সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ

wikishia থেকে
সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ
লেবাননের হিজবুল্লাহ মহাসচিব
সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ
সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ
উপাধিপ্রতিরোধ নেতা
জন্ম তারিখ১৯৬০ খ্রি.
যে শহরে জন্মশাহরাক আল-বাযুরিয়া
যে রাষ্ট্রে জন্মলেবানন
মৃত্যুর তারিখ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি.
যে রাষ্ট্রে মৃত্যুলেবানন
সহধর্মিণী'র নামফাতেমা ইয়াসিন
সন্তানমুহাম্মাদ হাদী • মুহাম্মাদ জাওয়াদ • মুহাম্মাদ আলী • যায়নাব
ধর্মইসলাম
মাযহাবশীয়া
পেশাধর্মীয় আলেম • রাজনীতিবিদ
পদমর্যাদালেবাননের হিজবুল্লাহ মহাসচিব
শিক্ষকগণসাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি • সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ বাকের সাদর


সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ (আরবি: سید حسن نصرالله) (১৯২৪ - ১৯৬০ খ্রি.) হচ্ছেন লেবাননের বিশিষ্ট শিয়া আলেম ও রাজনীতিবিদ, লেবাননের হিজবুল্লাহর তৃতীয় মহাসচিব এবং এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। হিজবুল্লাহর দ্বিতীয় মহাসচিব সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভির (শাহাদাত: ১৯৯২ খ্রি.) শাহাদাতের পর তিনি দলটির তৃতীয় মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ আঞ্চলিক শক্তিতে রুপান্তরিত হয়। ইসরাইলি দখলদারিত্বের হাত থেকে ২০০০ সালে দক্ষিণ লেবাননকে মুক্ত করা এবং ২০০৬ সালে ৩৩ দিনের যুদ্ধে বিজয় অর্জন নাসরুল্লাহ মহাসচিব থাকাকালীন সময়ে সংঘটিত হয়েছে। এ কারণেই তাকে ‘সাইয়্যেদ-এ মুকাওয়েমাত’ (প্রতিরোধ নেতা) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি প্রতিরোধের কারণে এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে কয়েকবার বিজয় লাভ করার কারণে ব্যাপক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব বা আরব ও মুসলিম জাহানের নেতা এবং আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।

হাসান নাসরুল্লাহ নাজাফের হাওযা ইলমিয়ার ছাত্র। নাজাফে সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ বাকের সাদর এবং সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভির সাথে সম্পর্ক তাকে ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে প্রবেশ করায়। সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ‘আমাল আন্দোলন’ (جنبش امل)-এর সাথে যুক্ত ছিলেন; কিন্তু ১৯৮২ সালে একদল সংগ্রামী আলেমের সাথে ঐ আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভির শাহাদাতের পর ১৯৯২ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারীতে হিজবুল্লাহর সকল সদস্যের ঐক্যমতের ভিত্তিতে দলটির মহাসচিব নির্বাচিত হন।

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ২০২৪ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর, রোজ শুক্রবার দক্ষিণ লেবাননের বৈরুতের যাহিয়া এলাকায় ইসরাইল বাহিনী কর্তৃক একের পর এক বোমা হামলায় শাহাদাত বরণ করেন। তার শাহাদাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী, সাইয়্যেদ আলী সিস্তানি, নাসের মাকারেম শিরাজি, হুসাইন নূরে হামেদানি’র ন্যায় মারজায়ে তাক্বলীদগণ ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকার ও উর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গ এবং প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো যেমন: হামাস, ফিলিস্তিনের ইসলামী জিহাদ আন্দোলন, ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলন, ফাতাহ আন্দোলন, আসায়েবে আহলে হাক্ব, লেবাননের আমাল আন্দোলন, ইরাকের জারইয়ানে হিকমতে মিল্লি, ইরাকের জারইয়ানে হিকমতে সাদর বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ’র শাহাদাতে শোক প্রকাশ করাসহ ইসরাইলি হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। ইরানে ৫ দিন এবং লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনে ৩ দিন সাধারণ শোক ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের মানুষ এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।

নাসরুল্লাহকে তার শাহাদাতের পূর্বে ২০০৪, ২০০৬, ও ২০১১ সালে কয়েকবার ইসরাইলি বাহিনীর পক্ষ থেকে হত্যার চেষ্টা করা হয় এবং প্রতিবারই তিনি অক্ষত অবস্থায় বেঁচে গিয়েছিলেন।

তার বড় সন্তান, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হাদী ও ১৯৯৭ সালে ইসরাইলি বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে শাহাদাত বরণ করেন।

