বিষয়বস্তুতে চলুন

সাকীফার ঘটনা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১৯ নং লাইন: ১৯ নং লাইন:
৩০৩ হিজরীতে রচিত [[তারিখে তাবারি|তারিখে তাবারি’র]] বর্ণনার ভিত্তিতে, ওমর ইবনে খাত্তাব ঐ মুহূর্তগুলো সম্পর্কে বলেছেন: ঐ সময় উপস্থিতদের মাঝে হৈ চৈ শুরু হলো এবং ভীড়ের মাঝে বিভিন্ন অস্পষ্ট ও অবোধ্য কথা শোনা যাচ্ছিল। এ সময় আমরা শঙ্কিত হলাম যে, এ বিরোধ আমাদের কাজে বিচ্ছেদ ঘটাবে। তাই আমি আবুবকরকে বললাম তোমার হাত প্রসারিত করো, তোমার হাতে বাইয়াত করি। কিন্তু ওমরের হাত আবুবকরের হাতে পৌঁছানোর আগেই সা’দ ইবনে উবাদা’র প্রতিদ্বন্দ্বী বাশির ইবনে সা’দ খাযরাজী এগিয়ে এসে আবুবকরের হাতে হাত রেখে বাইয়াত করলো[৯]
৩০৩ হিজরীতে রচিত [[তারিখে তাবারি|তারিখে তাবারি’র]] বর্ণনার ভিত্তিতে, ওমর ইবনে খাত্তাব ঐ মুহূর্তগুলো সম্পর্কে বলেছেন: ঐ সময় উপস্থিতদের মাঝে হৈ চৈ শুরু হলো এবং ভীড়ের মাঝে বিভিন্ন অস্পষ্ট ও অবোধ্য কথা শোনা যাচ্ছিল। এ সময় আমরা শঙ্কিত হলাম যে, এ বিরোধ আমাদের কাজে বিচ্ছেদ ঘটাবে। তাই আমি আবুবকরকে বললাম তোমার হাত প্রসারিত করো, তোমার হাতে বাইয়াত করি। কিন্তু ওমরের হাত আবুবকরের হাতে পৌঁছানোর আগেই সা’দ ইবনে উবাদা’র প্রতিদ্বন্দ্বী বাশির ইবনে সা’দ খাযরাজী এগিয়ে এসে আবুবকরের হাতে হাত রেখে বাইয়াত করলো[৯]


এ ঘটনার পর, সাকীফায় উপস্থিতরা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়লো; পরিস্থিত এমন হলো যে, অসুস্থ সা’দ ইবনে উবাদাহ তাদের পদতলে পিষ্ট হওয়ার উপক্রম হলেন। এ ঘটনা ওমর ইবনে খাত্তাব ও সা’দ এবং কাইস ইবনে সা’দের মাঝে তীব্র ঝগড়ার কারণ হল; অবশেষে আবুবকরের মধ্যস্থতায় ঐ ঝগড়া শেষ হলো[১০]
এ ঘটনার পর, সাকীফায় উপস্থিতরা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়লো; পরিস্থিত এমন হলো যে, অসুস্থ সা’দ ইবনে উবাদাহ তাদের পদতলে পিষ্ট হওয়ার উপক্রম হলেন। এ ঘটনা ওমর ইবনে খাত্তাব ও সা’দ এবং কাইস ইবনে সা’দের মাঝে তীব্র ঝগড়ার কারণ হল; অবশেষে আবুবকরের মধ্যস্থতায় ঐ ঝগড়া শেষ হলো<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৭।</ref>


== সাকীফার মুনাজিরা ==
== সাকীফার মুনাজিরা ==
সাকীফায়  উপস্থিত আনসার এবং বিলম্বে আসা মুহাজিরদের মাঝে বিভিন্ন কথা রদবদল হয়েছিল সেদিন। তবে আবুবকর ও তার সাথীদের কথা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিল; উপস্থিতদের কয়েকজনের কথোপকথন নিম্নরূপ:
সাকীফায়  উপস্থিত আনসার এবং বিলম্বে আসা মুহাজিরদের মাঝে বিভিন্ন কথা রদবদল হয়েছিল সেদিন। তবে আবুবকর ও তার সাথীদের কথা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিল; উপস্থিতদের কয়েকজনের কথোপকথন নিম্নরূপ:


* '''[[সা’দ ইবনে উবাদাহ]]:''' মূলতঃ তিনি সভার শুরুতে এবং আবুবকর ও তার সঙ্গীদের আগমনের পূর্বে কথা বলেছিলেন। অবশ্য অসুস্থতা জনিত দুর্বলতার কারণে তার পুত্র তার কথা জনতার উদ্দেশ্যে পৌঁছে দেন। তার কথার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তুগুলো ছিল: আনসারের ফজিলত ও ইতিহাস, অপর মুসলমানদের উপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব, ইসলাম ও [[মহানবি (স.)|মহানবির (স.)]] প্রতি তাদের খেদমত এবং ওফাতের পূর্বে আনসারদের উপর মহানবির (স.) সন্তুষ্টি ইত্যাদি। এসব যুক্তি উপস্থাপন করে তিনি মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিষয়ে আনসারকে অধিক যোগ্য বলে ঘোষণা করেন এবং তাদেরকে দায়িত্ব হাতে নেয়ার আহবান জানান। এছাড়া, তিনি আনসারদের থেকে একজন এবং মুহাজিরদের থেকে একজন আমির নির্বাচনের প্রস্তাবকে পরাজয় ও পশ্চাদপসরণ বলে অভিহিত করেন।[১১]
* '''[[সা’দ ইবনে উবাদাহ]]:''' মূলতঃ তিনি সভার শুরুতে এবং আবুবকর ও তার সঙ্গীদের আগমনের পূর্বে কথা বলেছিলেন। অবশ্য অসুস্থতা জনিত দুর্বলতার কারণে তার পুত্র তার কথা জনতার উদ্দেশ্যে পৌঁছে দেন। তার কথার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তুগুলো ছিল: আনসারের ফজিলত ও ইতিহাস, অপর মুসলমানদের উপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব, ইসলাম ও [[মহানবি (স.)|মহানবির (স.)]] প্রতি তাদের খেদমত এবং ওফাতের পূর্বে আনসারদের উপর মহানবির (স.) সন্তুষ্টি ইত্যাদি। এসব যুক্তি উপস্থাপন করে তিনি মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিষয়ে আনসারকে অধিক যোগ্য বলে ঘোষণা করেন এবং তাদেরকে দায়িত্ব হাতে নেয়ার আহবান জানান। এছাড়া, তিনি আনসারদের থেকে একজন এবং মুহাজিরদের থেকে একজন আমির নির্বাচনের প্রস্তাবকে পরাজয় ও পশ্চাদপসরণ বলে অভিহিত করেন।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২২।</ref>
* '''[[আবুবকর ইবনে আবু কুহাফা]]:''' তার কথাই ছিল বৈঠকের ফলাফল নির্ধারক। তিনি কয়েকবার কথা বলেছিলেন, তার কথার বিষয়বস্তুগুলো ছিল এমন; [[আনসার|আনসারদের]] উপর [[মুহাজির|মুহাজিরদের]] শ্রেষ্ঠত্ব, মহানবির (সা.) রিসালাতের সমর্থনে অগ্রগামিতা,  ঈমান ও আল্লাহর ইবাদতে অগ্রগামিতা, মহানবির (স.) সাথে মুহাজিরদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ও আত্মীয়তা ইত্যাদি। উপস্থাপিত যুক্তির ভিত্তিতে মুহাজিরগণ নবীর (স.) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারী এবং খেদমত ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আনসারগণ উজির হওয়ার জন্য যোগ্য; শাসক হওয়ার জন্য নয়, এছাড়া মুহাজিরদের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিরোধিতাকারীদের যুক্তি খণ্ডন ইত্যাদি। [১২]
* '''[[আবুবকর ইবনে আবু কুহাফা]]:''' তার কথাই ছিল বৈঠকের ফলাফল নির্ধারক। তিনি কয়েকবার কথা বলেছিলেন, তার কথার বিষয়বস্তুগুলো ছিল এমন; [[আনসার|আনসারদের]] উপর [[মুহাজির|মুহাজিরদের]] শ্রেষ্ঠত্ব, মহানবির (সা.) রিসালাতের সমর্থনে অগ্রগামিতা,  ঈমান ও আল্লাহর ইবাদতে অগ্রগামিতা, মহানবির (স.) সাথে মুহাজিরদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ও আত্মীয়তা ইত্যাদি। উপস্থাপিত যুক্তির ভিত্তিতে মুহাজিরগণ নবীর (স.) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারী এবং খেদমত ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আনসারগণ উজির হওয়ার জন্য যোগ্য; শাসক হওয়ার জন্য নয়, এছাড়া মুহাজিরদের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিরোধিতাকারীদের যুক্তি খণ্ডন ইত্যাদি। [১২]
* '''[[হাবাব ইবনে মুনযির]]:''' সাকীফাতে ২ বা ৩ দফায় কথা বলেছেন; প্রতিবারই তার কথাবার্তায় মুহাজিরদের বিরুদ্ধে হুমকির সূর ছিল অথবা আবুবকর ও ওমরের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান।[১৩] তিনি তার কথার একাংশে প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে আমির নির্বাচনের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।[১৪]
* '''[[হাবাব ইবনে মুনযির]]:''' সাকীফাতে ২ বা ৩ দফায় কথা বলেছেন; প্রতিবারই তার কথাবার্তায় মুহাজিরদের বিরুদ্ধে হুমকির সূর ছিল অথবা আবুবকর ও ওমরের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৫।</ref> তিনি তার কথার একাংশে প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে আমির নির্বাচনের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।[১৪]
