মহানবি (স.)-এর নিকটাত্মীয়

wikishia থেকে

যাউইল কুরবা (‌আরবি: ذَوِي الْقُربیٰ); বলতে মহানবি (স.)-এর নিকটাত্মীয়দেরকে বোঝানো হয়েছে এবং পবিত্র কুরআনে তাদের প্রতি ভালবাসাকে মহানবি (স.)-এর রেসালতের পারিশ্রমিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শিয়া ও সুন্নি সূত্রে বর্ণিত বিভিন্ন রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে আলী ইবনে আবি তালিব (আ.), ফাতেমা যাহরা (সা. আ.), ইমাম হাসান (আ.) এবং ইমাম হুসাইন (আ.) হলেন মহানবি (স.)-এর নিকটাত্মীয় (ذوی القربی)।

শাব্দিক অর্থ

القربی অর্থ হল নিকটাত্মীয়। শব্দটি পবিত্র কুরআনে (ذی),[১] (ذوی),[২] (اولی)[৩] শব্দের সাথে সংযুক্ত হয়ে এসেছে এবং (قُلْ لا أَسْئَلُکمْ عَلَیهِ أَجْراً إِلاَّ الْمَوَدَّةَ فِی الْقُرْبی)[৪] আয়াতে স্বতন্ত্রভাবে কোন কালেমার সাথে সংযুক্ত হওয়া ছাড়াই এসেছে। বিশিষ্ট সুন্নি মুফাসসির ও আভিধানিক যেমাখশারীর মতে এ আয়াতে (القربی) অর্থ হল (اهل القربی)।[৫]

পবিত্র কুরআনে (القربی) শব্দটি আত্মীয় ও কাছের লোকদের ক্ষেত্র ব্যবহৃত হয়েছে। (قُرب) শব্দের আভিধানিক অর্থ হল সম্পর্ক, সময় ও স্থানের ক্ষেত্রে নিকটবর্তী হওয়া। বিভিন্ন হাদীসের ভিত্তিতে আয়াতে মাওয়াদ্দাতে আল-কুরবা আহলে বাইত (আ.) সম্পর্কে এবং খুমসের আয়াত[৬] ও ফাই-এর আয়াতে[৭] আহলে বাইতের (মহানবি (স.)-এর আত্মীয়) মাঝে যারা দরিদ্র তাদের সম্পর্কে বলে তাফসীর করা হয়েছে।

নিকটাত্মীয় কারা?

আরোও পড়ুন: মাওয়াদ্দাতের আয়াত

শিয়া মনীষীদের মতানুযায়ী (قُلْ لا أَسْئَلُکمْ عَلَیهِ أَجْراً إِلاَّ الْمَوَدَّةَ فِی الْقُرْبی)[৮] আয়াতে (فِی الْقُرْبی) বলতে আহলে বাইত (আ.)-এর নিষ্পাপ ইমামগণ (আ.) ও হজরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.)-কে বোঝানো হয়েছে।[৯] একইভাবে আহলে সুন্নতের বিভিন্ন তাফসীর ও হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত রেওয়ায়েতে (القربی) হিসেবে আলী ইবনে আবি তালিব (আ.), ফাতেমা যাহরা (সা. আ.), ইমাম হাসান (আ.) এবং ইমাম হুসাইন (আ.)-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। [১০]

কিছু কিছু সুন্নি মুফাসসিরের দৃষ্টিতে আয়াতটি কুরাইশদের প্রসঙ্গে। মহান আল্লাহ্ তাঁর রাসুল (স.)-কে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেন কুরাইশ গোত্রের লোকদেরকে বলেন যে, তার (স.) উপর যদি তারা ঈমান না আনে অন্তত আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে যেন তার সাথে শত্রুতা করা থেকে বিরত থাকে।[১১]

একইভাবে বলা হয়েছে আয়াতটি ঐ সকল আনসারদের উদ্দেশ্যে আগত যারা সালমা বিনতে যাইদ নাজ্জার, হজরত আব্দুল মুত্তালিবের মা এবং মহানবি (স.)-এর মা হজরত আমিনাহ (সা. আ.)-এর মামাদের দিক থেকে মহানবি (স.)-এর আত্মীয় ছিল। তারা মহানবি (স.)-এর জন্য কিছু অর্থ-সম্পদ নিয়ে এলে এ আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং মহানবি (স.) তাদের ঐ অর্থ-সম্পদ প্রত্যাখ্যান করেন।[১২]

এর সাথে সম্পৃক্ত কতিপয় আহকাম

যাউইল কুরবা তথা নিকটাত্মীয়ের সাথে সম্পৃক্ত কিছু শরয়ী আহকাম:

