বিষয়বস্তুতে চলুন

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ

wikishia থেকে
সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ
লেবাননের হিজবুল্লাহ মহাসচিব
সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ
সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ
উপাধিপ্রতিরোধ নেতা
জন্ম তারিখ১৯৬০ খ্রি.
যে শহরে জন্মশাহরাক আল-বাযুরিয়া
যে রাষ্ট্রে জন্মলেবানন
মৃত্যুর তারিখ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি.
যে রাষ্ট্রে মৃত্যুলেবানন
সহধর্মিণী'র নামফাতেমা ইয়াসিন
সন্তানমুহাম্মাদ হাদী • মুহাম্মাদ জাওয়াদ • মুহাম্মাদ আলী • যায়নাব
ধর্মইসলাম
মাযহাবশীয়া
পেশাধর্মীয় আলেম • রাজনীতিবিদ
পদমর্যাদালেবাননের হিজবুল্লাহ মহাসচিব
শিক্ষকগণসাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি • সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ বাকের সাদর


সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ (আরবি: سید حسن نصرالله) (১৯২৪ - ১৯৬০ খ্রি.) হচ্ছেন লেবাননের বিশিষ্ট শিয়া আলেম ও রাজনীতিবিদ, লেবাননের হিজবুল্লাহর তৃতীয় মহাসচিব এবং এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। হিজবুল্লাহর দ্বিতীয় মহাসচিব সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভির (শাহাদাত: ১৯৯২ খ্রি.) শাহাদাতের পর তিনি দলটির তৃতীয় মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ আঞ্চলিক শক্তিতে রুপান্তরিত হয়। ২০০০ সালে ইসরাইলি দখলদারিত্বের হাত থেকে দক্ষিণ লেবাননকে মুক্ত করা এবং ২০০৬ সালে ৩৩ দিনের যুদ্ধে যায়নবাদীদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন নাসরুল্লাহ মহাসচিব থাকাকালীন সময়েই সংঘটিত হয়। এ কারণেই তাকে ‘সাইয়্যেদ-এ মুকাওয়েমাত’ (প্রতিরোধ নেতা) বলে আখ্যায়িত করা হয়। এছাড়াও তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার কারণে এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে কয়েকবার বিজয় ছিনিয়ে আনার কারণে আরব ও মুসলিম জাহানে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন; এমনকি আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

হাসান নাসরুল্লাহ নাজাফের হাওযা ইলমিয়ার ছাত্র। নাজাফে সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ বাকের সাদর এবং সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভির সাথে সম্পর্ক তাকে ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে প্রবেশ করায়। সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ‘আমাল আন্দোলন’ (جنبش امل)-এর সাথে যুক্ত ছিলেন; কিন্তু ১৯৮২ সালে একদল সংগ্রামী আলেমের সাথে ঐ আন্দোলন থেকে বের হয়ে লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভির শাহাদাতের পর ১৯৯২ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারীতে হিজবুল্লাহর সকল সদস্যের ঐক্যমতের ভিত্তিতে দলটির মহাসচিব নির্বাচিত হন।

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ২০২৪ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর, রোজ শুক্রবার দক্ষিণ লেবাননের বৈরুতের যাহিয়া এলাকায় ইসরাইল বাহিনী কর্তৃক একের পর এক বোমা হামলায় আক্রান্ত হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। তার শাহাদাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী, সাইয়্যেদ আলী সিস্তানি, নাসের মাকারেম শিরাজি, হুসাইন নূরে হামেদানি’র ন্যায় মারজায়ে তাক্বলীদগণ ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকার ও উর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গ এবং প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো যেমন: হামাস, ফিলিস্তিনের ইসলামী জিহাদ আন্দোলন, ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলন, ফাতাহ আন্দোলন, আসায়েবে আহলে হাক্ব, লেবাননের আমাল আন্দোলন, ইরাকের জারইয়ানে হিকমতে মিল্লি, ইরাকের জারইয়ানে হিকমতে সাদর বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ’র শাহাদাতে শোক প্রকাশ করাসহ ইসরাইলি হামলার কঠোর নিন্দা জ্ঞাপন করেন। ইরানে ৫ দিন এবং লেবানন, সিরিয়া, ইরাকইয়েমেনে ৩ দিন সাধারণ শোক ঘোষণা করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকজন এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।

এর আগেও নাসরুল্লাহকে ২০০৪, ২০০৬, ও ২০১১ সালে ইসরাইলি বাহিনীর পক্ষ থেকে কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করা হয় এবং প্রতিবারই তিনি অক্ষত অবস্থায় বেঁচে যান।

তার বড় সন্তান, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হাদীও ১৯৯৭ সালে ইসরাইলি বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে শাহাদাত বরণ করেন।

প্রতিরোধ নেতা এবং ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ (১৯৮০ সালে লেবাননে)

