বিষয়বস্তুতে চলুন

সাকীফার ঘটনা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১৫ নং লাইন: ১৫ নং লাইন:
[[মহানবি (স.)|মহানবির (স.)]] ইন্তিকালের সংবাদ প্রচার হওয়ার পর [[আনসার|আনসারদের]] একটি দল নিজেদের ভবিষ্যত এবং মহানবির (স.) জা-নশীন (স্থলাভিষিক্ত) নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাকীফায় সমবেত হন। ঐতিহাসিক সূত্রসমূহের বর্ণনা অনুযায়ী, সভার শুরুতে [[খাযরাজ গোত্র|খাযরাজ গোত্রপতি]] [[সা’দ ইবনে উবাদাহ]] গুরুতর অসুস্থ হওয়ার কারণে স্বীয় পুত্র (কায়েস বিন সা’দ বিন উবাদাহ) মারফত উপস্থিত আনসারদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন। তিনি বিভিন্ন যুক্তি-দলীল উপস্থাপন পূর্বক মহানবি (স.) পরবর্তী সময়ে মুসলমানদের নেতৃত্ব আনসারের অধিকার বলে আখ্যায়িত করে তাদেরকে দায়িত্ব হাতে তুলে নেয়ার আহবান জানান। উপস্থিত সকলে তার কথায় সমর্থন করে সা’দকে নিজেদের শাসক হিসেবে নির্বাচনের কথা ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি তারা এ বিষয়টির প্রতিও জোর তাগিদ দিলেন যে, সা’দের মত ও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা কোন পদক্ষেপ নিবেন না।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২২।</ref> কিন্তু উপস্থিতির কেউ কেউ মুহাজিরদের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতার বিষয়টি উত্থাপন করে মুহাজিরগণ তাদের এ সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানাবেন বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আনসারদের মাঝ থেকে একজন আমির এবং মুহাজিরদের মাঝ থেকে আরেকজন আমির -এ প্রস্তাবও উত্থাপিত হয়।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২২।</ref>
[[মহানবি (স.)|মহানবির (স.)]] ইন্তিকালের সংবাদ প্রচার হওয়ার পর [[আনসার|আনসারদের]] একটি দল নিজেদের ভবিষ্যত এবং মহানবির (স.) জা-নশীন (স্থলাভিষিক্ত) নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাকীফায় সমবেত হন। ঐতিহাসিক সূত্রসমূহের বর্ণনা অনুযায়ী, সভার শুরুতে [[খাযরাজ গোত্র|খাযরাজ গোত্রপতি]] [[সা’দ ইবনে উবাদাহ]] গুরুতর অসুস্থ হওয়ার কারণে স্বীয় পুত্র (কায়েস বিন সা’দ বিন উবাদাহ) মারফত উপস্থিত আনসারদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন। তিনি বিভিন্ন যুক্তি-দলীল উপস্থাপন পূর্বক মহানবি (স.) পরবর্তী সময়ে মুসলমানদের নেতৃত্ব আনসারের অধিকার বলে আখ্যায়িত করে তাদেরকে দায়িত্ব হাতে তুলে নেয়ার আহবান জানান। উপস্থিত সকলে তার কথায় সমর্থন করে সা’দকে নিজেদের শাসক হিসেবে নির্বাচনের কথা ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি তারা এ বিষয়টির প্রতিও জোর তাগিদ দিলেন যে, সা’দের মত ও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা কোন পদক্ষেপ নিবেন না।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২২।</ref> কিন্তু উপস্থিতির কেউ কেউ মুহাজিরদের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতার বিষয়টি উত্থাপন করে মুহাজিরগণ তাদের এ সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানাবেন বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আনসারদের মাঝ থেকে একজন আমির এবং মুহাজিরদের মাঝ থেকে আরেকজন আমির -এ প্রস্তাবও উত্থাপিত হয়।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২২।</ref>


