রোজার কাফফারা

wikishia থেকে
নিবন্ধটিতে ফিকাহ সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ের সংজ্ঞা তুলে ধরা হয়েছে, এটি আমলের মানদণ্ড নয়। এ বিষয়ক মাসআলা ও আহকাম জানার জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রন্থের শরণাপন্ন হোন।

রোজার কাফফারা হল; রমজান মাসের রোজা, নির্দিষ্ট দিনের জন্য মানতকৃত রোজা এবং যোহরের আজানের পর রমজান মাসের কাযা রোজা বাতিল করার কারণে বান্দার উপর যা কিছু ওয়াজিব হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করার কাফফার হল; ২ মাস রোজা রাখা, যার ৩১টি রোজা হবে ধারাবাহিক বিরতিহীনভাবে অথবা ৬০ জন মিসকিনকে খাবার প্রদান করা।

রোজার কাফফারা তখনি ওয়াজিব হয় যখন রোজাদার ব্যক্তি জানে, যে কাজ সে করছে তা রোজা ভঙ্গকারী। কোন কোন ফকীহ’র দৃষ্টিতে যে কোন রোজা ভঙ্গকারী কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে আঞ্জাম দিলে তা কাফফারা ওয়াজিব হওয়ার কারণ বলে বিবেচিত হয়। এর বিপরীতে কোন কোন ফকীহ’র মতে ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা বাতিল করলেই কাফফারা ওয়াজিব হয় না।

শিয়া ফকীহদের দৃষ্টিতে যদি কেউ মদপান, ব্যভিচার বা এর মত কোন হারাম কাজের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করে তাহলে তার উপর সবকটি কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায় (দুই মাস রোজা ও ৬০ জন দুস্থকে খাদ্য প্রদান)। তবে কোন কোন ফকীহ এক্ষেত্রে সবকটি কাফফারা ওয়াজিব হওয়াকে এহতেয়াতে মুস্তাহাবের ভিত্তিতে বলেছেন, আবার কেউ কেউ বলেছেন এহতেয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে।

কাফফারা’র অর্থ

কাফফারা হল; একটি আর্থিক বা শারীরিক দণ্ড যা কিছু কিছু গুনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণে বান্দার উপর বর্তায়।[১] কাফফারা সাধারণত পরকালীন শাস্তি লাঘব অথবা ক্ষমার কারণ হয়।[২] ফকীহগণের দৃষ্টিতে কিছু কিছু রোজা ভঙ্গ করার কারণে কাফফারা ওয়াজিব হয়:

রোজার কাফফারাসমূহ

প্রসিদ্ধ শিয়া ফকীহগণ নিম্নোক্ত ৩টির যে কোন একটিকে রোজার কাফফারা বলে সাব্যস্ত করেছেন:

  • পর্যায়ক্রমে ৬০ দিন রোজা রাখা যার ৩১টি রোজা হবে বিরতিহীনভাবে।[৪]
  • ৬০ জন দুস্থকে খাদ্য প্রদান করা।
  • ১ জন দাস মুক্ত করা।[৫] (বর্তমানে দাস মুক্ত করার বিষয়টির কোন কার্যকারিতা না থাকায় বিষয়টিরও কার্যকারিতা নেই।)[৬]

রোজার কাফফারা সম্পর্কে জ্ঞান রাখা ও না রাখার প্রভাব

ফকীহগণের দৃষ্টিতে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এবং কোন অনুমোদিত কারণ ছাড়াই রোজা ভঙ্গ করলে ঐ রোজা’র কাযা আদায়ের পাশাপাশি কাফফারা প্রদান করাও ওয়াজিব।[৭] এছাড়া কাফফারা ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত হল রোজা ভঙ্গকারী ব্যক্তি এ বিষয়ে অবগত থাকবে, যে কাজ সে করছে তা রোজা ভঙ্গকারী কর্মসমূহের অন্তর্ভুক্ত।[৮] এ কারণে কাফফারা’র হুকুম জাহেলে কাসের[৯] (যে মুসলমানের পক্ষে শরিয়তের হুকুম আহকাম সম্পর্কে অবগত হওয়া সম্ভব নয়।) ও জাহেলে মুকাসসের (যে ব্যক্তি শরয়ী আহকাম সম্পর্কে অবগত নয় এবং তা জানার ক্ষেত্রেও উদাসীন।)[১০] এর ক্ষেত্রে, এক কথায় অনবগত ব্যক্তির ক্ষেত্রে বর্তাবে না। অবশ্য কারো কারো মতে জাহেলে মুকাসসের হল ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে কাজটি রোজা ভঙ্গকারী হওয়ার বিষয়ে অবগত। আর তাই সে কাযা করার পাশাপাশি কাফফারাও প্রদান করবে।[৮]

কোন কোন রোজা ভঙ্গকারী কাজ কাফফারার কারণ হয়?

