বিষয়বস্তুতে চলুন

হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

৩৩৯ নং লাইন: ৩৩৯ নং লাইন:
মহানবির (সা.) সর্বোৎকৃষ্ট ও সবচেয়ে স্পষ্ট বৈশিষ্টটি ছিল তাঁর আখলাক ও নৈতিকতা। পবিত্র কুরআনে এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে : ‘আর নিঃসন্দেহ তুমি সুমহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ <ref>ক্বালাম : ৪।</ref>
মহানবির (সা.) সর্বোৎকৃষ্ট ও সবচেয়ে স্পষ্ট বৈশিষ্টটি ছিল তাঁর আখলাক ও নৈতিকতা। পবিত্র কুরআনে এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে : ‘আর নিঃসন্দেহ তুমি সুমহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ <ref>ক্বালাম : ৪।</ref>


মহানবি (সা.)-এর আচার-আচরণ ও বৈশিষ্টের বিষয়ে বলা হয়েছে যে, তিনি বেশীরভাগ সময় নিরব থাকতেন এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশী কথা বলতেন না। কখনই সম্পূণ মুখ খুলতেন না, মুচকি হাসতেন এবং উচ্চৈস্বরে হাসতেন না। যখন কারো দিকে তাকাতে চাইতেন তখন নিজের সমস্ত শরীর তার দিকে ঘুরিয়ে নিতেন। পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতা ও সুগন্ধি অত্যধিক পছন্দ করতেন এবং যে স্থান দিয়ে তিনি অতিক্রম করতেন তাঁর পরে আগত পথিকরাও তাঁর উপস্থিতির সুগন্ধি পেত।  
মহানবি (সা.)-এর আচার-আচরণ ও বৈশিষ্টের বিষয়ে বলা হয়েছে যে, তিনি বেশীরভাগ সময় নিরব থাকতেন এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশী কথা বলতেন না। কখনই সম্পূণ মুখ খুলতেন না, মুচকি হাসতেন এবং উচ্চৈস্বরে হাসতেন না। যখন কারো দিকে তাকাতে চাইতেন তখন নিজের সমস্ত শরীর তার দিকে ঘুরিয়ে নিতেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সুগন্ধি অত্যধিক পছন্দ করতেন এবং যে স্থান দিয়ে তিনি অতিক্রম করতেন তাঁর পরে আগত পথিকরাও তাঁর উপস্থিতির সুগন্ধি পেত।  


তাঁর জীবন ছিল খুবই সাধাসিধে। তিনি মাটিতে বসতেন, মাটিতে বসেই খাবার খেতেন এবং কখনই অহংকার করতেন না। কখনই পেট পূর্ণ করে খাবার খেতেন না। অনেক সময় তিনি ক্ষুধার্ত থেকেছেন, বিশেষ করে [[মদিনা]]য় আগমনের প্রথম দিকে। এত কিছুর পরও তিনি অনাড়ম্বর জীবন-যাপন করতেন না এবং নিজেই বলতেন, প্রয়োজন অনুযায়ী দুনিয়ার নিয়ামত থেকে উপকৃত হয়েছেন, আবার রোজাও রেখেছেন এবং ইবাদতও করেছেন। মুসলমানদের সাথে, এমনকি অন্যান্য ধর্মের বিশ্বাসীদের সাথে তাঁর আচরণ ছিল সহানুভূতি, উদারতা, ক্ষমা এবং দয়ার উপর ভিত্তি করে। তাঁর জীবনী এতটাই পছন্দনীয় ও মুসলমানদের জন্য এতটাই আনন্দদায়ক ছিল যে, এর প্রতিটি বিবরণ এক প্রজন্ম পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বর্ণনা করেছে এবং আজও তারা এটিকে তাদের জীবন ও দ্বীনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।<ref>দেখুন; দায়েরাতুল মাআরেফে বোযোর্গে ইসলামি, ‘ইসলাম’ প্রবন্ধ।</ref>
তাঁর জীবন ছিল খুবই সাধাসিধে। তিনি মাটিতে বসতেন, মাটিতে বসেই খাবার খেতেন এবং কখনই অহংকার করতেন না। কখনই পেট পূর্ণ করে খাবার খেতেন না। অনেক সময় তিনি ক্ষুধার্ত থেকেছেন, বিশেষ করে [[মদিনা]]য় আগমনের প্রথম দিকে। এত কিছুর পরও তিনি অনাড়ম্বর জীবন-যাপন করতেন এবং নিজেই বলতেন, প্রয়োজন অনুযায়ী দুনিয়ার নিয়ামত থেকে উপকৃত হয়েছেন, আবার রোজাও রেখেছেন এবং ইবাদতও করেছেন। মুসলমানদের সাথে, এমনকি অন্যান্য ধর্মে বিশ্বাসীদের সাথে তাঁর আচরণ ছিল সহানুভূতি, উদারতা, ক্ষমা এবং দয়ার উপর ভিত্তি করে। তাঁর জীবনী এতটাই পছন্দনীয় ও মুসলমানদের জন্য এতটাই আনন্দদায়ক ছিল যে, এর প্রতিটি বিবরণ এক প্রজন্ম পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বর্ণনা করেছে এবং আজও তারা এটিকে তাদের জীবন ও দ্বীনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।<ref>দেখুন; দায়েরাতুল মাআরেফে বোযোর্গে ইসলামি, ‘ইসলাম’ প্রবন্ধ।</ref>


