বিষয়বস্তুতে চলুন

সাকীফার ঘটনা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৩১ নং লাইন: ৩১ নং লাইন:
* '''[[বাশির ইবনে সা’দ]]:''' তিনি ছিলেন খাযরাজ গোত্রের ও আনসারদের একজন। তিনি কয়েক দফায় আবুবকর ও তার সঙ্গীদের কথার সমর্থন করেন এবং ‘আল্লাহকে ভয় করো’, একজন মুসলমানের অধিকারের বিরোধিতা করো না ইত্যাদি বাক্যের মাধ্যমে মুহাজিরগণের বিরোধিতা না করার জন্য আনসারগণকে নিষেধ করেন।<ref>তাবারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২০২।</ref>
* '''[[বাশির ইবনে সা’দ]]:''' তিনি ছিলেন খাযরাজ গোত্রের ও আনসারদের একজন। তিনি কয়েক দফায় আবুবকর ও তার সঙ্গীদের কথার সমর্থন করেন এবং ‘আল্লাহকে ভয় করো’, একজন মুসলমানের অধিকারের বিরোধিতা করো না ইত্যাদি বাক্যের মাধ্যমে মুহাজিরগণের বিরোধিতা না করার জন্য আনসারগণকে নিষেধ করেন।<ref>তাবারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২০২।</ref>
* '''[[আব্দুর রাহমান ইবনে আওফ]]:''' তিনি হযরত আলী (আ.), আবুবকর এবং ওমরের মত ব্যক্তিত্বগণের অবস্থানের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে আনসারগণ এমন মাকামের অধিকারী নন বলে মন্তব্য করেন।<ref>ইয়াকুবি, তারিখুল ইয়াকুবি, দারু সাদর, খণ্ড ২, পৃ. ১২৩।</ref>
* '''[[আব্দুর রাহমান ইবনে আওফ]]:''' তিনি হযরত আলী (আ.), আবুবকর এবং ওমরের মত ব্যক্তিত্বগণের অবস্থানের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে আনসারগণ এমন মাকামের অধিকারী নন বলে মন্তব্য করেন।<ref>ইয়াকুবি, তারিখুল ইয়াকুবি, দারু সাদর, খণ্ড ২, পৃ. ১২৩।</ref>
* '''[[যাইদ ইবনে আরকাম]]:''' তিনিও একজন আনসার; তিনি সাকীফায় আবুবকর ও আব্দুর রহমান ইবনে আওফ কর্তৃক উত্থাপিত যুক্তির বিপরীতে [[ইমাম আলী (আ.)|আলীকে (আ.)]] এমন ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরেন যিনি এ সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এছাড়া তিনি বলেন, যদি তিনি (আলী) বাইয়াতের জন্য অগ্রসর হন তবে কেউই তাঁর বিরোধিতা করবে না।[১৯]
* '''[[যাইদ ইবনে আরকাম]]:''' তিনিও একজন আনসার; তিনি সাকীফায় আবুবকর ও আব্দুর রহমান ইবনে আওফ কর্তৃক উত্থাপিত যুক্তির বিপরীতে [[ইমাম আলী (আ.)|আলীকে (আ.)]] এমন ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরেন যিনি এ সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এছাড়া তিনি বলেন, যদি তিনি (আলী) বাইয়াতের জন্য অগ্রসর হন তবে কেউই তাঁর বিরোধিতা করবে না।<ref>যুবাইর বিন বাক্কার, আল-আখবারুল মুওয়াফ্ফাকিয়াত, ১৪১৬ হি., পৃ. ৫৭৯; ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ৬, পৃ. ১৯-২০।</ref>


