সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি

wikishia থেকে
সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি
লেবানন হিজবুল্লাহর দ্বিতীয় মহাসচিব
শহীদ সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি
শহীদ সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি
জন্ম তারিখ১৯৫২
যে শহরে জন্মনবী শীষ, বায়ালাবাক্
যে রাষ্ট্রে জন্মলেবানন
যে রাষ্ট্রে মৃত্যুতেফ্ফাহতা, লেবানন
শাহাদাতের তারিখ১৯৯২
সমাধিসৌধশাহরাকে নবী শীষ
সহধর্মিণী'র নামউম্মে ইয়াসির
সন্তানমুহাম্মাদ • ইয়াসির • হোসাইন ও এক কন্যা
ধর্মইসলাম
মাযহাবশীয়া
পদমর্যাদালেবানন হিজবুল্লাহর মহাসচিব
পরেসুবহি তুফাইলি
পূর্বেসাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ
শিক্ষকগণসাইয়্যেদ আবুল কাসেম খুয়ী, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ বাকের সাদর
ছাত্রবৃন্দসাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ


সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি (আরবিঃ السید عباس الموسوی) (১৯৫২-১৯৯২ ইং); লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনীর দ্বিতীয় মহাসচিব। প্রথমদিকে তিনি ফিলিস্তিনী যোদ্ধাদের পাশে ইসরাইল বিরোধী যুদ্ধে তৎপর ছিলেন। উচ্চতর শিক্ষার জন্য ইরাক সফরের পর সেখানে স্বৈরাচারী বাথ পার্টির সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। অতঃপর লেবাননে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি ‘হিজবুল্লাহ’ গঠন করে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সোচ্চার হন। সাইয়্যেদ মুসাভি ছিলেন সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ বাকির সদর ও ইমাম খোমেনি’র চিন্তাধারায় প্রভাবিত। ১৯৭৯ সালে তিনি ইরান সফরে ইমাম খোমেনির সাথে সাক্ষাত করেন। ১৯৯১ সালে লেবাননের হিজবুল্লাহ’র মহাসচিবের হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন এবং ১৯৯২ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি জায়নবাদী ইসরাইলের বিমান হামলায় শহীদ হন।

লেবানন ও নাজাফে শিক্ষা

সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি ১৯৫২ সালে লেবাননের বালবেক (بعلبک) অঞ্চলের ‘নাবি শাইস’ সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তিনি ১৯৬৬ সালে সূর শহরে ইমাম মুসা সদরের সাথে পরিচিত হন এবং তাঁর পরামর্শেই তিনি ঐ শহরে অবস্থিত হাওযা ইলমিয়া (মুআহহাদ আদ-দিরাসাতিল ইসলামিয়াহ)-তে ভর্তি হন এবং এ মাদ্রাসা থেকেই তাঁর ধর্মীয় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।[২] সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি ১৯৬৭ সালে উচ্চতর ধর্মীয় শিক্ষার জন্য নাজাফে যান এবং সেখানে সাইয়্যেদ আবুল কাসেম খুয়ী ও সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ বাকির সদরের মত মহান উস্তাদদের দরসে অংশগ্রহণ করেন।[৩] সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ বাকির সদরের সাথে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল এবং সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর সাথে তার পরিচয়ও সাইয়্যেদ সদরের মাধ্যমে হয়।[৪]