তাঁর নম্রতা এমন ছিল যে তিনি একজন দাসের মতো খেতেন এবং মাটিতে বসতেন। ইমাম সাদিক (আ.) এর ভাষায়: ‘তিনি মাবউস (নবুয়্যতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা) হওয়ার পর কখনও হেলান দিয়ে খাবার খাননি। <ref>তাবাতাবায়ী, সুনানুন নাবি (সা.), খণ্ড ১, পৃ. ২১৪।</ref>  
তাঁর নম্রতা এমন ছিল যে তিনি একজন দাসের মতো খেতেন এবং মাটিতে বসতেন। ইমাম সাদিক (আ.) এর ভাষায়: ‘তিনি মাবউস (নবুয়্যতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা) হওয়ার পর কখনও হেলান দিয়ে খাবার খাননি। <ref>তাবাতাবায়ী, সুনানুন নাবি (সা.), খণ্ড ১, পৃ. ২১৪।</ref>  
৩৪৭ নং লাইন: ৩৪৭ নং লাইন:
[[আমিরুল মুমিনীন]] নবী (সা.)-এর চেহারা ও ব্যক্তিত্বের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন: ‘পূর্ব পরিচয় ছাড়া যে কেউ তাঁকে দেখেছে সে বিস্মিত ও তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। যারাই তাঁর সাথে মেলামেশা করত এবং তাঁর সাথে পরিচিত হত তারাই তাঁর বন্ধু হয়ে যেত। <ref>আশ-শিফা বিতা’রিফি হুকুকিল মুস্তাফা (সা.), খণ্ড ১, পৃ. ১৫০; আল-মা’রেফাহ ওয়াত তারিখ, খণ্ড ৩, পৃ. ২৮৩; আল-মুসান্নিফ লিইবনে আবি শাইবাহ, খণ্ড ১১, পৃ. ৫১২।</ref> তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে সমান চোখে দেখতেন।<ref>বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ১৬, পৃ. ২৬০; আল-মিযান ফি তাফসিরীল কুরআন, খণ্ড ৬, পৃ. ৩৩২।</ref> আল্লাহর রসূল (সা.) কারও সাথে করমর্দন করার সময় কখনও এমন হয়নি যে, তিনি প্রথমে হাত টেনে নিয়েছেন, বরং অপরজন নিজ হাত টেনে না নেয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করতেন।<ref>বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ১৬, পৃ. ২৩৭; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড ৬, পৃ. ৩৯।</ref> প্রত্যেকের বুঝ অনুযায়ী তিনি (সা.) তার সাথে কথা বলতেন।[<ref>বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ১৬, পৃ. ২৮৭।</ref> তাঁর উপর জুলুমকারীকে ক্ষমা করার বিষয়টি সম্পর্কে সকলে জানত।<ref>হায়তুস সাহাবা, খণ্ড ২, পৃ. ৫২৬।</ref> এমনকি (তাঁর (সা.) চাচা [[হামযা]] বিন আব্দুল মুত্তালিবের (রা.) হত্যাকারী) ওয়াহশি ও ইসলামের চিরশত্রু [[আবু সুফিয়ান]]কেও ক্ষমা করে দিয়েছেন।
