বিষয়বস্তুতে চলুন

অমুসলিমদের সাথে মুসলিমদের বিবাহ

wikishia থেকে

অমুসলিমের সাথে মুসলিমের বিবাহ (আরবি: الزواج بين المسلم وغير المسلم) সংক্রান্ত বিষয়টি এমন একটি ফিকাহগত বিষয়, শিয়া ও সুন্নি ফিকাহগত আলোচনার ক্ষেত্রে যার সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং বিষয়টি নিজেই বিভিন্নি শাখায় বিভক্ত। শিয়া-সুন্নি নির্বিশেষে সকলফিকাহশাস্ত্রবিদদের ফতওয়া অনুসারে, অমুসলিম পুরুষের সাথে মুসলিম নারীর বিবাহ জায়েয তথা বৈধ নয়; চাই উক্ত পুরুষ আহলে কিতাব (ঐশী গ্রন্থ সম্বলিত ধর্মাবলম্বী) হোক অথবা কাফেরে জিম্মি (ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিম, যারা ইসলামী আইন অনুসারে অধিকার ও সুরক্ষার অধিকারী) হোক এবং উক্ত বিবাহ অস্থায়ী হোক বা স্থায়ী হোক। তদ্রুপভাবে, আল্লাহকে বিশ্বাস করে না এমন কাফের নারীর সাথে মুসলিম পুরুষের বিবাহও হারাম তথা নিষিদ্ধ।

আহলে কিতাব নারীর সাথে মুসলিম পুরুষের বিবাহের বিষয়ে শিয়া ফিকাহশাস্ত্রবিদগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তাদের প্রসিদ্ধ মতানুসারে, আহলে কিতাব নারীর সাথে মুসলিম পুরুষের স্থায়ী বিবাহ জায়েয নয়; তবে, তার সাথে মুসলিম পুরুষের অস্থায়ী বিবাহ বৈধ। সুন্নি ফিকাহশাস্ত্রবিদগণ, আহলে কিতাব নারীর সাথে মুসলিম পুরুষের স্থায়ী বিবাহ জায়েয বলে মনে করেন।

গুরুত্ব

অমুসলিমের সাথে মুসলমানের বিবাহ এমন একটি ফিকহি বিষয়, যা শিয়া ও সুন্নি উভয় মাযহাবেই আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে স্থান পেয়েছে।[১] এই বিষয়টি নিজেই কয়েকটি শাখায় বিভক্ত হয়ে থাকে; যেমন: ১. অমুসলিম পুরুষের সঙ্গে মুসলিম নারীর বিবাহ, ২. অমুসলিম নারীর সঙ্গে মুসলিম পুরুষের স্থায়ী বিবাহ, ৩. অমুসলিম নারীর সাথে মুসলিম পুরুষের অস্থায়ী বিবাহ। ইরানের দেওয়ানী আইনেও এই বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।[২]

অমুসলিম পুরুষের সঙ্গে মুসলিম নারীর বিবাহ

শিয়া ও সুন্নি ফিকাহ’তে একমত পোষণ করা হয়েছে যে, অমুসলিম পুরুষের সঙ্গে মুসলিম নারীর বিবাহ, এমনকি আহলে কিতাব হলেও বৈধ নয়।[৩] এই হুকুম কাফেরে জিম্মি, কাফেরে হারবি (মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত অমুসলিমরা) ও মুরতাদ সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এবং বিবাহ স্থায়ী বা অস্থায়ী হওয়ার ক্ষেত্রেও কোন পার্থক্য নেই।[৪] হুকুমটি ইরানের দেওয়ানী আইনের ১০৫৯ ধারায়ও উল্লেখিত হয়েছে।[৫]

আহলে কিতাব নারীর সঙ্গে মুসলিম পুরুষের বিবাহ

আহলে সুন্নতের সকল মাযহাব আহলে কিতাব নারীর সঙ্গে মুসলিম পুরুষের বিবাহকে জায়েয জ্ঞান করে;[৬] কিন্তু শিয়া ফিকাহবিদগণ আহলে কিতাব নারীর সঙ্গে মুসলিম পুরুষের বিবাহ স্থায়ী ও অস্থায়ী হওয়ার মধ্যে পার্থক্য করে থাকেন এবং অস্থায়ী বিবাহকে বৈধ ও স্থায়ী বিবাহকে হারাম তথা অবৈধ জ্ঞান করেন।[৭] মুহাক্কে হিল্লি এবং ফাইয কাশানি এই হুকুমকে বারো ইমামি শিয়াদের প্রসিদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে বিবেচনা করেছেন।[৮] ইবনে সাঈদ হিল্লি বলেছেন উক্ত দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে শিয়া ফকিহগণের মধ্যে মতৈক্য রয়েছে।[৯]