লেবাননের অন্যতম ‍বিখ্যাত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হাসান নাসরুল্লাহ,[] ২০০০ সালে দীর্ঘ ২২ বছরের ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে দক্ষিণ লেবাননের মুক্তিতে এবং একইভাবে ৩৩ দিনের যুদ্ধে বিজয়ে তার এবং হিজবুল্লাহর ভূমিকার জন্য সাইয়্যেদ-এ মুকাওয়েমাত (প্রতিরোধের নেতা) উপাধিতে ভূষিত হন।[] এছাড়াও লেবানীজ বন্দিদের মুক্তিতে এবং ইসরাইলের নিকট থেকে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের লাশ ফেরত আনার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম।

নাসরুল্লাহ, প্রতিরোধের কারণে ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে কয়েকবার বিজয় লাভ করার কারণে আরব ও মুসলিম জাহানের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব,[] আরব বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা[] এবং আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে খ্যাতিমান ও প্রভাবশালী নেতা[] হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। মুসলিম ও আরব বিশ্বে জনপ্রিয়তার কারণ হিসেবে তার বীরত্বপূর্ণ বক্তব্য ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বকে বিবেচনা করা হয়।[] ইউরো নিউজের পক্ষ থেকে নাসরুল্লাহকে ইরানের সবচেয়ে ঘনিষ্ট মিত্র এবং ইসরাইলের কট্টর দুশমন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।[]

হিজবুল্লাহর মহাসচিব

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভির শাহাদাতের পর ১৯৯২ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারীতে হিজবুল্লাহর সকল সদস্যের ঐক্যমতের ভিত্তিতে দলটির মহাসচিব নির্বাচিত হন।[] তিনি ৩২ বছর বয়সে হিজবুল্লাহর মহাসচিব পদে অধিষ্ঠিত হন।[]

বলা হয় যে, সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ’র নেতৃত্বকালীন সময়ে হিজবুল্লাহ আঞ্চলিক শক্তিতে রুপান্তরিত হয়[১০] এবং যায়নবাদী সরকারের নিকট থেকে কতকগুলো বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ২০০০ সালে দক্ষিণ লেবাননকে মুক্ত করা, ২০০৬ সালে ৩৩ দিনের যুদ্ধে বিজয় এবং ২০১৭ সালে সন্ত্রাসী দলগুলোর পরাজয়ের কথা উল্লেখ করা হয়।[১১] ২০০৪ সালে ইসরাইলের হাত থেকে লেবানিজ বন্দীদের মুক্তি এবং প্রতিরোধ যোদ্ধাদের লাশগুলো উদ্ধারের ক্ষেত্রে সাইয়্যেদ হাসানের ভূমিকাকে অপরিহার্য ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হাসান নাসরুল্লাহ মহাসচিব থাকাকালীন সময়ে হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয় এবং দলটির কয়েকজন সদস্য লেবাননের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।[১২]

ইসরাইলি হত্যার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু ছিলেন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ এবং বলা হয় যে, ২০০৬[১৩] সাল হতে ইসরাইলি বাহিনীর পক্ষ থেকে হত্যার হুমকির কারণে আত্মগোপনে থাকতেন।[১৪] এই সময়টাতে তিনি বক্তব্যগুলো ভার্চুয়ালী ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রদান করতেন।[১৫] হিজবুল্লাহকে তিনি আমেরিকা এবং ইসরাইলের দখলদারিত্বমূলক পরিকল্পনাসমূহের প্রধান অন্তরায় হিসেবে মনে করতেন।

প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সাথে সম্পর্ক

হামাস নেতাদের সাথে হাসান নাসরুল্লাহ

লেবাননের হিজবুল্লাহ মহাসচিব হিসেবে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ সর্বদা প্রতিরোধ অক্ষের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। তিনি ইরানের নেতৃবৃন্দ ও হামাসের ন্যায় ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর ঘনিষ্ট মিত্র ছিলেন।[১৬] তুফান আল-আকসা অভিযানের পর গাজায় ইসরাইলি হামলার ঘটনায় তিনি ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সমর্থন ও সহযোগিতার লক্ষ্যে দক্ষিণ লেবাননে একটি ফ্রন্ট তৈরি করেন এবং ঘোষণা দেন যে, গাজা যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত এই ফ্রন্ট অব্যাহত থাকবে।[১৭] তিনি মহাসচিব থাকাকালীন সময়ে লেবাননের আমাল আন্দোলনের সাথেও লেবাননের হিজবুল্লাহর চমৎকার ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।[১৮]

ইরানের সাথে সম্পর্ক

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ও কাসেম সোলাইমানীর সাথে হাসান নাসরুল্লাহ

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ’র ইরান এবং এর নেতৃবৃন্দের সাথে ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।[১৯] তিনি বহুবার ইরান সফর করেছেন এবং ইরানি নেতৃৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। তিনি ১৩৬০ অথবা ১৩৬১[২০] ফার্সি সনে হুসাইনিয়া-এ জামারানে (জামারান ইমামবাড়ি) প্রথমবার ইমাম খোমেনীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। ১৩৬৫ ফার্সি সনেও হিজবুল্লাহর সদস্যদের সাথে ইমামের খেদমতে উপস্থিত হন। ইমাম খোমেনীর সাথে তার সর্বশেষ সাক্ষাতটিও ইমাম খোমেনীর মৃত্যুর কয়েক মাস পূর্বে এবং আমাল আন্দোলনের সাথে হিজবুল্লাহর দ্বন্দের সময়ে সংঘটিত হয়েছিল।[২১]