  • খুমসে মহানবি (স.)-এর নিকটাত্মীয়দের অংশ: শিয়া ফকীহগণের দৃষ্টিতে খুমসের আয়াতে খুমসের অর্থ ব্যয় করার যে ৬টি খাতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তম্মধ্যে যীল কুরবার অংশ বলতে আহলে বাইত (আ.)-এর নিষ্পাপ ইমামগণ (আ.)-কে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ ও রাসুল (স.)-এর অংশের পাশাপাশি ইমামের অংশও বলা হয়েছে। আবার কখনো ইমামের অংশকে যাউইল কুরবার অংশ হিসেবেও জ্ঞান করা হয়।[১৩]
  • ফাই-এ যাউইল কুরবার অংশ: ফাই-এর (যুদ্ধ ব্যতীত যে গনিমত মুসলমানদের হস্তগত হয়) সম্পদ ব্যয়ের যে ৬টি খাতের কথা উল্লেখ আছে যাউইল কুরবার সেগুলোর মধ্যে অন্যতম।[১৪]

তথ্যসূত্র

  1. সূরা বাকারা:৮৩।
  2. সূরা বাকারা:১৭৭।
  3. সূরা তাওবা:১১৩।
  4. সূরা শূরা:২৩।
  5. যামাখশারী, আল-কাশ্শাফ, ১৪০৭ হিঃ, খ:৪, পৃ:২১৯।
  6. হুররে আমেলি, ওয়াসায়েলুশ শীয়া, ১৪০৯ হিঃ, খ:৯, পৃ:৫০৯-৫২০।
  7. মাকরেম শিরাজী, তাফসিরে নমুনা, খ:২৩, পৃ:৫০৪-৫০৫।
  8. সূরা শূরা:২৩।
  9. খুয়ী, মুসতানাদুল উরয়াহ, ১৩৬৪ (সৌরবর্ষ), খ:৩, পৃ:৩০৮-৩০৮।
  10. বুখারী, ১৪২২ হিঃ, খ:৬, পৃ:১২৯, যামাখশারী, আল-কাশ্শাফ, ১৪০৭ হিঃ, খ:৩, পৃ:৪০২ ও ইবনে হাম্বল, ফাযায়িলুস সাহাবা, ১৪৩০ হিঃ, খ:২, পৃ:৮৩৩।
  11. ইবনে কাসির, তাফসিরে ইবনে কাসির, ১৪১২ হিঃ, খ:৪, পৃ:১২১ ও আলুসী, রুহুল মায়ানী, ১৪১৫ হিঃ, খ:১৩, পৃ:৩০-৩১।
  12. আলুসী, রুহুল মায়ানী, ১৪১৫ হিঃ, খ:১৩, পৃ:৩১।
  13. নাজাফী, জাওয়াহেরুল কালাম, ১৪০৪ হিঃ, খ:১৬, পৃ:৮৪।
  14. মাকরেম শিরাজী, তাফসিরে নমুনা, খ:২৩, পৃ:৫০২।

গ্রন্থপঞ্জি

  • আলুসী, সাইয়্যেদ মাহমুদ, রুহুল মায়ানী, তাহকিক আলী অব্দুল্লাহ আতিয়্যাহ, বৈরুত, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্য়াহ, ১৪১৫ হিঃ।
  • ইবনে হাম্বল, আহমাদ, ফাযায়িলুস সাহাবা, কায়রো, দারু ইবনু জাওযী, ১৪৩০ হিঃ।
  • ইবনে কাসির, ইসমাইল বিন উমর, তাফসিরে ইবনে কাসির, তাহকিক ইউসুফ আব্দুর রহমান মারয়াশী, বৈরুত, দারুল মারিফাতি লিত তাবায়াতি ওয়ান নাশরি ওয়াত তাওযিঅ, ১৪১২ হিঃ।
  • বুখারী, মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল, সহিহ বুখারী, তাহকিক মুহাম্মাদ যুহাইর বিন নাসের, বৈরুত, দারু তাওকিন নাজাহ, ১৪২২ হিঃ।
  • হুররে আমেলি, মুহাম্মাদ বিন হাসান, ওয়াসায়েলুশ শীয়া, কোম, মুয়াসসেসে আলুল বাইত, ১৪০৯ হিঃ।
  • খুয়ী, সাইয়্যেদ আবুল কাশেম, মুসতানাদুল উরয়াহ, কোম, লুতফী, ১৩৬৪ (সৌরবর্ষ)।
  • নাজাফী, মুহাম্মাদ হাসান, জাওয়াহেরুল কালাম, বৈরুত, দারু ইহয়ায়িত তুরাসিল আরাবি, ১৩৬২ হিঃ।
  • যামাখশারী, মাহমুদ, আল-কাশ্শাফ, বৈরুত, দারুল কিতাবিল আরাবী, ১৪০৭ হিঃ।
  • কুরতুবী, মুহাম্মাদ বিন আহমাদ, আল-জামিয়ু লি আহকামিল কুরআন, তেহরান, নাসের খুসরু, ১৩৬৪ (সৌরবর্ষ)।
  • কুম্মী, আলী বিন মুহাম্মাদ, জামিউল খিলাফ ওয়াল ভিফাক্ব, কোম, যামিনে সাযানে যুহুর ইমামে যামান, ১৩৭৯ (সৌরবর্ষ)।