পর তার ভাই মুওয়াফফাকের পুত্র মু'তাজিদ ক্ষমতায় আরোহণ করেন।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
আহমাদ ইবনে জাফর ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে হারুনুর রশীদ, যিনি তুর্কিদের [১] দ্বারা "আল-মু'তামিদ 'আলাল্লাহ" উপাধিতে ভূষিত হন [২] এবং এই নামেই পরিচিত হন, [৩] ছিলেন পঞ্চদশ আব্বাসীয় খলিফা [৪] এবং মুতাওয়াক্কিল আব্বাসীর বংশধর।[সূত্র প্রয়োজন] তার কুনিয়া বা উপনাম ছিল আবুল আব্বাস, [৫] এবং তার মাতা ছিলেন ফিতয়ান নামক রোমীয় ক্রীতদাসী, [৬] আর এই কারণে তিনি "ইবনে ফিতয়ান" নামেও পরিচিতি লাভ করেন। [৭] তিনি তার চাচাতো ভাই মুহতাদী বিল্লাহর পর খিলাফতের পদ লাভ করেন [৮] এবং ২৩ বছর শাসন করেন। [৯]
মু'তামিদ ছিলেন ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর সমসাময়িক আল-মু'তায এবং আল-মুহতাদীর পর তৃতীয় খলিফা। [১০] শিয়া ইমামদের একাদশ ইমামের ইমামতির চার বছর তার শাসনামলে অতিবাহিত হয়। [১১] মু'তামিদের খিলাফতের ১৯ বছর, ইমাম মাহদী (আ.)-এর ইমামত [১২] এবং তাঁর (আ.ফা.) গায়বাত (অন্তর্ধান)-এর সমসাময়িক ছিল।[১৩]