অনুরূপভাবে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ কর্তৃক বর্ণিত তার জীবনীতে এসেছে, আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ১৩৬৫ ফার্সি সন থেকে শুরু হয়।[২২] তিনি বহুবার কাসেম সোলাইমানিহুসাইন আমীর আব্দুল্লাহিয়ানের (সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ন্যায় ইরানের উর্ধ্বতন সামরিক ও কুটনৈতিক কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাত করেছেন।[২৩]

নাসরুল্লাহ ইরানকে নিজের বন্ধু এবং হিজবুল্লাহর সমর্থক জ্ঞান করতেন এবং অন্যদিকে নিজেও ইরানের পাশে দাঁড়াতেন।[২৪] উদাহরণস্বরূপ ২০২৪ সালে এপ্রিল মাসে দামেস্কে অবস্থিত ইরানি কনস্যুলেটে ইসরাইলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ইরানের অধিকারের বিষয়টিকে সমর্থন করেন এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের জবাব সুনিশ্চিত জ্ঞান করেছিলেন।[২৫] তিনি ইরানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে গৌরব হিসেবে গণ্য করতেন।

হাসান নাসরুল্লাহ ২০০৯ সালের নভেম্বরে হিজবুল্লাহর নতুন রাজনৈতিক সনদ ঘোষণা এবং উপস্থাপন করেন যেখানে ইরানে বেলায়েতে ফকিহ’র প্রতি হিজবুল্লাহর অঙ্গিকার গোষ্ঠীটির অন্যতম মৌলিক নীতি হিসেবে গণ্য হয়েছিল। আল-জাজিরা [২৬] ও ইউরো নিউজ চ্যনেলের[২৭] ভাষ্যমতে, কোন কোন বিশেষজ্ঞ ও হিজুল্লাহ বিরোধীরা নাসরুল্লাহ এবং তার দলকে লেবাননে ইরানের এজেন্ট ও প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করেন।

জীবনী ও শিক্ষা

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, ১৯৬০[২৮] অথবা ১৯৬২ সালের [২৯] ৩১শে আগস্ট পূর্ব বৈরুতের কোন একটি মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন।[৩০] তার পিতা সাইয়্যেদ আব্দুল করিম এবং মাতা নাহদিয়া সাফিউদ্দিন[৩১] ছিলেন দক্ষিণ লেবাননের আল-বাযুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা, যারা পরবর্তীতে বৈরুতে চলে গিয়েছিলেন।[৩২] কোন কোন সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি বাযুরিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন।[৩৩] তিন ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ সবার বড়।[৩৪] কিশোর বয়সে তিনি তার ভাইদের সাথে বাবার মুদির দোকানে কাজ করতেন।[৩৫]

নাসরুল্লাহ তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন আল-তারবিয়্যাহ এলাকার আল-নাজাহ স্কুলে এবং ১৯৭৫ সালে লেবাননে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে পরিবারের সাথে বাযুরিয়া গ্রামে চলে যান এবং উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনা সাউর শহরে অব্যাহত রাখেন।

সাইয়্যেদ হাসানের নিজের ভাষ্যানুসারে, শৈশব থেকেই হাওযা ইলমিয়্যাহ ও রুহানিয়্যাতের প্রতি টান ছিল; কিন্তু তার পিতামাতা এর বিপক্ষে ছিলেন।[৩৬] তিনি ১৯৭৬ সালে সাউর শহরের জুম্মার খতিব ও সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ বাকের সাদর-এর অন্যতম ছাত্র সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ গারউয়ি’র উৎসাহে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য নাজাফ শহরে যান। সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ একটি চিঠিতে সাইয়্যেদ হাসানকে আয়াতুল্লাহ সাদরের নিকট পরিচয় করিয়ে দেন। আয়াতুল্লাহ সাদরও সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ’র পড়াশোনার অবস্থা ও চাহিদা মেটানোর বিষয়টি দেখভাল করার জন্য সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভিকে নিযুক্ত করেন। সাইয়্যেদ হাসান ১৯৭৮ সালে হাওযার প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ সম্পন্ন করেন এবং নাজাফে দু’বছর অবস্থান করার পর ইরাকের বাথ সরকারের চাপের কারণে লেবাননে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে বা’লাবাক শহরে ‘ইমাম মুন্তাযার মাদ্রাসা’ প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানেই ধর্মীয় পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন এবং পাশাপাশি তিনি পাঠদানেও মগ্ন হন।[৩৭]

