বিষয়বস্তুতে চলুন

কুল্লু ইয়াওমিন আশুরা

wikishia থেকে

কুল্লু ইয়াওমিন আশুরা ওয়া কুল্লু আরযিন কারবালা (আরবি: کُلُّ یَومٍ عاشورا و کُلُّ أرضٍ کَربَلا) (প্রতিটি দিনই আশুরা এবং প্রতিটি ভূমিই কারবালা) এই প্রসিদ্ধ বাক্যটিকে ইমাম সাদিক (আ.)-এর উক্তি বলে মনে করা হয়। ধর্মীয় পণ্ডিতদের একটি দলও তাদের বক্তব্যে এটি ব্যবহার করেছেন। তবে গবেষকদের ভাষ্য হচ্ছে, এই বাক্যটি শিয়াদের কোন হাদিস সূত্রে পাওয়া যায় না।

ইমাম খোমেনীর ভাষ্যমতে, এই বাক্যটি নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তার কথা প্রকাশ করে। মোর্তযা মোতাহহারি এটিকে জুলুমের বিরুদ্ধে অবিরত সংগ্রাম এবং ইতিহাস জুড়ে সত্যের পুনর্জীবন জ্ঞান করেছেন। সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বলেছেন যে, মানুষ যদি প্রত্যেকটি যুগে তাদের ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করে, তবে সবকিছু ঠিকঠাক এগিয়ে যাবে।

ইতিহাস

আলোচ্য অংশটি প্রথম কোন উৎসের ভিত্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়, তবে মুহাম্মাদ ইবনে সাঈদ সানহাজি বুসাইরি (মৃত্যু: ৬৯৪ হি.) «كلُّ يومٍ وكلُّ أرضٍ لِكَربي/ منهمُ كربلاءُ وعاشوراءُ» (বাংলা অর্থ: প্রতিটি দিনই এবং প্রতিটি ভূমিই আমার দুঃখের জন্য/ তবে সবচেয়ে বেশি কারবালা ও আশুরা) বাক্যটিকে তার হামযিয়া নামক প্রসিদ্ধ কাব্যে উল্লেখ করেন।[] এছাড়াও রাআয়াহ আব্দুল হুসাইন আ’সামের (মৃত্যু:১২৪৭ হি.) কবিতার একটি পংক্তি একই পরিভাষার প্রতি ইঙ্গিত করে: «كَأَنَّ كُلَّ مَكَانٍ كَربَلاءُ لَدَى عَينِي/ وَكُلُّ زَمَانٍ يَومُ عاشُوراء (বাংলায়: প্রতিটি ভূমিই যেন আমার চোখে কারবালা এবং প্রতিটি সময়ই আশুরার দিন)।[]

একইভাবে, হুসাইন ওয়ারিসে অদাম গ্রন্থে আলী শারীয়াতী (১৩১২-১৩৫৬ ফার্সি সন) আলোচ্য বাক্যটিকে ইমাম সাদিক (আ.) হতে নিঃসৃত বলে উল্লেখ করেন।[] এছাড়াও এই বাক্যটি কিছু কিছু ধর্মীয় আলেমের বক্তবসমূহে ব্যবহৃত হয়েছে; ইমাম খোমেনী তার বক্তব্য ও বার্তাসমূহে এই বাক্যটি ব্যবহার করেছেন।[] সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীও আলোচ্য অংশটিকে হাদিস হিসেবে বিবেচনা না করেই বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।[] মোর্তযা মোতাহহারিও (এই বাক্যটির হাদিস হওয়া ও না হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত ছাড়াই) এই বিষয়ের বিশ্লেষণে- ইমাম হুসাইন ইসলামি চিন্তাধারাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য যুদ্ধ করেছেন এবং বিশ্বে এই চিন্তাধারাকে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছেন- উল্লেখ করেছেন যে, হুসাইনি আদর্শ প্রতি বছর এক নতুন বিজয় অর্জন করে; অর্থাৎ প্রতিটি বছরই হচ্ছে আশুরা এবং «کلّ یوم عاشورا» এর অর্থ হচ্ছে এটাই যে, প্রতিদিনই জুলম ও বাতিলের বিরুদ্ধে ইমাম হুসাইনের নামে সংগ্রাম সংঘটিত হয় এবং সত্য ও ন্যায়পরায়ণতা জীবন্ত হয়।[]

উৎস

অসারই দারবারে ইমাম হুসাইনের লেখক মুহাম্মাদ সেহহাতি সারদরুদী মনে করেন, «کل یوم عاشورا و کل ارض کربلا» বাক্যটি যেমনভাবে হাদিসের অংশ নয়, তেমনভাবে শিয়াদের আকীদারও পরিপন্থী; কেননা কোন ভূখণ্ডই কারবালার ন্যায় মূল্যবান নয় এবং কোন দিনই আশুরার দিনের সাথে তুলনাযোগ্য নয়।[] আর এই দৃষ্টিকোন থেকে এই বাক্যটি যায়দিয়াদের থেকে উৎসারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।[]

