সিজদার অঙ্গসমূহ

wikishia থেকে
(নিবন্ধটি ফিকাহ সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ের সংজ্ঞা ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিয়ে রচিত, ধর্মীয় আমলের মানদণ্ড নয়। আমলের লক্ষ্যে অন্য সূত্রের শরণাপন্ন হোন।)

সিজদার অঙ্গসমূহ (আরবি: أعضاء السجدة ); হলো শরীরের সাতটি অঙ্গ যা সিজদার সময় মাটিতে রাখা হয়। শিয়া ফিকাহবিদদের মতে, সিজদা করার সময় কপাল, উভয় হাতের তালু, হাঁটু এবং বুড়ো আঙ্গুলের (পায়ের) অগ্রভাগ মাটিতে রাখা ওয়াজিব। এছাড়া, মাটিতে নাক রাখা মুস্তাহাব। অধিকাংশ ফিকাহবিদদের অভিমত যে, সিজদায় সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মাটিতে রাখা ওয়াজিব নয়; বরং মাটির সাথে ন্যূনতম যোগাযোগই যথেষ্ট। অবশ্য, কপাল এই বিধান থেকে ব্যতিক্রম এবং কিছু ফিকাহবিদ এক দিরহামের সমান মাটিতে কপাল রাখা ওয়াজিব মনে করেছেন।

ওয়াজিব হচ্ছে নামাযরত ব্যক্তি যার উপর কপাল রাখবে তা মাটি জাতীয় কিছু হতে হবে বা মাটি থেকে উৎপন্ন হয় এমন কিছু; শর্ত হচ্ছে যে এটি ভোজ্য বা পরিধানযোগ্য হওয়া যাবে না।

আভিধানিক পরিচিতি

সিজদাহ অঙ্গসমূহ হলো শরীরের সাতটি অংশ যা সিজদার সময় মাটিতে রাখতে হয়। এই অংশগুলো হলো: কপাল, উভয় হাতের তালু, হাঁটু এবং বুড়ো আঙ্গুলের (পায়ের) অগ্রভাগ।[১]। ফিকাহ গ্রন্থগুলোর নামায অধ্যায়ে সিজদার অঙ্গসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়।[২]

আহকাম

সিজদার অঙ্গসমূহ সংক্রান্ত কতিপয় বিধান নিম্নরূপ-

  • শিয়া ফিকাহবিদ ইউসুফ বাহরানী’র (মৃত্যু ১১৮৬ হিজরি) মতে, প্রসিদ্ধ শিয়া ফিকাহবিদদের মতামত অনুযায়ী, সিজদার সময় সাতটি অঙ্গ মাটিতে রাখা ওয়াজিব।[৩]
  • কপাল ব্যতীত সাতটি অঙ্গের মাটিতে ন্যূনতম সংস্পর্শই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয়েছে।[৪] কোন কোন ফিকাহবিদের অভিমত যে, মাটির সাথে কপালের ন্যূনতম সংস্পর্শই যথেষ্ট।[৫]। পক্ষান্তরে, অন্যান্য কিছু ফিকাহবিদ কপালের এক দিরহামের সমপরিমাণ অংশ মাটির উপর রাখাকে ওয়াজিব মনে করেছেন।[৬]
  • সিজদার যিকির পাঠ করার সময়, ইচ্ছাকৃতভাবে সাতটি অঙ্গের যেকোনো একটি উঠালে নামাযকে বাতিল করে দেবে।[৭] আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী সিস্তানি’র (হাঃ) ফতোয়া অনুসারে, এহতিয়াতের বিধান হচ্ছে, সিজদার যিকির পড়া অবস্থায় ছাড়াও সিজদার কোনো অঙ্গ উঠালে, নামায বাতিল হয়ে যাবে।[৮]

মুস্তাহাব

  • মাটিতে নাক রাখা; ফিকাহবিদগণ সিজদার সময় নাক মাটিতে রাখাকে মুস্তাহাব বলে মনে করেছেন। এই বিধানের দলিল হচ্ছে ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস যেখানে নাক মাটিতে রাখাকে মহানবি (সাঃ) এর সুন্নত বলা হয়েছে।[৯] আল্লামা হিল্লির মতে, নাক মাটিতে রাখা একটি তাগিদপূর্ণ মুস্তাহাব।
  • তাখভিয়্যাহ: পুরুষের জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে, সিজদা করার সময় তার দুহাত খোলা রাখবে এবং কনুই মাটিতে রাখবে না।[১০] অনুরূপভাবে, মহিলাদের জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে, সিজদা করার সময় উভয় কনুই মাটিতে রাখা এবং দুহাত শরীরের সাথে চেপে রাখা।[১১]