[[আমিরুল মুমিনীন]] নবী (সা.)-এর চেহারা ও ব্যক্তিত্বের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন: ‘পূর্ব পরিচয় ছাড়া যে কেউ তাঁকে দেখেছে সে বিস্মিত ও তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। যারাই তাঁর সাথে মেলামেশা করত এবং তাঁর সাথে পরিচিত হত তারাই তাঁর বন্ধু হয়ে যেত। <ref>আশ-শিফা বিতা’রিফি হুকুকিল মুস্তাফা (সা.), খণ্ড ১, পৃ. ১৫০; আল-মা’রেফাহ ওয়াত তারিখ, খণ্ড ৩, পৃ. ২৮৩; আল-মুসান্নিফ লিইবনে আবি শাইবাহ, খণ্ড ১১, পৃ. ৫১২।</ref> তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে সমান চোখে দেখতেন।<ref>বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ১৬, পৃ. ২৬০; আল-মিযান ফি তাফসিরীল কুরআন, খণ্ড ৬, পৃ. ৩৩২।</ref> আল্লাহর রসূল (সা.) কারও সাথে করমর্দন করার সময় কখনও এমন হয়নি যে, তিনি প্রথমে হাত টেনে নিয়েছেন, বরং অপরজন নিজ হাত টেনে না নেয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করতেন।<ref>বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ১৬, পৃ. ২৩৭; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড ৬, পৃ. ৩৯।</ref> প্রত্যেকের বুঝ অনুযায়ী তিনি (সা.) তার সাথে কথা বলতেন।[<ref>বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ১৬, পৃ. ২৮৭।</ref> তাঁর উপর জুলুমকারীকে ক্ষমা করার বিষয়টি সম্পর্কে সকলে জানত।<ref>হায়তুস সাহাবা, খণ্ড ২, পৃ. ৫২৬।</ref> এমনকি (তাঁর (সা.) চাচা [[হামযা]] বিন আব্দুল মুত্তালিবের (রা.) হত্যাকারী) ওয়াহশি ও ইসলামের চিরশত্রু [[আবু সুফিয়ান]]কেও ক্ষমা করে দিয়েছেন।


ওয়াহশির ইসলাম গ্রহণ এবং হযরত হামযাকে (রা.) হত্যার বিবরণ শুনে তাকে ক্ষমা করে দিয়ে বললেন: নিজেকে আমার দৃষ্টি থেকে দূরে রাখবে (আমার চোখের সামনে আসবে না)।<ref>ইবনে আসীর, আল-কামেল ফিত তারিখ, খণ্ড ২, পৃ. ২৫১।</ref>
ওয়াহশির ইসলাম গ্রহণ এবং হযরত হামযাকে (রা.) হত্যার বিবরণ শুনে তাকেও ক্ষমা করে দিয়ে বললেন: নিজেকে আমার দৃষ্টি থেকে দূরে রাখবে (আমার চোখের সামনে আসবে না)।<ref>ইবনে আসীর, আল-কামেল ফিত তারিখ, খণ্ড ২, পৃ. ২৫১।</ref>


===দুনিয়া বিমুখতা===
===দুনিয়া বিমুখতা===
Automoderated users, confirmed, templateeditor
১,৭২১টি

সম্পাদনা