প্রতিরোধ নেতা এবং ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম

লেবাননের অন্যতম ‍বিখ্যাত ও স্বীকৃতি ব্যক্তিত্ব হাসান নাসরুল্লাহ, ২০০০ সালে দীর্ঘ ২২ বছরের ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে দক্ষিণ লেবাননের মুক্তিতে এবং একইভাবে ৩৩ দিনের যুদ্ধে বিজয়ে তার এবং হিজবুল্লাহর ভূমিকার জন্য সাইয়্যেদ-এ মুকাওয়েমাত (প্রতিরোধের নেতা) উপাধিতে ভূষিত হন।[২] এছাড়াও লেবানীজ বন্দিদের মুক্তিতে এবং ইসরাইলের নিকট থেকে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের লাশ ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।[৩]

নাসরুল্লাহ, প্রতিরোধের কারণে ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে কয়েকবার বিজয় লাভ করার কারণে আরব ও মুসলিম জাহানের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব,[৪] আরব বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা[৫] এবং আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে খ্যাতিমান ও প্রভাবশালী নেতা[৬] হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। মুসলিম ও আরব বিশ্বে জনপ্রিয়তার কারণ হিসেবে তার বীরত্বপূর্ণ বক্তব্য ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বকে বিবেচনা করা হয়।[৭] ইউরো নিউজের পক্ষ থেকে নাসরুল্লাহকে ইরানের সবচেয়ে ঘনিষ্ট মিত্র এবং ইসরাইলের কট্টর দুশমন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।[৮]

হিজবুল্লাহর মহাসচিব

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভির শাহাদাতের পর ১৯৯২ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারীতে হিজবুল্লাহর সকল সদস্যের ঐক্যমতের ভিত্তিতে মহাসচিব নির্বাচিত হন।[৯] তিনি ৩২ বছর বয়সে হিজবুল্লাহর মহাসচিব পদে অধিষ্ঠিত হন।[১০]বলা হয় যে, সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ’র নেতৃত্বকালীন সময়ে হিজবুল্লাহ আঞ্চলিক শক্তিতে রুপান্তরিত হয়[১১] এবং যায়নবাদী সরকারের নিকট থেকে কতকগুলো বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ২০০০ সালে দক্ষিণ লেবাননকে মুক্ত করা, ২০০৬ সালে ৩৩ দিনের যুদ্ধে বিজয় এবং ২০১৭ সালে সন্ত্রাসী দলগুলোর পরাজয়ের কথা উল্লেখিত হয়েছে।[১২] ২০০৪ সালে ইসরাইলের হাত থেকে লেবানিজ বন্দীদের মুক্তি এবং প্রতিরোধ যোদ্ধাদের লাশগুলো উদ্ধারের ক্ষেত্রে সাইয়্যেদ হাসানের ভূমিকাকে অপরিহার্য ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়।[১৩] হাসান নাসরুল্লাহ মহাসচিব থাকাকালীন সময়ে হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয় এবং দলটির কয়েকজন সদস্য লেবাননের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।[১৪] ইসরাইলের হত্যার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু ছিলেন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ এবং বলা হয় যে, ২০০৬ সাল হতে[১৫] ইসরাইলি বাহিনীর পক্ষ থেকে হত্যার হুমকির কারণে আত্মগোপনে থাকতেন।[১৬] তাঁর বক্তব্যগুলোও ভার্চুয়ালী ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হতো।[১৭]তিনি হিজবুল্লাহকে আমেরিকা এবং ইসরাইলের দখলদারিত্ব পরিকল্পনাসমূহের প্রধান অন্তরায় হিসেবে মনে করতেন।[১৮]

প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সাথে সম্পর্ক

লেবাননের হিজবুল্লাহ মহাসচিব হিসেবে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ সর্বদা প্রতিরোধ অক্ষের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। তিনি ইরানের নেতৃবৃন্দ ও হামাসের ন্যায় ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর মিত্র ছিলেন।[৯] তুফান আল-আকসা অভিযানের পর গাজায় ইসরাইলি হামলার ঘটনায় তিনি ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সমর্থন ও সহযোগিতার লক্ষ্যে দক্ষিণ লেবাননে একটি ফ্রন্ট তৈরি করেন এবং ঘোষণা দেন যে, গাজা যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত এই ফ্রন্ট অব্যাহত থাকবে।[২০] তিনি মহাসচিব থাকাকালীন সময়ে লেবাননের আমাল আন্দোলনের সাথেও লেবাননের হিজবুল্লাহর চমৎকার ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।[২১]

