বিষয়বস্তুতে চলুন

হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

১০৪ নং লাইন: ১০৪ নং লাইন:
মহানবির (সা.) সাথে কুরাইশের শত্রুতা বৃদ্ধি এবং তাঁর অনুসারীদের উপর অমানবিক নির্যাতনের ফলে তিনি (সা.) মুসলমানদেরকে [[হাবাশা]]তে (আবিসিনিয়া) হিজরত করার নির্দেশ দিলেন। কুরাইশরা [[মুসলমান]]দের হাবাশাতে হিজরতের ঘটনা সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর তাদেরকে ফেরত আনার জন্য [[আমর বিন আস]] ও আব্দুল্লাহ বিন আবি রাবিয়াকে হাবাশার বাদশা [[নাজ্জাশী]]র নিকট পাঠায়। কিন্তু নাজ্জাশী নবমুসলিমদেরকে কুরাইশ প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানান।<ref>শাহিদী, তারিখে তাহলিলিয়ে ইসলাম, ১৩৯০ সৌরবর্ষ, পৃ. ৫১ ও ৫২।</ref>
মহানবির (সা.) সাথে কুরাইশের শত্রুতা বৃদ্ধি এবং তাঁর অনুসারীদের উপর অমানবিক নির্যাতনের ফলে তিনি (সা.) মুসলমানদেরকে [[হাবাশা]]তে (আবিসিনিয়া) হিজরত করার নির্দেশ দিলেন। কুরাইশরা [[মুসলমান]]দের হাবাশাতে হিজরতের ঘটনা সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর তাদেরকে ফেরত আনার জন্য [[আমর বিন আস]] ও আব্দুল্লাহ বিন আবি রাবিয়াকে হাবাশার বাদশা [[নাজ্জাশী]]র নিকট পাঠায়। কিন্তু নাজ্জাশী নবমুসলিমদেরকে কুরাইশ প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানান।<ref>শাহিদী, তারিখে তাহলিলিয়ে ইসলাম, ১৩৯০ সৌরবর্ষ, পৃ. ৫১ ও ৫২।</ref>


==অবরুদ্ধ বনি হাশিম==
===অবরুদ্ধ বনি হাশিম===
মক্কায় ইসলামের প্রসার এবং নব দীক্ষিত মুসলিমদেরকে ফেরত পাঠাতে নাজ্জাশী অস্বীকৃতি জানানোর পর কুরাইশ মুহাম্মাদ (সা.) ও বনি হাশিমের উপর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ চাপিয়ে দিল। তারা একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর পূর্বক এ মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ হল যে, মক্কার কোন ব্যক্তি বনি হাশেম ও বনি মুত্তালিব গোত্রের সাথে আত্মীয়তা করবে না। তাদের কাছে কিছু বিক্রি করবে না এবং তাদের থেকে কিছু ক্রয়ও করবে না। তারা এই চুক্তিনামা কা’বার দরজায় টাঙিয়ে দিল।
মক্কায় ইসলামের প্রসার এবং নব দীক্ষিত মুসলিমদেরকে ফেরত পাঠাতে নাজ্জাশী অস্বীকৃতি জানানোর পর কুরাইশরা মুহাম্মাদ (সা.) ও বনি হাশিমের উপর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ চাপিয়ে দিল। তারা একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর পূর্বক এ মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ হল যে, মক্কার কোন ব্যক্তি বনি হাশেম ও বনি মুত্তালিব গোত্রের সাথে আত্মীয়তা করবে না। তাঁদের কাছে কিছু বিক্রি করবে না এবং তাঁদের থেকে কিছু ক্রয়ও করবে না। তারা এই চুক্তিনামা কা’বার দরজায় টাঙিয়ে দিল।
ফলে হযরত আবু তালিব বাধ্য হয়ে বাড়ি ঘর ছেড়ে মহানবিসহ (সা.) বনি হাশিম ও বনি মুত্তালিব গোত্রের নারী, পুরুষ ও শিশুসহ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বাধ্য হয়ে শি’বে আবি ইউসুফ উপত্যকায় পরবর্তীতে যা [[শিবে আবু তালিব]] নাম ধারণ করে আত্মনির্বাসিত হলেন।<ref>শাহিদী, তারিখে তাহলিলিয়ে ইসলাম, ১৩৯০ সৌরবর্ষ, পৃ. ৫৩</ref>  
ফলে হযরত আবু তালিব বাধ্য হয়ে বাড়ি ঘর ছেড়ে মহানবিসহ (সা.) বনি হাশিম ও বনি মুত্তালিব গোত্রের নারী, পুরুষ ও শিশু সবাইকে সঙ্গে নিয়ে শি’বে আবি ইউসুফ উপত্যকায় পরবর্তীতে যা [[শিবে আবু তালিব]] নাম ধারণ করে আত্মনির্বাসিত হলেন।<ref>শাহিদী, তারিখে তাহলিলিয়ে ইসলাম, ১৩৯০ সৌরবর্ষ, পৃ. ৫৩</ref>  
বনি [[হাশিম]] ৩ বছরের জন্য অবরুদ্ধ এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা হল। চরম খাদ্য সংকটের মাঝে তাদের জীবন কাটছিল। এ সময় তাদের কয়েকজন আত্মীয় মাঝে মাঝে তাদের কাছে গম পৌঁছে দিত। একরাতে মহানবি (সা.) ও বনি হাশিমের ঘোরশত্রু [[আবু জাহল]] বিষয়টি সম্পর্কে জেনে যায় এবং হযরত খাদিজার নিকট গম পৌঁছে দিতে [[হাকিম বিন হিযাম]]কে বাধা দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি দল অনুতপ্ত ও বনি হাশিমের সমর্থনে আওয়াজ তোলে। তারা বলল: কেন [[বনি মাখযুম]] আরাম-আয়েশের মধ্যে দিনাতিপাত করবে এবং বনি হাশিম ও বনি আব্দুল মুত্তালিব এত কষ্ট করবে! অবশেষে তারা ঐ চুক্তিপত্র বাতিলের দাবী তুলল। ঐ চুক্তিতে সাক্ষরকারীদের একটি দল সেটি ছিঁড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল। মহানবির (সা.) জীবনীর প্রথম লেখক ইবনে ইসহাকের (৮০-১৫১ হি.) বর্ণনার ভিত্তিতে, তারা সেই চুক্তিপত্র বের করে দেখল তা উঁইপোকায় খেয়ে ফেলেছে এবং শুধুমাত্র ((باسمک اللهم)) বাক্যটি অক্ষত রয়েছে।<ref>ইবনে ইসহাক, সিরাতু ইবনে ইসহাক, ১৩৯৮ হি., পৃ. ১৬৬ ও ১৬৭; শাহিদী, তারিখে তাহলিলিয়ে ইসলাম, ১৩৯০ সৌরবর্ষ, পৃ. ৫৩।</ref>
বনি [[হাশিম]] ৩ বছরের জন্য অবরুদ্ধ এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা হল। চরম খাদ্য সংকটের মাঝে তাদের জীবন কাটছিল। এ সময় তাঁদের কয়েকজন আত্মীয় মাঝে মাঝে তাঁদের কাছে গম পৌঁছে দিত। একরাতে মহানবি (সা.) ও বনি হাশিমের ঘোরশত্রু [[আবু জাহল]] বিষয়টি সম্পর্কে জেনে যায় এবং হযরত খাদিজার নিকট গম পৌঁছে দিতে [[হাকিম বিন হিযাম]]কে বাধা দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি দল অনুতপ্ত ও বনি হাশিমের সমর্থনে আওয়াজ তোলে। তারা বলল: কেন [[বনি মাখযুম]] আরাম-আয়েশের মধ্যে দিনাতিপাত করবে এবং বনি হাশিম ও বনি আব্দুল মুত্তালিব এত কষ্ট করবে! অবশেষে তারা ঐ চুক্তিপত্র বাতিলের দাবী তুলল। ঐ চুক্তিতে সাক্ষরকারীদের একটি দল সেটি ছিঁড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল। মহানবির (সা.) জীবনীর প্রথম লেখক ইবনে ইসহাকের (৮০-১৫১ হি.) বর্ণনার ভিত্তিতে, তারা সেই চুক্তিপত্র বের করে দেখল তা উঁইপোকায় খেয়ে ফেলেছে এবং শুধুমাত্র ((باسمک اللهم)) বাক্যটি অক্ষত রয়েছে।<ref>ইবনে ইসহাক, সিরাতু ইবনে ইসহাক, ১৩৯৮ হি., পৃ. ১৬৬ ও ১৬৭; শাহিদী, তারিখে তাহলিলিয়ে ইসলাম, ১৩৯০ সৌরবর্ষ, পৃ. ৫৩।</ref>