সভা ও এর উদ্দেশ্যের সংবাদ [[আবুবকর ইবনে আবু কুহাফা]] ও [[ওমর ইবনে খাত্তাব|ওমর ইবনে খাত্তাবের]] কাছে গেলে তারা দু’জন [[আবু উবায়দা জাররাহ|আবু উবায়দা জাররাহ’র]] সাথে সাকীফায় যান। বৈঠকে উপস্থিত হয়ে ওমর ইবনে খাত্তাবকে থামিয়ে আবুবকর নিজেই কথা বলা শুরু করলেন, তিনি মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ততার ঘটনায় মুহাজিরদের শ্রেষ্ঠত্ব ও কুরাইশদের অগ্রাধিকারের কথা উত্থাপন করলেন।[৬] উপস্থিতদের কেউ কেউ তার কথার সমর্থন করলো আবার কেউ বিরোধিতা; আবার কেউ কেউ এ ক্ষেত্রে হযরত আলীর যোগ্যতা এবং তিনি ব্যতীত অন্য কারো হাতে বাইয়াত না করার প্রতি ইঙ্গিত করলেন।[৭] কিন্তু অবশেষে আবুবকর, ওমর ও আবু উবাইদা’কে এ মাকামের জন্য যোগ্য হিসেবে ঘোষণা করলে তারা দু’জনই আবুবকরের প্রস্তাবনার বিরোধিতা করে।[৮]
সভা ও এর উদ্দেশ্যের সংবাদ [[আবুবকর ইবনে আবু কুহাফা]] ও [[ওমর ইবনে খাত্তাব|ওমর ইবনে খাত্তাবের]] কাছে গেলে তারা দু’জন [[আবু উবায়দা জাররাহ|আবু উবায়দা জাররাহ’র]] সাথে সাকীফায় যান। বৈঠকে উপস্থিত হয়ে ওমর ইবনে খাত্তাবকে থামিয়ে আবুবকর নিজেই কথা বলা শুরু করলেন, তিনি মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ততার ঘটনায় মুহাজিরদের শ্রেষ্ঠত্ব ও কুরাইশদের অগ্রাধিকারের কথা উত্থাপন করলেন।<ref>ইবনে আসীর, আল-কামিলু ফিত তারিখ, দারু সাদর, খণ্ড ২, পৃ. ৩২৭।</ref> উপস্থিতদের কেউ কেউ তার কথার সমর্থন করলো আবার কেউ বিরোধিতা; আবার কেউ কেউ এ ক্ষেত্রে হযরত আলীর যোগ্যতা এবং তিনি ব্যতীত অন্য কারো হাতে বাইয়াত না করার প্রতি ইঙ্গিত করলেন।<ref>ইবনে আসীর, আল-কামিলু ফিত তারিখ, দারু সাদর, খণ্ড ২, পৃ. ৩২৫।</ref> কিন্তু অবশেষে আবুবকর, ওমর ও আবু উবাইদা’কে এ মাকামের জন্য যোগ্য হিসেবে ঘোষণা করলে তারা দু’জনই আবুবকরের প্রস্তাবনার বিরোধিতা করে।<ref>তাবারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২০৬।</ref>


৩০৩ হিজরীতে রচিত [[তারিখে তাবারি|তারিখে তাবারি’র]] বর্ণনার ভিত্তিতে, ওমর ইবনে খাত্তাব ঐ মুহূর্তগুলো সম্পর্কে বলেছেন: ঐ সময় উপস্থিতদের মাঝে হৈ চৈ শুরু হলো এবং ভীড়ের মাঝে বিভিন্ন অস্পষ্ট ও অবোধ্য কথা শোনা যাচ্ছিল। এ সময় আমরা শঙ্কিত হলাম যে, এ বিরোধ আমাদের কাজে বিচ্ছেদ ঘটাবে। তাই আমি আবুবকরকে বললাম তোমার হাত প্রসারিত করো, তোমার হাতে বাইয়াত করি। কিন্তু ওমরের হাত আবুবকরের হাতে পৌঁছানোর আগেই সা’দ ইবনে উবাদা’র প্রতিদ্বন্দ্বী বাশির ইবনে সা’দ খাযরাজী এগিয়ে এসে আবুবকরের হাতে হাত রেখে বাইয়াত করলো[৯]