* '''[[ওমর ইবনে খাত্তাব]]:''' তিনি অধিকাংশ ক্ষেত্রে আবুবকরের কথা সত্যায়ন এবং আবুবকর কর্তৃক উত্থাপিত যুক্তির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ঐ যুক্তিগুলোর কয়েকটি হলো: যদি মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ত তাঁর আত্মীয়দের মধ্য থেকে কেউ হয় তবে সেক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা আরবরা করবে না, দুই দল থেকে একজন করে আমির নির্বাচন সম্ভব নয়; কেননা এক খাপে দু’টি তলোয়ারের স্থান হয় না ইত্যাদি।[১৫]
* '''[[ওমর ইবনে খাত্তাব]]:''' তিনি অধিকাংশ ক্ষেত্রে আবুবকরের কথা সত্যায়ন এবং আবুবকর কর্তৃক উত্থাপিত যুক্তির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ঐ যুক্তিগুলোর কয়েকটি হলো: যদি মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ত তাঁর আত্মীয়দের মধ্য থেকে কেউ হয় তবে সেক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা আরবরা করবে না, দুই দল থেকে একজন করে আমির নির্বাচন সম্ভব নয়; কেননা এক খাপে দু’টি তলোয়ারের স্থান হয় না ইত্যাদি।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৫।</ref>
* '''[[আবু উবাইদা জাররাহ]]:''' আনসারের উদ্দেশ্যে তিনি দ্বীন ও মুসলিম উম্মাহ’র ঐক্যের ভীতে পরিবর্তন না আনা প্রসঙ্গে নিষেধ করে।[১৬]
* '''[[আবু উবাইদা জাররাহ]]:''' আনসারের উদ্দেশ্যে তিনি দ্বীন ও মুসলিম উম্মাহ’র ঐক্যের ভীতে পরিবর্তন না আনা প্রসঙ্গে নিষেধ করে।[১৬]
* '''[[বাশির ইবনে সা’দ]]:''' তিনি ছিলেন খাযরাজ গোত্রের ও আনসারদের একজন। তিনি কয়েক দফায় আবুবকর ও তার সঙ্গীদের কথার সমর্থন করেন এবং ‘আল্লাহকে ভয় করো’, একজন মুসলমানের অধিকারের বিরোধিতা করো না ইত্যাদি বাক্যের মাধ্যমে মুহাজিরগণের বিরোধিতা না করার জন্য আনসারগণকে নিষেধ করেন।[১৭]
* '''[[বাশির ইবনে সা’দ]]:''' তিনি ছিলেন খাযরাজ গোত্রের ও আনসারদের একজন। তিনি কয়েক দফায় আবুবকর ও তার সঙ্গীদের কথার সমর্থন করেন এবং ‘আল্লাহকে ভয় করো’, একজন মুসলমানের অধিকারের বিরোধিতা করো না ইত্যাদি বাক্যের মাধ্যমে মুহাজিরগণের বিরোধিতা না করার জন্য আনসারগণকে নিষেধ করেন।[১৭]
৩৮ নং লাইন: ৩৮ নং লাইন:
উইলফার্ড মাদেলুঙ্গের ভাষায়, মুহাজিরদের মধ্য থেকে শুধুমাত্র আবুবকর, [[ওমর]] ও [[আবু উবাইদা]] সাকীফায় উপস্থিত ছিলেন। আর তাদের সাথে তাদের ব্যক্তিগত সহকারী, পরিবারের সদস্য এবং শুভাকাঙ্খি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আসার বিষয়টিও অসম্ভব নয়। একইভাবে [[আবু হুযাইফা|আবু হুযাইফার]] আযাদকৃত দাস ‘[[সালিম|সালিমের]]’ উপস্থিত হওয়ার তথ্যও দিয়েছেন; যিনি ছিলেন আবুবকরের হাতে বাইয়াতকারী প্রথম কয়েকজনের একজন। যদিও প্রথমসারির নির্ভরযোগ্য কোন সূত্রে তার উপস্থিতির বিষয়টি উল্লিখিত হয় নি। সূত্রগুলিতে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য মুহাজির এবং দ্বিতীয় বা সাধারণ সারির সাহাবাদের উপস্থিত থাকার কোন তথ্যও উল্লিখিত হয় নি।[২২] গবেষকদের অনেকে কিছু কিছু প্রমাণের ভিত্তিতে এ কথা স্বীকার করেছেন যে, সাকীফায় অল্পসংখ্যক মুহাজির উপস্থিত ছিলেন।[২৩]
উইলফার্ড মাদেলুঙ্গের ভাষায়, মুহাজিরদের মধ্য থেকে শুধুমাত্র আবুবকর, [[ওমর]] ও [[আবু উবাইদা]] সাকীফায় উপস্থিত ছিলেন। আর তাদের সাথে তাদের ব্যক্তিগত সহকারী, পরিবারের সদস্য এবং শুভাকাঙ্খি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আসার বিষয়টিও অসম্ভব নয়। একইভাবে [[আবু হুযাইফা|আবু হুযাইফার]] আযাদকৃত দাস ‘[[সালিম|সালিমের]]’ উপস্থিত হওয়ার তথ্যও দিয়েছেন; যিনি ছিলেন আবুবকরের হাতে বাইয়াতকারী প্রথম কয়েকজনের একজন। যদিও প্রথমসারির নির্ভরযোগ্য কোন সূত্রে তার উপস্থিতির বিষয়টি উল্লিখিত হয় নি। সূত্রগুলিতে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য মুহাজির এবং দ্বিতীয় বা সাধারণ সারির সাহাবাদের উপস্থিত থাকার কোন তথ্যও উল্লিখিত হয় নি।[২২] গবেষকদের অনেকে কিছু কিছু প্রমাণের ভিত্তিতে এ কথা স্বীকার করেছেন যে, সাকীফায় অল্পসংখ্যক মুহাজির উপস্থিত ছিলেন।[২৩]