জাওয়াহের গ্রন্থের প্রণেতা মুহাম্মাদ হাসান নাজাফির (১২০২-১২৬৬) মতে, বর্ণিত বিভিন্ন রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, রোজা ভঙ্গকারী যে কোন কাজ রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে আঞ্জাম দিলে কাযা’র সাথে সাথে কাফফারা ওয়াজিব হওয়ারও কারণ হয়।[১১] সাইয়্যেদ আবুল কাসেম খুয়ীর মতেও মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি মিথ্যারোপ করা অথবা বমি করা বা এর মত যেসকল কাজের কারণে রোজা বাতিল হয় ইচ্ছাকৃতভাবে আঞ্জাম দিলে তা কাফফারা ওয়াজিব হওয়ারও কারণ হয়।[১২]

এর বিপরীতে কিছু কিছু ফকীহগণের মতে ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা বাতিল করার কারণে সর্বক্ষেত্রে কাফফারা ওয়াজিব হয় না।[১৩] ইমাম খোমেনি’র ফতওয়ার ভিত্তিতে যদি কোন ব্যক্তি রাতে তার উপর জানাবাতের গোসল ফরজ হওয়ার পর ৩ বার জাগ্রত হয়েও গোসল না করে ঘুমিয়ে পড়ে এবং ফজরের আজানের সময় পর্যন্ত জাগ্রত না হয়; তার উপর শুধুমাত্র ঐদিনের কাযা বর্তাবে এবং কাফফারা ওয়াজিব হবে না। এছাড়া কেউ যদি ইচ্ছা করে বমি করে তার ক্ষেত্রেও একই হুকুম।[১৪]

হালাল ও হারাম উপায়ে ভঙ্গকৃত রোজার কাফফারার পার্থক্য

আরোও দেখুন: কাফফারায়ে জাম

ফকীহগণের মতে, যদি কোন ব্যক্তি পানাহার বা এর মত হালাল কোন কাজের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করে তবে ঐ রোজা কাযা করার পাশাপাশি সে যে কোন একটি কাফফারা প্রদান করবে।[১৫] কিন্তু যদি কেউ ব্যভিচার বা মদপানের ন্যায় হারাম কোন কাজের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করে তবে তাকে রোজা কাযা করার পাশাপাশি সবকটি কাফফারা আদায় করতে হবে যেগুলোকে একত্রে ‘কাফফারায়ে জাম’ বলা হয়।[১৬] তবে কিছু কিছু মারজার মতে ৩টি কাফফারা আদায় করার বিষয়টি এহতেয়াতে মুস্তাহাবের ভিত্তিতে[১৭] এবং কারো করো মতে এহতেয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে।[১৮]

রোজার কাফফার ও ফিদইয়া’র মাঝে পার্থক্য

প্রচলিত আরবিতে কাফফারা কখনো কখনো ফিদইয়া’র অর্থেও ব্যবহৃত হয়। যেমন এক মুদ খাদ্যশস্য (৭৫০ গ্রাম গম বা এর মত কিছু) প্রদান করাকে রোজার কাফফারা হিসেবে জ্ঞান করা হয়।[১৯] অথচ ফিদইয়া হল রোজার পরিবর্তে প্রদত্ত খাদ্য। অসুস্থতা বা বার্ধক্যজনিত কারণে রোজা রাখতে অক্ষম হলে অথবা এর মত অন্যান্য কারণে বা পরবর্তী রমজান মাস আসা পর্যন্ত কাযা রোজা বিলম্বিত করার (কাযা রোজা দেরীতে আঞ্জাম দেওয়ার কাফফারা) কারণে যা প্রদান করা হয়।[২০]

তথ্যসূত্র


গ্রন্থপঞ্জি