বিষয়বস্তুতে চলুন

সাকীফার ঘটনা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৮৪ নং লাইন: ৮৪ নং লাইন:
সাবধান! আল্লাহর কসম! আবু কুহাফার পুত্র (আবুবকর) নিজে নিজেই তা (খেলাফতের রিদা) পরিধান করেছিল। নিশ্চিতভাবেই সে জানত যে, খেলাফতের বিষয়ে আমার অবস্থান যাতার কেন্দ্রিয় শলাকার ন্যায়। জ্ঞানের ধারা বানের পানির মত আমা হতে প্রবাহিত হয় এবং পাখি আমার অবস্থানের উচ্চতা পর্যন্ত উড়ে আসতে পারে না। আমি খেলাফতের বিষয়ে চোখ মুদে নিলাম এবং নিজেকে তা থেকে নির্লিপ্ত রাখলাম। অতঃপর আমি কর্তিত হস্ত এবং সঙ্গীহীন অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে প্রবল বেগে আক্রমণ করা অথবা ধৈর্য সহকারে চোখ বন্ধ করে অন্ধকারের সকল দুঃখ-দুর্দশা সহ্য করার বিষয়ে চিন্তা করতে লাগলাম। এরই মধ্যে বয়স্কগণ দুর্বল হয়ে পড়লো, যুবকেরা বৃদ্ধ হয়ে গেল এবং মু’মিনগণ চাপের মুখে আমরণ কষ্ট করে কাজ করছিলো। আমি দেখলাম এ অবস্থায় ধৈর্য ধারণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ...।’]
সাবধান! আল্লাহর কসম! আবু কুহাফার পুত্র (আবুবকর) নিজে নিজেই তা (খেলাফতের রিদা) পরিধান করেছিল। নিশ্চিতভাবেই সে জানত যে, খেলাফতের বিষয়ে আমার অবস্থান যাতার কেন্দ্রিয় শলাকার ন্যায়। জ্ঞানের ধারা বানের পানির মত আমা হতে প্রবাহিত হয় এবং পাখি আমার অবস্থানের উচ্চতা পর্যন্ত উড়ে আসতে পারে না। আমি খেলাফতের বিষয়ে চোখ মুদে নিলাম এবং নিজেকে তা থেকে নির্লিপ্ত রাখলাম। অতঃপর আমি কর্তিত হস্ত এবং সঙ্গীহীন অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে প্রবল বেগে আক্রমণ করা অথবা ধৈর্য সহকারে চোখ বন্ধ করে অন্ধকারের সকল দুঃখ-দুর্দশা সহ্য করার বিষয়ে চিন্তা করতে লাগলাম। এরই মধ্যে বয়স্কগণ দুর্বল হয়ে পড়লো, যুবকেরা বৃদ্ধ হয়ে গেল এবং মু’মিনগণ চাপের মুখে আমরণ কষ্ট করে কাজ করছিলো। আমি দেখলাম এ অবস্থায় ধৈর্য ধারণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ...।’]


সাকীফার দিন আলী (আ.) আবুবকরের হাতে বাইয়াত করেন নি এবং পরবর্তী সময়ে তার বাইয়াত তথা সমঝোতার বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ ভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন। তবে বিশিষ্ট শিয়া ঐতিহাসিক শেইখ মুফিদের (মৃত্যু ৪১৩ হি.) মতে, শিয়া গবেষকদের এ বিষয়ে মতৈক্য রয়েছে যে, আলী ইবনে আবি তালিব কখনই আবুবকরের হাতে বাইয়াত করেন নি।[৪২]
সাকীফার দিন [[আলী (আ.)]] [[আবুবকর|আবুবকরের]] হাতে বাইয়াত করেন নি এবং পরবর্তী সময়ে তার বাইয়াত তথা সমঝোতার বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ ভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন। তবে বিশিষ্ট শিয়া ঐতিহাসিক [[শেইখ মুফিদ|শেইখ মুফিদের]] (মৃত্যু ৪১৩ হি.) মতে, শিয়া গবেষকদের এ বিষয়ে মতৈক্য রয়েছে যে, [[ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)|আলী ইবনে আবি তালিব]] কখনই আবুবকরের হাতে বাইয়াত করেন নি।[৪২]