বিভিন্ন সূত্রের বর্ণনার ভিত্তিতে আনসারদের মধ্যে প্রসিদ্ধ যে সকল ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন: [[সা’দ ইবনে উবাদাহ]], তার পুত্র [[কায়েস]], [[বাশির ইবনে সা’দ]] -সা’দের চাচাতো ভাই ও প্রতিদ্বন্দ্বী-, [[উসাইদ ইবনে হুদ্বাইর]], [[সাবিত ইবনে কায়েস]], [[বাররা’ ইবনে আযেব]] ও [[হাবাব ইবনে মুনযির]]।[২৪]
বিভিন্ন সূত্রের বর্ণনার ভিত্তিতে আনসারদের মধ্যে প্রসিদ্ধ যে সকল ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন: [[সা’দ ইবনে উবাদাহ]], তার পুত্র [[কায়েস]], [[বাশির ইবনে সা’দ]] -সা’দের চাচাতো ভাই ও প্রতিদ্বন্দ্বী-, [[উসাইদ ইবনে হুদ্বাইর]], [[সাবিত ইবনে কায়েস]], [[বাররা’ ইবনে আযেব]] ও [[হাবাব ইবনে মুনযির]]।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২১-২৬।</ref>


‘যদি তাদের (মুহাজির) সাথে যুদ্ধ করার মত সঙ্গী সা’দের থাকত নিঃসন্দে তিনি তাদের সাতে সংঘর্ষে জড়াতেন।’[২৫] -এ বাক্যের মাধ্যমে ইবনে কুতাইবা এ বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছেন যে, সাকীফায় উপস্থিত আনসারদের মাঝে সেদিন ইজমা সংঘটিত হয় নি এবং তাদের সংখ্যাও ছিল কম।[২৬]
‘যদি তাদের (মুহাজির) সাথে যুদ্ধ করার মত সঙ্গী সা’দের থাকত নিঃসন্দে তিনি তাদের সাতে সংঘর্ষে জড়াতেন।’<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৭।</ref> -এ বাক্যের মাধ্যমে ইবনে কুতাইবা এ বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছেন যে, সাকীফায় উপস্থিত আনসারদের মাঝে সেদিন ইজমা সংঘটিত হয় নি এবং তাদের সংখ্যাও ছিল কম।[২৬]


