সূরা তাওবা (আয়াত নং ৩৬)
![]() | |
সূরার নাম | সূরা তাওবা |
---|---|
আয়াত নম্বর | ৩৬ |
পারা নম্বর | ১১ |
অবতীর্ণের স্থান | মদিনা |
বিষয় | ফিকহি |
প্রসঙ্গ | হারাম মাসসমূহে যুদ্ধের বিধান |
সংশ্লিষ্ট আয়াত | সূরা বাকারা ( আয়াত নং ১৯৪)• সূরা বাকারা ( আয়াত নং ২১৭) |
সূরা তাওবা (আয়াত নং- ৩৬) (আরবি: ۳۶-الآية من سورة التوبة); এ আয়াতে বারো মাস (চন্দ্র মাস) এবং চারটি পবিত্র মাসে যুদ্ধ হারাম করার কথা বলা হয়েছে। মুফাসসিরদের মতে, এই চারটি মাস হল রজব, যিলকদ, যিলহজ্জ এবং মুহররম। গবেষকদের মতে, মহান আল্লাহ এই চারটি মাসকে হারাম করেছেন যাতে মানুষ এই সময়কালে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকে এবং নিরাপত্তা বিরাজ করে। কিছু মুফাসসির, এই আয়াতকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করার বিধান সম্পর্কিত বলে মনে করেছেন।
কিছু শিয়া হাদিস অনুযায়ী, রূপক অর্থে এই আয়াত দ্বারা বারোজন শিয়া ইমামের (আ.) নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে মনে করা হয়; তবে, বেশিরভাগ শিয়া মুফাসসির বিশ্বাস করেন যে, এই আয়াতের বিষয়বস্তু জিহাদের আহকামের সাথে সম্পর্কিত।
আয়াতের বিষয়বস্তু
সূরা তাওবার ৩৬ নং আয়াতে চন্দ্র বছরের বারো মাসের মধ্যে চারটি মাসে যুদ্ধ হারাম করা হয়েছে। আল্লামা তাবাতাবাঈর মতে, মুফাসসিরগণ একমত যে এই চারটি মাস হল রজব, যিলকদ, যিলহজ্জ এবং মুহররম।[১] মুফাসসিরদের মতে, চার মাসব্যাপী যুদ্ধ হারাম হওয়ার কারণ হল, যদি এই সময়ের মধ্যে যোদ্ধারা তাদের অস্ত্র রেখে দেয়, তাহলে তারা চিন্তাভাবনা ও উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ পাবে এবং যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।[২]
কিছু তাফসীরকার আয়াতের শেষ অংশের তাফসির সম্পর্কে বলেছেন যে, তোমরা কোনো মতবিরোধ ছাড়াই মুশরিকদের সাথে ঐক্যবদ্ধ ও সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করো, ঠিক যেমন তারা তোমাদের সাথে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করে। অন্যদিকে, কিছু তাফসীরকারক আয়াতের এই অংশের অর্থ এইভাবে তাফসির করেছেন যে, তোমরা সকল মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করো, ঠিক যেমন তারা সকলে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে।[৩][৪][৫] কতিপয় মুফাসসির এও বলেছেন যে, আয়াতটির অর্থ মুশরিকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলকভাবে যুদ্ধ করা।[৬]
আয়াতের টেক্সট ও অনুবাদ
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
অর্থ: নিশ্চয়ই, আল্লাহর কিতাবে আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারো [চন্দ্র] মাস, যেদিন থেকে তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে চারটি হারাম বা সম্মানিত। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম, অতএব, এই সময়ে তোমরা নিজেদের উপর জুলুম করো না এবং মুশরিকদের সাথে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করো যেমন তারা তোমাদের সাথে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করে এবং জেনে রাখো যে, আল্লাহ মুত্তাকিনদের সাথে আছেন।
