ব্যবহারকারী:R.Mirza
সূরা কাউসার (আরবি: سورة الكوثر) পবিত্র কুরআনের ১০৭তম সূরার নাম। ৩০তম পারায় স্থান পাওয়া মাক্কী এ সূরা পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে ছোট পরিসরের সূরা। মহানবি (স.)-এর জন্য কাউসার নামক এক নেয়ামতের কথা এ সূরায় আসার কারণে এর নামকরণ কাউসার। এ মহান নেয়ামতের বিপরীতে মহানবি (স.)-কে নির্দেশ করা হয়েছে যেন তিনি নামাজ আদায় করেন এবং কুরবানী দেন।
কাউসার কি এ বিষয়ক আলোচনায় কাউসার বলতে হাউজে কাউসার, বেহেশতের একটি নদী, অত্যাধিক কল্যাণ, ইসলাম, নবুয়্যত, কুরআন, সাহাবাগণের সংখ্যাধিক্য এবং বংশধরের সংখ্যাধিক্য ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেকযোগ্য সংখ্যক শিয়া ওলামার দৃষ্টিতে কাউসার বলতে যা কিছু বা যাদেরকে বোঝানো হয়েছে হজরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) ও তাঁর সন্তানরা অন্যতম। কেননা সূরাটি ঐ লোকদের জবাবে অবতীর্ণ হয়েছিল যারা মহানবি (স.)-কে নির্বংশ ও লেজকাটা বলে উপহাস করতো।
সূরা কাউসার তেলাওয়াতের ফজিলতে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি প্রত্যহের নামাজে এ সূরা তেলাওয়াত করবে কেয়ামতের দিন সে হাউজে কাউসার থেকে পান করবে এবং তুবা নামক বৃক্ষের নীচে আল্লাহর রাসুল (স.)-এর সাথী হবে।
পরিচিত
নামকরণ
কাউসার নামকরণের কারণ হল, সূরার শুরুর আয়াতে কাউসার নামের এক নিয়ামতের কথা উল্লেখিত হয়েছে যা মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয়নবী (স.)-কে প্রদান করেছেন।[১]
বিন্যাস ও অবতীর্ণ হওয়ার স্থান
সূরা কাউসার মক্কায় অবতীর্ণ সূরাগুলোর অন্যতম (কারো কারো মতে সূরাটি মাদানী। কিন্তু প্রসিদ্ধ মত হল সূরাটি মাক্কী; মাকারেম শিরাজি, তাফসির-এ নেমুনেহ, প্রকাশকাল ১৩৭৪ সৌর বর্ষ, খণ্ড ২৭, পৃ. ৩৬৮।)। যা ১৫তম সূরা হিসেবে মহানবি (স.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। বর্তমান মুসাহাফ (কুরআন)-এর বিন্যাস অনুযায়ী সূরাটি ৩০তম পারায় এবং ১০৮নং সূরা হিসেবে স্থান পেয়েছে।[২]
আয়াত ও শব্দের সংখ্যা
সূরা কাউসার ৩ আয়াত বিশিষ্ট। এতে রয়েছে ১০টি শব্দ এবং ৪৩টি অক্ষর। এ সূরা পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে ছোট সূরা।[৩]
বিষয়বস্তু
সূরা দ্বোহা ও সূরা ইনশিরাহ’র ন্যায় সূরা কাউসারের সবকটি আয়াতে মহানবি (স.)-কে সম্বোধিত করা হয়েছে[৪] এবং এতে কাউসার নামক এক নিয়ামতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যা মহানবি (স.)-কে মহান আল্লাহ্ প্রদান করেছেন।[৫] মুফাসসিরদের একটি দল কাউসার শব্দটিকে অত্যাধিক কল্যাণ অর্থে তাফসীর করেছেন।[৬] এই কল্যাণের বিপরীতে মহানবি (স.)-কে নামাজ আদায় করতে এবং কুরবানী দিতে বলা হয়েছে।[৭]
কাউসার কি বা কারা?