নাজাফে শিক্ষক আব্বাস মুসাভির পাশে হাসান নাসরুল্লাহ

তিনি ধর্মীয় শিক্ষার জন্য ১৯৮৯ সালে[৩৮] অথবা ১৯৯০ সালে[৩৯] এক বছরের[৪০] জন্য কোম সফর করেন। এই সময়টাতে তিনি সাইয়্যেদ মাহমুদ হাশেমি, সাইয়্যেদ কাযেম হুসাইনী হায়েরি এবং মুহাম্মাদ ফাযেল লাঙ্কারানির দারসে অংশগ্রহণ করেন।[৪১] নাসরুল্লাহ’র কোম থেকে লেবাননে ফিরে যাওয়ার দলিল হিসেবে আমাল আন্দোলনের সাথে হিজবুল্লাহর মতপার্থক্য বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে ছড়ানো গুজবসমূহকে মনে করা হয়।

নাসরুল্লাহ শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সামরিক ও গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।[৪২]

স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি

হাসান নাসরুল্লাহ ১৯৭৮ সালে ১৮ বছর বয়সে ফাতেমা ইয়াসিনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ঘর আলো করে আসে মুহাম্মাদ হাদি, মুহাম্মাদ জাওয়াদ এবং মুহাম্মাদ আলী নামে তিন পুত্র এবং জয়নাব নামের এক কন্যা সন্তান।[৪৩] তার বড় সন্তান সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হাদি ১৯৯৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর লেবাননের দক্ষিণে ইসরাইলি বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে শাহাদাত বরণ করেন। তার লাশ যায়নবাদিদের হাতে পড়ে এবং এক বছর পর ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে বিনিময় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লেবাননে ফিরিয়ে আনা হয়।[৪৪]

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং দায়িত্ব: আমাল আন্দোলন থেকে হিজবুল্লাহ পর্যন্ত

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ তার জীবনের প্রথম থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত হন। তার উল্লেখযোগ্য রাজনৈতক কর্মকাণ্ডগুলো নিম্নরূপ:

  • ইমাম মুসা সাদরের প্রতি টান থাকার কারণে ১৯৭৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর আমাল আন্দোলনে যোগদান করেন এবং তার ভাই সাইয়্যেদ হুসাইনের সাথে দলটির পক্ষ থেকে বাযুরিয়া উপশহর অঞ্চলের প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হন।[৪৫]
  • ১৯৮২ সালে তিনি আমাল আন্দোলনের রাজনৈতিক কমিটির সদস্য হন এবং বেকা অঞ্চলের রাজনৈতিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[৪৬]
  • ১৯৮২ সালে ইসরাইলি বাহিনী কর্তৃক পর্যায়ক্রমে লেবানন দখল এবং আমাল আন্দোলনের কোন কোন নেতার পক্ষ থেকে ইসরাইল ও লেবাননের মধ্যে সন্ধি প্রস্তাবনায় সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভিসুবহি তুফাইলা’র ন্যায় একদল সংগ্রামী ধর্মীয় আলেমের সাথে হাসান নাসরুল্লাহ আমাল আন্দোলন থেকে বেরিয়ে যান এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠার প্রথম বীজ বপন করেন।[৪৭]
  • ১৯৮৫ সালে বেকা অঞ্চলে হিজবুল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হন।[৪৮]
  • ১৯৮৭ সালে হিজবুল্লাহ’র নির্বাহী কমিটির প্রধান এবং হিজবুল্লাহ’র সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কাউন্সিলের সদস্য হন।[৪৯]
  • তিনি ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে কোমে অবস্থানকালীন সময়ে তেহরানে হিজবুল্লাহ’র প্রতিনিধি এবং ইরানে হিজবুল্লাহ’র কার্যক্রমের বিষয়টি দেখাশোনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ চালিয়ে যান। দাউদ আবাদী, হামিদ, সাইয়্যেদ আযিয: জেন্দেগিনামা খুদগুফ্তেয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, ১৩৯১ (ফার্সি সন), পৃ; ৩৪।
  • ১৯৯২ সালে সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি নিহত হলে হিজবুল্লাহ’র মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন।[৫০]

শাহাদাত

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ২০২৪ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর, রোজ শুক্রবার বৈরুতের দক্ষিণে শিয়া অধ্যুষিত যাহিয়া এলাকায় যায়নবাদী ইসরাইলের মুহুর্মুহু বোমা বর্ষণের ফলে শাহাদাত বরণ করেন।[৫১] ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করে হিজবুল্লাহর কমান্ড সেন্টার ও মিটিং প্লেসকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। এই হামলার পর, ইসরাইলি সেনাবাহিনী সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ এবং আলী কারাকি’র ন্যায় কিছু কমান্ডার নিহত হওয়ার কথা জানায় এবং হিজবুল্লাহ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে এক বিবৃতিতে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শহীদ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। তার শাহাদাতের সংবাদ কোন কোন ইমামগণের মাজার থেকে যেমন: ইমাম রেযা (আ.)[৫২] এবং ইমাম আলী (আ.)-এর মাজার থেকে প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয়।