অবশ্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, পূর্ববর্তীদের (মুহাক্কেক হিল্লির পূর্ববর্তী ফকিহগণ) প্রসিদ্ধ মত ছিল এটাই যে, আহলে কিতাবদের সাথে বিবাহ সম্পূর্ণরূপে হারাম।[১০] শেইখ মুফিদ,[১১] শেইখ তুসি,[১২] সাইয়্যেদ মোর্তযা[১৩] এবং তাবারসি[১৪] প্রমুখ এই মত পোষণ করেন।[১৫] এছাড়াও উল্লেখ করেছেন, এর বিপরীতে, শেইখ সাদুক,[১৬] শহীদ সানি,[১৭] ফাইয কাশানি[১৮] এবং সাহেব জাওয়াহের’র[১৯] ন্যায় ফকিহগণ আহলে কিতাব নারীর সাথে মুসলিম পুরুষের স্থায়ী বিবাহকেও বৈধ মনে করতেন।[২০] মাবসুত গ্রন্থে সাহেব জাওয়াহের হতে শেইখ তুসি বর্ণনা করেছেন, তিনি আহলে কিতাব নারীর সাথে মুসলিম পুুরুষের অস্থায়ী বিবাহের বৈধতাকে সকল সাহাবী এবং ইমামিয়া ফকিহগণের ঐকমত্যের বিষয় বলে মনে করতেন।[২১]

লেবাননের শিয়া ধর্মগুরু মুহাম্মাদ জাওয়াদ মুগনিয়াহ লিখেছেন, বর্তমান যুগে (হিজরি চতুর্দশ শতাব্দী) ইমামিয়া মাযহাবের ফকিহদের একটি বৃহৎ গোষ্ঠী আহলে কিতাব নারীর সাথে মুসলিম পুরুষের স্থায়ী বিবাহকে জায়েয জ্ঞান করেন এবং লেবাননের জাফরী মাযহাবের বিচারালয়গুলো এরূপ বিবাহের ক্ষেত্রে আকদ জারি করে থাকে।[২২]

যরথুস্ত্রীয় নারীর সাথে মুসলমান পুরুষের বিবাহ

যরথুস্ত্রীয় নারীর সাথে মুসলমান পুরুষের বিবাহ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে।[২৩] কথিত রয়েছে ফকিহগণের একটি দল তাদের সাথে অস্থায়ী বিবাহকে বৈধ হিসেবে বিবেচনা করেছেন।[২৪] শেইখ সাদুক তাদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে হারাম জ্ঞান করেন।[২৫] তবে মুহাক্কেক হিল্লি তাদেরকে আহলে কিতাব হিসেবে বিবেচনা করেন এবং তাদের সঙ্গে অস্থায়ী বিবাহকে জায়েয বলে মনে করেন।[২৬]

আহলে কিতাব ব্যতিত অন্য নারীদের সঙ্গে মুসলিম পুরুষের বিবাহের আহকাম

শিয়া ফিকাহশাস্ত্র অনুসারে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও কিয়ামতের প্রতি ঈমান না থাকা কাফির নারীর সঙ্গে মুসলিম পুরুষের বিবাহ জায়েয নয়।[২৭] এই হুকুমের ক্ষেত্রে বিবাহ স্থায়ী হওয়া বা অস্থায়ী হওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।[২৮] ফকিহগণ এই বিষয়ে ইজমা’ তথা ঐকমত্যের দাবি করেছেন।[২৯] ফকিহগণ, তদ্রুপভাবে বাহাই ধর্মাবলম্বীর সঙ্গেও মুসলমানের বিবাহ বৈধ জ্ঞান করেন না।[৩০]

সম্পর্কিত গ্রন্থ

  • ‘এযদেভাজ বা গায়রে মুসলমানান’ শিরোনামের গ্রন্থটি লিখেছেন মুহাম্মাদ রেযা জাব্বারান, বুস্তানে কিতাব প্রকাশনার মাধ্যমে ১৩৮৩ ফার্সি সনে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে।
  • মুহাম্মাদ ইব্রাহিমী কর্তৃক রচিত ‘এযদেভাজ বা বিগনেগান দার ফিকহে ইসলাম ওয়া সায়েরে শারায়েঅ ইলাহি’ নামক গ্রন্থটি বুস্তানে কিতাব প্রকাশনার মাধ্যমে ১৩৮২ ফার্সি সনে প্রকাশিত হয়েছে।

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি