রাহমাতুল্লিল আলামীন (উপাধি)

wikishia থেকে

রাহমাতুল্লিল আলামিন (আরবি: رَحمةٌ لِلعالَمین) হচ্ছে পয়গম্বরে ইসলাম হযরত মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ (স.)-এর অন্যতম একটি লকব বা উপাধি; যার অর্থ সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ; যা কিনা সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে এসেছে। হযরত মুহাম্মাদের (স.) ক্ষেত্রে 'রহমত' শব্দটি কুরআনের অন্যান্য আয়াত যেমন, সূরা তওবা’র ১২৮ এবং সূরা আলে ইমরানের ১৫৯ নং আয়াতেও ব্যবহৃত হয়েছে। রাসূল (স.)-এর অন্যতম আরেকটি উপাধি نَبی‌ُالرَحْمه বা 'রহমতের নবী'ও পবিত্র কুরআন থেকে উদ্ভূত হয়েছে।[১]

শীয়াদের ইমামগণের নিকট হতে আসা রেওয়ায়েতসমূহেও রাহমাতুল্লিল শব্দটি মহানবী (স.) সম্পর্কে ব্যবহৃত হয়েছে; যেমন: বাসায়েরুদ দারাজাত গ্রন্থে যে রেওয়ায়েতটি[[২]] এসেছে বা তাফসীরে ফুরাত কুফিতে ইমাম হাসান মুজতবা (আ.) হতে যে রেওয়ায়েতটি বর্ণিত হয়েছে[৩] অথবা জুম্মা’র নামাজের খুতবায় ইমাম বাকের (আ.) হতে বর্ণিত রেওয়ায়েতে এই শিরোনামটি ব্যবহার করেছেন।[৪] এছাড়াও ইমাম কাজিম (আ.) হতে বর্ণিত হাদীসে[৫] এবং স্বয়ং রাসূল (স.)-এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।[৬]

শিয়া ও সুন্নি মুফাস্সিরগণ মহানবীর (স.) রহমত হওয়ার জন্য তিনটি অর্থ করেছেন যা নিম্নরূপ: তাঁর (স.) রিসালাত বিশ্বজনীন ও চিরন্তন হওয়া, সকলের জন্য উত্তম পরিণতি ও কল্যাণ হওয়া এবং আযাবে ইলাহীর অন্তরায় হওয়া।[৭] মুফাস্সীরগণের মতে, আযাব বলতে এখানে 'আযাবে ইস্তিছাল'-কে বুঝানো হয়েছে; যে আযাব একটি কওম বা সম্প্রদায়কে নির্মূল করে ফেলে।[৮]মোল্লাহ ফাতহুল্লাহ কাশানি এই অর্থটিকে সূরা আনফালের ৩৩ নং আয়াত হতে ব্যবহার করেছেন, যেখানে মহানবী (স.)-কে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি মানুষের মাঝে রয়েছেন ততক্ষন পর্যন্ত আল্লাহপাক তাদেরকে আযাব দিবেন না।[৯] ফাইয কাশানি তার তাফসীরে সাফিতে আযাবে ইস্তিছালের মাধ্যমে খশফ তথা জমিন ধ্বসে যাওয়া, মানুষ পশুতে রুপান্তরিত হওয়া এবং নাস্তানাবুদ হওয়া থেকে নিরাপদ থাকাকে এই রহমতের দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন।[১০]

তথ্যসূত্র

  1. হাশেমী শাহ কোবাদি, “বাররাসীয়ে মাফহুমে রাহমাতুল্লিল আলামীন দার সীরেয়ে নাবাবী”, পৃ. ৩৯।
  2. সাফফার কু্ম্মী, বাসায়েরুদ দারাজাত, ১৪০৪ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩৮১।
  3. কুফি,তাফসীরে ফুরাতে কুফি, ১৪১০ হি., পৃ. ১৯৭।
  4. কুলাইনি, আল-কাফী, ১৩৬৪ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ৪২২।
  5. কুলাইনি, আল-কাফী, ১৩৬৪ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ১৪৮।
  6. কুলাইনি, আল-কাফী, ১৩৬৪ হি., খণ্ড ৬, পৃ. ৩৯৫।
  7. গযানফারী ওয়া যারেয়ী, “রাহমাতুল্লিল বুদানে পয়গম্বর (স.) দার কুরআন আয নেগাহে তাফাসীরে ফারিকাইন”, পৃ. ৭০।
  8. দ্র: আবুল ফুতুহ রাযী, রাওযুল জেনান, খণ্ড ১৩, পৃ. ২৮৯; কাশানি, মিনহাজুস সাদেকীন, ১৩৭১ ফার্সি সন, খণ্ড ৬, পৃ. ১১৭।
  9. কাশানি, মিনহাজুস সাদেকীন, ১৩৭১ ফার্সি সন, খণ্ড ৬, পৃ. ১১৭।
  10. ফাইয কাশানি, আল-সাফী, ১৪১৬ হি., খণ্ড ৩, পৃ, ৩৫৮।

গ্রন্থপঞ্জি

  • আবুল ফুতুহ রাযী, হুসাইন বিন আলী, রাওযুল জেনান ওয়া রূহুল জেনান, মাশহাদ, বুনিয়াদে পেঝুহেশহায়ে ইসলামী, ১৩৭১ ফার্সি সন।
  • সাফ্ফার কুম্মী, মুহাম্মাদ বিন হাসান, বাসায়েরুদ দারাজাত ফি ফাযায়েলে আলে মুহাম্মাদ, তাহকীক: মোহসিন কুচে বাগী, কোম, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহ আল-মারআশি, ১৪০৪ হি.।
  • গযানফারী, আলী ওয়া মুস্তাফা যারয়ী বালুত বেনেগান, “রাহমাতুল্লিল বুদানে পায়াম্বার (স.) দার কুরআন আয নেগাহে তাফাসীরে ফারিকাইন, ফাসলনামেয়ে মোতালেআতে তাকরিবি মাযাহেবে ইসলামী, শুমারে ৪১, পায়ীয ১৩৯৪ ফার্সি সন।
  • ফাইয কাশানি, মোল্লাহ মোহসিন, আল-সাফী, তেহরান, মাক্তাবাতুস সাদর, ১৩৭৩ ফার্সি সন।
  • কাশানি, মোল্লাহ ফাতহুল্লাহ, মিনহাজুস সাদেকীন ফি ইলযামিল মুখালেফীন, তেহরান, ইসলামীয়াহ, ১৩৭৮ হি.।
  • কুলাইনি মুহাম্মাদ বিন ইয়াকুব, আল-কাফী, তাসহীহ: আলী আকবার গাফ্ফারী, তেহরান, দারুল কুতুব আল-ইসলামীয়্যাহ, ১৩৬৪ ফার্সি সন।
  • কুফি, ফুরাত বিন ইব্রাহিম, তাফসীরে ফুরাত আল-কুফি, তাহকীক: মুহাম্মাদ আল-কাযিম, তেহরান, ভেযারাতে ফারহাঙ্গ ওয়া আরাশাদে ইসলামী, ১৪১০ হি.।
  • হাশেমী শাহ কোবাদী, সাইয়্যেদ রেযা, “বাররাসীয়ে মাফহুমে রাহমাতুল্লিল আলামীন দার সীরেয়ে নাবাবী”, মোতালেয়াতে আহলে বাইত শেনাছি, শুমারে ১, পায়ীয ও যেমেস্তান ১৩৯৩ ফার্সি সন।