বিষয়বস্তুতে চলুন

সাদেকিনের আয়াত

wikishia থেকে

সাদেকিনের আয়াত (আরবি: آية الصادقين); মুমিনদেরকে সত্যবাদীদের সাথে থাকার এবং তাদের অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়। মুফাসসিরগণ সত্যবাদীদের উদাহরণ এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে একাধিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন এবং এই বিষয়ে তারা কুরআনের কতিপয় আয়াতকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, শেখ তুসী, সূরা আল-আহজাবের ২৩ নং আয়াতের উপর নির্ভর করে, সত্যবাদী বলতে তাদেরকে বুঝিয়েছেন যারা মহার রবের সাথে কৃত চুক্তিতে সততার সাথে কাজ করেছেন।

শিয়া ও সুন্নি হাদিস গ্রন্থসমুহে কিছু হাদিস বর্ণিত রয়েছে, যার ভিত্তিতে শুধুমাত্র আলী ইবনে আবি তালিব বা তাঁর অনুসারী বা তাঁর পরিবার, অথবা মহানবী এবং তাঁর আহলে বাইত (আ.)-কে সত্যবাদীদের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক বর্ণনায় সত্যবাদীদেরকে আহলে বাইত (আ.) হিসেবেও তাফসির করা হয়েছে।

আল্লামা হিল্লি এই আয়াতটিকে ইমাম আলীর ইমামতের অন্যতম প্রমাণ বলে মনে করেছেন এবং কেবল মাসুমদেরকে (নিষ্পাপ ব্যক্তিগণ) আয়াতের উদাহরণ হিসেবেও গণ্য করেছেন। নাসের মাকারেম শিরাজির মতে, আয়াতের অর্থ হলো মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর আহলে বাইতের সাথে থাকা। ফখরুদ্দিন রাজীও এই আয়াতটিকে সাদিকনদের নিষ্পাপতার প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করেছেন; কিন্তু তিনি বলেছেন যে সাদিকনদের উদাহরণ হল "সমগ্র জাতি"!

আয়াতের টেক্সট ও অনুবাদ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ


অর্থ: হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।



সূরা তাওবা: ১১৯


সাদেকিনের অর্থ ও উদাহরণ

"সাদিকীন" শব্দটি "সাদিক" এর বহুবচন।[1] সাইয়্যেদ মুহাম্মদ হুসাইন তাবাতাবাই তাঁর আল-মিজান তাফসির গ্রন্থে বলেছেন, যার বিশ্বাস বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, অথবা যার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ প্রকৃতি একে অপরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সে সাদিক বা সত্যবাদী।[2] সুন্নি মুফাসসিরদের অন্যতম যামাখশারীও বিশ্বাস করেন যে, সাদিকীন হলেন তারা যারা বিশ্বাস, কথাবার্তা এবং আচরণের দিক থেকে সত্যবাদী।[3]

এতদসত্ত্বেও, মুফাসসিরগণ " সাদেকিনের" সংজ্ঞা এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করেছেন। মাজমাউল বায়ানে তাবারসী বলেছেন যে, সত্যবাদী তারাই যাদের মধ্যে সূরা আল-বাকারার ১৭৭ নম্বর আয়াতে [নোট ১] উল্লেখিত বৈশিষ্ট্য রয়েছে।[4]

শেইখ তুসী সাদেকিনের উদাহরণ হিসেবে তাদেরকে গণ্য করেছেন সূরা আল-আহযাবের ২৩ নং আয়াতে যাদের গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে।[নোট ২]; অর্থাৎ, তারা মহান আল্লাহর সাথে কৃত চুক্তিতে সততার সাথে কাজ করেছে। [5] সুন্নি মুফাসসিরদের মধ্যে, কুরতুবী বিশ্বাস করেন যে সাদেকিন হলেন মুহাজিরগণ যাদেরকে সূরা আল-হাশরের অষ্টম আয়াতে সাদিক বলা হয়েছে [নোট 3]। [6]

শিয়া ও সুন্নি গ্রন্থে বর্ণিত হাদিসগুলির মধ্যে, এমন কিছু বর্ণনা রয়েছে যেখানে শুধুমাত্র আলী (আ.) বা ইমাম আলী এবং তার অনুসারীগণ বা আলী এবং তার পরিবার[7], অথবা মুহাম্মদ (সা.) এবং তার আহলে বাইত (আ.)-কে এই আয়াতে সত্যবাদীদের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[8] একই সাথে, অনেক শিয়া হাদিসে আহলে বাইত (আ.)-কে সাদেকিনের তাফসির করা হয়েছে। [9]