ব্যাখ্যা

ইমাম খোমেনী তার বক্তব্যে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, «کل یوم عاشورا و کل ارض کربلا» এর উদ্দেশ্য ইমাম হুসাইনের (আ.) মুসিবতের উপর অবিরাম ক্রন্দন নয়, বরং তিনি মনে করেন উক্ত বাক্যটি জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে অবিরত সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে।[] তদ্রুপভাবে মোর্তযা মোতাহহারি আশুরার সংগ্রামে ইমাম হুসানের (আ.) প্রকৃত বিজয় ব্যাখ্যা করে বলেন, এই আন্দোলন সর্বদা নিত্য নতুন বিজয় অর্জন করছে এবং «کل یوم عاشورا» এর অর্থ হচ্ছে এই যে, প্রতিদিন জুলুম ও বাতিলের বিরুদ্ধে ইমাম হুসাইনের (আ.) নামে লড়াই করা হয় এবং সত্য ও ন্যায়পরায়ণতা জীবন্ত হয়।[১০] সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীও এই বাক্যটিকে এভাবে বিশ্লেষণ করেন, প্রতিটি যুগেই মানুষের একটি ভূমিকা থাকে, যদি তারা সেই ভূমিকাকে সঠিকভাবে, উপযুক্ত সময়ে, তাদের নিজস্ব সময়ে পালন করে, তাহলে সবকিছু ঠিকঠাক হবে, জাতিসমূহ এগিয়ে যাবে, মানবতা প্রসারিত হবে।[১১]

তথ্যসূত্র

  1. কাতিফি, আর রাসায়েলুল আহমাদিয়্যাহ, ১৪১৯ হি., খণ্ড ২, পৃ. ২৭৩; আমিন, আ’ইয়ানুশ শিয়া, তাহকিক: হাসান আমিন, খণ্ড ১, পৃ. ৬৫২।
  2. শোব্বার, আদাবুল লুতফ, ১৪০৯ হি., খণ্ড ১, পৃ.১২।
  3. শারীয়াতী, হুসাইন ওয়ারিসে অদাম, ১৩৮০ ফার্সি সন, পৃ. ৪৯।
  4. ইমাম খোমেনী, সহীফায়ে ইমাম, ১৩৮৯ ফার্সি সন, খণ্ড ৯, পৃ. ৪৪৫; খণ্ড ১০, পৃ. ১০, ১২২, ১৯১ ও ৩১৫; খণ্ড ১৬, পৃ. ১৫১।
  5. «بیانات در مراسم مشترک دانش‌آموختگی دانشجویان دانشگاه امام حسین(ع)», পায়েগাহে এত্তেলা রেসানিয়ে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী।
  6. মোতাহহারি, হাক্ব ওয়া বাতিল (মাজমুয়ে অসার, খণ্ড ৩), ১৩৭৫ ফার্সি সন, পৃ. ৪৩৪-৪৩৫।
  7. সেহ্হাতি সারদরুদী, “চান্দ হাদিসে মারুফ দারবারে আশুরা”, পৃ. ১৩৬-১৩৭।
  8. সেহ্হাতি সারদরুদী, “চান্দ হাদিসে মারুফ দারবারে আশুরা”, পৃ. ১৩৭।
  9. ইমাম খোমেনী, সহীফায়ে ইমাম, ১৩৮৯ ফার্সি সন, খণ্ড ৯, পৃ. ৪৪৫; খণ্ড ১০, পৃ. ১০, ১২২, ১৯১ ও ৩১৫।
  10. মোতাহহারি, হাক্ব ওয়া বাতিল (মাজমুয়ে অসার, খণ্ড ৩), ১৩৭৫ ফার্সি সন, পৃ. ৪৩৪-৪৩৫।
  11. «بیانات در مراسم مشترک دانش‌آموختگی دانشجویان دانشگاه امام حسین(ع)», পায়েগাহে এত্তেলা রেসানিয়ে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী।

গ্রন্থপঞ্জি

  • আমিন, সাইয়্যেদ মুহসিন, আ’ইয়ানুশ শিয়া, তাহকিক: হাসান আমিন, বৈরুত, দারুত তাআরোফ লিল মাতবুআত, তারিখ অজ্ঞাত।
  • «بیانات در مراسم مشترک دانش‌آموختگی دانشجویان دانشگاه امام حسین(ع)», পায়েগাহে এত্তেলা রেসানিয়ে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী।
  • শোব্বার, জাওয়াদ, আদাবুল লুতফ, বৈরুত, দারুল মুর্তাযা, ১৪০৯ হি.।
  • শারীয়াতী, আলী, হুসাইন ওয়ারিসে অদাম (দার মাজমুয়ে অসার, সংখ্যা ১৯), তেহরান, ইন্তেশারাতে কালাম, ১৩৮০।
  • সেহ্হাতি সারদরুদী, মুহাম্মাদ, «بازخوانیِ چند حدیث مشهور درباره عاشورا», দার মাজাল্লেয়ে উলুমে হাদিস, সংখ্যা ২৬।
  • কাতিফি, আহমাদ আলে তা’আন, আর রাসায়েলুল আহমাদিয়্যাহ, তাহকিক: দারুল মুস্তাফা (স.) লি ইহিয়ায়িত তুরাস, কোম, দারুল মুস্তাফা লি ইহিয়ায়িত তুরাস, ১৪১৯ হি.।
  • মোতাহহারি, মোর্তযা, নাবোরদে হাক্ব ওয়া বাতিল (দার মাজমুয়ে-এ অসার, খণ্ড ৩), তেহরান, ইন্তেশারাতে সাদরা, ১৩৮৫ ফার্সি সন।