বিষয়বস্তুতে চলুন

সূরা আহযাবের ৪৫ নং আয়াত

wikishia থেকে
(সূরা আহযাব থেকে পুনর্নির্দেশিত)
সূরা আহযাবের ৪৫ নং আয়াত
সূরার নামআহযাব
আয়াত নম্বর৪৫
পারা নম্বর২১
অবতীর্ণের স্থানমদিনা
বিষয়মহানবী (সা.) উম্মতের আমলের প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষী, সুসংবাদাতা এবং ভয়প্রদর্শনকারী
প্রসঙ্গমহানবীর (সা.) গুণাবলী
সংশ্লিষ্ট আয়াতসূরা ফুর্কানের ৫৬ নং আয়াতসূরা ফাত্হের ৮নং আয়াতসূরা ইসরা’র ১০৫ আয়াত


সূরা আহযাবের ৪৫ নং আয়াত (আরবি: ৪৫-الآية من سورة الحزاب); মহানবীর (সা.) জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এবং মিশন তুলে ধরেছে।[] এই আয়াতে তাঁকে সম্বোধন করে বলা হয় যে, মহান আল্লাহ মহানবীকে (সা.) উম্মতের আমলের প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষী, সুসংবাদাতা এবং ভয়প্রদর্শনকারী হিসেবে পাঠিয়েছেন।[]


يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِداً وَمُبَشِّراً وَنَذِيراً


অর্থ: হে নবী, আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি।



সূরা আহযাব: ৪৫।


একই আয়াত কুরআনের আরও দুটি জায়গায়, সূরা ফাত্হের ৮নং আয়াতে এবং সূরা ফুর্কানের ৫৬ নং আয়াতে পুনরাবৃত্তি হয়েছে; তবে সূরা ফুর্কানের ৫৬ নং আয়াতে (شاهداً) শব্দটির উল্লেখ নেই। অনুরূাপভাবে, এটি সূরা ইসরা -এর ১০৫ আয়াতেও (شاهداً) শব্দটি ছাড়া উল্লেখ রয়েছে।

(شاهداً) শব্দের বিভিন্ন অর্থ রয়েছে[] এবং এই আয়াতে এর অর্থ "সাক্ষী"। [] এই আয়াতের উপর নির্ভর করে মুফাসসিরগণ মহানবী (সাঃ) কে তাঁর উম্মতের কর্মকাণ্ড ও আচরণের একজন সাক্ষী এবং পর্যবেক্ষক হিসেবে বিবেচনা করেছেন।[] এই অর্থের সমর্থনে তারা অন্যান্য আয়াত যেমন- সূরা বাকারার ১২ ও ১৪৩ নং আয়াত,[] এবং সূরা তাওবার ১০৫ নং আয়াতকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন,[] যেখানে মহানবীকে স্পষ্টভাবে সাক্ষী এবং প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।[]

কুরআনের অনেক আয়াতে মহানবী (সা.)-কে দুটি বিশেষণ দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে- (مُبَشِّر বা بشیر) যার অর্থ "সুসংবাদদাতা" এবং (نَذیر বা مُنذِر) যার অর্থ "সতর্ককারী" বা "ভয় প্রদর্শনকারী"। এই বিশেষণগুলি তাঁর রিসালাতের একাংশ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।[]

এই দুটি বিশেষণের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুর্তুজা মোতাহারি বলেন, মহানবী (সা.) হলেন সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারী। যদি তিনি কেবল পথপ্রদর্শক হতে চান এবং সতর্ককারী না হন, তাহলে হয়তো কেউ পথ পেতে পারে; কিন্তু যেহেতু সে বিপথ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে, তাই সে মনে করে যে, সে সঠিক পথেই আছে, কিন্তু প্রকৃতে অর্থে সে বিপথে পড়ে গেছে।[১০] মোতাহারী আরও বলেন যে, সুসংবাদের একটি উৎসাহজনক দিক রয়েছে এবং সতর্কীকরণ হল একটি বিপদের হুঁশিয়ারি এবং ধর্মপ্রচারের ক্ষেত্রে ধর্মীয় মুবাল্লিগের উভয় দিকেই সমান মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।[১১]