৩০৩ হিজরীতে রচিত [[তারিখে তাবারি|তারিখে তাবারি’র]] বর্ণনার ভিত্তিতে, ওমর ইবনে খাত্তাব ঐ মুহূর্তগুলো সম্পর্কে বলেছেন: ঐ সময় উপস্থিতদের মাঝে হৈ চৈ শুরু হলো এবং ভীড়ের মাঝে বিভিন্ন অস্পষ্ট ও অবোধ্য কথা শোনা যাচ্ছিল। এ সময় আমরা শঙ্কিত হলাম যে, এ বিরোধ আমাদের কাজে বিচ্ছেদ ঘটাবে। তাই আমি আবুবকরকে বললাম তোমার হাত প্রসারিত করো, তোমার হাতে বাইয়াত করি। কিন্তু ওমরের হাত আবুবকরের হাতে পৌঁছানোর আগেই সা’দ ইবনে উবাদা’র প্রতিদ্বন্দ্বী বাশির ইবনে সা’দ খাযরাজী এগিয়ে এসে আবুবকরের হাতে হাত রেখে বাইয়াত করলো<ref>তাবারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২০৬।</ref>


এ ঘটনার পর, সাকীফায় উপস্থিতরা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়লো; পরিস্থিত এমন হলো যে, অসুস্থ সা’দ ইবনে উবাদাহ তাদের পদতলে পিষ্ট হওয়ার উপক্রম হলেন। এ ঘটনা ওমর ইবনে খাত্তাব ও সা’দ এবং কাইস ইবনে সা’দের মাঝে তীব্র ঝগড়ার কারণ হল; অবশেষে আবুবকরের মধ্যস্থতায় ঐ ঝগড়া শেষ হলো<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৭।</ref>
এ ঘটনার পর, সাকীফায় উপস্থিতরা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়লো; পরিস্থিত এমন হলো যে, অসুস্থ সা’দ ইবনে উবাদাহ তাদের পদতলে পিষ্ট হওয়ার উপক্রম হলেন। এ ঘটনা ওমর ইবনে খাত্তাব ও সা’দ এবং কাইস ইবনে সা’দের মাঝে তীব্র ঝগড়ার কারণ হল; অবশেষে আবুবকরের মধ্যস্থতায় ঐ ঝগড়া শেষ হলো<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৭।</ref>
২৫ নং লাইন: ২৫ নং লাইন:


* '''[[সা’দ ইবনে উবাদাহ]]:''' মূলতঃ তিনি সভার শুরুতে এবং আবুবকর ও তার সঙ্গীদের আগমনের পূর্বে কথা বলেছিলেন। অবশ্য অসুস্থতা জনিত দুর্বলতার কারণে তার পুত্র তার কথা জনতার উদ্দেশ্যে পৌঁছে দেন। তার কথার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তুগুলো ছিল: আনসারের ফজিলত ও ইতিহাস, অপর মুসলমানদের উপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব, ইসলাম ও [[মহানবি (স.)|মহানবির (স.)]] প্রতি তাদের খেদমত এবং ওফাতের পূর্বে আনসারদের উপর মহানবির (স.) সন্তুষ্টি ইত্যাদি। এসব যুক্তি উপস্থাপন করে তিনি মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিষয়ে আনসারকে অধিক যোগ্য বলে ঘোষণা করেন এবং তাদেরকে দায়িত্ব হাতে নেয়ার আহবান জানান। এছাড়া, তিনি আনসারদের থেকে একজন এবং মুহাজিরদের থেকে একজন আমির নির্বাচনের প্রস্তাবকে পরাজয় ও পশ্চাদপসরণ বলে অভিহিত করেন।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২২।</ref>
* '''[[সা’দ ইবনে উবাদাহ]]:''' মূলতঃ তিনি সভার শুরুতে এবং আবুবকর ও তার সঙ্গীদের আগমনের পূর্বে কথা বলেছিলেন। অবশ্য অসুস্থতা জনিত দুর্বলতার কারণে তার পুত্র তার কথা জনতার উদ্দেশ্যে পৌঁছে দেন। তার কথার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তুগুলো ছিল: আনসারের ফজিলত ও ইতিহাস, অপর মুসলমানদের উপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব, ইসলাম ও [[মহানবি (স.)|মহানবির (স.)]] প্রতি তাদের খেদমত এবং ওফাতের পূর্বে আনসারদের উপর মহানবির (স.) সন্তুষ্টি ইত্যাদি। এসব যুক্তি উপস্থাপন করে তিনি মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিষয়ে আনসারকে অধিক যোগ্য বলে ঘোষণা করেন এবং তাদেরকে দায়িত্ব হাতে নেয়ার আহবান জানান। এছাড়া, তিনি আনসারদের থেকে একজন এবং মুহাজিরদের থেকে একজন আমির নির্বাচনের প্রস্তাবকে পরাজয় ও পশ্চাদপসরণ বলে অভিহিত করেন।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২২।</ref>