সূরা তাওবা: ৩৬।
ইমামদের (আ.) সাথে সম্পর্ক
তাফসিরে নূরুস্ সাকালাইন এবং বুরহানে বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী, সূরা তাওবার ৩৬ নং আয়াত রূপক অর্থে শিয়া ইমামদের (আ.) প্রতি ইঙ্গিত করে।[৭][৮] ইমাম বাকের (আ.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে যে, এই আয়াতটি (دین قیّم) সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন) এর প্রতি ইঙ্গিত করেছে, যদিও মাসসমুহ সম্পর্কে জ্ঞান রাখার সাথে (دین قیّم) এর কোনও সম্পর্ক নেই; কারণ ইহুদি, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও মাসসমুহের জ্ঞান রাখে ও নাম জানে।
এই হাদিস অনুসারে, এই বারো মাস শিয়া ইমামদের (আ.) নামকে নির্দেশ করে যারা আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠাকারী। এছাড়াও, চারটি হারাম মাস দ্বারা চারজন শিয়া ইমামকে (আ.)-কে নির্দেশ করে যাদের নাম আলী, যথা- ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (আ.), ইমাম সাজ্জাদ (আ.) (আলী ইবনে হুসাইন), ইমাম রেজা (আ.) (আলী ইবনে মুসা), এবং ইমাম হাদী (আ.) (আলী ইবনে মুহাম্মাদ)।[৯]
তবে, আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজী, অন্যান্য কিছু হাদিসের উপর ভিত্তি করে বলেছেন যে, (ذلک دین القیم) বাক্যাংশটি মূলত এই সত্যকে নির্দেশ করে যে, হারাম মাসসমুহ অতীতের ধর্মগুলিতেও হারাম ছিল এবং এটি ঐশ্বরিক ধর্মগুলির একটি সুন্নত।[১০]
তথ্যসূত্র
- ↑ তাবাতাবাঈ, তাফসিরে আল-মিযান, ১৩৫২ (ফার্সি সন), খ: ৯, পৃ: ২৬৭।
- ↑ তাকী যাদেহ আকবারী, জিহাদ দার আইনেয়ে কুরান, ১৩৮৬ (ফার্সি সন), খ: ২, পৃ: ৭০ ও মাকারেম শিরাজী, তাফসিরে নেমুনেহ, ১৩৭৪ (ফার্সি সন), খ: ৭, পৃ: ৪০৭।
- ↑ কুম্মী, তাফসিরে কুম্মী, ১৪০৪ হি., খ: ১, পৃ: ২৮৯।
- ↑ তাবাতাবাঈ, তাফসিরে আল-মিযান, ১৩৫২ (ফার্সি সন), খ: ৯, পৃ: ২৬৯।
- ↑ তাবারসী, মাজমাউল বায়ান, ১৪০৮ হি., খ: ৫, পৃ: ৪৩।
- ↑ তাবাতাবাঈ, তাফসিরে আল-মিযান, ১৩৫২ (ফার্সি সন), খ: ৯, পৃ: ২৬৯।
- ↑ বাহরানী, তাফসিরে আল বুরহান, ১৪১৫ হি., খ: ২, পৃ: ৭৭২-৭৭৫।
- ↑ হুয়াইযি, তাফসিরে নুরুস্ সাকালাইন, ১৪১৫ হি., খ: ২, পৃ; ২১৪।
- ↑ বাহরানী, তাফসিরে আল বুরহান, ১৪১৫ হি., খ: ২, পৃ: ৭৭৬।
- ↑ মাকারেম শিরাজী, তাফসিরে নেমুনেহ, ১৩৭৪ (ফার্সি সন), খ: ৭, পৃ: ৪০৬।
গ্রন্থপঞ্জি
- বাহরানী, হাশেম বিন সোলাইমান, তাফসিরে আল বুরহান, কোম, মুয়াসসাসাতুল বে’সাহ, ১৪১৫ হি.,
- তাকী যাদেহ আকবারী, আলী, জিহাদ দার আইনেয়ে কুরান, কোম, যামযামে হিদায়াত, ১৩৮৬ (ফার্সি সন),
- হুয়াইযি, আব্দে আলী জুমা, তাফসিরে নুরুস্ সাকালাইন, ইরান, ইসমাইলিয়ান, ১৪১৫ হি.,
- তাবাতাবাঈ, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হুসাইন, তাফসিরে আল-মিযান, বৈরুত, মুয়াসসাসাতুল আলামি লিল মাতবুয়াত, ১৩৫২ (ফার্সি সন),
- তাবারসী, ফাযল বিন হাসান, মাজমাউল বায়ান, বৈরুত, দারুল মারিফা, ১৪০৮ হি.,
- কুম্মী, আলী বিন ইবরাহিম, তাফসিরে কুম্মী, দারুল কিতাব, ১৪০৪ হি.,
- মাকারেম শিরাজী, নাসের, তাফসিরে নেমুনেহ, তেহরান, দারুল কুতুবিল ইসলামিয়্যাহ, ১৩৭৪ (ফার্সি সন)।