তথ্যসূত্র

  1. তাবাতাবাঈ, তাফসিরে আল-মিযান, ১৩৯৩ হি., খ: ১৬, পৃ: ৩২৯-৩৩০ ও ফখরুদ্দিন রাযি, তাফসিরে আল-কাবির, ১৪২০ হি., খ: ২৮, পৃ: ৭২।
  2. তাবাতাবাঈ, তাফসিরে আল-মিযান, ১৩৯৩ হি., খ: ১৬, পৃ: ৩২৯-৩৩০ ও ফখরুদ্দিন রাযি, তাফসিরে আল-কাবির, ১৪২০ হি., খ: ২৮, পৃ: ৭২।
  3. তুরাইহী, মাজমাউল বাহরাইন, ১৯৮৫ (ঈসায়ী), খ: ৩, পৃ: ৭৭ ও মাকারেম শিরাজী, লুগাত দার তাফসিরে নেমুনেহ, ১৩৮৭ (ফার্সি সন), পৃ: ৩১০।
  4. মাশকিনী, তাফসিরে রাওয়ান, ১৩৯২ (ফার্সি সন), খ: ৭, পৃ: ৪৫০।
  5. ফখরুদ্দিন রাযি, তাফসিরে আল-কাবির, ১৪২০ হি., খ: ২৮, পৃ: ৭২ ও তাবাতাবাঈ, তাফসিরে আল-মিযান, ১৩৯৩ হি., খ: ১৬, পৃ: ৩২৯।
  6. ফখরুদ্দিন রাযি, তাফসিরে আল-কাবির, ১৪২০ হি., খ: ২৮, পৃ: ৭২ ও তাবাতাবাঈ, তাফসিরে আল-মিযান, ১৩৯৩ হি., খ: ১৬, পৃ: ৩৩০।
  7. মাকারেম শিরাজী, তাফসিরে নেমুনেহ, ১৩৭৪ (ফার্সি সন), খ: ১৬, পৃ: ৩৬২।
  8. ফখরুদ্দিন রাযি, তাফসিরে আল-কাবির, ১৪২০ হি., খ: ২৮, পৃ: ৭২; মাকারেম শিরাজী, তাফসিরে নেমুনেহ, ১৩৭৪ (ফার্সি সন), খ: ১৬, পৃ: ৩৬২ ও তাবাতাবাঈ, তাফসিরে আল-মিযান, ১৩৯৩ হি., খ: ১৬, পৃ: ৩৩০।
  9. সূরা ফাত্হ: ৮, এটি সূরা ইসরা: ১০৫, সূরা ফুর্কান: ৫৬, সূরা মায়েদা:১০৫।
  10. মোতাহারী, আশনায়ী ব কুরআন, ১৪০২ (ফার্সি সন), খ: ১০, পৃ: ১৬৪।
  11. মোতাহারী, সিরেয়ে নাবাভী, ১৪০২ (ফার্সি সন), পৃ: ১৮০-১৮১।

গ্রন্থপঞ্জি

  • কুরআন কারিম,
  • তাবাতাবাঈ, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হুসাইন, তাফসিরে আল-মিযান, বৈরুত, মুয়াসসাসাতুল আ’লামি লিল মাতবুয়াত, ১৩৯৩ হি.,
  • তুরাইহী, ফখরুদ্দিন বিন মুহাম্মাদ, মাজমাউল বাহরাইন, বৈরুত, দারু ওয়া মাকতাবাতুল হিলাল, ১৯৮৫ (ঈসায়ী),
  • ফখরুদ্দিন রাযি, মুহাম্মাদ বিন আমর, তাফসিরে আল-কাবির, বৈরুত, দারু ইহয়াইত তুরাসিল আরাবি, ১৪২০ হি.,
  • মাশকিনী, আলী, তাফসিরে রাওয়ান, কোম, মুয়াসসেসেয়ে ইলমি ওয়া ফারহাঙ্গিয়ে দারুল হাদিস, ১৩৯২ (ফার্সি সন),
  • মোতাহারী, মুর্তুজা, আশনায়ী ব কুরআন, কোম, ইন্তেশারাতে সাদরা, ১৪০২ (ফার্সি সন),
  • মোতাহারী, মুর্তুজা, সিরেয়ে নাবাভী, কোম, ইন্তেশারাতে সাদরা, ১৪০২ (ফার্সি সন),
  • মাকারেম শিরাজী, নাসের, তাফসিরে নেমুনেহ, তেহরান, দারুল কুতুবিল ইসলামিয়্যাহ, ১৩৭৪ (ফার্সি সন),
  • মাকারেম শিরাজী, নাসের, লুগাত দার তাফসিরে নেমুনেহ, কোম, ইমাম আলী বিন আবি তালিব (আ.), প্রথম প্রকাশ, ১৩৮৭ (ফার্সি সন)।