বিষয়বস্তুতে চলুন

ঈদে গাদীর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

wikishia থেকে
W.Alhassan (আলোচনা | অবদান)
W.Alhassan (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:


'''ঈদে গাদীর''' শিয়াদের অন্যতম বড় ঈদ, যা জিলহজ্ব মাসের ১৮ তারিখে পালিত হয়; যে দিনে ইমাম আলী (আ.) মহানবি (স.)-এর জানেশীন তথা উত্তরাধিকারী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। মহানবি (স.) এবং ইমামগণ (আ.) হতে এই দিনের ফযিলত সম্পর্কে বিভিন্ন রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে; তদ্রুপভাবে এই দিনে রোযা রাখা, যিয়ারতে গাদীরিয়া পাঠ, গাদীরের নামায আদায় এবং মু’মিনদেরকে আপ্যায়ন করার ব্যাপারেও সুপারিশ করা হয়েছে। শিয়ারা এই দিনে আনন্দ উদযাপন করে থাকেন। গাদীরের দিন ইরানে সরকারী ছুটি পালিত হয়। ইরানে প্রথা রয়েছে যে শিয়ারা এই দিনে সাইয়্যেদদের সাথে সাক্ষাত করতে যান এবং সাইয়্যেদরাও ঈদ সালামি প্রদান করেন।
'''ঈদে গাদীর''' [[শিয়া|শিয়াদের]] অন্যতম বড় ঈদ, যা জিলহজ্ব মাসের ১৮ তারিখে পালিত হয়; যে দিনে ইমাম আলীকে (আ.) [[মহানবি (স.)-এর জানেশীন]] তথা উত্তরাধিকারী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। [[মহানবি (স.)]] এবং [[শিয়া ইমামগণ (আ.)|ইমামগণ (আ.)]] হতে এই দিনের ফযিলত সম্পর্কে বিভিন্ন রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে; তদ্রুপভাবে এই দিনে [[রোজা]] রাখা, [[যিয়ারতে গাদীরিয়া]] পাঠ, গাদীরের নামায আদায় এবং [[মু’মিনদেরকে আপ্যায়ন]] করার ব্যাপারেও সুপারিশ করা হয়েছে। শিয়ারা এই দিনে আনন্দ উদযাপন করে থাকেন। গাদীরের দিন [[ইরানে]] সরকারী ছুটি পালিত হয়। ইরানে প্রথা চালু রয়েছে যে, শিয়ারা এই দিনে সাইয়্যেদদের সাথে সাক্ষাত করতে যান এবং [[সাইয়্যেদ|সাইয়্যেদরাও]] ঈদি প্রদান করে থাকেন।


==গাদীরের ঘটনা==
==গাদীরের ঘটনা==
রাসূল (স.) ১০ হিজরীর জ্বিলক্বদ মাসে কয়েক হাজার লোকের সাথে হজ্ব পালনের জন্য মদীনা থেকে মক্কায় গমন করেন।[২] এই সফরটি মহানবির (স.) সর্বশেষ হজ্ব হওয়ায় হুজ্জাতুল বিদা’ তথা বিদায় হজ্ব হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে।[৩] রাসূল (স.) হজ্বের আমলসমূহ শেষ করার পর মুসলমানদের সাথে নিয়ে মদীনার দিকে রওয়ানা দেন এবং ১৮ যিলহজ্ব তারিখে গাদীরে খুম নামক স্থানে পৌঁছান,[৪] জিব্রাইল মহাবনির (স.) নিকট অবতীর্ণ হন এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ হতে রাসূলুল্লাহ (স.)-কে নির্দেশ প্রদান করেন, যেন আলী (আ.)-কে নিজের জানেশীন হিসেবে মানুষের নিকট পরিচয় করান।[৫] মহানবিও (স.) হাজীদেরকে একত্রিত করেন এবং আলীকে (আ.) তাঁর জানেশীন হিসেবে পরিচয় করান।[৬]
রাসূল (স.) [[১০ হিজরীর যিলক্বদ]] মাসে কয়েক হাজার লোকের সাথে [[হজ্ব পালন|হজ্ব পালনের]] জন্য [[মদীনা]] থেকে [[মক্কা|মক্কায়]] গমন করেন।[২] এই সফরটি মহানবির (স.) সর্বশেষ হজ্ব হওয়ায় [[হুজ্জাতুল বিদাঅ]] তথা [[বিদায় হজ্ব]] হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে।[৩] রাসূল (স.) হজ্বের আমলসমূহ শেষ করার পর মুসলমানদের সাথে নিয়ে মদীনার দিকে রওয়ানা দেন এবং [[১৮ যিলহজ্ব]] তারিখে [[গাদীরে খুম]] নামক স্থানে পৌঁছান,[৪] [[জিব্রাইল]] মহাবনির (স.) নিকট অবতীর্ণ হন এবং [[আল্লাহ রাব্বুল আলামিন|আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের]] পক্ষ হতে রাসূলুল্লাহ (স.)-কে নির্দেশ প্রদান করেন, যেন আলী (আ.)-কে নিজের জানেশীন হিসেবে মানুষের নিকট পরিচয় করান।[৫] মহানবিও (স.) হাজীদেরকে একত্রিত করেন এবং আলীকে (আ.) তাঁর জানেশীন হিসেবে পরিচয় করান।[৬]


