কাউসার
কাউসার (আরবি: کوثر) কুরআনের একটি শব্দ এবং হযরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)-এর অন্যতম উপাধি, যার অভিধানিক অর্থ অত্যাধিক কল্যাণ।[২] এই শব্দটি কুরআনে একবার সূরা কাউসারের মধ্যে এসেছে।[৩]
কাউসারের তাফসীর ও কাউসারের মিসদাক তথা দৃষ্টান্ত সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের মত বিদ্যমান রয়েছে। কিছু কিছু তাফসীরে কাউসার বলতে বেহেশতের একটি নদী, ইসলাম, নবুয়্যত, কুরআন, ইলম ও হিকমত, হাউযে কাউসার, শাফাআত, সাহাবাগণ ও অনুসারীদের সংখ্যাধিক্য এবং বংশধরের সংখ্যাধিক্য ইত্যাদিকে বোঝানো হয়েছে। মাজমাউল বায়ানের প্রণেতা এই সকল সম্ভাবনাকে সঠিক বলে মত প্রকাশ করেছেন; কারণ কাউসার শব্দটি দুনিয়া ও আখেরাতের এমন এক অত্যাধিক কল্যাণ, যার মধ্যে উল্লেখিত সকল ব্যাখ্যাই অন্তর্ভূক্ত। ফাখরে রাযি কাউসারের তাফসীর হিসেবে ’বেহেশতের’ একটি নদীকে মশহুর ও মুস্তাফিজ বলে মনে করেন।
আল্লামা তাবাতাবাঈ কাউসার বলতে মহানবী (স.)-এর বংশধরের সংখ্যাধিক্যকে জ্ঞান করেন; কারণ সূরা কাউসারের শেষ আয়াতে 'আবতার' শব্দের বাহ্যিক অর্থ নির্বংশ ও লেজকাটা, আর কাউসারের 'বংশধরের সংখ্যাধিক্য' অর্থটি 'আবতারের' অর্থের সাথে বেশী মানানসই।[৮] মহিউদ্দিন আরাবি কাউসারকে ববেহেশতের একটি নদী হিসেবে জ্ঞান করেন, যা থেকে কোন ব্যক্তি পান করলে কখনোই তৃষ্ণার্ত হবে না।
বিশিষ্ট মুফাসসির আব্দুল্লাহ জাওয়াদি আমোলি বলেন, সূরার শেষাংশ এ কথার সমর্থক যে, কাউসার তথা অত্যাধিক কল্যাণযুক্ত ও হিতকর হওয়ার বিষয়টি হজরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.)-এর সাথে সম্পৃক্ত। মহান আল্লাহ মহানবি (স.)-কে তাঁকে দান করেছেন এবং তাঁর বংশেই ১১ জন ইমামের জন্ম; যারা বিশ্বের জন্য গৌরবের এবং বর্তমানে প্রাচ্য ও পশ্চিম এই ১১ জন ইমামের পবিত্র নাম ও তাদের সন্তানরাই পরিচালনা করছে।[জাওয়াদে আমোলি, আব্দুল্লাহ, দুরুসু তাফসীর, সূরা কাওসার।]
শিয়া মুফাস্সিরগণের দৃষ্টিতে, সূরা কাউসারে 'কাউসার' বলতে হযরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.)-কে নির্দেশ করা হয়েছে; কারণ আস বিন ওয়ায়েল যে নবী করিম (স.)-কে «اَبتَر» আবতার (নির্বংশ; যার সন্তান-সন্ততি ও বংশধর নেই) মনে করেছিল, এর বিপরীতে আল্লাহপাক হযরত ফাতেমার (সা.আ) মাধ্যমে রাসুলকে (স.) বিপুল সংখ্যক সন্তান ও বংশধর দান করেছেন।[১০]
বিশ্বে হযরত ফাতেমার (সা.) বংশের বিস্তার
বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে হযরত ফাতেমা (সা.আ.)-এর বংশধর থেকে বিপুল সংখ্যক সৈয়দ রয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, ইরান এবং বিভিন্ন আরব রাষ্ট্র ছাড়াও সুদূর পশ্চিমে (তিউনিসিয়া এবং মরক্কোতে) ইদ্রিসীয় শিয়া সরকারের প্রতিষ্টাতা ইদ্রিস বিন আব্দুল্লাহ বিন হাসানের বংশধরদের উপস্থিতি এখনও রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় হাবাশি, আলাভী এবং বিপুল সংখ্যক সৈয়দ পরিবার রয়েছে। ইয়েমেনে ইমাম হাসান (আ.) এবং ইমাম হোসাইন (আ.)-এর বংশধারার বিভিন্ন গোষ্ঠীর উপস্থিতি রয়েছে। মিশরের আসওয়ান শহরে 'জাফরাহ' নামের একটি বৃহৎ গোত্র রয়েছে, যারা ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর বংশধর। ভারত ও পাকিস্তানে রিজভী ও নাকাভী সৈয়দের উপস্থিতি রয়েছে।[১১] কোন কোন মুফাসসির কাউসার হওয়ার জন্য ৬ টি দিক তুলে ধরেছেন, যেগুলো হল: ইলম ও আমল, নবুওয়াত, কুরআন, ইহকাল ও পরকালের মর্যাদা এবং হযরত ফাতেমা যাহরার (সা.আ.) নেক সন্তান। এছাড়াও আরও উল্লেখ করেছে যে, ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের পর হযরত সাজ্জাদ (আ.) ব্যতীত তাঁর পরিবারের আর কোন ব্যক্তি অবশিষ্ট ছিল না। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করেছেন এবং তাঁর বংশ থেকে পৃথিবীকে ভরিয়ে দিয়েছেন।[১২]