== সাকীফায় আনসারদের পরামর্শসভার নেপথ্য কারণ ==
== সাকীফায় আনসারদের পরামর্শসভার নেপথ্য কারণ ==
৭১ নং লাইন: ৭১ নং লাইন:
[আল-ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ গ্রন্থে ইবনে কুতাইবাহ
[আল-ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ গ্রন্থে ইবনে কুতাইবাহ


বনি উমাইয়া উসমান ইবনে আফফানকে ঘিরে এবং বনি যোহরা সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফকে ঘিরে বসেছিল; তারা সকলে মসজিদে সমবেত হয়েছিলেন। যখন আবুবকর ও আবু উবাইদাহ তাদের কাছে এলেন এবং আবুবকরের হাতে মুসলমানদের বাইয়াতের কাজও সম্পন্ন হয়েছিল, ওমর ইবনে খাত্তাব মসজিদে সমবেতদের উদ্দেশ্যে বললেন: তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে বসেছো? ওঠো, আবুবকরের হাতে বাইয়াত করো, আমি তার হাতে বাইয়াত করেছি। ওমরের কথা শেষ হওয়ার পর উসমান ইবনে আফফান ও উপস্থিত বনি উমাইয়ার লোকেরা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করে। একইভাবে সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফের সাথে যারা সমআকিদার অধিকারী ছিলেন তারাও।[৩৭]
বনি উমাইয়া উসমান ইবনে আফফানকে ঘিরে এবং বনি যোহরা সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফকে ঘিরে বসেছিল; তারা সকলে মসজিদে সমবেত হয়েছিলেন। যখন আবুবকর ও আবু উবাইদাহ তাদের কাছে এলেন এবং আবুবকরের হাতে মুসলমানদের বাইয়াতের কাজও সম্পন্ন হয়েছিল, ওমর ইবনে খাত্তাব মসজিদে সমবেতদের উদ্দেশ্যে বললেন: তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে বসেছো? ওঠো, আবুবকরের হাতে বাইয়াত করো, আমি তার হাতে বাইয়াত করেছি। ওমরের কথা শেষ হওয়ার পর উসমান ইবনে আফফান ও উপস্থিত বনি উমাইয়ার লোকেরা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করে। একইভাবে সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফের সাথে যারা সমআকিদার অধিকারী ছিলেন তারাও।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৯৯০ খ্রি., খণ্ড ১, পৃ. ২৮।</ref>