* '''[[আবুবকর ইবনে আবু কুহাফা]]:''' তার কথাই ছিল বৈঠকের ফলাফল নির্ধারক। তিনি কয়েকবার কথা বলেছিলেন, তার কথার বিষয়বস্তুগুলো ছিল এমন; [[আনসার|আনসারদের]] উপর [[মুহাজির|মুহাজিরদের]] শ্রেষ্ঠত্ব, মহানবির (সা.) রিসালাতের সমর্থনে অগ্রগামিতা,  ঈমান ও আল্লাহর ইবাদতে অগ্রগামিতা, মহানবির (স.) সাথে মুহাজিরদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ও আত্মীয়তা ইত্যাদি। উপস্থাপিত যুক্তির ভিত্তিতে মুহাজিরগণ নবীর (স.) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারী এবং খেদমত ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আনসারগণ উজির হওয়ার জন্য যোগ্য; শাসক হওয়ার জন্য নয়, এছাড়া মুহাজিরদের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিরোধিতাকারীদের যুক্তি খণ্ডন ইত্যাদি। [১২]
* '''[[আবুবকর ইবনে আবু কুহাফা]]:''' তার কথাই ছিল বৈঠকের ফলাফল নির্ধারক। তিনি কয়েকবার কথা বলেছিলেন, তার কথার বিষয়বস্তুগুলো ছিল এমন; [[আনসার|আনসারদের]] উপর [[মুহাজির|মুহাজিরদের]] শ্রেষ্ঠত্ব, মহানবির (সা.) রিসালাতের সমর্থনে অগ্রগামিতা,  ঈমান ও আল্লাহর ইবাদতে অগ্রগামিতা, মহানবির (স.) সাথে মুহাজিরদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ও আত্মীয়তা ইত্যাদি। উপস্থাপিত যুক্তির ভিত্তিতে মুহাজিরগণ নবীর (স.) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারী এবং খেদমত ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আনসারগণ উজির হওয়ার জন্য যোগ্য; শাসক হওয়ার জন্য নয়, এছাড়া মুহাজিরদের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিরোধিতাকারীদের যুক্তি খণ্ডন ইত্যাদি।<ref>তাবারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২০২।</ref>
* '''[[হাবাব ইবনে মুনযির]]:''' সাকীফাতে ২ বা ৩ দফায় কথা বলেছেন; প্রতিবারই তার কথাবার্তায় মুহাজিরদের বিরুদ্ধে হুমকির সূর ছিল অথবা আবুবকর ও ওমরের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৫।</ref> তিনি তার কথার একাংশে প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে আমির নির্বাচনের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।[১৪]
* '''[[হাবাব ইবনে মুনযির]]:''' সাকীফাতে ২ বা ৩ দফায় কথা বলেছেন; প্রতিবারই তার কথাবার্তায় মুহাজিরদের বিরুদ্ধে হুমকির সূর ছিল অথবা আবুবকর ও ওমরের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৫।</ref> তিনি তার কথার একাংশে প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে আমির নির্বাচনের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।[১৪]
* '''[[ওমর ইবনে খাত্তাব]]:''' তিনি অধিকাংশ ক্ষেত্রে আবুবকরের কথা সত্যায়ন এবং আবুবকর কর্তৃক উত্থাপিত যুক্তির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ঐ যুক্তিগুলোর কয়েকটি হলো: যদি মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ত তাঁর আত্মীয়দের মধ্য থেকে কেউ হয় তবে সেক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা আরবরা করবে না, দুই দল থেকে একজন করে আমির নির্বাচন সম্ভব নয়; কেননা এক খাপে দু’টি তলোয়ারের স্থান হয় না ইত্যাদি।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৫।</ref>
