রোগী দেখতে যাওয়া
রোগী দেখতে যাওয়া (আরবি:عيادة المريض); ইসলামী শিষ্টাচারের অন্যতম একটি যা হাদিসে সর্বোত্তম নেক আমলের মধ্যে বিবেচিত হয়েছে। শিয়া হাদিস গ্রন্থসমূহে এ সম্পর্কে কয়েক ডজন হাদিস বর্ণিত হয়েছে। অসুস্থদের দেখতে যাওয়া নবী (সাঃ) এবং ইমামদের (আ.) রীতি ছিল এবং শিয়া হাদিস গ্রন্থসমূহে এটিকে এমন একটি অধিকার হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে যা মুসলমানদের অবশ্যই পালন করা উচিত। প্রার্থণা কবুলের অঙ্গীকার, মহান আল্লাহর রহমত প্রাপ্তি এবং ফেরেশতাদের ক্ষমাপ্রার্থণার শামিল হওয়া অসুস্থদের দেখতে যাওয়ার জন্য বর্ণিত পুরস্কারগুলির কয়েকটি মাত্র।
হাদিস অনুসারে, রোগীকে দেখতে যাওয়ার কিছু আচার-অনুষ্ঠান নিম্নরূপ: রোগীকে সান্ত্বনা দেওয়া, রোগীকে উপহার দেওয়া, দেখার সময় সংক্ষিপ্ত করা এবং রোগীর প্রয়োজন মেটানো। এ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বাকের তায়াতীর লেখা ‘আদবে আয়াদাত’ ও মুহাম্মাদ জাওয়াদী নুরী এর লেখা ‘আদবে আয়াদাত আয বিমার’ উল্লেখযোগ্য।
ইসলামে রোগী দেখতে যাওয়ার গুরুত্ব
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া ইসলামী রীতিনীতির অন্যতম একটি এবং এটি অন্যতম সেরা ধর্মীয় কাজ বলে বিবেচিত হয়। শিয়া হাদিস গ্রন্থসমূহে এ সম্পর্কে কয়েক ডজন হাদিস বর্ণিত হয়েছে এবং রোগী দেখতে যাওয়া ব্যক্তির জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের পুরস্কার বর্ণিত হয়েছে। রোগী দেখতে যাওয়া মহানবি ও ইমামদের (আ.) অন্যতম রীতি ছিল এবং মহানবি (সা.) ও আহলে বাইত (আ.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রোগী দেখতে যাওয়া এমন অধিকারের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হয়েছে যা প্রতিটি মুসলমানকে একে অপরের প্রতি পালন করা উচিত।
এছাড়াও, হাদিসগুলিতে, যে ব্যক্তি কারো অসুস্থতার সময় তাকে দেখতে যায়নি তার অসুস্থতার সময় তাকে দেখতে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং অসুস্থ ব্যক্তিকে তার অসুস্থতার কথা অন্যদের জানানোর জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে, যাতে অন্যরা তাকে দেখতে যাওয়া ও সেবার দ্বারা সওয়াব অর্জন করতে পারে।
রোগী দেখতে যাওয়ার পুরস্কার
মহনবি (সা.) ও ইমামদের থেকে বর্ণিত হাদিস সমূহে রোগী দেখতে যাওয়ার দুনিয়াবী ও আখিরাতের পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে, তন্মধ্যে- প্রার্থণা কবুলের অঙ্গীকার, মহান আল্লাহর রহমত প্রাপ্তি, জান্নাত এবং ফেরেশতাদের ক্ষমা প্রার্থণার শামিল হওয়া অন্যতম।
শেইখ তাবারসী এর মাকারিমুল আখলাক্ব-এ মহানবি (সা.) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়াত অনুসারে, যে কেউ কোন অসুস্থ মুমিন বান্দাকে দেখতে যায় তখন মহান আল্লাহকে তার কাছে পায় এবং যদি সে আল্লাহর কাছে কোন কিছু প্রার্থণা করে তা কবুল করা হয়। অনুরূপভাবে, ইমাম রেযা (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, যখন কোন মুমিন অপর কোন অসুস্থ মুমিনকে দেখতে যায়, ৭০ হাজার ফেরেশতা তার সঙ্গী হয়, মহান আল্লাহর রহমত তাকে ঘিরে রাখে এবং ফেরেশতারা রাত পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থণা করে, আর যদি রাতে হয় তাহলে সকাল পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থণা করা হয়।
শেইখ সাদুক সূত্রে ইমাম আলী (আ.) থেকে বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী, যদি কেউ কোন রোগীকে দেখতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় এবং পথিমধ্যে মারা যায়, তাহলে জান্নাত তার জন্য ওয়াজিব।
রোগী দেখতে যাওয়ার আদব
আহলে বাইত (আ.) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়াত অনুযায়ী রোগী দেখার আদবসমূহের কতিপয় নিম্নরূপ-
- রোগীকে সান্ত্বনা দেওয়া,
- রোগীর জন্য উপহার নিয়ে যাওয়া,
- রোগীর অবস্থানের সময় সংক্ষিপ্ত করা; তবে যদি রোগী দর্শনার্থীদের দীর্ঘক্ষণ পাশে থাকতে বলে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই,
- রোগীর প্রয়োজন মেটানো,
- রোগী যা খেতে চায় তা খায়ানো,
- আন্তরিকতার সাথে রোগীর জন্য দোয়া করা,
- রোগীর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করা।