লেবাননের হিজবুল্লাহ

wikishia থেকে
এই নিবন্ধটি লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রতিরোধ গোষ্ঠি সম্পর্কিত, হিজবুল্লাহ পরিভাষা সম্পর্কে জানতে হিজবুল্লাহ নিবন্ধটি
হিজবুল্লাহর অফিসিয়াল লোগো

লেবাননের হিজবুল্লাহ (আরবি: حزب الله لبنان); একটি শিয়া রাজনৈতিক ও সামরিক গোষ্ঠী যা ১৯৮২ সালে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সমর্থনে ইসরায়েলের মোকাবেলা করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই দলটি শাহাদাত পিয়াসী অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরোধী কাযক্রম শুরু করে। অতপর এটি তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কাতিউশা রকেট এবং গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে ইসরায়েলের মোকাবিলা শুরু করে।

এখন পর্যন্ত (২০২৪), হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যে ৩৩ দিনের যুদ্ধ সহ বেশ কয়েকটি সামরিক সংঘর্ষ হয়েছে। হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণ এবং আল-ওয়াদ আল-সাদিক নামে পরিচালিত অভিযানে হিজবুল্লাহর হাতে বন্দী দুই সৈন্যকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ইসরাইল এই যুদ্ধ শুরু করেছিল। এছাড়াও, আল-আকসা ঝড় অভিযানের পর, হামাস এবং গাজা উপত্যকার জনগণের প্রতি হিজবুল্লাহর সমর্থনের কারণে, ইহুদিবাদী সেনাবাহিনী এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ তীব্রতর হয়। এই উত্তেজনার মধ্যে, হিজবুল্লাহ ইসরায়েল কর্তৃক গাজার জনগণের হত্যা বন্ধ করার লক্ষ্যে অধিকৃত ইসরায়েলী অঞ্চলের উত্তরে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যায়। ইসরায়েলও হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন সদস্য ও কমান্ডারকে হত্যা করে। সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর আগে হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়েদ আব্বাস মুসাভিও ইহুদিবাদী শাসকদের হাতে শহিদ হন।

হিজবুল্লাহ সিরিয়াতেও দেশটির সরকারের সমর্থনে তাকফিরি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। এ সংগঠনটির সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও রয়েছে। আল-মানার টিভি চ্যানেলটি হিজবুল্লাহর।

সংগঠনটির গোড়াপত্তনের ইতিহাস

লেবাননের হিজবুল্লাহ ১৯৮২ সালে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সমর্থনে গঠিত হয়েছিল। প্রথমদিকে, এটি বেশ কয়েক বছর ধরে ইহুদিবাদী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে গোপনে কাজ করে। ১১ নভেম্বর, ১৯৮৪ তারিখে, আহমদ জাফর কাসির দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি সৈন্যদের বিরুদ্ধে একটি শাহাদাত পিয়াসী অভিযান পরিচালনা করেন এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নিহত হন। ১৬ই ফেব্রুয়ারী ১৯৮৫, শেইদা অঞ্চল থেকে পশ্চাদপসরন ইসরাইল প্রত্যাহার করার সাথে সাথে, হিজবুল্লাহ আহমদ জাফর কাসিরের শাহাদাত পিয়াসী অপারেশনের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের মোকাবেলা করার জন্য তার আদর্শ ও কৌশল ঘোষণা করে।

ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের অন্যতম কমান্ডার হোসেন দেহগানের মতে, ১৯৮২ সালে ইরান ও ইরাকের যুদ্ধে জেরুজালেম অপারেশনের পর ইসরাইল লেবাননে আক্রমণ করে। ইসরায়েলের মোকাবেলা করার জন্য লেবাননের বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে আইআরজিসি কমান্ডারদের একটি দল লেবাননে পাঠানো হয়েছিল। সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি, তারা ইরানের সাথে সম্পর্কিত গোষ্ঠীগুলির মধ্যে ঐক্য তৈরির জন্যও কাজ করেছিল, যা শেষ পর্যন্ত হিজবুল্লাহ গঠনের দিকে পরিচালিত করেছিল।