হিজবুল্লাহর বিবৃতিতে এসেছে “প্রতিরোধ নেতা ও বান্দা-এ সালেহ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, এক মহান শহীদ, অত্যন্ত সাহসী নেতা, বীর, প্রজ্ঞাবান, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও মু’মিন হিসেবে কারবালার চিরন্তন শহীদদের কাফেলায় যোগদান করেছেন।” ইসরাইলি সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে আল-জাজিরা চ্যানেল উল্লেখ করে যে, যায়নবাদী সরকার এই বোমা বর্ষণে এক অথবা দুই টন ওজনের প্রায় ৮৫টি বাঙ্কার বাস্টার বোমার ব্যবহার করে; অথচ জেনেভা কনভেনশন এই ধরনের বোমার ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।[৫৩]

সংবাদ মাধ্যমগুলোর রিপোর্ট অনুসারে, নাসরুল্লাহর শরীর সম্পূর্ণরূপে অক্ষত ছিল। বিস্ফোরণের বিকট শব্দ[৫৪] বা বোমা হামলার ফলে সৃষ্ট বিষাক্ত গ্যাসের[৫৫] কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিক্রিয়া

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী,[৫৬] এবং সাইয়্যেদ আলী সিস্তানি,[৫৭] নাসের মাকারেম শিরাজি,[৫৮] হুসাইন নূরী হামেদানি,[৫৯] জাফর সুবহানি,[৬০] সাইয়্যেদ মূসা শুবাইরি যানজানি,[৬১] আব্দুল্লাহ জাওয়াদি আমুলি,[৬২] বাশির হুসাইন নাজাফি, হুসাইন ওয়াহিদ খোরাসানির,[৬৩]] ন্যায় মারজা-এ তাক্বলীদগণ ছাড়াও জামে-এ মুদাররেসীন হাওযা ইলমিয়া কোম এবং মাজমা-এ জাহানি আহলে বাইত শোক বার্তা প্রকাশ করেন।

বিভিন্ন দেশের সরকার ও কর্তৃৃপক্ষ যেমন: ইরান, রাশিয়া, ইরাক, ইয়েমেন,[৬৪] কিউবা,[৬৫] ভেনিজুয়েলা[৬৬] এবং প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো যেমন: হামাস আন্দোলন, ফিলিস্তিনের ইসলামী জিহাদ আন্দোলন, ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলন, ফাতাহ আন্দোলন, আসাইবে আহলে হাক্ব, লেবাননের আমাল আন্দোলন, সাইয়্যেদ আম্মার হাকিম, ইরাকের জারইয়ানে হিকমতে মিল্লি’র নেতা, ইরাকের জারইয়ানে সাদরের নেতা মুক্তাদা সাদর,[৬৭] পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পার্টিও বিবৃতি প্রকাশের মাধ্য শোক জ্ঞাপন করে এবং ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানায়।[৬৮]

ইরানে পাঁচ দিন[৬৯] এবং লেবানন,[৭০] সিরিয়া,[৭১] ইরাক[৭২] ও ইয়েমেনে[৭৩] তিন দিন সাধারণ শোক ঘোষণা করা হয়। ইরানের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রবিবার ছুটি ঘোষণা করা হয় এবং ছাত্র ও আলেম সমাজ যায়নবাদী ইসরাইলের অপরাধের বিপক্ষে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।[৭৪] ইরানের সকল সিনেমা হল ও থিয়েটার বন্ধ রাখা হয়।[৭৫] বিভিন্ন দেশের জনসাধারণ যেমন ইরান, [৭৬] পাকিস্তান, ইয়েমেন, জর্ডান, মরক্কো, পশ্চিম তীর (ফিলিস্তিন), বাহরাইন, ইরাকের ন্যায় বিভিন্ন রাষ্ট্রের জনসাধারণ হাসান নাসরুল্লাহর হত্যার নিন্দায় এবং হিজবুল্লাহর সমর্থনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।[৭৭][৭৮]

ইরানের রাষ্ট্রপতি মাসুদ পেজেশকিয়ান, সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাতে শোক প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন, এই সন্ত্রাসী হামলার নির্দেশ নিউইয়র্ক থেকে দেওয়া হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে যায়নবাদী সরকারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ও ইসমাঈল হানিয়ার (৩১ জুলাই ২০২৪) হত্যার জবাবে একই বছরের ১লা অক্টোবর ইসরাইলের সামরিক ও গোয়েন্দা স্থাপণাগুলোতে কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মাধ্যমে অপারেশন প্রমিজ ট্রু-২ পরিচালনা করে।[৭৯]

গুপ্তহত্যার চেষ্টা

কোন কোন বার্তাসংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ইসরাইলের মোকাবিলায় যেসব বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন এবং তিনি মহাসচিব থাকাকালীন সময়ে হিজবুল্লাহ শক্তিশালী পর্যায়ে পৌঁছানোর কারণে যায়নবাদী সরকারের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসী হুমকির শিকার হয়েছিলেন। এর মধ্যে কয়েকটি হত্যার পরিকল্পনা হচ্ছে নিম্নরূপ:

  • ২০০৪ সাল: খাদ্যে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে হত্যা।
  • ২০০৬ সাল: ইসরাইলি যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে নাসরুল্লাহর আবাসিক টাওয়ারে হামলা। একই বছরের ২৮ এপ্রিল একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর গাড়িতে মর্টার হামলা করার টার্গেট করে, যাদেরকে আটক করা হয় এবং হত্যাচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
  • ২০১১ সাল: হাসান নাসরুল্লাহর সম্ভাব্য উপস্থিতি ধরে নিয়ে ইসরাইলি যুদ্ধ বিমান দিয়ে বিল্ডিংটিকে গুড়িয়ে দেওয়া।

হাসান নাসরুল্লাহ সম্পর্কিত রচনা

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বই, চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র এবং গান সহ অসংখ্য রচনা নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হল:

গ্রন্থাবলি

  • সাইয়্যেদে আযিয- হামিদ দাউদ আবাদী,
  • সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ: ইনকিলাবে জুনুবি- রাফাত সাইয়্যেদ আহমাদ,
  • আযাদতারিন মারদে জাহান- রশিদ জাফারী,
  • নাসরুল্লাহ- মুহাম্মাদ রেযা যায়েরী...

সঙ্গীত ও প্রতিবেদন

  • সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লার জীবনীর প্রতি দৃষ্টিপাত (প্রতিবেদন),
  • স্বাধীনতার আহ্বানকারীগণ (সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ পর্ব, প্রতিবেদন),
  • শত্রুদের দৃষ্টিতে নাসরুল্লাহ (প্রতিবেদন),

সাইয়্যেদ হাসানের সম্পর্কে অসংখ্য সঙ্গীত এবং মিউজিক ভিডিও তৈরি এবং প্রকাশ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: আলী নাফরির গাওয়া "নাসরাল্লাহ" গানটি, [114] আলী আল-আত্তার গাওয়া আরবি সঙ্গীত "ইয়া নাসরাল্লাহ",[৮০] আলীরেজা আলিজাদেহের গাওয়া ফার্সি সঙ্গীত "মা বাজ মি গারদিম",[৮১] হুসাইন রেজাইয়ের গাওয়া ফার্সি সঙ্গীত "ওয়াক্তে মুজাযাত",[৮২] উল্লেখযোগ্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