সিজদার স্থান সংক্রান্ত আহকাম

প্রসিদ্ধ শিয়া ফিকাহবিদদের মতে, সিজদার স্থানগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র কপালের স্থান- যে স্থানে কপালে রাখা হয়- পবিত্র হওয়া ওয়াজিব।[১২] অবশ্য, আবু সালাহ হালাবী সিজদার স্থানগুলো থেকে অপবিত্রতা দূরীকরণকে ওয়াজিব মনে করেছেন। সিজদার সময় কপাল মাটি বা মাটি জাতীয় বা মাটি থেকে উৎপন্ন এমন কিছু হওয়া ওয়াজিব যা ভোজ্য ও পরিধানযোগ্য নয়।[১৩] এই বিধানের দলিল হল, হাদিস ও ফিকাহবিদদের ইজমা বা ঐক্যমত।

তথ্যসূত্র

  1. বাহরানী, আল-হাদায়িকুন্ নাদিরাহ, ১৩৬৩ (সৌরবর্ষ), ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৭৬।
  2. তাবাতাবায়ী ইয়াজদী,আল-উরয়াতুল উসক্বা, ১ম খণ্ড, ১৪১৭ হিঃ, পৃষ্ঠা নং-১৭৬।
  3. বাহরানী, আল-হাদায়িকুন্ নাদিরাহ, ১৩৬৩ (সৌরবর্ষ), ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৭৬।
  4. বাহরানী, আল-হাদায়িকুন্ নাদিরাহ, ১৩৬৩ (সৌরবর্ষ), ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৭৭।
  5. শহীদ সানী, মাসালিকুল আফহাম, ১৪১৩ হিঃ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-২১৮।
  6. নাজাফী, জাওয়াহেরুল কালাম, ১৩৬২ (সৌরবর্ষ), ১০ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-১৪৪।
  7. আল্লামা হিল্লি, তাহরিরুল আহকাম, মুয়াস্সাসাতু আলিল বাইত, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-৪০ (প্রকাশের তারিখ অজ্ঞাত)।
  8. সিস্তানী, তাওযিহুল মাসায়েল, ১৪১৫ হিঃ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-২২৪।
  9. হুর আমেলী, ওসায়েলুশ শিয়া, ১৪১৬ হিঃ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-৩৪৩।
  10. মুহাক্বেক আল-কারাকী, জামিউল মাকাসিদ, ১৪১৪ হিঃ,২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-৩০৬।
  11. মুহাক্বেক আল-কারাকী, জামিউল মাকাসিদ, ১৪১৪ হিঃ,২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-৩৬৫।
  12. তাবাতাবায়ী ইয়াজদী, আল-উরয়াতুল উসক্বা, ১৪১৭ হিঃ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-১৭৭।
  13. তাবাতাবায়ী ইয়াজদী, আল-উরয়াতুল উসক্বা, ১৪১৭ হিঃ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-৩৮৮।

গ্রন্থপঞ্জি

  • বাহরানী, ইউসুফ বিন আহমাদ, আল-হাদায়িকুন্ নাদিরাহ, কোম, মুয়াস্সাসাতুন নাশরিল ইসলামী, ১৩৬৩ (সৌরবর্ষ)।
  • হুর আমেলী, মুহাম্মাদ বিন হাসান, ওসায়েলুশ শিয়া, কোম, মুয়াস্সাসাতু আলিল বাইত, ১৪১৬ হিঃ।
  • সাবজেওয়ারী, সাইয়্যেদ আব্দুল আলা, মাযহাবুল আহকাম, কোম, দারুত্ তাফসির, চতুর্থ প্রকাশ, ১৪১৩ হিঃ।
  • সিস্তানী, সাইয়্যেদ আলী, তাওযিহুল মাসায়েল, কোম, ইন্তেশারাতে মেহর্, ১৪১৫ হিঃ।
  • শহীদ সানী, যাইনুদ্দীন বিন নুরুদ্দিন, মাসালিকুল আফহাম, কোম, মুয়াস্সাসাতুল মায়ারিফিল ইসলামিয়্যাহ, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৩ হিঃ।
  • তাবাতাবায়ী ইয়াজদী, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ কাযেম, আল-উরয়াতুল উসক্বা, কোম, মুয়াস্সাসাতুন নাশরিল ইসলামী, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৭ হিঃ।
  • আল্লামা হিল্লি, হাসান বিন ইউসুফ, তাহরিরুল আহকাম, মাশহাদ, মুয়াস্সাসাতু আলিল বাইত, প্রথম প্রকাশ, (প্রকাশের তারিখ অজ্ঞাত)।
  • শেইখ কুলাইনী, মুহাম্মাদ বিন ইয়াকুব, আল-কাফী, কোম, দারুল হাদিস, প্রথম প্রকাশ, ১৩৮৭ (সৌরবর্ষ)।
  • নাজাফী, মুহাম্মাদ হাসান, জাওয়াহেরুল কালাম, বৈরুত, দারু ইহয়ায়িত্ তুরাসিল আরাবী, সপ্তম প্রকাশ, ১৩৬২ (সৌরবর্ষ)।