হিজবুল্লাহর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল নাঈম কাসিমের মতে, ইমাম খোমিনী (র.) এই দলগুলিকে লেবাননিজদেরকে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য পাঠিয়েছিলেন। অবশ্য, এর আগে আমাল আন্দোলনের সংগঠন ‘হিযবুদ্ দাওয়াহ, নামে বেকা আলেমদের জামাত এবং ইসলামী কমিটি ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে একক দল গঠনের জন্য একটি সমঝোতায় পৌঁছেছিল এবং এতে পরিকল্পনা ইমাম ইমাম খোমিনীও (র.) সমর্থন করেছিলেন।

নেতৃত্ব

হিজবুল্লাহর প্রথম মহাসচিব ছিলেন সুবহি তুফাইলি, যিনি ৫ই নভেম্বর, ১৯৮৯-এ এই পদে নির্বাচিত হন। এর আগে, দলটি সাত বছর ধরে একটি কাউন্সিল ভিত্তিক নেতৃত্বে পরিচালিত হতো। সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হোসাইন ফাযলুল্লাহ, সুবহি তুফাইলি, সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি, সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, নাঈম কাসেম, হোসাইন কুরানী, হোসাইন খালিল, মুহাম্মাদ রাদ, মুহাম্মাদ ফুনাইস, মুহাম্মাদ ইয়াজবেক এবং ইব্রাহিম আমিন হিজবুল্লাহর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন।

১৯৯১ সালের মে মাসে, সুবহি তুফাইলির বিরুদ্ধে মতবিরোধ ও সমালোচনার কারণে সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি হিজবুল্লাহর নতুন মহাসচিব নির্বাচিত হন। তিনি ১৬ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৯২-এ ইসরাইল কর্তৃক শহীদ হন এবং হিজবুল্লাহ কাউন্সিল সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহকে মহাসচিব নির্বাচিত করেন।

বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব

লেবাননে হিজবুল্লাহর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কতিপয় নিম্নরূপ-

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ

মুল নিবন্ধ: সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ
শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ

সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহ (শাহাদাত: ২০২৪) ছিলেন লেবাননে হিজবুল্লাহর তৃতীয় মহাসচিব এবং ১৯৮২ সালে এর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। তার সময়ে, হিজবুল্লাহ একটি আঞ্চলিক শক্তি হয়ে ওঠে এবং ২০০০ সালে ইসরাইলকে লেবানন থেকে পিছু হটতে এবং লেবাননের বন্দীদের মুক্তি দিতে বাধ্য করতে সক্ষম হয়। সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ২০২৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় শহীদ হন।

সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভী

মুল নিবন্ধ: সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি
শহীদ সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি

সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি হিজবুল্লাহর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং দ্বিতীয় মহাসচিব ছিলেন। সোভি তাফিলিকে অপসারণের পর তিনি ১৯৯১ সালে হিজবুল্লাহর মহাসচিব হন। ইতিপূর্বে তিনি ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীর সাথে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার মেয়াদ নয় মাসেরও কম ছিল এবং তিনি ইসরাইলের হাতে শহীদ হন।

সুবহি তুফাইলি

মুল নিবন্ধ: সুবহি তুফাইলি

শেখ সুবহি তুফাইলি (জন্ম: ১৯৪৮ সাল) লেবাননে হিজবুল্লাহর প্রথম মহাসচিব ছিলেন এবং ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৯৮ সালে তিনি সাওরা আল-জিয়া (ক্ষুধার্ত বিপ্লব) আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। তার সমর্থকরা কিছু সরকারী কেন্দ্রে হামলা চালায়, যার ফলে সংঘর্ষ হয় এবং অনেক লোক নিহত হয়। তিনি লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সমালোচকদের একজন ছিলেন।