হিজরী ২য় শতাব্দির বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিক [[ইবনে হিশাম]] (মৃত্যুকাল ২১২ বা ২১৮ হি.) লিখেছেন, আবুতালিব কুরাইশের সভায় উপস্থিত হয়ে বললেন: আমার ভ্রাতুষ্পুত্র বলছে, তোমরা যে চুক্তিপত্রতে স্বাক্ষর করেছিলে তা উঁইপোকা খেয়ে ফেলেছে এবং শুধু আল্লাহর নাম অক্ষত রয়েছে। তোমরা যেয়ে এর সত্যতা যাচাই কর, যদি তাঁর কথা সত্য হয় তবে তোমরা অবরোধ তুলে নেবে, আর যদি সে মিথ্যা বলে থাকে তাহলে আমি তাঁকে তোমাদের নিকট সোপর্দ করব। তারা দ্রুত ঐ চুক্তিপত্র যাচাই করল এবং দেখল যে আল্লাহর নাম ব্যতীত সবকিছুই উঁইপোকা খেয়ে ফেলেছে। আর এভাবেই বনি হাশিম বিরোধী অবরোধ ভেঙ্গে গেল।[৫২]
হিজরী ২য় শতাব্দির বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিক [[ইবনে হিশাম]] (মৃত্যুকাল ২১২ বা ২১৮ হি.) লিখেছেন, আবু তালিব কুরাইশের সভায় উপস্থিত হয়ে বললেন: আমার ভ্রাতুষ্পুত্র বলছে, তোমরা যে চুক্তিপত্রতে স্বাক্ষর করেছিলে তা উঁইপোকা খেয়ে ফেলেছে এবং শুধু আল্লাহর নাম অক্ষত রয়েছে। তোমরা চুক্তিপত্রের কাছে গিয়েে এর সত্যতা যাচাই কর, যদি তাঁর কথা সত্য হয় তবে তোমরা অবরোধ তুলে নেবে, আর যদি সে মিথ্যা বলে থাকে তাহলে আমি তাঁকে তোমাদের নিকট সোপর্দ করব। তারা দ্রুত ঐ চুক্তিপত্র যাচাই করল এবং দেখল যে আল্লাহর নাম ব্যতীত সবকিছুই উঁইপোকা খেয়ে ফেলেছে। আর এভাবেই বনি হাশিম বিরোধী অবরোধ ভেঙ্গে গেল।[৫২]


==তায়েফ সফরে==
==তায়েফ সফরে==
Automoderated users, confirmed, templateeditor
১,৭৫৭টি

সম্পাদনা