== যারা উপস্থিত ছিলেন ==
== যারা উপস্থিত ছিলেন ==
৭৩ নং লাইন: ৭৩ নং লাইন:
বনি উমাইয়া উসমান ইবনে আফফানকে ঘিরে এবং বনি যোহরা সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফকে ঘিরে বসেছিল; তারা সকলে মসজিদে সমবেত হয়েছিলেন। যখন আবুবকর ও আবু উবাইদাহ তাদের কাছে এলেন এবং আবুবকরের হাতে মুসলমানদের বাইয়াতের কাজও সম্পন্ন হয়েছিল, ওমর ইবনে খাত্তাব মসজিদে সমবেতদের উদ্দেশ্যে বললেন: তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে বসেছো? ওঠো, আবুবকরের হাতে বাইয়াত করো, আমি তার হাতে বাইয়াত করেছি। ওমরের কথা শেষ হওয়ার পর উসমান ইবনে আফফান ও উপস্থিত বনি উমাইয়ার লোকেরা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করে। একইভাবে সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফের সাথে যারা সমআকিদার অধিকারী ছিলেন তারাও।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৯৯০ খ্রি., খণ্ড ১, পৃ. ২৮।</ref>
বনি উমাইয়া উসমান ইবনে আফফানকে ঘিরে এবং বনি যোহরা সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফকে ঘিরে বসেছিল; তারা সকলে মসজিদে সমবেত হয়েছিলেন। যখন আবুবকর ও আবু উবাইদাহ তাদের কাছে এলেন এবং আবুবকরের হাতে মুসলমানদের বাইয়াতের কাজও সম্পন্ন হয়েছিল, ওমর ইবনে খাত্তাব মসজিদে সমবেতদের উদ্দেশ্যে বললেন: তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে বসেছো? ওঠো, আবুবকরের হাতে বাইয়াত করো, আমি তার হাতে বাইয়াত করেছি। ওমরের কথা শেষ হওয়ার পর উসমান ইবনে আফফান ও উপস্থিত বনি উমাইয়ার লোকেরা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করে। একইভাবে সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফের সাথে যারা সমআকিদার অধিকারী ছিলেন তারাও।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৯৯০ খ্রি., খণ্ড ১, পৃ. ২৮।</ref>


আবু সুফিয়ান: আবু সুফিয়ানকে [[মহানবি (স.)]] কোন কাজে মদিনার বাইরে প্রেরণ করেছিলেন। মদিনায় ফিরে আল্লাহর নবির (স.) ওফাত এবং সাকীফায় বাইয়াতের বিষয়ে অবগত হওয়ার পর এ সম্পর্কে [[আলী (আ.)]] ও [[আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব|আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের]] প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি জানতে চাইলেন। তাদের দু’জনের নীরবে গৃহে অবস্থানের কথা জেনে তিনি বললেন: ‘আল্লাহর কসম, যদি তাদের জন্য জীবিত থাকি তাহলে তাদের পাগুলোকে (মিম্বারের) উঁচু স্থানে নিয়ে যাব।’ তিনি আরও বললেন: ‘এমন ধূলোবালি আমি উড়তে দেখছি রক্তবৃষ্টি ছাড়া তা (বাতাস থেকে) পরিচ্ছন্ন হবে না।’[৩৮] বিভিন্ন সূত্রে উল্লিখিত হয়েছে যে, মদিনায় প্রবেশের পর আবু সুফিয়ান আলীর (আ.) খেলাফতের সমর্থনে এবং আবুবকর ও ওমরের তিরস্কারে কিছু পংতি আবৃতি করেন।[৩৯]
আবু সুফিয়ান: আবু সুফিয়ানকে [[মহানবি (স.)]] কোন কাজে মদিনার বাইরে প্রেরণ করেছিলেন। মদিনায় ফিরে আল্লাহর নবির (স.) ওফাত এবং সাকীফায় বাইয়াতের বিষয়ে অবগত হওয়ার পর এ সম্পর্কে [[আলী (আ.)]] ও [[আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব|আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের]] প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি জানতে চাইলেন। তাদের দু’জনের নীরবে গৃহে অবস্থানের কথা জেনে তিনি বললেন: ‘আল্লাহর কসম, যদি তাদের জন্য জীবিত থাকি তাহলে তাদের পাগুলোকে (মিম্বারের) উঁচু স্থানে নিয়ে যাব।’ তিনি আরও বললেন: ‘এমন ধূলোবালি আমি উড়তে দেখছি রক্তবৃষ্টি ছাড়া তা (বাতাস থেকে) পরিচ্ছন্ন হবে না।’[৩৮] বিভিন্ন সূত্রে উল্লিখিত হয়েছে যে, মদিনায় প্রবেশের পর আবু সুফিয়ান আলীর (আ.) খেলাফতের সমর্থনে এবং আবুবকর ও ওমরের তিরস্কারে কিছু পংতি আবৃতি করেন।<ref>ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ৬, পৃ. ১৭।</ref>


মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান: মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান এক চিঠিতে [[মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকর|মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকরের]] উদ্দেশে (সাকীফার ঘটনার বহু বছর পর) লিখেছিলেন: ‘...তোমার পিতা ও ওমর ছিলেন আলীর অধিকার হরণকারী এবং তাঁর বিরোধিতাকারী প্রথম ব্যক্তি। তারা দু’জন পরস্পরের হাতে হাত মিলিয়ে আলীকে তাদের হাতে বাইয়াতের আহবান জানান। আর আলী যখন বাইয়াতের বিরোধিতা ও অস্বীকার করলো তখন তারা অন্যায় সিদ্ধান্ত নিল এবং তার সম্পর্কে ভয়ংকর ভাবনা ভাবলো...।’[৪০]
মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান: মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান এক চিঠিতে [[মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকর|মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকরের]] উদ্দেশে (সাকীফার ঘটনার বহু বছর পর) লিখেছিলেন: ‘...তোমার পিতা ও ওমর ছিলেন আলীর অধিকার হরণকারী এবং তাঁর বিরোধিতাকারী প্রথম ব্যক্তি। তারা দু’জন পরস্পরের হাতে হাত মিলিয়ে আলীকে তাদের হাতে বাইয়াতের আহবান জানান। আর আলী যখন বাইয়াতের বিরোধিতা ও অস্বীকার করলো তখন তারা অন্যায় সিদ্ধান্ত নিল এবং তার সম্পর্কে ভয়ংকর ভাবনা ভাবলো...।’[৪০]
৮৬ নং লাইন: ৮৬ নং লাইন:
সাকীফার দিন [[আলী (আ.)]] [[আবুবকর|আবুবকরের]] হাতে বাইয়াত করেন নি এবং পরবর্তী সময়ে তার বাইয়াত তথা সমঝোতার বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ ভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন। তবে বিশিষ্ট শিয়া ঐতিহাসিক [[শেইখ মুফিদ|শেইখ মুফিদের]] (মৃত্যু ৪১৩ হি.) মতে, শিয়া গবেষকদের এ বিষয়ে মতৈক্য রয়েছে যে, [[ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)|আলী ইবনে আবি তালিব]] কখনই আবুবকরের হাতে বাইয়াত করেন নি।[৪২]
সাকীফার দিন [[আলী (আ.)]] [[আবুবকর|আবুবকরের]] হাতে বাইয়াত করেন নি এবং পরবর্তী সময়ে তার বাইয়াত তথা সমঝোতার বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ ভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন। তবে বিশিষ্ট শিয়া ঐতিহাসিক [[শেইখ মুফিদ|শেইখ মুফিদের]] (মৃত্যু ৪১৩ হি.) মতে, শিয়া গবেষকদের এ বিষয়ে মতৈক্য রয়েছে যে, [[ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)|আলী ইবনে আবি তালিব]] কখনই আবুবকরের হাতে বাইয়াত করেন নি।[৪২]