ইমাদ মুগনিয়াহ

মুল নিবন্ধ: ইমাদ মুগনিয়াহ
শহীদ ইমাদ মুগনিয়াহ

হাজি রিজওয়ান নামে পরিচিত ইমাদ মুগনিয়াহ হিজবুল্লাহর বিশেষ কমান্ডারদের অন্যতম প্রধান ছিলেন। তিনি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সুরক্ষা এবং হিজবুল্লাহর বিশেষ অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি আল-ওয়াদ আল-সাদিক অপারেশনের ডিজাইনার এবং ইসরায়েলের সাথে ৩৩ দিনের যুদ্ধে হিজবুল্লাহর ফিল্ড কমান্ডার ছিলেন। ২০০৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দামেস্কে ইসরাইল তাকে শহীদ করে।

ইসরায়েলি দখলদারিত্বের মোকাবিলা

হিজবুল্লাহ ১৯৮৫ সালে তার মতাদর্শ এবং ইসরায়েলের মোকাবিলার কৌশল প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। প্রথম বছরগুলিতে হিজবুল্লাহর কার্যক্রম ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে শাহাদাত পিয়াসী অভিযান পরিচালনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল; কিন্তু ধীরে ধীরে এই পদ্ধতির পরিবর্তন হয়। হিজবুল্লাহর তৎকালীন মহাসচিব সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভির হত্যার প্রতিক্রিয়ায়, এই গোষ্ঠীটি প্রথমবারের মতো উত্তর ফিলিস্তিনের ইহুদিবাদী বসতিগুলোতে কাতিউশা রকেট নিক্ষেপ করে। হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল:

আল-ওয়াদ আল-সাদিক অভিযান

মুল নিবন্ধ: ৩৩ দিনের যুদ্ধ

২০০৬ সালে, হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধ শুরু হয়, যা তাম্মুজ যুদ্ধ বা ৩৩ দিনের যুদ্ধ নামে পরিচিত। হিজবুল্লাহর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ইসরাইল তিনজন লেবানিজ বন্দিকে মুক্তি না দেওয়ায় হিজবুল্লাহ ২০০৬ সালের জুলাই মাসে তাদের মুক্তির জন্য আল-ওয়াদ আল-সাদিক অভিযান পরিচালনা করে দুই ইসরায়েলি সৈন্যকে আটক করে। ইসরায়েল তার দুই বন্দীকে মুক্ত করতে এবং হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার জন্য লেবানন আক্রমণ করে। হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘর্ষটি একটি যুদ্ধে পরিণত হয়েছিল যা ৩৩ দিন ধরে চলেছিল।

জানুয়ারী ১৯৯৩ এর সংঘর্ষ

বৈরুতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহ সমর্থকদের বিজয় উল্লাস

২৫শে জুলাই, ১৯৯৩-এ, ইসরাইল হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণ এবং হিজবুল্লাহ ও জনগণের মধ্যে ফাটল তৈরি করার লক্ষ্যে লেবানন আক্রমণ করে এবং সেইসাথে হিজবুল্লাহকে রুখতে লেবানন সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এই আক্রমণটি হিজবুল্লাহর কঠিন প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল এবং এক পর্যায়ে উভয়দল ৩১ জুলাই, ১৯৯৩ তারিখে জুলাই চুক্তিটি গ্রহণ করেছিল। এই চুক্তির ভিত্তিতে, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিপরীতে এর অধিকৃত এলাকায় কাতিউশা মিসাইল নিক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকতে সম্মত হয়।

এপ্রিল ১৯৯৬ এর সংঘর্ষ

হিজবুল্লাহর সামরিক বাহিনী (১৯৯৬)

১১ই এপ্রিল, ১৯৯৬, ইসরাইল লেবাননের বিরুদ্ধে অপারেশন ক্লাস্টার অফ রেজ শুরু করে। এই অপারেশনটির দ্বিতীয় দিনে সাহমারের চারটি গণহত্যা, তৃতীয় দিনে মনসুরি অ্যাম্বুলেন্সে হামলা, সপ্তম দিনে নাবাতিহ ফুকা এবং ক্বানা-এ হামলার দ্বারা আলোচনায় উঠে আসে। এই হামলায় হিজবুল্লাহ বাহিনীর ১৪ সদস্যসহ ২৫ জন শহীদ হন। অপারেশনটি ষোল দিন ধরে চলে এবং অবশেষে এপ্রিল মাসে ইসরায়েল হিজবুল্লাহ এর সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছায়। এই চুক্তিতে, ইসরাইল বেসামরিক লোকদের উপর হামলা করা থেকে বিরত থাকতে এবং শুধুমাত্র প্রতিরোধ শক্তির সাথে সামরিক সংঘর্ষে লিপ্ত হতে সম্মত হয়েছিল।

