Automoderated users, confirmed, templateeditor
১,৭২১টি
সম্পাদনা
২৯৬ নং লাইন: | ২৯৬ নং লাইন: | ||
মহানবি (সা.) হজ্জ পালন শেষে মদিনায় ফিরে এলেন। দিনের পর দিন ইসলামের শক্তি ও প্রভাব বেড়েই চলছিল। মদিনায় ফিরে তিনি (সা.) অসুস্থ হয়ে পড়লেন। কিন্তু অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও [[মোতা]]’র যুদ্ধের পরাজয়ের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে [[উসামা বিন যাইদ|উসামা বিন যাইদের]] নেতৃত্বে সেনাবাহিনী প্রস্তুত করলেন এবং সবাইকে ঐ বাহিনীতে যোগদানের নির্দেশ দিলেন। কিন্তু ঐ বাহিনী রওনা হওয়ার আগেই মহানবি (সা.) মহান প্রতিপালকের সান্নিধ্য লাভ করেন। ওফাতের পূর্বে তিনি গোটা জাজিরাতুল আরবে ইসলামি ঐক্য কায়েম করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং ইসলামকে বৃহৎ [[ইরান]] ও [[রোম]] সম্রাজ্যের সম্মুখে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। | মহানবি (সা.) হজ্জ পালন শেষে মদিনায় ফিরে এলেন। দিনের পর দিন ইসলামের শক্তি ও প্রভাব বেড়েই চলছিল। মদিনায় ফিরে তিনি (সা.) অসুস্থ হয়ে পড়লেন। কিন্তু অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও [[মোতা]]’র যুদ্ধের পরাজয়ের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে [[উসামা বিন যাইদ|উসামা বিন যাইদের]] নেতৃত্বে সেনাবাহিনী প্রস্তুত করলেন এবং সবাইকে ঐ বাহিনীতে যোগদানের নির্দেশ দিলেন। কিন্তু ঐ বাহিনী রওনা হওয়ার আগেই মহানবি (সা.) মহান প্রতিপালকের সান্নিধ্য লাভ করেন। ওফাতের পূর্বে তিনি গোটা জাজিরাতুল আরবে ইসলামি ঐক্য কায়েম করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং ইসলামকে বৃহৎ [[ইরান]] ও [[রোম]] সম্রাজ্যের সম্মুখে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। | ||
=মহানবির (সা.) ওফাত= | ==মহানবির (সা.) ওফাত== | ||
[[১১তম হিজরী]]র শুরুর দিকে মহানবি (সা.) অসুস্থ হলেন। তাঁর (সা.) অসুস্থতা বেড়ে গেলে তিনি মিম্বরে গিয়ে মুসলমানদেরকে পরস্পরের সাথে দয়াসুলভ আচরণের তাকীদ করে বললেন: যদি কারও অধিকার আমার কাঁধে থাকে তাহলে হয় সে অধিকারের দাবী তুলে নিক অথবা যদি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে আমি তাকে শোধ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।<ref>ইবনে সায়াদ, তাবাকাতুল কোবরা, খণ্ড ২, পৃ. ২৫৫।</ref> | [[১১তম হিজরী]]র শুরুর দিকে মহানবি (সা.) অসুস্থ হলেন। তাঁর (সা.) অসুস্থতা বেড়ে গেলে তিনি মিম্বরে গিয়ে মুসলমানদেরকে পরস্পরের সাথে দয়াসুলভ আচরণের তাকীদ করে বললেন: যদি কারও অধিকার আমার কাঁধে থাকে তাহলে হয় সে অধিকারের দাবী তুলে নিক, অথবা যদি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে আমি তাকে শোধ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।<ref>ইবনে সায়াদ, তাবাকাতুল কোবরা, খণ্ড ২, পৃ. ২৫৫।</ref> | ||
===দোয়াত ও কাগজের হাদীস=== | ===দোয়াত ও কাগজের হাদীস=== | ||
: ''মূল নিবন্ধ: [[দোয়াত ও কাগজের হাদীস]]'' | : ''মূল নিবন্ধ: [[দোয়াত ও কাগজের হাদীস]]'' | ||
[[আহলে সুন্নত|আহলে সুন্নতের]] সবচেয়ে প্রসিদ্ধ গ্রন্থ [[সহীহ আল-বুখারী]]র বর্ণনার ভিত্তিতে, আল্লাহর রাসূল (সা.) নিজের জীবনের শেষদিনগুলোর | [[আহলে সুন্নত|আহলে সুন্নতের]] সবচেয়ে প্রসিদ্ধ গ্রন্থ [[সহীহ আল-বুখারী]]র বর্ণনার ভিত্তিতে, আল্লাহর রাসূল (সা.) নিজের জীবনের শেষদিনগুলোর একদিনে একদল সাহাবী তাঁকে দেখতে গেলেন, যদিও তাদের উপর নির্দেশ ছিল উসামার বাহিনীতে যোগদানের, কিন্তু তারা তা অমান্য করে আল্লাহর নবিকে দেখতে যান। তিনি তাদেরকে বললেন: আমাকে কাগজ ও কলম এনে দাও, তোমাদের জন্য এমন কিছু লিখে দেই যার ফলে তোমরা কখনই বিভ্রান্ত হবে না। উপস্থিতদের একজন বলল: আল্লাহর রাসূলের (সা.) অসুস্থতা তীব্রতর হয়েছে (এবং তিনি প্রলাপ বকছেন), আমাদের কাছে কুরআন রয়েছে, আর তা আমাদের জন্য যথেষ্ঠ। এ সময় উপস্থিতদের মাঝে দ্বন্দ্ব দেখা দিল এবং তারা শোরগোল করতে লাগল। তাদের কেউ বলল: কাগজ ও কলম এনে দাও যাতে তিনি সে মূল্যবান উপদেশ লিখে দিতে পারেন, আবার কেউ বাঁধা দিল। এ সময় আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন: আমার কাছ থেকে চলে যাও।<ref>বুখারি, সহিহ বুখারি, খণ্ড ৬, বাবে মারাযুন নাবি (সা.) ও ওয়াফাতুহু, পৃ. ১২, প্রকাশক দারুল জীল, বৈরুত।</ref> | ||
আহলে সুন্নতের অপর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ [[সহীহ মুসলিম|সহীহ মুসলিমের]] বর্ণনার ভিত্তিতে মহানবির (সা.) বিরোধিতাকারী ব্যক্তি ছিলেন ‘[[উমর ইবনে খাত্তাব]]’। একই গ্রন্থে এবং সহীহ বুখারীতেও বর্ণিত হয়েছে যে, [[ইবনে আব্বাস]] সবসময় এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতেন এবং একে বৃহৎ মুসিবত বলে আখ্যায়িত করতেন।<ref>সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৩, পৃ. কিতাবুল ওয়াসিয়্যাহ, ৫ নং অধ্যায়, পৃ. ১২৫৯, প্রকাশক দারু ইহইয়ায়িত তুরাসিল আরাবি।</ref> | আহলে সুন্নতের অপর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ [[সহীহ মুসলিম|সহীহ মুসলিমের]] বর্ণনার ভিত্তিতে মহানবির (সা.) বিরোধিতাকারী ব্যক্তি ছিলেন ‘[[উমর ইবনে খাত্তাব]]’। একই গ্রন্থে এবং সহীহ বুখারীতেও বর্ণিত হয়েছে যে, [[ইবনে আব্বাস]] সবসময় এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতেন এবং একে বৃহৎ মুসিবত বলে আখ্যায়িত করতেন।<ref>সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৩, পৃ. কিতাবুল ওয়াসিয়্যাহ, ৫ নং অধ্যায়, পৃ. ১২৫৯, প্রকাশক দারু ইহইয়ায়িত তুরাসিল আরাবি।</ref> | ||
মহানবি (সা.) ১১ হিজরীর ২৮ সফর<ref>শেইখ মুফিদ, মাসারুশ শিয়া ফি মুখতাছারিত তাওয়ারিখিশ শিয়া, ১৪১৩ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৪৬।</ref> অন্য এক বর্ণনায় একই সনে ১২ রবিউল আওয়াল ৬৩ বছর বয়সে ওফাত প্রাপ্ত হন। যেভাবে নাহজুল বালাগাতে উল্লিখিত হয়েছে, বিদায় বেলা মহানবির (সা.) মাথা মোবারক হযরত আলীর (আ.) বক্ষ ও গর্দানের | মহানবি (সা.) ১১ হিজরীর ২৮ সফর<ref>শেইখ মুফিদ, মাসারুশ শিয়া ফি মুখতাছারিত তাওয়ারিখিশ শিয়া, ১৪১৩ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৪৬।</ref> অন্য এক বর্ণনায় একই সনে ১২ রবিউল আওয়াল ৬৩ বছর বয়সে ওফাত প্রাপ্ত হন। যেভাবে নাহজুল বালাগাতে উল্লিখিত হয়েছে, বিদায় বেলা মহানবির (সা.) মাথা মোবারক হযরত আলীর (আ.) বক্ষ ও গর্দানের মাঝামাঝি ছিল।<ref>নাহজুল বালাগাহ, অনুবাদ সৈয়দ জাফার শাহিদী, খোতবা ২০২, পৃ. ২৩৭।</ref> | ||
ইন্তিকালের সময় হযরত ফাতেমা (সা. আ.) ব্যতীত তাঁর (সা.) আর কোন সন্তান জীবিত ছিলেন না। ইব্রাহিম (আ.)-সহ তাঁর অপর সন্তানরা তাঁর ইন্তেকালের পূর্বেই | ইন্তিকালের সময় হযরত ফাতেমা (সা. আ.) ব্যতীত তাঁর (সা.) আর কোন সন্তান জীবিত ছিলেন না। ইব্রাহিম (আ.)-সহ তাঁর অপর সন্তানরা তাঁর ইন্তেকালের পূর্বেই ইহলোক ত্যাগ করেছিলেন। হযরত আলী (আ.) তাঁর (সা.) দেহ মোবারককে বনি হাশিমের কয়েকজনের সহযোগিতায় গোসল দেন ও কাফন পরান এবং তাঁকে মসজিদুন নাবির (সা.) অভ্যন্তরে দাফন করা হয়। | ||
বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্রের বর্ণনার ভিত্তিতে, দু’ ব্যক্তিকে ডেকে পাঠানো হল একজন মক্কার প্রচলিত নিয়মে কবর খুঁড়ত আরেকজন মদিনার। কিন্তু কোন নিয়মে কবর খোঁড়া হবে তা নিয়ে মুসলমানদের মাঝে ইখতিলাফ দেখা দিল। সিদ্ধান্ত হল যে আগে পৌঁছুবে তার নিয়মেই কবর খোঁড়া হবে। আবু তালহা আনসারি আগে পৌঁছুলেন এবং বিশ্বনবির (সা.) কবর মদিনায় প্রচলিত নিয়মে খোঁড়া হল।<ref>ইবনে সায়াদ তাবাকাতুল কোবরা, ১৪১০ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২২৮।</ref> | বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্রের বর্ণনার ভিত্তিতে, দু’ ব্যক্তিকে ডেকে পাঠানো হল একজন মক্কার প্রচলিত নিয়মে কবর খুঁড়ত, আরেকজন মদিনার। কিন্তু কোন নিয়মে কবর খোঁড়া হবে তা নিয়ে মুসলমানদের মাঝে ইখতিলাফ দেখা দিল। সিদ্ধান্ত হল, যে আগে পৌঁছুবে তার নিয়মেই কবর খোঁড়া হবে। আবু তালহা আনসারি আগে পৌঁছুলেন এবং বিশ্বনবির (সা.) কবর মদিনায় প্রচলিত নিয়মে খোঁড়া হল।<ref>ইবনে সায়াদ তাবাকাতুল কোবরা, ১৪১০ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২২৮।</ref> | ||
==সাকীফার ঘটনা== | ==সাকীফার ঘটনা== |