শুরুর দিনগুলোতে আহলে সাকীফা আলীকে (আ.) আবুবকরের হাতে বাইয়াত করার জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করলে তিনি তাদের উদ্দেশে বললেন: ‘খেলাফতের বিষয়ে আমি তোমাদের চেয়ে অগ্রাধিকারী, আমি তোমাদের হাতে বাইয়াত করবো না, আমার হাতে বাইয়াত করার ক্ষেত্রে তোমরাই অধিক যোগ্য। তোমরা আনসারদের থেকে খেলাফতকে নিয়ে নিয়েছ; তাদের সাথে তর্কের সময় তোমরা রাসূলের (স.) সাথে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টিকে সামনে এনে তাদের উদ্দেশে বলেছ: আমরা নবির (স.) নিকটবর্তী ও তাঁর সাথে আত্মীয়তার কারণে আমরা তোমাদের চেয়ে খেলাফতের বিষয়ে বেশি হকদার। আর তারাও তোমাদের এ কথার ভিত্তিতে নেতৃত্ব ও খেলাফতের ভার তোমাদের উপর ছেড়ে দিয়েছে। তোমরা আনসারদের সাথে যে যুক্তি উপস্থাপন করেছ আমিও তোমাদের সামনে একই যুক্তি উপস্থাপন করছি (অর্থাৎ রাসূলের (স.) সাথে  ঘনিষ্ঠতা ও আত্মীয়তা)। সুতরাং তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে ইনসাফ ও ন্যায়ের ভিত্তিতে আচরণ করো, আর আনসার যা কিছু তোমাদের ক্ষেত্রে মেনে নিয়েছে, তোমরাও তা আমাদের ক্ষেত্রে মেনে নাও, অন্যথায় তোমরা জেনেশুনে জুলুম ও অত্যাচার করেছ।’[৪৩]
শুরুর দিনগুলোতে আহলে সাকীফা আলীকে (আ.) আবুবকরের হাতে বাইয়াত করার জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করলে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বললেন: ‘খেলাফতের বিষয়ে আমি তোমাদের চেয়ে অগ্রাধিকারী, আমি তোমাদের হাতে বাইয়াত করবো না, আমার হাতে বাইয়াত করার ক্ষেত্রে তোমরাই অধিক যোগ্য। তোমরা আনসারদের থেকে খেলাফতকে নিয়ে নিয়েছ; তাদের সাথে তর্কের সময় তোমরা রাসূলের (স.) সাথে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টিকে সামনে এনে তাদের উদ্দেশ্যে বলেছ: আমরা নবির (স.) নিকটবর্তী ও তাঁর সাথে আত্মীয়তার কারণে আমরা তোমাদের চেয়ে খেলাফতের বিষয়ে বেশি হকদার। আর তারাও তোমাদের এ কথার ভিত্তিতে নেতৃত্ব ও খেলাফতের ভার তোমাদের উপর ছেড়ে দিয়েছে। তোমরা আনসারদের সাথে যে যুক্তি উপস্থাপন করেছ আমিও তোমাদের সামনে একই যুক্তি উপস্থাপন করছি (অর্থাৎ রাসূলের (স.) সাথে  ঘনিষ্ঠতা ও আত্মীয়তা)। সুতরাং তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে ইনসাফ ও ন্যায়ের ভিত্তিতে আচরণ করো, আর আনসার যা কিছু তোমাদের ক্ষেত্রে মেনে নিয়েছে, তোমরাও তা আমাদের ক্ষেত্রে মেনে নাও, অন্যথায় তোমরা জেনেশুনে জুলুম ও অত্যাচার করেছ।’[৪৩]