সাদেকিনের নিষ্পাপতা ও নেতৃত্বের দলিল

বেশ কয়েকজন শিয়া আলেমের মতে, সাদেকিনের আয়াতটি ইমাম আলী (আ.)-এর নেতৃত্ব ও নিষ্পাপতার দলিল বহন করে। আল্লামা হিল্লি, মুহাক্কিক তুসির বক্তব্যের ব্যাখ্যায় -যিনি ... আয়াতটিকে আলী (আ.)-এর ইমামতের দলিল হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন-বলেছেন যে, সাদেকিন দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে তারা যাদের সত্যবাদিতা স্পষ্ট ও অবগত হওয়া সম্ভব এবং এটি কেবল মাসুম বা নিষ্পাপ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই সম্ভব। কারণ যে ব্যক্তি নিষ্পাপ নয় তার সত্যবাদিতা সম্পর্কে অবগত হওয়া অসম্ভব এবং মুসলিম ঐক্যমত্য অনুসারে, নবী (সাঃ) এর সাহাবীদের মধ্যে আলী (আ.) ব্যতীত আর কেউ মাসুম বা নিষ্পাপ ছিলেন না। [10]

অনুরূপভাবে, শিয়া মার্জা তাকলিদ এবং মুফাসসির নাসের মাকারেম শিরাজী বলেছেন যে, আয়াতের অর্থ "মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবারের সাথে থাক"। যদি কেউ মাসুম বা নিষ্পাপ না হয়, তাহলে কীভাবে তাকে নিঃশর্তভাবে অনুসরণ করার, তার পদাঙ্ক অনুসরণ করার এবং তার সাথে থাকার আদেশ দেওয়া সম্ভব? [11]

সুন্নি পণ্ডিতদের মধ্যে ফখরুদ্দিন রাযী এই আয়াতটিকে সত্যবাদীদের নিষ্পাপতার প্রমাণ বলে মনে করেন এবং বলেন যে এই আয়াতাংশ থেকে বুঝা যায় যে, মুমিনগণ নিষ্পাপ নন এবং ভুল থেকে নিরাপদ থাকার জন্য, তাদের উচিত যারা ভুল থেকে দূরে তাদের অনুসরণ করা এবং সাদেকিন।[12] অবশ্য, তিনি সাদেকিন বলতে "সমগ্র উম্মাত" -কে মনে করেন।[13]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

উলিল আমরের আয়াতবেলায়েতের আয়াততাতহিরের আয়াতআয়াতে উদ্দআহলে যিকিরের আয়াত

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

  • জুরযানী, সাইয়্যেদ শরিফ আলী বিন মুহাম্মাদ, আত্-তারিফাত, বৈরুত, দারুল ফিকর, ১৪১৯ হি.,
  • হাকেম হাসাকানী, আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ, শাওয়াহিদু আত্-তানযিল, তেহরান, মুয়াসসাসাতু আত্-তাবাঅ ও আন্-নাশর, ১৪১১ হি.,
  • আল্লামা হিল্লি, হাসান বিন ইউসুফ, কাশফুল মুরাদ, কোম, মুয়াসসাসাতু আন্-নাশরিল ইসলামি, ১৪১৯ হি.,
  • آیه کونوا مع الصادقین بر وجود معصوم، در هر عصری», আইনে রাহমাত সাইট, ২২/৫/১৪০৩ (ফার্সি সন),
  • যামাখশারী, মাহমুদ বিন উমার, আল-কাশ্শাফ;তাছহিহ-মুস্তাফা হোসাইন আহমাদ, বৈরুত, দারুল কিতাবুল আরাবি, ১৪০৭ হি.,
  • সুয়ুতী, জালালুদ্দিন, আদ্-দুর্রুল মানসুর, বৈরুত, দারু ইহয়াইত তুরাসিল আরাবি, ১৪২১ হি.,
  • তাবাতাবাই, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হোসাইন, তাফসিরে আল-মিযান, বৈরুত, মুয়াসসাসাতুল আলামি, ১৩৯৩ হি.,
  • তাবারসি, ফাযল বিন হাসান, মাজমাউল বায়ান, বৈরুত, দারু ইহয়াইত তুরাসিল আরাবি, ১৩৭৯ (ফার্সি সন),
  • তূসী, মুহাম্মাদ বিন হাসান, আত্-তিবয়ান, কোম, মাকতাবাতু আল-আলামিল ইসলামি, ১৪০১ হি.,
  • ফখরুদ্দিন রাযী, মুহাম্মাদ বিন উমর, মাফাতিহুল গাইব, বৈরুত, দারু ইহয়াইত তুরাসিল আরাবি, তৃতীয় সংস্করণ, ১৪০২ হি.,
  • কুর্তুবী, মুহাম্মাদ বিন আহমাদ, আল-জামিউ লি আহকামিল কুরআনিল আযিম; আব্দুর রাজ্জাক মাহদি, বৈরুত, দারুল কিতাবুল আরাবি, ১৪২৩ হি.,
  • শেইখ কুলানী, মুহাম্মাদ বিন ইয়াকুব, উসুলে কাফি, বৈরুত, দারুত তায়ারুফ, ১৪০১ হি.।