কাউসার কি এ বিষয়ে মুফাসসির মাঝে মতভেদ রয়েছে। কাউসারের তাফসীর উল্লেখ করতে গিয়ে মুফাসসিরগণ হাউজে কাউসার, বেহেশতের একটি নদী, অত্যাধিক কল্যাণ, ইসলাম, নবুয়্যত, কুরআন, সাহাবাগণের সংখ্যাধিক্য এবং বংশধরের সংখ্যাধিক্য ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করেছেন।[৮]
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিয়া আলেমের বরাত দিয়ে তাফসীর-এ নেমুনেহ’তে বলা হয়েছে, কাউসার হলেন হজরত ফাতেমা (সা. আ.)। কেননা আলোচ্য সূরাতে ঐ সকল ব্যক্তির কথা এসেছে যারা মহানবি (স.)-কে নির্বংশ ও লেজকাটা বলে উপহাস করতো, অথচ মহানবি (স.)-এর বংশধারা তাঁর কন্যা ফাতেমা (সা. আ.)-এর মাধ্যমে অব্যাহত রয়েছে, আর ঐ বংশধারার উপরই ইমামতের দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে।[৯] বিশিষ্ট মুফাসসির আব্দুল্লাহ জাওয়াদি আমোলি বলেন: সূরার শেষাংশ এ কথার সমর্থক যে, কাউসার তথা অত্যাধিক কল্যাণযুক্ত ও হিতকর হওয়ার বিষয়টি হজরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.)-এর সাথে সম্পৃক্ত। মহান আল্লাহ মহানবি (স.)-কে তাকে দান করেছেন এবং তার বংশেই ১১ জন ইমামের জন্ম; যারা বিশ্বের জন্য গৌরবের এবং বর্তমানে প্রাচ্য ও পশ্চিম এই ১১ জন ইমামের পবিত্র নাম ও তাদের সন্তানরাই পরিচালনা করছে।[১০]
শানে নুযুল মহানবি (স.) সম্পর্কে আস বিন ওয়ায়েল যে, উক্তি করেছিল সে প্রসঙ্গে সূরা কাউসার অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (স.)-এর পুত্র সন্তান আব্দুল্লাহ’র মৃত্যু হলে যেহেতু মহানবি (স.)-এর আর কোন পুত্র সন্তান ছিল না তাই আস বিন ওয়ায়েল কুরাইশের গন্যমান্য ব্যক্তিদের মাঝে মহানবি (স.)-কে আবতার তথা নির্বংশ ও লেজকাটা বলেছিল।[১২] মহান আল্লাহ্ এ সূরা অবতীর্ণ করে মহানবি (স.)-কে সান্ত্বনা দিলেন যে, তাকে অত্যাধিক কল্যাণ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া এ সুসংবাদও প্রদান করা হয় যে, তার শত্রুরা নির্বংশ হয়ে যাবে।[১৩]
নাহর শব্দের তাফসীর
((نَحر)) শব্দের তাফসীরের বিষয়ে মুফাসসিরগণের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। ফাজল বিন হাসান তাবারসী (মৃত্যুকাল ৫৪৮ হি.)[১৪] ও আল্লামা তাবাতাবায়ী (মৃত্যুকাল ১৩৬০ হি.)[১৫] শিয়া ও সুন্নি সূত্রের বিভিন্ন রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, হাত উঁচু করা এবং তাকবীর বলার সময় হস্তদ্বয়কে মুখমণ্ডল বরাবর উত্তোলন করা বলে তাফসীর করেছেন। কিন্তু আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজি’র মতে এক্ষেত্রে কুরবানী অর্থে তাফসীরই অধিক সামঞ্জস্যশীল। কেননা এর অর্থ হল মূর্তিপূজারিদের কর্মকাণ্ডকে প্রত্যাখ্যান করা, যে ইবাদত ও কুরবানী তারা মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য আঞ্জাম দিত।[১৬]
মুস্তাহাব নামাজসমূহে সূরা কাউসারের তেলাওয়াত
কিছু কিছু মুস্তাহাব নামাজে সূরা কাউসার তেলাওয়াতের বিষয়ে তাগিদ প্রদান করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
রমজান মাসের ১১তম রজনীর নামাজ: এ নামাজ দুই রাকাত বিশিষ্ট। এর প্রতি রাকাতে একবার সূরা হামদ এবং ২০ বার সূরা কাউসার তেলাওয়াত করা হয়।[১৭] রমজান মাসের ১৮তম রজনীর নামাজ: এ নামাজ চার রাকাত বিশিষ্ট। এর প্রতি রাকাতে একবার সূরা হামদ এবং ২৫ বার সূরা কাউসার তেলাওয়াত করা হয়।[১৮]
সূরার ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য
ইমাম সাদিক (আ.) থেকে আবু বাসির বর্ণনা করেন: যে ব্যক্তি প্রত্যহের নামাজে এ সূরা তেলাওয়াত করবে কেয়ামতের দিন সে হাউজে কাউসার থেকে পান করবে এবং তুবা নামক বৃক্ষের নীচে আল্লাহর রাসুল (স.)-এর সাথী হবে।[১৯] তাফসীরে মাজমাউল বায়ানে আল্লাহর রাসূল (স.) থেকে বর্ণনা করা হয়েছে: যে ব্যক্তি সূরা কাউসার তেলাওয়াত করবে, মহান আল্লাহ্ বেহেশতের নদী থেকে তার তৃষ্ণা নিবারণ করবেন এবং আল্লাহর বান্দারা কুরবানীর ঈদের দিন যে সংখ্যায় কুরবানী করে থাকে, একইভাবে আহলে কিতাব ও মুশরিকদের কুরবানীর সমান সংখ্যায় তাকে সওয়াব প্রদান করা হবে।[২০]