অপারেশন আনসারিয়া

হিজবুল্লাহ ৫/৯/১৯৯২ তারিখে ইসরায়েলি কমান্ডোদের নৌ আগ্রাসনের মোকাবিলায় আনসারিয়া অপারেশন পরিচালনা করে, যার ফলে ১৭ জন জায়নবাদী নিহত ও আহত হয়।

বন্দীদের মুক্ত করা

দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের পর হিজবুল্লাহর কিছু সদস্য যেমন- মোস্তফা দেরানি এবং শেখ আব্দুল করিম উবাইদ ইসরায়েলি কারাগারে ছিল। হিজবল্লাহ ৭ই অক্টোবর, ২০০০-এ দক্ষিণ লেবাননের শাবয়া অঞ্চলে একটি অভিযান চালিয়ে তিন ইসরায়েলি সৈন্যকে বন্দী করে এবং বৈরুতেও একজন ইসরায়েলি কর্নেলকে গ্রেপ্তার করে। ইসরাইল তাদেরকে মুক্ত করতে বেশ কয়েকজন লেবানিজ ও ৪০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয় এবং ৫৯ জন শহীদের মরদেহ হস্তান্তর করে। অনুরূপভাবে, ইসরাইল ২৪ জন নিখোঁজ ব্যক্তির চিহ্নও প্রকাশ করে এবং লেবাননের সীমান্তে যে মাইনগুলি পুতে ছিল তার ছক হস্তান্তর করে।

হিজবুল্লাহ ২০০৮ সালে ৩৩ দিনের যুদ্ধের সূত্র ধরে জার্মানির মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে অবশিষ্ট লেবানিজ বন্দীদের মুক্তি করে। অনুরূপভাবে, ইসরায়েল ৩৩ দিনের যুদ্ধে হিজবুল্লাহর শহীদদের মৃতদেহ এবং লেবানন ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের বাকি শহীদদের মৃতদেহ, সেইসাথে দালাল মাগরেবি এবং তার দলের ১২ জনের লাশও হস্তান্তর করে।

আল-আকসা ঝড় অভিযানের পর হামাস এবং গাজার জনগণকে সমর্থন করা আল-আকসা ঝড় অভিযান এবং ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে ইসরায়েল কর্তৃক গাজা উপত্যকার জনগণকে হত্যা ও বোমা হামলার পর, হিজবুল্লাহ ফিলিস্তিনি জনগণের সমর্থনে অধিকৃত অঞ্চলের উত্তরে ইসরায়েলি সামরিক অবস্থানগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করে। হামাস এবং ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি হিজবুল্লাহর সমর্থন হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে দ্বন্দ্বকে আরও তীব্র করেছে। আল-আলাম নেটওয়ার্কের মতে, আল-আকসা ঝড় অভিযানের পরবর্তী ১৩৩ দিনের মধ্যে, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিন এবং হামাসের প্রতিরক্ষায় ১০৩৮ টিরও বেশি অপারেশন চালিয়েছে এবং এতে কমান্ডারসহ হিজবুল্লাহর ৩১৬ জন সদস্য শাহাদাতবরণ বরেছে। এরপর ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ ইসরাইল বৈরুতে হিজবুল্লাহর সদর দপ্তরে হামলা চালিয়ে দলটির সর্বোচ্চ কর্মকর্তা সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহকেও (র.) শহীদ করে।

সিরিয়ায় আইএসআইএসের বিরুদ্ধে উপস্থিতি

হিজবুল্লাহ আইএসআইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সিরিয়া সরকারকে সাথে সহযোগিতা করেছে। সিরিয়ায় অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর, হিজবুল্লাহ সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সাথে তাকফিরিদের সাথে যুদ্ধ করে। আল-কাসিরের মুক্তি ছিল সিরিয়ায় হিজবুল্লাহর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিজয়।