* '''[[ওমর ইবনে খাত্তাব]]:''' তিনি অধিকাংশ ক্ষেত্রে আবুবকরের কথা সত্যায়ন এবং আবুবকর কর্তৃক উত্থাপিত যুক্তির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ঐ যুক্তিগুলোর কয়েকটি হলো: যদি মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ত তাঁর আত্মীয়দের মধ্য থেকে কেউ হয় তবে সেক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা আরবরা করবে না, দুই দল থেকে একজন করে আমির নির্বাচন সম্ভব নয়; কেননা এক খাপে দু’টি তলোয়ারের স্থান হয় না ইত্যাদি।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৫।</ref>
* '''[[আবু উবাইদা জাররাহ]]:''' আনসারের উদ্দেশ্যে তিনি দ্বীন ও মুসলিম উম্মাহ’র ঐক্যের ভীতে পরিবর্তন না আনা প্রসঙ্গে নিষেধ করে।[১৬]
* '''[[আবু উবাইদা জাররাহ]]:''' আনসারের উদ্দেশ্যে তিনি দ্বীন ও মুসলিম উম্মাহ’র ঐক্যের ভীতে পরিবর্তন না আনা প্রসঙ্গে নিষেধ করে।[১৬]
* '''[[বাশির ইবনে সা’দ]]:''' তিনি ছিলেন খাযরাজ গোত্রের ও আনসারদের একজন। তিনি কয়েক দফায় আবুবকর ও তার সঙ্গীদের কথার সমর্থন করেন এবং ‘আল্লাহকে ভয় করো’, একজন মুসলমানের অধিকারের বিরোধিতা করো না ইত্যাদি বাক্যের মাধ্যমে মুহাজিরগণের বিরোধিতা না করার জন্য আনসারগণকে নিষেধ করেন।[১৭]
* '''[[বাশির ইবনে সা’দ]]:''' তিনি ছিলেন খাযরাজ গোত্রের ও আনসারদের একজন। তিনি কয়েক দফায় আবুবকর ও তার সঙ্গীদের কথার সমর্থন করেন এবং ‘আল্লাহকে ভয় করো’, একজন মুসলমানের অধিকারের বিরোধিতা করো না ইত্যাদি বাক্যের মাধ্যমে মুহাজিরগণের বিরোধিতা না করার জন্য আনসারগণকে নিষেধ করেন।<ref>তাবারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২০২।</ref>
* '''[[আব্দুর রাহমান ইবনে আওফ]]:''' তিনি হযরত আলী (আ.), আবুবকর এবং ওমরের মত ব্যক্তিত্বগণের অবস্থানের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে আনসারগণ এমন মাকামের অধিকারী নন বলে মন্তব্য করেন।[১৮]
* '''[[আব্দুর রাহমান ইবনে আওফ]]:''' তিনি হযরত আলী (আ.), আবুবকর এবং ওমরের মত ব্যক্তিত্বগণের অবস্থানের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে আনসারগণ এমন মাকামের অধিকারী নন বলে মন্তব্য করেন।[১৮]
* '''[[যাইদ ইবনে আরকাম]]:''' তিনিও একজন আনসার; তিনি সাকীফায় আবুবকর ও আব্দুর রহমান ইবনে আওফ কর্তৃক উত্থাপিত যুক্তির বিপরীতে [[ইমাম আলী (আ.)|আলীকে (আ.)]] এমন ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরেন যিনি এ সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এছাড়া তিনি বলেন, যদি তিনি (আলী) বাইয়াতের জন্য অগ্রসর হন তবে কেউই তাঁর বিরোধিতা করবে না।[১৯]
* '''[[যাইদ ইবনে আরকাম]]:''' তিনিও একজন আনসার; তিনি সাকীফায় আবুবকর ও আব্দুর রহমান ইবনে আওফ কর্তৃক উত্থাপিত যুক্তির বিপরীতে [[ইমাম আলী (আ.)|আলীকে (আ.)]] এমন ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরেন যিনি এ সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এছাড়া তিনি বলেন, যদি তিনি (আলী) বাইয়াতের জন্য অগ্রসর হন তবে কেউই তাঁর বিরোধিতা করবে না।[১৯]
