তাশাহুদ

wikishia থেকে
নিবন্ধটিতে ফিকাহ সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ের সংজ্ঞা তুলে ধরা হয়েছে, এটি আমলের মানদণ্ড নয়। এ বিষয়ক মাসআলা ও আহকাম জানার জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রন্থের শরণাপন্ন হোন।

তাশাহুদ (আরবি: التشهد); নামাজের ওয়াজিব কাজগুলোর একটি; যা দ্বিতীয় ও শেষ রাকাতে দুই সিজদার পর বসা অবস্থায় পড়া হয়। এতে মহান আল্লাহর একত্ববাদ, হজরত মুহাম্মাদ (স.)-এর নবুয়্যতের সাক্ষ্য প্রদানের পাশাপাশি মহানবি (স.)তাঁর পরিবারের উপর দরুদ পাঠ করা হয়। তাশাহুদ হল;

اَشْهَدُ اَنْ لا اِلهَ اِلاَّ اللّهُ وَحْدَهُ لا شَریکَ لَهُ وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَ رَسُولُهُ، اَللّهُمَّ صَلِّ عَلی مُحَمَّدٍ وَ الِ مُحَمَّدٍ

তাশাহুদ নামাজের রুকনের অন্তর্ভুক্ত নয়। এ কারণে তা পাঠ করা ওয়াজিব হলেও যদি কেউ পাঠ করতে ভুলে যায় তবে তার নামাজ বাতিল হবে না।

যিকির

তাশাহুদ নামাজের ওয়াজিব অংশগুলোর একটি।[১] দ্বিতীয় ও শেষ রাকাতে ২ সিজদা সম্পন্ন করার পর বসা অবস্থায় শাহাদাতাইন (মহান আল্লাহর একত্ববাদ ও হজরত মুহাম্মাদ (স.)-এর নবুয়্যতের সাক্ষ্য প্রদান) পাঠ করা এবং মহানবি (স.) ও তাঁর বংশধরের উপর দরুদ পড়া।[২] বিশিষ্ট ফকীহ আলী মিশকীনীর ভাষ্যানুযায়ী, শিয়া ফকীহদের প্রসিদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গী হল তাশাহুদের যিকর এভাবে পড়া:

اَشْهَدُ اَنْ لااِلهَ اِلاَّ اللّهُ وَحْدَهُ لا شَریکَ لَهُ وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَ رَسُولُهُ، اَللّهُمَّ صَلِّ عَلی مُحَمَّدٍ وَ الِ مُحَمَّدٍ

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, যিনি এক ও যাঁর কোন শরীক নেই এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (স.) হল তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল। হে আল্লাহ রহমত (দরুদ) প্রেরণ করুন মুহাম্মাদ ও তার বংশধরগণের উপর।[৩]

অবশ্য আল্লামা হিল্লি ও মুহাক্কেক কারাকী’র মত ফকীহদের গ্রন্থে তাশাহুদের ওয়াজিব অংশ আরও সংক্ষিপ্ত ছিল; (أشهد أن لا إله إلا اللّٰه و أشهد أن محمدا رسول اللّٰه اللهم صل على محمد و آل محمد)।[৪] আল্লামা হিল্লি তার আন-নিহায়া গ্রন্থে ((وحده لا شریک له)) অংশটুকু তাশাহুদের ওয়াজিব অংশ কি না সে বিষয়ে দ্বিধা প্রকাশ করেছেন।[৫]

তাশাহুদের কতিপয় আহকাম

  • তাশাহুদ পড়ার সময় মুওয়ালাত তথা বিলম্ব ছাড়াই পর্যায়ক্রমে ধীরে সুস্থে ও শব্দাবলী সহীহভাবে পাঠ করা আবশ্যক।[৬]
  • মুস্তাহাব হল, নামাজী তাশাহুদ পাঠের সময় আঙ্গুলগুলোকে পরস্পরের সাথে লাগিয়ে হস্তদ্বয়কে দুই উরুর উপর রাখবে এবং সামনের দিকে তাকিয়ে থাকবে।[৭]

তাশাহুদ পাঠের সময় তাওয়াররুক[৮] করা মুস্তাহাব; অর্থাৎ বাম পায়ের পাতা ডান পায়ের নীচে রাখবে এবং বাম উরুর উপর ভর করে বসবে।[৯]

  • তাশাহুদ পড়ার সময় অতিরিক্ত কিছু কিছু যিকর পড়া মুস্তাহাব; যেমন, তাশাহুদ শুরু করার আগে বলা ‘আলহামদু লিল্লাহ’ (اَلْحَمدُلله) বা ‘বিসমিল্লাহ ওয়া বিল্লাহ ওয়াল হামদু লিল্লাহ ওয়া খাইরুল আসমায়ি লিল্লাহ্’(بِسْمِ اللهِ و بِاللهِ وَ الْحَمدُ لِلهِ وَ خَیرُ الأسماءِ لِله)[১০]এবং তাশাহুদের পর বলা তাকাব্বাল শাফায়াতাহু ওয়ারফা দারাজাতাহু ( تَقَبَّلْ شَفاعَتَهُ وَارْفَعْ دَرَجَتَه)।[১১]

তাশাহুদ ভুলে গেলে করণীয়

মারজায়ে তাকলীদগণের ফতওয়ার ভিত্তিতে, যদি কেউ তাশাহুদ পড়া ভুলে যায় এবং পরবর্তী রাকাতে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে তার মনে পড়ে তবে বিলম্ব না করে বসে পড়ে তাশাহুদ পড়বে এবং নামাজ অব্যাহত রাখবে।[১২] সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ রেজা গুলপায়গানী, সাইয়্যেদ আবুল কাসেম খুয়ী, মীর্জা জাওয়াদ তাবরিযীলুতফুল্লাহ সাফী গুলপায়গানী’র ফতওয়ার ভিত্তিতে, এমতাবস্থায় নামাজ শেষ করার পর ২টি সিজদা সাহু আঞ্জাম দেবে।[১৩]

যদি রুকু অবস্থায় বা তার পর বুঝতে পারে যে পূর্বের রাকাতে তাশাহুদ পড়েনি তাহলে নামাজ শেষ করার পর তাশাহুদ কাযা করবে এবং এহতেয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে ভুলে যাওয়া তাশাহুদের জন্য দু’টি সিজদায়ে সাহুও আঞ্জাম দেবে।[১৪]

তথ্যসূত্র

  1. আল্লামা হিল্লি, নিহায়াতুল আহকাম, ১৪১৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৪৯৯।
  2. মিশকীনী, মুসতালাহাতুল ফিকহ্, ১৪১৯ হি., পৃ. ১৪৫-১৪৬।
  3. মিশকীনী, মুসতালাহাতুল ফিকহ, ১৪১৯ হি., পৃ. ১৪৬।
  4. আল্লামা হিল্লি, নিহায়াতুল আহকাম, ১৪১৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৪৯৯; মুহাক্কেক কারাকী, জামেউল মাকাসেদ, ১৪১৪ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৩১৮।
  5. আল্লামা হিল্লি, নিহায়াতুল আহকাম, ১৪১৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৪৯৯।
  6. মিশকীনী, মুসতালাহাতুল ফিকহ, ১৪১৯ হি., পৃ. ১৪৬।
  7. শহীদ আওয়াল, আদ-দুরূস, ১৪১৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১৮২।
  8. শহীদ আওয়াল, আদ-দুরূস, ১৪১৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১৮২; মুহাক্কেক কারাকী, রেসায়েলুল মুহাক্কেক আল-কারাকী, ১৪০৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১১২।
  9. মুহাক্কেক কারাকী, রেসায়েলুল মুহাক্কেক আল-কারাকী, ১৪০৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১১২।
  10. শহীদ আওয়াল, আদ-দুরূস, ১৪১৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১৮২।
  11. ইমাম খোমেনী, তৌযিহুল মাসায়েল, ১৪২৪ হি., পৃ. ২৩৯, মাসআলা ১০৬১।
  12. ইমাম খোমেনী, তৌযিহুল মাসায়েল(মোহাশা), ১৪২৪ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৫৯৭, মাসআলা ১১০২।
  13. ইমাম খোমেনী, তৌযিহুল মাসায়েল(মোহাশা), ১৪২৪ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৫৯৭, মাসআলা ১১০২।
  14. ইমাম খোমেনী, তৌযিহুল মাসায়েল(মোহাশা), ১৪২৪ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৫৯৭, মাসআলা ১১০২।

গ্রন্থপঞ্জি

  • ইমাম খোমেনী, সাইয়্যেদ রূহুল্লাহ, তৌযিহুল মাসায়েল(মাহশা), তাসহিহ সাইয়্যেদ মোহাম্মাদ হোসাইন বানি হাশেমী খোমেনী, কোম, দাফতারে ইনতেশারাতে ইসলামী ওয়াবাস্তে বে জামেয়ে মোদাররেসীনে হাওযে ইলমিয়ে কোম, ১৪২৪ হি.।
  • শহীদ আওয়াল, মোহাম্মাদ বিন মাক্কী, আদ-দুরূসুশ শারইয়্যাহ ফি ফিকহীল ইমামিয়্যাহ, কোম, দাফতারে ইনতেশারাতে ইসলামী ওয়াবাস্তে বে জামেয়ে মোদাররেসীনে হাওযে ইলমিয়ে কোম, ১৪১৭ হি.।
  • আল্লামা হিল্লি, হাসান বিন ইউসুফ, নেহায়াতুল আহকাম ফি মা'রেফাতিল আহকাম, কোম, মুআসসেসাতু আলুল বাইত আলাইহিমুস সালাম, ১৪১৯ হি.।
  • মুহাক্কেক কারাকী, আলী বিন হোসাইন, জামেউল মাকাসেদ ফি শারহিল কাওয়ায়েদ, কোম, মুআসসেসাতু আলুল বাইত আলাইহিমুস সালাম, ১৪১৪ হি.।
  • মিশকীনী, মির্জা আলী, মুসতালাহাতুল ফিকহ্ ওয়া মুয়াজ্জেমু আনাউয়িনাহুল মউযূইয়্যাহ, কোম, আল-হাদী, ১৪১৯ হি./১৩৭৭ ফার্সী সন।