রাজনৈতিক কর্মকান্ড

হিজবুল্লাহ ১৯৯২ সালে প্রথমবারের মতো লেবাননের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং সংসদে বারোটি আসন জিতেছিল। ১৯৯৬ সালে, দশটি এবং ২০০০ সালে, লেবাননের পার্লামেন্টের ১২৮টি আসনের মধ্যে বারোটি আসন জিতেছিল। ২০০৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে, ১৪ টি আসন এবং দক্ষিণ লেবাননে আমাল আন্দোলনের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে ২৩টি আসন জিতে এবং মোহাম্মদ ফেনিশকে পানি ও জ্বালানি মন্ত্রী হিসাবে মন্ত্রিসভায় পাঠায়।

এরপর, হিজবুল্লাহ ৮ মার্চ জোটের অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০০৫ সালে, হারিরির হত্যার পর লেবাননের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ৮ মার্চ জোটটি ২০০৫ সালে বৈরুতে হিজবুল্লাহর সমাবেশের পরে এই গোষ্ঠীর নিরস্ত্রীকরণের বিরোধীতা, সিরিয়ার প্রতি সমর্থন এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল। জোটের অন্যতম সদস্য হিজবুল্লাহ, আমাল এবং ফ্রি খ্রিস্টান পার্টি এর সাথে পরবর্তীতে অন্যান্য দল যেমন- লেবানিজ ইসলামিক পার্টি, তাওহিদে ইসলামি আন্দোলন (সুন্নি) এবং লেবানিজ ডেমোক্রেটিক পার্টি যুক্ত হয়েছিল।

একই সময়ে, আমেরিকা, ফ্রান্স, সৌদি আরব এবং মিশরের মতো দেশের সমর্থনে, লেবাননে ১৪ মার্চ জোট গড়ে ওঠে যা লেবানন থেকে সিরিয়াকে প্রত্যাহার এবং প্রতিরোধ গোষ্ঠির নিরস্ত্রীকরণের দাবি জানিয়েছিল। মুস্তাক্ববাল আন্দোলন (সুন্নি), হিজব্ আল-কাতাইব এবং লেবাননের বাহিনী (খ্রিস্টান) এবং লেবাননের প্রগতিশীল সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ছিল এই জোটকে সমর্থনকারী প্রধান দল।

সামাজিক কর্মকান্ড

হিজবুল্লাহর মূল ফোকাস ইসরায়েলি আগ্রাসন প্রতিহত করা; তদুপরি, এই গোষ্ঠিটির সামাজিক কার্যক্রমও রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি হল-

  • ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি পুনর্গঠনের জন্য নির্মাণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা,
  • ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সালের পর্যন্ত বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে শহুরে বর্জ্য সংগ্রহ,
  • বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে পানীয় জলের ব্যবস্থা
  • কৃষি কার্যক্রম
  • ইসলামী স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠা এবং অসংখ্য চিকিৎসা ও হাসপাতাল কেন্দ্র নির্মাণ,
  • শিক্ষার্থীদের শিক্ষামূলক সেবা ও সহায়তা প্রদান,
  • শহীদদের পরিবারকে সেবা প্রদানের জন্য শহীদ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা,
  • বঞ্চিতদের সহায়তার জন্য ইসলামী দাতব্য ত্রাণ কমিটি প্রতিষ্ঠা করা।

মিডিয়া

  • আল-মানার টিভি চ্যানেল (প্রতিষ্ঠাঃ ১৯৯১),
  • রেডিও নুর (প্রতিষ্ঠাঃ ১৯৮৮),
  • হাফ্তেহনামা আল-আহাদ,
  • দক্ষিণ লেবাননের ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা,
  • হিজবুল্লাহর মিডিয়া কমিউনিকেশন ইউনিটের ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা।