১২৪ নং লাইন: ১২৪ নং লাইন:
গবেষকগণ, আল্লাহর রাসূলের (স.) ইন্তিকালের পর সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা সাকীফার ঘটনার ফল হিসেবে সংঘটিত হয়েছে বলে মনে করেন। ঐ ঘটনাগুলোর কয়েকটি নিম্নরূপ:
গবেষকগণ, আল্লাহর রাসূলের (স.) ইন্তিকালের পর সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা সাকীফার ঘটনার ফল হিসেবে সংঘটিত হয়েছে বলে মনে করেন। ঐ ঘটনাগুলোর কয়েকটি নিম্নরূপ:


হযরত ফাতেমার (সা. আ.) বাড়িতে হামলা: আবুবকরের খেলাফতের সমর্থকদের থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, সাকীফার ঘটনা এবং ইমাম আলীসহ (আ.) বেশ কয়েকজন সাহাবা কর্তৃক আবুবকরের হাতে বাইয়াত করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর, খলিফার সমর্থকরা হযরত আলী (আ.) থেকে বাইয়াত গ্রহণের উদ্দেশ্যে হযরত ফাতেমার (সা. আ.) গৃহে হামলা চালায়।[৬৫] ঐ হামলায় হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) যে আঘাত পেয়েছিলেন তাতেই তিনি শহীদ হন।[৬৬]
হযরত ফাতেমার (সা. আ.) বাড়িতে হামলা: আবুবকরের খেলাফতের সমর্থকদের থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, সাকীফার ঘটনা এবং ইমাম আলীসহ (আ.) বেশ কয়েকজন সাহাবা কর্তৃক আবুবকরের হাতে বাইয়াত করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর, খলিফার সমর্থকরা হযরত আলী (আ.) থেকে বাইয়াত গ্রহণের উদ্দেশ্যে হযরত ফাতেমার (সা. আ.) গৃহে হামলা চালায়।[৬৫] ঐ হামলায় হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) যে আঘাত পেয়েছিলেন তাতেই তিনি শহীদ হন।<ref>তাবারী ইমামি, দালায়েলুল ইমামাহ, ১৪১৩ হি., পৃ. ১৩৪।</ref>


ফাদাক কেড়ে নেয়া: কিছু কিছু ইতিহাস বিশ্লেষক মনে করেন, সাকিফার ঘটনার পর ফাতিমা (সা. আ.) কাছ থেকে ফাদাক কেড়ে নেয়া ছিল মূলতঃ আহলে বাইতের (আ.) উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির নিমিত্তে। এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন আবুবকরের সরকারের ভিতকে মজবুত করত, অপরদিকে আল্লাহর রাসূলের (স.) আহলে বাইতের (আ.) পক্ষ থেকে বিরোধিতা ও সংগ্রামের পথকেও রুদ্ধ করে দিত।[৬৭]
ফাদাক কেড়ে নেয়া: কিছু কিছু ইতিহাস বিশ্লেষক মনে করেন, সাকিফার ঘটনার পর ফাতিমা (সা. আ.) কাছ থেকে ফাদাক কেড়ে নেয়া ছিল মূলতঃ আহলে বাইতের (আ.) উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির নিমিত্তে। এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন আবুবকরের সরকারের ভিতকে মজবুত করত, অপরদিকে আল্লাহর রাসূলের (স.) আহলে বাইতের (আ.) পক্ষ থেকে বিরোধিতা ও সংগ্রামের পথকেও রুদ্ধ করে দিত।[৬৭]
১৭৪ নং লাইন: ১৭৪ নং লাইন:


নাজমুদ্দীন তাবাসি রচিত ন’গোফতেহায়ী আয সাকীফেহ
নাজমুদ্দীন তাবাসি রচিত ন’গোফতেহায়ী আয সাকীফেহ
==তথ্যসূত্র==
{{তথ্যসূত্র}}
==গ্রন্থপঞ্জি==
{{গ্রন্থপঞ্জি}}
confirmed, templateeditor
১,৯৬২টি

সম্পাদনা