Automoderated users, confirmed, templateeditor
১,৭৬৭টি
সম্পাদনা
২৩৫ নং লাইন: | ২৩৫ নং লাইন: | ||
মোবাহালার দিন সকালে মহানবি (সা.) আলী ইবনে আবি তালিবের (আ.) বাড়িতে এলেন। [[ইমাম হাসান (আ.)|ইমাম হাসানের (আ.)]] হাত ধরলেন এবং [[ইমাম হুসাইন (আ.)|ইমাম হুসাইনকে (আ.)]] কোলে নিলেন। অতঃপর আলী (আ.) ও [[হযরত ফাতেমা যাহরা (সালামুল্লাহ আলাইহা)|ফাতেমাকে (সা. আ.)]] সঙ্গে নিয়ে মোবাহালার ময়দানের উদ্দেশ্যে মদিনা থেকে বের হলেন। নাজরানের খ্রিষ্টানরা তাদেরকে দেখে মুবাহালা করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং অন্য কোন উপায়ে নিষ্পত্তির আহবান জানায়<ref>শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, পৃ. ১৬৬-১৬৮।</ref> এবং জিজিয়া কর প্রদানে সম্মত হয়ে মুবাহালায় ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করে। | মোবাহালার দিন সকালে মহানবি (সা.) আলী ইবনে আবি তালিবের (আ.) বাড়িতে এলেন। [[ইমাম হাসান (আ.)|ইমাম হাসানের (আ.)]] হাত ধরলেন এবং [[ইমাম হুসাইন (আ.)|ইমাম হুসাইনকে (আ.)]] কোলে নিলেন। অতঃপর আলী (আ.) ও [[হযরত ফাতেমা যাহরা (সালামুল্লাহ আলাইহা)|ফাতেমাকে (সা. আ.)]] সঙ্গে নিয়ে মোবাহালার ময়দানের উদ্দেশ্যে মদিনা থেকে বের হলেন। নাজরানের খ্রিষ্টানরা তাদেরকে দেখে মুবাহালা করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং অন্য কোন উপায়ে নিষ্পত্তির আহবান জানায়<ref>শেইখ মুফিদ, আল-ইরশাদ, পৃ. ১৬৬-১৬৮।</ref> এবং জিজিয়া কর প্রদানে সম্মত হয়ে মুবাহালায় ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করে। | ||
=মহানবির (সা.) বিদায় হজ্জ= | ==মহানবির (সা.) বিদায় হজ্জ== | ||
১০ম হিজরীর যিলক্বদ মাসে মহানবি (সা.) জীবনের শেষ হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা অভিমুখে রওনা হলেন। এ সফরে তিনি মুসলমানদেরকে হজ্জের বিধি-বিধান চাক্ষুষভাবে শিখিয়ে দিলেন। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কুরাইশ কিছু কিছু বিষয়ে নিজেদেরকে অন্যান্য হাজীদের তুলনায় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়েছিল। কা’বার চাবীর বাহক, পর্দার সংরক্ষক, হাজীদেরকে পানি পান করানো ও তাদেরকে আপ্যায়ন করা ছাড়াও যিয়ারত সংশ্লিষ্ট কিছু কিছু বিষয়ে অন্য গোত্র থেকে তারা নিজেদেরকে আলাদা করে রাখত। আল্লাহর গৃহ যিয়ারতের ক্ষেত্রে কুরাইশ যে সকল বিষয়ে নিজেদেরকে আলাদা করে রাখত এবং অন্যদেরকে তা থেকে বঞ্চিত করত, মহানবি (সা.) ভিত্তিহীন ঐসব প্রথার ইতি টানলেন। ঐ প্রথাগুলোর মধ্যে ছিল, | : ''মূল নিবন্ধ:[[বিদায় হজ্জ]]'' | ||
১০ম হিজরীর [[যিলক্বদ]] মাসে মহানবি (সা.) জীবনের শেষ [[হজ্জ]] পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা অভিমুখে রওনা হলেন। এ সফরে তিনি মুসলমানদেরকে হজ্জের বিধি-বিধান চাক্ষুষভাবে শিখিয়ে দিলেন। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে [[কুরাইশ]] কিছু কিছু বিষয়ে নিজেদেরকে অন্যান্য হাজীদের তুলনায় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়েছিল। কা’বার চাবীর বাহক, পর্দার সংরক্ষক, হাজীদেরকে পানি পান করানো ও তাদেরকে আপ্যায়ন করা ছাড়াও যিয়ারত সংশ্লিষ্ট কিছু কিছু বিষয়ে অন্য গোত্র থেকে তারা নিজেদেরকে আলাদা করে রাখত। আল্লাহর গৃহ যিয়ারতের ক্ষেত্রে কুরাইশ যে সকল বিষয়ে নিজেদেরকে আলাদা করে রাখত এবং অন্যদেরকে তা থেকে বঞ্চিত করত, মহানবি (সা.) ভিত্তিহীন ঐসব প্রথার ইতি টানলেন। ঐ প্রথাগুলোর মধ্যে ছিল, [[জাহিলিয়্যা]]তের যুগে মানুষের বিশ্বাস ছিল, কা’বার তাওয়াফ অবশ্যই পবিত্র পোশাকে আঞ্জাম দিতে হবে, আর পোশাক তখনই পবিত্র হবে যখন তা কুরাইশের কাছ থেকে নেয়া হবে। এ কারণে যদি কুরাইশ কাউকে পোশাক না দিত তাহলে তাকে নগ্ন অবস্থায় তাওয়াফ করতে হত। | |||
অপর বিষয়টি হল আরাফায় যাওয়া ও না যাওয়া নিয়ে। আরাফায় অবস্থান করার বিষয়টি জরুরী হলেও হারাম এলাকার বাইরে হওয়ায় মক্কার কুরাইশরা আরাফা পর্যন্ত যেত না, তারা মুযদালিফা থেকেই ফিরে আসত। কিন্তু নিম্নোক্ত আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ তাদের এ কুপ্রথাকে বাতিল ঘোষণা করেন; | অপর বিষয়টি হল আরাফায় যাওয়া ও না যাওয়া নিয়ে। [[আরাফায়]] অবস্থান করার বিষয়টি জরুরী হলেও হারাম এলাকার বাইরে হওয়ায় মক্কার কুরাইশরা আরাফা পর্যন্ত যেত না, তারা [[মুযদালিফা]] থেকেই ফিরে আসত। কিন্তু নিম্নোক্ত আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ তাদের এ কুপ্রথাকে বাতিল ঘোষণা করেন; | ||
ثُمَّ أَفِیضُوا مِنْ حَیثُ أَفَاضَ النَّاسُ | ثُمَّ أَفِیضُوا مِنْ حَیثُ أَفَاضَ النَّاسُ | ||
অতঃপর (কুরাইশের মত আরাফায় না গিয়েই কেবল মুযদালিফা থেকে না ফিরে অন্য) লোকেরা যেখান থেকে ফিরে, সেখান থেকেই (আরাফাত থেকে মুযদালিফায়) ফিরে চল।<ref>বাকারাহ : ১৯৯</ref> | অতঃপর (কুরাইশের মত আরাফায় না গিয়েই কেবল মুযদালিফা থেকে না ফিরে অন্য) লোকেরা যেখান থেকে ফিরে, সেখান থেকেই (আরাফাত থেকে মুযদালিফায়) ফিরে চল।<ref>বাকারাহ : ১৯৯</ref> | ||
হাজীরা দেখল যে, মুহাম্মাদ (সা.) নিজে কুরাইশ হয়েও আরাফাত থেকে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। এ সফরেই তিনি বললেন; হে লোকসকল! আমি জানি না আগামি বছর তোমাদের মাঝে থাকব কি না। জাহিলিয়্যাতের যুগে যে রক্ত ঝরেছে সেগুলো থেকে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছি। (কিন্তু এরপর থেকে) তোমাদের রক্ত ও সম্পদ পরস্পরের জন্য হারাম। | হাজীরা দেখল যে, মুহাম্মাদ (সা.) নিজে কুরাইশ হয়েও আরাফাত থেকে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। এ সফরেই তিনি বললেন; হে লোকসকল! আমি জানি না আগামি বছর তোমাদের মাঝে থাকব কি না। জাহিলিয়্যাতের যুগে যে রক্ত ঝরেছে সেগুলো থেকে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছি। (কিন্তু এরপর থেকে) তোমাদের রক্ত ও সম্পদ পরস্পরের জন্য হারাম। | ||
==গাদীরে খুমের ঘটনা== | ===গাদীরে খুমের ঘটনা=== | ||
: '' | : ''মূল নিবন্ধ: [[গাদীরে খুমের ঘটনা]]'' | ||