সমর্থক ও বিরোধী

বিশ্বব্যাপী হিজবুল্লাহর সমর্থক রয়েছে। হিজবুল্লাহর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক ইরান ও সিরিয়া। রাশিয়াও হিজবুল্লাহকে একটি বৈধ সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে। ইরান হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠায় এবং তার বাহিনীর সামরিক প্রশিক্ষণে ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়াও, ইরান লেবাননে ইসরায়েলের হামলার ফলে সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষ পুনর্নির্মাণের জন্য লেবানন পুনর্গঠন সদর দপ্তর গঠন করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আরব লীগের রাষ্ট্রসমূহ, পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ এবং... হিজবুল্লাহ বা এর সামরিক শাখাকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে, হিজবুল্লাহর সমর্থকরা ইসরায়েলি দখলদারিত্ব এবং হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, সেইসাথে লেবাননের সেনাবাহিনীর ইসরায়েলের মোকাবেলায় সামরিক অক্ষমতার কারণে হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করে না এবং তাদের মতে এখনও হিজবুল্লাহর হাতে অস্ত্র থাকা উচিত।

গ্রন্থপরিচিতি

হিজবুল্লাহ নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে। তাদের মধ্যে লেবাননের হিজবুল্লাহর অন্যতম নেতা নাঈম কাসিমের লেখা হিজবুল্লাহ আল-মানহাজ আত-তাজরুবাতু আল-মুস্তাকবালু লুবনানি ওয়া মুকাওয়ামাতিহি ফিল ওয়াজিহাতি বইটি উল্লেখযোগ্য। এই বইটিতে হিজবুল্লাহর ইতিহাস, লক্ষ্য ও কর্মকাণ্ড প্রতিফলিত হয়েছে। এই বইটি লেবাননের হিজবুল্লাহ নীতি, তার অতীত এবং ভবিষ্যত শিরোনামে ফারসি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

  • https://www.yjc.ir/fa/news/8131552 বশগাহে খাবারনেগারিয়ে জাওয়ান, তারিখঃ ১১/০২/১৪০২ (সৌরবর্ষ)।
  • https://www.noormags.ir/view/fa/articlepage/211569 মুতালেয়াতে রাহবুর্দীয়ে বাসিজ, শোমারে-২৯, ১৩৮৪ (সৌরবর্ষ)।
  • ইমাম খোমিনী, সহিফায়ে ইমাম, তেহরান, মুয়াসসেসেয়ে তানযিম ও নাশরে আসারে ইমাম খোমিনী, ১৩৭৮ (সৌরবর্ষ)।
  • হিজবুল্লাহে লুবনান খাত্তে মাসি গুজাশ্তে ও অয়ান্দেয়ে অন, শেইখ নাঈম কাসেম; অনুবাদঃ মুহাম্মাদ মাহদী শারিয়াতমাদারী, তেহরান, ইন্তেশারাতে ইত্তেলায়াত, ১৩৮৩ (সৌরবর্ষ)।
  • নাঈম কাসেম, হিজবুল্লাহ আল-মানহাজু আত্-তাজরুবাতুল মুস্তাক্ববাল, বৈরুত, দারুল হাদি, ১৪২৩ হি।
  • http://www.rahmag.ir/content.php?id=291 নাশরিয়্যেয়ে ফারহাঙ্গিয়ে তাহলিলিয়ে রাহ, শোমারে-৪১, ১৩৮৮ (সৌরবর্ষ)।
  • https://hawzah.net/fa/Magazine/View/5211/7609/95477 পাসদারে ইসলাম, শোমারে-৬৭, ১৩৬৭ (সৌরবর্ষ)।
  • হোসাইনী, সাইয়্যেদ ইমাদ, সেইরে তাহাউল দার রাহবারি আইডিওলুজিয়ে হিজবুল্লাহ, শাহরাওয়ান্দ, শোমারে-৪৮, ১৩৮৭ (সৌরবর্ষ)।
  • যামানী মাহজুব, মাহমুদ https://hawzah.net/fa/Magazine/View/5211/7609/95477 তাসিরে নেগারেশে মাঅনাভী বার পিরুজিয়ে মুকাভেমাতে হিজবুল্লাহ, মায়ারেফ, শোমারে-৫৮, ১৩৯২ (সৌরবর্ষ)।