ইরানের সাথে সম্পর্ক

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ’র ইরান এবং এর নেতৃবৃন্দের সাথে ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।[২২] তিনি অনেকবার ইরান সফর করেছেন এবং ইরানি নেতৃৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। তিনি ১৩৬০[২৩] অথবা ১৩৬১ ফার্সি সনে হুসাইনিয়া-এ জামারানে (জামারান ইমামবাড়ি) প্রথমবার ইমাম খোমেনীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। ১৩৬৫ ফার্সি সনেও হিজবুল্লাহর সদস্যদের সাথে ইমামের সাক্ষাতে যান। ইমাম খোমেনীর সাথে তার সর্বশেষ সাক্ষাতটিও ইমাম খোমেনীর মৃত্যুর কয়েক মাস পূর্বে এবং আমাল আন্দোলনের সাথে হিজবুল্লাহর দ্বন্দের সময়ে হয়েছিল।[২৫] অনুরূপভাবে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর নিজের বর্ণিত জীবনীতে এসেছে, আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ১৩৬৫ ফার্সি সন থেকে শুরু হয়।[২৬] তিনি বহুবার কাসেম সোলাইমানি ও হুসাইন আমীর আব্দুল্লাহিয়ানের (সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ন্যায় ইরানের উর্ধ্বতন সামরিক ও কুটনৈতিক কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাত করেছেন।[২৭] নাসরুল্লাহ ইরানকে নিজের বন্ধু এবং হিজবুল্লাহর সমর্থক জ্ঞান করতেন এবং অন্যদিকে নিজেও ইরানের পাশে দাঁড়াতেন।[২৮]উদাহরণস্বরূপ ২০২৪ সালে এপ্রিল মাসে দামেস্কে অবস্থিত ইরানি কনস্যুলেটে ইসরাইলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ইরানের অধিকারের বিষয়টিকে সমর্থন করেন এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের জবাব সুনিশ্চিত জ্ঞান করেছিলেন।[২৯] তিনি ইরানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে গৌরব হিসেবে গণ্য করতেন। হাসান নাসরুল্লাহ ২০০৯ সালের নভেম্বরে হিজবুল্লাহর নতুন রাজনৈতিক সনদ ঘোষণা এবং উপস্থাপন করেন যেখানে ইরানে বেলায়েতে ফকিহ’র প্রতি হিজবুল্লাহর অঙ্গিকার গোষ্ঠীটির অন্যতম মৌলিক নীতি হিসেবে গণ্য হয়েছিল।[৩১] আল-জাজিরা[৩২ ও ইউরো নিউজ চ্যনেলের[৩৩] ভাষ্যমতে, কোন কোন বিশেষজ্ঞ ও হিজুল্লাহ বিরোধীরা নাসরুল্লাহ এবং তার দলকে লেবাননে ইরানের এজেন্ট ও প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করেন।

জীবনী ও শিক্ষা

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, ১৯৬০[৩৫] অথবা ১৯৬২ সালের[৩৬] ৩১শে আগস্ট পূর্ব বৈরুতের কোন একটি মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন।[৩৭] তার পিতা সাইয়্যেদ আব্দুল করিম এবং মাতা নাহদিয়া সাফিউদ্দিন[৩৮] ছিলেন দক্ষিণ লেবাননের আল-বাযুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা, যারা পরবর্তীতে বৈরুতে চলে গিয়েছিলেন।[৩৯] কোন কোন সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি বাযুরিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন।[৪০] তিন ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ সবার বড়।[৪১] কিশোর বয়সে তিনি তার ভাইদের সাথে বাবার মুদির দোকানে কাজ করতেন।[৪২] নাসরুল্লাহ তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন আল-তারবিয়্যাহ এলাকার আল-নাজাহ স্কুলে এবং ১৯৭৫ সালে লেবাননে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে পরিবারের সাথে বাযুরিয়া গ্রামে চলে যান এবং উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনা সুর শহরে অব্যাহত রাখেন।[৪৩] সাইয়্যেদ হাসানের নিজের ভাষ্যানুসারে, শৈশব থেকেই হাওযা ইলমিয়্যাহ ও রুহানিয়্যাতের প্রতি টান ছিল; কিন্তু তার পিতা-মাতা এর বিপক্ষে ছিলেন।[৪৪] তিনি ১৯৭৬ সালে সুর শহরের জুম্মার খতিব ও সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ বাকের সাদর-এর অন্যতম ছাত্র সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ গারউয়ি’র উৎসাহে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য নাজাফ শহরে যান। সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ একটি চিঠিতে সাইয়্যেদ হাসানকে আয়াতুল্লাহ সাদরের নিকট পরিচয় করিয়ে দেন। আয়াতুল্লাহ সাদরও সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ’র পড়াশোনার অবস্থা ও চাহিদা মেটানোর বিষয়টি দেখভাল করার জন্য সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভিকে নিযুক্ত করেন।[৪৫] সাইয়্যেদ হাসান ১৯৭৮ সালে হাওযার প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ সম্পন্ন করেন এবং নাজাফে দু’বছর অবস্থান করার পর ইরাকের বাথ সরকারের চাপের কারণে[৪৬] লেবাননে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে বা’লাবাক শহরে ‘ইমাম মুন্তাযার মাদ্রাসা’ প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানেই ধর্মীয় পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন এবং পাশাপাশি তিনি পাঠদানেও মগ্ন হন।[৪৭]

