ঐক্যের দোয়া
ঐক্যের দোয়া (আরবি: دعای وحدت); বলতে সেই যিকির বা দোয়াকে বোঝায় যা মহানবী (সা.) ফরজ নামাজের পরে পাঠ করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং তা ঐক্যের প্রতীক হিসেবে পাঠ করা হয়।[১][২] ইমাম সাদিক (আ.) থেকে শেইখ সাদুক (মৃত্যু ৩৮১ হিজরী) -এর বর্ণনা আনুযায়ী, মক্কা বিজয়ের পর হাজারে আসওয়াদ পাথরের পাশে যোহর নামাজ পড়ে মহানবী (সা.) তাঁর হাত তুলে তিনবার তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলেছিলেন। অতঃপর, তিনি এই দোয়াটি পাঠ করেছিলেন এবং বলেছিলেন: প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর তিনবার তাকবীর (আল্লাহু আকবার) এবং এই দোয়াটি পাঠ করবে। যে ব্যক্তি নামাযের সালামের পর এটি করবে, সে ইসলাম এবং এর মুজাহিদ বাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নৈতিক দায়িত্ব পালন করেছে।[৩] শেইখ সাদুক তাঁর ‘আল-মুকনিয়ু' গ্রন্থে এই দোয়াটি নিম্নরূপ বর্ণনা করেছেন:
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ إِلَهاً وَاحِداً وَ نَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَ لاَ نَعْبُدُ إِلاَّ إِيَّاهُ مُخْلِصِينَ لَهُ اَلدِّينَ وَ لَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّنَا وَ رَبُّ آبَائِنَا الْأَوَّلِينَ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَ نَصَرَ عَبْدَهُ وَ أَعَزَّ جُنْدَهُ وَ غَلَبَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ، فَلَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ، يُحْيِي وَ يُمِيتُ وَ يُمِيتُ وَ يُحْيِي وَ هُوَ حَيٌّ لاَ يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অর্থ: এক আল্লাহ ছাড়া কোনোও উপাস্য নেই, আমরা তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণকরী। আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং আমরা তাঁর ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করি না। আর আমাদের আনুগত্য কেবল তাঁরই জন্য, যদিও তা মুশরিকদের অপছন্দের। আল্লাহ ছাড়া কোনোও উপাস্য নেই, তিনি আমাদের এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রভু। আল্লাহ ছাড়া কোনোও উপাস্য নেই, তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেন এবং তাঁর বাহিনীকে সম্মানিত করেন। আর তিনি একাই বিরোধী বাহিনীকে চূর্ণ করেন। অতএব, সার্বভৌমত্ব এবং প্রশংসা তাঁরই, যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান, মৃত্যু ঘটান এবং পুনরায় জীবন দান করেন। আর তিনি নিজেই জীবিত, যিনি কখনও মৃত্যুবরণ করেন না। সকল কল্যাণ তাঁর হাতে এবং তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
শেইখ সাদুক, ‘আল-মুকনিয়ু', পৃষ্ঠা-৯৭।