শুরুর দিনগুলোতে আহলে সাকীফা আলীকে (আ.) আবুবকরের হাতে বাইয়াত করার জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করলে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বললেন: ‘খেলাফতের বিষয়ে আমি তোমাদের চেয়ে অগ্রাধিকারী, আমি তোমাদের হাতে বাইয়াত করবো না, আমার হাতে বাইয়াত করার ক্ষেত্রে তোমরাই অধিক যোগ্য। তোমরা আনসারদের থেকে খেলাফতকে নিয়ে নিয়েছ; তাদের সাথে তর্কের সময় তোমরা রাসূলের (স.) সাথে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টিকে সামনে এনে তাদের উদ্দেশ্যে বলেছ: আমরা নবির (স.) নিকটবর্তী ও তাঁর সাথে আত্মীয়তার কারণে আমরা তোমাদের চেয়ে খেলাফতের বিষয়ে বেশি হকদার। আর তারাও তোমাদের এ কথার ভিত্তিতে নেতৃত্ব ও খেলাফতের ভার তোমাদের উপর ছেড়ে দিয়েছে। তোমরা আনসারদের সাথে যে যুক্তি উপস্থাপন করেছ আমিও তোমাদের সামনে একই যুক্তি উপস্থাপন করছি (অর্থাৎ রাসূলের (স.) সাথে  ঘনিষ্ঠতা ও আত্মীয়তা)। সুতরাং তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে ইনসাফ ও ন্যায়ের ভিত্তিতে আচরণ করো, আর আনসার যা কিছু তোমাদের ক্ষেত্রে মেনে নিয়েছে, তোমরাও তা আমাদের ক্ষেত্রে মেনে নাও, অন্যথায় তোমরা জেনেশুনে জুলুম ও অত্যাচার করেছ।’[৪৩]
শুরুর দিনগুলোতে আহলে সাকীফা আলীকে (আ.) আবুবকরের হাতে বাইয়াত করার জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করলে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বললেন: ‘খেলাফতের বিষয়ে আমি তোমাদের চেয়ে অগ্রাধিকারী, আমি তোমাদের হাতে বাইয়াত করবো না, আমার হাতে বাইয়াত করার ক্ষেত্রে তোমরাই অধিক যোগ্য। তোমরা আনসারদের থেকে খেলাফতকে নিয়ে নিয়েছ; তাদের সাথে তর্কের সময় তোমরা রাসূলের (স.) সাথে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টিকে সামনে এনে তাদের উদ্দেশ্যে বলেছ: আমরা নবির (স.) নিকটবর্তী ও তাঁর সাথে আত্মীয়তার কারণে আমরা তোমাদের চেয়ে খেলাফতের বিষয়ে বেশি হকদার। আর তারাও তোমাদের এ কথার ভিত্তিতে নেতৃত্ব ও খেলাফতের ভার তোমাদের উপর ছেড়ে দিয়েছে। তোমরা আনসারদের সাথে যে যুক্তি উপস্থাপন করেছ আমিও তোমাদের সামনে একই যুক্তি উপস্থাপন করছি (অর্থাৎ রাসূলের (স.) সাথে  ঘনিষ্ঠতা ও আত্মীয়তা)। সুতরাং তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে ইনসাফ ও ন্যায়ের ভিত্তিতে আচরণ করো, আর আনসার যা কিছু তোমাদের ক্ষেত্রে মেনে নিয়েছে, তোমরাও তা আমাদের ক্ষেত্রে মেনে নাও, অন্যথায় তোমরা জেনেশুনে জুলুম ও অত্যাচার করেছ।’<ref>ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ৬, পৃ. ১১।</ref>


কিছু সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে, আবুবকরের সাথে আলীর (আ.) মৃদু কিন্তু খোলামেলা বিতর্ক হয়েছিল; সে সময় তিনি সাকীফার ঘটনায় নবির (সা.) আহলে বাইতের অধিকার উপেক্ষা ও লঙ্ঘন করার জন্য আবুবকরের নিন্দা জানিয়েছিলেন। [[আমিরুল মু’মিনীন|আমীরুল মু’মিনীনের]] (আ.) যুক্তি মেনে নিয়ে আবুবকর প্রভাবিত হন, এমনকি মহানবির উত্তরসূরি হিসাবে আলীর (আ.) হাতে বাইয়াতও করতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু পরিশেষে তিনি তাঁর সাথীদের কারো কারো পরামর্শে এ কাজ থেকে বিরত থাকেন।[৪৪]
কিছু সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে, আবুবকরের সাথে আলীর (আ.) মৃদু কিন্তু খোলামেলা বিতর্ক হয়েছিল; সে সময় তিনি সাকীফার ঘটনায় নবির (সা.) আহলে বাইতের অধিকার উপেক্ষা ও লঙ্ঘন করার জন্য আবুবকরের নিন্দা জানিয়েছিলেন। [[আমিরুল মু’মিনীন|আমীরুল মু’মিনীনের]] (আ.) যুক্তি মেনে নিয়ে আবুবকর প্রভাবিত হন, এমনকি মহানবির উত্তরসূরি হিসাবে আলীর (আ.) হাতে বাইয়াতও করতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু পরিশেষে তিনি তাঁর সাথীদের কারো কারো পরামর্শে এ কাজ থেকে বিরত থাকেন।[৪৪]


আলী (আ.) বিভিন্ন সময়ে তার কথা ও ভাষ্যে সাকীফার ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন এবং আল্লাহর নবির (স.) উত্তরাধিকারী হওয়া প্রসঙ্গে তার অধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ‘[[শিকশিকিয়া]]’ নামক খুতবায় তিনি তিনি এই ঘটনা উল্লেখ করেছেন। খোতবার শুরুতে তিনি বলেন: আল্লাহর কসম! আবু কুহাফার পুত্র (আবুবকর) নিজে নিজেই তা (খেলাফতের রিদা) পরিধান করেছিল। নিশ্চিতভাবেই সে জানত যে, খেলাফতের বিষয়ে আমার অবস্থান যাতার কেন্দ্রিয় শলাকার ন্যায়। জ্ঞানের ধারা বানের পানির মত আমা হতে প্রবাহিত হয় এবং পাখি আমার স্থানের উচ্চতা পর্যন্ত উড়ে আসতে পারে না।...।’[৪৫] [[আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী|আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর]] ভাষায়, সাকীফাসহ সমগ্র জীবনে হযরত আলীর (আ.) মানদণ্ড ছিল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন; কেবল ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থসিদ্ধ বিষয়গুলোকেই তিনি প্রাধান্য দিতেন ও বেছে নিতেন।[৪৬]
আলী (আ.) বিভিন্ন সময়ে তার কথা ও ভাষ্যে সাকীফার ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন এবং আল্লাহর নবির (স.) উত্তরাধিকারী হওয়া প্রসঙ্গে তার অধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ‘[[শিকশিকিয়া]]’ নামক খুতবায় তিনি তিনি এই ঘটনা উল্লেখ করেছেন। খোতবার শুরুতে তিনি বলেন: আল্লাহর কসম! আবু কুহাফার পুত্র (আবুবকর) নিজে নিজেই তা (খেলাফতের রিদা) পরিধান করেছিল। নিশ্চিতভাবেই সে জানত যে, খেলাফতের বিষয়ে আমার অবস্থান যাতার কেন্দ্রিয় শলাকার ন্যায়। জ্ঞানের ধারা বানের পানির মত আমা হতে প্রবাহিত হয় এবং পাখি আমার স্থানের উচ্চতা পর্যন্ত উড়ে আসতে পারে না।...।’<ref>ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ১, পৃ. ১৫১।</ref>[[আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী|আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর]] ভাষায়, সাকীফাসহ সমগ্র জীবনে হযরত আলীর (আ.) মানদণ্ড ছিল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন; কেবল ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থসিদ্ধ বিষয়গুলোকেই তিনি প্রাধান্য দিতেন ও বেছে নিতেন।[৪৬]


অপর কিছু সূত্র মারফত জানা যায়, সাকিফার ঘটনার পর আলী (আ.) রাতের আঁধারে নবিকন্যা [[হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.)|হজরত ফাতিমা যাহরাকে (সা. আ.)]] একটি সওয়ারিতে চড়িয়ে আনসারদের বাড়িতে বাড়িতে ও সভাস্থলে নিয়ে যেতেন এবং তাদের সহযোগিতা চাইতেন, এ সময় তারা উত্তরে বলত: হে নবিকন্যা! আমরা আবুবকরের নিকট বাইয়াত করেছি, যদি আলী এগিয়ে আসতেন তবে আমরা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতাম না। আলী (আ.) উত্তরে বলতেন:  তবে কি আল্লাহর রাসূলের (স.) দাফনকার্য সম্পন্ন না করে খেলাফতের বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হতাম?[৪৭]
অপর কিছু সূত্র মারফত জানা যায়, সাকিফার ঘটনার পর আলী (আ.) রাতের আঁধারে নবিকন্যা [[হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.)|হজরত ফাতিমা যাহরাকে (সা. আ.)]] একটি সওয়ারিতে চড়িয়ে আনসারদের বাড়িতে বাড়িতে ও সভাস্থলে নিয়ে যেতেন এবং তাদের সহযোগিতা চাইতেন, এ সময় তারা উত্তরে বলত: হে নবিকন্যা! আমরা আবুবকরের নিকট বাইয়াত করেছি, যদি আলী এগিয়ে আসতেন তবে আমরা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতাম না। আলী (আ.) উত্তরে বলতেন:  তবে কি আল্লাহর রাসূলের (স.) দাফনকার্য সম্পন্ন না করে খেলাফতের বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হতাম?<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৯-৩০; ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ৬, পৃ. ১৩।</ref>