==গাদীরের দিনের ফযিলত==
==গাদীরের দিনের ফযিলত==

১৫:১০, ১৬ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

ঈদে গাদীর শিয়াদের অন্যতম বড় ঈদ, যা জিলহজ্ব মাসের ১৮ তারিখে পালিত হয়; যে দিনে ইমাম আলীকে (আ.) মহানবি (স.)-এর জানেশীন তথা উত্তরাধিকারী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। মহানবি (স.) এবং ইমামগণ (আ.) হতে এই দিনের ফযিলত সম্পর্কে বিভিন্ন রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে; তদ্রুপভাবে এই দিনে রোজা রাখা, যিয়ারতে গাদীরিয়া পাঠ, গাদীরের নামায আদায় এবং মু’মিনদেরকে আপ্যায়ন করার ব্যাপারেও সুপারিশ করা হয়েছে। শিয়ারা এই দিনে আনন্দ উদযাপন করে থাকেন। গাদীরের দিন ইরানে সরকারী ছুটি পালিত হয়। ইরানে প্রথা চালু রয়েছে যে, শিয়ারা এই দিনে সাইয়্যেদদের সাথে সাক্ষাত করতে যান এবং সাইয়্যেদরাও ঈদি প্রদান করে থাকেন।

গাদীরের ঘটনা

রাসূল (স.) ১০ হিজরীর যিলক্বদ মাসে কয়েক হাজার লোকের সাথে হজ্ব পালনের জন্য মদীনা থেকে মক্কায় গমন করেন।[২] এই সফরটি মহানবির (স.) সর্বশেষ হজ্ব হওয়ায় হুজ্জাতুল বিদাঅ তথা বিদায় হজ্ব হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে।[৩] রাসূল (স.) হজ্বের আমলসমূহ শেষ করার পর মুসলমানদের সাথে নিয়ে মদীনার দিকে রওয়ানা দেন এবং ১৮ যিলহজ্ব তারিখে গাদীরে খুম নামক স্থানে পৌঁছান,[৪] জিব্রাইল মহাবনির (স.) নিকট অবতীর্ণ হন এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ হতে রাসূলুল্লাহ (স.)-কে নির্দেশ প্রদান করেন, যেন আলী (আ.)-কে নিজের জানেশীন হিসেবে মানুষের নিকট পরিচয় করান।[৫] মহানবিও (স.) হাজীদেরকে একত্রিত করেন এবং আলীকে (আ.) তাঁর জানেশীন হিসেবে পরিচয় করান।[৬]

গাদীরের দিনের ফযিলত

গাদীরের ফযিলত সম্পর্কে মা’সুমীনদের (আ.) হতে বিভিন্ন হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন:

  • মহানবি (স.): গাদীরে খুমের দিবস হচ্ছে আমার উম্মতের সবচেয়ে বড় ঈদ; যেদিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার উম্মতের জন্য দ্বীন এবং নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করেছেন এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে তাদের জন্য পছন্দ করেছেন।[৭]
  • ইমাম সাদিক (আ.): গাদীরে খুমের দিবসটি আল্লাহর বড় ঈদ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোন নবীকেই প্রেরণ করেন নি এই দিনটিকে ঈদ উদযাপন এবং এর তাৎপর্য চেনা ব্যতিত। আর আসমানে এই দিবসটির নাম হচ্ছে শপথের দিন এবং জমিনে কড়া শপথ এবং সকলের উপস্থিতির দিন।[৯]
  • ইমাম রেযা (আ.): গাদীর দিবসটি আসমানবাসীদের নিকট জমিনবাসীদের চেয়ে অধিক প্রসিদ্ধ…মানুষ যদি এই দিবসের প্রকৃত তাৎপর্য সম্পর্কে জানতো, তবে নিঃসন্দেহে ফেরেস্তাগণ প্রতিদিন ১০ বার তাদের সাথে মুসাফাহ তথা করমর্দন করতো।[১০]
  • আহলে সুন্নতের বিশিষ্ট পণ্ডিত নাসিবি শাফেয়ী, মাতালেবুস সাঊল গ্রন্থে ১৮ জ্বিলহজ্ব তারিখটিকে ঈদ হিসেবে ব্যক্ত করেছেন।[১১] তার ভাষ্য মতে, এটি হচ্ছে ঈদের দিন এবং মানুষের সমবেত হওয়ার দিন; কারণ যখন রাসূলুল্লাহ (স.) আলীকে (আ.) এই মহান দায়িত্ব অর্পণ করেন তখন তিনি অন্য কোম মানুষকে এই পর্যায়ে আলীর সাথে শরীক করেন নি।[১২] ওয়াফিয়াতুল আ’ইয়ান গ্রন্থে ইবনে খাল্লেকানের উল্লেখানুসারে, মিশরের অন্যতম শাসক মুস্তা’লি ইবনে মুস্তানসারের প্রতি ৪৮৭ হিজরির ১৮ জ্বিলহজ্ব ঈদে গাদীরে খুমের দিন বাইয়াত করা হয়।[১৩]

গাদীর উৎসব

খাসায়েসুল আইম্মা গ্রন্থের উল্লেখানুসারে, হাস্সান ইবনে সাবেত, ঈদে গাদীরের দিন মহানবি (স.)-এর সামনে গাদীরে খুমে উপস্থিত মুসলমানদের মাঝে উচ্চস্বরে কবিতাসমূহ আবৃত্তি করেন।[১৪]

এছাড়াও মিসবাহুল মুজতাহিদ গ্রন্থে বর্ণিত রেওয়ায়েত অনুসারে, ইমাম রেযা (আ.) গাদীর দিবসটিকে মজলিসের মাধ্যমে উদযাপন করতেন।[১৫] হিজরি চতুর্থ শতাব্দীর বিশিষ্ট ঐতিহাসিক আলী ইবনে হুসাইন মাসউদি আত-তানবিহ ওয়াল আশরাখ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ইমাম আলী (আ.)-এর সন্তানগণ এবং শিয়ারা এই দিবসটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন।[১৬] হিজরি চতুর্থ শতকের মুহাদ্দিস কুলাইনিও রেওয়ায়েতে শিয়াদের আনন্দ উদযাপনের কথা উল্লেখ করেছেন।[১৭] , হিজরি অষ্টম শতকের সুন্নি ঐতিহাসিক ইবনে কাসিরের দেওয়া তথ্য মতে, শিয়া শাসকদের মধ্যে আলে বুইয়া সরকারও ঈদে গাদীরে ছুটি এবং সার্বজনীন উৎসব হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান ও জনগণকে আনন্দ উদযাপন এবং শহর সাজানোর জন্য উৎসাহিত করতেন।[১৮] তারা এই উৎসবে তাঁবু স্থাপন করতেন, পতাকা উত্তোলন করতেবন, উট কুরবানি করতেন এবং রাতের বেলা আগুর জ্বালিয়ে আনন্দ উৎসব করতেন।[১৯] হিজরি পঞ্চম শতাব্দীর বিশিষ্ট ঐতিহাসিক গারদিযিও এই দিনটিকে ইসলামের অন্যতম মহিমান্বিত দিন এবং শিয়াদের অন্যতম বড় ঈদ হিসেবে গণ্য করেছেন।[২০]

মিশরে ফাতেমীয় খলিফারা ঈদে গাদীরে আনন্দ উদযাপন করতেন।[২১] ইরানে সাফাভিদের আমলে ঈদে গাদীর ছিল সরকারীভাবে ঘোষিত ঈদের দিন।[২২] ইরানে, ঈদে গাদীরের দিন সরকারী ছুটি ছিল।[২৩]

ঈদে গাদীরের দিন ইরানে সরকারী ছুটি, ২০২৪ সালের ২২ মে ইরাকের পার্লামেন্ট এই দিনটিকে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে সম্মতি জানিয়েছে।[২৪] ইতিপূর্বে, ঈদে গাদীরের দিন শুধুমাত্র ইরাকের কয়েকটি শহর যেমন: কারবালা, নাজাফ এবং যিকারে ছুটি থাকতো।[২৫]

শিয়ারা ঈদে গাদীরের রাতকেও মহিমান্বিত হিসেবে গণ্য করেন এবং রাত্রিজাগরণ করেন।[২৬]

ঈদে গাদীরের আমলসমূহ

  • রোযা রাখা; আহলে সুন্নতের গ্রন্থে মহানবি (স.) হতে বর্ণিত রেওয়ায়েত অনুসারে, ১৮ জ্বিলহজ্ব তারিখে যে ব্যক্তি রোযা রাখবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার জন্য ৬ মাসের রোযার সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন।[২৭]
  • মু’মিনদের সাথে সাক্ষাতের সময় اَلحمدُ لِلهِ الّذی جَعَلَنا مِنَ المُتَمَسّکینَ بِولایةِ اَمیرِالمؤمنینَ و الائمةِ علیهم السلام অর্থ আল্লাহর নিকট শুকরিয়া যে তিনি আমাদেরকে আমিরুল মু’মিনিন আলী (আ.) এবং ইমামদের (আ.) বেলায়েত তথা অভিভাবকত্বকে আঁকড়ে ধরা ব্যক্তিদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।” এই বাক্যটি বলা।[২৮]
  • ইমাম আলী (আ.)-এর মাযার জিয়ারত
  • গোসল করা
  • যিয়ারতে আমিনুল্লাহ পাঠ করা
  • দোয়া-এ নুদবা পাঠ করা
  • যিয়ারতে গাদীরিয়া পাঠ করা।[২৯]
  • ভাল পোষাক পরিধান করা
  • সুগন্ধি ব্যবহার করা
  • পরিপাটি থাকা
  • সেলে রাহেম তথা আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা-সাক্ষাত করা এবং তাদেরকে সাহায্য করা
  • পরিবারের জন্য খরচ করা
  • হাসি-খুশি থাকা
  • মু’মিনদেরকে হাদীয়া তথা উপহার দেওয়া
  • মু’মিন ভাইদের সাথে সাক্ষাত করা
  • মহান নেয়ামত হিসেবে বেলায়েতের শুকরিয়া আদায় করা
  • বেশী বেশী সালাওয়াত পাঠ করা
  • অধিক পরিমানে ইবাদত আঞ্জাম দেওয়া
  • মু’মিনদেরকে আপ্যায়ন করা
  • রোযাদার ব্যক্তিদেরকে ইফতার করানো
  • ইদে গাদীরের নামায পড়া: ইমাম সাদিক (আ.) হতে বর্ণিত রেওয়ায়েত অনুসারে, দুই রাকাত বিশিষ্ট নামায রয়েছে যার প্রতি রাকাতে সূরা হামদের পর ১০ বার সূরা ইখলাছ, ১০ বার আয়াতুল কুরসি এবং ১০ বার সূরা ক্বদর পাঠ করতে হয়। এই নামাযের পুরস্কার ১০০ হজ্ব, ১০০ উমরাহ এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সকল হাজত পূরণের সমপরিমান মনে করা হয়েছে।[৩১] যোহরের সময় এই নামায পড়তে হয়। জামাআতবদ্ধভাবে এই নামায আদায় করা জায়েয কি জায়েয নয় সে ব্যাপারে ফিকাহবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য বিদ্যমান।[৩২]

প্রচলিত রীতি

সাইয়্যেদদের সাথে সাক্ষাত

ইরান এবং অন্যান্য কিছু মুসলিম দেশে শিয়ারা ঈদে গাদীরের দিন সাইয়্যেদদের সাথে সাক্ষাত করতে যান। সাইয়্যেদরাও এই দিন উপলক্ষে ঈদি হিসেবে টাকা অথবা কোন পণ্য প্রদান করেন।[৩৩]

গাদীর দিবসে আহার করানো

শিয়ারা গাদীর দিবসে মসজিদ ও অন্যান্য স্থানসমূহে খাবার খাওয়ানোর জন্য দস্তরখানা বিছান।[৩৪] অনুরূপভাবে রাস্তাগুলোতে শরবত ও মিষ্টি বিতরণ করেন। মিসবাহুল মুজতাহিদ গ্রন্থে বর্ণিত রেওয়ায়েত অনুসারে, গাদীর দিবসে একজন মু’মিন ব্যক্তিকে আহার করানোর সওয়াব হচ্ছে, দশ লক্ষ নবী ও সিদ্দিক এবং দশ লক্ষ শহীদকে আহার করানোর সমপরিমান।[৩৫] এই রেওয়ায়েত অনুসারে, ইমার রেযা (আ.) ঈদে গাদীরের দিন মজলিসের আয়োজন করতেন এবং তাঁর আসহাবের বিশেষ একটি দলকে ইফতারের জন্য নিজের কাছে রেখে দিতেন এবং তাদের পরিবারের জন্য খাদ্য ও উপহার সামগ্রী প্রেরণ করতেন।[৩৬]

ভ্রাতৃত্বের আকদ

শেইখ আব্বাস কুম্মি’র ভাষ্যানুযায়ী, ঈদে গাদীরের দিনে অন্যতম রীতি হচ্ছে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যার বিষয়বস্তু হচ্ছে দুনিয়াতে ভ্রাতৃত্ব ও সহানুভূতি এবং আখেরাতে পারস্পরিক সহযোগিতা।[৩৭] এরই উপর ভিত্তি করে, কিছু কিছু শিয়াদের অন্যতম রীতি হচ্ছে গাদীর দিবসে ভ্রাতৃত্বের আকদ পাঠ করা। ইরানের ‘ফারহাঙ্গে সারায়ে আন্দিশে’ নামক সংস্থা, ঈদে গাদীরের সময়টাতে ‘বারাদারানে’ নামক একটি ভার্চুয়াল ক্যাম্পেইন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে যেন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার মধ্য দিয়ে শিয়া এবং আহলে বাইতের (আ.) প্রেমিকদের মধ্যে সংহতির চেতনা এবং বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য শক্তিশালী হয়।[৩৮]

গ্রন্থপরিচিতি

ঈদে গাদীর সম্পর্কে রচিত গ্রন্থাবলী: আল্লামা আমিনীর লেখা ঈদ আল-গাদীর বাইন আল-সাবুত ওয়াল ইসবাত আল্লামা আমিনী রচিত ঈদ আল-গাদীর ফিল ইসলাম ওয়াল তাতউয়িজি ওয়াল কুরবাতি ইয়াওম আল-গাদীর (আরবি ভাষায় লেখা পুস্তিকা) মুহাম্মাদ হাদী আমিনীর লেখা ঈদ আল-গাদীর ফি আহদ আল-ফাতেমীয়্যিন: বইটি ফাতেমীয়দের সময়ে গাদীর সম্পর্কে লেখা হয়েছে।[৩৯] সাইয়্যেদ আদেল আলাভি রচিত ঈদ আল-গাদীর বাইন আল-সাবুত ওয়াল ইসবাত, ঈদুল গাদীর বাইনাস সাবুত ওয়াল ইসবাত।

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

  • ইবনে আসির, আলী ইবনে মুহাম্মাদ, উসদুল গাব্বাহ ফি মা’রিফাতিস সাহাবাহ, বৈরুত, দারুল ফিকর, ১৪০৯ হি.।
  • ইবনে জাওযি, আবুল ফারাজ, আল-মুন্তাযাম ফি তারিখিল উমাম ওয়াল মুলুক, তাহকিক: মুহাম্মাদ আব্দুল কাদের আতা, বৈরুত, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, প্রথম সংস্করণ, ১৪১২ হি.।
  • ইবনে খাল্লেকান, আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ, ওয়াফাইয়াতুল আ’ইয়ান, তাহকিক: এহসান আব্বাস, কোম, আত-তাশরীফুর রাযি, ১৩৬৪ ফার্সি সন।
  • ইবনে কাসির, ইসমাঈল ইবনে উমর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দারুল ফিকর, ১৪০৭ হি.।
  • আমিনী, আব্দুল হুসাইন, আল-গাদীর ফিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ, কোম, মারকায আল-গাদীর লিল দিরাসাত আল-ইসলামিয়্যাহ, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৬ হি.।
  • আমিনী, মুহাম্মাদ হাদী, ঈদ আল-গাদীর ফি আহদ আল-ফাতেমিয়্যিন, তেহরান, মুআসসেসাতুল আফাক, ১৩৭৪ ফার্সি সন/১৪১৭ হি.
  • আয়াযি, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আলী, তাফসীর আল-কুরআন আল-মাজিদ আল-মুস্তাখরাজ মিন তুরাস আল-শেইখ আল-মুফিদ, কোম, মারকাযে ইন্তেশারাতে দাফতারে তাবলীগাতে ইসলামি, ১৪২২ হি.।
  • বাহরানি, ইউসুফ ইবনে আহমাদ, আল-হাদায়েক্ব আল-নাযেরাহ ফি আহকামিল ইতরাতি আল-তাহেরাহ, তাহকিক: মুহাম্মাদ তাকী ইরাওয়ানি, কোম, মুআসসেসাতুল নাশর আল-ইসলামি আল-তাবাআতি লি জামাআতিল মুদাররেসীন, তারিখ অজ্ঞাত।
  • বালাযুরি, আহমাদ ইবনে ইয়াহইয়া, আনসাবুল আশরাফ, তাহকিক: সুহাইল যাক্কার ও রিয়াযুল যিরিকলি, বৈরুত, দারুল ফিকর, ১৪১৭ হি.।
  • তারি, জালিল, “তামুলি বার তারিখে ওফাতে পায়াম্বার”, ফাসল নামেয়ে তারিখে ইসলাম, কোম, দানেশগাহে বাকেরুল উলুম, ১৩৭৯ ফার্সি সন।
  • সাআলিবি, আব্দুল মালেক ইবনে মুহাম্মাদ, সিমার আল-কুলুব ফিল মুযাফ ওয়াল মানসুব, তাহকিক: মুহাম্মাদ আবুল ফাযল ইব্রাহিম, বৈরুত, মাক্তাবাতুল আসরিয়্যাহ, ১৪২৪ হি.।
  • হুররে আমেলি, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, ওয়াসায়েলুশ শিয়া, মুআসসেসাতু আলিল বাইত লি ইহিইয়ায়িত তুরাস, কোম, ১৪১৬ হি.।
  • খতিব বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, তাহকিক: মুস্তাফা আব্দুল কাদির আতা, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, তারিখ অজ্ঞাত।
  • যুরকানি, মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল বাকী, শারহুল আল্লামা আল-যুরকানি আলাল মাওয়াহিবিল লিদ দুনিয়াতি বিল মিনাহিল মুহাম্মাদিয়াহ, বৈরুত, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, ১৪১৭ হি.।
  • সাইয়্যেদ ইবনে তাঊস, আলী ইবনে মুসা, ইকবালুল আ’মাল, মারকাযু আল-নাশর আল-তাবে’ লি মাক্তাবি আল-আ’লাম আল-ইসলামি, কোম, ১৩৭৭ ফার্সি

সন।

  • সাইয়্যেদ রাযি, মুহাম্মাদ ইবনে হুসাইন, খাছায়েছুল আইম্মাহ, মাশহাদ, আস্তানে মুকাদ্দাসে রাযাভি, মাজমাউল বুহুস আল-ইসলামিয়্যাহ, ১৪০৬ হি.।
  • শহীদ আউয়াল, মুহাম্মাদ ইবনে মাক্কি, আল-মাযার, বে কৌশিশে সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ বাকের মুওয়াহ্হেদ আবতাহি, কোম, মুআসসেসাতুল ইমাম আল-মাহদি (আ.ফা.), ১৪১০ হি.।
  • শেইখ সাদুক, মুহাম্মাদ ইবনে আলী, আল-আমালি, মুআসসাসাতুল বায়েসাহ।
  • তুসি, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, তাহযিবুল আহকাম, সাইয়্যেদ হাসান মুসাভি খেরসান, তেহরান, দারুল কুতবু আল-ইসলামিয়্যাহ।
  • তুসি, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, মিসবাহুল মুতাহাজ্জেদ ওয়া সিলাহুল মুতাআব্বেদ, মুআসসাসাতু ফিকহ আল-শিয়া, প্রথম সংস্করণ, ১৪১১ হি.।
  • আইয়াশি, মুহাম্মাদ ইবনে মাসউদ, তাফসীরে আইয়াশি, তাহকিক: রাসূলি মাহাল্লাতি, তেহরান, মাক্তাবাতু ইলমিয়্যাহ ইসলামিয়্যাহ, তারিখ অজ্ঞাত।
  • কুম্মি, মাফাতিহুল জিনান।
  • কুলাইনি, মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকুব, আল-কাফি, তাসহিহ: আলী আকবার গাফ্ফারি, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়্যাহ, তেহরান, ১৪০৭ হি.।
  • গার্দিযি, আবু সাঈদ, যাইনুল আখবার, তেহরান, দুনিয়াকে কিতাব, প্রথম সংস্করণ, ১৩৬৩ ফার্সি সন।
  • “লইহে কানুনি তাঈনে তা’তিলাতে রাসমিয়ে কেশভার”, ওয়েবসাইতে মারকাযে পেঝুহেশহায়ে মাজলিসে শুরায়ে ইসলামি, দেখার তারিখ: ৬ মোরদাদ ১৪০০ ফার্সি সন।
  • মাসঊদি, আলী ইবনে হুসাইন, আত-তানবীহু ওয়াল ইশরাফ, দারুল সাউয়ি, কায়রো, ১৩৫৭ হি.।
  • নাসিবি, মুহাম্মাদ ইবনে তালহা, মাতালিবুস সাঊল ফি মানাকিবি আলে রাসূল, তাহকিক: আব্দুল আযিয তাবাতাবায়ী, বৈরুত, মুআসসাসাতুল বালাগ, ১৪১৯ হি./১৯৯৯ খ্রি.।
  • নিকযাদ তেহরানি, আলী আকবার ওয়া হুসাইন হামযা, “তাশাইয়্যু ওয়া তারিখে ইজতেমায়ি-এ ইরানিয়ান দার আসরে সাফাভি”, শিয়া পেঝুহি, ৬ষ্ঠ সংখ্যা, বাহার ১৩৯৫ ফার্সি সন।
  • ইয়াকুবি, আহমাদ ইবনে আবি ইয়াকুব, তারিখ আল-ইয়াকুবি, বৈরুত, দারু সাদির, তারিখ অজ্ঞাত।