শেইখ তুসী তাঁর মিসবাহুল মুতাহাজ্জেদ[৪] ও তাহযিব[৫] এবং কাযী নোমান মাগরেবী তার দায়াইমুল ইসলাম[৬] গ্রন্থে সামান্য পার্থক্যের সাথে দোয়াটি বর্ণনা করেছেন।
প্রতিবেদন অনুসারে, ১৯৬০-এর দশকে, ইরানীরা ঐক্য ও একত্ববাদের নিদর্শন হিসেবে প্রত্যেক জামাতে নামাজ এবং জুম্মার নামাজের পরে পরস্পরের হাত ধরে এই দোয়াটি পাঠ করত।[৭] কথিত আছে যে, ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর তেহরানে প্রথম জুম্মার নামাজে এই দোয়াটি পাঠ করা হয়েছিল এবং তারপর থেকে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।[৮] ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময়, এই দোয়াটি জামাতের নামাজের পরে এবং অভিযানের আগে ইরানি যোদ্ধাদের কর্মসূচির অংশ ছিল।[৯][১০]
তথ্যসূত্র
- ↑ কুমাইলী খোরাসানী, মুহাম্মাদ সালেহ, «مضامین دعای وحدت، وحدتی و توحیدی است», আয়াতুল্লাহ কুমাইলী খোরাসানী তথ্য কেন্দ্র।
- ↑ (ره) با خوشحالی فرمود عجب نماز جمعهای شد!, রোজনামা জাওয়ান ওয়েবসাইট
- ↑ শেইখ সাদুক, ইলালুশ শারায়েঅ্, ১৩৮৫ হি., খ: ২, পৃ: ৩৬০।
- ↑ শেইখ তুসী, মিসবাহুল মুতাহাজ্জেদ, ১৪১১ হি., খ: ১, পৃ: ৫০।
- ↑ শেইখ তুসী, তাহযিবুল আহকাম, ১৩৬৫ (ফার্সি সন), খ: ২, পৃ: ১০৬।
- ↑ ইবনে হায়্যুন, দায়াইমুল ইসলাম, ১৩৮৫ হি., খ: ১, পৃ: ১৭০।
- ↑ কুমাইলী খোরাসানী, মুহাম্মাদ সালেহ, «مضامین دعای وحدت، وحدتی و توحیدی است», আয়াতুল্লাহ কুমাইলী খোরাসানী তথ্য কেন্দ্র।
- ↑ (ره) با خوشحالی فرمود عجب نماز جمعهای شد!, রোজনামা জাওয়ান ওয়েবসাইট
- ↑ جماعت رزمندگان دفاع مقدس به امامت فرمانده سپاه»।
- ↑ قرائت دعای وحدت توسط فرماندهان قبل از عملیات «طریقالقدس, খাবারগুজারিয়ে দেফায়ে মুকাদ্দাস।
গ্রন্থপঞ্জি
- ইবনে হায়্যুন, নোমান বিন মুহাম্মাদ মাগরেবী, দায়াইমুল ইসলাম, কোম, মুয়াসসাসাতু আলিল বাইত (আ.), ১৩৮৫ হি.,
- (ره) با خوشحالی فرمود عجب نماز جمعهای شد!, রোজনামা জাওয়ান ওয়েবসাইট, ৩০/৭/২০২৩ (ঈসায়ী),
- শেইখ সাদুক, মুহাম্মাদ বিন আলী, ইলালুশ শারায়েঅ্, কোম, মাকতাবাতু আদ্-দাভারী, ১৩৮৫ হি.,
- শেইখ সাদুক, মুহাম্মাদ বিন আলী, আল্-মুকনিয়ু, কোম, মুয়াসসাসাতু ইমাম মাহদী (আ.), ১৪১৫ হি.,
- শেইখ তুসী, মুহাম্মাদ বিন হাসান, তাহযিবুল আহকাম, তেহরান, দারুল কুতুবিল ইসলামিয়্যাহ, ১৩৬৫ (ফার্সি সন),
- শেইখ তুসী, মুহাম্মাদ বিন হাসান, মিসবাহুল মুতাহাজ্জেদ, বৈরুত, মুয়াসসেসেয়ে ফিকহুশ শিয়া, ১৪১১ হি.,
- قرائت دعای وحدت توسط فرماندهان قبل از عملیات «طریقالقدس, খাবারগুজারিয়ে দেফায়ে মুকাদ্দাস, ২/১২/২০২৪ (ঈসায়ী),
- কুমাইলী খোরাসানী, মুহাম্মাদ সালেহ, «مضامین دعای وحدت، وحدتی و توحیدی است», আয়াতুল্লাহ কুমাইলী খোরাসানী তথ্য কেন্দ্র, ২৬/৬/২০২২ (ঈসায়ী),
- جماعت رزمندگان دفاع مقدس به امامت فرمانده سپاه», ২৫/৯/২০১৭ (ঈসায়ী)।