লেবাননে তৎপরতা

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ তার উস্তাদ সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি সম্পর্কে বলেন: তিনি ছিলেন একজন মুখলিছ (একনিষ্ট ও আন্তরিক) উস্তাদ, ছাত্রদের পড়াশুনার পাশাপাশি তাদের নৈতিক বিষয়গুলোকেও দেখতেন। তিনি ছিলেন তাকওয়া, নৈতিকতা ও ধর্মিকতার বাস্তব উদাহরণ ও অনুকরণীয় আদর্শ; একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আলেম, ক্লান্তিহীন, রাতের আঁধারে মহান প্রভুর দরবারে প্রার্থনা ও কান্নাকাটিতে অভ্যস্ত একজন মানুষ এবং রাসুল (স.) ও তাঁর আহলে বাইতের একজন একনিষ্ট প্রেমিক। সাইয়্যেদ মুহাম্মদ বাকির সদরের সাথে তার গভীর সম্পর্ক ছিল, ইমাম খোমেনির আনুগত্যকে জরুরি জ্ঞান করতেন, সৈয়দ আলী খামেনির সম্পূর্ণ অনুগত ছিলেন, জনগণের সেবায় ছিলেন অগ্রগামী, আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় পেতেন না এবং শাহাদাত পর্যন্ত প্রতিরোধের পথে আত্মত্যাগী ছিলেন।[৫] ইরাকে অবস্থানকালীন সময়ে সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি তৎকালীন ক্ষমতাসীন বাথ পার্টির সরকার বিরোধী তৎপরতার কারণে সরকারের পক্ষ থেকে চাপের মুখে ছিলেন। এ কারণে ১৯৭৯ সালে তিনি লেবাননে প্রত্যাবর্তন করতে বাধ্য হন।[৬] তিনি বালবেক শহরে ‘ইমামে মুন্তাযার’ নামক একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তার সহধর্মিনীও [নোট ১] মেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষার জন্য ‘আয-যাহরা’ নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।[৭] সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি, লেবাননের আলেমদের মাঝে অধিক সমন্বয় সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘তাজাম্মুউ উলামায়িল মুসলিমীন) প্রতিষ্ঠা করেন।[৮] ১৯৮২ সালে জায়নবাদী ইসরাইল কর্তৃক লেবাননের কিছু অংশ দখল করে নেয়ার ঘটনায় তিনি লেবানিজ কয়েকজন যুবকের সাথে ‘বুকা লুবনান’ (بقاع لبنان) নামক এক উপত্যকায় সমবেত হন এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য একটি দল গঠন করেন, পরিবর্তীতে যা ‘হিজবুল্লাহ’ নামে প্রসিদ্ধ হয়।[৯] ১৯৯১ সালের মে মাসে লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনী’র কেন্দ্রীয় শুরার পক্ষ থেকে হিজবুল্লাহর দ্বিতীয় মহাসচিব হিসেবে সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। তার পূর্বে ‘সুবহি তুফাইলি’ (صبحی طُفیلی) হিজবুল্লাহর মহাসচিব ছিলেন।[১০]

শাহাদাত

সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি ১৯৯২ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি, শেইখ রাগিব হারবের স্মরণে আয়োজিত বাৎসরিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে বৈরুতে ফেরার পথে ইসরাইলি বিমান হামলায় স্ত্রী ও সন্তানসহ শহীদ হন।[১১] তার গাড়ি বহরে হামলাকারী পাইলট ২০০৮ সালে[১২] এবং ইসরাইলি দৈনিক ইয়াদিউট আহারুনোট[নোট ২] ২০১২ সালে সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভিকে কিভাবে হত্যা করা হয় তার বিবরণ প্রকাশ করে।[১৩] তাঁর শাহাদাতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভিকে মহৎ, সাহসী, একনিষ্ট ও বিচক্ষণ নেতা বলে আখ্যায়িত করে তার সম্পর্কে বলেন: তিনি ছিলেন এমন এক ব্যক্তি, যিনি জ্ঞানকে আমলের মাধ্যমে, কথাকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এবং আত্মত্যাগকে বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে পরিপূর্ণ করেছেন।

গ্রন্থ পরিচিতি

সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি সম্পর্কে বহুসংখ্যক গ্রন্থ রচিত ও প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি তাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে বহু তথ্যচিত্র ও টিভি সিরিয়াল, সেগুলোর কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো: গোলাম রেযা গোলি যোওয়ারেহ রচিত ‘যেন্দেগি ওয়া মোবারেযাতে শাহীদ সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি’। ফাতেমা মুসলেহ যাদেহ রচিত ‘যুবারুল হাদিদ ২’।[১৫] ‘যায়তুনে সুরখ’ শিরোনামে প্রকাশিত ‘শাহেদে ইয়ারান’ মাসিক পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা। ‘যেন্দেগিয়ে খুব, মার্গে খুব’ তথ্যচিত্র; এটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ১নং চ্যানেলের ‘হেমাসে ওয়া দেফা’ গ্রুপের উদ্যোগে নির্মিত হয়, তথ্যচিত্রটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন। তথ্য চিত্র ‘যায়তুনে তালখ’: ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ‘তেহরান চ্যানেল’ (شبکه تهران)-এর উদ্যোগে নির্মিত ও সম্প্রচারিত হয়। তথ্যচিত্রটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন। টিভি সিরিয়াল ‘আল-গালিবুন ২’; সিরিয়ালটি প্রথমবারের মত ১৩৯২ ফার্সি সনের রমজান মাসে আল-মানার চ্যানেল থেকে সম্প্রচারিত হয়, পরবর্তী বছর ১৩৯৩ সালের রমজান মাসে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ‘আই-ফিল্ম চ্যানেল’ সিরিয়ালটি ফার্সি ডাবিং সম্প্রচারিত করে। সিরিয়ালটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি