শাহাদাতাঈন
শাহাদাতাঈন বলতে বুঝায় মহান আল্লাহর একত্ববাদ ও রাসূলের (সা.) রেসালতের প্রতি সাক্ষ্য প্রদান এবং পাশাপাশি ইসলাম ধর্মের উসূলে দ্বীনের তওহীদ ও নবুয়্যাতের প্রতি বিশ্বাসপোষণ। শাহাদাতাঈনকে ইসলাম ও কুফরের সীমারেখা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। যে ব্যক্তি শাহাদাতাঈন পাঠ করবে, সে মুসলমান হিসেবে বিবেচিত হবে এবং ইসলামি বিধানাবলি তার উপর বর্তাবে। প্রত্যেক নামাযে তাশাহুদ পাঠ এবং প্রতি আযান ও আকামতে শাহাদাতাঈন পাঠ করা মুসলমানদের উপর ফরজ।
শিয়া মাযহাবের ফিকাহবিদগণ ফিকাহশাস্ত্রের বিভিন্ন পর্যায়ে শাহাদাতাঈনের বর্ণনা তুলে ধরেছেন। তাদের প্রদত্ত ফতওয়া মোতাবেক মাইয়াতের নামাযে প্রথম তাকবীরের পর শাহাদাতাঈন পাঠ করা ফরজ এবং মুমুর্ষ ব্যক্তিকে শাহাদাতাঈন পাঠ করে শোনান ও মৃত্যু ব্যক্তির কাফনে শাহাদাতাঈন লিপিবদ্ধ করা মুস্তাহাব।
এছাড়া ইসলামি শিল্পকলা, হস্তশিল্প ও কারুকার্যে শাহাদাতাঈনের ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে।
সংজ্ঞা
কলেমা শাহাদাতাঈন হচ্ছে মহান আল্লাহর একত্ববাদ ও রাসূলের (সা.) রেসালতের প্রতি সাক্ষ্য প্রদান। ফিকাহবিদগণের বর্ণনা অনুযায়ী শাহাদাতাঈন হচ্ছে নিম্নরূপ-
أشْهَدُ أنْ لا الهَ الاّ الله و أشْهَدُ أنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ اللّه
অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.) হলেন আল্লাহর রাসূল। শেখ সাদুক উল্লেখ করেছেন যে, শাহাদাতাঈন হচ্ছে তওহীদ ও নবুয়্যাতের প্রতি বিশ্বাসপোষণ; যা ইসলাম ধর্মের উসূলে দ্বীনের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে গণ্য।
গুরুত্ব ও তাৎপর্য
মুসলমানদের দৃষ্টিতে ইসলাম ও কুফরের মানদণ্ড হচ্ছে কলেমা শাহাদাতাঈন পাঠ। অর্থাৎ যে ব্যক্তি শাহাদাতাঈন পাঠ করবে, ইসলাম ধর্মের বিধি-বিধান তার উপর বর্তাবে। এ ব্যক্তির শরীর পাক এবং তার জান-মালের রক্ষা সাধন সবার উপর ফরজ হিসেবে গণ্য হবে। দোয়া-এ-আবু হামজা সোমালীতে ৪র্থ ইমাম সাজ্জাদ (আ.) বর্ণনা করেছেন: শাহাদাতাঈন পাঠ করার কারণে এ বাক্যদ্বয় পাঠকারীর জান ও মালের রক্ষা সাধন জরুরী; চাই এ পাঠ মৌখিকভাবে হোক না কেন।
শেখ সাদুক (রহ.) উল্লেখ করেছেন যে, অনেক রেওয়ায়েতে ঈমান বলতে শাহাদাতাঈনকে অভিহিত করা হয়েছে। আল্লামা তাবাতাবায়ি বর্ণনা করেছেন: ঈমানের বিভিন্ন স্তর ও পর্যায় রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে প্রথম হচ্ছে শাহাদাতাঈনের প্রতি আত্মিক ও সুদৃঢ় আকিদাপোষণ; যে আকিদার প্রেক্ষিতে ইসলামের শাখা-প্রশাখার বিধানাবলির আমল সম্পন্ন হয়ে থাকে।
ফিকাহশাস্ত্রের কিতাবসমূহে মাইয়াতের আহকাম, তাহারাত, নামায, জিহাদ প্রভৃতি বিধানাবলিতে শাহাদাতাঈনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
আদব ও আহকাম
- শিয়া মাযহাবের ফিকাহবিদগণের দৃষ্টিতে মাইয়াতের নামাযে প্রথম তাকবীরের পর শাহাদাতাঈন পাঠ করা ফরজ। অন্য মাযহাবের ফিকাহবিদগণ এটাকে মুস্তাহাব হিসেবে অভিহিত করেছেন।
- মূমুর্ষ ব্যক্তিকে শাহাদাতাঈন পাঠ করে শোনান এবং মাসুম ইমামগণের (আ.) প্রতি আকিদাপোষণের স্বীকারোক্তি প্রকাশ করা মুস্তাহাব।
- মুস্তাহাব হচ্ছে মৃত্যু ব্যক্তির কাফনে কলেমা শাহাদাতাঈন লিপিবদ্ধ করা।
- অধিকাংশ ফিকাহবিদগণের দৃষ্টিতে জুমুআর নামাযের খুতবাদ্বয়ে শাহাদাতাঈন পাঠ করা মুস্তাহাব।
- কোন কোন ফিকাহবিদের মতে ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম আদব হচ্ছে ব্যবসাক্ষেত্র যেমন: দোকান-পাট ও লেনদেনের স্থানে ব্যবসা শুরুর প্রথমে শাহাদাতাঈন পাঠ করা মুস্তাহাব।
ইসলামি শিল্প-সংস্কৃতিতে ব্যবহার
ইসলামি শিল্প-সংস্কৃতি ও শৈল্পিক কারুকার্যে কলেমা শাহাদাতাঈনের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। মুসলিম উম্মাহ নিজেদের দোয়া ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতেও শাহাদাতাঈন পাঠের প্রচলন রয়েছে। যেমন: মুসলমানরা তাদের প্রত্যেক নামাযে তাশাহুদ পাঠ করে এবং প্রতি আযান ও আকামতে শাহাদাতাঈন পাঠ করাকে বাধ্যতামূলক হিসেবে বিশ্বাস করে।
এছাড়া ইসলামি ক্যালিওগ্রাফী ও শৈল্পিক কারুকার্যেও কলেমা শাহাদাতাঈনের ব্যাপক কদর রয়েছে।