কিছু সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে, আবুবকরের সাথে আলীর (আ.) মৃদু কিন্তু খোলামেলা বিতর্ক হয়েছিল; সে সময় তিনি সাকীফার ঘটনায় নবির (সা.) আহলে বাইতের অধিকার উপেক্ষা ও লঙ্ঘন করার জন্য আবুবকরের নিন্দা জানিয়েছিলেন। আমিরুল মুমিনীনের (আ.) যুক্তি মেনে নিয়ে আবুবকর প্রভাবিত হন, এমনকি মহানবির উত্তরসূরি হিসাবে আলীর (আ.) হাতে বাইয়াতও করতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু পরিশেষে তিনি তাঁর সাথীদের কারো কারো পরামর্শে এ কাজ থেকে বিরত থাকেন।[৪৪]
কিছু সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে, আবুবকরের সাথে আলীর (আ.) মৃদু কিন্তু খোলামেলা বিতর্ক হয়েছিল; সে সময় তিনি সাকীফার ঘটনায় নবির (সা.) আহলে বাইতের অধিকার উপেক্ষা ও লঙ্ঘন করার জন্য আবুবকরের নিন্দা জানিয়েছিলেন। [[আমিরুল মু’মিনীন|আমীরুল মু’মিনীনের]] (আ.) যুক্তি মেনে নিয়ে আবুবকর প্রভাবিত হন, এমনকি মহানবির উত্তরসূরি হিসাবে আলীর (আ.) হাতে বাইয়াতও করতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু পরিশেষে তিনি তাঁর সাথীদের কারো কারো পরামর্শে এ কাজ থেকে বিরত থাকেন।[৪৪]


আলী (আ.) বিভিন্ন সময়ে তার কথা ও ভাষ্যে সাকীফার ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন এবং আল্লাহর নবির (স.) উত্তরাধিকারী হওয়া প্রসঙ্গে তার অধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ‘শিকশিকিয়া’ নামক খুতবায় তিনি তিনি এই ঘটনা উল্লেখ করেছেন। খোতবার শুরুতে তিনি বলেন: আল্লাহর কসম! আবু কুহাফার পুত্র (আবুবকর) নিজে নিজেই তা (খেলাফতের রিদা) পরিধান করেছিল। নিশ্চিতভাবেই সে জানত যে, খেলাফতের বিষয়ে আমার অবস্থান যাতার কেন্দ্রিয় শলাকার ন্যায়। জ্ঞানের ধারা বানের পানির মত আমা হতে প্রবাহিত হয় এবং পাখি আমার স্থানের উচ্চতা পর্যন্ত উড়ে আসতে পারে না।...।’[৪৫] আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর ভাষায়, সাকীফাসহ সমগ্র জীবনে হযরত আলীর (আ.) মানদণ্ড ছিল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন; কেবল ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থসিদ্ধ বিষয়গুলোকেই তিনি প্রাধান্য দিতেন ও বেছে নিতেন।[৪৬]
আলী (আ.) বিভিন্ন সময়ে তার কথা ও ভাষ্যে সাকীফার ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন এবং আল্লাহর নবির (স.) উত্তরাধিকারী হওয়া প্রসঙ্গে তার অধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ‘[[শিকশিকিয়া]]’ নামক খুতবায় তিনি তিনি এই ঘটনা উল্লেখ করেছেন। খোতবার শুরুতে তিনি বলেন: আল্লাহর কসম! আবু কুহাফার পুত্র (আবুবকর) নিজে নিজেই তা (খেলাফতের রিদা) পরিধান করেছিল। নিশ্চিতভাবেই সে জানত যে, খেলাফতের বিষয়ে আমার অবস্থান যাতার কেন্দ্রিয় শলাকার ন্যায়। জ্ঞানের ধারা বানের পানির মত আমা হতে প্রবাহিত হয় এবং পাখি আমার স্থানের উচ্চতা পর্যন্ত উড়ে আসতে পারে না।...।’[৪৫] [[আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী|আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর]] ভাষায়, সাকীফাসহ সমগ্র জীবনে হযরত আলীর (আ.) মানদণ্ড ছিল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন; কেবল ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থসিদ্ধ বিষয়গুলোকেই তিনি প্রাধান্য দিতেন ও বেছে নিতেন।[৪৬]