আবু সুফিয়ান: আবু সুফিয়ানকে [[মহানবি (স.)]] কোন কাজে মদিনার বাইরে প্রেরণ করেছিলেন। মদিনায় ফিরে আল্লাহর নবির (স.) ওফাত এবং সাকীফায় বাইয়াতের বিষয়ে অবগত হওয়ার পর এ সম্পর্কে [[আলী (আ.)]] ও [[আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব|আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের]] প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি জানতে চাইলেন। তাদের দু’জনের নীরবে গৃহে অবস্থানের কথা জেনে তিনি বললেন: ‘আল্লাহর কসম, যদি তাদের জন্য জীবিত থাকি তাহলে তাদের পাগুলোকে (মিম্বারের) উঁচু স্থানে নিয়ে যাব।’ তিনি আরও বললেন: ‘এমন ধূলোবালি আমি উড়তে দেখছি রক্তবৃষ্টি ছাড়া তা (বাতাস থেকে) পরিচ্ছন্ন হবে না।’[৩৮] বিভিন্ন সূত্রে উল্লিখিত হয়েছে যে, মদিনায় প্রবেশের পর আবু সুফিয়ান আলীর (আ.) খেলাফতের সমর্থনে এবং আবুবকর ও ওমরের তিরস্কারে কিছু পংতি আবৃতি করেন।[৩৯]
আবু সুফিয়ান: আবু সুফিয়ানকে [[মহানবি (স.)]] কোন কাজে মদিনার বাইরে প্রেরণ করেছিলেন। মদিনায় ফিরে আল্লাহর নবির (স.) ওফাত এবং সাকীফায় বাইয়াতের বিষয়ে অবগত হওয়ার পর এ সম্পর্কে [[আলী (আ.)]] ও [[আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব|আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের]] প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি জানতে চাইলেন। তাদের দু’জনের নীরবে গৃহে অবস্থানের কথা জেনে তিনি বললেন: ‘আল্লাহর কসম, যদি তাদের জন্য জীবিত থাকি তাহলে তাদের পাগুলোকে (মিম্বারের) উঁচু স্থানে নিয়ে যাব।’ তিনি আরও বললেন: ‘এমন ধূলোবালি আমি উড়তে দেখছি রক্তবৃষ্টি ছাড়া তা (বাতাস থেকে) পরিচ্ছন্ন হবে না।’[৩৮] বিভিন্ন সূত্রে উল্লিখিত হয়েছে যে, মদিনায় প্রবেশের পর আবু সুফিয়ান আলীর (আ.) খেলাফতের সমর্থনে এবং আবুবকর ও ওমরের তিরস্কারে কিছু পংতি আবৃতি করেন।[৩৯]
৭৭ নং লাইন: ৭৭ নং লাইন:
মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান: মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান এক চিঠিতে [[মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকর|মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকরের]] উদ্দেশে (সাকীফার ঘটনার বহু বছর পর) লিখেছিলেন: ‘...তোমার পিতা ও ওমর ছিলেন আলীর অধিকার হরণকারী এবং তাঁর বিরোধিতাকারী প্রথম ব্যক্তি। তারা দু’জন পরস্পরের হাতে হাত মিলিয়ে আলীকে তাদের হাতে বাইয়াতের আহবান জানান। আর আলী যখন বাইয়াতের বিরোধিতা ও অস্বীকার করলো তখন তারা অন্যায় সিদ্ধান্ত নিল এবং তার সম্পর্কে ভয়ংকর ভাবনা ভাবলো...।’[৪০]
মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান: মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান এক চিঠিতে [[মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকর|মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকরের]] উদ্দেশে (সাকীফার ঘটনার বহু বছর পর) লিখেছিলেন: ‘...তোমার পিতা ও ওমর ছিলেন আলীর অধিকার হরণকারী এবং তাঁর বিরোধিতাকারী প্রথম ব্যক্তি। তারা দু’জন পরস্পরের হাতে হাত মিলিয়ে আলীকে তাদের হাতে বাইয়াতের আহবান জানান। আর আলী যখন বাইয়াতের বিরোধিতা ও অস্বীকার করলো তখন তারা অন্যায় সিদ্ধান্ত নিল এবং তার সম্পর্কে ভয়ংকর ভাবনা ভাবলো...।’[৪০]


