হযরত ঈসার প্রত্যাবর্তন
হযরত ঈসার প্রত্যাবর্তন; ইমাম মাহদি (আ.)-এর আত্মপ্রকাশকালীন সময়ের অন্যতম অবশ্যম্ভাবী ঘটনা। শেষ জামানায় হযরত ঈসা (আ.) প্রত্যাবর্তন করবেন বলে মুসলমান ও খ্রিস্টানরা আকীদা পোষণ করেন। এই বিষয়টি ইঞ্জিলের বিভিন্ন স্থানে এসেছে এবং কুরআনের কিছু কিছু তাফসীরকারকের বিশ্বাস হচ্ছে, কুরআনের আয়াতও শেষ জামানায় হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রত্যাবর্তনের প্রতি ইঙ্গিত করে। শিয়া রেওয়ায়েতগুলোতে, হযরত ঈসার (আ.) প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্য হিসেবে ইমাম মাহদি (আ.)-কে সহযোগিতা করার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে। সুন্নি রেওয়ায়েত অনুসারে, হযরত ঈসা প্রত্যাবর্তনের পর নিজেকে ইমাম মাহদি (আ.)-এর উজির (উচ্চপদস্থ মন্ত্রী বা উপদেষ্টা) হিসেবে পরিচয় করবেন। শিয়া ও সুন্নি সূত্রগুলোতে, হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রত্যাবর্তনের স্থান হিসেবে বিভিন্ন স্থানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন: মক্কা, দামেস্ক ও বাইতুল মুকাদ্দাস প্রভৃতি স্থান হতে পারে বলে ইশারা করা হয়েছে। শিয়া ও সুন্নিদের মুস্তাফিয হাদিসের (যে বর্ণনাকারীর সংখ্যা একাধিক তবে মুতাওয়াতির হাদিস বর্ণনাকারীর সংখ্যার চেয়ে কম) ভিত্তিতে, হযরত ঈসা প্রত্যাবর্তনের পর শিয়াদের দ্বাদশ ইমামের ইমামতিতে নামায আদায় করবেন। অন্য কিছু কিছু রেওয়ায়েতে দাজ্জালের নিহত হওয়া এবং ইয়াজুজ ও মাজুজের হত্যার বিষয়কে ঈসার (আ.) সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে; তবে, হাওযা ইলমিয়ার গবেষক নাজমুদ্দীন তাবাসি মনে করেন, আহলে বাইতের প্রতি বনি উমাইয়া বিদ্বেষ পোষণ করার কারণে, এই বিষয়টিকে হযরত ঈসার (আ.) সাথে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে তাঁকে প্রতিশ্রুত মাহদি (মাহদি-এ মওউদ) হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করে। ঈসা (আ.)-এর প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে বিভিন্ন গ্রন্থ ও নিবন্ধ রচিত হয়েছে; যেমন: মীর তাকী হুসাইন গোরগানি কর্তৃক রচিত ‘নুযুলে মাসীহ ওয়া জহুরে মওউদ’ গ্রন্থ এবং মাজীদ ইয়াকুব যাদেহ কর্তৃক রচিত ‘নাকশে হযরত মাসীহ (আ.) দার দৌলাতে মাহদাভি’ নামক গ্রন্থ।
অবস্থান ও গুরুত্ব
হযরত ঈসার (আ.) প্রত্যাবর্তনের ঘটনাটিকে ইমাম মাহদি (আ.)-এর আত্মপ্রকাশের সময়কার অন্যতম সুনিশ্চিত ঘটনা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।[১]যদিওবা মধ্যে হযরত ঈসার (আ.) জীবিত থাকা বা মৃত্যু সংঘটিত হওয়া নিয়ে মুসলিম পণ্ডিতদের ঐকমত্য নেই; তবে তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করেন, তিনি জীবিত রয়েছেন।[২] আসরুয যহুর গ্রন্থে আলী কৌরানি’র ভাষ্যমতে, ইমামে যামানার আত্মপ্রকাশের সময় হযরত ঈসার প্রত্যাবর্তন, মুসলমানদের মধ্যে একটি ঐকমত্যের বিষয়।[৩] কিছু কিছু গবেষক মনে করেন, মুসলমানরা ছাড়া খ্রিস্টানদের মধ্যেও ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে।[৪] তবে, ইসলামের বিপরীতে খ্রিস্টধর্মে হযরত ঈসা (আ.)-কে প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তা হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছে।[৫] আহলে সুন্নতের হাদিস সূত্রগুলোতে ২৮টি রেওয়ায়েত[৬] এবং শিয়াদের হাদিস সূত্রগুলোতে ৩০টি রেওয়ায়েত ইমাম মাহদি (আ.)-এর যহুর তথা আত্মপ্রকাশের সময় হযরত ঈসার (আ.) অবতীর্ণ হওয়া সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে,[৭] যেগুলোকে আল-মিযানের রচয়িতা সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ তাবাতাবায়ী মুস্তাফিয জ্ঞান করেন।[৮]
ঐশী গ্রন্থসমূহে হযরত ঈসার (আ.) প্রত্যাবর্তনের প্রতি ইঙ্গিত
কিছু কিছু মুফাসসির সূরা আল-ইমরানের ৪৬ নং আয়াত এবং সূরা নিসার ১৫৯ নং আয়াতকে হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রত্যাবর্তনের সময়ে প্রয়োগ করেছেন; যেমনভাবে ইঞ্জিলের বিভিন্ন অংশে এই বিষয়টি উল্লেখিত হয়েছে:
সূরা আলে ইমরানের ৪৬ নং আয়াত
তাফসীরে নেমুনেহ’র রচয়িতা নাসের মাকারেম শিরাজী’র বক্তব্য অনুসারে, «وَ یُکَلِّمُ النَّاسَ فِی الْمَهْدِ وَ کَهْلًا وَ مِنَ الصَّالِحِینَ» অর্থ: “আর সে দোলনায় এবং মধ্যবয়সে মানুষের সাথে কথা বলবে; আর সে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভূক্ত”- আয়াতটি ঈসা (আ.)-এর প্রত্যাবর্তন সম্পর্কিত এক ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে;[৯] কেননা, আরবিতে «کَهْل» শব্দটি মধ্যম বয়সী অর্থে ব্যবহৃত হয়,[১০] অন্যদিকে বলা হয় যে, হযরত ঈসা (আ.) ৩২[১১] অথবা ৩৩ বছর বয়সে আসমানে আরোহণ করেছেন।[১২] ইমাম সাদিক (আ.) হতে বর্ণিত একটি হাদিসে তাঁর উর্ধ্বগমন ৩৩ বছর বয়সে বিবেচনা করা হয়েছে।[১৩] অতএব, হযরত ঈসা (আ.) উর্ধ্বগমনের পূর্বে মধ্যবয়সে পৌঁছান নি; এই কারণে তাঁর মধ্যবয়স ভবিষ্যতে তথা রেওয়ায়েত অনুসারে, যুগের ইমামের (আ.) আবির্ভাবের সময় বাস্তবায়িত হবে।[১৪] কোন কোন গবেষকের মতে, দু’টি ক্ষেত্রে হযরত ঈসার (আ.) কথোপকথন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ: ১. যখন তাঁর মা মরিয়মের সম্মানহানী ঘটতে চলেছিল, তখন তিনি তাঁর মাতাকে মিথ্যা অভিযোগ থেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন । ২. যখন হযরত মাহদি (আ.) আত্মপ্রকাশ করবেন, তখন ঈসা (আ.) ঐশীগ্রন্থ সম্বলিত ধর্মের অনুসারীদেরকে যুগের ইমামের প্রতি অনুসরণ ও আনুগত্যের আহবান জানাবেন।[১৫]
সূরা নিসার ১৫৯ নং আয়াত
বিশিষ্ট শিয়া মুফাসসির মুহাম্মাদ হুসাইন তাবাতাবায়ী এবং মুহাম্মাদ সাদেক তেহরানি মনে করেন, «وَ إِن مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ ۖ وَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا » আর আহলে কিতাবদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, তার মৃত্যুর পূর্বে তাঁর প্রতি ঈমান আনবে না। আর কিয়ামতের দিন ঈসা তাদের ঈমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন- আয়াতটি’র অর্থ হচ্ছে যে, ঈসার (আ.) মৃত্যুর আগে সমস্ত আহলে কিতাব তার প্রতি ঈমান আনবেন, ইহুদিরা তাঁর নবুওয়াত মেনে নেবেন এবং খ্রিস্টানরা তাঁকে খোদা হিসেবে বিশ্বাস করা হতে বিরত থাকবেন; কেননা, ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাবের সময় ঈসা (আ.) আসমান থেকে অবতরণ করার পর তাঁর পিছনে নামায আদায় করবেন এবং এই বিষয়টিই আহলে কিতাবদের হেদায়েতের কারণ হবে।[১৭] ইমাম বাকের (আ.)-এর একটি হাদিসেও উক্ত আয়াতটিকে ইমাম মাহদির (আ.) আত্মপ্রকাশের সময় হযরত ঈসার অবতরণের সাথে তুলনা করা হয়েছে।[১৮]
ইঞ্জিলে
হযরত ঈসার প্রত্যাবর্তন খ্রিস্টানদের মধ্যে “second coming” (অর্থ: দ্বিতীয় আত্মপ্রকাশ) হিসেবে প্রসিদ্ধ[১৯] এবং ইঞ্জিলের বিভিন্ন স্থানে তাঁর প্রত্যাবর্তনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।[২০] কিছু কিছু গবেষকের ভাষ্যমতে, হযরত ঈসার (আ.) প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি ইঞ্জিলে ৩০০ বারের অধিক এবং কয়েকটি পরিপূর্ণ অধ্যায়ে (মথি ইঞ্জিল ২৪ ও ২৫ অধ্যায়ে এবং মার্ক ইঞ্জিল ১৩ অধ্যায়ে) উল্লেখ করা হয়েছে।[২১] ইঞ্জিল থেকে গৃহিত পর্যালোচনা অনুসারে, খ্রিস্টানরা এই ধারণা পোষণ করেন যে, শেষ যামানায় ঈসা ফিরে এসে মুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন এবং তখন পৃথিবীতে পরিপূর্ণরূপে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে কোন যুদ্ধ ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবে না।[২২] ইঞ্জিলে, হযরত ঈসার (আ.) প্রত্যাবর্তনের লক্ষণসমূহ হিসেবে সারা পৃথিবীতে নিপীড়নের বিস্তার, বিভিন্ন স্থানে দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্পের ঘটনা, সূর্য ও চন্দ্রের অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাওয়া এবং দাজ্জালের আগমন প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।[২৩]
প্রত্যাবর্তনের স্থান ও সময়
ইমাম সাদিক (আ.) হতে বর্ণিত একটি হাদিসে, হযরত ঈসার (আ.) অবতীর্ণ হওয়ার স্থান হিসেবে দামেস্কের কথা বলা হয়েছে।[২৪]তবে, লাওয়ামেঅ সাহেব ক্বারানি গ্রন্থে মুহাম্মাদ তাকী মাজলিসী তার অবতরণের স্থান হিসেবে মক্কার কথা উল্লেখ করেছেন।[২৫] আহলে সুন্নতের রেওয়ায়েতগুলোতেও অবতীর্ণের স্থান হিসেবে বিভিন্ন স্থানের পরিচয় করানো হয়েছে, যার মধ্যে বাইতুল মুকাদ্দাস[২৬] এবং দামেস্কের পূর্ব গেটে অবস্থিত সাদা ব্রিজের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।[২৭] হাদিসে হযরত ঈসার অবতরণের সময়ের সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই, তবে কোন কোন গবেষক মনে করেন, এই বিষয়টি যুগের ইমামের আত্মপ্রকাশের প্রথম দিকেই সংঘটিত হতে পারে।[২৮] হিজরি ষষ্ঠ শতাব্দীর বিশিষ্ট মুফাসসির আবুল ফুতুহ রাযি এবং তাবারসি, সূরা যুখরুফের ৬১ নং আয়াতকে হযরত ঈসার উপর প্রয়োগ করে মনে করেন যে, হযরত ঈসা (আ.) অবতরণ হচ্ছে কিয়ামত দিবস সংঘটিত হওয়ার আলামত; অতএব হযরত ঈসার প্রত্যাবর্তন কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে ঘটবে।[২৯] এই ব্যাখ্যা যা আহলে সুন্নতের কোন কোন রেওয়ায়েতেও পরিলক্ষিত হয়,[৩০] ইমাম মাহদি (আ.)-এর আত্মপ্রকাশের সময়ে ঈসার প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে;[৩১] কারণ, ইমাম মাহদি (আ.ফা.)-এরও আবির্ভাব ঘটবে শেষ জামানায়।[৩২]