অপর কিছু সূত্র মারফত জানা যায়, সাকিফার ঘটনার পর আলী (আ.) রাতের আঁধারে নবিকন্যা হজরত ফাতিমা যাহরাকে (সা. আ.) একটি সওয়ারিতে চড়িয়ে আনসারদের বাড়িতে বাড়িতে ও সভাস্থলে নিয়ে যেতেন এবং তাদের সহযোগিতা চাইতেন, এ সময় তারা উত্তরে বলত: হে নবিকন্যা! আমরা আবুবকরের নিকট বাইয়াত করেছি, যদি আলী এগিয়ে আসতেন তবে আমরা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতাম না। আলী (আ.) উত্তরে বলতেন:  তবে কি আল্লাহর রাসূলের (স.) দাফনকার্য সম্পন্ন না করে খেলাফতের বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হতাম?[৪৭]
অপর কিছু সূত্র মারফত জানা যায়, সাকিফার ঘটনার পর আলী (আ.) রাতের আঁধারে নবিকন্যা [[হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.)|হজরত ফাতিমা যাহরাকে (সা. আ.)]] একটি সওয়ারিতে চড়িয়ে আনসারদের বাড়িতে বাড়িতে ও সভাস্থলে নিয়ে যেতেন এবং তাদের সহযোগিতা চাইতেন, এ সময় তারা উত্তরে বলত: হে নবিকন্যা! আমরা আবুবকরের নিকট বাইয়াত করেছি, যদি আলী এগিয়ে আসতেন তবে আমরা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতাম না। আলী (আ.) উত্তরে বলতেন:  তবে কি আল্লাহর রাসূলের (স.) দাফনকার্য সম্পন্ন না করে খেলাফতের বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হতাম?[৪৭]


সাকীফার ঘটনায় ‘খেলাফত’ আলী বিন আবি তালিবের (আ.) হাতাছাড়া হয়ে যায়। অথচ মহানবির (স.) জীবনের শেষ দিনগুলিতে ‘খেলাফত’ যে, আলীর অধিকার বিষয়টি অনেকের নিকট স্বীকৃত ছিল এবং তা এক হাত থেকে অন্য হাতে হস্তান্তর হতে থাকে...।[৪৮]
সাকীফার ঘটনায় ‘খেলাফত’ আলী বিন আবি তালিবের (আ.) হাতাছাড়া হয়ে যায়। অথচ মহানবির (স.) জীবনের শেষ দিনগুলিতে ‘খেলাফত’ যে, আলীর অধিকার বিষয়টি অনেকের নিকট স্বীকৃত ছিল এবং তা এক হাত থেকে অন্য হাতে হস্তান্তর হতে থাকে...।[৪৮]


== হযরত ফাতিমার প্রতিক্রিয়া ==
== হযরত ফাতিমার প্রতিক্রিয়া ==
হযরত ফাতিমা (সা. আ.) সাকীফার ঘটনায় গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে একে রাসূলের (সা.) আদেশ লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন। তার বিরোধিতার কথা ঘোষণা তিনি ‘আলীর (আ.) নিকট হতে জোরপূর্বক বাইয়াত গ্রহণের চেষ্টা’ এবং ‘তাঁর গৃহ ঘেরাওয়ের সময়’ প্রকাশ করেছিলেন।[৪৯] এছাড়া, মসজিদে নববিতে প্রদত্ত ‘খোতবায়ে ফাদাকিয়া’ নামে বিখ্যাত খোতবাতেও তিনি এ বিষয়ে নিজের বিরোধিতা প্রকাশ করেছিলেন।[৫০]
[[হযরত ফাতিমা (সা. আ.)]] সাকীফার ঘটনায় গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে একে রাসূলের (সা.) আদেশ লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন। তার বিরোধিতার কথা ঘোষণা তিনি ‘আলীর (আ.) নিকট হতে জোরপূর্বক বাইয়াত গ্রহণের চেষ্টা’ এবং ‘তাঁর গৃহ ঘেরাওয়ের সময়’ প্রকাশ করেছিলেন।[৪৯] এছাড়া, [[মসজিদে নববি|মসজিদে নববিতে]] প্রদত্ত ‘[[খোতবায়ে ফাদাকিয়া]]’ নামে বিখ্যাত খোতবাতেও তিনি এ বিষয়ে নিজের বিরোধিতা প্রকাশ করেছিলেন।[৫০]