এছাড়া, মসজিদে আবুবকরের জন্য বাইয়াত গ্রহণের সময় [[বনি উমাইয়া]] [[উসমান|উসমানের]] চতুর্পাশে জড়ো হয়েছিল এবং [[কুরাইশ|কুরাইশের]] উপগোত্র [[বনি যোহরার]] লোকেরা [[আব্দুর রাহমান ইবনে আওফ]] অথবা [[সা’দ|সা’দকে]] নির্বাচনের বিষয়ে একমত ছিল; কিন্তু [[ওমর|ওমরের]] প্রচেষ্টায় তারা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করতে সম্মত হয়।[৪১]
এছাড়া, মসজিদে আবুবকরের জন্য বাইয়াত গ্রহণের সময় [[বনি উমাইয়া]] [[উসমান|উসমানের]] চতুর্পাশে জড়ো হয়েছিল এবং [[কুরাইশ|কুরাইশের]] উপগোত্র [[বনি যোহরার]] লোকেরা [[আব্দুর রাহমান ইবনে আওফ]] অথবা [[সা’দ|সা’দকে]] নির্বাচনের বিষয়ে একমত ছিল; কিন্তু [[ওমর|ওমরের]] প্রচেষ্টায় তারা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করতে সম্মত হয়।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৯৯০ খ্রি., খণ্ড ১, পৃ. ২৮।</ref>


== আলীর (আ.) প্রতিক্রিয়া ==
== আলীর (আ.) প্রতিক্রিয়া ==
৯৭ নং লাইন: ৯৭ নং লাইন:


== হযরত ফাতিমার প্রতিক্রিয়া ==
== হযরত ফাতিমার প্রতিক্রিয়া ==
[[হযরত ফাতিমা (সা. আ.)]] সাকীফার ঘটনায় গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে একে রাসূলের (সা.) আদেশ লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন। তার বিরোধিতার কথা ঘোষণা তিনি ‘আলীর (আ.) নিকট হতে জোরপূর্বক বাইয়াত গ্রহণের চেষ্টা’ এবং ‘তাঁর গৃহ ঘেরাওয়ের সময়’ প্রকাশ করেছিলেন।[৪৯] এছাড়া, [[মসজিদে নববি|মসজিদে নববিতে]] প্রদত্ত ‘[[খোতবায়ে ফাদাকিয়া]]’ নামে বিখ্যাত খোতবাতেও তিনি এ বিষয়ে নিজের বিরোধিতা প্রকাশ করেছিলেন।[৫০]
[[হযরত ফাতিমা (সা. আ.)]] সাকীফার ঘটনায় গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে একে রাসূলের (সা.) আদেশ লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন। তার বিরোধিতার কথা ঘোষণা তিনি ‘আলীর (আ.) নিকট হতে জোরপূর্বক বাইয়াত গ্রহণের চেষ্টা’ এবং ‘তাঁর গৃহ ঘেরাওয়ের সময়’ প্রকাশ করেছিলেন।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩০-৩১।</ref> এছাড়া, [[মসজিদে নববি|মসজিদে নববিতে]] প্রদত্ত ‘[[খোতবায়ে ফাদাকিয়া]]’ নামে বিখ্যাত খোতবাতেও তিনি এ বিষয়ে নিজের বিরোধিতা প্রকাশ করেছিলেন।[৫০]


বিভিন্ন সূত্রের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা. আ.) শয্যাশায়ী অবস্থায় জীবনের শেষ দিনগুলোতে তাকে দেখতে আসা আনসার ও মুহাজির নারীদের উদ্দেশে সাকিফার সিদ্ধান্তকে আল্লাহর রাসূলের (স.) নির্দেশ লঙ্ঘন আখ্যায়িত করে এর পরিণতিতে ইসলাম যে সকল ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।[৫১]
বিভিন্ন সূত্রের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা. আ.) শয্যাশায়ী অবস্থায় জীবনের শেষ দিনগুলোতে তাকে দেখতে আসা আনসার ও মুহাজির নারীদের উদ্দেশে সাকিফার সিদ্ধান্তকে আল্লাহর রাসূলের (স.) নির্দেশ লঙ্ঘন আখ্যায়িত করে এর পরিণতিতে ইসলাম যে সকল ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।[৫১]
confirmed, templateeditor
১,৯৬২টি

সম্পাদনা