সাকীফার ঘটনায় ‘খেলাফত’ আলী বিন আবি তালিবের (আ.) হাতাছাড়া হয়ে যায়। অথচ মহানবির (স.) জীবনের শেষ দিনগুলিতে ‘খেলাফত’ যে, আলীর অধিকার বিষয়টি অনেকের নিকট স্বীকৃত ছিল এবং তা এক হাত থেকে অন্য হাতে হস্তান্তর হতে থাকে...।[৪৮]
সাকীফার ঘটনায় ‘খেলাফত’ আলী বিন আবি তালিবের (আ.) হাতাছাড়া হয়ে যায়। অথচ মহানবির (স.) জীবনের শেষ দিনগুলিতে ‘খেলাফত’ যে, আলীর অধিকার বিষয়টি অনেকের নিকট স্বীকৃত ছিল এবং তা এক হাত থেকে অন্য হাতে হস্তান্তর হতে থাকে...।[৪৮]
৯৯ নং লাইন: ৯৯ নং লাইন:
[[হযরত ফাতিমা (সা. আ.)]] সাকীফার ঘটনায় গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে একে রাসূলের (সা.) আদেশ লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন। তার বিরোধিতার কথা ঘোষণা তিনি ‘আলীর (আ.) নিকট হতে জোরপূর্বক বাইয়াত গ্রহণের চেষ্টা’ এবং ‘তাঁর গৃহ ঘেরাওয়ের সময়’ প্রকাশ করেছিলেন।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩০-৩১।</ref> এছাড়া, [[মসজিদে নববি|মসজিদে নববিতে]] প্রদত্ত ‘[[খোতবায়ে ফাদাকিয়া]]’ নামে বিখ্যাত খোতবাতেও তিনি এ বিষয়ে নিজের বিরোধিতা প্রকাশ করেছিলেন।[৫০]
[[হযরত ফাতিমা (সা. আ.)]] সাকীফার ঘটনায় গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে একে রাসূলের (সা.) আদেশ লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন। তার বিরোধিতার কথা ঘোষণা তিনি ‘আলীর (আ.) নিকট হতে জোরপূর্বক বাইয়াত গ্রহণের চেষ্টা’ এবং ‘তাঁর গৃহ ঘেরাওয়ের সময়’ প্রকাশ করেছিলেন।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩০-৩১।</ref> এছাড়া, [[মসজিদে নববি|মসজিদে নববিতে]] প্রদত্ত ‘[[খোতবায়ে ফাদাকিয়া]]’ নামে বিখ্যাত খোতবাতেও তিনি এ বিষয়ে নিজের বিরোধিতা প্রকাশ করেছিলেন।[৫০]


বিভিন্ন সূত্রের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা. আ.) শয্যাশায়ী অবস্থায় জীবনের শেষ দিনগুলোতে তাকে দেখতে আসা আনসার ও মুহাজির নারীদের উদ্দেশে সাকিফার সিদ্ধান্তকে আল্লাহর রাসূলের (স.) নির্দেশ লঙ্ঘন আখ্যায়িত করে এর পরিণতিতে ইসলাম যে সকল ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।[৫১]
বিভিন্ন সূত্রের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা. আ.) শয্যাশায়ী অবস্থায় জীবনের শেষ দিনগুলোতে তাকে দেখতে আসা আনসার ও মুহাজির নারীদের উদ্দেশে সাকিফার সিদ্ধান্তকে আল্লাহর রাসূলের (স.) নির্দেশ লঙ্ঘন আখ্যায়িত করে এর পরিণতিতে ইসলাম যে সকল ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।<ref>ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ১৬, পৃ. ২৩৩-২৩৪; ইরবিলি, কাশফুল গুম্মাহ, ১৩৮১ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৪৯২।</ref>


== প্রাচ্যবিদদের দৃষ্টিতে সাকিফা ==
== প্রাচ্যবিদদের দৃষ্টিতে সাকিফা ==
confirmed, templateeditor
১,৯৬২টি

সম্পাদনা