বিভিন্ন সূত্রের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা. আ.) শয্যাশায়ী অবস্থায় জীবনের শেষ দিনগুলোতে তাকে দেখতে আসা আনসার ও মুহাজির নারীদের উদ্দেশে সাকিফার সিদ্ধান্তকে আল্লাহর রাসূলের (স.) নির্দেশ লঙ্ঘন আখ্যায়িত করে এর পরিণতিতে ইসলাম যে সকল ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।[৫১]
বিভিন্ন সূত্রের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা. আ.) শয্যাশায়ী অবস্থায় জীবনের শেষ দিনগুলোতে তাকে দেখতে আসা আনসার ও মুহাজির নারীদের উদ্দেশে সাকিফার সিদ্ধান্তকে আল্লাহর রাসূলের (স.) নির্দেশ লঙ্ঘন আখ্যায়িত করে এর পরিণতিতে ইসলাম যে সকল ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।[৫১]
১০৪ নং লাইন: ১০৪ নং লাইন:
'''Henry Lammens''' (১৮৬২-১৯৩৭): একজন বেলজিয়ান গবেষক ১৯১০ সালে তার ‘Triumvirate of Abu Bakr, 'Umar, and Abu 'Ubayda’ শীর্ষক প্রবন্ধে দাবি করেছেন যে, এই তিনজনের যৌথ লক্ষ্য অনুসরণ এবং পারস্পারিক ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা মহানবির (সা.) জীবদ্দশা থেকেই শুরু হয়েছিল। আর এই ত্রিমুখী জোট আবুবকর ও ওমরের খেলাফত প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা তাদের জন্য প্রস্তুত করেছিল। যদি আবু উবায়দা ওমরের যুগে মারা না যেতেন, তবে নিশ্চিতভাবে ওমর কর্তৃক নিযুক্ত পরবর্তী খলিফা ছিলেন তিনি। একটি দাবির ভিত্তিতে তার বিশ্বাস ছিল, আবুবকর ও ওমরের কন্যা আয়েশা ও হাফসা -যারা নবীর স্ত্রী ছিলেন- তাদের স্বামীর প্রতিটি গোপন চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাদের পিতাদেরকে অবগত করতেন এবং তারা উভয়েই তাঁর (স.) উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। আর এ পদ্ধতিতেই তারা ক্ষমতা লাভের চেষ্টা করেছিলেন।[৫২]
'''Henry Lammens''' (১৮৬২-১৯৩৭): একজন বেলজিয়ান গবেষক ১৯১০ সালে তার ‘Triumvirate of Abu Bakr, 'Umar, and Abu 'Ubayda’ শীর্ষক প্রবন্ধে দাবি করেছেন যে, এই তিনজনের যৌথ লক্ষ্য অনুসরণ এবং পারস্পারিক ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা মহানবির (সা.) জীবদ্দশা থেকেই শুরু হয়েছিল। আর এই ত্রিমুখী জোট আবুবকর ও ওমরের খেলাফত প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা তাদের জন্য প্রস্তুত করেছিল। যদি আবু উবায়দা ওমরের যুগে মারা না যেতেন, তবে নিশ্চিতভাবে ওমর কর্তৃক নিযুক্ত পরবর্তী খলিফা ছিলেন তিনি। একটি দাবির ভিত্তিতে তার বিশ্বাস ছিল, আবুবকর ও ওমরের কন্যা আয়েশা ও হাফসা -যারা নবীর স্ত্রী ছিলেন- তাদের স্বামীর প্রতিটি গোপন চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাদের পিতাদেরকে অবগত করতেন এবং তারা উভয়েই তাঁর (স.) উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। আর এ পদ্ধতিতেই তারা ক্ষমতা লাভের চেষ্টা করেছিলেন।[৫২]