মদিনায় ফেরার পথে | মদিনায় ফেরার পথে ‘[[জোহফা]]’র গাদীরে খুম এলাকা; [[মিসর]], হিজাজ ও [[ইরাক|ইরাকের]] পথিকদের পথ এখান থেকে পৃথক হয়ে যাবে। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মহানবি (সা.) নির্দেশিত হলেন যেন [[হযরত আলীর (আ.) ফজিলত|আলীকে (আ.)]] নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ঘোষণা দেন। অন্য ভাষায় তাঁর (সা.) অবর্তমানে মুসলিম উম্মাহর অভিভাবককে পরিচয় করিয়ে দেন। আল্লাহর রসূল (সা.) মুসলমানদের মাঝে -যাদের সংখ্যা ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ বর্ণিত হয়েছে- প্রদত্ত দীর্ঘ খোতবায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি বর্ণনার পর তাঁর পরবর্তীত সময়ে মুসলমানদের অভিভাবককে এভাবে পরিচয় করালেন: | ||
<center>من کنت مولاه فعلیّ مولاه. اللّهم وال من والاه و عاد من عاداه و أحب من أحبه و أبغض من أبغضه و انصر من نصره و اخذل من حذله و أدر الحق معه حیث دار</center> | <center>من کنت مولاه فعلیّ مولاه. اللّهم وال من والاه و عاد من عاداه و أحب من أحبه و أبغض من أبغضه و انصر من نصره و اخذل من حذله و أدر الحق معه حیث دار</center> | ||
সুতরাং হে লোকসকল! আমি যার মাওলা (অভিভাবক), এই আলীও তার মাওলা (অভিভাবক)। হে আল্লাহ! যে তাকে সমর্থন করবে তাকে তুমিও সমর্থন কর; যে তার সাথে শত্রুতা করবে, তার সাথে তুমিও শত্রুতা কর; যে তাকে ভালোবাসবে, তাকে তুমিও ভালোবাস; যে তাকে ঘৃণা করবে, তাকে তুমিও ঘৃণা কর; যে তাকে সাহায্য করবে, তাকে তুমিও সাহায্য কর এবং যে তাকে সাহায্য থেকে বিরত থাকবে, তাকে তুমিও সাহায্য করা থেকে বিরত থাক এবং সে যেদিকে ঘোরে, সত্যকেও তার সাথে সেদিকে ঘুরিয়ে দাও। উপস্থিতরা এ বার্তা অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছে দেবে’। | সুতরাং হে লোকসকল! আমি যার মাওলা (অভিভাবক), এই আলীও তার মাওলা (অভিভাবক)। হে আল্লাহ! যে তাকে সমর্থন করবে তাকে তুমিও সমর্থন কর; যে তার সাথে শত্রুতা করবে, তার সাথে তুমিও শত্রুতা কর; যে তাকে ভালোবাসবে, তাকে তুমিও ভালোবাস; যে তাকে ঘৃণা করবে, তাকে তুমিও ঘৃণা কর; যে তাকে সাহায্য করবে, তাকে তুমিও সাহায্য কর এবং যে তাকে সাহায্য থেকে বিরত থাকবে, তাকে তুমিও সাহায্য করা থেকে বিরত থাক এবং সে যেদিকে ঘোরে, সত্যকেও তার সাথে সেদিকে ঘুরিয়ে দাও। উপস্থিতরা এ বার্তা অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছে দেবে’। | ||
মহানবি (সা.) হজ্জ পালন শেষে মদিনায় ফিরে এলেন। দিনের পর দিন ইসলামের শক্তি ও প্রভাব বেড়েই চলছিল। মদিনায় ফিরে তিনি (সা.) অসুস্থ হয়ে পড়লেন। কিন্তু অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও | মহানবি (সা.) হজ্জ পালন শেষে মদিনায় ফিরে এলেন। দিনের পর দিন ইসলামের শক্তি ও প্রভাব বেড়েই চলছিল। মদিনায় ফিরে তিনি (সা.) অসুস্থ হয়ে পড়লেন। কিন্তু অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও [[মোতা]]’র যুদ্ধের পরাজয়ের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে [[উসামা বিন যাইদ|উসামা বিন যাইদের]] নেতৃত্বে সেনাবাহিনী প্রস্তুত করলেন এবং সবাইকে ঐ বাহিনীতে যোগদানের নির্দেশ দিলেন। কিন্তু ঐ বাহিনী রওনা হওয়ার আগেই মহানবি (সা.) মহান প্রতিপালকের সান্নিধ্য লাভ করেন। ওফাতের পূর্বে তিনি গোটা জাজিরাতুল আরবে ইসলামি ঐক্য কায়েম করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং ইসলামকে বৃহৎ [[ইরান]] ও [[রোম]] সম্রাজ্যের সম্মুখে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। | ||
=মহানবির (সা.) ওফাত= | =মহানবির (সা.) ওফাত= |