প্রত্যাবর্তনের পর হযরত ঈসার পদক্ষেপসমূহ
ইমাম সাদিক (আ.)-এর রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, হযরত ঈসার অবতরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইমাম মাহদি (আ.)-কে সাহায্য করা।[৩৩] কিছু কিছু রেওয়ায়েতে ঈসা (আ.)-কে হযরত মাহদি (আ.)-এর কোষাধ্যক্ষ হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছে। আহলে সুন্নতের রেওয়ায়েতে হযরত ঈসা (আ.) নিজেকে ইমাম মাহদির (আ.) উজির তথা উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দিবেন[৩৫] এবং বিচারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিবেন।[৩৬]সহিহ বুখারী’র একটি রেওয়ায়েত অনুসারে, হযরত ঈসা (আ.) প্রত্যাবর্তনের পর খ্রিস্টানদের ক্রুশ ভেঙ্গে শুকর হত্যা করবেন (শুকরের মাংস খাওয়া হারাম করার রূপক অর্থে [৩৭]) এবং খ্রিস্টানদের উপর জিযিয়া কর নির্ধারণ করবেন। তাঁর আগমনের সাথে সাথে মানুষ এতটাই অভাবহীন হবে যে, কেউ কোন সম্পদ কবুল করবে না।[৩৮] এছাড়াও শিয়া ও সুন্নি রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, আত্মপ্রকাশের সময় হযরত ঈসা নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করবেন:
ইমাম মাহদি (আ. ফা.)-এর ইমামতিতে নামায আদায়
শিয়া ও সুন্নিদের বিভিন্ন রেওয়ায়েত অনুসারে, ঈসা (আ.), ইমাম মাহদি (আ.)-এর ইমামতিতে নামায আদায় করবেন।[৩৯] কোন কোন গবেষকের মতে, শিয়া সূত্রগুলোতে, চৌদ্দটি রেওয়ায়েতে হযরত ঈসা, ইমাম মাহদী (আ.)-কে ইকতিদা তথা অনুকরণ করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[৪০] যদিও এই রেওয়ায়েতগুলোতে অন্য কোনও ভূমিকার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি; তবে, গবেষকরা রেওয়ায়েতগুলোর বিষয়বস্তুর মাধ্যমে এই বিষয়ে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরেছেন:
- ইমাম মাহদি (আ. ফা.)-এর রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কর্তৃত্ব সম্পর্কে স্পষ্টীকরণ
- ইমাম মাহদি (আ. ফা.)-এর নিকট খ্রিস্টানদের আত্মসমর্পণ এবং তাদের ইসলাম গ্রহণ;[৪৩]
- আলী কুরানির মতে, ইমাম মাহদি’র প্রতি ঈসা মসিহের ইকতিদা তখনই ঘটবে, যখন রোমানরা ইমাম (আ. ফা.)-এর সাথে তাদের চুক্তি ভঙ্গ করবে এবং এর মাধ্যমে ঈসা (আ.) নিজেই তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করবেন।[৪৪]
দাজ্জাল হত্যা টেমপ্লেট:মূল নিবন্ধ: দাজ্জাল
ইমাম সাদিক (আ.) হতে বর্ণিত একটি রেওয়ায়েত অনুসারে, দাজ্জালকে হযরত ঈসা (আ.) হত্যা করবেন।[৪৫] ইলযামুন নাসিব গ্রন্থে বর্ণিত রেওয়ায়েত অনুসারে, ইমাম মাহদি (আ.) তাঁর সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ঈসা (আ.)-এর হাতে তুলে দেবেন এবং তিনি দাজ্জালকে হিজায ভূখণ্ডে হত্যা করবেন।[৪৬] হযরত ঈসার (আ.) হাতে দাজ্জালের হত্যার বিষয়টি আহলে সুন্নতের হাদীস সূত্রগুলোতেও উল্লেখ করা হয়েছে।[৪৭] এছাড়াও শিয়াদের কোন কোন রেওয়ায়েত সূত্রে, দাজ্জালকে ইমাম মাহদি হত্যা করবেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।