সাদিক (উপাধি)

wikishia থেকে

নিবন্ধটি ইমাম সাদিকের (আ.) উপাধি সম্পর্কে, ইমাম জাফর সাদিকের (আ.) ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অধিক অবগতির জন্য ‘ইমাম সাদিক আলাইহিস সালাম’ নিবন্ধটি পড়ুন।

সাদিক; ইমাম জাফার ইবনে মুহাম্মাদের (আ.) সবচেয়ে প্রসিদ্ধ উপাধি।[১] কথা ও কাজের ক্ষেত্রে সততার কারণে শিয়াদের ষষ্ঠ ইমাম এ উপাধিতে প্রসিদ্ধি পেয়েছেন।[২] একইভাবে বলা হয়েছে যে, সারা জীবনে কখনও তার মাঝে বিচ্যুতি ও নড়বড়ে অবস্থা দেখা যায় নি এ কারণে তাকে ‘সাদিক’ বলা হয়।[৩]

ইমাম সাজ্জাদ (আ.) থেকে বর্ণিত এক রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে ষষ্ঠ ইমামকে সাদিক আখ্যায়িত করার কারণ হলো, তাকে জাফার কাযযাব থেকে পৃথক করা।[৪] উপরোক্ত রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, শিয়াদের চতুর্থ ইমাম আলী ইবনিল হুসাইনকে (আ.) জিজ্ঞেস করা হলো যে, কেন আসমানবাসী শুধু ষষ্ঠ ইমামকে ‘সাদিক’ নামে নামকরণ করেছে, অথচ আপনারা (ইমামগণ) সকলেই তো সত্যবাদী?

উত্তরে তিনি বললেন: আল্লাহর রাসূল (স.) থেকে আমার পিতা এ সংবাদ প্রদান করেছেন যে, যখন আমার সন্তান (পৌত্র) ‘জাফার ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ভূমিষ্ট হবে তখন তার নাম রেখো ‘সাদিক’; কেননা তার বংশধারার পঞ্চম পুরুষের নামও হবে জাফার, যে মিথ্যা ইমামতের দাবী করবে, আর মহান আল্লাহর নিকট সে জাফার কাযযাব এবং আল্লার প্রতি অপবাদ আরোপকারী (নামে পরিচিত)।[৫] এলালুশ শারায়ে গ্রন্থেও নাম করণের একই কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।[৬]

আবার কেউ কেউ বলেছেন, তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন থেকে দূরে থাকার কারণে তিনি সাদিক উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন; কেননা ঐ সময় যারা নিজের চতুর্পাশে জনগণকে জড়ো করে শাসকের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য উস্কানি দিত তাদেরকে ‘কাযযাব’ (মিথ্যুক) বলা হত।[৭] একইভাবে মাকাতিলুত তালিবীন গ্রন্থে আবুল ফারাজ ইসফাহানি (২৮৪-৩৫৬) বর্ণিত একটি রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে বলা হয়েছে যে, মানসুর আব্বাসি (খেলাফতকাল ১৩৬-১৫৮ হি.), খেলাফত গ্রহণের পর মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে হাসান ওরফে নাফসে যাকিয়্যাহ’র হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে শিয়াদের ষষ্ঠ ইমামের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে এ উপাধি দান করেন।[৮] মানাকেব গ্রন্থে ইবনে শাহরে আশুব মাযান্দারানি যে বর্ণনা উল্লেখ করেছেন তার ভিত্তিতে, ইমাম আলীর (আ.) মাজার প্রকাশিত হওয়ার বিষয়ে ইমাম জাফার ইবনে মুহাম্মাদের (আ.) ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হওয়ার পর আব্বাসী খলিফা মানসুর দাওয়ানেকি ইমামকে ‘সাদিক’ উপাধি প্রদান করে।[৯]

তথ্যসূত্র

  1. মাজলিসী, জালাউল উয়ুন, ১৩৮২ ফার্সি সন, পৃ. ৮৬৯।
  2. মুযাফফার, আল-ইমামুস সাদিক, ১৪২১ হি., খ. ২, পৃ. ১৯০।
  3. মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৩৬৩ ফার্সি সন, খ. ৪৭, পৃ. ৩৩।
  4. কুম্মি, মুনতাহাল আমাল, ১৩৭৯ ফার্সি সন, খ. ২, পৃ. ১৩৩৬।
  5. কুম্মি, মুনতাহাল আমাল, ১৩৭৯ ফার্সি সন, খ. ২, পৃ. ১৩৩৬।
  6. সাদুক, এলালুশ শারায়ে, ১৪০৮ হি., খ. ১, পৃ. ২৭৪।
  7. পকাতচি, জাফার সাদিক (আ.), ইমাম, পৃ. ১৮১।
  8. আবুল ফারাজ ইসফাহানি, মাকাতিলুত তালিবীন, ১৩৮৫ হি., পৃ. ১৭৩।
  9. ইবনে শাহরে আশুব, মানাকেব, ১৩৭৯ হি., খ. ৪, পৃ. ২৭৩।

গ্রন্থপঞ্জি

  • ইবনে শাহরে আশুব, মুহাম্মাদ আলী, মানাকেবে আলে আবি তালিব, কোম, আল্লামা, প্রথম সংস্করণ, ১৩৭৯ ফার্সি সন।
  • আবুল ফারাজ ইসফাহানি, আলী ইবনে হুসাইন, মাকাতিলুত তালিবীন, কাযেম আল-মুজাফফারের ভূমিকা, কোম, দারুল কিতাব লিততাবায়াতি ওয়ান নাশর। ১৩৮৫ হি. / ১৯৬৫ খ্রি.।
  • পকাতচি, আহমাদ, জাফার সাদিক (আ.), ইমাম, তেহরান, দায়েরাতুল মায়ারেফে বোযোর্গে ইসলামি, খ. ১৮, মারকাযে দায়েরাতুল মায়ারে বোযোর্গে ইসলামি, ১৩৭৯ ফার্সি সন।
  • সাদুক, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, এলালুশ শারায়ে, বৈরুত, আ’লামি পাবলিকেশন্স, ১৪০৮ হি.।
  • কুম্মি, শেইখ আব্বাস, মুনতাহাল আমাল ফীত তাওয়ারীখিন নাবি ওয়াল আল, কোম, দালীলে মা, ১৩৭৯ ফার্সি সন।
  • মাজলিসী, মুহাম্মাদ বাকের, বিহারুল আনওয়ার, তেহরান, ইসলামিয়্যাহ, ১৩৬৩ ফার্সি সন।
  • মাজলিসী, মুহাম্মাদ বাকের, জালাউল উয়ুন, কোম, সারওয়ার, ১৩৮২ হি.।
  • মুযাফফার, মুহাম্মাদ হুসাইন, আল-ইমামুস সাদিক, কোম, জামেয়ে মুদাররেসীন, ১৪২১ হি.।