তথ্যসূত্র

  1. নূরী, শিয়ানে লেবানন, ১৩৮৯ (ফার্সি সন), পৃ: ১৭২।
  2. حسن نصر الله.. قائد جعل من حزب الله قوة إقليمية, আল-জাযিরা।
  3. آلمانی: سید حسن نصرالله محبوب‌ترین شخصیت جهان عرب و اسلام است, খাবারগুজারিয়ে জামহুরিয়ে ইসলামি।
  4. محبوب‌ترین رهبر جهان عرب, খাবারগুজারিয়ে জমজাম।
  5. محبوب‌ترین رهبر جهان عرب, খাবারগুজারিয়ে জামহুরিয়ে ইসলামি।
  6. حسن نصر الله.. قائد جعل من حزب الله قوة إقليمية, আল-জাযিরা।
  7. نصرالله نزدیک‌ترین متحد ایران و دشمن سرسخت اسرائیل که بود؟»، یورونیوز, ইউরোনিউজ।
  8. الأمین العام لحزب الله السید حسن نصرالله, আল-খানাদেক ওয়েবসাইট।
  9. سید حسن نصرالله: سمبل مقاومت, ডিপ্লমাসি ইরান সাইট।
  10. حسن نصرالله به شهادت رسید, খাবারগুজারিয়ে ইসনা।
  11. الأمین العام لحزب الله السید حسن نصرالله, আল-খানাদেক ওয়েবসাইট।
  12. الله و سید حسن از جنگ‌های داخلی تا جنگ ۳۳ روزه, মুয়াসসেসেয়ে ফারহাঙ্গিয়ে তাহকিকাতিয়ে ইমাম মুসা সাদর্।
  13. «"معاریف" تکشف فی تقریر حول وحدة حمایة نصرالله تفاصیل محاولات اغتیاله, আন্-নাশর্ ওয়েবসাইট।
  14. سید حسن نصرالله: من سخنگوی ایران نیستم, খাবারগুজারিয়ে ইন্তেখাব।
  15. به سه دهه سکانداری نصرالله در حزب‌الله/ سید حسن؛ چریک معمم, খাবারগুজারিয়ে অনলাইন।
  16. نصرالله نزدیک‌ترین متحد ایران و دشمن سرسخت اسرائیل که بود؟, ইউরোনিউজ।
  17. نصر الله.. قائد جعل من حزب الله قوة إقليمية, আল-জাযিরা।
  18. سید حسن نصرالله: من سخنگوی ایران نیستم, খাবারগুজারিয়ে ইন্তেখাব।
  19. نصرالله نزدیک‌ترین متحد ایران و دشمن سرسخت اسرائیل که بود؟, ইউরোনিউজ।
  20. দাউদ আবাদী, সাইয়্যেদ আযিয: জেন্দেগিনামা খুদগুফ্তেয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, ১৩৯১ (ফার্সি সন), পৃ: ৪১।
  21. দাউদ আবাদী, সাইয়্যেদ আযিয: জেন্দেগিনামা খুদগুফ্তেয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, ১৩৯১ (ফার্সি সন), পৃ: ৪১-৪২।
  22. দাউদ আবাদী, সাইয়্যেদ আযিয: জেন্দেগিনামা খুদগুফ্তেয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, ১৩৯১ (ফার্সি সন), পৃ: ৪৪।
  23. نصرالله نزدیک‌ترین متحد ایران و دشمن سرسخت اسرائیل که بود؟, ইউরোনিউজ।
  24. سید حسن نصرالله: من سخنگوی ایران نیستم, খাবারগুজারিয়ে ইন্তেখাব।
  25. نصرالله نزدیک‌ترین متحد ایران و دشمن سرسخت اسرائیل که بود؟, ইউরোনিউজ।
  26. حسن نصر الله.. قائد جعل من حزب الله قوة إقليمية, আল-জাযিরা।
  27. نصرالله نزدیک‌ترین متحد ایران و دشمن سرسخت اسرائیل که بود؟, ইউরোনিউজ।
  28. حسن نصر الله.. قائد جعل من حزب الله قوة إقليمية, আল-জাযিরা।
  29. দাউদ আবাদী, হামিদ, সাইয়্যেদ আযিয: জেন্দেগিনামা খুদগুফ্তেয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, ১৩৯১ (ফার্সি সন), পৃ: ১১।
  30. দাউদ আবাদী, হামিদ, সাইয়্যেদ আযিয: জেন্দেগিনামা খুদগুফ্তেয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, ১৩৯১ (ফার্সি সন), পৃ: ১১।
  31. حسن نصر الله.. قائد جعل من حزب الله قوة إقليمية, আল-জাযিরা।
  32. حسن نصرالله رهبر و الگوی جهان عرب, খাবারগুজারিয়ে জামহুরিয়ে ইসলামি।
  33. سید حسن نصرالله: سمبل مقاومت, ডিপ্লমাসি ইরান সাইট।
  34. حسن نصر الله.. قائد جعل من حزب الله قوة إقليمية, আল-জাযিরা।
  35. দাউদ আবাদী, হামিদ, সাইয়্যেদ আযিয: জেন্দেগিনামা খুদগুফ্তেয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, ১৩৯১ (ফার্সি সন), পৃ: ১২।
  36. দাউদ আবাদী, হামিদ, সাইয়্যেদ আযিয: জেন্দেগিনামা খুদগুফ্তেয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, ১৩৯১ (ফার্সি সন), পৃ: ১৪-১৯।
  37. زندگینامه: سید حسن نصرالله, হামশাহরিয়ে অনলাইন।
  38. নূরী, শিয়ানে লেবানন, ১৩৮৯ (ফার্সি সন), পৃ: ১৪৪।
  39. দাউদ আবাদী, হামিদ, সাইয়্যেদ আযিয: জেন্দেগিনামা খুদগুফ্তেয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, ১৩৯১ (ফার্সি সন), পৃ: ৩৪।
  40. حسن نصر الله.. قائد جعل من حزب الله قوة إقليمية, আল-জাযিরা।
  41. দাউদ আবাদী, হামিদ, সাইয়্যেদ আযিয: জেন্দেগিনামা খুদগুফ্তেয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, ১৩৯১ (ফার্সি সন), পৃ: ৩৪।
  42. سراسر مبارزه و مجاهدت شهید سید حسن نصرالله, খাবারগুজারিয়ে আল-আলাম।