[৪৮]গবেষকরা মনে করেন যে, ইমাম মাহদি’র হাতে দাজ্জালের নিহত হওয়ার সাথে ঈসা (আ.)-এর হাতে দাজ্জালের নিহত হওয়ার মধ্যে কোন অসামঞ্জস্য নেই; কেননা, ঈসা (আ.) দাজ্জালকে ইমাম মাহদি (আ.)-এর নির্দেশে হত্যা করবেন। এই কারণে, তার হত্যার সাথে উভকেই সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।[৪৯] আহলে সুন্নতের একটি রেওয়ায়েত অনুসারে, ঈসা (আ.) ফিলিস্তিনে ইমাম মাহদি (আ.)-কে দাজ্জাল হত্যায় সাহায্য করবেন।[৫০]
ইয়াজুজ ও মাজুজ হত্যা {মূল নিবন্ধ: ইয়াজুজ ও মাজুজ}
বিশিষ্ট শিয়া মুফাসসির আলী ইবনে ইব্রাহিম কুম্মি এবং তাবারসি’র ভাষ্যানুসারে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূরা আম্বিয়া’র ৯৬ নং আয়াতে ইয়াজুজ ও মাজুজের আবির্ভাব এবং তাদের বিদ্রোহকে শেষ জামানার অন্যতম একটি ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।[৫১] শেষ জামানায় তাদের আবির্ভাবের ব্যপারে ইঞ্জিলেও ইঙ্গিত করা হয়েছে।[৫২] আহলে সুন্নতের কিছু কিছু রেওয়ায়েতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইয়াজুজ ও মাজুজ হযরত ঈসার হাতে নিহত হবে।[৫৩]
উমাইয়া কর্তৃক ঈসাকে মাহদি হিসেবে পরিচয় করানো
হাওযা ইলমিয়ার বিশিষ্ট গবেষক নাজমুদ্দিন তাবাসি মনে করেন, যদিও ঈসার (আ.) প্রত্যাবর্তন ইমাম মাহদি’র আত্মপ্রকাশের সময়ের একটি তর্কাতীত বিষয়, তবুও উমাইয়ারা আহলে বাইতের (আ.) প্রতি শত্রুতার কারণে, «لا مهدی الّا عیسی بن مریم » অর্থাৎ “মাহদি হচ্ছেন সেই ঈসা ইবনে মারিয়াম”[৫৪] এবং এই ধরনের জাল হাদিস[৫৫] দ্বারা সর্বদা চেষ্টা করেছেন, প্রতিশ্রুত মাহদি’র আহলে বাইতের (আ.) সাথে সম্পৃক্ততাকে অস্বীকার করতে এবং ঈসাকে (আ.) সেই মাহদি হিসেবে চিত্রিত করতে।[৫৬]
তাবাসির ভাষ্যমতে, উমাইয়ারা সর্বদা চেষ্টা করেছেন, ইমাম মাহদি (আ.)-কে কেন্দ্রীয় ভূমিকা থেকে সরিয়ে ঈসা (আ.)-কে জহুরের (আত্মপ্রকাশের) ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচয় করাতে। আর এই কারণেই দাজ্জাল হত্যা এবং ইয়াজুজ-মাজুজ হত্যাকে ইমাম মাহদি (আ.)-এর স্থানে তাঁর সাথে সম্পৃক্ত করেছেন, যেভাবে মক্কার পরিবর্তে বাইতুল মুকাদ্দাসকে তাঁর অবতরণের স্থান হিসেবে তুলে ধরেন।[৫৭]
সম্পর্কিত রচনাবলী
হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ রচিত হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা হলো:
- নুযুলে মাসিহ ওয়া জহুরে মৌউদ; হুসাইন গারগানি রচিত গ্রন্থটি বুস্তানে কিতাব কোমের প্রকাশনায় ১৩৯০ ফার্সি সনে প্রকাশিত হয়।[৫৮]
- নাকশে হযরত মাসিহ (আ.) দার দৌলাতে মাহদাভি; মাজিদ ইয়াকুব যাদেহ চারটি অধ্যায়ে গ্রন্থটি সংকলন করেছেন। মৌউদে আসরে অন প্রকাশনা ১৩৯৮ ফার্সি সনে গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে।[৫৯]
- নুযুলে ঈসা ইবনে মারিয়াম আখেরুজ্জামান; এই বইটি সংকলন করেছেন হিজরি দশম শতকের বিশিষ্ট সুন্নি পণ্ডিত জালাল উদ্দিন সুয়ুতি। দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ বৈরুত প্রকাশনা বইটি ১৪০৫ হিজরিতে প্রকাশ করেছে।