'''Leon Caetani:''' ইতালীয় প্রাচ্যবিদ লিওন কায়তানি তার ইসলামি ইতিহাস গ্রন্থের ভূমিকায় আবুবকর ও বনু হাশিমের মধ্যকার গভীর বিরোধের কথা উল্লেখ করে আল্লাহর রাসূলের (স.) ইন্তিকালের কয়েক ঘন্টা পার না হতেই সাকীফায় আনসারদের সমাবেশে আবুবকরের খেলাফতের দাবি’র বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
'''Leon Caetani:''' ইতালীয় প্রাচ্যবিদ লিওন কায়তানি তার ইসলামি ইতিহাস গ্রন্থের ভূমিকায় [[আবুবকর]] [[বনু হাশিম|বনু হাশিমের]] মধ্যকার গভীর বিরোধের কথা উল্লেখ করে আল্লাহর রাসূলের (স.) ইন্তিকালের কয়েক ঘন্টা পার না হতেই সাকীফায় আনসারদের সমাবেশে আবুবকরের খেলাফতের দাবি’র বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।


আনসারদের মাঝে আবুবকর আত্মপক্ষ সমর্থনে রাসুলের (স.) গোত্র কুরাইশের অপর গোত্রগুলোর উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে যে সকল বর্ণনা উল্লেখিত হয়েছে সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে তিনি আলীর পক্ষ থেকে একই ধরনের দাবী তোলার সম্ভাবনা ব্যক্ত করে বলেছেন: আত্মীয়তা ও আল্লাহর রাসূলের (স.) সাথে ঘনিষ্টতার দৃষ্টিতে স্থলাভিষিক্ততার সবচেয়ে যোগ্য দাবীদ্বার ছিলেন আলী (আ.); কারণ তিনি ছিলেন নবির (স.) সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয়। তার মতে, যদি মুহাম্মাদ (স.) নিজের কোন স্থলাভিষিক্ত নির্বাচন করতেন তবে সম্ভবত তিনি আবুবকরকেই প্রাধান্য দিতেন। এতদসত্ত্বেও কায়তানি একই গ্রন্থের অপর খণ্ডগুলিতে ল্যামেন্সের ‘আবুবকর, ওমর ও আবু উবাইদা ৩ শক্তির তত্ত্ব’কে খেলাফতের বিষয়ে সৃষ্ট মতভেদের সবচেয়ে যৌক্তিক কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।[৫৩]
আনসারদের মাঝে আবুবকর আত্মপক্ষ সমর্থনে রাসুলের (স.) গোত্র কুরাইশের অপর গোত্রগুলোর উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে যে সকল বর্ণনা উল্লেখিত হয়েছে সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে তিনি আলীর পক্ষ থেকে একই ধরনের দাবী তোলার সম্ভাবনা ব্যক্ত করে বলেছেন: আত্মীয়তা ও আল্লাহর রাসূলের (স.) সাথে ঘনিষ্টতার দৃষ্টিতে স্থলাভিষিক্ততার সবচেয়ে যোগ্য দাবীদ্বার ছিলেন আলী (আ.); কারণ তিনি ছিলেন নবির (স.) সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয়। তার মতে, যদি [[মহানবি (স.)|মুহাম্মাদ (স.)]] নিজের কোন স্থলাভিষিক্ত নির্বাচন করতেন তবে সম্ভবত তিনি আলীকেই (আ.) প্রাধান্য দিতেন। এতদসত্ত্বেও কায়তানি একই গ্রন্থের অপর খণ্ডগুলিতে ল্যামেন্সের ‘আবুবকর, ওমর ও আবু উবাইদা ৩ শক্তির তত্ত্ব’কে খেলাফতের বিষয়ে সৃষ্ট মতভেদের সবচেয়ে যৌক্তিক কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।[৫৩]