  43. দাউদ আবাদী, সাইয়্যেদ আযিয: জেন্দেগিনামা খুদগুফ্তেয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, ১৩৯১ (ফার্সি সন), পৃ: ৩০।
  44. سید هادی نصرالله که بود؟, খাবারগুজারিয়ে বাইনুল মেলালিয়ে কুদস।
  45. খামেহইয়ার, حزب الله و سید حسن از جنگ‌های داخلی تا جنگ ۳۳ روزه, মুয়াসসেসেয়ে ফারহাঙ্গিয়ে তাহকিকাতিয়ে ইমাম মুসা সাদর।
  46. খামেহইয়ার, حزب الله و سید حسن از جنگ‌های داخلی تا جنگ ۳۳ روزه, মুয়াসসেসেয়ে ফারহাঙ্গিয়ে তাহকিকাতিয়ে ইমাম মুসা সাদর।
  47. খামেহইয়ার, حزب الله و سید حسن از جنگ‌های داخلی تا جنگ ۳۳ روزه, মুয়াসসেসেয়ে ফারহাঙ্গিয়ে তাহকিকাতিয়ে ইমাম মুসা সাদর।
  48. খামেহইয়ার, حزب الله و سید حسن از جنگ‌های داخلی تا جنگ ۳۳ روزه, মুয়াসসেসেয়ে ফারহাঙ্গিয়ে তাহকিকাতিয়ে ইমাম মুসা সাদর।
  49. حسن نصرالله رهبر و الگوی جهان عرب, খাবারগুজারিয়ে জামহুরিয়ে ইসলামি।
  50. حسن نصرالله رهبر و الگوی جهان عرب, খাবারগুজারিয়ে জামহুরিয়ে ইসলামি।
  51. حسن نصر الله.. قائد جعل من حزب الله قوة إقليمية, আল-জাযিরা।
  52. اعلام خبر شهادت سید حسن نصرالله در حرم مطهر رضوی, খাবারগুজারিয়ে, মেহর্।
  53. closer look at type of weaponry believed to have been used in Beirut attack, Al Jazeera Media Network, Accessed.
  54. تازه از ترور دبیرکل حزب‌الله لبنان, দুনিয়ায়ে একতেসাদ।
  55. تازه اسرائیل درباره جزئیات ترور سید حسن نصرالله, খাবারগুজারিয়ে আল-আলাম।
  56. پیام تسلیت به مناسبت شهادت جناب سید حسن نصرالله رضوان الله علیه دبیر کل شهید حزب‌الله لبنان, দাফতারে হেফয ও নাশরে আসরে হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনায়ী।
  57. منطقه‌ای و بین‌المللی به شهادت دبیرکل حزب‌الله لبنان, খাবারগুজারিয়ে মেহর্।
  58. مکارم شیرازی: امت اسلامی مجاهدت‌های شهید سید حسن نصرالله را فراموش نمی‌کند, খাবারগুজারিয়ে জামহুরিয়ে ইসলামি।
  59. پیام آیت‌الله نوری همدانی در پی شهادت سید حسن نصرالله, খাবারগুজারিয়ে জামহুরিয়ে ইসলামি।
  60. سبحانی شهادت سید مقاومت را تسلیت گفت, খাবারগুজারিয়ে ইসনা।
  61. تسلیت آیت‌الله العظمی شبیری زنجانی در پی شهادت سید حسن نصرالله, খাবারগুজারিয়ে রাসমিয়ে হাওযা।
  62. آیت الله جوادی آملی شهادت سید حسن نصرالله را تسلیت گفت, খাবারগুজারিয়ে জামহুরিয়ে ইসলামি।
  63. تسلیت آیت‌الله العظمی وحید خراسانی به مناسبت شهادت سید مقاومت, খাবারগুজারিয়ে রাসমিয়ে হাওযা।
  64. منطقه‌ای و بین‌المللی به شهادت دبیرکل حزب‌الله لبنان, খাবারগুজারিয়ে মেহর্।
  65. کوبا: ترور ناجوانمردانه دبیرکل حزب‌الله را به شدت محکوم می‌کنیم, খাবারগুজারিয়ে আল-আলাম।
  66. ادامه محکومیت جهانی ترور شهید سید حسن نصرالله (۱), খাবারগুজারিয়ে সেদা ও সিমা।
  67. مقاومت به شهادت سید حسن نصرالله, খাবারনেগারানে জাওয়ান।
  68. جهانی ترور شهید سید حسن نصرالله, খাবারগুজারিয়ে সেদা ও সিমা।
  69. پیام تسلیت به مناسبت شهادت جناب سید حسن نصرالله رضوان الله علیه دبیر کل شهید حزب‌الله لبنان, দাফতারে হেফয ও নাশরে আসরে হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনায়ী।
  70. اعلام ۳ روز عزای عمومی در لبنان, খাবারগুজারিয়ে আল-আলাম।
  71. منطقه‌ای و بین‌المللی به شهادت دبیرکل حزب‌الله لبنان, খাবারগুজারিয়ে মেহর্।
  72. مقاومت به شهادت سید حسن نصرالله, খাবারনেগারানে জাওয়ান।
  73. مقاومت به شهادت سید حسن نصرالله, খাবারনেগারানে জাওয়ান।
  74. راهپیمایی و خروش حوزویان و ملت داغدار قم در روز یکشنبه, খাবারগুজারিয়ে রাসমিয়ে হাওযা।
  75. سینماها و تئاترها تا اطلاع ثانوی تعطیل شدند, খাবারগুজারিয়ে ইসনা।
  76. شهرهای مختلف در سوگ شهید راه قدس/ ایران یک صدا در حمایت از لبنان و فلسطین, খাবারগুজারিয়ে মাশরেক্ব নিউজ।
  77. ادامه محکومیت جهانی ترور شهید سید حسن نصرالله (۱), খাবারগুজারিয়ে সেদা ও সিমা।
  78. تظاهرات مردم رام‌الله، عمان و مغرب در محکومیت ترور سید مقاومت لبنان, খাবারগুজারিয়ে আল-আলাম।
  79. در پاسخ به شهادت هنیه نصرالله و سرلشکر نیلفروشان قلب اراضی اشغالی هدف قرار گرفت, খাবারগুজারিয়ে জামহুরিয়ে ইসলামি।
  80. [১], মিউজিক সেন্টার, ইরান।
  81. نغمه‌هایی که به افتخار سید شهید حزب الله تولید شدند, খাবারগুজারিয়ে মেহর্।
  82. نماهنگ وقت مجازات در پی شهادت سید حسن نصرالله, খাবারগুজারিয়ে ইসনা।

গ্রন্থপঞ্জি