তিনি ধর্মীয় শিক্ষার জন্য ১৯৮৯ সালে[৪৮] অথবা ১৯৯০ সালে[৪৯] এক বছরের জন্য[৫০] কোম সফর করেন। এই সময়টাতে তিনি সাইয়্যেদ মাহমুদ হাশেমি, সাইয়্যেদ কাযেম হায়েরি এবং মুহাম্মাদ ফাযেল লাঙ্কারানির দারসে অংশগ্রহণ করেন।[৫১]নাসরুল্লাহ’র কোম থেকে লেবাননে ফিরে যাওয়ার দলিল হিসেবে আমাল আন্দোলনের সাথে হিজবুল্লাহর মতপার্থক্য বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে ছড়ানো গুজবসমূহকে মনে করা হয়।[৫২] নাসরুল্লাহ শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সামরিক ও গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।[৫৩]

স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি

হাসান নাসরুল্লাহ ১৯৭৮ সালে ১৮ বছর বয়সে ফাতেমা ইয়াসিনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ঘর আলো করে আসে মুহাম্মাদ হাদি, মুহাম্মাদ জাওয়াদ এবং মুহাম্মাদ আলী নামে তিন পুত্র এবং জয়নাব নামের এক কন্যা সন্তান।[৫৪] তার বড় সন্তান সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হাদি ১৯৯৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর লেবাননের দক্ষিণে ইসরাইলি বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে শাহাদাত বরণ করেন। তার লাশ যায়নবাদিদের হাতে পড়ে এবং এক বছর পর ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে বিনিময় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লেবাননে ফিরিয়ে আনা হয়।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং দায়িত্ব: আমাল আন্দোলন থেকে হিজবুল্লাহ পর্যন্ত

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ তার জীবনের প্রথম থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত হন। তার উল্লেখযোগ্য রাজনৈতক কর্মকাণ্ডগুলো নিম্নরূপ:

  • ইমাম মুসা সাদরের প্রতি টান থাকার কারণে ১৯৭৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর আমাল আন্দোলনে যোগদান করেন এবং তার ভাই সাইয়্যেদ হুসাইনের সাথে দলটির পক্ষ থেকে বাযুরিয়া উপশহর অঞ্চলের নেতা নিযুক্ত হন।[৫৬]
  • ১৯৮২ সালে তিনি আমাল আন্দোলনের রাজনৈতিক কমিটির সদস্য হন এবং বেকা অঞ্চলের রাজনৈতিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[৫৭]
  • ১৯৮২ সালে ইসরাইলি বাহিনী কর্তৃক পর্যায়ক্রমে লেবানন দখল এবং

আমাল আন্দোলনের কোন কোন নেতার পক্ষ থেকে ইসরাইল ও লেবাননের মধ্যে সন্ধি প্রস্তাবনায় সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি ও সুবহি তুফাইলা’র ন্যায় একদল সংগ্রামী ধর্মীয় আলেমের সাথে হাসান নাসরুল্লাহ আমাল আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হন এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ’র প্রথম বীজ বপন করেন।[৫৮]

  • ১৯৮৫ সালে বেকা অঞ্চলে হিজবুল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হন।[৫৯]
  • ১৯৮৭ সালে হিজবুল্লাহ’র নির্বাহী কমিটির প্রধান এবং হিজবুল্লাহ’র সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কাউন্সিলের সদস্য হন।[৬০]
  • তিনি ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে কোমে অবস্থানকালীন সময়ে তেহরানে হিজবুল্লাহ’র প্রতিনিধি এবং ইরানে হিজবুল্লাহ’র কার্যক্রমের বিষয়টি দেখাশোনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।[৬১]
  • ১৯৯২ সালে সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি নিহত হলে হিজবুল্লাহ’র মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন।[৬২]

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি