জাফর তাইয়্যার নামায; বা সালাতুল তাসবিহ হল মুস্তাহাব নামায সমুহের একটি যা দুই রাকাত করে মোট চার রাকাত হিসেবে পড়া হয়। এই নামায, মোট ৩০০ বার এই যিকিরটি (سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلا إِلَهَ إِلا اللهُ وَاللهُ أَكبَرُ) পড়া হয়ে থাকে। মহানবী (সা.) আবিসিনিয়া থেকে ফিরে আসার পর জাফর বিন আবি তালিবকে তাঁর প্রচেষ্টার প্রশংসা করার জন্য উপহার হিসেবে এই নামায শিখিয়েছিলেন।
জাফর তাইয়্যার নামাযের জন্য উল্লিখিত প্রভাবগুলির মধ্যে পাপ মোচন এবং প্রয়োজন পূরণ উল্লেখযোগ্য। কতিপয় ধর্মীয় আলেম গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং বিবাহ-বন্ধন দ্রুত ও সহজতর করার উপায় হিসেবে জাফর তাইয়্যার নামায পড়ার সুপারিশ করেছেন।
জাফর তাইয়্যারকে মহানবীর (সা.) উপহার
জাফর তাইয়্যারের নামায এমন একটি নামায যা জাফর বিন আবি তালিব আবিসিনিয়া থেকে ফিরে আসার পর মহানবী (সা.) তাঁর প্রচেষ্টার প্রশংসা স্বরূপ উপহার হিসাবে তাকে শিখিয়েছিলেন, তাই এটি জাফর তাইয়্যার নামাজ নামে পরিচিতি লাভ করে যা সুন্নী মহলে সালাতুল তাসবিহ নামে পরিচিত। জাফর তাইয়্যার, মহানবীর (সা.) চাচাতো ভাই, ইমাম আলী (আ.)-এর সহোদর ভাই এবং মহানবীর (সা.) প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী প্রথম ব্যক্তিদের একজন ছিলেন। তিনি মহানবী (সা.) নির্দেশে মক্কা থেকে আবিসিনিয়ায় হিজরতকারী মুসলিমদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
যেহেতু রাসূল (সা.) এই নামাযটি জাফরকে হাদিয়া করে ছিল তাই একে ‘হাবাওয়ার নামায’ও বলা হয়।
জাফর তাইয়্যার নামায আদায়ের পদ্ধতি
জাফর তাইয়্যারের নামায দুই রাকাত করে মোট চার রাকাত নিম্নোক্ত ক্রমে পড়া হয়-
- নামাযের শুরুতে জাফর তাইয়্যারের নামাযের নিয়্যাত করতে হবে এবং প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা আয-যিলযাল ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা আদিয়াহ পড়া। পরের দুই রাকাতের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা নাসর এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস পড়া।
سُبْحَانَ اللَّهِ وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَ اللَّهُ أَکبَرُ | সংখ্যা |
---|---|
সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা মিলানোর পর | ১৫ বার |
রুকুতে | ১০ বার |
রুকু থেকে সোজা হওয়ার পর | ১০ বার |
প্রথম রুকুতে | ১০ বার |
রুকু থেকে উঠার পর | ১০ বার |
দ্বিতীয় রুকুতে | ১০ বার |
দ্বিতীয় রুকু থেকে উঠার পর ও দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহুদের আগে | ১০ বার |
- প্রতিটি রাকাতে, সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরার পরে, ১৫ বার «سُبْحانَ اللهِ وَاَلْحَمْدُ للهِ وَلا اِلـهَ إلاّ اللهُ وَاَللهُ اَكْبَر» পড়া, প্রত্যেক রাকতের রুকু ও সিজদার তাসবিহ পড়ার পর ১০ বার এবং প্রত্যেক রাকাতে রুকু ও সিজদা থেকে মাথা উঠানোর পর এই যিকিরটি ১০ বার পড়া। এভাবে প্রতি রাকাতে ৭৫ বার করে মোট ৩০০ বার উল্লিখিত যিকির পড়া।
- মুস্তহাব হচ্ছে, দ্বিতীয় রাকতের দ্বিতীয় সিজদার তাসবিহ পড়ার পর নিম্নোক্ত দোয়া পড়া-
অতঃপর, (وَافْعَلْ بى كَذا وَكَذا) এই জায়গায় নিজের প্রয়োজনগুলো উপস্থাপন করা।
- আল্লামা মাজলিসি তাঁর যাদুল মায়াদ গ্রন্থে মুফাদ্দাল বিন উমর এর মাধ্যমে ইমাম সাদিক (আ.) থেকে একটি দোয়া বর্ণনা করেছেন যা প্রয়োজন পূরণের জন্য জাফর তাইয়্যার নামাযের পর সিজদারত অবস্থায় পাঠ করা হয়।
"হে মুফাদ্দাল, যখনই তোমার কোন জরুরী প্রয়োজন হয়, তখন জাফর তাইয়্যারের নামায পড়, তারপর এই দুআ পাঠ কর এবং আল্লাহর কাছে তোমার প্রয়োজন চাও যা পূরণ হবে, ইনশাআল্লাহ।"
নামায শেষে দুহাত তুলে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়া পর্যন্ত মহান আল্লাহকে এভাবে ডাক «...يَا رَبِّ يَا رَبِّ», অতঃপর «...يَا ربّاهُ يَا ربّاهُ», অতঃপর «...رَبِّ رَبِّ», অতঃপর «...يَا اَللّهُ يَا اَللّهُ», অতঃপর «...يَا حَيُّ يَا حَيُّ», অতঃপর «...يَا رَحيمُ يَا رَحيمُ», অতঃপর সাত বার পড় «...يَا رَحْمنُ يَا رَحْمنُ» এবং সাত বার «....يَا اَرْحَمَ الرّاحِمينَ»।
অত:পর বল-
শেইখ আব্বাস কুম্মী মাফাতিহুল জিনানে ইমাম জামান (আ.)-এর নামাযের পর জুমার রাত ও দিনের ফযীলত বর্ণনার অংশে জাফর তাইয়্যারের নামায পড়ার নির্দেশনা উল্লেখ করেছেন।
ফযীলত ও আদায়ের সময়
জাফর তাইয়্যার নামাযের ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রয়োজন পূরণ ও গুনাহ মাফের জন্য এ দোয়া পড়া উচিত এবং প্রয়োজন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তা চালিয়ে যেতে হবে। কিছু ধর্মীয় আলেম গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং বিবাহ-বন্ধন দ্রুত ও সহজতর করার উপায় হিসেবে জাফর তাইয়্যার নামায পড়ার সুপারিশ করেছেন। ইমাম রেজা (আ.)-এর একটি বর্ণনায় নিসফে শা'বান তথা অর্ধ শাবানের রাতে এই নামাযটি পড়ার সুপারিশ করা হয়েছে। শুক্রবার দিনও এই নামাজ আদায়ের অন্যতম ফজিলতপূর্ণ সময়।