'''Willferd Madelung:''' উইলফার্ড মাদেলুঙ্গ তার The Succession of Muhammad গ্রন্থে মহানবির (স.) জা-নশীন সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। তার মতে, অধিকাংশ ঐতিহাসিকের বিশ্বাসের বিপরীতে সাকীফার বৈঠক শুরুতে মুসলমানদের খলিফা নির্বাচনের জন্য বসেনি; কারণ মুসলিম সমাজে নবির (স.) স্থলাভিষিক্ত হিসেবে খেলাফত তত্ত্বের কোন নজীর এর আগে ছিল না, তাই আনসার খেলাফতের লক্ষ্যে সাকীফায় সমবেত হয়েছিলেন এমন ভাবনা, বাস্তব সম্মত নয়।[৫৪] মাদেলুঙ্গের মতে, আনসাররা মনে করেছিলেন মুহাম্মদের (সা.) ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতি বাইয়াতেরও অবসান হয়েছে এবং মুহাম্মাদ (স.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সমাজ ভেঙ্গে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দেয়ায়, মদিনা শহরের কার্য পরিচালনার লক্ষ্যে আনসারদের মধ্য থেকে একজন নেতাকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন; এ কারণেই তারা মুহাজিরদের সাথে পরামর্শ ছাড়াই বৈঠকে বসেছিলেন।[৫৫] তারা মনে করেছিলেন যে, মুহাজিরগণ নিজ শহর মক্কায় প্রত্যাবর্তন করবেন এবং মদিনায় তাদের অবস্থানের পক্ষে বিশেষ কোন কারণ নেই, আর যারা রয়ে যাবেন তারাও আনসারদের গঠিত সরকারকে মেনে নিবেন।[৫৬]  
'''Willferd Madelung:''' উইলফার্ড মাদেলুঙ্গ তার The Succession of Muhammad গ্রন্থে মহানবির (স.) জা-নশীন সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। তার মতে, অধিকাংশ ঐতিহাসিকের বিশ্বাসের বিপরীতে সাকীফার বৈঠক শুরুতে মুসলমানদের খলিফা নির্বাচনের জন্য বসেনি; কারণ মুসলিম সমাজে নবির (স.) স্থলাভিষিক্ত হিসেবে খেলাফত তত্ত্বের কোন নজীর এর আগে ছিল না, তাই আনসার খেলাফতের লক্ষ্যে সাকীফায় সমবেত হয়েছিলেন এমন ভাবনা, বাস্তব সম্মত নয়।[৫৪] মাদেলুঙ্গের মতে, আনসাররা মনে করেছিলেন মুহাম্মদের (সা.) ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতি বাইয়াতেরও অবসান হয়েছে এবং মুহাম্মাদ (স.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সমাজ ভেঙ্গে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দেয়ায়, মদিনা শহরের কার্য পরিচালনার লক্ষ্যে আনসারদের মধ্য থেকে একজন নেতাকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন; এ কারণেই তারা মুহাজিরদের সাথে পরামর্শ ছাড়াই বৈঠকে বসেছিলেন।[৫৫] তারা মনে করেছিলেন যে, মুহাজিরগণ নিজ শহর মক্কায় প্রত্যাবর্তন করবেন এবং মদিনায় তাদের অবস্থানের পক্ষে বিশেষ কোন কারণ নেই, আর যারা রয়ে যাবেন তারাও আনসারদের গঠিত সরকারকে মেনে নিবেন।[৫৬]  
confirmed, templateeditor
১,৯৬২টি

সম্পাদনা